সন্ধ্যা রানী সাহা
২০২০ সালের ১৭ মার্চের পর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ছুটি ঘোষণা করা হয়। প্রথমে ছুটি ঘোষণার পর মনে করা হয়েছিল ... এই ক’টাদিন গেলে কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে এবং তারপর বিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া যাবে। কিন্তু তা না হওয়ায় এক দিকে যেমন ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হয়েছে। অন্যদিকে ছুটির কারণে শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চলেছে নানাবিধ কার্যক্রম।
বিদ্যালয়ের গতানুগতিক শিক্ষাদান বন্ধ থাকলেও বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ, মেরামত কাজ, উন্নয়নমূলক কাজ, রুটিন মেইনটেইনেন্সের কাজগুলো কিন্তু বন্ধ নেই। এগুলো পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কিন্তু অল্পবয়সীদের আনাগোনা। তাদের মধ্যে শুধু প্রাথমিক নয় মাধ্যমিক বা তদূর্ধ্ব শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাও আছে। এছাড়া তো গ্রামে উম্মুক্ত কোন স্থান আর অবশিষ্ট নেই। সেখানে কেউ খেলা করছে, কেউ বসে সমবয়সীদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে, কেউবা শুধু ঘোরাঘুরি করছে। এ থেকে বোঝা যায় গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কতটা কাক্সিক্ষত জায়গা। এখানে গিয়ে শ্রেণীকক্ষের ভেতরে বসে বা বাইরে ঘোরাঘুরি করে মাতৃভাষা শেখার সুযোগটা কাজে লাগানো যায়। যত দ্রুত শিশুরা বাংলা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মাতৃভাষা) ভাষাটি আয়ত্ত করতে পারবে ততই বাংলাদেশের মঙ্গল। আমরা জানি বাংলাদেশের শিক্ষা-সংক্রান্ত ঘোষণা জাতিসংঘের শিক্ষা-সংক্রান্ত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং অন্যান্য শিক্ষা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে সব শিশু বিনা মূল্যে এবং বাধ্যতামূলকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করবে। এতসব রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ সত্ত্বেও ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এক জরিপ মতে ৫৪% শিক্ষার্থী তৃতীয় শ্রেণীতে পড়লেও তারা কী পড়ছে তা বুঝাতে পারে না, ৩৩% শিক্ষার্থী ৩০ সেকেন্ডে পাঁচটি শব্দ পড়তে পারে না। বিশ্বব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির সঙ্গে বাংলাদেশের এ চিত্র অবশ্যই উদ্বেগজনক। যে শিশু বাংলা ভাষায় কাক্সিক্ষত যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না সে অন্যান্য পাঠ্যবিষয়গুলোও যথাযথভাবে আয়ত্ত করতে পারে না। এমতাবস্থায় দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে গেলে প্রথমেই শিশুদের মাতৃভাষা বাংলায় দক্ষ করে তুলতে হবে। কারণ শিশু পরিবার থেকে যে কথাগুলো অবলীলাক্রমে শিখে বিদ্যালয়ে এসে থাকে সে কথাগুলোর নামই তো ভাষা। কথাগুলো সে এলোমেলোভাবে না বলে গুছিয়ে বলে। সুতরাং সে ভাষার বর্ণগুলো না চিনেই কতকগুলো বর্ণ একত্রিত করে অর্থবোধক শব্দ তৈরি করছে। কতকগুলো শব্দকে একত্রিত করে অর্থবোধক বাক্য তৈরি