দিলীপ কুমার আগরওয়ালা
দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ থাবা বিস্তার করেছে জোরেশোরে। প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ; যার বেশিরভাগ সীমান্তবর্তী জেলার অধিবাসী। অনেক জেলায় ভাইরাস শনাক্তের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় করোনায় মৃত্যুবরণকারীর একাংশের নাম তালিকার বাইরে থাকছে। জনসচেতনতার অভাবেই করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বৃহত্তর খুলনা, রাজশাহীসহ সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে দেশজুড়ে করোনা চিকিৎসায় শুধুই সংকট। এ সংকট মোকাবিলায় নেই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বাস্তবমুখী ব্যবস্থা।
কভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় চলমান লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক মাত্রায় বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞ মহল কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিয়েছে। আইসিইউ বেডের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় সংকট দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের। একজন সুস্থ মানুষ সারা জীবন মুক্ত বাতাস থেকে যে পরিমাণ অক্সিজেন টেনে নেয়, তার আর্থিক মূল্য কত? এ প্রশ্ন আপেক্ষিক, ক্ষেত্রবিশেষ অবান্তর। কারণ মুক্ত বাতাসের সুলভ অক্সিজেনের দরদাম নির্ধারণের মাপকাঠি কারও হাতে নেই।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই সবার দৃষ্টি জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা মোকাবিলায় দেশের স্বাস্থ্য অবকাঠামো ঠিক কতটা প্রস্তুত সেদিকে। ঢাকার বাইরে প্রতিটি জেলা শহরের হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট খোলা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রস্তুতির অভাব রয়েছে। করোনাভাইরাসে যারা গুরুতরভাবে সংক্রমিত তাদের প্রয়োজন ভেন্টিলেটর। অথচ সারাদেশে ভেন্টিলেটরের প্রচন্ড অভাব। ভেন্টিলেটর না থাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেকের জীবন হুমকির মুখে। যেসব রোগীর শ্বাসকষ্ট সহনীয় মাত্রায় থাকে তাদের শ্বাস গ্রহণের জন্য অক্সিজেন নেয়ার প্রয়োজন হয় না।
কিন্তু যাদের শ্বাসকষ্টের মাত্রা অনেক বেড়ে যায় তাদের শ্বাসযন্ত্র সচল রাখতে বাইরে থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়। শুধু করোনা আক্রান্ত নন আরও অনেক গুরুতর রোগীর জন্য অক্সিজেন জরুরি হয়ে পড়ে। হাসপাতালগুলোয় অক্সিজেন চাহিদা বহুগুণ বেড়েছে। অক্সিজেন সরবরাহের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা আছে এমনসব হাসপাতালে সমস্যা কম। কিন্তু আমাদের সরকারি-বেসরকারি বেশিরভাগ হাসপাতালে তো কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের সুযোগই নেই। ফলে সিলিন্ডারের মাধ্যমে রোগীকে অক্সিজেন দিতে হয়। বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত ৩ হাজারের বেশি রোগীর আইসিইউ সহায়তা দরকার, কিন্তু শয্যা আছে চাহিদারও কম। আছে অক্সিজেন সরঞ্জামের চূড়ান্ত অভাব।
খুলনা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, চট্টগ্রামে প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে প্রচুর মানুষ। আক্রান্তের পর অধিকাংশই মুখোমুখি হচ্ছেন সংকটাপন্ন অবস্থার। রোগীর মুমূর্ষু অবস্থা তৈরি হলে চিকিৎসার অন্যতম জরুরি উপকরণ অক্সিজেন। অথচ বিভিন্ন জেলায় অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট দেখা দিয়েছে। বর্ধিত চাহিদার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়িয়েছে সিলিন্ডারের দাম। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় অক্সিজেন সরবরাহ না বাড়ালে এবং সামনে সংক্রমণ আরও বাড়লে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে।
মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোনোর বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। পরিস্থিতির অবনতি না চাইলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই।
[লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই]
