alt

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

চুম্বন চমকে
রবীন্দ্র গোপ
নিঃসঙ্গ আড়ালে আজও কে যে ডাকে বারে বারে

ভুল করে ফিরে আসে হাসিতে তুমুল হৈ হুল্লোড়

কেউ নেই বড় বেশি পিছু ডাকে বালিকা একাকী

কলসি কাঁখে জলতরঙ্গ দোলা দেয় বালকবেলা

খেলা যায় না ভোলা অবেলায় স্মৃতি বিজড়িত

আসছি বলে আর হয় না আসা করতালি বাজে।

জীবন এখন এমনই কেবলই আসা যাওয়ার শব্দ

কড়া নাড়াও ভুলেই গেছি শব্দ বেল বাজে কিনা

কান পেতে থাকি তুমি আসবে বলেই অথচ এই

আমার অপেক্ষার কাল বেলা যায় শব্দ অভিমানে।

মনে পড়ে চুম্বন চমকে টগবগে চিবুকে রঙিন

ভালোবাসা এঁকে দিয়ে লুকোচুরি খেলা যায় বেলা

মেঘলা আকাশ শ্রাবণ মেঘের খেলা মনে পড়ে যায়

খালবিল ভরা জলে ওঠে আসে কৈ মাগুর শিং

হায় কাদা ভরা পিচ্ছিল পথে কত যে আছাড় খেয়ে

বাড়ি ফেরা, বালক বেলার লুকোচুরি খেলা

ওসব কিআর যায় ভোলা।

সহজ নয় ভোলা
দেবাশিস চন্দ
ভুলে যাওয়ার কথা বলা যত সহজ তত সহজ নয় ভোলা,

শস্যখেত বহু বিস্তৃত, কতশত অলিগলি, কত তার অভিসন্ধি,

বললেই কী আকাশ বৃষ্টি দেয়! চাইলেই কী চাঁদ মুঠোয় আসে!

আমার ভালবাসা তত দূর যাবে যত দূর তুমি, তোমার ছায়া,

তুমি নেই, তবু তুমি আছো- আমার ভালবাসা নির্মম সত্য;

বুকের ভেতরে ময়ূরের পেখম, সজারুর কাঁটা, মরুঝড়।

আমাদের দেখা হওয়ার কথা ছিল বৃষ্টিমায়ানগরে,

মহানগরের সৃষ্টিসিক্ত জীবন কেড়ে নিল আত্মজন,

সবুজের প্রলেপে ঢাকা মুখেদের চেনা যায় না সহজে,

ধুতরো বীজের নিরীহ ফাঁদ, পারিনি চিনিতে তাহাদের,

অসৎ বুদ্বুদের ফানুস, সমুদ্রের চোরাবালি কয় যাহারে।

তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে না জানি, তুমি চলে গেছ দূরে,

