alt

জাতীয়

অর্থায়ন ও মায়ানমারের আগ্রহ নেই আটকে আছে ট্রান্স এশিয়ান রেলরুট

২০২২ সালেও শেষ হচ্ছে না দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ : সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

অর্থায়ন ও মায়ানমারের আগ্রহ না থাকায় আটকে আছে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের রুট কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণকাজ। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে রামু দিয়ে মায়ানমারের সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করার কথা ছিল।

অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়া ও মায়ানমারের পক্ষ থেকে কোন অনুমতি না পাওয়ার কারণে রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তবে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

২০১০ সালের জুলাইয়ে কাজ শুরু হয়ে একদফা ডিপিপি সংশোধন করে ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথাছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ, বনের গাছ কাটা নিয়ে সমস্যা ও করোনার কারণে প্রকল্পের আরও দুই বছর বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় লাগবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। কিন্তু কাজ শেষে পর্যবেক্ষণের জন্য এক বছর বেশি সময় নেয়া হয়েছে। তাই প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি না, শুধু সময় দুই বছর বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬২ শতাংশ।’ ২০২৩ সালের মধ্যে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনসহ অন্যান্য কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ৬ জুলাই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় একনেক। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা ৩৫ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। পরে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন করা হয়। ওই বছরই ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত হয় প্রকল্পটি। মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। ব্যয় ১৬ হাজার ১৮২ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ৮৭৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ধরা হয়।

এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বাকি চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। জমি অধিগ্রহণ বৃদ্ধি, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি পাওয়া, ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ ও হাতি চলাচলের নিরাপত্তার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটির প্রথম দুই প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজ (দোহাজারী-চকরিয়া) যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন। আর দ্বিতীয় প্যাকেজে (চকরিয়া-রামু-কক্সবাজার) যৌথভাবে কাজ করছে চায়না সার্টিফিকেশন অ্যান্ড ইন্সপেকশন কোম্পানি (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার।

মায়ানমারের কারণে হচ্ছে না ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে রুট

আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ৯ জানুয়ারি ট্রান্স এশিয়ান রেলরুট-সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ইউরোপের জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে শুরু হওয়া এই ট্রান্স এশিয়ান রেলরুট বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩২টি দেশকে একই নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসবে। এর ফলে রেলওয়ের একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে বলে জানান রেল কর্তৃপক্ষ।

ট্রান্স এশিয়ান রেললাইনে তিন রুটের মাধ্যমে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। এর মধ্যে টিএআর-১ ভারতের গেদে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের দর্শনা স্টেশন হয়ে ঈশ্বরদী-জামটোইল-জয়দেবপুর-টঙ্গি-আখাউড়া-চট্টগ্রাম-দোহাজারী হয়ে কক্সবাজার ও মায়ানমার সীমান্তে সংযুক্ত হওয়ার কথা।

মায়ানমার দিয়ে এ রেলপথ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করবে। এ ছাড়া টিএআর-২ ভারতের সিঙ্গাবাদ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের রহনপুর হয়ে ঈশ্বরদী, টিএআর-৩ ভারতের রাধিকাপুর সীমান্ত দিয়ে আসা ট্রেন বাংলাদেশের বিরল ও পার্বতীপুর হয়ে ঈশ্বরদী এসে শেষ হবে।

এই দুটি রুট সাব রুটের মাধ্যমে টিএআর-১ সঙ্গে যুক্ত হবে। এরপর বঙ্গবন্ধু সেতু, জয়দেবপুর, টঙ্গী এসে মিলিত হবে। এরপর সাব রুট-১ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করবে। এ ছাড়া সাব রুট-২ দিয়ে টঙ্গি হয়ে আখাউড়া দিয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর হয়ে ভারতের মহিশাসান সীমান্তে প্রবেশ করবে।

ট্রান্স এশিয়ান এই রেলরুটে যুক্ত হওয়ার জন্য কুলাউড়া-শাহবাজপুর ৪০ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্বাসন এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ ছাড়া সব স্থানে রেললাইন সংস্কার ও আধুনিকায়নের কাজ চলছে বলে রেলওয়ের সূত্রে জানায় গেছে।

ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটের আওতায় মায়ানমারের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনে দেশটির সীমান্তবর্তী এলাকা গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল। এ জন্য মায়ানমারের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। তবে দেশটি তাতে অনুমতি দেয়নি। এমনকি ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটে যুক্ত হতে মায়ানমারেরও গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল। তবে তারাও এ ধরনের কোন প্রকল্প গ্রহণ করেনি। ফলে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে না। আদৌ তা হবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। এতে অসমাপ্ত অবস্থাতেই শেষ করতে হবে দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সংবাদকে বলেন, ‘ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু মায়ানমারের উদ্যোগ না থাকার কারণে রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত এই অংশের কাজটি করা যাচ্ছে না।’ মায়ানমার যদি আগ্রহ দেখায় তাহলে পরবর্তীতে এই অংশটুকুর কাজ শেষ করা হবে বলে জানান তিনি।

ছবি

একদিনে করোনায় আক্রান্ত ১৬ জন

ছবি

তাপপ্রবাহ নিয়ে ৭২ ঘণ্টার সতর্ক বার্তা আবহাওয়া অধিদপ্তরের

ছবি

বঙ্গবন্ধু টানেলে টোল ফ্রি সুবিধা পেল যেসব গাড়ি

ছবি

সারাদেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি

ছবি

জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাস আর নেই

ছবি

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হবে : আরাফাত

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং মুজিবনগর দিবস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মেকে জানাতে হবে

ছবি

স্থানীয় সরকার নির্বাচ‌নে ভোটার উপ‌স্থি‌তি সংসদ নির্বাচ‌নের ‌চে‌য়ে বে‌শি থাকবে

ছবি

প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

ছবি

থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

জুন-জুলাইয়ে দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জার হার বেশি

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

এথেন্স সম্মেলনে দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

ছবি

কৃষকরাই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি: স্পিকার

ছবি

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সাবেক ইউপি সদস্য গুলিবিদ্ধ

ছবি

তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ভোট ২৯ মে

ছবি

এমভি আবদুল্লাহ : ২১ নাবিক দেশে ফিরবেন জাহাজে, বাকি দুজন বিমানে

ছবি

৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগে প্রক্রিয়া শুরু, আবেদনের নিয়ম

ছবি

ঢাকায় গ্রিসের দূতাবাস স্থাপন ও জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা

ছবি

টিসিবির তালিকা হালনাগাদ করতে চাই:বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গমের আবাদ কম

ছবি

ভোজ্য তেলের দাম বাড়াতে চায় ব্যবসায়ীরা আপত্তি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর

ছবি

অনিবন্ধিত অনলাইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবো : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিখাত : মন্ত্রী

ছবি

দেশে ফিরতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে নাবিকদের

ছবি

মুক্ত এমভি আবদুল্লাহর ৩ ছবি প্রকাশ

ছবি

২ মে বসছে সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন

ছবি

কারো যাতে ডেঙ্গু না হয় সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

মুক্তিপণ দেওয়ার ছবি নিয়ে যা বললেন নৌ প্রতিমন্ত্রী

ছবি

লঞ্চে বেড়েছে ঢাকায় ফেরা যাত্রীর চাপ

ছবি

নববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট ভবিষ্যৎ নির্মাণে একযোগে কাজ করার আহ্বান অর্থ প্রতিমন্ত্রীর

ছবি

জিম্মি জাহাজটি কীভাবে মুক্ত হলো, জানাল মালিকপক্ষ

ছবি

সোমানিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে এমভি আব্দুল্লাহ মুক্ত ২৩ নাবিক অক্ষত

ছবি

মুক্তিপণ নিয়ে তীরে উঠেই ৮ জলদস্যু গ্রেপ্তার

ছবি

দেশের প্রতি ভালোবাসার বার্তা এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের

tab

জাতীয়

অর্থায়ন ও মায়ানমারের আগ্রহ নেই আটকে আছে ট্রান্স এশিয়ান রেলরুট

২০২২ সালেও শেষ হচ্ছে না দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

অর্থায়ন ও মায়ানমারের আগ্রহ না থাকায় আটকে আছে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের রুট কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণকাজ। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে রামু দিয়ে মায়ানমারের সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করার কথা ছিল।

অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়া ও মায়ানমারের পক্ষ থেকে কোন অনুমতি না পাওয়ার কারণে রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তবে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

