alt

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫

তুমি কি সেই মানুষটা
দিলারা হাফিজ
তুমি কি আমার সেই মানুষটা সমুখে দাঁড়ালে যার,

পৃথিবী আমার যায় খুলে যায়

বুকের সিংহ দরোজা ডাকে, আয়... আয়...

মগ্নপথের জলাধারে যায় ভেসে যায় গন্ধ বকুল,

চোখের পাতায় একটু ছোঁয়া

এক জনমের ভরসা পায়,

ব্যাকুলতর অন্ধকার মুক্তি খোঁজে অনন্যোপায়।

তুমি কি আমার সেই মানুষটা

চিত্রাক্ষরে সেও এক প্রবল করবীফুল
আবদুর রাজ্জাক
খুব কম যাওয়া হয়, তবুও মনে হলেই- তার ঝিরি প্রবাহে যাই

যেখানে সে প্রায়শ পবিত্র স্নানে যায়,

রাতভর মুদ্রা, সামনের দোতলা, বহু বছর ধরে অপ্রকাশিত।

মাঝে মাঝে কেউ আসে, আমাকে পিছনে রেখে

আবার অদৃশ্য হয়ে যায়, ব্যথার সাত সমুদ্র যাপনে কাল গণনা করি,

কখন সে ভোরবেলা খুলে দেয় দরোজা, খেয়াল করি না।

বাড়িটিতে অনেক পল্লব, পল্লব ভেদ করে সূর্যের আলো ইচ্ছে মতো

প্রবেশ করে, মনে হয় সূর্যটা বহু বছর যাবৎ

বাড়িটিকে পাহারায় রেখেছে।

যেন এক নশ^র গোলাপ কিংবা আগুনের পাপড়ি জ¦লছে কোথাও,

হতে পারে সে, হতে পারে অন্য কেউ।

তার ভালোবাসার সমুদ্র জেগে উঠে বলে: তুমি কবে থেকে এখানে

তার কথার প্রতিধ্বনি মুদ্রিত হলে, কেউ যেন খুলে যায়

আয়ুহীন জানালা দিনের।

আমি পরিষ্কার দেখি, তার মিত অহম বেঁকে-চুরে গড়িয়ে পড়ছে,

ডুবিয়ে দিচ্ছে প্রতিভা পল্লব- অজ¯্র মুকুলে,

তার ছড়িয়ে দেয়া খোলা চুল ঘোষণা দিচ্ছে: না-সে বাদাম ফুলে,

না-সে চিত্রাক্ষরে, শুধু সে ঝিরি এক প্রবল প্রবাহে।

ডানার পরশ
আতাউর রহমান মিলাদ
ছায়া হতে চেয়েছিলাম, রোদ গেলো সরে

দীর্ঘ অব্যবহারে সরু পথ গেছে মরে

এই মরা পথে একদা বাবা হেঁটেছেন বহুদূর

কালের বাঁশিতে বাজে হারানোর মৃদু সুর!

স্বর ও সুরের ব্যবধানে একচিলতে রোদ

পিপাসার্ত মন খোঁজে ছায়ার প্রবোধ

ছায়ারা যুক্তবর্ণ, অদৃশ্য সুতোর গিঁট

ঝাপসা মনিটরে সময়ের খ-িত ইট!

তীক্ষ্ণ পেরেক মস্তিষ্কে
রকিবুল হাসান
আমি ক্রমশ মরণ পিপাসার দিকে হেঁটে যাচ্ছি

তুমি হাঁটছো স্বপ্নের দিকে জীবনের নামতা মিলিয়ে,

স্বপ্ন এবং মৃত্যু কী সুন্দর একসঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে।

তোমার দুচোখে দিগন্ত-সবুজ ফসলের গল্প,

প্রমত্ত পদ্মার ভাঙন খেলায় তছনছ সরল বসতি,

তারপর অনাবাদী বুকে ঢেউ খেলে যে উর্বর পলিমাটি।

আমি ক্রমশ মরণ পিপাসার দিকে হেঁটে যাচ্ছি

তুমি হাঁটছো স্বপ্নের দিকে বেণী দুলিয়ে যৌবনা,

স্বপ্ন এবং মৃত্যু কী সুন্দর একসঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে।

তবুও আমরা নদীকে দেখি গভীর গহীন মগ্নতায়

আকাশের নুয়ে পড়া ওড়নার নীল আঁচল মাটিতে,

রামধনু বুকে বাঁধি- তবু কেন তীক্ষè পেরেক মস্তিষ্কে!

ভারমুক্ত
জাফর সাদেক
প্রহরের নগ্ন নাভির ঢেউয়ে ক্রোধ এঁকে এঁকে

নপুংসক আমি ভারমুক্ত হই

অবসন্ন শরীর এখন পড়ে আছে পথের ওপর

ভোরের সূর্য কখনওই ছিলো না ক্রয়যোগ্য মন্থন

হতবহ্বিলের পথ এখনও চায় ভয়াল কিছু অর্জন

এটা জানতো মার্ক টোয়েন

অমানিশার ছদ্মবশে থেকে সরিয়ে ফেলেছি

আমার প্রণয়ের নষ্ট আবরণ

এমন উন্মোচনকে নজরুল বলেনি দ্রোহের পরাজয়

যে প্রহর পূর্ণক্রোধে কাঁপছে তাকে দিয়েছি দ্রাক্ষাবীজ

বিনিময়ে শরীর পেঁচিয়ে উঠে ওষ্ঠে এখন বিষের প্রচ্ছদ

মৃত হয়ে নিই মোহনার নোনাস্বাদ

শরীরের কামাগ্নিতে বন্ধ্যারূপ চায়নিস্বয়ং ঈশ্বর

তাই ভোরের কোলাহলে নতুন কোনও আয়োজন নেই

ছুটছে মানুষ- পথে নেমেছে ঝাড়–দার

কিংবা ঘরে ফিরছে ক্লান্ত দেহজীবী

গিরজার প্রার্থনায় জানা নেই- কে ছদ্মবেশী

এটমবোমার দেশ ও স্বদেশের হাহাকার
শিউল মনজুর
দূরের দেশে একা থাকি। একা থাকার মধ্যে নিঃসঙ্গতা থাকে, থাকে ভবঘুরের পাখি। যেখানে এসে দাঁড়ালো এই জীবন; এটি যাযাবরের অথবা মুসাফিরের, যদিও খাদ্য তালিকায় যুক্ত হয়ে আছে লেটুসপাতার ঘ্রাণ, ব্রুকলি ও বিটরুটের লালজুস এবং মাঝেমধ্যে নিকারাগুয়ার ব্লাক কফি ও শিশুদের প্রিয় ডুনাট। তথাপি ভারি পাথরের নিঃসঙ্গতা বহন করে যেতে হয় দূরের গন্তব্যে, কর্মে; কখনো বাসে, কখনো মেট্রোরেলে! অথচ বন্ধু বলে কেউ নেই, এমনকি এই এটমবোমার দেশে একটি ডুনাটও ফ্রিতে দেবার কিংবা পাবার নিয়ম নেই। তবে তুমুল নির্জনতায় থাকি আর একটি দুপুরের ভবঘুরের পাখি শিস্ দিয়ে যায় একা একা... অথচ বাংলার রাজনীতি শীতের ঘন কুয়াশার মতো অথবা বর্ষানদীর ঘোলাটে জলের মতো ভীষণ ঘূর্ণায়মান; স্বদেশের হাহাকার এই বুকের আঙিনা ছুঁয়ে যায় প্রতিদিন!