ঘুঙুর ঝঙ্কৃত উচ্চারণে, শৃঙ্গশীর্ষ তোমার সাধনা, তোমার নিষ্ঠা,

আত্মজনেদের দূরত্বসূচক বিষনীল ষড়যন্ত্রের কিছুই বুঝিনি,

না বোঝার মাশুল গুনতে গুনতে বিধ্বস্ত আমি চলে যাচ্ছি,

আকাশ-চাঁদোয়ার নিচে অপেক্ষা, জ্বলে উঠবে শেষঅগ্নি।

মা আমার
শাকিব লোহানী
আমার বিষণ্ন মা

৭ বছর হলো ঘুমোননি,

ঠা-া কবরের ভেজা মাটিতে

তার ৭ বছরের শিশুকন্যা

কীভাবে ঘুমায় এখন,

এ কথা ভেবে ভেবে।

পালেস্টাইনের দগ্ধ মাটি আর ধ্বংসস্তূপ

নিচে ফেলে বোমারু বিমান যখন ফিরে গেছে

নিজ আস্তানায়, সেই হামলার

ধূ¤্রকু-লীর দিকে চেয়ে যুদ্ধরত আমি

স্পষ্ট দেখি নির্ঘুম মায়ের মুখচ্ছবি।

কপালে রেখা টানা মায়ের মলিন

সেই মুখ ছাপিয়ে কখন ভেসে উঠেছে,

শিশু সহোদরার পেলব নির্মল কান্তি,

মৃত্যুর আগ্রাসনে মলিন হয়নি এতোটুকু।

স্পর্শের বাইরে সে কান্তি আমাকে তাড়ায়

আমি ক্ষিপ্ত হই শ্বাপদের জিঘাংসায়

গহীন আশ্রয় ছেড়ে বেরিয়ে আসি

স্টেনগানের মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণের ধ্বনিকে

সাথী করে, অপ্রস্তুত আগ্রাসীদের মৃতদেহ

পায়ে দলে সামনে এগোই,বুঝি এবারই

হতে চলেছে সাহসী এক যোদ্ধার আত্মাহুতি।

ক্ষণিকের তরে তাহলে দেখি

কতটা নির্মম হতে পারি,

অর্ধমৃত নির্ঘুম মা আর ৭ বছরের

শিশু সহোদরাকে হারানো, দুঃসাহসী আমি;

আমার তো হারাবার আর কিছু নেই।

ও বৃষ্টি
দুলাল সরকার
বৃষ্টি এসে আমার কাছে বসুক

আসার পথের গল্পগুলো

আমায় খুলে বলুক- কী দেখেছে

কী শুনেছে স্মৃতির পালক খুলুক,

নিঃসন্তান আউশ বিষ্টি বিষ্টি করুক;

ভেজা পাতার শব্দ শুনে কদম কুঁড়ি

স্তনের মত ফুটুক- উন্মীলিত

আঁখির মতো বৃষ্টি নূপুর পড়–ক

যমুনা তীরে রাধা হয়ে উদোম হয়ে নাচুক;

পাশের গাছটি খুঁজে পেয়ে লতা কস্তুরি

গাও জড়িয়ে আদর হয়ে হাসুক

তোমার হাতটি আমার গতর খুঁজুক

বুকের ভেতর ইকটু ইকটু

পাথর হয়ে কাঁদুক-

বর্ষাকে নিয়ে কবিতা লিখব না
খসরু পারভেজ
আজ আর বর্ষাকে নিয়ে কবিতা লিখব না

সারাজীবন ধরে এতটা বর্ষায় ভিজেছি

বর্ষাকে এখন ঘুম পাড়িয়ে রাখতে ইচ্ছে হয়

সেই কবে আক্রান্ত হয়েছি বর্ষাজ্বরে

আজও সে জ্বর সারলো না কোনো পথ্যে

আমি যক্ষ হয়ে কতকাল আগে

প্রেয়সীর কাছে পাঠিয়েছি মেঘদূত

আজও তো পৌঁছাল না আমার প্রেমের চিঠি

রামগিরি থেকে ফুরালো না

আমার নিবিড় নির্বাসন

সারাজীবন চেয়েছি যেটুকু রোদ্দুর

তোমরা দিয়েছ তার চেয়ে বেশি বৃষ্টিজল

আমার রোদ্দুর ভিজে গেছে তুমুল বৃষ্টিতে

রোদকে শুকাতে শুকাতে

ধলপ্রহরেই আমার কেটে গেল জলজ জীবন

এখনও আষাঢ়ের জন্য এখানে শ্রাবণ কাঁদে

কালের চামচে তুমি

কতটুকু পৃথক করতে পারো জীবনের জল

ভাঙা চশমার মতো পরানের পথে পড়ে আছে

আমার কবিতা লেখার কাল

বর্ষায় ভিজছে নিষ্পাপ দুঃখরা
বাশার মাহফুজ
ফুলের সুবাস ভুলে বৃষ্টিরা ছুটছে অন্য জানালায়

কদমের ডালে ঝুলে আছে নিঃসঙ্গ দুপুর

বর্ষায় ভিজছে নিষ্পাপ দুঃখরা

ধুয়ে যাচ্ছে ভেতরের ক্রোধ শব্দের কাজল।

নগরের গৃহহীন দাঁড়কাক ভেজা পালকে

শুনছে বাতাসের সিম্ফনি

ভেজা স্টেশনে একটানা হুইসেল দিয়ে যাচ্ছে ট্রেন

গন্তব্যহীন এই যাত্রায়

বর্ষা আমাকে চুম্বক চুম্বনে স্থির করে তোলে!

রিমঝিম এই বরষায় ভালোবাসতে ইচ্ছে হয় খুব।

বৃষ্টির আড়ালে
অনিল সেন
তুমি বৃষ্টি দেখ

আমি বৃষ্টির আড়ালে কবিতা লিখি

তুমি বৃষ্টিতে ভিজে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকো

আমি চাতকের সাথে কথা বলি

বর্ষায় ভেজা দেহ গদ্যকবিতার মতো

যেদিকে খুশি সেদিকে লিখতে পারি

বৃষ্টি আমাকে ভেজাতে পারে না

যতটা পার তুমি

আমি বৃষ্টির ফোঁটায় সাঁতার কেটে

দেহের দেউড়িতে নৃত্য করি

আমি রিমঝিম ঝিম বৃষ্টির আড়ালে

লুকিয়ে লুকিয়ে তোমায় দেখি।

এই বর্ষায়
ভূঁইয়া বুলবুল
বর্ষায় দেওসহিলা গ্রামে দাঁড়িয়ে জগৎকে তোমার মনে হতে পারে

একটা মুখখোলা শাদা ঝিনুকের মতো, ভেতরে তার তরল মুক্তার ঢেউ

পৃথিবীতে যারা অশান্তির অভিযোগ তুলে, তাদের বোধহয় দেওসহিলা নেই, মোজাফরপুর নেই

লগির ডগায় কবুতরের মতো শাদা মেঘ উড়িয়ে যারা দীনশরৎ,জালাল খাঁ কিংবা

আহাদ বয়াতির সুরকে প্রশান্তির বালিশ বানিয়ে কাঠের তক্তায় ঘুমিয়ে পড়ে

পৃথিবীতে তারা যুদ্ধ কিংবা অশান্তির কথা শুনতে আসেনি, শোনাতে আসেনি

দেওসহিলা, মোজাফরপুরের মানুষ জানে এই বর্ষায় পৃথিবী আসলে শান্তির জলে পূর্ণ

একটা মুখখোলা ঝিনুক কিংবা গোলাকার হলে তা নিশ্চয়ই তরতাজা একটা কদম ফুল

নদীর নূপুর
মুজাহীদুল ইসলাম নাজিম
একটি ছায়া কদাচিৎ পদক্ষেপ

বেড়ে ওঠা মায়াগুলো যৌবনা কুসুম

ধূসর ক্লান্তিতে স্বপ্নের হামাগুড়ি- ডেকে যায় মেঘ

সন্ধ্যার পেছনে সোনারঙ বাড়িটায় কী আছে কে জানে?

অকস্মাৎ হুইসেল ফিরে এলে ধ্যান ফুলে-ফুলে প্রেমপাঠ

থেকে যায় পিপাসিত হাত নদীর নূপুরে

স্বপ্নগাঁয়ের স্বপ্ন তুমি দিগন্ত ছোঁয়া মেয়ে

এক জীবনে ফুরাবে না তৃষ্ণা তোমার।

পাতা ঝরা শব্দে ভেঙে গেলে শিশিরের ঘুম

গোলাপের গল্পে ভুলে যাবো বিষণœ জীবন।

কোনো এক শ্রাবণ-সন্ধ্যায়
বাদল বিহারী চক্রবর্তী
কোনো এক শ্রাবণ-সন্ধ্যায়

চিলেকোঠার বারান্দায় বসেছিলাম

আলতোভাবে...

কর্মব্যস্ততায় কাটে দিনভর অফিসপাড়ায়

গুমোটবাঁধা ভ্যাপসা গরমের

ক্লান্তি ভোলানো আকাশভাঙা ঝমঝম বৃষ্টির

হিমশীতল আমেজ...আহা! সে এক অদ্ভুত অনুভূতি

মধুময় স্বস্তি...

রাস্তার ওপাশে দ্বিতল বারান্দায় মুখোমুখি বসা-

ও বাড়ির আধো চেনা কোনো এক অষ্টাদশী

সুরম্য মুখ যার প্রলম্ব বেণিখানা সটান ঝুলে পড়া

প্রতিদিন দেখি যারে মুগ্ধচিত্ত নৃত্যরতা

মনে হয় স্বর্গের উর্বশী যেন এক...

সবিস্ময় অপলক আঁখিদ্বয় স্থির হয়ে যায়

ছন্দের বরষায়

শ্রাবণের সেই সন্ধ্যায়...

বৃষ্টিস্নাত বিশেষত তোমাকে
নাইমুল করিম
এক গবেষণায় দেখা যায় যে

মৌসুমের বৃষ্টিতে একদিন হ’লেও ভেজা দরকার!

তাতে ত্বক ভালো থাকে, তনুমন চাঙা হয়,

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে,

আর বৃষ্টিস্নাত বিশেষত তোমাকে একপলক-

অধরে কালো তিল তড়তড়ে মুখাবয়ব দেখে দেখে

আমার অন্তরিন্দ্রিয় ঘিরে বৃষ্টির মতো অবিরাম ধারায়

বহু স্মৃতিভেজা কবিতা জড়ো হ’তে থাকে...

এক পনেরো, দুপুর
আসিফ আন নাজিয়াত
আমি ভালোবাসি, তুমি ভালো আছো, কিন্তু আমারও হিংসে হয়, তৃপ্তি নেই, গলা শুকিয়ে আসে, আমি শুকনো ঢোক গিলে, পানকৌড়ির মতো, টিয়ারাঙ্গা সবুজ আমার ভালো লাগছে না, সমুদ্র পর্বত মহাবন বিস্তৃত মালভূমি, একবার ডিপ ড্রাইভ একবার ঘুড়ির জন্য সজাগ ভোর-

তুমি ভালো আছো, সে দারুণ কথা

প্রেমিকের নাম পাল্টে হয়তো বুঝে গেছো, গহীন ক্লান্ত এক এক রাত্রি, তোমারও পিপাসা পায়, তুমিও

বিরক্ত আবর্ণ উত্তাপ নেই বুঝে গেছো যখন, এবার

সন্ধে হলে তুমি ভালোবাসা নিয়ে হয়তো ভাবোই না আর,

তলপেটে সুখ আর চুমু বারোয়ারি, আমি একটু

মজাই পাই, ভেবে দেখি ঘড়ির সময় তোমার আমার হাতে

ঠিক এক পনেরোয় থেমে আছে।

ছবি

শালুক-এর শঙ্খ ঘোষ সংখ্যা বাংলাদেশের সশ্রদ্ধ মূল্যায়ন

ছবি

‘প্রিজন ডিলাক্স ট্যুর’: কুহক ও বিভ্রমের গল্প

ছবি

কল্পগল্প

ছবি

আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘জ্যোৎস্না-রৌদ্রের চিকিৎসা’

ছবি

প্রসঙ্গ মনোবৈজ্ঞানিক উপন্যাস

ছবি

আনন্দদায়ক ও অপ্রত্যাশিত নোবেল পুরস্কার

ছবি

জীবনবোধ ও শিল্পকর্ম

ছবি

নজরুলের গল্প ও উপন্যাস

ছবি

কৃষ্ণাঙ্গ দাস থেকে হয়ে উঠেছিলেন খ্যাতিমান কবি

শ্রাবণ বর্ষণে

ছবি

শতবর্ষ পরে ‘মিসেস ডালোওয়ে’

ছবি

স্কাল্পচারের জগতটা আস্তে আস্তে ব্যাপকতা পাচ্ছে

ছবি

চব্বিশের অভ্যুত্থান নিয়ে গ্রন্থ

ছবি

ভিন্নচোখ: নুতন কবিতা সংখ্যা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লোরকা: মৃত্যুর রূপক এবং আন্দালুসিয়ার লোকজ বিশ্বাস

