সজীব ওয়াফি
মাঝারি বা ভারি বৃষ্টি হলেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চট্টগ্রামাঞ্চলে বেড়েছে পাহাড় ধসের পরিমাণ। মাটির নিচে চাপা পরে ঘটছে মর্মান্তিক মৃত্যু। পার্বত্য এলাকাজুড়ে ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা বেশি। কয়েকশ’ বছর ধরে পাহাড়ের সঙ্গে তাদের বসবাস। ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের এই মানুষেরা পাহাড় ধসে মাটি চাপায় কখনও মারা গেছে? যায়নি, গেলেও দুর্ঘটনার সংখ্যাটা একেবারেই অল্প। এর প্রধানতম কারণ পাহাড়ধস।
সংখ্যালঘু চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরাসহ ক্ষুদ্র জাতিগুলো পাহাড়ে বসবাস করছে বহুকাল ধরে। গত শতাব্দীর শেষাংশে তাদের সঙ্গে পাহাড়ে থাকা শুরু করেছে বাঙালিরাও। বাঙালি জনগোষ্ঠীর এই অংশ নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে অথবা কোন না কোনভাবে উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয় নিয়েছে পাহাড়ি এলাকায়। যাদের পাহাড় সম্পর্কে তেমন কোন জ্ঞান নেই। আবার চট্টগ্রামে শহরতলী গিয়ে ঠেকেছে পাহাড়ের পাদদেশে। পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে বসতি। ঝুঁকি আছে জেনেও সেখানে থাকছে নিম্ন আয়ের লোকজন।
পাহাড়ে চাষাবাদের অন্যতম পদ্ধতি হচ্ছে জুম চাষ। বিশেষ পদ্ধতিতে পাহাড়ের জঙ্গল পুড়িয়ে ফেলা হয়। এতে বড় গাছ মারা পরে না। তারপর কিছু দূর পরপর পাহাড়ের গায়ে দা দিয়ে ছোট গর্ত করে ধান, কলা, আনারস এবং ভুট্টাসহ নানা বিচি একসঙ্গে লাগানো হয়। সার কীটনাশক বিহীন ফলন হয় ভালো ফসলের। ১০ থেকে ২০ বছর পরপর একবার চাষাবাদ করায় তেমন কোন ক্ষতির মুখেও পরতে হয় না। সমতল থেকে আগত জনসাধারণ বিশেষ এই চাষাবাদ সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞাত। তারা নিমিষেই পাহাড়ের ক্ষতি করে ফেলে।
টারশিয়ারি যুগের সৃষ্টি আমাদের পাহাড়গুলো। এর গায়ে জন্মানো বন-জঙ্গল এবং গাছপালা অভ্যন্তরীণ বন্ধন শক্তিশালী রাখে। কিন্তু অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ের বেলে-দোআঁশ মাটি নরম হয়ে যায়। বর্তমান সময়ে কিছু এলায় অধিক লাভের আশায় এমন প্রজাতির সব গাছ লাগিয়ে বনায়ন করা হচ্ছে যে, সেগুলো পাহাড়ের নিজস্ব কোন প্রজাতি নয়। এ সব গাছের নিচে জঙ্গল হওয়া দূরের কথা, দুর্বাঘাসও জন্মায় না। আম-লিচুর বাগান করার জন্যও পাহাড় কাটা এবং প্রাকৃতিক বন উজাড় করা হয়। পাহাড় আঁকড়ে ধরা বনজঙ্গল না থাকায় নাজুক হয়ে পরে রাতারাতি।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধতায় ক্রমান্বয়ে পাহাড়ে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন পর্যটন স্পট। সেখানে ভিড় জমাচ্ছে সমতলের পর্যটক। না জেনে তারা ব্যবহৃত পলিথিন খোসা বা প্লাস্টিক বোতল ফেলছে যত্রতত্র। অপচনশীল প্লাস্টিক বা বোতল পাহাড়ের মাটিতে ঢুকে মাটি ধসে সহায়তা করে। একমাত্র পাহাড়িয়া নৃগোষ্ঠী মানুষকেই দেখা যায় সেই প্লাস্টিক কুড়িয়ে এক জায়গায় জড়ো করতে। পাহাড়ের সঙ্গে মিতালি গড়তে যুগের পর যুগ তারা ব্যবহার করছেন নিজেদের তৈরি বাঁশের কৌটা, ব্যাগ এবং পোশাক।
১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করা হয় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে। বাঁধের কারণে হ্রদের দুই পাড় তলিয়ে পানি পৌঁছে যায় পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত। কৃত্রিমভাবে ৭২৫ বর্গকিলোমিটারজুড়ে সৃষ্টি হয় বিশাল হ্রদ। অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি তলিয়ে বাস্তুহারা হয়। পাহাড়ের ওপরে বসবাস শুরু করে তলিয়ে যাওয়া এই জনগোষ্ঠী। ছয় দশক ধরে পাহাড়ের গোড়ায় পানি এবং উপরে মানুষের বসবাস পরিবর্তন এনেছে মাটির প্রকৃতি।
লোভী মানুষেরা অব্যাহতভাবে পাহাড় কাটছে। দরিদ্রতাও এখানে এসে এক হয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক গঠন এবং বৈশিষ্ট্য আলাদা। ভূতাত্ত্বিক জরিপ ছাড়াই পার্বত্য অঞ্চলে অবকাঠামো-স্থাপনা নির্মাণেও পাহাড় ধসে পরে। বালু ও পাথর উত্তোলন দুর্বল করে দিচ্ছে পাহাড়ের দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি। এ সব কারণে ভারি বর্ষণে পাহাড়ের ফাটল দিয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করে। ফলে পাহাড় ধসের মতো ঘটনা ঘটে। প্রকৃতির কাছে প্রাণ হারিয়ে মানুষ শুধু সংখ্যা হয়ে যায়।
প্রতিবেশী রাষ্ট্র মায়ানমার থেকে গণহত্যার শিকার হওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায়। সেখানকার ছবি দেখলে যে কেউ ধারণা করতে পারে পরিবেশের কি বিধ্বংসী রূপ তারা তৈরি করেছে। গত পাঁচ বছর আগেও যেখানে পাহাড় ছিল সবুজের সমারোহ। অথচ শরণার্থী রোহিঙ্গারা কেটেকুটে উজাড় করে দিয়েছে গাছপালা। নষ্ট করেছে পাহাড়ি পরিবেশর ভারসাম্য।
নির্বিচারে পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি স্থাপন এবং বন-জঙ্গল ও গাছপালা উজাড়ের কারণেই মূলত চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামাঞ্চলে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। প্রতি বছরই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে কেউ না কেউ। কখনও সাধারণ মানুষ, কখনও সেনা সদস্যরা, আবার কখনও উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া সরকারি সংস্থারকর্মী। পাহাড় কাটা এবং পাহাড়ি বনভূমি নির্বিচারে ধ্বংস বন্ধ করণই এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ। তাৎক্ষণিকভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে হবে। পর্যায়ক্রমে তাদের করতে হবে পুনর্বাসন। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পুনরায় বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ বাস্তবায়নে কড়াকড়ি আরোপও জরুরি। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঢালু পাহাড়ে গাইডওয়াল এবং বসতি এলাকায় মজবুত সীমানা প্রাচীর নির্মাণের। জুম চাষে আগাছানাশক ওষুধ ছিটানো বন্ধ, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, ভূমিকম্প প্রতিরোধে তাল ও সুপারি গাছ লাগানো এবং পরিবেশ আইন মেনে পাহাড়ের উপযোগী অবকাঠামো নির্মাণে সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
পাহাড় থাকলে ধস হবে এটা সত্য। পাহাড়ের ভূতাত্ত্বিক গঠন, দীর্ঘ খরার পর একটানা বৃষ্টি, ভূকম্পন, বজ্রপাত এবং জলবায়ু পরিবর্তনে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো পাহাড় ধসের জন্য কিছুটা দায়ী হলেও কাল হয়েছে কৃত্রিম সংকট তৈরিকরণই। এখনই ব্যবস্থা না নিলে অদূরভবিষ্যতে যে ভয়াবহ মহা পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে- তা মোকাবিলা করা অসম্ভব। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী চাপিয়ে দিয়ে পাহাড় ধ্বংস করায় মায়ানমারের কাছে আমাদের ক্ষতিপূরণ দাবির সময় এসেছে। সবচেয়ে বড় স্কুলটা থাকে স্কুলের দেয়ালের বাইরে। আমাদের সময় এসেছে প্রকৃতি পাঠের।
[লেখক : কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ভাসানী পরিষদ]
সজীব ওয়াফি
