alt

উপ-সম্পাদকীয়

মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে আদিবাসী কোটায় অ-আদিবাসী শিক্ষার্থী

বিভূতী ভূষণ মাহাতো

: সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১
image

স্বাস্থ্য শিক্ষার জন্য মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে ভর্তিযুদ্ধে ব্যাপক প্রতিযোগিতা করে নির্বাচিত হতে হয়। মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু সংখ্যক আসন সংরক্ষিত করা রয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনগুলোতে অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করা হয়ে আসছে। এতে প্রতি বছরই আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তি থেকে ঝরে পরছে।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল গত ৪ এপ্রিল প্রকাশিত হয়। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখতে পাই, আদিবাসী কোটায় বরাদ্দকৃত আসনে আবারও অ-আদিবাসীদের নির্বাচিত করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। অ-আদিবাসীদের নির্বাচিত করায় ৯ জন আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মেডিকেলে কলেজে ভর্তিতে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বছর ৯টি আসনে অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীকে নির্বাচিত করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে আদিবাসী কোটার আসন বণ্টন বিষয়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা রয়েছে। আদিবাসী (উপজাতীয়) ও পার্বত্য তিন জেলার অ-আদিবাসী কোটায় মোট ৩৩টি (৩০+৩) আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যার মধ্যে পার্বত্য তিন জেলার আদিবাসীদের জন্য ৯টি, পার্বত্য তিন জেলার অ-আদিবাসীদের জন্য ৩টি, অন্যান্য জেলার আদিবাসীদের জন্য ৮টি, এবং রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের জন্য আদিবাসীদের শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত ১৩টি আসন বরাদ্দ রাখা রয়েছে।

প্রকাশিত ফলাফল থেকে খুঁজে বের করি যে, আদিবাসী কোটায় বরাদ্দকৃত আসনগুলোতে অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। পার্বত্য ব্যতীত অন্যান্য জেলার আদিবাসী শিক্ষার্থীদের কোটায় (৭৭ কোড) নির্বাচিত আটজনের মধ্যে পাঁচজনই অ-আদিবাসী। সমতলের মাত্র তিনজন আদিবাসী শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।

এদিকে তিন পার্বত্য জেলার অ-আদিবাসীদের জন্য মাত্র তিনটি আসন বরাদ্দ থাকলেও মোট সাতজনকে নির্বাচন করা হয়েছে। যার মধ্যে একজনকে রাঙামাটি জেলার আদিবাসী কোটার আসনে নির্বাচন করা হয়েছে।

অ-আদিবাসী (তিন পার্বত্য জেলা) শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত তিনটি আসনসহ মোট ১২ জন অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীকে আদিবাসী কোটায় ভর্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এর ফলে ৯ জন অ-আদিবাসী শিক্ষার্থী কর্তৃক আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন দখল করে নেয়ায় সমতলের পাঁচজন আদিবাসী শিক্ষার্থীসহ মোট ৯ জন আদিবাসী শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে না।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তির ১৩নং অনুচ্ছেদে আদিবাসী কোটামূহের আসন বণ্টন ও কোড ৩ নং ও ৪ নং সারণিতে বলা হয়েছে। ৪ নং সারণিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে- ৭১ কোড হলো রাঙ্গামাটির আদিবাসী, ৭২ কোড হলো রাঙ্গামাটির অ-আদিবাসী, ৭৩ কোড হলো খাগড়াছড়ির আদিবাসী, ৭৪ কোড হলো খাগড়াছড়ির অ-আদিবাসী, ৭৫ কোড হলো বান্দরবানের আদিবাসী, ৭৬ কোড হলো বান্দরবানের অ-আদিবাসী এবং ৭৭ কোড হলো পার্বত্য ব্যতীত অন্যান্য আদিবাসী। সারণি-৩ এ এমবিবিএসের মোট আসন সংখার বণ্টন বিবরণ দেয়া আছে। সেখানে বলা হয়েছে- সর্বমোট আসন সংখ্যা- ৪৩৫০ যার মধ্যে সাধারণ আসন ৪২৩০টি, মুক্তিযোদ্ধা কোটার (২%) আসন ৮৭টি, আদিবাসী (তিন পার্বত্য-৩*৩) ০৯টি, অ-আদিবাসী (তিন পার্বত্য জেলা) ৩টি, আদিবাসী (অন্যান্য জেলার) ৮টি এবং রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের জন্য আদিবাসী আসন সংরক্ষিত ১৩টি।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তির সারণি-২ এ বলা হয়েছে আদিবাসী কোটার শিক্ষার্থীরা কোন কোন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবেন। কলেজগুলো হচ্ছে- আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী; কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ; যশোর মেডিকেল কলেজ; সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ; শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জ; কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ; শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ, গোপালগঞ্জ; শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, টাঙ্গাইল; শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, জামালপুর; কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ, মানিকগঞ্জ; শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ, সিরাজগঞ্জ; পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ; রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, হবিগঞ্জ; নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ; নিলফামারী মেডিকেল কলেজ; নওগাঁ মেডিকেল কলেজ; মাগুরা মেডিকেল কলেজ; চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ; বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ, সুনামগঞ্জ। নির্ধারিত প্রতিটি কলেজেই ১টি করে আসন বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়াও রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজে ১৩টি আসন সংরক্ষিত করা রয়েছে। বরাদ্দকৃত সব মেডিকেল কলেজই নতুন। পুরোনো কলেজগুলোতে আদিবাসী কোটার শিক্ষার্থীদের ভর্তির কোন সুযোগ রাখা হয়নি।

