ইলিশ মাছের দাম এখন সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। কেউ কেউ ইলিশ মাছ কিনতে পারলেও, অনেকেই শুধু নাড়াচাড়া করে চলে যাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জেলায় উৎপাদিত পণ্যসমূহ সরাসরি কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়তে আসায়, রাজধানীর অন্যান্য বাজারের তুলনায় এখানে প্রায় সব পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকে। তবুও, সেখানেই ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি ১,৪০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ মাছের বেচাবিক্রি কেমন হচ্ছে—জানতে চাইলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা জুয়েল সংবাদকে বলেন, ‘বেচাবিক্রি একেবারেই ড্যাম। আগে মানুষজন একসাথে ৫টা-১০টা কিনত, এখন তো কেউ তেমন নেয় না—একটা একটা করে নিচ্ছে।’
এ সময় পাশে থাকা আরেক মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান কথায় যোগ দেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আগে আপনি ১০টা কিনতেন - বইনরে দিতেন, ভাইরে দিতেন, আত্মীয়-স্বজনরে দিতেন, আনন্দ হতো। এখন এই জিনিসটা নাই। আপনার একটা লাগবে, একটা-ই কিনবেন। মালের দামও বেশি, বেচাবিক্রিও কম।’
আগের আমেজটা নাই, ... কিসের পহেলা বৈশাখ...? আগে পহেলা বৈশাখ আইলে নতুন জামা..এখন আর দ্যাখেন?,’ প্রশ্ন তোলেন মান্নান।
এসময় এক ব্যক্তি উত্তর পাশের এক দোকানে ইলিশ মাছা নাড়াচাড়া করে চলে যাচ্ছেন। তার কাছে মাছের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন,‘যে দাম! ইলিশ মাছে হাতেই দেয়া যাচ্ছে না। অনেক দাম, অনেক দাম।’
ইলিশ মাছের ‘অনেক দাম’ হওয়ায় তিনি অন্য মাছ কিনবেন বলে পাশের গলিতে চলে গেলেন।
এ বাজারে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দেখা গেল, পাশের মাছের গলি থেকে এক ব্যক্তি ইলিশ মাছ কিনে ফিরছেন। তাঁর নাম শফিক। তাঁর কাছে প্রশ্ন রাখা হলো—‘কত দামে কিনলেন? ইলিশ মাছের দামটা কেমন মনে হচ্ছে?’
জবাবে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘দাম বেশিই, অনেক বেশি। ১,৪০০ টাকা কেজি দরে দুইটা ইলিশ কিনলাম, এক কেজিও হলো না-দাম পড়ল ১,৩২০ টাকা। ৫০০ গ্রাম মাছ যদি ৭০০ টাকা হয়, তাহলে বেশি না? দুইটা মাছ মিলেও এক কেজি হলো না, তার মানে বুঝেনই তো...।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু করার নাই, আমরা জিম্মি। ৫০০ টাকার তেল যদি ২,০০০ টাকা হয় তাও কিনতে হবে। হয়তো কম খাব, আগে তরকারি দুইটা খাইতাম, এখন একটা খাব। তেল আগে বেশি দিতাম, এখন কম দেব। কিন্তু খেতে তো হবেই। এখন বেতনও তো বাড়ে না।’
শফিক যিনি ইলিশ মাছ কিনেছেন, এবার কথা হলো তাঁর কাছ থেকে মাছ বিক্রি করা ব্যবসায়ী সুধীরের সঙ্গে। বৈশাখ উপলক্ষে বেচাবিক্রি কেমন হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বেচাকেনা নাই, একেবারেই কম। আগের চার ভাগের এক ভাগও বেচাকেনা নাই।’
বেচাবিক্রি কমে যাওয়ার কারণ কী মনে করছেন? - এই প্রশ্নে সুধীর বলেন, ‘ক্যামনে কইতাম! এইসব বিষয়ে আমার কোনো অভিজ্ঞতা নাই।’
এ সময় আলাপের মাঝে যোগ দেন পাশের মাছ বিক্রেতা মো. মিজান। উপযাচক হয়ে তিনি সংবাদকে বলেন,‘আগে পহেলা বৈশাখ হতো, মানুষ উদ্?যাপন করতো। এখন আর করে না। আগের মতো পহেলা বৈশাখ করেও না, বেচাকেনাও নাই। পহেলা বৈশাখে আগে ইলিশ মাছের বেচাবিক্রি অনেক বেশি হতো। এ কারণেই এবার কম।’
