alt

সাময়িকী

নজরুলের নিবেদিত কবিতা : অর্ঘ্যরে শিল্পরূপ

পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

: বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫

কাজী নজরুল ইসলাম

প্রিয় বা প্রণম্যের জন্যে কবিও কবিতায় অর্ঘ্য রচনা করেন। সে অর্ঘ্যফেুল নেই, মালা নেই। ঘ্রাণ নেই, মণিমুক্তার ঝনঝনানি নেই। কিন্তু সে অর্ঘ্যে থাকে ভালোবাসা, থাকে হৃদয় নিংড়ানো শুভ কামনা। আর থাকে শ্রদ্ধেয়জন বা প্রিয়জনকে ছন্দে-পংক্তিতে দীর্ঘজীবী করে ধরে রাখার অপার্থিব প্রয়াস। বিচিত্র বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে সিদ্ধহস্ত কবি কাজী নজরুল ইসলামও নিবেদিত কবিতায় অর্ঘ্য রচনা করেছেন নানাবিধ মানুষের জন্যে। তাঁর এ নিবেদিত অর্ঘ্যকাব্য সংখ্যায় নিতান্ত কম নয়। এগুলোর কোনোটাই ফরমায়েশি নয় মোটেই। অযথা স্তুতিও নয়। বরং সবকটাই স্বতঃস্ফূর্ত ও সাহিত্যগুণসম্পন্ন। এসব কবিতা কোনোটা গ্রন্থিত, কোনোটা অগ্রন্থিত। কবিতাগুলোকে নানাশ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন :

১. ইসলামি ভাবধারার নিবেদিত কবিতা

২. প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় নারীদের প্রতি নিবেদিত কবিতা

৩. কবি-লেখকদের জন্যে নিবেদিত কবিতা

৪. রাজনীতিবিদ ও মহৎ মানুষের জন্যে নিবেদিত কবিতা

৫. শিশুদের জন্যে নিবেদিত কবিতা ইত্যাদি

১. নজরুলের ইসলামি ভাবধারায় নিবেদিত কবিতা:ইসলামের শেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহম্মদকে (সঃ) নিবেদন করে কাজী নজরুল ইসলাম লেখেন তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘মরুভাস্কর’। আঠারো খ-ে রচিত এ কাব্যগ্রন্থের একটাতে আছে ‘সত্যাগ্রহী মোহাম্মদ’ শিরোনামের কবিতা। নবীজীর প্রতি নিবেদন করে কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,‘আঁধার ধরণী চকিতে দেখিল স্বপ্নে রবি, / মক্কায় পুনঃ ফিরিয়া আসিল কিশোর নবী। / ছাগ মেষ লয়ে চলিল কিশোর আবার মাঠে, / দূর নিরালায় পাহাড়তলির একলা বাটে।’

নবীজীকে ‘মরুভাস্কর’ আখ্যা দিয়ে কবি প্রফুল্ল চিত্তে বলেছেন, “আঁধার নিখিলে এল আবার / আদি প্রাতের সে সম্পদ / নূতন সূর্য উদিল ঐ / মোহাম্মদ! মোহাম্মদ!”

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমরকে (রাঃ)নিয়েও প্রশস্তি গেয়েছেন কাজী নজরুল। তাঁকে স্মরণ করে বলেছেন-“আমির-উল্-মুমেনিন,/ তোমার স্মৃতি যে আজানের ধ্বনি- জানে না মুয়াজ্জিন!”

ইসলামের বিজয়ী সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদকে নিবেদন করে কবি রচনা করেন তাঁর ‘খালেদ’ শিরোনামীয় কবিতাটি যা ‘সঞ্চিতা’য় স্থান পেয়েছে। এ কবিতায় তিনি অকপটে বলেছেন, “পরীক্ষা আমি করেছি খালেদ, ক্ষমা চাই ভাই ফের / আজ হতে তুমি সিপাহ-সালার ইসলাম জগতের!”

এছাড়াও ‘চিরঞ্জীব জগলুল’, ‘আমানুল্লাহ’, ‘রীফ-সর্দার’, ‘গাজী আবদুল করিম’, ‘জগলুল পাশা’, ‘মওলানা মোহাম্মদ আলী’, ‘জামালউদ্দীন’প্রভৃতি শিরোনামে কবির কয়েকটি নিবেদিত কবিতা আছে। আধুনিক তুরস্কের রূপকার কামাল পাশাকে নিবেদন করে ‘কামাল পাশা’ কবিতায় নজরুল লিখেছেন, ‘ঐ ক্ষেপেছে পাগলি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই, / অসুর-পুরে সুর উঠেছে জোরসে সামাল সামাল তাই! / কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!’

অটোমান সা¤্রাজ্যের আরেক বীর যোদ্ধা হলেন আনোয়ার পাশা। তাঁকে নিবেদন করে ‘আনোয়ার’ কবিতায় নজরুল লিখেছেন, ‘আনোয়ার! আফসোস্! / বখতেরই সাফদোষ্, / রক্তেরও নাই ভাই আর সে যে তাপ জোশ, / ভেঙে গেছে শমশের- পড়ে আছে খাপ কোষ! / আনোয়ার! আফসোস্!’

২. প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় নারীদের প্রতি নিবেদিত কবিতা:এ তালিকায় একদিকে আছেন মাতৃস্থানীয়া নারীরা আর অন্যদিকে আছেন নজরুলের স্নেহসিক্ত অনুজ রমণীরা। নজরুল বুলবুল-ই-শিরাজ নামে খ্যাত কবি হাফিজের মানসী শাখ্-ই-নবাত্ কে নিবেদন করে ‘শাখ্-ই-নবাত্’ শিরোনামে একটি কবিতা রচনা করেন। উল্লেখ্য, শাখ্-ই-নবাত্ অর্থ আখের শাখা। কবি হাফিজ তাঁর প্রিয়ার নাম গোপন করে তাকে নিজের দেওয়া এ নামেই ডাকতেন। তাঁকে নিবেদিত নজরুলের কবিতাটির চারটি লাইন নিম্নরূপ: ‘বুলবুল-ই-শিরাজ হলো গো হাফিজ গেয়ে তোমার স্তুতি: / আদর করে শাখ-ই-নবাত্ নাম দিল তাই তোমার তূতী। / তার আদরের নাম নিয়ে আজ তুমি নিখিল গরবিনী, / তোমার কবির চেয়ে তোমায় কবির গানে অধিক চিনি।’

