alt

উপ-সম্পাদকীয়

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ নিধন পরিবেশ ও আইনবিরোধী

এমএম তানজিমুল হক

: শনিবার, ১৭ জুলাই ২০২১

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সময় ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা হতো বলে এর নাম ছিল রেসকোর্স ময়দান। এ ময়দানের ৪১০ বছরের পুরনো ইতিহাসে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে নানা পরিবর্তন। এখানে তৈরি করা হয়েছে শিখা চিরন্তন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসংবলিত স্থাপনা, ইতিহাসভিত্তিক টেরাকোটার পৃথিবীর দীর্ঘতম ম্যুরাল এবং স্বাধীনতা জাদুঘর। সামনেই কৃত্রিম জলাশয়। সম্প্রতি এ উদ্যানের অধিকতর উন্নয়নকাজে গাছকাটার খবরে আবারও আলোচনায় আসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘নতুন পরিকল্পনা’।

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ‘ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ কাজ যেমন- পাকিস্তানি শাসনবিরোধী ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংবলিত ভাস্কর্য স্থাপন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য, ইন্দিরা গান্ধী যেখানে বক্তৃতা করেছিলেন সেখানে ইন্দিরা মঞ্চ নির্মাণ, ওয়াটার বডি ও ঝরনা, ভূগর্ভস্থ ৫০০ গাড়ির পার্কিং ও শিশুপার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নতুন করে কাটা পড়েছে ‘কিছু’ গাছ। আর তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা এবং সমালোচনা। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ’ শীর্ষক তৃতীয় পর্যায়ের মহাপরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। প্রকল্পের এ পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৪৭ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পটির উদ্যোগী মন্ত্রণালয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির তৃতীয় পর্যায়ের নকশা প্রণয়নকারী সংস্থা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্থাপত্য অধিদপ্তর। আর প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত অধিদপ্তর আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।

পরিবেশবিদ, নগরবিদ, প্রকৃতিপ্রেমীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছকাটার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। গাছ কেটে খাবারের দোকান বা অন্যান্য স্থাপনা তৈরির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যে যার মতো করে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করছে। নগরবিদদের দেওয়া হিসাব বলছে, প্রতিটি বড় শহরে ২০ শতাংশ সবুজ স্থান থাকা প্রয়োজন। কিন্তু কাগজে-কলমে নতুন ঢাকায় আছে ১২ আর পুরান ঢাকায় ৫ শতাংশ। বাস্তবে তার পরিমাণ আরো কম।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটার খবর ছড়িয়ে পড়লে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ মানববন্ধনসহ নানামুখী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। গাছ কাটার প্রতিবাদে উদ্যানে প্রতীকী প্রতিবাদ করেছেন অনেকে। কবি, লেখক, চিত্রশিল্পী ও পরিবেশবাদী সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। উদ্যানকে ঢাকার ফুসফুস হিসেবে উল্লেখ করে এটি রক্ষায় সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা। উদ্যানের বিভিন্ন প্রবেশমুখে কবিতা, গান ও পথনাটকের মাধ্যমে এসব প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ভয়েজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবুজ ধ্বংস করে রেস্টুরেন্ট নির্মাণ বন্ধ করা, উদ্যানকে বৃক্ষময় করা, পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করাসহ পাঁচটি দাবি তুলে ধরে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক মূল্য

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইতিহাস বাংলাদেশিদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৬৯ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেল থেকে মুক্তি পেলে রেসকোর্সে তাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেই তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এই রেসকোর্স ময়দানেই লাখো মানুষের মহাসমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ভাষণ দিয়েছিলেন। আবার ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই। এছাড়াও ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এখানে বক্তব্য রাখেন।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একটি ঐতিহাসিক সম্পত্তি, সাংবিধানিকভাবে এটি রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে- সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে যতটা সম্ভব অক্ষত রাখতে হবে।’

আমাদের দেশের আইন

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫-এর ধারা ১২(১) অনুসারে মহাপরিচালকের নিকট হইতে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতিরেকে কোনো এলাকায় কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা প্রকল্প গ্রহণ করা যাইবে না। আবার ধারা ১২(৪) অনুযায়ী পরিবেশগত ছাড়পত্র বিষয়ে প্রণীত বিধিমালাতে অন্যান্য বিষয়ের সহিত পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ প্রতিবেদন, পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন, জনমত যাচাই, এই সকল বিষয়ে জনগণের তথ্য প্রাপ্যতা, ছাড়পত্র প্রদানকারী কমিটির গঠন ও কর্মপদ্ধতি, ছাড়পত্রের ন্যূনতম আবশ্যকীয় শর্তাবলি, আপিল ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ থাকিবে।

আইন অনুসারে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য পরিবেশগত ছাড়পত্র (Environmental Clearance Certificate) প্রয়োজন। এই পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রাপ্তির জন্য কোনো প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (Environmental Impact Assessment) করা হলো একটি পূর্বশর্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালইয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘প্রকল্পটি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয় যে সঠিকভাবে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করা হয়নি।’

প্রকল্পটি মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০-এর ধারা ৫ ভঙ্গ করে। ধারাটিতে বলা হয়েছে যে, এই আইনের বিধান অনুযায়ী ব্যতীত, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাইবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাইবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাইবে না।

আমাদের সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন। সুতরাং, প্রকল্পটি বাংলাদেশের সংবিধান এবং অন্যান্য প্রয়োগকারী আইনসমূহে বর্ণিত জৈব বৈচিত্র্য-সম্পর্কিত বিধানগুলোর সঙ্গেও বিরোধী। যেখানে ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে অবসবাসযোগ্য শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেখানে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে এমন নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা হলে শহর আমাদের সঙ্গে সঙ্গে গাছপালা এবং পশুদের জন্য আরো বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠবে।

ভারতের M.C. Mehta Vs. Kamal Nath (1997)1 SCC 388 মামলার রায়ে আদালত বলেন যে, নির্দিষ্ট জমি এবং প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলো তাদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ধরে রাখবে, তা আশা করা জনগণের অধিকার। আমাদের দেশের Human Rights and Peace for Bangladesh (HRPB) and Ors. Vs. Bangladesh and Ors. 22BLC (2017) 48 মামলার রায়ে M.C. Mehta মামলার রায়কে একটি মহান প্রবর্তক মানের (Persuasive Value) বলে আখ্যায়িত করে এবং আদালত উল্লিখিত বক্তব্যের সঙ্গে সমর্থন পোষণ করেন। আবার, ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি Human Rights and Peace for Bangladesh (HRPB) and Ors. Vs. Bangladesh and Ors.-এর আরেকটি মামলার রায় প্রকাশিত হয়, যেখানে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য আদালত বাংলাদেশের সব নদীকে আইনগত সত্তা প্রদান করে।

আইনি নোটিশ

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছকাটা বন্ধ করতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। এতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্ত বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. শামীম আখতার এবং চিফ আর্কিটেক্ট অব বাংলাদেশ মীর মনজুর রহমানকে এই নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছেÑ সোহরাওয়ার্দী ও রমনা উদ্যানের গুরুত্ব ও সৌন্দর্য সম্পর্কে ২০০৯ সালে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি মোমতাজ উদ্দিনের কয়েকটি নির্দেশনাসহ একটি রায় রয়েছে। রায়ে বলা হয়Ñ সোহরাওয়ার্দী ও রমনা কোনো নিছক এলাকা নয়, এর রয়েছে ঐতিহাসিক ভিত্তি। উদ্যানের গাছকাটা আদালত অবমাননার মধ্যে পড়ে। নোটিশে আরো বলা হয়েছে, আদালতের রায় উপেক্ষা করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ব্যাবসায়িক স্বার্থে রেস্টুরেন্ট বা দোকান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, যা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

বর্তমান অবস্থা

গত ১১ মে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছকাটা আপাতত বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে নকশারও পরিবর্তন করা হতে পারে। আমি নিজে সরেজমিন পরিদর্শন করব এবং পরিবেশবিদদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। এছাড়া এ বিষয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করতে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে মোট ১০০টি গাছকাটার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে প্রায় ৫০টি গাছকাটা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশবিদসহ অন্যান্য সচেতন মহল উদ্বেগ জানিয়েছে, সেহেতু তাদের এই উদ্বেগকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা পরিবেশবিদসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার ও নগর-পরিকল্পনাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করব এবং পরিবেশের ক্ষতি না করে কীভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কাজ চলমান রাখা যায়, তার উপায় বের করার চেষ্টা করব।’

বাস্তুতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জীববৈচিত্র্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। একই বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে বসবাস করে। তাই বৈচিত্র্য যত বাড়বে বা প্রজাতির সংখ্যা যত বাড়বে, সেই বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য তথা প্রজাতি স্থিতিশীলতা তত বাড়বে। বাস্তুতন্ত্রের যে কোনো একটি উদ্ভিদ বা প্রাণী প্রজাতির বিলুপ্ত হওয়ার অর্থ, সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদ বা প্রাণী প্রজাতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত খাদ্যশৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটা। তাই আমাদের উচিত, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বেশি করে গাছ লাগানো।

[লেখক : শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ঢাকা শ্বিবিদ্যালয়]

সৌজন্যে : আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ঢাকা

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

প্রসঙ্গ : নিত্যপণ্যের দাম

ছবি

টঙ্ক আন্দোলনের কুমুদিনী হাজং

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে চাই বিকেন্দ্রীকরণ

দূষণমুক্ত পানির বিকল্প নাই

রম্যগদ্য : ‘দুনিয়ার বাঙালি এক হও”

tab

উপ-সম্পাদকীয়

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ নিধন পরিবেশ ও আইনবিরোধী

এমএম তানজিমুল হক

শনিবার, ১৭ জুলাই ২০২১

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সময় ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা হতো বলে এর নাম ছিল রেসকোর্স ময়দান। এ ময়দানের ৪১০ বছরের পুরনো ইতিহাসে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে নানা পরিবর্তন। এখানে তৈরি করা হয়েছে শিখা চিরন্তন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসংবলিত স্থাপনা, ইতিহাসভিত্তিক টেরাকোটার পৃথিবীর দীর্ঘতম ম্যুরাল এবং স্বাধীনতা জাদুঘর। সামনেই কৃত্রিম জলাশয়। সম্প্রতি এ উদ্যানের অধিকতর উন্নয়নকাজে গাছকাটার খবরে আবারও আলোচনায় আসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘নতুন পরিকল্পনা’।

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ‘ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ কাজ যেমন- পাকিস্তানি শাসনবিরোধী ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংবলিত ভাস্কর্য স্থাপন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য, ইন্দিরা গান্ধী যেখানে বক্তৃতা করেছিলেন সেখানে ইন্দিরা মঞ্চ নির্মাণ, ওয়াটার বডি ও ঝরনা, ভূগর্ভস্থ ৫০০ গাড়ির পার্কিং ও শিশুপার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নতুন করে কাটা পড়েছে ‘কিছু’ গাছ। আর তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা এবং সমালোচনা। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ’ শীর্ষক তৃতীয় পর্যায়ের মহাপরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। প্রকল্পের এ পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৪৭ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পটির উদ্যোগী মন্ত্রণালয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির তৃতীয় পর্যায়ের নকশা প্রণয়নকারী সংস্থা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্থাপত্য অধিদপ্তর। আর প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত অধিদপ্তর আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।

পরিবেশবিদ, নগরবিদ, প্রকৃতিপ্রেমীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছকাটার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। গাছ কেটে খাবারের দোকান বা অন্যান্য স্থাপনা তৈরির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যে যার মতো করে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করছে। নগরবিদদের দেওয়া হিসাব বলছে, প্রতিটি বড় শহরে ২০ শতাংশ সবুজ স্থান থাকা প্রয়োজন। কিন্তু কাগজে-কলমে নতুন ঢাকায় আছে ১২ আর পুরান ঢাকায় ৫ শতাংশ। বাস্তবে তার পরিমাণ আরো কম।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটার খবর ছড়িয়ে পড়লে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ মানববন্ধনসহ নানামুখী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। গাছ কাটার প্রতিবাদে উদ্যানে প্রতীকী প্রতিবাদ করেছেন অনেকে। কবি, লেখক, চিত্রশিল্পী ও পরিবেশবাদী সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। উদ্যানকে ঢাকার ফুসফুস হিসেবে উল্লেখ করে এটি রক্ষায় সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা। উদ্যানের বিভিন্ন প্রবেশমুখে কবিতা, গান ও পথনাটকের মাধ্যমে এসব প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ভয়েজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবুজ ধ্বংস করে রেস্টুরেন্ট নির্মাণ বন্ধ করা, উদ্যানকে বৃক্ষময় করা, পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করাসহ পাঁচটি দাবি তুলে ধরে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক মূল্য

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইতিহাস বাংলাদেশিদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৬৯ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেল থেকে মুক্তি পেলে রেসকোর্সে তাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেই তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এই রেসকোর্স ময়দানেই লাখো মানুষের মহাসমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ভাষণ দিয়েছিলেন। আবার ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই। এছাড়াও ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এখানে বক্তব্য রাখেন।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একটি ঐতিহাসিক সম্পত্তি, সাংবিধানিকভাবে এটি রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে- সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে যতটা সম্ভব অক্ষত রাখতে হবে।’

আমাদের দেশের আইন

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫-এর ধারা ১২(১) অনুসারে মহাপরিচালকের নিকট হইতে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতিরেকে কোনো এলাকায় কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা প্রকল্প গ্রহণ করা যাইবে না। আবার ধারা ১২(৪) অনুযায়ী পরিবেশগত ছাড়পত্র বিষয়ে প্রণীত বিধিমালাতে অন্যান্য বিষয়ের সহিত পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ প্রতিবেদন, পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন, জনমত যাচাই, এই সকল বিষয়ে জনগণের তথ্য প্রাপ্যতা, ছাড়পত্র প্রদানকারী কমিটির গঠন ও কর্মপদ্ধতি, ছাড়পত্রের ন্যূনতম আবশ্যকীয় শর্তাবলি, আপিল ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ থাকিবে।

আইন অনুসারে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য পরিবেশগত ছাড়পত্র (Environmental Clearance Certificate) প্রয়োজন। এই পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রাপ্তির জন্য কোনো প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (Environmental Impact Assessment) করা হলো একটি পূর্বশর্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালইয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘প্রকল্পটি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয় যে সঠিকভাবে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করা হয়নি।’

প্রকল্পটি মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০-এর ধারা ৫ ভঙ্গ করে। ধারাটিতে বলা হয়েছে যে, এই আইনের বিধান অনুযায়ী ব্যতীত, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাইবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাইবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাইবে না।

আমাদের সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন। সুতরাং, প্রকল্পটি বাংলাদেশের সংবিধান এবং অন্যান্য প্রয়োগকারী আইনসমূহে বর্ণিত জৈব বৈচিত্র্য-সম্পর্কিত বিধানগুলোর সঙ্গেও বিরোধী। যেখানে ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে অবসবাসযোগ্য শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেখানে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে এমন নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা হলে শহর আমাদের সঙ্গে সঙ্গে গাছপালা এবং পশুদের জন্য আরো বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠবে।

ভারতের M.C. Mehta Vs. Kamal Nath (1997)1 SCC 388 মামলার রায়ে আদালত বলেন যে, নির্দিষ্ট জমি এবং প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলো তাদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ধরে রাখবে, তা আশা করা জনগণের অধিকার। আমাদের দেশের Human Rights and Peace for Bangladesh (HRPB) and Ors. Vs. Bangladesh and Ors. 22BLC (2017) 48 মামলার রায়ে M.C. Mehta মামলার রায়কে একটি মহান প্রবর্তক মানের (Persuasive Value) বলে আখ্যায়িত করে এবং আদালত উল্লিখিত বক্তব্যের সঙ্গে সমর্থন পোষণ করেন। আবার, ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি Human Rights and Peace for Bangladesh (HRPB) and Ors. Vs. Bangladesh and Ors.-এর আরেকটি মামলার রায় প্রকাশিত হয়, যেখানে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য আদালত বাংলাদেশের সব নদীকে আইনগত সত্তা প্রদান করে।

আইনি নোটিশ

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছকাটা বন্ধ করতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। এতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্ত বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. শামীম আখতার এবং চিফ আর্কিটেক্ট অব বাংলাদেশ মীর মনজুর রহমানকে এই নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছেÑ সোহরাওয়ার্দী ও রমনা উদ্যানের গুরুত্ব ও সৌন্দর্য সম্পর্কে ২০০৯ সালে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি মোমতাজ উদ্দিনের কয়েকটি নির্দেশনাসহ একটি রায় রয়েছে। রায়ে বলা হয়Ñ সোহরাওয়ার্দী ও রমনা কোনো নিছক এলাকা নয়, এর রয়েছে ঐতিহাসিক ভিত্তি। উদ্যানের গাছকাটা আদালত অবমাননার মধ্যে পড়ে। নোটিশে আরো বলা হয়েছে, আদালতের রায় উপেক্ষা করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ব্যাবসায়িক স্বার্থে রেস্টুরেন্ট বা দোকান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, যা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

বর্তমান অবস্থা

গত ১১ মে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছকাটা আপাতত বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে নকশারও পরিবর্তন করা হতে পারে। আমি নিজে সরেজমিন পরিদর্শন করব এবং পরিবেশবিদদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। এছাড়া এ বিষয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করতে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে মোট ১০০টি গাছকাটার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে প্রায় ৫০টি গাছকাটা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশবিদসহ অন্যান্য সচেতন মহল উদ্বেগ জানিয়েছে, সেহেতু তাদের এই উদ্বেগকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা পরিবেশবিদসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার ও নগর-পরিকল্পনাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করব এবং পরিবেশের ক্ষতি না করে কীভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কাজ চলমান রাখা যায়, তার উপায় বের করার চেষ্টা করব।’

বাস্তুতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জীববৈচিত্র্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। একই বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে বসবাস করে। তাই বৈচিত্র্য যত বাড়বে বা প্রজাতির সংখ্যা যত বাড়বে, সেই বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য তথা প্রজাতি স্থিতিশীলতা তত বাড়বে। বাস্তুতন্ত্রের যে কোনো একটি উদ্ভিদ বা প্রাণী প্রজাতির বিলুপ্ত হওয়ার অর্থ, সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদ বা প্রাণী প্রজাতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত খাদ্যশৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটা। তাই আমাদের উচিত, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বেশি করে গাছ লাগানো।

[লেখক : শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ঢাকা শ্বিবিদ্যালয়]

সৌজন্যে : আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ঢাকা

back to top