এরপর সুধীর আবার বলেন, ‘এক সময় ইলিশ মাছের “য়াইস্টা” সুদ্দায় নিয়া গেছিল গা, আর এখন বইয়া আছি গা, বেচাকেনা নাই।’
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি খাবার হোটেল মেসার্স নবান্ন রেস্টুরেন্ট। ইলিশ মাছ বিক্রি নিয়ে কথা হয় ওই রেস্টুরেন্টের হিসাব সহকারী মো. মজিবরের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘দাম বাড়ার কারণে ইলিশ মাছ কিনি না, বিক্রিও করি না। তবে কেউ যদি অনুষ্ঠানের জন্য অর্ডার দেয়, তখন লাইনের (চাঁদপুর জেলার) ইলিশ কিনে এনে রান্না করে দিয়ে এক পিস ৫০০ টাকা নেই।’
তিনি জানান, ‘দুই মাস আগে এক পিস ইলিশ মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা বিক্রি করতাম। এখন এক পিস ইলিশ মাছ ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে বিবেকে বাধে। আর অন্য জেলার ইলিশ মাছে মজা নাই, তাই ঐডা বেঁচি না; বেঁচলে বদনাম হয়। ১ কেজি ওজনের লাইনের ইলিশ মাছ আমাদেরই কিনতে পড়ে কেজি ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকা।’
রোববার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বরিশাল ও চট্রগ্রামে ধরা ইলিশের চেয়ে চাঁদপুর থেকে আসা ইলিশ কম। বাজারভেদে ও মানভেদে ১ কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা আর ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়।
সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
ইলিশ মাছের দাম এখন সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। কেউ কেউ ইলিশ মাছ কিনতে পারলেও, অনেকেই শুধু নাড়াচাড়া করে চলে যাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জেলায় উৎপাদিত পণ্যসমূহ সরাসরি কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়তে আসায়, রাজধানীর অন্যান্য বাজারের তুলনায় এখানে প্রায় সব পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকে। তবুও, সেখানেই ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি ১,৪০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ মাছের বেচাবিক্রি কেমন হচ্ছে—জানতে চাইলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা জুয়েল সংবাদকে বলেন, ‘বেচাবিক্রি একেবারেই ড্যাম। আগে মানুষজন একসাথে ৫টা-১০টা কিনত, এখন তো কেউ তেমন নেয় না—একটা একটা করে নিচ্ছে।’
এ সময় পাশে থাকা আরেক মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান কথায় যোগ দেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আগে আপনি ১০টা কিনতেন - বইনরে দিতেন, ভাইরে দিতেন, আত্মীয়-স্বজনরে দিতেন, আনন্দ হতো। এখন এই জিনিসটা নাই। আপনার একটা লাগবে, একটা-ই কিনবেন। মালের দামও বেশি, বেচাবিক্রিও কম।’
আগের আমেজটা নাই, ... কিসের পহেলা বৈশাখ...? আগে পহেলা বৈশাখ আইলে নতুন জামা..এখন আর দ্যাখেন?,’ প্রশ্ন তোলেন মান্নান।
এসময় এক ব্যক্তি উত্তর পাশের এক দোকানে ইলিশ মাছা নাড়াচাড়া করে চলে যাচ্ছেন। তার কাছে মাছের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন,‘যে দাম! ইলিশ মাছে হাতেই দেয়া যাচ্ছে না। অনেক দাম, অনেক দাম।’
ইলিশ মাছের ‘অনেক দাম’ হওয়ায় তিনি অন্য মাছ কিনবেন বলে পাশের গলিতে চলে গেলেন।
এ বাজারে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দেখা গেল, পাশের মাছের গলি থেকে এক ব্যক্তি ইলিশ মাছ কিনে ফিরছেন। তাঁর নাম শফিক। তাঁর কাছে প্রশ্ন রাখা হলো—‘কত দামে কিনলেন? ইলিশ মাছের দামটা কেমন মনে হচ্ছে?’