করছে। সব শিশুই অর্থবোধক এবং শ্রুতিমধুর বাক্য সুন্দরভাবে উপস্থাপনের মাধমে পরিবার, সহপাঠী এবং শিক্ষকের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করছে। যে সব শিশুর পরিবারে শিক্ষিত অভিভাবক রয়েছে তারা বর্ণ চিনে এমনকি পড়তে এবং লিখতে শিখেই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। দেশের শিক্ষার হারের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এমন শিশুদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যালয়ে ছোট ছোট দল গঠন করে শিক্ষক যখন পাঠদান করান তখন এই পড়তে পারা শিশুরাও একই দলের অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা শিখতে সহায়তা করে থাকে।
বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো, উচ্চতর শ্রেণীতে পড়লেও অনেক শিক্ষার্থী বর্ণগুলো চিনতে পারে না। বাক্য পড়লেও বাক্যের অন্তর্গত শব্দ পৃথকভাবে পড়তে, লিখতে বা চিনতে পারে না। শুধু বইটি শিক্ষকের সঙ্গে সরবে পাঠ করে মুখস্থ করছে আর শিক্ষক বোর্ডে যা লিখছে তা হুবহু লিখতে শিখছে। বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে অনুরূপ দুর্বলতা কোভিড পূর্ববর্তীকালেই বিদ্যমান ছিল। ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিদ্যালয় খুলেছে। দীর্ঘ ১৭ মাস পর শিশুরা আগের শিক্ষা অনেকটাই ভুলে গেছে বলা যায়। পড়া ভুলে যাওয়া শিশুরা শিক্ষকের কাছ থেকে কতটা সহযোগিতা কীভাবে পাবে সে বিষয়ক কোন পূর্ব প্রস্তুতি শিক্ষকের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তারা বিদ্যালয় পুনরায় খোলার পূর্ব প্রস্তুতিতে কোভিড-১৯ এবং অন্যান্য সংক্রামক ব্যধি থেকে বাঁচতে সুরক্ষা সামগ্রীর সংস্থানকে প্রাধান্য দিয়েছে। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখেছি জ্বর মাপার মেশিন, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড ওয়াস, স্যাভলন, হারপিক এসব কেনা হচ্ছে। শ্রেণীকক্ষ ধুয়ে মুছে শ্রেণী কাজের উপযোগী করে রাখা হচ্ছে। মাঠের ঘাস পরিষ্কার করা হচ্ছে। কিন্তু শিশুর শিখন দুর্বলতা দূরীকরণের কোন পূর্ব-পরিকল্পনা শিক্ষকবৃন্দ প্রদর্শন করছেন না। কতজন শিক্ষার্থী এলাকার বাইরে চলে গেছে, কতজন শিক্ষার্থী শিশুশ্রমে নিয়োজিত হয়েছে, কতজন পড়ালেখা ভুলে গেছে, কতজনের নিকট ৩০ এপ্রিল, ২০২১ জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি প্রদত্ত ওয়ার্কসিট এবং অ্যাকটিভিটি সিট পৌঁছানো যায়নি কিংবা কতজন তা নিয়ে সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে তার কোনো পরিসংখ্যান বিদ্যালয়ে নেই। যদিও বর্তমানে চলমান ওয়ার্কসিট এবং অ্যাকটিভিটি সিট নিঃসন্দেহে শিশুকে পাঠ বিষয়ে এগিয়ে নেয়ার একটি যথাযথ উদ্যোগ।