কার মঙ্গল সাধনে
শামস হক
এবড়োখেবড়ো বুকটা চেতিয়ে

আকাশ পানে চেয়েশুয়ে আছি

সেই অনাদিকাল ধরে।

এনাকোন্ডার মতো পেঁচিয়ে বেঁকিয়ে

চলে গেছে আমার বুক চিরে গন্তব্যের পাটাতন।

অরণ্যের গহীনে

কখনো উতরায় কখনো চড়ায় ধরে

চলছে দ্রুতযান হিউম্যান হলার

আরো চলছে ওরা- যারা

ক্ষুধার বিরুদ্ধে এক এক জন লড়াকু সৈনিক

চলছে রং বেরঙের পোশাকে সজ্জিত

শিশু-কিশোর যুবক-যুবতী পর্যটকের দল।

কয়লাপোড়া কুঁচকানো ত্বকে ঢাকা

রাজুবালাদের পদচিহ্ন আমার বুক জুড়ে

বিশ্বখ্যাত পানীয়-বাগিচা যাদের ঘামে ভিজে

লকলকিয়ে ওঠে সবুজ সতেজ পাতা

এই পাতার ওজন তেইশ কেজি না হওয়া অবধি

একশ সত্তর টাকা মজুরি মিলবে না।

মাথায় টোকা কাঁধে কাপড়ের ঝোলা

টোকাচ্ছে সবুজ পাতা

কখন হবে তেইশ কেজি!

ওদের দেহের ওজন কমতে কমতে

তেইশ কেজিতে না আসা পর্যন্ত কি

মাধবকু-ের কাল দীঘির পানিতে

মিশে থাকা পানকৌড়ি

হঠাৎ করে যেমন উড়াল দেয়

তেমনি শিকার নিয়ে উড়াল দিয়েছে

পল্লব-রাজ রাজা।

টোরেন্ট নগরীর বেগম পাড়ার বৈঠক

ঘরের ঝাড়বাতির নিচে বসে

রাজা এখন উদ্দীপক পানীয়ে নিমগ্ন।

আকাশ পানে চেয়ে চেয়ে ভাবি

কার মঙ্গলে আমি শ্রীমঙ্গল!

পরম্পরা
সবিতা শর্মা
দক্ষ কারিগর স্বপ্ন চোখে

দিয়েছেন জড়িয়ে ,বাড়িয়ে হাত

শতছিন্ন কাঁথা।

গৃহবাসী গাভীটির গায়ের পশম

কেমন দাঁড়িয়ে আছে

মাঘের শেষবেলাকার শীতে।

(মাঘম-লী হারিয়েছে শীত তো না!)

যেমন রাখতেন-

স্নেহ-মমতা-নিরাপত্তায় বোনা

আদরমাখা চাদর তলে

আত্মজ-আত্মজাদের।

অথচ একের পিঠে আর

যেমতি যায় জলাভিমুখে

‘হাঁস হাঁস তই তই’

প্রভাতের প্রদীপ্ত আলোক-স্নানে

হিমালয়ের নির্ভার জঠর ছেড়ে

তেমতি বেরিয়ে গেছে-

একদিন বিশাল হবে বলে!

বিশালত্ব! প্রমাণ করবে কে?

জীবনের দক্ষ কারিগর

কুঁকড়ে আছেন মরমে

ভাঙাচোরা অবয়ব

জীর্ণ কাঁথায় ন্যুব্জ শরীর,

ঘোলাটে চোখ, মাঘের শীত।

পরীক্ষাটা হয়ে গেল-

উষর চোখের ফসলি জমিনে

দেখে, বিম্বিত আপন দীর্ণ প্রতিকৃতি।

হায়, পরম্পরা ঠেকাবে কে!!

ঘুরে ঘুরে দেখি এক জীবনের জন্মদাগ
সুমন শাম্স
শুধুমাত্র একটি জন্মদাগের জন্য আমি আবার জন্মাতে চাই। শুনেছি জন্মদাগ থাকলে হারিয়ে যাওয়া মানুষকেও ফিরে পাওয়া যায়। এক হয় না মানুষের জন্মদাগ। তাই হারানো মানুষকেও জন্মদাগে নির্ভুল চিনে ফেলা যায়। আমার কোনো জন্মদাগ নেই। অথচ কী দুর্নিবার আমার হারিয়ে যাওয়ার বাসনা। অথবা এও যদি বলি, জন্ম মানেই একটি মানুষের নিখোঁজ হওয়া। মানুষের প্রথম কান্নাই বলে দেয় তার নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ। কেননা মানুষ চিরদিন নিজের কাছে নিজেই থাকে অচেনা। মানুষ বদলে যায় কী অনায়াসে নিজেকে হারিয়ে। কৈশোরে প্রথম হারায় মানুষ। শৈশবের কাছে তখন সে দারুণ অচেনা। এভাবে যৌবনের কাছে মানুষের প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য ধীরে ধীরে অপরিচিত হতে থাকে। সম্পর্কের কাছেও মানুষ ক্রমে বদলে যেতে থাকে। হয়ে যায় নিবিড় অচেনা।মায়ের কাছে সন্তান অচেনা হয় সে স্বামী হলে। স্ত্রীর কাছে স্বামী অচেনা হয় সে পিতা হলে। সন্তানের কাছে পিতা অচেনা হয় সে অক্ষম হলে। আমি চাই আবার একটি জন্ম। আবার অন্তত একটি জন্মদাগ।

সব অচেনায় খুঁজে পেতে চাই নিঃশেষে হারিয়ে যাওয়া একজন নিজেকে।

নিমন্ত্রণ
শেলী সেনগুপ্তা
দেখে নিও,

একদিন ঠিক খুঁজে পাবো

সুখনগরের সিংহদুয়ার

একদিন

খুঁজে পাবো একপাটি সোনালি জুতো

কিংবা

জাদুর কার্পেট

একদিন আমার দরজায় আসবে

কেশর দোলানো পঙ্খীরাজ

ছুটিয়ে নিতে কোনো এক অজানার পথে

একদিন ঠিক খুঁজে পাবো সুখনগরের সদর দরোজার

হীরকখচিত চাবি,

গোপন প্রকোষ্ঠে লুকানো পাখিটি বলবে

বাঁচার মন্ত্র

এবং

জীবনের অর্থ

যদি বলো

সেদিন হবো হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা

তোমাদেরও নিয়ে যাবো

ভালোবাসাময় সুরম্য নগরে...

প্রশ্নবোধক
শারদুল সজল
মানুষের নাম মুখে নিতে গিয়ে আমি

হারিয়ে গেছি

আশ্চর্য এক খাদের গভীরে

প্রশ্নচিহ্ন আর করাত কলে

কাটা পড়ছে সময়

কাটা পড়ছে মুখ

এই কাটামুখগুলো জড়ো করে

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখি

আমিও আমার কাছে এক অপরিচিত মুখ

যাকে কোনোদিন দেখিনি

চিনি না।

ছবি

জীবনবোধ ও শিল্পকর্ম

ছবি

নজরুলের গল্প ও উপন্যাস

ছবি

কৃষ্ণাঙ্গ দাস থেকে হয়ে উঠেছিলেন খ্যাতিমান কবি

শ্রাবণ বর্ষণে

ছবি

শতবর্ষ পরে ‘মিসেস ডালোওয়ে’

ছবি

স্কাল্পচারের জগতটা আস্তে আস্তে ব্যাপকতা পাচ্ছে

ছবি

চব্বিশের অভ্যুত্থান নিয়ে গ্রন্থ

ছবি

ভিন্নচোখ: নুতন কবিতা সংখ্যা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লোরকা: মৃত্যুর রূপক এবং আন্দালুসিয়ার লোকজ বিশ্বাস

ছবি

কবিতার শিল্পনিষ্ঠ রূপকার ফারুক মাহমুদ

ছবি

কাফকাকে পড়া কাফকাকে পড়ানো

ছবি

কবি নওশাদ নূরী

ছবি

আঁধার পেরিয়ে আলোর উদ্ভাষণ

ছবি

সন্জীদা খাতুন : কৃতি ও কৃতিত্ব

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

মননশস্যের অমৃত মন্থন

ছবি

অনুবাদ ও ভূমিকা : আলী সিদ্দিকী

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

বড়শি

ছবি

কাফকাকে পড়া, কাফকাকে পড়ানো

এ মুখর বরষায়

ছবি

রক্তে লেখা প্রেম: রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিপ্লব

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

শঙ্খজীবন: যাপিত জীবনের অন্তর্গূঢ় প্রতিকথা

ছবি

ওসামা অ্যালোমার এক ঝুড়ি খুদে গল্প

ছবি

প্রযুক্তির আলোয় বিশ্বব্যাপী বইবাণিজ্য

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

কাফকার কাছে আমাদের ঋণ স্বীকার

ছবি

কাফকাকে পড়া, কাফকাকে পড়ানো

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

সূর্যের দেশ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

লড়াই

সাময়িকী কবিতা

tab

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫

তুমি কি সেই মানুষটা
দিলারা হাফিজ
তুমি কি আমার সেই মানুষটা সমুখে দাঁড়ালে যার,

পৃথিবী আমার যায় খুলে যায়

বুকের সিংহ দরোজা ডাকে, আয়... আয়...

মগ্নপথের জলাধারে যায় ভেসে যায় গন্ধ বকুল,

চোখের পাতায় একটু ছোঁয়া

এক জনমের ভরসা পায়,

ব্যাকুলতর অন্ধকার মুক্তি খোঁজে অনন্যোপায়।

তুমি কি আমার সেই মানুষটা

চিত্রাক্ষরে সেও এক প্রবল করবীফুল
আবদুর রাজ্জাক
খুব কম যাওয়া হয়, তবুও মনে হলেই- তার ঝিরি প্রবাহে যাই

যেখানে সে প্রায়শ পবিত্র স্নানে যায়,

রাতভর মুদ্রা, সামনের দোতলা, বহু বছর ধরে অপ্রকাশিত।

মাঝে মাঝে কেউ আসে, আমাকে পিছনে রেখে

আবার অদৃশ্য হয়ে যায়, ব্যথার সাত সমুদ্র যাপনে কাল গণনা করি,

কখন সে ভোরবেলা খুলে দেয় দরোজা, খেয়াল করি না।

বাড়িটিতে অনেক পল্লব, পল্লব ভেদ করে সূর্যের আলো ইচ্ছে মতো

প্রবেশ করে, মনে হয় সূর্যটা বহু বছর যাবৎ

বাড়িটিকে পাহারায় রেখেছে।

যেন এক নশ^র গোলাপ কিংবা আগুনের পাপড়ি জ¦লছে কোথাও,

হতে পারে সে, হতে পারে অন্য কেউ।

তার ভালোবাসার সমুদ্র জেগে উঠে বলে: তুমি কবে থেকে এখানে

তার কথার প্রতিধ্বনি মুদ্রিত হলে, কেউ যেন খুলে যায়

আয়ুহীন জানালা দিনের।

আমি পরিষ্কার দেখি, তার মিত অহম বেঁকে-চুরে গড়িয়ে পড়ছে,

ডুবিয়ে দিচ্ছে প্রতিভা পল্লব- অজ¯্র মুকুলে,

তার ছড়িয়ে দেয়া খোলা চুল ঘোষণা দিচ্ছে: না-সে বাদাম ফুলে,

না-সে চিত্রাক্ষরে, শুধু সে ঝিরি এক প্রবল প্রবাহে।

ডানার পরশ
আতাউর রহমান মিলাদ
ছায়া হতে চেয়েছিলাম, রোদ গেলো সরে

দীর্ঘ অব্যবহারে সরু পথ গেছে মরে

এই মরা পথে একদা বাবা হেঁটেছেন বহুদূর

কালের বাঁশিতে বাজে হারানোর মৃদু সুর!

স্বর ও সুরের ব্যবধানে একচিলতে রোদ

পিপাসার্ত মন খোঁজে ছায়ার প্রবোধ

ছায়ারা যুক্তবর্ণ, অদৃশ্য সুতোর গিঁট

ঝাপসা মনিটরে সময়ের খ-িত ইট!

তীক্ষ্ণ পেরেক মস্তিষ্কে
রকিবুল হাসান
আমি ক্রমশ মরণ পিপাসার দিকে হেঁটে যাচ্ছি

তুমি হাঁটছো স্বপ্নের দিকে জীবনের নামতা মিলিয়ে,

স্বপ্ন এবং মৃত্যু কী সুন্দর একসঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে।

তোমার দুচোখে দিগন্ত-সবুজ ফসলের গল্প,

প্রমত্ত পদ্মার ভাঙন খেলায় তছনছ সরল বসতি,

তারপর অনাবাদী বুকে ঢেউ খেলে যে উর্বর পলিমাটি।

আমি ক্রমশ মরণ পিপাসার দিকে হেঁটে যাচ্ছি

তুমি হাঁটছো স্বপ্নের দিকে বেণী দুলিয়ে যৌবনা,

স্বপ্ন এবং মৃত্যু কী সুন্দর একসঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে।

তবুও আমরা নদীকে দেখি গভীর গহীন মগ্নতায়

আকাশের নুয়ে পড়া ওড়নার নীল আঁচল মাটিতে,

রামধনু বুকে বাঁধি- তবু কেন তীক্ষè পেরেক মস্তিষ্কে!

ভারমুক্ত
জাফর সাদেক
প্রহরের নগ্ন নাভির ঢেউয়ে ক্রোধ এঁকে এঁকে

নপুংসক আমি ভারমুক্ত হই

অবসন্ন শরীর এখন পড়ে আছে পথের ওপর

ভোরের সূর্য কখনওই ছিলো না ক্রয়যোগ্য মন্থন

হতবহ্বিলের পথ এখনও চায় ভয়াল কিছু অর্জন

এটা জানতো মার্ক টোয়েন

অমানিশার ছদ্মবশে থেকে সরিয়ে ফেলেছি

আমার প্রণয়ের নষ্ট আবরণ

এমন উন্মোচনকে নজরুল বলেনি দ্রোহের পরাজয়

যে প্রহর পূর্ণক্রোধে কাঁপছে তাকে দিয়েছি দ্রাক্ষাবীজ

বিনিময়ে শরীর পেঁচিয়ে উঠে ওষ্ঠে এখন বিষের প্রচ্ছদ

মৃত হয়ে নিই মোহনার নোনাস্বাদ

শরীরের কামাগ্নিতে বন্ধ্যারূপ চায়নিস্বয়ং ঈশ্বর

তাই ভোরের কোলাহলে নতুন কোনও আয়োজন নেই

ছুটছে মানুষ- পথে নেমেছে ঝাড়–দার

কিংবা ঘরে ফিরছে ক্লান্ত দেহজীবী

গিরজার প্রার্থনায় জানা নেই- কে ছদ্মবেশী

এটমবোমার দেশ ও স্বদেশের হাহাকার
শিউল মনজুর
দূরের দেশে একা থাকি। একা থাকার মধ্যে নিঃসঙ্গতা থাকে, থাকে ভবঘুরের পাখি। যেখানে এসে দাঁড়ালো এই জীবন; এটি যাযাবরের অথবা মুসাফিরের, যদিও খাদ্য তালিকায় যুক্ত হয়ে আছে লেটুসপাতার ঘ্রাণ, ব্রুকলি ও বিটরুটের লালজুস এবং মাঝেমধ্যে নিকারাগুয়ার ব্লাক কফি ও শিশুদের প্রিয় ডুনাট। তথাপি ভারি পাথরের নিঃসঙ্গতা বহন করে যেতে হয় দূরের গন্তব্যে, কর্মে; কখনো বাসে, কখনো মেট্রোরেলে! অথচ বন্ধু বলে কেউ নেই, এমনকি এই এটমবোমার দেশে একটি ডুনাটও ফ্রিতে দেবার কিংবা পাবার নিয়ম নেই। তবে তুমুল নির্জনতায় থাকি আর একটি দুপুরের ভবঘুরের পাখি শিস্ দিয়ে যায় একা একা... অথচ বাংলার রাজনীতি শীতের ঘন কুয়াশার মতো অথবা বর্ষানদীর ঘোলাটে জলের মতো ভীষণ ঘূর্ণায়মান; স্বদেশের হাহাকার এই বুকের আঙিনা ছুঁয়ে যায় প্রতিদিন!

কার মঙ্গল সাধনে
শামস হক
এবড়োখেবড়ো বুকটা চেতিয়ে

আকাশ পানে চেয়েশুয়ে আছি

সেই অনাদিকাল ধরে।

এনাকোন্ডার মতো পেঁচিয়ে বেঁকিয়ে

চলে গেছে আমার বুক চিরে গন্তব্যের পাটাতন।

অরণ্যের গহীনে

কখনো উতরায় কখনো চড়ায় ধরে

চলছে দ্রুতযান হিউম্যান হলার

আরো চলছে ওরা- যারা

ক্ষুধার বিরুদ্ধে এক এক জন লড়াকু সৈনিক

চলছে রং বেরঙের পোশাকে সজ্জিত

শিশু-কিশোর যুবক-যুবতী পর্যটকের দল।

কয়লাপোড়া কুঁচকানো ত্বকে ঢাকা

রাজুবালাদের পদচিহ্ন আমার বুক জুড়ে

বিশ্বখ্যাত পানীয়-বাগিচা যাদের ঘামে ভিজে

লকলকিয়ে ওঠে সবুজ সতেজ পাতা

এই পাতার ওজন তেইশ কেজি না হওয়া অবধি

একশ সত্তর টাকা মজুরি মিলবে না।

মাথায় টোকা কাঁধে কাপড়ের ঝোলা

টোকাচ্ছে সবুজ পাতা

কখন হবে তেইশ কেজি!

ওদের দেহের ওজন কমতে কমতে

তেইশ কেজিতে না আসা পর্যন্ত কি

মাধবকু-ের কাল দীঘির পানিতে

মিশে থাকা পানকৌড়ি

হঠাৎ করে যেমন উড়াল দেয়

তেমনি শিকার নিয়ে উড়াল দিয়েছে

পল্লব-রাজ রাজা।

টোরেন্ট নগরীর বেগম পাড়ার বৈঠক

ঘরের ঝাড়বাতির নিচে বসে

রাজা এখন উদ্দীপক পানীয়ে নিমগ্ন।

আকাশ পানে চেয়ে চেয়ে ভাবি

কার মঙ্গলে আমি শ্রীমঙ্গল!

পরম্পরা
সবিতা শর্মা
দক্ষ কারিগর স্বপ্ন চোখে

দিয়েছেন জড়িয়ে ,বাড়িয়ে হাত

শতছিন্ন কাঁথা।

গৃহবাসী গাভীটির গায়ের পশম

কেমন দাঁড়িয়ে আছে

মাঘের শেষবেলাকার শীতে।

(মাঘম-লী হারিয়েছে শীত তো না!)

যেমন রাখতেন-

স্নেহ-মমতা-নিরাপত্তায় বোনা

আদরমাখা চাদর তলে

আত্মজ-আত্মজাদের।

অথচ একের পিঠে আর

যেমতি যায় জলাভিমুখে

‘হাঁস হাঁস তই তই’

প্রভাতের প্রদীপ্ত আলোক-স্নানে

হিমালয়ের নির্ভার জঠর ছেড়ে

তেমতি বেরিয়ে গেছে-

একদিন বিশাল হবে বলে!