জবাবে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘দাম বেশিই, অনেক বেশি। ১,৪০০ টাকা কেজি দরে দুইটা ইলিশ কিনলাম, এক কেজিও হলো না-দাম পড়ল ১,৩২০ টাকা। ৫০০ গ্রাম মাছ যদি ৭০০ টাকা হয়, তাহলে বেশি না? দুইটা মাছ মিলেও এক কেজি হলো না, তার মানে বুঝেনই তো...।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু করার নাই, আমরা জিম্মি। ৫০০ টাকার তেল যদি ২,০০০ টাকা হয় তাও কিনতে হবে। হয়তো কম খাব, আগে তরকারি দুইটা খাইতাম, এখন একটা খাব। তেল আগে বেশি দিতাম, এখন কম দেব। কিন্তু খেতে তো হবেই। এখন বেতনও তো বাড়ে না।’
শফিক যিনি ইলিশ মাছ কিনেছেন, এবার কথা হলো তাঁর কাছ থেকে মাছ বিক্রি করা ব্যবসায়ী সুধীরের সঙ্গে। বৈশাখ উপলক্ষে বেচাবিক্রি কেমন হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘বেচাকেনা নাই, একেবারেই কম। আগের চার ভাগের এক ভাগও বেচাকেনা নাই।’
বেচাবিক্রি কমে যাওয়ার কারণ কী মনে করছেন? - এই প্রশ্নে সুধীর বলেন, ‘ক্যামনে কইতাম! এইসব বিষয়ে আমার কোনো অভিজ্ঞতা নাই।’
এ সময় আলাপের মাঝে যোগ দেন পাশের মাছ বিক্রেতা মো. মিজান। উপযাচক হয়ে তিনি সংবাদকে বলেন,‘আগে পহেলা বৈশাখ হতো, মানুষ উদ্?যাপন করতো। এখন আর করে না। আগের মতো পহেলা বৈশাখ করেও না, বেচাকেনাও নাই। পহেলা বৈশাখে আগে ইলিশ মাছের বেচাবিক্রি অনেক বেশি হতো। এ কারণেই এবার কম।’
এরপর সুধীর আবার বলেন, ‘এক সময় ইলিশ মাছের “য়াইস্টা” সুদ্দায় নিয়া গেছিল গা, আর এখন বইয়া আছি গা, বেচাকেনা নাই।’
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি খাবার হোটেল মেসার্স নবান্ন রেস্টুরেন্ট। ইলিশ মাছ বিক্রি নিয়ে কথা হয় ওই রেস্টুরেন্টের হিসাব সহকারী মো. মজিবরের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘দাম বাড়ার কারণে ইলিশ মাছ কিনি না, বিক্রিও করি না। তবে কেউ যদি অনুষ্ঠানের জন্য অর্ডার দেয়, তখন লাইনের (চাঁদপুর জেলার) ইলিশ কিনে এনে রান্না করে দিয়ে এক পিস ৫০০ টাকা নেই।’
তিনি জানান, ‘দুই মাস আগে এক পিস ইলিশ মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা বিক্রি করতাম। এখন এক পিস ইলিশ মাছ ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে বিবেকে বাধে। আর অন্য জেলার ইলিশ মাছে মজা নাই, তাই ঐডা বেঁচি না; বেঁচলে বদনাম হয়। ১ কেজি ওজনের লাইনের ইলিশ মাছ আমাদেরই কিনতে পড়ে কেজি ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকা।’
রোববার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বরিশাল ও চট্রগ্রামে ধরা ইলিশের চেয়ে চাঁদপুর থেকে আসা ইলিশ কম। বাজারভেদে ও মানভেদে ১ কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা আর ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়।