ছবি

কবিতার শিল্পনিষ্ঠ রূপকার ফারুক মাহমুদ

ছবি

কাফকাকে পড়া কাফকাকে পড়ানো

ছবি

কবি নওশাদ নূরী

ছবি

আঁধার পেরিয়ে আলোর উদ্ভাষণ

ছবি

সন্জীদা খাতুন : কৃতি ও কৃতিত্ব

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

মননশস্যের অমৃত মন্থন

ছবি

অনুবাদ ও ভূমিকা : আলী সিদ্দিকী

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

বড়শি

ছবি

কাফকাকে পড়া, কাফকাকে পড়ানো

এ মুখর বরষায়

ছবি

রক্তে লেখা প্রেম: রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিপ্লব

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

শঙ্খজীবন: যাপিত জীবনের অন্তর্গূঢ় প্রতিকথা

ছবি

ওসামা অ্যালোমার এক ঝুড়ি খুদে গল্প

ছবি

প্রযুক্তির আলোয় বিশ্বব্যাপী বইবাণিজ্য

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

কাফকার কাছে আমাদের ঋণ স্বীকার

tab

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

চুম্বন চমকে
রবীন্দ্র গোপ
নিঃসঙ্গ আড়ালে আজও কে যে ডাকে বারে বারে

ভুল করে ফিরে আসে হাসিতে তুমুল হৈ হুল্লোড়

কেউ নেই বড় বেশি পিছু ডাকে বালিকা একাকী

কলসি কাঁখে জলতরঙ্গ দোলা দেয় বালকবেলা

খেলা যায় না ভোলা অবেলায় স্মৃতি বিজড়িত

আসছি বলে আর হয় না আসা করতালি বাজে।

জীবন এখন এমনই কেবলই আসা যাওয়ার শব্দ

কড়া নাড়াও ভুলেই গেছি শব্দ বেল বাজে কিনা

কান পেতে থাকি তুমি আসবে বলেই অথচ এই

আমার অপেক্ষার কাল বেলা যায় শব্দ অভিমানে।

মনে পড়ে চুম্বন চমকে টগবগে চিবুকে রঙিন

ভালোবাসা এঁকে দিয়ে লুকোচুরি খেলা যায় বেলা

মেঘলা আকাশ শ্রাবণ মেঘের খেলা মনে পড়ে যায়

খালবিল ভরা জলে ওঠে আসে কৈ মাগুর শিং

হায় কাদা ভরা পিচ্ছিল পথে কত যে আছাড় খেয়ে

বাড়ি ফেরা, বালক বেলার লুকোচুরি খেলা

ওসব কিআর যায় ভোলা।

সহজ নয় ভোলা
দেবাশিস চন্দ
ভুলে যাওয়ার কথা বলা যত সহজ তত সহজ নয় ভোলা,

শস্যখেত বহু বিস্তৃত, কতশত অলিগলি, কত তার অভিসন্ধি,

বললেই কী আকাশ বৃষ্টি দেয়! চাইলেই কী চাঁদ মুঠোয় আসে!

আমার ভালবাসা তত দূর যাবে যত দূর তুমি, তোমার ছায়া,

তুমি নেই, তবু তুমি আছো- আমার ভালবাসা নির্মম সত্য;

বুকের ভেতরে ময়ূরের পেখম, সজারুর কাঁটা, মরুঝড়।

আমাদের দেখা হওয়ার কথা ছিল বৃষ্টিমায়ানগরে,

মহানগরের সৃষ্টিসিক্ত জীবন কেড়ে নিল আত্মজন,

সবুজের প্রলেপে ঢাকা মুখেদের চেনা যায় না সহজে,

ধুতরো বীজের নিরীহ ফাঁদ, পারিনি চিনিতে তাহাদের,

অসৎ বুদ্বুদের ফানুস, সমুদ্রের চোরাবালি কয় যাহারে।

তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে না জানি, তুমি চলে গেছ দূরে,