প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে রয়েছে। এই মডেল স্কুলগুলি অর্থাৎ যেগুলোর কাছ থেকে সাধারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো উন্নত শিক্ষা প্রণালী গ্রহণ থাকে। সেগুলোও সাধারণ বিদ্যালয়ে পরিণত হয়ে গেছে। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে অতীতের তুলনায় শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারিত যোগ্যতার চেয়ে অধিকাংশেরই বেশি রয়েছে। তাদের সরকারি খরচে নানাবিধ প্রশিক্ষণ প্রদান চলমান আছে। আবার তাদের দেখভাল করার জন্য রয়েছে অসংখ্য উচ্চ ডিগ্রিধারী সব কর্মকর্তা। যাদের কাজ শিক্ষকের মাধ্যমে শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার জন্য নির্ধারিত ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করা। যে শিশু পড়তে পারে না সে পড়া বুঝতেও পারে না। এমতাবস্থায় প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন তো হয়ই না উপরন্তু পড়া বুঝতে না পারার কারণে তাকে বিদ্যালয়ে ধরে রাখাই কষ্টকর হয়ে যায়। বর্তমানে করোনা মহামারীর কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিশু যা কিছু শেখার কথা ছিল তা শিখেনি বরং অতীতে যা শিখেছিল তাও ভুলতে বসেছে।
কাজেই এই মুহূর্তে আমাদের নিজ নিজ উদ্যোগে শিশুর সুরক্ষায় ভিন্ন কিছু করে যেতে হবে। জুমে ক্লাস, মোবাইল ফোনে পাঠদান, গুগোল মিটে ক্লাস, সংসদ টিভিতে ক্লাস, বেতারে ক্লাস এ সব করায় সুবিধাভোগীরাই বেশি সুযোগ পাচ্ছে। কারণ অনেকের স্মার্ট ফোন নেই, রেডিও টিভি নেই এবং অনেকের সচেতন কোন অভিভাবক নেই যে শিশুকে এসব অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করবে। ফলে অসাম্য সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। সমাজে বিপুল অসাম্য থাকলেও প্রাথমিক স্তরের শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে তা কোনভাবেই সৃষ্টি করা সমীচীন নয়। এই জন্য বিদ্যালয় রি-ওপেনিং কালে মাতৃভাষা তথা বাংলা শিক্ষার সু-ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন।
শিশুরা যেন ভুলে যাওয়া পড়াগুলো শ্রেণীকক্ষে প্রবেশের আগেই বিদ্যালয়ের দেয়ালে সন্নিবেশিত সু-নির্দিষ্ট পাঠগুলো দেখে শিখে নিতে পারে। সেজন্য তাদের এভাবে সহযোগিতা করা যায়: (ক) বর্ণ পরিচয় (খ) বানান এবং (গ) পঠন-শিখন-এর মূল বিষয়গুলো স্বল্প পরিসরে শিখানো অর্থাৎ মাতৃভাষা/ বাংলা শিখানোর উদ্দেশ্যে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, কার-চিহ্নসমূহ কার-চিহ্ন বিহীন ১০টি ছোট শব্দ, কারচিহ্নবিহীন ছোট ১০টি বাক্য, কারচিহ্নযুক্ত ১০টি বর্ণ, কারচিহ্নযুক্ত ১০টি ছোট বাক্য, ১০টি যুক্তবর্ণ ভেঙে দেখানো, যুক্তবর্ণসহ ১০টি শব্দ, যুক্তবর্ণসহ ১০টি ছোট বাক্য, ১০টি অনুস্বরযুক্ত শব্দ, ১০টি বিসর্গযুক্ত শব্দ, ১০টি অনুুস্বরযুক্ত ছোট বাক্য, ১০টি বিসর্গযুক্ত ছোট বাক্য ইত্যাদি স্পষ্ট করে ছাপার অক্ষরে নানা রং ব্যবহার করে আর্কষণীয়ভাবে প্রথমত শ্রেণী কক্ষের বাইরের দেয়ালগুলোতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। অতঃপর একই কায়দার শ্রেণী কক্ষের ভেতরের দেয়ালগুলোতেও তা সন্নিবেশ করতে হবে। শ্রেণি কক্ষের বাহিরে এবং ভেতরের দেয়ালগুলোতে সাধারণত লেখা হয়- শিক্ষার জন্য এসো, সেবার জন্য বেরিয়ে যাও। আমি কি শিক্ষকের কথায় মনোযোগ দিচ্ছি, আমি কি সময়মতো বিদ্যালয়ে এসেছি ইত্যাদি জ্ঞানগর্ভ কথাবার্তা। যে শিশু পড়তেই পারছে না তার কাছে এসবের মূল্য কি? বৃহৎ কলবরের পাঠ্য পুস্তকগুলোও