কোড ৭১ রাঙ্গামাটি জেলার আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও সেখানে একজন অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীকে নির্বাচিত করা হয়েছে। কোড ৭২, ৭৪, এবং ৭৬ এ তিন পার্বত্য জেলার অ-আদিবাসীদের জন্য মোট ৩টি আসন বরাদ্দ থাকলেও মোট ছয়জনকে নির্বাচন করা হয়েছে। কোড ৭৭ এ সমতলের আদিবাসী (তিন পাবর্ত্য ব্যতীত) শিক্ষার্থীদের জন্য ৮টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। ৭৭ কোডেও পাঁচজন অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।

অ-আদিবাসী ৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭১ কোড এ ইভা নাহার মুক্তা নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজে; ৭২ কোড এ আজিজা বিনতে করিম স্নেহা রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজে; ৭৪ কোড এ জেরিন তাসলিম সাদিয়া রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজে, ৭৬ কোড এ নুসরাত জাহান রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজে; ৭৭ কোড এ নুসরাত আলম গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজে, মোছা. জাকিয়া ইয়াসমিন টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে, দেবস্মিতা দাস বর্ণা পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে, মোছা. ইসরাত জাহান যশোর মেডিকেল কলেজে এবং মো. আরিফ রহমান কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানতে পেরেছি, প্রতি বছরই আদিবাসী কোটায় অ-আদিবাসীদের নির্বাচন করা হয়। দীর্ঘদিন থেকে এভাবেই অনেক আদিবাসী শিক্ষার্থী মেডিকেল ভর্তি থেকে ঝরে পরছে। কিন্তু স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাদের আদিবাসী কোটার ব্যাপারে তাদের উদাসীনতা প্রকাশ করেই চলেছে। আদিবাসী কোটায় অ-আদিবাসী শিক্ষার্থী নির্বাচন বন্ধে কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তাহলে কি আমরা ধরে নিতেই পারি এসব কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ মদতে হচ্ছে। যদি কর্তৃপক্ষের মদদে না হয়ে থাকে তবে দ্রুত পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।

আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনগুলোতে অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করা হয়ে আসছে। এতে প্রতি বছরই আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তি থেকে ঝরে পড়ছে

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদিবাসী সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকার কারণেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তবে সেটি ধারাবাহিকভাবে ঘটতে থাকাটা সন্দেহজনক। নিশ্চিতভাবেই অনুমান করা যায় যে, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ধারাবহিকভাবে আদিবাসী কোটায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছে।

আদিবাসী কোটায় অ-আদিবাসীরা কীভাবে স্থান পায়? তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। আদিবাসী কোটায় আদিবাসীদের ব্যতীত অ-আদিবাসী কেউ সুযোগ দেয়া অনুচিত। আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকারগুলো এভাবেই বেহাত হয়ে যায়। আদিবাসীরা বুঝতেই পারছে না।

আদিবাসী কোটায় শুধু আদিবাসীদেরকেই বরাদ্দ দিতে হবে। আদিবাসী কোটায় নির্বাচিত অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ফলাফল বাতিল করে সেসব আসনে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।

মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে প্রকৃত আদিবাসী শিক্ষার্থী যাচাই-বাছাইয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ আদিবাসী গবেষক ও আদিবাসী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমন্বয় করলে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে বলে আশা রাখি।

[লেখক : সদস্য, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি]

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে আদিবাসী কোটায় অ-আদিবাসী শিক্ষার্থী

বিভূতী ভূষণ মাহাতো

image

সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১

স্বাস্থ্য শিক্ষার জন্য মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে ভর্তিযুদ্ধে ব্যাপক প্রতিযোগিতা করে নির্বাচিত হতে হয়। মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু সংখ্যক আসন সংরক্ষিত করা রয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনগুলোতে অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করা হয়ে আসছে। এতে প্রতি বছরই আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তি থেকে ঝরে পরছে।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল গত ৪ এপ্রিল প্রকাশিত হয়। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখতে পাই, আদিবাসী কোটায় বরাদ্দকৃত আসনে আবারও অ-আদিবাসীদের নির্বাচিত করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। অ-আদিবাসীদের নির্বাচিত করায় ৯ জন আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মেডিকেলে কলেজে ভর্তিতে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বছর ৯টি আসনে অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীকে নির্বাচিত করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে আদিবাসী কোটার আসন বণ্টন বিষয়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা রয়েছে। আদিবাসী (উপজাতীয়) ও পার্বত্য তিন জেলার অ-আদিবাসী কোটায় মোট ৩৩টি (৩০+৩) আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যার মধ্যে পার্বত্য তিন জেলার আদিবাসীদের জন্য ৯টি, পার্বত্য তিন জেলার অ-আদিবাসীদের জন্য ৩টি, অন্যান্য জেলার আদিবাসীদের জন্য ৮টি, এবং রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের জন্য আদিবাসীদের শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত ১৩টি আসন বরাদ্দ রাখা রয়েছে।

প্রকাশিত ফলাফল থেকে খুঁজে বের করি যে, আদিবাসী কোটায় বরাদ্দকৃত আসনগুলোতে অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। পার্বত্য ব্যতীত অন্যান্য জেলার আদিবাসী শিক্ষার্থীদের কোটায় (৭৭ কোড) নির্বাচিত আটজনের মধ্যে পাঁচজনই অ-আদিবাসী। সমতলের মাত্র তিনজন আদিবাসী শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।

এদিকে তিন পার্বত্য জেলার অ-আদিবাসীদের জন্য মাত্র তিনটি আসন বরাদ্দ থাকলেও মোট সাতজনকে নির্বাচন করা হয়েছে। যার মধ্যে একজনকে রাঙামাটি জেলার আদিবাসী কোটার আসনে নির্বাচন করা হয়েছে।

অ-আদিবাসী (তিন পার্বত্য জেলা) শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত তিনটি আসনসহ মোট ১২ জন অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীকে আদিবাসী কোটায় ভর্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এর ফলে ৯ জন অ-আদিবাসী শিক্ষার্থী কর্তৃক আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন দখল করে নেয়ায় সমতলের পাঁচজন আদিবাসী শিক্ষার্থীসহ মোট ৯ জন আদিবাসী শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে না।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তির ১৩নং অনুচ্ছেদে আদিবাসী কোটামূহের আসন বণ্টন ও কোড ৩ নং ও ৪ নং সারণিতে বলা হয়েছে। ৪ নং সারণিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে- ৭১ কোড হলো রাঙ্গামাটির আদিবাসী, ৭২ কোড হলো রাঙ্গামাটির অ-আদিবাসী, ৭৩ কোড হলো খাগড়াছড়ির আদিবাসী, ৭৪ কোড হলো খাগড়াছড়ির অ-আদিবাসী, ৭৫ কোড হলো বান্দরবানের আদিবাসী, ৭৬ কোড হলো বান্দরবানের অ-আদিবাসী এবং ৭৭ কোড হলো পার্বত্য ব্যতীত অন্যান্য আদিবাসী। সারণি-৩ এ এমবিবিএসের মোট আসন সংখার বণ্টন বিবরণ দেয়া আছে। সেখানে বলা হয়েছে- সর্বমোট আসন সংখ্যা- ৪৩৫০ যার মধ্যে সাধারণ আসন ৪২৩০টি, মুক্তিযোদ্ধা কোটার (২%) আসন ৮৭টি, আদিবাসী (তিন পার্বত্য-৩*৩) ০৯টি, অ-আদিবাসী (তিন পার্বত্য জেলা) ৩টি, আদিবাসী (অন্যান্য জেলার) ৮টি এবং রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের জন্য আদিবাসী আসন সংরক্ষিত ১৩টি।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তির সারণি-২ এ বলা হয়েছে আদিবাসী কোটার শিক্ষার্থীরা কোন কোন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবেন। কলেজগুলো হচ্ছে- আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী; কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ; যশোর মেডিকেল কলেজ; সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ; শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জ; কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ; শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ, গোপালগঞ্জ; শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, টাঙ্গাইল; শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, জামালপুর; কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ, মানিকগঞ্জ; শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ, সিরাজগঞ্জ; পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ; রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, হবিগঞ্জ; নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ; নিলফামারী মেডিকেল কলেজ; নওগাঁ মেডিকেল কলেজ; মাগুরা মেডিকেল কলেজ; চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ; বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ, সুনামগঞ্জ। নির্ধারিত প্রতিটি কলেজেই ১টি করে আসন বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়াও রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজে ১৩টি আসন সংরক্ষিত করা রয়েছে। বরাদ্দকৃত সব মেডিকেল কলেজই নতুন। পুরোনো কলেজগুলোতে আদিবাসী কোটার শিক্ষার্থীদের ভর্তির কোন সুযোগ রাখা হয়নি।

কোড ৭১ রাঙ্গামাটি জেলার আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও সেখানে একজন অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীকে নির্বাচিত করা হয়েছে। কোড ৭২, ৭৪, এবং ৭৬ এ তিন পার্বত্য জেলার অ-আদিবাসীদের জন্য মোট ৩টি আসন বরাদ্দ থাকলেও মোট ছয়জনকে নির্বাচন করা হয়েছে। কোড ৭৭ এ সমতলের আদিবাসী (তিন পাবর্ত্য ব্যতীত) শিক্ষার্থীদের জন্য ৮টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। ৭৭ কোডেও পাঁচজন অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।

অ-আদিবাসী ৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭১ কোড এ ইভা নাহার মুক্তা নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজে; ৭২ কোড এ আজিজা বিনতে করিম স্নেহা রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজে; ৭৪ কোড এ জেরিন তাসলিম সাদিয়া রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজে, ৭৬ কোড এ নুসরাত জাহান রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজে; ৭৭ কোড এ নুসরাত আলম গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজে, মোছা. জাকিয়া ইয়াসমিন টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে, দেবস্মিতা দাস বর্ণা পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে, মোছা. ইসরাত জাহান যশোর মেডিকেল কলেজে এবং মো. আরিফ রহমান কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানতে পেরেছি, প্রতি বছরই আদিবাসী কোটায় অ-আদিবাসীদের নির্বাচন করা হয়। দীর্ঘদিন থেকে এভাবেই অনেক আদিবাসী শিক্ষার্থী মেডিকেল ভর্তি থেকে ঝরে পরছে। কিন্তু স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাদের আদিবাসী কোটার ব্যাপারে তাদের উদাসীনতা প্রকাশ করেই চলেছে। আদিবাসী কোটায় অ-আদিবাসী শিক্ষার্থী নির্বাচন বন্ধে কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তাহলে কি আমরা ধরে নিতেই পারি এসব কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ মদতে হচ্ছে। যদি কর্তৃপক্ষের মদদে না হয়ে থাকে তবে দ্রুত পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।

আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনগুলোতে অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করা হয়ে আসছে। এতে প্রতি বছরই আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তি থেকে ঝরে পড়ছে

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদিবাসী সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকার কারণেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তবে সেটি ধারাবাহিকভাবে ঘটতে থাকাটা সন্দেহজনক। নিশ্চিতভাবেই অনুমান করা যায় যে, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ধারাবহিকভাবে আদিবাসী কোটায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছে।

আদিবাসী কোটায় অ-আদিবাসীরা কীভাবে স্থান পায়? তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। আদিবাসী কোটায় আদিবাসীদের ব্যতীত অ-আদিবাসী কেউ সুযোগ দেয়া অনুচিত। আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকারগুলো এভাবেই বেহাত হয়ে যায়। আদিবাসীরা বুঝতেই পারছে না।

আদিবাসী কোটায় শুধু আদিবাসীদেরকেই বরাদ্দ দিতে হবে। আদিবাসী কোটায় নির্বাচিত অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ফলাফল বাতিল করে সেসব আসনে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।

মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে প্রকৃত আদিবাসী শিক্ষার্থী যাচাই-বাছাইয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ আদিবাসী গবেষক ও আদিবাসী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমন্বয় করলে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে বলে আশা রাখি।

[লেখক : সদস্য, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি]

back to top