নজরুলের জেঠি শাশুড়ির নাম হলো বিরজা সুন্দরী দেবী যিনি ইন্দ্র কুমার সেনগুপ্তের পতœী এবং কবিবন্ধু বীরেন্দ্র কুমার সেনগুপ্তের মা। সেই সুবাদে কবিও তাঁকে মা বলে ডাকতেন। কবি বিরজাসুন্দরী দেবীকে উৎসর্গ করেছেন তাঁর ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থটি। এরই উৎসর্গপত্রে ‘মা’ শিরোনামে একটি কবিতা ছাপা হয় যা বিরজা সুন্দরী দেবীকে নিবেদিত। কবিতাটিতে তিনি বিরজাসুন্দরী দেবীকে ‘সর্বসহা সর্বহারা জননী’ বলে সম্বোধন করেছেন।

মিসেস্ এম্. রহমান ছিলেন হুগলীর এক মহীয়সী নারী ও বিশিষ্ট সমাজ সেবিকা। মিসেস এম রহমান বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে নজরুল-প্রমীলার বিবাহ বাস্তবায়ন করেন। বিয়ের পর নবদম্পত্তির বসবাসের জন্য তিনিই হুগলীতে বাসাভাড়া করে দেন। এই বিদুষী মহিলার মৃত্যুতে শোকাহত নজরুল রচনা করেন ‘মিসেস এম রহমান’ নামের বিখ্যাত কবিতাটি। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের পতœী বাসন্তী দেবী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা। তিনি ছিলেন ব্রিটিশের হাতে কারারুদ্ধ প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী। নজরুল তাঁর ‘চিত্তনামা’ কাব্যগ্রন্থটি বাসন্তী দেবীকে উৎসর্গ করেন।

কংগ্রেস সভানেত্রী হেমপ্রভাকেও নজরুল মাতৃবৎ শ্রদ্ধা করতেন। তাঁকে নিবেদন করে নজরুল লেখেন ‘হেমপ্রভা’ শীর্ষক কবিতাখানি। তেরশো বত্রিশ বঙ্গাব্দের উনত্রিশে ফাল্গুন মাদারিপুরে বসে কবি হেমপ্রভার জন্যে লেখেন- ‘এস বাংলার চাঁদ-সুলতানা / বীর-মাতা বীর-জায়া গো। / তোমাতে পড়েছে সকল কালের / বীর-নারীদের ছায়া গো ॥’

লেখিকা শামসুন্নাহারকে নিবেদন করে ‘কল্যাণীয়া শামসুন নাহার খাতুন জয়যুক্তাসু’ সম্বোধনে কবি ‘আশীর্বাদ’ কবিতাটি রচনা করে পাঠিয়ে দেন। রাণু সোম, যিনি পরবর্তীকালে বুদ্ধদেব বসুর পতœী প্রতিভা বসু নামে পরিচিতি লাভ করেন, তিনি ছিলেন নজরুলের সংগীতের ছাত্রী। তাঁকে আশীর্বাদ করে ‘শ্রীমতী রাণু সোম, কল্যাণীয়াসু’ শিরোনামে কবি একটি কবিতা নিবেদন করেন। এতে তিনি নিজেকে ‘কবিদা’ হিসেবে পরিচয় দেন। কবিতাটির চার পংক্তি এরকম: “মাটির ঊর্ধ্বে গান গেয়ে ফেরে / স্বরগের যত পাখি, / তোমার কণ্ঠে গিয়াছে তাহারা / তাদের কণ্ঠ রাখি”

সুফী জুলফিকার হায়দার সাহেবের সহধর্মিণী জনাবা রাবেয়া হায়দারকে “পরম কল্যাণীয়া বধূ-মাতা রাবেয়া হায়দার চিরায়ুষ্মতীসু” হিসেবে আশীর্বাদ করে কবি তাকেও একটা কবিতা উপহার দেন যার শিরোনাম ‘কল্যাণী’। কবিতাটি অগ্রন্থিত।

৩. কবি-লেখকদের জন্যে নিবেদিত কবিতা:এক কবির কলমে বেঁচে থাকবেন অন্য কবিসাহিত্যিকরা। এটা স্বাভাবিক একটা চর্চা। নজরুলের কলমেও অন্য কবি-সাহিত্যিকের প্রতি ফুটে উঠেছে শ্রদ্ধা, সমীহ আর ভালোবাসা। তাঁর নিবেদিত কবিতার একটা বড় অংশ জুড়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁকে নিয়ে নজরুলের লেখা অনেক। রবীন্দ্রনাথ যেদিন মারা গেলেন, তিনি সেদিনই রচনা করেন ‘রবিহারা’ কবিতাটি। তাঁর অন্তরের বেদনাকে অক্ষরে রূপদান করে তিনি বলেছেন, ‘দুপুরের রবি পড়িয়াছে ঢলে অস্ত-পথের কোলে / শ্রাবণের মেঘ ছুটে এল দলে দলে / উদাস গগন-তলে, / বিশ্বের রবি, ভারতের কবি, / শ্যাম বাঙলার হৃদয়ের ছবি / তুমি চলে যাবে বলে।’

‘সালাম অস্ত- ‘রবি’ কবিতায় নজরুল রবীন্দ্রনাথকে অন্তিম সালাম জানিয়ে প্রকাশ করেছেন আপন অনুভূতি: ‘কালাম ঝরেছে তোমার কলমে, সালাম লইয়া যাও! /

ঊর্ধ্বে থাকি এ পাষাণ জাতিরে রসে গলাইয়া দাও!’ বাইশে শ্রাবণে তিনি রচনা করেন তাৎক্ষণিক একটি নিবেদনমূলক গান যা পরে রেকর্ডে ধারণ করে সারা ভারতবর্ষে প্রচারিত হয়। গানটির সকরুণ সুরে তিনি আর্তনাদ করে উঠে আহ্বান জানান, ‘ঘুমাইতে দাও শ্রান্ত রবিরে, জাগায়ো না জাগায়ো না। / সারাজীবন যে আলো দিল, ডেকে তার ঘুম ভাঙায়ো না।’

নজরুল তাঁর ‘তীর্থপথিক’ কবিতাটি লিখেছেন রবীন্দ্রনাথকে উদ্দেশ্য করে, রবীন্দ্রনাথের লিখিত পত্রের জবাবে। রবীন্দ্রনাথকে নিবেদন করা ‘তীর্থ পথিক’ নজরুলের একটা আকাক্সক্ষার কথা আমরা জানতে পারি। এ আকাক্সক্ষা অবশ্য রবীন্দ্রনাথে নজরুলের প্রগাঢ় ভক্তিবাণী। তিনি বলেছেন, ‘প্রার্থনা মোর, যদি আরবার জন্মি এ ধরণীতে, / আসি যেন শুধু গাহন করিতে তোমার কাব্য-গীতে!’