বিশালত্ব! প্রমাণ করবে কে?

জীবনের দক্ষ কারিগর

কুঁকড়ে আছেন মরমে

ভাঙাচোরা অবয়ব

জীর্ণ কাঁথায় ন্যুব্জ শরীর,

ঘোলাটে চোখ, মাঘের শীত।

পরীক্ষাটা হয়ে গেল-

উষর চোখের ফসলি জমিনে

দেখে, বিম্বিত আপন দীর্ণ প্রতিকৃতি।

হায়, পরম্পরা ঠেকাবে কে!!

ঘুরে ঘুরে দেখি এক জীবনের জন্মদাগ
সুমন শাম্স
শুধুমাত্র একটি জন্মদাগের জন্য আমি আবার জন্মাতে চাই। শুনেছি জন্মদাগ থাকলে হারিয়ে যাওয়া মানুষকেও ফিরে পাওয়া যায়। এক হয় না মানুষের জন্মদাগ। তাই হারানো মানুষকেও জন্মদাগে নির্ভুল চিনে ফেলা যায়। আমার কোনো জন্মদাগ নেই। অথচ কী দুর্নিবার আমার হারিয়ে যাওয়ার বাসনা। অথবা এও যদি বলি, জন্ম মানেই একটি মানুষের নিখোঁজ হওয়া। মানুষের প্রথম কান্নাই বলে দেয় তার নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ। কেননা মানুষ চিরদিন নিজের কাছে নিজেই থাকে অচেনা। মানুষ বদলে যায় কী অনায়াসে নিজেকে হারিয়ে। কৈশোরে প্রথম হারায় মানুষ। শৈশবের কাছে তখন সে দারুণ অচেনা। এভাবে যৌবনের কাছে মানুষের প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য ধীরে ধীরে অপরিচিত হতে থাকে। সম্পর্কের কাছেও মানুষ ক্রমে বদলে যেতে থাকে। হয়ে যায় নিবিড় অচেনা।মায়ের কাছে সন্তান অচেনা হয় সে স্বামী হলে। স্ত্রীর কাছে স্বামী অচেনা হয় সে পিতা হলে। সন্তানের কাছে পিতা অচেনা হয় সে অক্ষম হলে। আমি চাই আবার একটি জন্ম। আবার অন্তত একটি জন্মদাগ।

সব অচেনায় খুঁজে পেতে চাই নিঃশেষে হারিয়ে যাওয়া একজন নিজেকে।

নিমন্ত্রণ
শেলী সেনগুপ্তা
দেখে নিও,

একদিন ঠিক খুঁজে পাবো

সুখনগরের সিংহদুয়ার

একদিন

খুঁজে পাবো একপাটি সোনালি জুতো

কিংবা

জাদুর কার্পেট

একদিন আমার দরজায় আসবে

কেশর দোলানো পঙ্খীরাজ

ছুটিয়ে নিতে কোনো এক অজানার পথে

একদিন ঠিক খুঁজে পাবো সুখনগরের সদর দরোজার

হীরকখচিত চাবি,

গোপন প্রকোষ্ঠে লুকানো পাখিটি বলবে

বাঁচার মন্ত্র

এবং

জীবনের অর্থ

যদি বলো

সেদিন হবো হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা

তোমাদেরও নিয়ে যাবো

ভালোবাসাময় সুরম্য নগরে...

প্রশ্নবোধক
শারদুল সজল
মানুষের নাম মুখে নিতে গিয়ে আমি

হারিয়ে গেছি

আশ্চর্য এক খাদের গভীরে

প্রশ্নচিহ্ন আর করাত কলে

কাটা পড়ছে সময়

কাটা পড়ছে মুখ

এই কাটামুখগুলো জড়ো করে

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখি

আমিও আমার কাছে এক অপরিচিত মুখ

যাকে কোনোদিন দেখিনি

চিনি না।

back to top