বুধবার, ০৪ আগস্ট ২০২১
মাঝারি বা ভারি বৃষ্টি হলেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চট্টগ্রামাঞ্চলে বেড়েছে পাহাড় ধসের পরিমাণ। মাটির নিচে চাপা পরে ঘটছে মর্মান্তিক মৃত্যু। পার্বত্য এলাকাজুড়ে ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা বেশি। কয়েকশ’ বছর ধরে পাহাড়ের সঙ্গে তাদের বসবাস। ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের এই মানুষেরা পাহাড় ধসে মাটি চাপায় কখনও মারা গেছে? যায়নি, গেলেও দুর্ঘটনার সংখ্যাটা একেবারেই অল্প। এর প্রধানতম কারণ পাহাড়ধস।
সংখ্যালঘু চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরাসহ ক্ষুদ্র জাতিগুলো পাহাড়ে বসবাস করছে বহুকাল ধরে। গত শতাব্দীর শেষাংশে তাদের সঙ্গে পাহাড়ে থাকা শুরু করেছে বাঙালিরাও। বাঙালি জনগোষ্ঠীর এই অংশ নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে অথবা কোন না কোনভাবে উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয় নিয়েছে পাহাড়ি এলাকায়। যাদের পাহাড় সম্পর্কে তেমন কোন জ্ঞান নেই। আবার চট্টগ্রামে শহরতলী গিয়ে ঠেকেছে পাহাড়ের পাদদেশে। পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে বসতি। ঝুঁকি আছে জেনেও সেখানে থাকছে নিম্ন আয়ের লোকজন।
পাহাড়ে চাষাবাদের অন্যতম পদ্ধতি হচ্ছে জুম চাষ। বিশেষ পদ্ধতিতে পাহাড়ের জঙ্গল পুড়িয়ে ফেলা হয়। এতে বড় গাছ মারা পরে না। তারপর কিছু দূর পরপর পাহাড়ের গায়ে দা দিয়ে ছোট গর্ত করে ধান, কলা, আনারস এবং ভুট্টাসহ নানা বিচি একসঙ্গে লাগানো হয়। সার কীটনাশক বিহীন ফলন হয় ভালো ফসলের। ১০ থেকে ২০ বছর পরপর একবার চাষাবাদ করায় তেমন কোন ক্ষতির মুখেও পরতে হয় না। সমতল থেকে আগত জনসাধারণ বিশেষ এই চাষাবাদ সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞাত। তারা নিমিষেই পাহাড়ের ক্ষতি করে ফেলে।
টারশিয়ারি যুগের সৃষ্টি আমাদের পাহাড়গুলো। এর গায়ে জন্মানো বন-জঙ্গল এবং গাছপালা অভ্যন্তরীণ বন্ধন শক্তিশালী রাখে। কিন্তু অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ের বেলে-দোআঁশ মাটি নরম হয়ে যায়। বর্তমান সময়ে কিছু এলায় অধিক লাভের আশায় এমন প্রজাতির সব গাছ লাগিয়ে বনায়ন করা হচ্ছে যে, সেগুলো পাহাড়ের নিজস্ব কোন প্রজাতি নয়। এ সব গাছের নিচে জঙ্গল হওয়া দূরের কথা, দুর্বাঘাসও জন্মায় না। আম-লিচুর বাগান করার জন্যও পাহাড় কাটা এবং প্রাকৃতিক বন উজাড় করা হয়। পাহাড় আঁকড়ে ধরা বনজঙ্গল না থাকায় নাজুক হয়ে পরে রাতারাতি।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধতায় ক্রমান্বয়ে পাহাড়ে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন পর্যটন স্পট। সেখানে ভিড় জমাচ্ছে সমতলের পর্যটক। না জেনে তারা ব্যবহৃত পলিথিন খোসা বা প্লাস্টিক বোতল ফেলছে যত্রতত্র। অপচনশীল প্লাস্টিক বা বোতল পাহাড়ের মাটিতে ঢুকে মাটি ধসে সহায়তা করে। একমাত্র পাহাড়িয়া নৃগোষ্ঠী মানুষকেই দেখা যায় সেই প্লাস্টিক কুড়িয়ে এক জায়গায় জড়ো করতে। পাহাড়ের সঙ্গে মিতালি গড়তে যুগের পর যুগ তারা ব্যবহার করছেন নিজেদের তৈরি বাঁশের কৌটা, ব্যাগ এবং পোশাক।
১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করা হয় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে। বাঁধের কারণে হ্রদের দুই পাড় তলিয়ে পানি পৌঁছে যায় পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত। কৃত্রিমভাবে ৭২৫ বর্গকিলোমিটারজুড়ে সৃষ্টি হয় বিশাল হ্রদ। অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি তলিয়ে বাস্তুহারা হয়। পাহাড়ের ওপরে বসবাস শুরু করে তলিয়ে যাওয়া এই জনগোষ্ঠী। ছয় দশক ধরে পাহাড়ের গোড়ায় পানি এবং উপরে মানুষের বসবাস পরিবর্তন এনেছে মাটির প্রকৃতি।
লোভী মানুষেরা অব্যাহতভাবে পাহাড় কাটছে। দরিদ্রতাও এখানে এসে এক হয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক গঠন এবং বৈশিষ্ট্য আলাদা। ভূতাত্ত্বিক জরিপ ছাড়াই পার্বত্য অঞ্চলে অবকাঠামো-স্থাপনা নির্মাণেও পাহাড় ধসে পরে। বালু ও পাথর উত্তোলন দুর্বল করে দিচ্ছে পাহাড়ের দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি। এ সব কারণে ভারি বর্ষণে পাহাড়ের ফাটল দিয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করে। ফলে পাহাড় ধসের মতো ঘটনা ঘটে। প্রকৃতির কাছে প্রাণ হারিয়ে মানুষ শুধু সংখ্যা হয়ে যায়।
প্রতিবেশী রাষ্ট্র মায়ানমার থেকে গণহত্যার শিকার হওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায়। সেখানকার ছবি দেখলে যে কেউ ধারণা করতে পারে পরিবেশের কি বিধ্বংসী রূপ তারা তৈরি করেছে। গত পাঁচ বছর আগেও যেখানে পাহাড় ছিল সবুজের সমারোহ। অথচ শরণার্থী রোহিঙ্গারা কেটেকুটে উজাড় করে দিয়েছে গাছপালা। নষ্ট করেছে পাহাড়ি পরিবেশর ভারসাম্য।
নির্বিচারে পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি স্থাপন এবং বন-জঙ্গল ও গাছপালা উজাড়ের কারণেই মূলত চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামাঞ্চলে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। প্রতি বছরই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে কেউ না কেউ। কখনও সাধারণ মানুষ, কখনও সেনা সদস্যরা, আবার কখনও উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া সরকারি সংস্থারকর্মী। পাহাড় কাটা এবং পাহাড়ি বনভূমি নির্বিচারে ধ্বংস বন্ধ করণই এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ। তাৎক্ষণিকভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে হবে। পর্যায়ক্রমে তাদের করতে হবে পুনর্বাসন। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পুনরায় বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ বাস্তবায়নে কড়াকড়ি আরোপও জরুরি। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঢালু পাহাড়ে গাইডওয়াল এবং বসতি এলাকায় মজবুত সীমানা প্রাচীর নির্মাণের। জুম চাষে আগাছানাশক ওষুধ ছিটানো বন্ধ, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, ভূমিকম্প প্রতিরোধে তাল ও সুপারি গাছ লাগানো এবং পরিবেশ আইন মেনে পাহাড়ের উপযোগী অবকাঠামো নির্মাণে সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
পাহাড় থাকলে ধস হবে এটা সত্য। পাহাড়ের ভূতাত্ত্বিক গঠন, দীর্ঘ খরার পর একটানা বৃষ্টি, ভূকম্পন, বজ্রপাত এবং জলবায়ু পরিবর্তনে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো পাহাড় ধসের জন্য কিছুটা দায়ী হলেও কাল হয়েছে কৃত্রিম সংকট তৈরিকরণই। এখনই ব্যবস্থা না নিলে অদূরভবিষ্যতে যে ভয়াবহ মহা পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে- তা মোকাবিলা করা অসম্ভব। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী চাপিয়ে দিয়ে পাহাড় ধ্বংস করায় মায়ানমারের কাছে আমাদের ক্ষতিপূরণ দাবির সময় এসেছে। সবচেয়ে বড় স্কুলটা থাকে স্কুলের দেয়ালের বাইরে। আমাদের সময় এসেছে প্রকৃতি পাঠের।
[লেখক : কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ভাসানী পরিষদ]