রবীন্দ্রনাথকে নিবেদিত ‘নতুন চাঁদ’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘অশ্রু-পুষ্পাঞ্জলি’ কবিতায় কবির আশিতম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নজরুল জানান, ‘চরণারবিন্দে লহ অশ্রু-পুষ্পাঞ্জলি, / হে রবীন্দ্র, তব দীনভক্ত এ কবির। / অশীতি-বার্ষিকী তব জনম-উৎসবে / আসিয়াছি নিবেদিতে নীরব প্রণাম!’

রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন নিয়ে নজরুল আরও একটি কবিতা নিবেদন করেছেন ‘রবির জন্মতিথি’ শিরোনামে। নজরুল এ কবিতায় অকপটে বলেছেন, ‘কবিতা ও গান সুর-নদী হয়ে বয়, / রবি যদি মরে যায় পৃথিবী কি রয়!’

‘মৃত তারা’ শীর্ষক নিবেদিত কবিতায় নজরুল একসাথে দুই বন্ধু রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রকে স্মরণ করে বলেছেন, ‘তাহাদের পানে লজ্জায় আমি চাহিতে পারি না আজ / রবি ও শরৎ-চন্দ্র বিরাজে যে মহাগগন মাঝ, / আলোক দানে স্পর্ধা লইয়া এসেছিনু সেই নভে; / জানি না সে মহা অপরাধের যে ক্ষমা পাব আমি কবে।’

অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রকে একাকী নিবেদন করেও নজরুল কবিতা লিখেছেন। ‘শরৎচন্দ্র ( চ-বৃষ্টি-প্রপাত ছন্দ)’ শীর্ষক কবিতায় নজরুল শরৎচন্দ্রের সেরা রাজনৈতিক উপন্যাসের নামোল্লেখ করে বলেছেন, ‘পথের দাবী’র অসম্মান / হে দুর্জয়, কর গো ক্ষয়! / দেখাও স্বর্গ তব বিভায় / এই ধুলার ঊর্ধ্বে নয়।”

নজরুলের কাছে আরেক সমীহ করা কবি ছিলেন চট্টগ্রামের নোয়াপাড়ার সন্তান নবীনচন্দ্র। তাঁকে নিয়ে ‘নবীনচন্দ্র’ শিরোনামে একটা কবিতা রচনা করেছেন নজরুল। কবিতাটিতে নবীনচন্দ্রকে বীর আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘অঞ্জলি পুরিয়া মম ভাগীরথী-নীরে / দাঁড়ায়েছি আসি তব কর্ণফুলি-তীরে। / বীর-কবি! লহ লহ এ মোর তর্পণ / অপরিচিতের এই পূজা নিবেদন!’

কবিদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের পরে ছন্দের জাদুকর সত্যন্দ্রনাথ দত্তকে নিয়ে নজরুল অধিক নিবেদিত কাব্য রচনা করেন। সত্যেন্দ্র-প্রয়াণ, সত্যেন্দ্র-প্রয়াণ-গীতি এবং সত্য-কবি শিরোনামে তিনি তিনটি কবিতা ও গানের গীত রচনা করেন।

কবি শরদিন্দু রায়ের অকাল মৃত্যুতে নজরুল বহরমপুর জেলে বসে লেখেন ‘ইন্দু-প্রয়াণ’ কবিতাটি। এটি ফণি-মনসা কাব্যগ্রন্থভুক্ত।

পঞ্চকবির অন্যতম দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের পুত্র দিলীপ কুমার রায় ছিলেন নজরুলের বিশেষ বন্ধু। তিনি ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ। নজরুলের প্রথমদিককার গানের জনপ্রিয়তায় দিলীপ কুমার রায়ের বিশেষ ভূমিকা ছিলো। বন্ধু দিলীপ কুমার রায়ের ইউরোপযাত্রা উপলক্ষে নজরুল নিবেদন করেন ‘সুর-কুমার’ কবিতাটি। বন্ধুকে শুভ কামনা জানিয়ে নজরুল বলেন, ‘বন্ধু তোমার স্বপ্ন-মাঝে ডাক দিল কি বন্দিনী / সপ্ত সাগর তের নদীর পার হতে সুর-নন্দিনী!’

৪. মহৎ মানুষ ও রাজনীতিবিদের জন্যে নিবেদিত কবিতা:

নজরুলের অনেক কবিতায় শাক্যমুণি, ইসা মসীহ্ কিংবা কবীর নানকের কথা থাকলেও তাদের নিবেদন করে লেখা কবিতা এগুলো নয়। এমনকি ‘দারিদ্র্য’ কবিতাতে যিশুকে স্মরণ করলেও এটি তাঁকে নিবেদিত কবিতা নয়। তবে যিশুর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে ‘বড় দিন’ শিরোনামে কবিতা লেখা হলেও এতে যিশুর চেয়ে বেশি আলোকপাত করা হয়েছে বৃটিশদের অপ্রেমসুলভ বর্বরতাকে আঘাত করে। এর দুটো চরণ নিম্নরূপ: “পঁচে মরে হায় মানুষ, হায় রে পঁচিশে ডিসেম্বর! / কত সম্মান দিতেছে প্রেমিক খ্রীষ্টে ধরার নর!”

কবি রাজনীতিবিদ ও সমাজ সংস্কারক অশ্বিনীকুমার দত্তকে নিয়ে রচনা করেছেন একটি নিবেদিত কবিতা। এটির শিরোনামও তাঁর নামে, ‘অশ্বিনী কুমার’। কবিতাটি মাঘ তেরোশ বত্রিশ বঙ্গাব্দে লেখা। কবিতাটি ‘ফণি মনসা’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত। কবি দেশমাতৃকার শত্রু নিধনে তাঁর পুনর্জন্ম আকাক্সক্ষা করে বলেছেন, ‘পীড়িত এ বঙ্গ পথ চাহিছে তোমার / অসুর নিধনে কবে আসিবে আবার।’ নজরুল অনেকগুলো নিবেদিত কবিতা লিখেছেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে অর্ঘ্য, অকাল-সন্ধ্যা, সান্ত¡না, ইন্দ্রপতন, রাজভিখারি উল্লেখযোগ্য। এসব কবিতা নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ কাব্যগ্রন্থই প্রকাশিত হয়েছে ‘চিত্তনামা’ শিরোনামে। বইটি তাঁরই সুযোগ্যা পতœী বাসন্তী দেবীকে উৎসর্গ করা হয়েছে। এছাড়াও স্বর্গীয় দেশবন্ধুর চতুর্থ বার্ষিক শ্রাদ্ধ উপলক্ষে কবি ‘তর্পণ’ নামে একটি কবিতা নিবেদন করেন শোকার্ঘ্য রূপে।

কাশিম বাজারের দানবীর মহারাজা স্যার মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী মহোদয়ের তিরোধান উপলক্ষে কাজী নজরুল একটি কবিতা রচনা করেন, যার নাম ‘মণীন্দ্র-প্রয়াণ’।কবির লেখায় এতে ধ্বনিত হয় মহৎপ্রাণের শংসাবচন, ‘দান-বীর, এতদিনে নিঃশেষে / করিলে নিজেরে দান। / মৃত্যুরে দিলে অঞ্জলি ভরি / তোমার অমৃত প্রাণ।’ (প্রলয়-শিখা)। বিপ্লবী পূর্ণচন্দ্র দাস ছিলেন দক্ষিণবঙ্গে বৃটিশের ত্রাস।মাদারিপুর শান্তি-সেনা-বাহিনীর প্রধান অধ্যক্ষ বিপ্লবী পূর্ণচন্দ্র দাসের কারামুক্তি উপলক্ষে কবি রচনা করেন, ‘পূর্ণ-অভিনন্দন’ শিরোনামে পূর্ণাঙ্গ এক কবিতা। কবি এখানে পূর্ণচন্দ্রকে ‘জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র’ আখ্যা দিয়েছেন।

কবির শিক্ষকেরাও বাদ ছিলেন না তাঁর হাতে লেখা নিবেদিত কবিতা হতে। সিয়ারসোল ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রীযুক্ত হরিশঙ্কর মিশ্র বি.এ. মহাশয়ের বিদায়ে ছাত্রত্বকালীন কবি রচনা করেন, ‘করুণ বেহাগ’ নামে এক মর্মস্পর্শী কবিতা। এটি কবির অগ্রন্থিত শ্রেণিভুক্ত কবিতা।

‘দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহনের তিরোধানে’ শীর্ষক নিবেদিত কবিতায় কবি শ্রদ্ধার্ঘ্য জ্ঞাপন করেন জনপ্রিয় এই রাজনীতিকের স্মরণে। তাঁর কবিতায় জীবন্ত হয়ে আছে আজও এ কর্মবীর। কবি যেন বিলাপের স্বরে বলেন, ‘দেশপ্রিয় নাই’ শুনি ক্রন্দন সহসা প্রভাতে জাগি’! / আকাশে ললাট হানিয়া কাঁদিছে ভারত চির-অভাগী।’

৫. শিশুদের জন্যে নিবেদিত কবিতা :নজরুলের শিশু সাহিত্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও উল্লেখযোগ্য। তিনি তাঁর প্রতিভাবান শিশুপুত্র বুলবুলকে নিবেদন করে লেখেন ‘সুরের দুলাল’ কবিতাটি। ‘সুরের দুলাল’ কাজী নজরুল ইসলামের ‘সন্ধ্যা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর দ্বিতীয় পুত্র অরিন্দম খালেদ বুলবুলের অসুস্থতার সময় চিকিৎসার জন্য অর্থ যোগাড় করতে রেলগাড়িতে কলকাতা যাওয়ার পথে একটি কাগজের বিজ্ঞাপনের উল্টো পিঠে তিনি কবিতাটি লিখেছিলেন। এ কবিতায় একজন পিতার অসহনীয় কষ্ট ফুটে উঠে যখন কবি বলেন, ‘শূন্য গেলাস ভরব- দিয়ে চোখের পানি মুখের হাস।’ ‘ছোট হিটলার’ নামের কবিতাটি তাঁর ছোট দুই শিশুপুত্র সানি-নিনিকে নিবেদিত যা অগ্রন্থিত কবিতার শ্রেণিভুক্ত। দুই ভাইয়ের দুষ্টুমিকে ফুটিয়ে তোলা খুব মজাদার এ কবিতায় কবি লিখেছেন, ‘মা গো আমি যুদ্ধে যাব, নিষেধ কি মা আর মানি / রাত্তিরে রোজ ঘুমের মাঝে ডাকে পোলান্ড, জার্মানি।’

কবি ‘নতুন চাঁদ’ কাব্যগ্রন্থে কিশোর রবীন্দ্রনাথকে নিবেদন করে লিখেছেন ‘কিশোর রবি’ কবিতাটি। তিনি রবীন্দ্রনাথকে জিজ্ঞেস করে বলেছেন, ‘হে চির কিশোর কবি রবীন্দ্র, কোন্ রসলোক হতে / আনন্দ-বেনু হাতে লয়ে এলে খেলিতে ধূলির পথে’

নজরুলের ব্যক্তিত্ব এমনই যে, তা সহজেই অন্যকে আপন করে নিতে পারে। নজরুলের কবিত্ব এতই সহজাত যে, তা নিমেষেই যে কারও জন্যে কয়েকছত্র রচনা করে ফেলতে পারে। নজরুলে এই দুই গুণের অমেয় সমন্বয় তাঁর নিবেদিত কবিতাগুলোয় দেখা যায়। তাঁর কাব্য নিবেদন হতে বাদ যায়নি কেউই। যখন যাকে নিয়ে লেখা দরকার মনে করেছেন, তখন তাকে নিয়েই লিখেছেন। এর ফলশ্রুতিতে আমরাও পেয়ে যাই কয়েকটি অসাধারণ কবিতা। কবিতার নজরুল গিরি হতে ছুটে চলা ঝিরিধারা। তাঁকে থামানো যায় না, তাঁকে রোধ করা যায় না। তাঁর সৃষ্টির নদী আপন বেগে বহমান।

তথ্যসূত্র :

১. ইসলামি কবিতা, নজরুল সমগ্র, তৃতীয় খ-

২. বিবিধ কবিতা, নজরুল সমগ্র, পঞ্চম খ-

৩. শিশু-কিশোর-বিষয়ক কবিতা, নজরুল সমগ্র, চতুর্থ খ-

৪. সঞ্চিতা, কাজী নজরুল ইসলাম

ছবি

জীবনবোধ ও শিল্পকর্ম

ছবি

নজরুলের গল্প ও উপন্যাস

ছবি

কৃষ্ণাঙ্গ দাস থেকে হয়ে উঠেছিলেন খ্যাতিমান কবি

শ্রাবণ বর্ষণে

ছবি

শতবর্ষ পরে ‘মিসেস ডালোওয়ে’

ছবি

স্কাল্পচারের জগতটা আস্তে আস্তে ব্যাপকতা পাচ্ছে

ছবি

চব্বিশের অভ্যুত্থান নিয়ে গ্রন্থ

ছবি

ভিন্নচোখ: নুতন কবিতা সংখ্যা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লোরকা: মৃত্যুর রূপক এবং আন্দালুসিয়ার লোকজ বিশ্বাস

ছবি

কবিতার শিল্পনিষ্ঠ রূপকার ফারুক মাহমুদ

ছবি

কাফকাকে পড়া কাফকাকে পড়ানো

ছবি

কবি নওশাদ নূরী

ছবি

আঁধার পেরিয়ে আলোর উদ্ভাষণ

ছবি

সন্জীদা খাতুন : কৃতি ও কৃতিত্ব

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

মননশস্যের অমৃত মন্থন

ছবি

অনুবাদ ও ভূমিকা : আলী সিদ্দিকী

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

বড়শি

ছবি

কাফকাকে পড়া, কাফকাকে পড়ানো

এ মুখর বরষায়

ছবি

রক্তে লেখা প্রেম: রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিপ্লব

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

শঙ্খজীবন: যাপিত জীবনের অন্তর্গূঢ় প্রতিকথা

ছবি

ওসামা অ্যালোমার এক ঝুড়ি খুদে গল্প

ছবি

প্রযুক্তির আলোয় বিশ্বব্যাপী বইবাণিজ্য

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

কাফকার কাছে আমাদের ঋণ স্বীকার

ছবি

কাফকাকে পড়া, কাফকাকে পড়ানো

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

সূর্যের দেশ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

লড়াই

সাময়িকী কবিতা

tab

সাময়িকী

নজরুলের নিবেদিত কবিতা : অর্ঘ্যরে শিল্পরূপ

পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

কাজী নজরুল ইসলাম

বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫

প্রিয় বা প্রণম্যের জন্যে কবিও কবিতায় অর্ঘ্য রচনা করেন। সে অর্ঘ্যফেুল নেই, মালা নেই। ঘ্রাণ নেই, মণিমুক্তার ঝনঝনানি নেই। কিন্তু সে অর্ঘ্যে থাকে ভালোবাসা, থাকে হৃদয় নিংড়ানো শুভ কামনা। আর থাকে শ্রদ্ধেয়জন বা প্রিয়জনকে ছন্দে-পংক্তিতে দীর্ঘজীবী করে ধরে রাখার অপার্থিব প্রয়াস। বিচিত্র বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে সিদ্ধহস্ত কবি কাজী নজরুল ইসলামও নিবেদিত কবিতায় অর্ঘ্য রচনা করেছেন নানাবিধ মানুষের জন্যে। তাঁর এ নিবেদিত অর্ঘ্যকাব্য সংখ্যায় নিতান্ত কম নয়। এগুলোর কোনোটাই ফরমায়েশি নয় মোটেই। অযথা স্তুতিও নয়। বরং সবকটাই স্বতঃস্ফূর্ত ও সাহিত্যগুণসম্পন্ন। এসব কবিতা কোনোটা গ্রন্থিত, কোনোটা অগ্রন্থিত। কবিতাগুলোকে নানাশ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন :

১. ইসলামি ভাবধারার নিবেদিত কবিতা

২. প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় নারীদের প্রতি নিবেদিত কবিতা

৩. কবি-লেখকদের জন্যে নিবেদিত কবিতা

৪. রাজনীতিবিদ ও মহৎ মানুষের জন্যে নিবেদিত কবিতা

৫. শিশুদের জন্যে নিবেদিত কবিতা ইত্যাদি

১. নজরুলের ইসলামি ভাবধারায় নিবেদিত কবিতা:ইসলামের শেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহম্মদকে (সঃ) নিবেদন করে কাজী নজরুল ইসলাম লেখেন তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘মরুভাস্কর’। আঠারো খ-ে রচিত এ কাব্যগ্রন্থের একটাতে আছে ‘সত্যাগ্রহী মোহাম্মদ’ শিরোনামের কবিতা। নবীজীর প্রতি নিবেদন করে কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,‘আঁধার ধরণী চকিতে দেখিল স্বপ্নে রবি, / মক্কায় পুনঃ ফিরিয়া আসিল কিশোর নবী। / ছাগ মেষ লয়ে চলিল কিশোর আবার মাঠে, / দূর নিরালায় পাহাড়তলির একলা বাটে।’

নবীজীকে ‘মরুভাস্কর’ আখ্যা দিয়ে কবি প্রফুল্ল চিত্তে বলেছেন, “আঁধার নিখিলে এল আবার / আদি প্রাতের সে সম্পদ / নূতন সূর্য উদিল ঐ / মোহাম্মদ! মোহাম্মদ!”

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমরকে (রাঃ)নিয়েও প্রশস্তি গেয়েছেন কাজী নজরুল। তাঁকে স্মরণ করে বলেছেন-“আমির-উল্-মুমেনিন,/ তোমার স্মৃতি যে আজানের ধ্বনি- জানে না মুয়াজ্জিন!”

ইসলামের বিজয়ী সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদকে নিবেদন করে কবি রচনা করেন তাঁর ‘খালেদ’ শিরোনামীয় কবিতাটি যা ‘সঞ্চিতা’য় স্থান পেয়েছে। এ কবিতায় তিনি অকপটে বলেছেন, “পরীক্ষা আমি করেছি খালেদ, ক্ষমা চাই ভাই ফের / আজ হতে তুমি সিপাহ-সালার ইসলাম জগতের!”

এছাড়াও ‘চিরঞ্জীব জগলুল’, ‘আমানুল্লাহ’, ‘রীফ-সর্দার’, ‘গাজী আবদুল করিম’, ‘জগলুল পাশা’, ‘মওলানা মোহাম্মদ আলী’, ‘জামালউদ্দীন’প্রভৃতি শিরোনামে কবির কয়েকটি নিবেদিত কবিতা আছে। আধুনিক তুরস্কের রূপকার কামাল পাশাকে নিবেদন করে ‘কামাল পাশা’ কবিতায় নজরুল লিখেছেন, ‘ঐ ক্ষেপেছে পাগলি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই, / অসুর-পুরে সুর উঠেছে জোরসে সামাল সামাল তাই! / কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!’

অটোমান সা¤্রাজ্যের আরেক বীর যোদ্ধা হলেন আনোয়ার পাশা। তাঁকে নিবেদন করে ‘আনোয়ার’ কবিতায় নজরুল লিখেছেন, ‘আনোয়ার! আফসোস্! / বখতেরই সাফদোষ্, / রক্তেরও নাই ভাই আর সে যে তাপ জোশ, / ভেঙে গেছে শমশের- পড়ে আছে খাপ কোষ! / আনোয়ার! আফসোস্!’

২. প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় নারীদের প্রতি নিবেদিত কবিতা:এ তালিকায় একদিকে আছেন মাতৃস্থানীয়া নারীরা আর অন্যদিকে আছেন নজরুলের স্নেহসিক্ত অনুজ রমণীরা। নজরুল বুলবুল-ই-শিরাজ নামে খ্যাত কবি হাফিজের মানসী শাখ্-ই-নবাত্ কে নিবেদন করে ‘শাখ্-ই-নবাত্’ শিরোনামে একটি কবিতা রচনা করেন। উল্লেখ্য, শাখ্-ই-নবাত্ অর্থ আখের শাখা। কবি হাফিজ তাঁর প্রিয়ার নাম গোপন করে তাকে নিজের দেওয়া এ নামেই ডাকতেন। তাঁকে নিবেদিত নজরুলের কবিতাটির চারটি লাইন নিম্নরূপ: ‘বুলবুল-ই-শিরাজ হলো গো হাফিজ গেয়ে তোমার স্তুতি: / আদর করে শাখ-ই-নবাত্ নাম দিল তাই তোমার তূতী। / তার আদরের নাম নিয়ে আজ তুমি নিখিল গরবিনী, / তোমার কবির চেয়ে তোমায় কবির গানে অধিক চিনি।’

নজরুলের জেঠি শাশুড়ির নাম হলো বিরজা সুন্দরী দেবী যিনি ইন্দ্র কুমার সেনগুপ্তের পতœী এবং কবিবন্ধু বীরেন্দ্র কুমার সেনগুপ্তের মা। সেই সুবাদে কবিও তাঁকে মা বলে ডাকতেন। কবি বিরজাসুন্দরী দেবীকে উৎসর্গ করেছেন তাঁর ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থটি। এরই উৎসর্গপত্রে ‘মা’ শিরোনামে একটি কবিতা ছাপা হয় যা বিরজা সুন্দরী দেবীকে নিবেদিত। কবিতাটিতে তিনি বিরজাসুন্দরী দেবীকে ‘সর্বসহা সর্বহারা জননী’ বলে সম্বোধন করেছেন।

মিসেস্ এম্. রহমান ছিলেন হুগলীর এক মহীয়সী নারী ও বিশিষ্ট সমাজ সেবিকা। মিসেস এম রহমান বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে নজরুল-প্রমীলার বিবাহ বাস্তবায়ন করেন। বিয়ের পর নবদম্পত্তির বসবাসের জন্য তিনিই হুগলীতে বাসাভাড়া করে দেন। এই বিদুষী মহিলার মৃত্যুতে শোকাহত নজরুল রচনা করেন ‘মিসেস এম রহমান’ নামের বিখ্যাত কবিতাটি। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের পতœী বাসন্তী দেবী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা। তিনি ছিলেন ব্রিটিশের হাতে কারারুদ্ধ প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী। নজরুল তাঁর ‘চিত্তনামা’ কাব্যগ্রন্থটি বাসন্তী দেবীকে উৎসর্গ করেন।

কংগ্রেস সভানেত্রী হেমপ্রভাকেও নজরুল মাতৃবৎ শ্রদ্ধা করতেন। তাঁকে নিবেদন করে নজরুল লেখেন ‘হেমপ্রভা’ শীর্ষক কবিতাখানি। তেরশো বত্রিশ বঙ্গাব্দের উনত্রিশে ফাল্গুন মাদারিপুরে বসে কবি হেমপ্রভার জন্যে লেখেন- ‘এস বাংলার চাঁদ-সুলতানা / বীর-মাতা বীর-জায়া গো। / তোমাতে পড়েছে সকল কালের / বীর-নারীদের ছায়া গো ॥’

লেখিকা শামসুন্নাহারকে নিবেদন করে ‘কল্যাণীয়া শামসুন নাহার খাতুন জয়যুক্তাসু’ সম্বোধনে কবি ‘আশীর্বাদ’ কবিতাটি রচনা করে পাঠিয়ে দেন। রাণু সোম, যিনি পরবর্তীকালে বুদ্ধদেব বসুর পতœী প্রতিভা বসু নামে পরিচিতি লাভ করেন, তিনি ছিলেন নজরুলের সংগীতের ছাত্রী। তাঁকে আশীর্বাদ করে ‘শ্রীমতী রাণু সোম, কল্যাণীয়াসু’ শিরোনামে কবি একটি কবিতা নিবেদন করেন। এতে তিনি নিজেকে ‘কবিদা’ হিসেবে পরিচয় দেন। কবিতাটির চার পংক্তি এরকম: “মাটির ঊর্ধ্বে গান গেয়ে ফেরে / স্বরগের যত পাখি, / তোমার কণ্ঠে গিয়াছে তাহারা / তাদের কণ্ঠ রাখি”

সুফী জুলফিকার হায়দার সাহেবের সহধর্মিণী জনাবা রাবেয়া হায়দারকে “পরম কল্যাণীয়া বধূ-মাতা রাবেয়া হায়দার চিরায়ুষ্মতীসু” হিসেবে আশীর্বাদ করে কবি তাকেও একটা কবিতা উপহার দেন যার শিরোনাম ‘কল্যাণী’। কবিতাটি অগ্রন্থিত।

৩. কবি-লেখকদের জন্যে নিবেদিত কবিতা:এক কবির কলমে বেঁচে থাকবেন অন্য কবিসাহিত্যিকরা। এটা স্বাভাবিক একটা চর্চা। নজরুলের কলমেও অন্য কবি-সাহিত্যিকের প্রতি ফুটে উঠেছে শ্রদ্ধা, সমীহ আর ভালোবাসা। তাঁর নিবেদিত কবিতার একটা বড় অংশ জুড়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁকে নিয়ে নজরুলের লেখা অনেক। রবীন্দ্রনাথ যেদিন মারা গেলেন, তিনি সেদিনই রচনা করেন ‘রবিহারা’ কবিতাটি। তাঁর অন্তরের বেদনাকে অক্ষরে রূপদান করে তিনি বলেছেন, ‘দুপুরের রবি পড়িয়াছে ঢলে অস্ত-পথের কোলে / শ্রাবণের মেঘ ছুটে এল দলে দলে / উদাস গগন-তলে, / বিশ্বের রবি, ভারতের কবি, / শ্যাম বাঙলার হৃদয়ের ছবি / তুমি চলে যাবে বলে।’

‘সালাম অস্ত- ‘রবি’ কবিতায় নজরুল রবীন্দ্রনাথকে অন্তিম সালাম জানিয়ে প্রকাশ করেছেন আপন অনুভূতি: ‘কালাম ঝরেছে তোমার কলমে, সালাম লইয়া যাও! /

ঊর্ধ্বে থাকি এ পাষাণ জাতিরে রসে গলাইয়া দাও!’ বাইশে শ্রাবণে তিনি রচনা করেন তাৎক্ষণিক একটি নিবেদনমূলক গান যা পরে রেকর্ডে ধারণ করে সারা ভারতবর্ষে প্রচারিত হয়। গানটির সকরুণ সুরে তিনি আর্তনাদ করে উঠে আহ্বান জানান, ‘ঘুমাইতে দাও শ্রান্ত রবিরে, জাগায়ো না জাগায়ো না। / সারাজীবন যে আলো দিল, ডেকে তার ঘুম ভাঙায়ো না।’

নজরুল তাঁর ‘তীর্থপথিক’ কবিতাটি লিখেছেন রবীন্দ্রনাথকে উদ্দেশ্য করে, রবীন্দ্রনাথের লিখিত পত্রের জবাবে। রবীন্দ্রনাথকে নিবেদন করা ‘তীর্থ পথিক’ নজরুলের একটা আকাক্সক্ষার কথা আমরা জানতে পারি। এ আকাক্সক্ষা অবশ্য রবীন্দ্রনাথে নজরুলের প্রগাঢ় ভক্তিবাণী। তিনি বলেছেন, ‘প্রার্থনা মোর, যদি আরবার জন্মি এ ধরণীতে, / আসি যেন শুধু গাহন করিতে তোমার কাব্য-গীতে!’

রবীন্দ্রনাথকে নিবেদিত ‘নতুন চাঁদ’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত ‘অশ্রু-পুষ্পাঞ্জলি’ কবিতায় কবির আশিতম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নজরুল জানান, ‘চরণারবিন্দে লহ অশ্রু-পুষ্পাঞ্জলি, / হে রবীন্দ্র, তব দীনভক্ত এ কবির। / অশীতি-বার্ষিকী তব জনম-উৎসবে / আসিয়াছি নিবেদিতে নীরব প্রণাম!’

রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন নিয়ে নজরুল আরও একটি কবিতা নিবেদন করেছেন ‘রবির জন্মতিথি’ শিরোনামে। নজরুল এ কবিতায় অকপটে বলেছেন, ‘কবিতা ও গান সুর-নদী হয়ে বয়, / রবি যদি মরে যায় পৃথিবী কি রয়!’

‘মৃত তারা’ শীর্ষক নিবেদিত কবিতায় নজরুল একসাথে দুই বন্ধু রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রকে স্মরণ করে বলেছেন, ‘তাহাদের পানে লজ্জায় আমি চাহিতে পারি না আজ / রবি ও শরৎ-চন্দ্র বিরাজে যে মহাগগন মাঝ, / আলোক দানে স্পর্ধা লইয়া এসেছিনু সেই নভে; / জানি না সে মহা অপরাধের যে ক্ষমা পাব আমি কবে।’

অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রকে একাকী নিবেদন করেও নজরুল কবিতা লিখেছেন। ‘শরৎচন্দ্র ( চ-বৃষ্টি-প্রপাত ছন্দ)’ শীর্ষক কবিতায় নজরুল শরৎচন্দ্রের সেরা রাজনৈতিক উপন্যাসের নামোল্লেখ করে বলেছেন, ‘পথের দাবী’র অসম্মান / হে দুর্জয়, কর গো ক্ষয়! / দেখাও স্বর্গ তব বিভায় / এই ধুলার ঊর্ধ্বে নয়।”

নজরুলের কাছে আরেক সমীহ করা কবি ছিলেন চট্টগ্রামের নোয়াপাড়ার সন্তান নবীনচন্দ্র। তাঁকে নিয়ে ‘নবীনচন্দ্র’ শিরোনামে একটা কবিতা রচনা করেছেন নজরুল। কবিতাটিতে নবীনচন্দ্রকে বীর আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘অঞ্জলি পুরিয়া মম ভাগীরথী-নীরে / দাঁড়ায়েছি আসি তব কর্ণফুলি-তীরে। / বীর-কবি! লহ লহ এ মোর তর্পণ / অপরিচিতের এই পূজা নিবেদন!’

কবিদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের পরে ছন্দের জাদুকর সত্যন্দ্রনাথ দত্তকে নিয়ে নজরুল অধিক নিবেদিত কাব্য রচনা করেন। সত্যেন্দ্র-প্রয়াণ, সত্যেন্দ্র-প্রয়াণ-গীতি এবং সত্য-কবি শিরোনামে তিনি তিনটি কবিতা ও গানের গীত রচনা করেন।

কবি শরদিন্দু রায়ের অকাল মৃত্যুতে নজরুল বহরমপুর জেলে বসে লেখেন ‘ইন্দু-প্রয়াণ’ কবিতাটি। এটি ফণি-মনসা কাব্যগ্রন্থভুক্ত।

পঞ্চকবির অন্যতম দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের পুত্র দিলীপ কুমার রায় ছিলেন নজরুলের বিশেষ বন্ধু। তিনি ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ। নজরুলের প্রথমদিককার গানের জনপ্রিয়তায় দিলীপ কুমার রায়ের বিশেষ ভূমিকা ছিলো। বন্ধু দিলীপ কুমার রায়ের ইউরোপযাত্রা উপলক্ষে নজরুল নিবেদন করেন ‘সুর-কুমার’ কবিতাটি। বন্ধুকে শুভ কামনা জানিয়ে নজরুল বলেন, ‘বন্ধু তোমার স্বপ্ন-মাঝে ডাক দিল কি বন্দিনী / সপ্ত সাগর তের নদীর পার হতে সুর-নন্দিনী!’

৪. মহৎ মানুষ ও রাজনীতিবিদের জন্যে নিবেদিত কবিতা:

নজরুলের অনেক কবিতায় শাক্যমুণি, ইসা মসীহ্ কিংবা কবীর নানকের কথা থাকলেও তাদের নিবেদন করে লেখা কবিতা এগুলো নয়। এমনকি ‘দারিদ্র্য’ কবিতাতে যিশুকে স্মরণ করলেও এটি তাঁকে নিবেদিত কবিতা নয়। তবে যিশুর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে ‘বড় দিন’ শিরোনামে কবিতা লেখা হলেও এতে যিশুর চেয়ে বেশি আলোকপাত করা হয়েছে বৃটিশদের অপ্রেমসুলভ বর্বরতাকে আঘাত করে। এর দুটো চরণ নিম্নরূপ: “পঁচে মরে হায় মানুষ, হায় রে পঁচিশে ডিসেম্বর! / কত সম্মান দিতেছে প্রেমিক খ্রীষ্টে ধরার নর!”

কবি রাজনীতিবিদ ও সমাজ সংস্কারক অশ্বিনীকুমার দত্তকে নিয়ে রচনা করেছেন একটি নিবেদিত কবিতা। এটির শিরোনামও তাঁর নামে, ‘অশ্বিনী কুমার’। কবিতাটি মাঘ তেরোশ বত্রিশ বঙ্গাব্দে লেখা। কবিতাটি ‘ফণি মনসা’ কাব্যগ্রন্থভুক্ত। কবি দেশমাতৃকার শত্রু নিধনে তাঁর পুনর্জন্ম আকাক্সক্ষা করে বলেছেন, ‘পীড়িত এ বঙ্গ পথ চাহিছে তোমার / অসুর নিধনে কবে আসিবে আবার।’ নজরুল অনেকগুলো নিবেদিত কবিতা লিখেছেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে অর্ঘ্য, অকাল-সন্ধ্যা, সান্ত¡না, ইন্দ্রপতন, রাজভিখারি উল্লেখযোগ্য। এসব কবিতা নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ কাব্যগ্রন্থই প্রকাশিত হয়েছে ‘চিত্তনামা’ শিরোনামে। বইটি তাঁরই সুযোগ্যা পতœী বাসন্তী দেবীকে উৎসর্গ করা হয়েছে। এছাড়াও স্বর্গীয় দেশবন্ধুর চতুর্থ বার্ষিক শ্রাদ্ধ উপলক্ষে কবি ‘তর্পণ’ নামে একটি কবিতা নিবেদন করেন শোকার্ঘ্য রূপে।

কাশিম বাজারের দানবীর মহারাজা স্যার মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী মহোদয়ের তিরোধান উপলক্ষে কাজী নজরুল একটি কবিতা রচনা করেন, যার নাম ‘মণীন্দ্র-প্রয়াণ’।কবির লেখায় এতে ধ্বনিত হয় মহৎপ্রাণের শংসাবচন, ‘দান-বীর, এতদিনে নিঃশেষে / করিলে নিজেরে দান। / মৃত্যুরে দিলে অঞ্জলি ভরি / তোমার অমৃত প্রাণ।’ (প্রলয়-শিখা)। বিপ্লবী পূর্ণচন্দ্র দাস ছিলেন দক্ষিণবঙ্গে বৃটিশের ত্রাস।মাদারিপুর শান্তি-সেনা-বাহিনীর প্রধান অধ্যক্ষ বিপ্লবী পূর্ণচন্দ্র দাসের কারামুক্তি উপলক্ষে কবি রচনা করেন, ‘পূর্ণ-অভিনন্দন’ শিরোনামে পূর্ণাঙ্গ এক কবিতা। কবি এখানে পূর্ণচন্দ্রকে ‘জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র’ আখ্যা দিয়েছেন।

কবির শিক্ষকেরাও বাদ ছিলেন না তাঁর হাতে লেখা নিবেদিত কবিতা হতে। সিয়ারসোল ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রীযুক্ত হরিশঙ্কর মিশ্র বি.এ. মহাশয়ের বিদায়ে ছাত্রত্বকালীন কবি রচনা করেন, ‘করুণ বেহাগ’ নামে এক মর্মস্পর্শী কবিতা। এটি কবির অগ্রন্থিত শ্রেণিভুক্ত কবিতা।

‘দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহনের তিরোধানে’ শীর্ষক নিবেদিত কবিতায় কবি শ্রদ্ধার্ঘ্য জ্ঞাপন করেন জনপ্রিয় এই রাজনীতিকের স্মরণে। তাঁর কবিতায় জীবন্ত হয়ে আছে আজও এ কর্মবীর। কবি যেন বিলাপের স্বরে বলেন, ‘দেশপ্রিয় নাই’ শুনি ক্রন্দন সহসা প্রভাতে জাগি’! / আকাশে ললাট হানিয়া কাঁদিছে ভারত চির-অভাগী।’

৫. শিশুদের জন্যে নিবেদিত কবিতা :নজরুলের শিশু সাহিত্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও উল্লেখযোগ্য। তিনি তাঁর প্রতিভাবান শিশুপুত্র বুলবুলকে নিবেদন করে লেখেন ‘সুরের দুলাল’ কবিতাটি। ‘সুরের দুলাল’ কাজী নজরুল ইসলামের ‘সন্ধ্যা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর দ্বিতীয় পুত্র অরিন্দম খালেদ বুলবুলের অসুস্থতার সময় চিকিৎসার জন্য অর্থ যোগাড় করতে রেলগাড়িতে কলকাতা যাওয়ার পথে একটি কাগজের বিজ্ঞাপনের উল্টো পিঠে তিনি কবিতাটি লিখেছিলেন। এ কবিতায় একজন পিতার অসহনীয় কষ্ট ফুটে উঠে যখন কবি বলেন, ‘শূন্য গেলাস ভরব- দিয়ে চোখের পানি মুখের হাস।’ ‘ছোট হিটলার’ নামের কবিতাটি তাঁর ছোট দুই শিশুপুত্র সানি-নিনিকে নিবেদিত যা অগ্রন্থিত কবিতার শ্রেণিভুক্ত। দুই ভাইয়ের দুষ্টুমিকে ফুটিয়ে তোলা খুব মজাদার এ কবিতায় কবি লিখেছেন, ‘মা গো আমি যুদ্ধে যাব, নিষেধ কি মা আর মানি / রাত্তিরে রোজ ঘুমের মাঝে ডাকে পোলান্ড, জার্মানি।’

কবি ‘নতুন চাঁদ’ কাব্যগ্রন্থে কিশোর রবীন্দ্রনাথকে নিবেদন করে লিখেছেন ‘কিশোর রবি’ কবিতাটি। তিনি রবীন্দ্রনাথকে জিজ্ঞেস করে বলেছেন, ‘হে চির কিশোর কবি রবীন্দ্র, কোন্ রসলোক হতে / আনন্দ-বেনু হাতে লয়ে এলে খেলিতে ধূলির পথে’

নজরুলের ব্যক্তিত্ব এমনই যে, তা সহজেই অন্যকে আপন করে নিতে পারে। নজরুলের কবিত্ব এতই সহজাত যে, তা নিমেষেই যে কারও জন্যে কয়েকছত্র রচনা করে ফেলতে পারে। নজরুলে এই দুই গুণের অমেয় সমন্বয় তাঁর নিবেদিত কবিতাগুলোয় দেখা যায়। তাঁর কাব্য নিবেদন হতে বাদ যায়নি কেউই। যখন যাকে নিয়ে লেখা দরকার মনে করেছেন, তখন তাকে নিয়েই লিখেছেন। এর ফলশ্রুতিতে আমরাও পেয়ে যাই কয়েকটি অসাধারণ কবিতা। কবিতার নজরুল গিরি হতে ছুটে চলা ঝিরিধারা। তাঁকে থামানো যায় না, তাঁকে রোধ করা যায় না। তাঁর সৃষ্টির নদী আপন বেগে বহমান।

তথ্যসূত্র :

১. ইসলামি কবিতা, নজরুল সমগ্র, তৃতীয় খ-

২. বিবিধ কবিতা, নজরুল সমগ্র, পঞ্চম খ-

৩. শিশু-কিশোর-বিষয়ক কবিতা, নজরুল সমগ্র, চতুর্থ খ-

৪. সঞ্চিতা, কাজী নজরুল ইসলাম

back to top