alt

রাজনীতি

ত্রুটিপূর্ণ বিচার প্রক্রিয়ায় জামায়াতকে সুবিধা দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার—বিবৃতি অধিকার কমিটির

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী কীভাবে নির্দোষ হতে পারেন—এই প্রশ্ন তুলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, যে পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ পূরণের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের ত্রুটিপূর্ণ বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছিল, সেই একই স্বার্থকে ধারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার জামায়াতের স্বার্থকে সংরক্ষণ করেছে।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাস নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, হারুন উর রশীদ, সীমা দত্ত, সামিনা লুৎফা, আবদুল্লাহ আল ক্বাফী, ফখরুদ্দিন কবীর আতিক, মাহা মির্জা, আফজাল হোসেইন, মারজিয়া প্রভাসহ কমিটির অন্য সদস্যদের পক্ষ থেকে বিবৃতিটি পাঠানো হয়েছে।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আপিল বিভাগের পুনর্বিবেচনার শুনানিতে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ঘোষণা দিয়ে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তাঁর বিবৃতিতে এই পুনর্বিবেচনার রায়কে ন্যায়বিচার অভিহিত করেছেন। আমরা বলতে চাই, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রতিপন্ন করে বেকসুর খালাস কোনো ন্যায়বিচার নয়, বরং বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক প্রভাবের উদাহরণ।’

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ টি এম আজহার রংপুর জেলায় ইসলামী ছাত্রসংঘের জেলা কমিটির সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন উল্লেখ করে অধিকার কমিটি বলেছে, আজহার ও তাঁর দল জামায়াত, আলবদর ও ইসলামী ছাত্রসংঘ সাংগঠনিকভাবে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের গণহত্যায় সম্পৃক্ত থাকার ঐতিহাসিক ভিত্তিই প্রমাণ করে আজহার সাংগঠনিক ভূমিকার কারণে এই গণহত্যার অংশীদার। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রথম থেকেই গণহত্যার বিচারের মৌলিক নীতি না মেনে দল হিসেবে জামায়াত, আলবদর, আলশামস, ছাত্রশিবিরের বিচারের পরিবর্তে তাঁরা ব্যক্তি হিসেবে বিচারকাজ সম্পন্ন করেছেন।

এতে বিশ্বের বিভিন্ন ঐতিহাসিক গণহত্যার বিচারের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিকে অনুসরণ করা হয়নি দাবি করে কমিটি বলেছে, ‘আশ্চর্যের বিষয় হলো, অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও তারা ন্যায়বিচার প্রাপ্তির লক্ষ্যে সেই ট্রাইব্যুনালের ত্রুটিপূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়াতেই আপিল রিভিউ করল। আমরা বলতে চাই, যে পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ পূরণের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের এই ত্রুটিপূর্ণ বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছিল, সেই একই স্বার্থকে এই অন্তর্বর্তী সরকার ধারণ করে জামায়াতের স্বার্থকে সংরক্ষণ করেছে।’

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার এমনভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাজিয়েছে, যেখানে প্রধান প্রসিকিউটরসহ রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটররা আগের যুদ্ধাপরাধী আসামিদের পক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই এ মামলার রায়ে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ (স্বার্থের সংঘাত) ঘটেছে, যা মামলার রায়কে প্রভাবিত করেছে। শুধু তা–ই নয়, বর্তমান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পূর্ববর্তী প্রসিকিউশনের কার্যক্রমের দায় নিতে অস্বীকার করার মাধ্যমে কেবল পেশাগত অসদাচরণই নয়, বরং পুরো বিচারিক প্রক্রিয়াকেই দুর্বল করে দিয়েছেন। আগের প্রসিকিউশন ভুল করলে বর্তমান প্রসিকিউশনের দায়িত্ব ছিল সেটি সংশোধন করে রাষ্ট্রকে ডিফেন্ড করা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আসামির নির্দোষ হিসেবে ‘বেকসুর খালাস’ পাওয়া ন্যায়বিচারের নামে প্রহসন।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থান যে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছিল, জামায়াত নেতা আজহারের খালাসের রায় সেই আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জুলাই গণহত্যারও বিচার না করার ‘বন্দোবস্ত’ করছে বলে মন্তব্য করেছে অধিকার কমিটি। এই রায়ের প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের ওপর জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের ন্যক্কারজনক হামলায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন উল্লেখ করে তারা বলেছে, ১৫ বছর ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেভাবে ছাত্রলীগ হামলা করত, ছাত্রশিবির তার পুনরাবৃত্তি করছে। নারী শিক্ষার্থীদেরও টার্গেট করে আক্রমণ করা হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, ন্যায্য দাবিদাওয়ার কথা বলতে গেলে সিলেটের একজন নারী শিক্ষার্থীকে শিবির ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে, ১৫ বছর ধরে ছাত্রলীগের ছত্রচ্ছায়ায় বেড়ে ওঠা ছাত্রশিবির সংগঠনটি মননে ও আচরণে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকেই বহন করে চলছে।

অবিলম্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ত্রুটিপূর্ণ অংশ সংশোধন ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে গণহত্যার মৌলিক নীতি মেনে গণহত্যাকারী জামায়াত ও আওয়ামী লীগের বিচার করার দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলায় জড়িত ছাত্রশিবিরের সদস্যদের চিহ্নিত করে বিচার করার দাবিও জানিয়েছে তারা।

ছবি

জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলার ঘটনায় মামলা নেয়নি পুলিশ, অভিযোগ জাতীয় পার্টির

ছবি

জামায়াত-শিবির ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে: ছাত্র ইউনিয়ন

রাকিবের অসুস্থতা নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, দাবি ছাত্রদল নেতার

স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর ফ্যাসিবাদী আক্রমণ: নাগরিক সমাজের বিবৃতি

ছবি

গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অবিলম্বে রূপরেখা চায় গণফোরাম

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে সালাহউদ্দিনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়

ছবি

দেশে একজনই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ‘চান না’: মির্জা আব্বাস

ছবি

নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো নির্ধারণে এনসিপির প্রস্তাব, সর্বদলীয় কমিটির সুপারিশ

ছবি

বর্তমান সরকারের হাতে দেশ ও মানুষ নিরাপদ নয়: জাতীয় পার্টি

ছবি

রংপুরে জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলা, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির

ছবি

নাগরিক অধিকার ও রাষ্ট্রীয় ভারসাম্যে জাতীয় সনদের ওপর জোর

ছবি

‘সংস্কারের নামে ফেনা তুলছেন, কয়টা বাস্তবায়ন করেছেন?’: প্রধান উপদেষ্টাকে বিএনপি নেতার প্রশ্ন

ছবি

জবাবদিহির অভাবে অস্থিরতা, অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে হবে: তারেক রহমান

ছবি

শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি ছাত্র ফেডারেশনের

ছবি

খালেদা জিয়ার আশাবাদ: শিগগিরই দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে

“সরকার আদালত অবমাননা করছে”, অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ইশরাকের অভিযোগ

ছবি

“শপথ না পড়ালে আন্দোলন”, হুঁশিয়ারি দিলেন মেয়র পদে গেজেটপ্রাপ্ত ইশরাক

ছবি

রাজশাহী-চট্টগ্রামে হামলার প্রতিবাদে বিচার দাবি ছাত্র ফ্রন্টের

ডাকসু নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টার অভিযোগ শিবিরের

ছবি

বাড্ডায় দোকানকর্মী নিহতের ঘটনায় মামলা; সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতারা আসামি

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ, সিরাজগঞ্জে কবর ভাঙার ঘটনায় ইউএনও’র হস্তক্ষেপ

ছবি

ইশরাকের মেয়র পদে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল, নির্বাচন কমিশনের ওপর সিদ্ধান্তের ভার

সাভারে ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে স্থান পেয়েছে বিবাহিত ও ছাত্রলীগ কর্মী

ছবি

স্টারলিংক আরাকান আর্মির জন্য আনা হয়েছে: মির্জা আব্বাস

ছবি

দুদকের করা অবৈধ সম্পদের মামলা বাতিল, খালাস পেলেন তারেক-জুবাইদা

ছবি

কারামুক্ত আজহারের শাহবাগে সংবর্ধনা, জুলাই আন্দোলনকারীদের জানালেন কৃতজ্ঞতা

ছবি

ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে সহযোগিতা কঠিন হবে: বিএনপি

পদত্যাগের গুঞ্জনের মাঝে সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা

ছবি

আজহারের খালাসের পর জামায়াতের সংবাদ সম্মেলন: ‘নেতৃত্ব গণহত্যা’ বলে অভিযোগ

ছবি

আজহারের খালাসের পর শফিকুর রহমান বললেন, “সত্যকে চেপে রাখা যায় না”

ছবি

এই রায়ে প্রমাণিত হয়েছে সত্যকে চেপে রাখা যায় না: জামায়াত আমির

ছবি

সচিবালয় ও এনবিআরের আন্দোলন নিয়ে এনসিপি নেতার হুঁশিয়ারি

ছবি

‘বিপ্লব ওখানেও হবে’—চলমান আন্দোলনে কড়া বার্তা আবদুল হান্নান মাসউদের

ছবি

জুবাইদা রহমানের সাজা টিকবে কি না জানা যাবে বুধবার

ডিসেম্বরে নির্বাচিত সরকার দেখতে চান রাজনৈতিক নেতারা, ইউনূসের কার্যক্রমে উদ্বেগ

ছবি

"বিবৃতি বোমার মতো ছিল, শেখ হাসিনা ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন" — শফিকুল আলমের পোস্টে আলোচিত সালাহউদ্দিন ইস্যু

tab

রাজনীতি

ত্রুটিপূর্ণ বিচার প্রক্রিয়ায় জামায়াতকে সুবিধা দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার—বিবৃতি অধিকার কমিটির

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী কীভাবে নির্দোষ হতে পারেন—এই প্রশ্ন তুলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, যে পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ পূরণের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের ত্রুটিপূর্ণ বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছিল, সেই একই স্বার্থকে ধারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার জামায়াতের স্বার্থকে সংরক্ষণ করেছে।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাস নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, হারুন উর রশীদ, সীমা দত্ত, সামিনা লুৎফা, আবদুল্লাহ আল ক্বাফী, ফখরুদ্দিন কবীর আতিক, মাহা মির্জা, আফজাল হোসেইন, মারজিয়া প্রভাসহ কমিটির অন্য সদস্যদের পক্ষ থেকে বিবৃতিটি পাঠানো হয়েছে।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আপিল বিভাগের পুনর্বিবেচনার শুনানিতে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ঘোষণা দিয়ে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তাঁর বিবৃতিতে এই পুনর্বিবেচনার রায়কে ন্যায়বিচার অভিহিত করেছেন। আমরা বলতে চাই, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রতিপন্ন করে বেকসুর খালাস কোনো ন্যায়বিচার নয়, বরং বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক প্রভাবের উদাহরণ।’

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ টি এম আজহার রংপুর জেলায় ইসলামী ছাত্রসংঘের জেলা কমিটির সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন উল্লেখ করে অধিকার কমিটি বলেছে, আজহার ও তাঁর দল জামায়াত, আলবদর ও ইসলামী ছাত্রসংঘ সাংগঠনিকভাবে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের গণহত্যায় সম্পৃক্ত থাকার ঐতিহাসিক ভিত্তিই প্রমাণ করে আজহার সাংগঠনিক ভূমিকার কারণে এই গণহত্যার অংশীদার। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রথম থেকেই গণহত্যার বিচারের মৌলিক নীতি না মেনে দল হিসেবে জামায়াত, আলবদর, আলশামস, ছাত্রশিবিরের বিচারের পরিবর্তে তাঁরা ব্যক্তি হিসেবে বিচারকাজ সম্পন্ন করেছেন।

এতে বিশ্বের বিভিন্ন ঐতিহাসিক গণহত্যার বিচারের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিকে অনুসরণ করা হয়নি দাবি করে কমিটি বলেছে, ‘আশ্চর্যের বিষয় হলো, অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও তারা ন্যায়বিচার প্রাপ্তির লক্ষ্যে সেই ট্রাইব্যুনালের ত্রুটিপূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়াতেই আপিল রিভিউ করল। আমরা বলতে চাই, যে পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ পূরণের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের এই ত্রুটিপূর্ণ বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছিল, সেই একই স্বার্থকে এই অন্তর্বর্তী সরকার ধারণ করে জামায়াতের স্বার্থকে সংরক্ষণ করেছে।’

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার এমনভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাজিয়েছে, যেখানে প্রধান প্রসিকিউটরসহ রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটররা আগের যুদ্ধাপরাধী আসামিদের পক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই এ মামলার রায়ে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ (স্বার্থের সংঘাত) ঘটেছে, যা মামলার রায়কে প্রভাবিত করেছে। শুধু তা–ই নয়, বর্তমান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পূর্ববর্তী প্রসিকিউশনের কার্যক্রমের দায় নিতে অস্বীকার করার মাধ্যমে কেবল পেশাগত অসদাচরণই নয়, বরং পুরো বিচারিক প্রক্রিয়াকেই দুর্বল করে দিয়েছেন। আগের প্রসিকিউশন ভুল করলে বর্তমান প্রসিকিউশনের দায়িত্ব ছিল সেটি সংশোধন করে রাষ্ট্রকে ডিফেন্ড করা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আসামির নির্দোষ হিসেবে ‘বেকসুর খালাস’ পাওয়া ন্যায়বিচারের নামে প্রহসন।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থান যে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছিল, জামায়াত নেতা আজহারের খালাসের রায় সেই আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জুলাই গণহত্যারও বিচার না করার ‘বন্দোবস্ত’ করছে বলে মন্তব্য করেছে অধিকার কমিটি। এই রায়ের প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের ওপর জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের ন্যক্কারজনক হামলায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন উল্লেখ করে তারা বলেছে, ১৫ বছর ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেভাবে ছাত্রলীগ হামলা করত, ছাত্রশিবির তার পুনরাবৃত্তি করছে। নারী শিক্ষার্থীদেরও টার্গেট করে আক্রমণ করা হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, ন্যায্য দাবিদাওয়ার কথা বলতে গেলে সিলেটের একজন নারী শিক্ষার্থীকে শিবির ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে, ১৫ বছর ধরে ছাত্রলীগের ছত্রচ্ছায়ায় বেড়ে ওঠা ছাত্রশিবির সংগঠনটি মননে ও আচরণে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকেই বহন করে চলছে।

অবিলম্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ত্রুটিপূর্ণ অংশ সংশোধন ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে গণহত্যার মৌলিক নীতি মেনে গণহত্যাকারী জামায়াত ও আওয়ামী লীগের বিচার করার দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলায় জড়িত ছাত্রশিবিরের সদস্যদের চিহ্নিত করে বিচার করার দাবিও জানিয়েছে তারা।

back to top