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা
শনিবার, ১৭ জুলাই ২০২১
দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ থাবা বিস্তার করেছে জোরেশোরে। প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ; যার বেশিরভাগ সীমান্তবর্তী জেলার অধিবাসী। অনেক জেলায় ভাইরাস শনাক্তের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় করোনায় মৃত্যুবরণকারীর একাংশের নাম তালিকার বাইরে থাকছে। জনসচেতনতার অভাবেই করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বৃহত্তর খুলনা, রাজশাহীসহ সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে দেশজুড়ে করোনা চিকিৎসায় শুধুই সংকট। এ সংকট মোকাবিলায় নেই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বাস্তবমুখী ব্যবস্থা।
কভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় চলমান লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক মাত্রায় বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞ মহল কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিয়েছে। আইসিইউ বেডের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় সংকট দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের। একজন সুস্থ মানুষ সারা জীবন মুক্ত বাতাস থেকে যে পরিমাণ অক্সিজেন টেনে নেয়, তার আর্থিক মূল্য কত? এ প্রশ্ন আপেক্ষিক, ক্ষেত্রবিশেষ অবান্তর। কারণ মুক্ত বাতাসের সুলভ অক্সিজেনের দরদাম নির্ধারণের মাপকাঠি কারও হাতে নেই।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই সবার দৃষ্টি জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা মোকাবিলায় দেশের স্বাস্থ্য অবকাঠামো ঠিক কতটা প্রস্তুত সেদিকে। ঢাকার বাইরে প্রতিটি জেলা শহরের হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট খোলা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রস্তুতির অভাব রয়েছে। করোনাভাইরাসে যারা গুরুতরভাবে সংক্রমিত তাদের প্রয়োজন ভেন্টিলেটর। অথচ সারাদেশে ভেন্টিলেটরের প্রচন্ড অভাব। ভেন্টিলেটর না থাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেকের জীবন হুমকির মুখে। যেসব রোগীর শ্বাসকষ্ট সহনীয় মাত্রায় থাকে তাদের শ্বাস গ্রহণের জন্য অক্সিজেন নেয়ার প্রয়োজন হয় না।
কিন্তু যাদের শ্বাসকষ্টের মাত্রা অনেক বেড়ে যায় তাদের শ্বাসযন্ত্র সচল রাখতে বাইরে থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়। শুধু করোনা আক্রান্ত নন আরও অনেক গুরুতর রোগীর জন্য অক্সিজেন জরুরি হয়ে পড়ে। হাসপাতালগুলোয় অক্সিজেন চাহিদা বহুগুণ বেড়েছে। অক্সিজেন সরবরাহের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা আছে এমনসব হাসপাতালে সমস্যা কম। কিন্তু আমাদের সরকারি-বেসরকারি বেশিরভাগ হাসপাতালে তো কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের সুযোগই নেই। ফলে সিলিন্ডারের মাধ্যমে রোগীকে অক্সিজেন দিতে হয়। বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত ৩ হাজারের বেশি রোগীর আইসিইউ সহায়তা দরকার, কিন্তু শয্যা আছে চাহিদারও কম। আছে অক্সিজেন সরঞ্জামের চূড়ান্ত অভাব।
খুলনা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, চট্টগ্রামে প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে প্রচুর মানুষ। আক্রান্তের পর অধিকাংশই মুখোমুখি হচ্ছেন সংকটাপন্ন অবস্থার। রোগীর মুমূর্ষু অবস্থা তৈরি হলে চিকিৎসার অন্যতম জরুরি উপকরণ অক্সিজেন। অথচ বিভিন্ন জেলায় অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট দেখা দিয়েছে। বর্ধিত চাহিদার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়িয়েছে সিলিন্ডারের দাম। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় অক্সিজেন সরবরাহ না বাড়ালে এবং সামনে সংক্রমণ আরও বাড়লে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে।
মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোনোর বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। পরিস্থিতির অবনতি না চাইলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই।
[লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই]