২০২৫ সালের মধ্যে পুরো বাস্তবায়ন
এ বছর থেকেই উঠে যাচ্ছে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। আগামী বছর নতুন শিক্ষাক্রমের ‘পাইলটিং’ শুরু; ওই বছরও দুই সমাপনী পরীক্ষা অনিশ্চিত। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোন বার্ষিক পরীক্ষাই থাকছে না। নবম ও দশম শ্রেণীতে থাকবে না কোন বিভাগ বিভাজন। এতদিন নবম-দশম মিলে পাবলিক পরীক্ষা হতো। নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণী শেষে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর মূল্যায়নের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে।
পিইসিই ও জেএসসি পরীক্ষা আর হচ্ছে না
করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছর পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসিই) এবং অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এবারও এই দুই পরীক্ষা নেয়া অনেকটাই অনিশ্চিত।
কারণ, চলতি শিক্ষাবর্ষের আর বাকি আছে মাত্র সাড়ে তিন মাস। এই সময়ের মধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমান পরীক্ষার নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এই দুই পরীক্ষা নেয়ার পর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নেয়ার মতো সক্ষমতা, সময় ও সামর্থ শিক্ষা বোর্ডগুলোর আছে কি না, সে সর্ম্পকে বোর্ডের কর্মকর্তারাই সন্দিহান।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) নিজ মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘২০২৩ সাল থেকে পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা থাকবে না। সাময়িক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ এবং অষ্টম থেকে নবম শ্রেণীতে উন্নীত করা হবে।’
এ বছর পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা নেয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির ওপর এটি নির্ভর করছে। আগামী বছর এই পরীক্ষা নেয়া যাবে, সেটিও নিশ্চিত নয়। পরীক্ষা না নেয়া হলেও ধারাবাহিক ও সামষ্টিকভাবে মূল্যায়ন করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সোমবার জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপন করেন শিক্ষামন্ত্রী। নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনে কক্ষে আয়োজিত রূপরেখা উপস্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। এই অনুষ্ঠানের পর প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা প্রণয়ন করেছে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ (এনসিটিবি)। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই নতুন শিক্ষাক্রম কার্যকর হওয়ার সিন্ধান্ত ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেনি শিক্ষা প্রশাসন।
পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা সংবাদকে বলেছেন, ‘বাতিল হয়েছে কি না, সেটি আমরা বলতে পারব না। সরকার চাইলে নিতে পারে। তবে আমরা শিক্ষাক্রমের যে রূপরেখা দিয়েছি সেখানে এই দুই সমাপনী পরীক্ষা নেয়া, না নেয়ার বিষয়ে কোন কিছু বলা নেই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুটি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সোমবার সংবাদকে বলেন, ‘জেএসসি ও জেডিসি (জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট) পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা নেই। পরীক্ষা নেয়ার চিন্তাভাবনা থাকলে বোর্ডগুলোকে আগেই বলা হতো। এই মুহূর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিলেও সাড়ে তিন মাসের মধ্যে তিনটি পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী বছর যেহেতু ‘পাইলটিং’ শুরু হচ্ছে। সে জন্য ওই বছর পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা নেয়া যাবে না। কারণ, ‘পাইলটিং’ বিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষাক্রম পড়ানো হবে। কিন্তু বাকি সব বিদ্যালয়ে পুরনো শিক্ষাক্রমই পাঠদান হবে। এতে ‘বড় আকারের পাবলিক’ পরীক্ষা নেয়া হলে দুই ধরনের মূল্যায়ন ও বৈষম্য তৈরি হতে পারে।
এনসিটিবি জানিয়েছে, ২০১২ সালে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। এর আগে ১৯৯৫ ও ১৯৭৬ সালে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। সরকার ২০১০ সালে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ প্রণয়ন করলেও এর অনেক কিছুই বাস্তবায়নের বাকি রয়েছে।
নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে পাইলটিং আগামী বছর
নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে আগামী বছর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১০০টি করে মোট ২০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন এ শিক্ষাক্রমের ‘পাইলটিং’ (পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন) শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এর মধ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসাও থাকবে।
২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে নতুন এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আর ২০২৫ সালে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে। এতে শিক্ষাক্রম অনুযায়ী নবম শ্রেণী থেকে গ্রুপের বিভাজন আর থাকবে না। শিখন সময় কতটা হবে, তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে।’
প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পাইলটিং শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণী এবং ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণীতে এ শিক্ষাক্রম শুরু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘দশম শ্রেণীর কারিকুলাম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা হবে। আগে নবম-দশম মিলে পাবলিক পরীক্ষা হতো। আর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে দুটি পরীক্ষা নিয়ে সেই দুই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল দেয়া হবে।’
তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা নয়
তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নতুন প্রণীত জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা তুলে দেয়া হবে।’
নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা থাকবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘২০২৩ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে বিষয়ে ৬০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও ৪০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন বা ক্লাস মূল্যায়ন করা হবে। এ ছাড়া শারীরিক, মানসিক, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা, শিল্পকলা বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন বা ক্লাস মূল্যায়ন করে নম্বর দেয়া হবে। এভাবে মূল্যায়নের পর তাদের পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করা হবে।’
মুখস্তনির্ভরতা যাতে না থাকে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কথা জানিয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘এক স্তর থেকে আরেক স্তরে গিয়ে যেন শিক্ষার্থীর শেখার ধারাবাহিকতার মধ্যে আটকে পড়ে, সেটি নিয়ে আমাদের বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন।’
পুরো শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সেটি যেন আনন্দময় হয়। তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাঠ্যপুস্তক যেন শিক্ষার্থীদের কাছে বোঝা না হয়, সেটি প্রধানমন্ত্রী বারবার আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী আমরা পাঠ্যপুস্তকের কালিকুলামে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি।’
নতুন কারিকুলামে গভীর শিখনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ভাসা ভাসা শেখানোর প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা ও নানান সৃজনশীল কাজের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হবে। ক্লাসে পাঠদান শেষ করানোর চেষ্টা করা হবে এবং বাড়ির কাজের চাপ কমিয়ে দেয়া হবে। সারাদিন ক্লাস ও শিক্ষকদের পেছনে দৌড়ে যেন সময় পার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের মতো করে কিছুটা সময় কাটাতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা হবে।’
নবম-দশম শ্রেণীতে বিভাগ বিভাজন নয় :
প্রচলিত পদ্ধতিতে অষ্টম থেকে নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই শিক্ষার্থীদের একটি বিভাগ পছন্দ করতে হতো। তাদের বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের যেকোন একটি বিভাগে যেতে হতো। তবে নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমে এ বিভাজন থাকছে না।
নবম ও দশম শ্রেণীতে সব শিক্ষার্থী একই বিষয়ে লেখাপড়া করবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এ পর্যায়ের কোন শিক্ষার্থী বিশেষ কোন বিষয়ে পারদর্শী থাকলে, তাকে সে বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। তবে উচ্চমাধ্যমিক অর্থাৎ এইচএসসি থেকে শিক্ষার্থীদের আগের মতো বিভাগ বিভাজন করতে হবে।’
২০২৫ সালের মধ্যে পুরো বাস্তবায়ন
সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
এ বছর থেকেই উঠে যাচ্ছে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। আগামী বছর নতুন শিক্ষাক্রমের ‘পাইলটিং’ শুরু; ওই বছরও দুই সমাপনী পরীক্ষা অনিশ্চিত। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোন বার্ষিক পরীক্ষাই থাকছে না। নবম ও দশম শ্রেণীতে থাকবে না কোন বিভাগ বিভাজন। এতদিন নবম-দশম মিলে পাবলিক পরীক্ষা হতো। নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণী শেষে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর মূল্যায়নের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে।
পিইসিই ও জেএসসি পরীক্ষা আর হচ্ছে না
করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছর পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসিই) এবং অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এবারও এই দুই পরীক্ষা নেয়া অনেকটাই অনিশ্চিত।
কারণ, চলতি শিক্ষাবর্ষের আর বাকি আছে মাত্র সাড়ে তিন মাস। এই সময়ের মধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমান পরীক্ষার নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এই দুই পরীক্ষা নেয়ার পর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নেয়ার মতো সক্ষমতা, সময় ও সামর্থ শিক্ষা বোর্ডগুলোর আছে কি না, সে সর্ম্পকে বোর্ডের কর্মকর্তারাই সন্দিহান।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) নিজ মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘২০২৩ সাল থেকে পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা থাকবে না। সাময়িক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ এবং অষ্টম থেকে নবম শ্রেণীতে উন্নীত করা হবে।’
এ বছর পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা নেয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির ওপর এটি নির্ভর করছে। আগামী বছর এই পরীক্ষা নেয়া যাবে, সেটিও নিশ্চিত নয়। পরীক্ষা না নেয়া হলেও ধারাবাহিক ও সামষ্টিকভাবে মূল্যায়ন করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সোমবার জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপন করেন শিক্ষামন্ত্রী। নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনে কক্ষে আয়োজিত রূপরেখা উপস্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। এই অনুষ্ঠানের পর প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা প্রণয়ন করেছে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ (এনসিটিবি)। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই নতুন শিক্ষাক্রম কার্যকর হওয়ার সিন্ধান্ত ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেনি শিক্ষা প্রশাসন।
পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা সংবাদকে বলেছেন, ‘বাতিল হয়েছে কি না, সেটি আমরা বলতে পারব না। সরকার চাইলে নিতে পারে। তবে আমরা শিক্ষাক্রমের যে রূপরেখা দিয়েছি সেখানে এই দুই সমাপনী পরীক্ষা নেয়া, না নেয়ার বিষয়ে কোন কিছু বলা নেই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুটি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সোমবার সংবাদকে বলেন, ‘জেএসসি ও জেডিসি (জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট) পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা নেই। পরীক্ষা নেয়ার চিন্তাভাবনা থাকলে বোর্ডগুলোকে আগেই বলা হতো। এই মুহূর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিলেও সাড়ে তিন মাসের মধ্যে তিনটি পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী বছর যেহেতু ‘পাইলটিং’ শুরু হচ্ছে। সে জন্য ওই বছর পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা নেয়া যাবে না। কারণ, ‘পাইলটিং’ বিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষাক্রম পড়ানো হবে। কিন্তু বাকি সব বিদ্যালয়ে পুরনো শিক্ষাক্রমই পাঠদান হবে। এতে ‘বড় আকারের পাবলিক’ পরীক্ষা নেয়া হলে দুই ধরনের মূল্যায়ন ও বৈষম্য তৈরি হতে পারে।
এনসিটিবি জানিয়েছে, ২০১২ সালে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। এর আগে ১৯৯৫ ও ১৯৭৬ সালে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। সরকার ২০১০ সালে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ প্রণয়ন করলেও এর অনেক কিছুই বাস্তবায়নের বাকি রয়েছে।
নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে পাইলটিং আগামী বছর
নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে আগামী বছর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১০০টি করে মোট ২০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন এ শিক্ষাক্রমের ‘পাইলটিং’ (পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন) শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এর মধ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসাও থাকবে।
২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে নতুন এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আর ২০২৫ সালে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে। এতে শিক্ষাক্রম অনুযায়ী নবম শ্রেণী থেকে গ্রুপের বিভাজন আর থাকবে না। শিখন সময় কতটা হবে, তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে।’
প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পাইলটিং শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণী এবং ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণীতে এ শিক্ষাক্রম শুরু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘দশম শ্রেণীর কারিকুলাম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা হবে। আগে নবম-দশম মিলে পাবলিক পরীক্ষা হতো। আর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে দুটি পরীক্ষা নিয়ে সেই দুই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল দেয়া হবে।’
তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা নয়
তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নতুন প্রণীত জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা তুলে দেয়া হবে।’
নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা থাকবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘২০২৩ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে বিষয়ে ৬০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও ৪০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন বা ক্লাস মূল্যায়ন করা হবে। এ ছাড়া শারীরিক, মানসিক, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা, শিল্পকলা বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন বা ক্লাস মূল্যায়ন করে নম্বর দেয়া হবে। এভাবে মূল্যায়নের পর তাদের পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করা হবে।’
মুখস্তনির্ভরতা যাতে না থাকে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কথা জানিয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘এক স্তর থেকে আরেক স্তরে গিয়ে যেন শিক্ষার্থীর শেখার ধারাবাহিকতার মধ্যে আটকে পড়ে, সেটি নিয়ে আমাদের বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন।’
পুরো শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সেটি যেন আনন্দময় হয়। তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাঠ্যপুস্তক যেন শিক্ষার্থীদের কাছে বোঝা না হয়, সেটি প্রধানমন্ত্রী বারবার আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী আমরা পাঠ্যপুস্তকের কালিকুলামে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি।’
নতুন কারিকুলামে গভীর শিখনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ভাসা ভাসা শেখানোর প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা ও নানান সৃজনশীল কাজের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হবে। ক্লাসে পাঠদান শেষ করানোর চেষ্টা করা হবে এবং বাড়ির কাজের চাপ কমিয়ে দেয়া হবে। সারাদিন ক্লাস ও শিক্ষকদের পেছনে দৌড়ে যেন সময় পার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের মতো করে কিছুটা সময় কাটাতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা হবে।’
নবম-দশম শ্রেণীতে বিভাগ বিভাজন নয় :
প্রচলিত পদ্ধতিতে অষ্টম থেকে নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই শিক্ষার্থীদের একটি বিভাগ পছন্দ করতে হতো। তাদের বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের যেকোন একটি বিভাগে যেতে হতো। তবে নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমে এ বিভাজন থাকছে না।
নবম ও দশম শ্রেণীতে সব শিক্ষার্থী একই বিষয়ে লেখাপড়া করবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এ পর্যায়ের কোন শিক্ষার্থী বিশেষ কোন বিষয়ে পারদর্শী থাকলে, তাকে সে বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। তবে উচ্চমাধ্যমিক অর্থাৎ এইচএসসি থেকে শিক্ষার্থীদের আগের মতো বিভাগ বিভাজন করতে হবে।’