alt

সাময়িকী

শিল্পী সুনীল কুমারের ‘পথের গল্প’-এর স্বরূপ

শিশির মল্লিক

: বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

শিল্পী : সুনীল কুমার

“বৈচিত্র্যময় জীবনটা বহুমুখী পথে আর্বতিত। এক পথে চলতে গিয়ে খুঁজে পেয়েছি আরো শাখাপথ, মহাপথ। মানুষ-সমাজ-দেশ সেই পথেরই অনুষঙ্গ।

মানুষকে ভালবাসি আমি, তাই মানুষের ছবি আঁকি। প্রকৃতিও আমার সৃষ্টির বড় উপাস্য। মানুষকে ভালবেসে পথ চলতে গিয়ে যেমন খুঁজে পেয়েছি ভালবাসা সিক্ত মধুময় কাব্য, তেমনি খুঁজে পেয়েছি সমাজের অনাচার-অবিচার-নির্যাতনের অমানবিক বিষাদের গল্পও।”

এসবই শিল্পী সুনীল তুলে আনার চেষ্টা করেছেন তাঁর শিল্পকর্মে। ১৬ মে, ২০২৫ সন্ধ্যায় শিল্পী সুনীল কুমারের “পথের গল্প” শিরোনামের তৃতীয় একক চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দেশের বরেণ্য শিল্পী এ্যামিরেটাস অধ্যাপক রফিকুন নবী। উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি শিল্পী সুনীলের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সুনীলের ড্রইং, কম্পোজিশন সেন্স, স্টাইল, রং ব্যবহারের পরিমিতি ও ট্যাক্সচারের প্রয়োগ খুবই স্বতন্ত্র বলে মন্তব্য করেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন, শিল্পী সুনীল আগামীতে আরো নতুন নতুন ভাবনা ও আঙিকের নিজস্ব জায়গা তৈরি করে নেবে।

বিশিষ্ট শিল্প সমালোচক অধ্যাপক মইনুদ্দীন খালেদ বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বলেন- “সুনীলের ছবিতে রিয়ালিস্টিক ফর্ম ও কিউবিক ফর্মের মেলবন্ধন দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে উঠেছে। ফর্মের যোজন-বিয়োজনের সৃজন-তাড়নায় সুনীল নির্বস্তুক বা বিমূর্ত শিল্পরীতির উপকণ্ঠে উপনীত হয়েছেন, এমনও ভাবা যেতে পারে। জ্যামিতিক ফর্মেও স্বয়ংসম্পূর্ণ উপস্থিতি ও বর্ণের স্বাধীনচারিতা সুনীলকে নতুন পথ দেখাচ্ছে। তার ছবির নীল সবুজে যে লাল ছোপ তা শুধু ফুল ফোটার বার্তা দেয় না, তা কালের রাগ ও রক্তের কথাও বলে।”

এটি আশার কথা এই যে, দেশের সবচেয়ে খ্যাতিমান ও বিশিষ্ট বিদগ্ধজনের আশীর্বাদ পাওয়া শিল্পী সুনীল কুমার তার “পথের গল্প” এর মাধ্যমে শিল্পাঙ্গনে প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছেন। একে যদি জীবনের প্রাপ্তির গল্প ধরি তেমনি অপ্রাপ্তির গল্পও শিল্পীর জীবনে কম নয় বৈকি। এই প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির গল্পই যেন ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি লালমাটিয়ার ভূমি ও শিল্পাঙ্গন গ্যালারি জুড়ে।

তাঁর গল্পের নায়ক নায়িকা নর ও নারী। নারীই মুখ্য চরিত্র। নারীর প্রকৃতিগত সৌন্দর্যের সাথে অন্যান্য উপাদান ফুল পাখি চাঁদ সূর্যেরও যেন যোগ খুঁজে পান শিল্পী। এ সবকে এক সাথে গেঁথে যে চিত্রপট তিনি সৃষ্টি করেছেন তার দৃশ্যগত উপস্থাপনা অত্যন্ত নান্দনিক ও শিল্পরস সমৃদ্ধ বলা যায়। ভাব বিষয় ও কৃৎকৌশলের দক্ষতায় প্রতিটি ছবি হয়ে উঠেছে জীবনের বহুমাত্রিকতার এক একটি উপাখ্যান। ভিন্ন ভিন্ন গল্পের ভিন্ন ভিন্ন কম্পোজিশন যেন এক মহাআখ্যান সৃষ্টি করেছে।

আমরা যদি তাঁর দু’চারটি ছবির ওপর আলোকপাত করি তবে দর্শক ও পাঠক তার মর্ম উপলব্ধি করতে পারবেন। যেমন- ‘উই এ্যান্ড দি সানসেট’। যেটিকে তিনি প্রচ্ছদ হিসেবে ক্যাটালগে ব্যাবহার করেছেন। ছবিটিতে অবজেক্ট হিসেবে নারী-পুরুষের কয়েকটি মুখাবয়বই দেখি। ডান পাশে হালকা লাল সূর্য। মিডলের লেফট এ্যালাইনে নারীর ঠোঁটের লাল তো কেবল লাল নয়, তা কামনারও সিম্বল! এই অবজেক্টগুলো চারকোলের লাইন ও ম্যাশকরণ এবং চিকন ইরেজার ব্যাবহার করে টেক্সচার প্রয়োগ সেই সাথে সফট পেস্টেলের লাল রং এক নান্দনিক আবহ সৃষ্টি করেছে পুরো ছবিটিতে। এর পেছনের গল্পটি কী? মুখাবয়বগুলো একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে তাদের চোখে মুখে কেবল বিষণœতা। অস্তমিত সূর্যের সাথে তার যেন এক ঐকান্তিক ঐক্যতান রয়েছে। শিল্পী এখানে দর্শককে একটি মেসেস দিতে চেয়েছেন। যা যেমন বাস্তব পরিণতির ইঙ্গিত দেয় তেমনি আধ্যাত্মিকতায় উন্মেলিত করে আমাদের ভাবজগতকে নাড়িয়ে দেয়।

তাঁর আরেকটি ছবি ‘মাদার ট্রি’। ছবিটি দেখা মাত্র মায়ের অসহায়ত্ব বিংবা বন্ধিত্বের অনুভূতিই সঞ্চারিত হয়ে ওঠে আমাদের মনোলোকে। গ্রে কালারের মোটা কাগজে চারকোল ও সফট পেস্টেলে তিনি এই চিত্রকর্মটির কম্পোজিশন করেছেন। অবজেক্ট হিসেবে দেখি একটি বিবস্ত্র নারীমূর্তি কমনীয় ভঙ্গিমায় বিষাদময়তায় দাঁড়িয়ে আছে হাত উধর্¦মুখী করে। হাতগুলো ডাল পালার মতো। শরীরের অস্থিসংস্থান স্ক্রু দিয়ে জোড়া লাগানো। পাগুলো শিকড় ছড়ানো। ব্যাকপুটে গাছ ও পাতার ছড়ানো অবয়ব। এ অবয়বে কয়েকটি পাতা, কিছু পাথ স্ক্রু দিয়ে সাঁটানো। ফলের মতো ঝুলে আছে বেশকিছু মানুষের মুখায়ব। নিচে উলম্ব কিছু পাথ মনে হয় উত্থিত চারাগাছের প্রতিরূপ। নারীর উর্ধ্বাঙ্গ নীলাভ নিন্মাঙ্গ কালছে লাল। অপূর্ব মোহনীয় একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এ ছবিটিতে। বাহ্যিক এসবকিছুর ভিতর দিয়ে শিল্পী কি গল্প বলতে চেয়েছেন তা বোঝার চেষ্টা করা যাক।

বৃক্ষ ও নারীর প্রকৃতি যেন একই। বৃক্ষ যেমন পরিবেশ সুরক্ষক তেমনি নারী হলো সমাজ ও সভ্যতার। উভয়েই সৃষ্টির সুরক্ষক। গাছ দেয় ফল, তেমনি নারীও দেয় মানব প্রজন্ম। আবার আজকের আধুনিক সভ্যতার যান্ত্রিকতা যেন গাছ ও নারী উভয়ের কিংবা পুরো ধরিত্রী মায়ের নির্যাতক নিপীড়ক ও হন্তারক। এখানে নারীরূপী গাছ যেন হয়ে ওঠে ধরিত্রীর সিম্বল। এ এক অনন্য সাধারণ মহাকাহিনী! যা গল্পকে ছাড়িয়ে যায়। সুনীল তার গল্প থেকে উতরে গেছেন মহাকাহিনীতে। যাকে তিনি বলেছেন মহাপথ।

প্রকৃতি পরিবেশের পাশাপাশি শিল্পী সুনীল আমাদের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ রবীন্দ্রনাথ আমাদের ভাষার গল্পও বলে গেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি তাঁর ব্যক্তিত্বের মতো সৎ ও নিষ্ঠাবান নিঃসন্দেহে।

এভাবে প্রতিটি ছবিতেই তিনি গল্প বলে গেছেন। সেটা ধরতে হলে ছবিপাঠ এবং পাঠে অধ্যবসায়িতা দরকার। শিল্পী যা আঁকেন; বাহ্যিক দিক তার প্রকাশ মাত্র। ভেতরের ভাবগত দিকে অবজেক্ট ও রং এর অর্থ অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রবেশ করতে হয়। দৃশ্যবস্তুর ভেতর দিয়ে সুনীলের গল্প বলা সত্যি তৃপ্তিদায়ক। তাঁর শিক্ষক ও দেশের খ্যাতিমান শিল্পী ও শিল্প শিক্ষকরা তাঁর ‘পথের গল্প’-এর সার্থকতা কামনা করেছেন।

শিল্পী সুনীল কুমার দেশের সুদিন ও আশাবাদের গল্প বলে যাক আমৃত্যু এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

ছবি

ফিলিস্তিনের বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে অণুগল্প

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

রাত গভীর

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

‘এ নয় আঁখিজল’

জ্যৈষ্ঠের পদাবলি

ছবি

ওসামা অ্যালোমারের একঝুড়ি খুদে গল্প

সাময়িকী কবিতা

ছবি

‘ব্রহ্মপুত্র দাঁড়াও’ কাব্যগ্রন্থে নীলদ্রোহের রেখাপাত

ছবি

নার্গিস-নজরুলের স্মৃতিধন্য দৌলতপুরে একদিন

ছবি

যেভাবে ভেঙেছিল এক মৌনতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি : একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

নজরুল সাহিত্যে নন্দনতত্ত্বের প্রেক্ষিত

ছবি

স্বাধীনতার কবি নজরুল

ছবি

নজরুলের শ্যামাসঙ্গীত প্রতিভা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

দাউদ হায়দার: স্বকীয় ও নির্বাসিত

ছবি

অটোগ্রাফ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি : একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

আলবেয়ার কামুর গল্পে অস্তিত্বের নিষ্ঠুরতা

ছবি

উপন্যাসের জন্মবীক্ষা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

কানাগলি

ছবি

পার্ল এস বাক-এর কবিতা

ছবি

হোসে এচেগারাই স্প্যানিশ আলোকবর্তিকা

ছবি

নববীণায় বাজে নতুনের জয়গান

ছবি

রবীন্দ্রনাথের ‘করুণা’ ঘিরে কিছু কথা

ছবি

গীতাঞ্জলির ইতিবৃত্ত ও বেদনাহত রবীন্দ্রনাথ

ছবি

রবীন্দ্রনাথ, শিলাইদহ ও ‘ছিন্নপত্র’

ছবি

নিউ নেদারল্যান্ডস: জার্র্সি এবং লেনাপি জনগোষ্ঠী

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বকুলীর সেইরাত

ছবি

আকাশের প্রান্ত

tab

সাময়িকী

শিল্পী সুনীল কুমারের ‘পথের গল্প’-এর স্বরূপ

শিশির মল্লিক

শিল্পী : সুনীল কুমার

বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

“বৈচিত্র্যময় জীবনটা বহুমুখী পথে আর্বতিত। এক পথে চলতে গিয়ে খুঁজে পেয়েছি আরো শাখাপথ, মহাপথ। মানুষ-সমাজ-দেশ সেই পথেরই অনুষঙ্গ।

মানুষকে ভালবাসি আমি, তাই মানুষের ছবি আঁকি। প্রকৃতিও আমার সৃষ্টির বড় উপাস্য। মানুষকে ভালবেসে পথ চলতে গিয়ে যেমন খুঁজে পেয়েছি ভালবাসা সিক্ত মধুময় কাব্য, তেমনি খুঁজে পেয়েছি সমাজের অনাচার-অবিচার-নির্যাতনের অমানবিক বিষাদের গল্পও।”

এসবই শিল্পী সুনীল তুলে আনার চেষ্টা করেছেন তাঁর শিল্পকর্মে। ১৬ মে, ২০২৫ সন্ধ্যায় শিল্পী সুনীল কুমারের “পথের গল্প” শিরোনামের তৃতীয় একক চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দেশের বরেণ্য শিল্পী এ্যামিরেটাস অধ্যাপক রফিকুন নবী। উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি শিল্পী সুনীলের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সুনীলের ড্রইং, কম্পোজিশন সেন্স, স্টাইল, রং ব্যবহারের পরিমিতি ও ট্যাক্সচারের প্রয়োগ খুবই স্বতন্ত্র বলে মন্তব্য করেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন, শিল্পী সুনীল আগামীতে আরো নতুন নতুন ভাবনা ও আঙিকের নিজস্ব জায়গা তৈরি করে নেবে।

বিশিষ্ট শিল্প সমালোচক অধ্যাপক মইনুদ্দীন খালেদ বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বলেন- “সুনীলের ছবিতে রিয়ালিস্টিক ফর্ম ও কিউবিক ফর্মের মেলবন্ধন দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে উঠেছে। ফর্মের যোজন-বিয়োজনের সৃজন-তাড়নায় সুনীল নির্বস্তুক বা বিমূর্ত শিল্পরীতির উপকণ্ঠে উপনীত হয়েছেন, এমনও ভাবা যেতে পারে। জ্যামিতিক ফর্মেও স্বয়ংসম্পূর্ণ উপস্থিতি ও বর্ণের স্বাধীনচারিতা সুনীলকে নতুন পথ দেখাচ্ছে। তার ছবির নীল সবুজে যে লাল ছোপ তা শুধু ফুল ফোটার বার্তা দেয় না, তা কালের রাগ ও রক্তের কথাও বলে।”

এটি আশার কথা এই যে, দেশের সবচেয়ে খ্যাতিমান ও বিশিষ্ট বিদগ্ধজনের আশীর্বাদ পাওয়া শিল্পী সুনীল কুমার তার “পথের গল্প” এর মাধ্যমে শিল্পাঙ্গনে প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছেন। একে যদি জীবনের প্রাপ্তির গল্প ধরি তেমনি অপ্রাপ্তির গল্পও শিল্পীর জীবনে কম নয় বৈকি। এই প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির গল্পই যেন ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি লালমাটিয়ার ভূমি ও শিল্পাঙ্গন গ্যালারি জুড়ে।

তাঁর গল্পের নায়ক নায়িকা নর ও নারী। নারীই মুখ্য চরিত্র। নারীর প্রকৃতিগত সৌন্দর্যের সাথে অন্যান্য উপাদান ফুল পাখি চাঁদ সূর্যেরও যেন যোগ খুঁজে পান শিল্পী। এ সবকে এক সাথে গেঁথে যে চিত্রপট তিনি সৃষ্টি করেছেন তার দৃশ্যগত উপস্থাপনা অত্যন্ত নান্দনিক ও শিল্পরস সমৃদ্ধ বলা যায়। ভাব বিষয় ও কৃৎকৌশলের দক্ষতায় প্রতিটি ছবি হয়ে উঠেছে জীবনের বহুমাত্রিকতার এক একটি উপাখ্যান। ভিন্ন ভিন্ন গল্পের ভিন্ন ভিন্ন কম্পোজিশন যেন এক মহাআখ্যান সৃষ্টি করেছে।

আমরা যদি তাঁর দু’চারটি ছবির ওপর আলোকপাত করি তবে দর্শক ও পাঠক তার মর্ম উপলব্ধি করতে পারবেন। যেমন- ‘উই এ্যান্ড দি সানসেট’। যেটিকে তিনি প্রচ্ছদ হিসেবে ক্যাটালগে ব্যাবহার করেছেন। ছবিটিতে অবজেক্ট হিসেবে নারী-পুরুষের কয়েকটি মুখাবয়বই দেখি। ডান পাশে হালকা লাল সূর্য। মিডলের লেফট এ্যালাইনে নারীর ঠোঁটের লাল তো কেবল লাল নয়, তা কামনারও সিম্বল! এই অবজেক্টগুলো চারকোলের লাইন ও ম্যাশকরণ এবং চিকন ইরেজার ব্যাবহার করে টেক্সচার প্রয়োগ সেই সাথে সফট পেস্টেলের লাল রং এক নান্দনিক আবহ সৃষ্টি করেছে পুরো ছবিটিতে। এর পেছনের গল্পটি কী? মুখাবয়বগুলো একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে তাদের চোখে মুখে কেবল বিষণœতা। অস্তমিত সূর্যের সাথে তার যেন এক ঐকান্তিক ঐক্যতান রয়েছে। শিল্পী এখানে দর্শককে একটি মেসেস দিতে চেয়েছেন। যা যেমন বাস্তব পরিণতির ইঙ্গিত দেয় তেমনি আধ্যাত্মিকতায় উন্মেলিত করে আমাদের ভাবজগতকে নাড়িয়ে দেয়।

তাঁর আরেকটি ছবি ‘মাদার ট্রি’। ছবিটি দেখা মাত্র মায়ের অসহায়ত্ব বিংবা বন্ধিত্বের অনুভূতিই সঞ্চারিত হয়ে ওঠে আমাদের মনোলোকে। গ্রে কালারের মোটা কাগজে চারকোল ও সফট পেস্টেলে তিনি এই চিত্রকর্মটির কম্পোজিশন করেছেন। অবজেক্ট হিসেবে দেখি একটি বিবস্ত্র নারীমূর্তি কমনীয় ভঙ্গিমায় বিষাদময়তায় দাঁড়িয়ে আছে হাত উধর্¦মুখী করে। হাতগুলো ডাল পালার মতো। শরীরের অস্থিসংস্থান স্ক্রু দিয়ে জোড়া লাগানো। পাগুলো শিকড় ছড়ানো। ব্যাকপুটে গাছ ও পাতার ছড়ানো অবয়ব। এ অবয়বে কয়েকটি পাতা, কিছু পাথ স্ক্রু দিয়ে সাঁটানো। ফলের মতো ঝুলে আছে বেশকিছু মানুষের মুখায়ব। নিচে উলম্ব কিছু পাথ মনে হয় উত্থিত চারাগাছের প্রতিরূপ। নারীর উর্ধ্বাঙ্গ নীলাভ নিন্মাঙ্গ কালছে লাল। অপূর্ব মোহনীয় একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এ ছবিটিতে। বাহ্যিক এসবকিছুর ভিতর দিয়ে শিল্পী কি গল্প বলতে চেয়েছেন তা বোঝার চেষ্টা করা যাক।

বৃক্ষ ও নারীর প্রকৃতি যেন একই। বৃক্ষ যেমন পরিবেশ সুরক্ষক তেমনি নারী হলো সমাজ ও সভ্যতার। উভয়েই সৃষ্টির সুরক্ষক। গাছ দেয় ফল, তেমনি নারীও দেয় মানব প্রজন্ম। আবার আজকের আধুনিক সভ্যতার যান্ত্রিকতা যেন গাছ ও নারী উভয়ের কিংবা পুরো ধরিত্রী মায়ের নির্যাতক নিপীড়ক ও হন্তারক। এখানে নারীরূপী গাছ যেন হয়ে ওঠে ধরিত্রীর সিম্বল। এ এক অনন্য সাধারণ মহাকাহিনী! যা গল্পকে ছাড়িয়ে যায়। সুনীল তার গল্প থেকে উতরে গেছেন মহাকাহিনীতে। যাকে তিনি বলেছেন মহাপথ।

প্রকৃতি পরিবেশের পাশাপাশি শিল্পী সুনীল আমাদের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ রবীন্দ্রনাথ আমাদের ভাষার গল্পও বলে গেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি তাঁর ব্যক্তিত্বের মতো সৎ ও নিষ্ঠাবান নিঃসন্দেহে।

এভাবে প্রতিটি ছবিতেই তিনি গল্প বলে গেছেন। সেটা ধরতে হলে ছবিপাঠ এবং পাঠে অধ্যবসায়িতা দরকার। শিল্পী যা আঁকেন; বাহ্যিক দিক তার প্রকাশ মাত্র। ভেতরের ভাবগত দিকে অবজেক্ট ও রং এর অর্থ অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রবেশ করতে হয়। দৃশ্যবস্তুর ভেতর দিয়ে সুনীলের গল্প বলা সত্যি তৃপ্তিদায়ক। তাঁর শিক্ষক ও দেশের খ্যাতিমান শিল্পী ও শিল্প শিক্ষকরা তাঁর ‘পথের গল্প’-এর সার্থকতা কামনা করেছেন।

শিল্পী সুনীল কুমার দেশের সুদিন ও আশাবাদের গল্প বলে যাক আমৃত্যু এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

back to top