২০১০ সালের জুলাইয়ে কাজ শুরু হয়ে একদফা ডিপিপি সংশোধন করে ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথাছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ, বনের গাছ কাটা নিয়ে সমস্যা ও করোনার কারণে প্রকল্পের আরও দুই বছর বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় লাগবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। কিন্তু কাজ শেষে পর্যবেক্ষণের জন্য এক বছর বেশি সময় নেয়া হয়েছে। তাই প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি না, শুধু সময় দুই বছর বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬২ শতাংশ।’ ২০২৩ সালের মধ্যে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনসহ অন্যান্য কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ৬ জুলাই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় একনেক। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা ৩৫ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। পরে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন করা হয়। ওই বছরই ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত হয় প্রকল্পটি। মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। ব্যয় ১৬ হাজার ১৮২ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ৮৭৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ধরা হয়।

এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বাকি চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। জমি অধিগ্রহণ বৃদ্ধি, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি পাওয়া, ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ ও হাতি চলাচলের নিরাপত্তার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটির প্রথম দুই প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজ (দোহাজারী-চকরিয়া) যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন। আর দ্বিতীয় প্যাকেজে (চকরিয়া-রামু-কক্সবাজার) যৌথভাবে কাজ করছে চায়না সার্টিফিকেশন অ্যান্ড ইন্সপেকশন কোম্পানি (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার।

মায়ানমারের কারণে হচ্ছে না ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে রুট

আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ৯ জানুয়ারি ট্রান্স এশিয়ান রেলরুট-সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ইউরোপের জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে শুরু হওয়া এই ট্রান্স এশিয়ান রেলরুট বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩২টি দেশকে একই নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসবে। এর ফলে রেলওয়ের একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে বলে জানান রেল কর্তৃপক্ষ।

ট্রান্স এশিয়ান রেললাইনে তিন রুটের মাধ্যমে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। এর মধ্যে টিএআর-১ ভারতের গেদে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের দর্শনা স্টেশন হয়ে ঈশ্বরদী-জামটোইল-জয়দেবপুর-টঙ্গি-আখাউড়া-চট্টগ্রাম-দোহাজারী হয়ে কক্সবাজার ও মায়ানমার সীমান্তে সংযুক্ত হওয়ার কথা।

মায়ানমার দিয়ে এ রেলপথ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করবে। এ ছাড়া টিএআর-২ ভারতের সিঙ্গাবাদ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের রহনপুর হয়ে ঈশ্বরদী, টিএআর-৩ ভারতের রাধিকাপুর সীমান্ত দিয়ে আসা ট্রেন বাংলাদেশের বিরল ও পার্বতীপুর হয়ে ঈশ্বরদী এসে শেষ হবে।

এই দুটি রুট সাব রুটের মাধ্যমে টিএআর-১ সঙ্গে যুক্ত হবে। এরপর বঙ্গবন্ধু সেতু, জয়দেবপুর, টঙ্গী এসে মিলিত হবে। এরপর সাব রুট-১ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করবে। এ ছাড়া সাব রুট-২ দিয়ে টঙ্গি হয়ে আখাউড়া দিয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর হয়ে ভারতের মহিশাসান সীমান্তে প্রবেশ করবে।

ট্রান্স এশিয়ান এই রেলরুটে যুক্ত হওয়ার জন্য কুলাউড়া-শাহবাজপুর ৪০ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্বাসন এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ ছাড়া সব স্থানে রেললাইন সংস্কার ও আধুনিকায়নের কাজ চলছে বলে রেলওয়ের সূত্রে জানায় গেছে।

ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটের আওতায় মায়ানমারের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনে দেশটির সীমান্তবর্তী এলাকা গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল। এ জন্য মায়ানমারের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। তবে দেশটি তাতে অনুমতি দেয়নি। এমনকি ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটে যুক্ত হতে মায়ানমারেরও গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল। তবে তারাও এ ধরনের কোন প্রকল্প গ্রহণ করেনি। ফলে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে না। আদৌ তা হবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। এতে অসমাপ্ত অবস্থাতেই শেষ করতে হবে দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সংবাদকে বলেন, ‘ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু মায়ানমারের উদ্যোগ না থাকার কারণে রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত এই অংশের কাজটি করা যাচ্ছে না।’ মায়ানমার যদি আগ্রহ দেখায় তাহলে পরবর্তীতে এই অংশটুকুর কাজ শেষ করা হবে বলে জানান তিনি।

back to top