সে সব শিশুর জন্য এক একটি ঃযৎবধঃ যারা পড়া না শিখেই বিদ্যালয়ে এসেছে। নতুন বই পাওয়ার আনন্দ এই পড়তে না পারার কারণে অল্পদিনেই ম্লান হয়ে যায়। তাই বৃহৎ কলেবরের পাঠ্যপুস্তকভীতি দূর করে এটাকে আনন্দময় করে তোলার জন্য উল্লিখিত উপায়ে বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষের বাহিরের দেয়াল এবং ভেতরের দেয়াল সজ্জিত করা জরুরি। এতে করে পাঠ্যপুস্তকের বিপুল-সংখ্যক অচেনা শব্দ এবং বাক্যেও ভীতি মুক্ত হয়ে অনায়াসে পরিবেশের মাছ, গাছ, গরু, ছাগল, মানুষ, আকাশ, বাতাস ইত্যাদির মতো করে বিদ্যালয়ের দেয়াল থেকেই শিশু নতুন পাঠ শিখতে পারবে। সঙ্গে সঙ্গে সে পুরোনো পাঠেরও অনুশীলন/স্মৃতিচারণ করতে পারবে।
পাঠ্যপুস্তকের সাহায্য ছাড়াই দেওয়াল থেকে যে কোনো সময় শিশু নিজে নিজে শিখতে পারবে, সহপাঠীর কাছ থেকে শিখতে পারবে, উপরের শ্রেণীর শিক্ষার্থীর কাছ থেকেও শিখতে পারবে, শিক্ষকের কাছ থেকে শিখতে পারবে। এমনকি বিদ্যালয়ের দপ্তরির-কাম-প্রহরীর কাছ থেকেও শিখতে পারবে। খেলার ছলে শিখতে পারবে, হেঁটে বেড়াতে বেড়াতে শিখতে পারবে। ঠিক যেমন আমরা যানবাহনে চলার সময় রাস্তার পাশের স্থাপনাগুলোতে সন্নিবেশিত লেখাগুলো পড়ে থাকি। বন্যাকবলিত এলাকার টিনের ঘরের বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ব্যানার আকারে পাঠগুলো লিখে টানিয়ে দিতে হবে এবং দিন শেষে তা পতাকার মতো যত্নসহকারে গুটিয়ে রাখতে হবে। এ লেখাগুলো থেকে যে কেউ শিশুকে যাচাইও করতে পারবে। স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যবৃন্দ দেয়ালের পাঠগুলো থেকে শিশুদের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে পুরস্কৃত করতে পারবেন। বিদ্যালয়টিও অর্থবহভাবে নতুন সাজে সজ্জিত হবে।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষা খাত। তাই একটি শিশুও যেন নিরক্ষর না থাকে, সবাই পড়তে পারে এবং বুঝতে পারে এজন্য বিদ্যালয়সমূহকে উল্লিখিত উপায়ে সু-সজ্জিত করা প্রয়োজন। শিশুর পড়তে পারা নিশ্চিত না হলে সরকারের প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে গৃহীত সব পদক্ষেপ প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমাদের শিক্ষকবৃন্দ সরকারের প্রায় সব কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। তারা চাইলে জাদুর মতো করে শিশুদের রিডিং-পড়া শিখিয়ে দিতে পারেন। এজন্য শিক্ষকবৃন্দকে নানাভাবে সহযোগিতা করে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কারণ মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের মূলমন্ত্র শুধু তারাই জানেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর বিভিন্ন পরিবেশের বিপুল-সংখ্যক শিশুকে নিয়ে কাজ করার ফলে তারা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তা আমরা শুধু পেডাগজি বা শিক্ষাবিজ্ঞান কিংবা শিশু মনোবিজ্ঞানের বই পড়ে করতে চাইলে পুরোপুরি সার্থক হওয়া যাবে না। এজন্য দরকার যুক্তিসংগত পদক্ষেপ।
[লেখক : উপজেলা শিক্ষা অফিসার,
কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ]
সন্ধ্যা রানী সাহা
রোববার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১
২০২০ সালের ১৭ মার্চের পর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ছুটি ঘোষণা করা হয়। প্রথমে ছুটি ঘোষণার পর মনে করা হয়েছিল ... এই ক’টাদিন গেলে কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে এবং তারপর বিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া যাবে। কিন্তু তা না হওয়ায় এক দিকে যেমন ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হয়েছে। অন্যদিকে ছুটির কারণে শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চলেছে নানাবিধ কার্যক্রম।
বিদ্যালয়ের গতানুগতিক শিক্ষাদান বন্ধ থাকলেও বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ, মেরামত কাজ, উন্নয়নমূলক কাজ, রুটিন মেইনটেইনেন্সের কাজগুলো কিন্তু বন্ধ নেই। এগুলো পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কিন্তু অল্পবয়সীদের আনাগোনা। তাদের মধ্যে শুধু প্রাথমিক নয় মাধ্যমিক বা তদূর্ধ্ব শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাও আছে। এছাড়া তো গ্রামে উম্মুক্ত কোন স্থান আর অবশিষ্ট নেই। সেখানে কেউ খেলা করছে, কেউ বসে সমবয়সীদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে, কেউবা শুধু ঘোরাঘুরি করছে। এ থেকে বোঝা যায় গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কতটা কাক্সিক্ষত জায়গা। এখানে গিয়ে শ্রেণীকক্ষের ভেতরে বসে বা বাইরে ঘোরাঘুরি করে মাতৃভাষা শেখার সুযোগটা কাজে লাগানো যায়। যত দ্রুত শিশুরা বাংলা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মাতৃভাষা) ভাষাটি আয়ত্ত করতে পারবে ততই বাংলাদেশের মঙ্গল। আমরা জানি বাংলাদেশের শিক্ষা-সংক্রান্ত ঘোষণা জাতিসংঘের শিক্ষা-সংক্রান্ত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং অন্যান্য শিক্ষা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে সব শিশু বিনা মূল্যে এবং বাধ্যতামূলকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করবে। এতসব রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ সত্ত্বেও ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এক জরিপ মতে ৫৪% শিক্ষার্থী তৃতীয় শ্রেণীতে পড়লেও তারা কী পড়ছে তা বুঝাতে পারে না, ৩৩% শিক্ষার্থী ৩০ সেকেন্ডে পাঁচটি শব্দ পড়তে পারে না। বিশ্বব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির সঙ্গে বাংলাদেশের এ চিত্র অবশ্যই উদ্বেগজনক। যে শিশু বাংলা ভাষায় কাক্সিক্ষত যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না সে অন্যান্য পাঠ্যবিষয়গুলোও যথাযথভাবে আয়ত্ত করতে পারে না। এমতাবস্থায় দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে গেলে প্রথমেই শিশুদের মাতৃভাষা বাংলায় দক্ষ করে তুলতে হবে। কারণ শিশু পরিবার থেকে যে কথাগুলো অবলীলাক্রমে শিখে বিদ্যালয়ে এসে থাকে সে কথাগুলোর নামই তো ভাষা। কথাগুলো সে এলোমেলোভাবে না বলে গুছিয়ে বলে। সুতরাং সে ভাষার বর্ণগুলো না চিনেই কতকগুলো বর্ণ একত্রিত করে অর্থবোধক শব্দ তৈরি করছে। কতকগুলো শব্দকে একত্রিত করে অর্থবোধক বাক্য তৈরি করছে। সব শিশুই অর্থবোধক এবং শ্রুতিমধুর বাক্য সুন্দরভাবে উপস্থাপনের মাধমে পরিবার, সহপাঠী এবং শিক্ষকের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করছে। যে সব শিশুর পরিবারে শিক্ষিত অভিভাবক রয়েছে তারা বর্ণ চিনে এমনকি পড়তে এবং লিখতে শিখেই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। দেশের শিক্ষার হারের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এমন শিশুদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যালয়ে ছোট ছোট দল গঠন করে শিক্ষক যখন পাঠদান করান তখন এই পড়তে পারা শিশুরাও একই দলের অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা শিখতে সহায়তা করে থাকে।
বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো, উচ্চতর শ্রেণীতে পড়লেও অনেক শিক্ষার্থী বর্ণগুলো চিনতে পারে না। বাক্য পড়লেও বাক্যের অন্তর্গত শব্দ পৃথকভাবে পড়তে, লিখতে বা চিনতে পারে না। শুধু বইটি শিক্ষকের সঙ্গে সরবে পাঠ করে মুখস্থ করছে আর শিক্ষক বোর্ডে যা লিখছে তা হুবহু লিখতে শিখছে। বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে অনুরূপ দুর্বলতা কোভিড পূর্ববর্তীকালেই বিদ্যমান ছিল। ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিদ্যালয় খুলেছে। দীর্ঘ ১৭ মাস পর শিশুরা আগের শিক্ষা অনেকটাই ভুলে গেছে বলা যায়। পড়া ভুলে যাওয়া শিশুরা শিক্ষকের কাছ থেকে কতটা সহযোগিতা কীভাবে পাবে সে বিষয়ক কোন পূর্ব প্রস্তুতি শিক্ষকের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তারা বিদ্যালয় পুনরায় খোলার পূর্ব প্রস্তুতিতে কোভিড-১৯ এবং অন্যান্য সংক্রামক ব্যধি থেকে বাঁচতে সুরক্ষা সামগ্রীর সংস্থানকে প্রাধান্য দিয়েছে। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখেছি জ্বর মাপার মেশিন, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড ওয়াস, স্যাভলন, হারপিক এসব কেনা হচ্ছে। শ্রেণীকক্ষ ধুয়ে মুছে শ্রেণী কাজের উপযোগী করে রাখা হচ্ছে। মাঠের ঘাস পরিষ্কার করা হচ্ছে। কিন্তু শিশুর শিখন দুর্বলতা দূরীকরণের কোন পূর্ব-পরিকল্পনা শিক্ষকবৃন্দ প্রদর্শন করছেন না। কতজন শিক্ষার্থী এলাকার বাইরে চলে গেছে, কতজন শিক্ষার্থী শিশুশ্রমে নিয়োজিত হয়েছে, কতজন পড়ালেখা ভুলে গেছে, কতজনের নিকট ৩০ এপ্রিল, ২০২১ জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি প্রদত্ত ওয়ার্কসিট এবং অ্যাকটিভিটি সিট পৌঁছানো যায়নি কিংবা কতজন তা নিয়ে সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে তার কোনো পরিসংখ্যান বিদ্যালয়ে নেই। যদিও বর্তমানে চলমান ওয়ার্কসিট এবং অ্যাকটিভিটি সিট নিঃসন্দেহে শিশুকে পাঠ বিষয়ে এগিয়ে নেয়ার একটি যথাযথ উদ্যোগ।
প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে রয়েছে। এই মডেল স্কুলগুলি অর্থাৎ যেগুলোর কাছ থেকে সাধারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো উন্নত শিক্ষা প্রণালী গ্রহণ থাকে। সেগুলোও সাধারণ বিদ্যালয়ে পরিণত হয়ে গেছে। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে অতীতের তুলনায় শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারিত যোগ্যতার চেয়ে অধিকাংশেরই বেশি রয়েছে। তাদের সরকারি খরচে নানাবিধ প্রশিক্ষণ প্রদান চলমান আছে। আবার তাদের দেখভাল করার জন্য রয়েছে অসংখ্য উচ্চ ডিগ্রিধারী সব কর্মকর্তা। যাদের কাজ শিক্ষকের মাধ্যমে শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার জন্য নির্ধারিত ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করা। যে শিশু পড়তে পারে না সে পড়া বুঝতেও পারে না। এমতাবস্থায় প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন তো হয়ই না উপরন্তু পড়া বুঝতে না পারার কারণে তাকে বিদ্যালয়ে ধরে রাখাই কষ্টকর হয়ে যায়। বর্তমানে করোনা মহামারীর কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিশু যা কিছু শেখার কথা ছিল তা শিখেনি বরং অতীতে যা শিখেছিল তাও ভুলতে বসেছে।
কাজেই এই মুহূর্তে আমাদের নিজ নিজ উদ্যোগে শিশুর সুরক্ষায় ভিন্ন কিছু করে যেতে হবে। জুমে ক্লাস, মোবাইল ফোনে পাঠদান, গুগোল মিটে ক্লাস, সংসদ টিভিতে ক্লাস, বেতারে ক্লাস এ সব করায় সুবিধাভোগীরাই বেশি সুযোগ পাচ্ছে। কারণ অনেকের স্মার্ট ফোন নেই, রেডিও টিভি নেই এবং অনেকের সচেতন কোন অভিভাবক নেই যে শিশুকে এসব অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করবে। ফলে অসাম্য সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। সমাজে বিপুল অসাম্য থাকলেও প্রাথমিক স্তরের শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে তা কোনভাবেই সৃষ্টি করা সমীচীন নয়। এই জন্য বিদ্যালয় রি-ওপেনিং কালে মাতৃভাষা তথা বাংলা শিক্ষার সু-ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন।
শিশুরা যেন ভুলে যাওয়া পড়াগুলো শ্রেণীকক্ষে প্রবেশের আগেই বিদ্যালয়ের দেয়ালে সন্নিবেশিত সু-নির্দিষ্ট পাঠগুলো দেখে শিখে নিতে পারে। সেজন্য তাদের এভাবে সহযোগিতা করা যায়: (ক) বর্ণ পরিচয় (খ) বানান এবং (গ) পঠন-শিখন-এর মূল বিষয়গুলো স্বল্প পরিসরে শিখানো অর্থাৎ মাতৃভাষা/ বাংলা শিখানোর উদ্দেশ্যে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, কার-চিহ্নসমূহ কার-চিহ্ন বিহীন ১০টি ছোট শব্দ, কারচিহ্নবিহীন ছোট ১০টি বাক্য, কারচিহ্নযুক্ত ১০টি বর্ণ, কারচিহ্নযুক্ত ১০টি ছোট বাক্য, ১০টি যুক্তবর্ণ ভেঙে দেখানো, যুক্তবর্ণসহ ১০টি শব্দ, যুক্তবর্ণসহ ১০টি ছোট বাক্য, ১০টি অনুস্বরযুক্ত শব্দ, ১০টি বিসর্গযুক্ত শব্দ, ১০টি অনুুস্বরযুক্ত ছোট বাক্য, ১০টি বিসর্গযুক্ত ছোট বাক্য ইত্যাদি স্পষ্ট করে ছাপার অক্ষরে নানা রং ব্যবহার করে আর্কষণীয়ভাবে প্রথমত শ্রেণী কক্ষের বাইরের দেয়ালগুলোতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। অতঃপর একই কায়দার শ্রেণী কক্ষের ভেতরের দেয়ালগুলোতেও তা সন্নিবেশ করতে হবে। শ্রেণি কক্ষের বাহিরে এবং ভেতরের দেয়ালগুলোতে সাধারণত লেখা হয়- শিক্ষার জন্য এসো, সেবার জন্য বেরিয়ে যাও। আমি কি শিক্ষকের কথায় মনোযোগ দিচ্ছি, আমি কি সময়মতো বিদ্যালয়ে এসেছি ইত্যাদি জ্ঞানগর্ভ কথাবার্তা। যে শিশু পড়তেই পারছে না তার কাছে এসবের মূল্য