ঘুঙুর ঝঙ্কৃত উচ্চারণে, শৃঙ্গশীর্ষ তোমার সাধনা, তোমার নিষ্ঠা,

আত্মজনেদের দূরত্বসূচক বিষনীল ষড়যন্ত্রের কিছুই বুঝিনি,

না বোঝার মাশুল গুনতে গুনতে বিধ্বস্ত আমি চলে যাচ্ছি,

আকাশ-চাঁদোয়ার নিচে অপেক্ষা, জ্বলে উঠবে শেষঅগ্নি।

মা আমার
শাকিব লোহানী
আমার বিষণ্ন মা

৭ বছর হলো ঘুমোননি,

ঠা-া কবরের ভেজা মাটিতে

তার ৭ বছরের শিশুকন্যা

কীভাবে ঘুমায় এখন,

এ কথা ভেবে ভেবে।

পালেস্টাইনের দগ্ধ মাটি আর ধ্বংসস্তূপ

নিচে ফেলে বোমারু বিমান যখন ফিরে গেছে

নিজ আস্তানায়, সেই হামলার

ধূ¤্রকু-লীর দিকে চেয়ে যুদ্ধরত আমি

স্পষ্ট দেখি নির্ঘুম মায়ের মুখচ্ছবি।

কপালে রেখা টানা মায়ের মলিন

সেই মুখ ছাপিয়ে কখন ভেসে উঠেছে,

শিশু সহোদরার পেলব নির্মল কান্তি,

মৃত্যুর আগ্রাসনে মলিন হয়নি এতোটুকু।

স্পর্শের বাইরে সে কান্তি আমাকে তাড়ায়

আমি ক্ষিপ্ত হই শ্বাপদের জিঘাংসায়

গহীন আশ্রয় ছেড়ে বেরিয়ে আসি

স্টেনগানের মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণের ধ্বনিকে

সাথী করে, অপ্রস্তুত আগ্রাসীদের মৃতদেহ

পায়ে দলে সামনে এগোই,বুঝি এবারই

হতে চলেছে সাহসী এক যোদ্ধার আত্মাহুতি।

ক্ষণিকের তরে তাহলে দেখি

কতটা নির্মম হতে পারি,

অর্ধমৃত নির্ঘুম মা আর ৭ বছরের

শিশু সহোদরাকে হারানো, দুঃসাহসী আমি;

আমার তো হারাবার আর কিছু নেই।

ও বৃষ্টি
দুলাল সরকার
বৃষ্টি এসে আমার কাছে বসুক

আসার পথের গল্পগুলো

আমায় খুলে বলুক- কী দেখেছে

কী শুনেছে স্মৃতির পালক খুলুক,

নিঃসন্তান আউশ বিষ্টি বিষ্টি করুক;

ভেজা পাতার শব্দ শুনে কদম কুঁড়ি

স্তনের মত ফুটুক- উন্মীলিত

আঁখির মতো বৃষ্টি নূপুর পড়–ক

যমুনা তীরে রাধা হয়ে উদোম হয়ে নাচুক;

পাশের গাছটি খুঁজে পেয়ে লতা কস্তুরি

গাও জড়িয়ে আদর হয়ে হাসুক

তোমার হাতটি আমার গতর খুঁজুক

বুকের ভেতর ইকটু ইকটু

পাথর হয়ে কাঁদুক-

বর্ষাকে নিয়ে কবিতা লিখব না
খসরু পারভেজ
আজ আর বর্ষাকে নিয়ে কবিতা লিখব না

সারাজীবন ধরে এতটা বর্ষায় ভিজেছি

বর্ষাকে এখন ঘুম পাড়িয়ে রাখতে ইচ্ছে হয়

সেই কবে আক্রান্ত হয়েছি বর্ষাজ্বরে

আজও সে জ্বর সারলো না কোনো পথ্যে

আমি যক্ষ হয়ে কতকাল আগে

প্রেয়সীর কাছে পাঠিয়েছি মেঘদূত

আজও তো পৌঁছাল না আমার প্রেমের চিঠি

রামগিরি থেকে ফুরালো না

আমার নিবিড় নির্বাসন

সারাজীবন চেয়েছি যেটুকু রোদ্দুর

তোমরা দিয়েছ তার চেয়ে বেশি বৃষ্টিজল

আমার রোদ্দুর ভিজে গেছে তুমুল বৃষ্টিতে

রোদকে শুকাতে শুকাতে

ধলপ্রহরেই আমার কেটে গেল জলজ জীবন

এখনও আষাঢ়ের জন্য এখানে শ্রাবণ কাঁদে

কালের চামচে তুমি

কতটুকু পৃথক করতে পারো জীবনের জল

ভাঙা চশমার মতো পরানের পথে পড়ে আছে

আমার কবিতা লেখার কাল

বর্ষায় ভিজছে নিষ্পাপ দুঃখরা
বাশার মাহফুজ
ফুলের সুবাস ভুলে বৃষ্টিরা ছুটছে অন্য জানালায়

কদমের ডালে ঝুলে আছে নিঃসঙ্গ দুপুর

বর্ষায় ভিজছে নিষ্পাপ দুঃখরা

ধুয়ে যাচ্ছে ভেতরের ক্রোধ শব্দের কাজল।

নগরের গৃহহীন দাঁড়কাক ভেজা পালকে

শুনছে বাতাসের সিম্ফনি

ভেজা স্টেশনে একটানা হুইসেল দিয়ে যাচ্ছে ট্রেন

গন্তব্যহীন এই যাত্রায়

বর্ষা আমাকে চুম্বক চুম্বনে স্থির করে তোলে!

রিমঝিম এই বরষায় ভালোবাসতে ইচ্ছে হয় খুব।

বৃষ্টির আড়ালে
অনিল সেন
তুমি বৃষ্টি দেখ

আমি বৃষ্টির আড়ালে কবিতা লিখি

তুমি বৃষ্টিতে ভিজে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকো

আমি চাতকের সাথে কথা বলি

বর্ষায় ভেজা দেহ গদ্যকবিতার মতো

যেদিকে খুশি সেদিকে লিখতে পারি

বৃষ্টি আমাকে ভেজাতে পারে না

যতটা পার তুমি

আমি বৃষ্টির ফোঁটায় সাঁতার কেটে

দেহের দেউড়িতে নৃত্য করি

আমি রিমঝিম ঝিম বৃষ্টির আড়ালে

লুকিয়ে লুকিয়ে তোমায় দেখি।

এই বর্ষায়
ভূঁইয়া বুলবুল
বর্ষায় দেওসহিলা গ্রামে দাঁড়িয়ে জগৎকে তোমার মনে হতে পারে

একটা মুখখোলা শাদা ঝিনুকের মতো, ভেতরে তার তরল মুক্তার ঢেউ

পৃথিবীতে যারা অশান্তির অভিযোগ তুলে, তাদের বোধহয় দেওসহিলা নেই, মোজাফরপুর নেই

লগির ডগায় কবুতরের মতো শাদা মেঘ উড়িয়ে যারা দীনশরৎ,জালাল খাঁ কিংবা

আহাদ বয়াতির সুরকে প্রশান্তির বালিশ বানিয়ে কাঠের তক্তায় ঘুমিয়ে পড়ে

পৃথিবীতে তারা যুদ্ধ কিংবা অশান্তির কথা শুনতে আসেনি, শোনাতে আসেনি

দেওসহিলা, মোজাফরপুরের মানুষ জানে এই বর্ষায় পৃথিবী আসলে শান্তির জলে পূর্ণ

একটা মুখখোলা ঝিনুক কিংবা গোলাকার হলে তা নিশ্চয়ই তরতাজা একটা কদম ফুল

নদীর নূপুর
মুজাহীদুল ইসলাম নাজিম
একটি ছায়া কদাচিৎ পদক্ষেপ

বেড়ে ওঠা মায়াগুলো যৌবনা কুসুম

ধূসর ক্লান্তিতে স্বপ্নের হামাগুড়ি- ডেকে যায় মেঘ

সন্ধ্যার পেছনে সোনারঙ বাড়িটায় কী আছে কে জানে?

অকস্মাৎ হুইসেল ফিরে এলে ধ্যান ফুলে-ফুলে প্রেমপাঠ

থেকে যায় পিপাসিত হাত নদীর নূপুরে

স্বপ্নগাঁয়ের স্বপ্ন তুমি দিগন্ত ছোঁয়া মেয়ে

এক জীবনে ফুরাবে না তৃষ্ণা তোমার।

পাতা ঝরা শব্দে ভেঙে গেলে শিশিরের ঘুম

গোলাপের গল্পে ভুলে যাবো বিষণœ জীবন।

কোনো এক শ্রাবণ-সন্ধ্যায়
বাদল বিহারী চক্রবর্তী
কোনো এক শ্রাবণ-সন্ধ্যায়

চিলেকোঠার বারান্দায় বসেছিলাম

আলতোভাবে...

কর্মব্যস্ততায় কাটে দিনভর অফিসপাড়ায়

গুমোটবাঁধা ভ্যাপসা গরমের

ক্লান্তি ভোলানো আকাশভাঙা ঝমঝম বৃষ্টির

হিমশীতল আমেজ...আহা! সে এক অদ্ভুত অনুভূতি

মধুময় স্বস্তি...

রাস্তার ওপাশে দ্বিতল বারান্দায় মুখোমুখি বসা-

ও বাড়ির আধো চেনা কোনো এক অষ্টাদশী

সুরম্য মুখ যার প্রলম্ব বেণিখানা সটান ঝুলে পড়া

প্রতিদিন দেখি যারে মুগ্ধচিত্ত নৃত্যরতা

মনে হয় স্বর্গের উর্বশী যেন এক...

সবিস্ময় অপলক আঁখিদ্বয় স্থির হয়ে যায়

ছন্দের বরষায়

শ্রাবণের সেই সন্ধ্যায়...

বৃষ্টিস্নাত বিশেষত তোমাকে
নাইমুল করিম
এক গবেষণায় দেখা যায় যে

মৌসুমের বৃষ্টিতে একদিন হ’লেও ভেজা দরকার!

তাতে ত্বক ভালো থাকে, তনুমন চাঙা হয়,

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে,

আর বৃষ্টিস্নাত বিশেষত তোমাকে একপলক-

অধরে কালো তিল তড়তড়ে মুখাবয়ব দেখে দেখে

আমার অন্তরিন্দ্রিয় ঘিরে বৃষ্টির মতো অবিরাম ধারায়

বহু স্মৃতিভেজা কবিতা জড়ো হ’তে থাকে...

এক পনেরো, দুপুর
আসিফ আন নাজিয়াত
আমি ভালোবাসি, তুমি ভালো আছো, কিন্তু আমারও হিংসে হয়, তৃপ্তি নেই, গলা শুকিয়ে আসে, আমি শুকনো ঢোক গিলে, পানকৌড়ির মতো, টিয়ারাঙ্গা সবুজ আমার ভালো লাগছে না, সমুদ্র পর্বত মহাবন বিস্তৃত মালভূমি, একবার ডিপ ড্রাইভ একবার ঘুড়ির জন্য সজাগ ভোর-

তুমি ভালো আছো, সে দারুণ কথা

প্রেমিকের নাম পাল্টে হয়তো বুঝে গেছো, গহীন ক্লান্ত এক এক রাত্রি, তোমারও পিপাসা পায়, তুমিও

বিরক্ত আবর্ণ উত্তাপ নেই বুঝে গেছো যখন, এবার

সন্ধে হলে তুমি ভালোবাসা নিয়ে হয়তো ভাবোই না আর,

তলপেটে সুখ আর চুমু বারোয়ারি, আমি একটু

মজাই পাই, ভেবে দেখি ঘড়ির সময় তোমার আমার হাতে

ঠিক এক পনেরোয় থেমে আছে।

back to top