কি? বৃহৎ কলবরের পাঠ্য পুস্তকগুলোও সে সব শিশুর জন্য এক একটি ঃযৎবধঃ যারা পড়া না শিখেই বিদ্যালয়ে এসেছে। নতুন বই পাওয়ার আনন্দ এই পড়তে না পারার কারণে অল্পদিনেই ম্লান হয়ে যায়। তাই বৃহৎ কলেবরের পাঠ্যপুস্তকভীতি দূর করে এটাকে আনন্দময় করে তোলার জন্য উল্লিখিত উপায়ে বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষের বাহিরের দেয়াল এবং ভেতরের দেয়াল সজ্জিত করা জরুরি। এতে করে পাঠ্যপুস্তকের বিপুল-সংখ্যক অচেনা শব্দ এবং বাক্যেও ভীতি মুক্ত হয়ে অনায়াসে পরিবেশের মাছ, গাছ, গরু, ছাগল, মানুষ, আকাশ, বাতাস ইত্যাদির মতো করে বিদ্যালয়ের দেয়াল থেকেই শিশু নতুন পাঠ শিখতে পারবে। সঙ্গে সঙ্গে সে পুরোনো পাঠেরও অনুশীলন/স্মৃতিচারণ করতে পারবে।
পাঠ্যপুস্তকের সাহায্য ছাড়াই দেওয়াল থেকে যে কোনো সময় শিশু নিজে নিজে শিখতে পারবে, সহপাঠীর কাছ থেকে শিখতে পারবে, উপরের শ্রেণীর শিক্ষার্থীর কাছ থেকেও শিখতে পারবে, শিক্ষকের কাছ থেকে শিখতে পারবে। এমনকি বিদ্যালয়ের দপ্তরির-কাম-প্রহরীর কাছ থেকেও শিখতে পারবে। খেলার ছলে শিখতে পারবে, হেঁটে বেড়াতে বেড়াতে শিখতে পারবে। ঠিক যেমন আমরা যানবাহনে চলার সময় রাস্তার পাশের স্থাপনাগুলোতে সন্নিবেশিত লেখাগুলো পড়ে থাকি। বন্যাকবলিত এলাকার টিনের ঘরের বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ব্যানার আকারে পাঠগুলো লিখে টানিয়ে দিতে হবে এবং দিন শেষে তা পতাকার মতো যত্নসহকারে গুটিয়ে রাখতে হবে। এ লেখাগুলো থেকে যে কেউ শিশুকে যাচাইও করতে পারবে। স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যবৃন্দ দেয়ালের পাঠগুলো থেকে শিশুদের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে পুরস্কৃত করতে পারবেন। বিদ্যালয়টিও অর্থবহভাবে নতুন সাজে সজ্জিত হবে।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষা খাত। তাই একটি শিশুও যেন নিরক্ষর না থাকে, সবাই পড়তে পারে এবং বুঝতে পারে এজন্য বিদ্যালয়সমূহকে উল্লিখিত উপায়ে সু-সজ্জিত করা প্রয়োজন। শিশুর পড়তে পারা নিশ্চিত না হলে সরকারের প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে গৃহীত সব পদক্ষেপ প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমাদের শিক্ষকবৃন্দ সরকারের প্রায় সব কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। তারা চাইলে জাদুর মতো করে শিশুদের রিডিং-পড়া শিখিয়ে দিতে পারেন। এজন্য শিক্ষকবৃন্দকে নানাভাবে সহযোগিতা করে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কারণ মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের মূলমন্ত্র শুধু তারাই জানেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর বিভিন্ন পরিবেশের বিপুল-সংখ্যক শিশুকে নিয়ে কাজ করার ফলে তারা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তা আমরা শুধু পেডাগজি বা শিক্ষাবিজ্ঞান কিংবা শিশু মনোবিজ্ঞানের বই পড়ে করতে চাইলে পুরোপুরি সার্থক হওয়া যাবে না। এজন্য দরকার যুক্তিসংগত পদক্ষেপ।
[লেখক : উপজেলা শিক্ষা অফিসার,
কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ]