আলেক মানুষ আলেকে রয়
কামালউদ্দিন নীলু
(ভাস্কর বন্ধু হামিদুজ্জামান খান স্মরণে)
আগুন ছাড়া ছায়ায়, যেখানে মুখগুলো ভেসে বেড়ায়, কিন্তু নাম থাকে না, আত্মা বিলীন হয়ে যায়- দীর্ঘায়িত, ফ্যাকাশে- নীরবতায় শোক ও কাদামাটিতে সেলাই করা।
তিনি পাথর খোদাই করেননি, বরং নীরবতা, যেখানে জোড়া লাগানো নিঃশ^াস থেকে ডানা উঠেছিল- ব্রোঞ্জের তৈরি একটি ঘুঘু, মধ্য-গতি, মাধ্যাকর্ষণ।
ইস্পাত হয়ে ওঠে তার ভাষা, স্বাধীনতা- স্মৃতিতে বসে থাকা একটি পাখি,একটি জাতির প্রতিধ্বনি।
তিনি নিস্তব্ধতায় বাতাসকে খোদাই করেছিলেন, কাঁপতে থাকা পাথর থেকে উড়ে যাওয়া- ছিন্নভিন্ন হাত দিয়ে, ব্রোঞ্জকে গান গাইতে শেখাতেন।
এমন বন্য আকাশের কথা যা আমরা কখনও জানি না।
তিনি স্লোগানে কথা বলেননি, যেখানে পালক ধাতুতে খোদাই করা হয়েছে ইতিহাসের নীরব চিৎকার।
তিনি সংগ্রামের আত্মাকে রূপ দিয়েছেন প্রতিটি উড়ন্ত উড়ানে।
আজ, সরঞ্জামগুলি শান্ত, চুল্লিটি শোকে ঠা-া- কিন্তু তার বনকপোতেরা
এখনো সন্ধ্যায় জেগে ওঠে, পাতার মতো আশা বহন করে।
আকাশ হামিদুজ্জামানকে স্মরণ করুক, বাতাস তার নাম উচ্চারণ করুক-
তার প্রতিটি বনকপোত এখনো স্বাধীনতার গান গায়।
এখন নীরবতা তার শিল্পের পাশে দাঁড়িয়ে আছে, কোনো হাতুড়ি আঘাত করে না, কোনো মাটি আকার নেয় না, তবে আশা যেখানে থাকে সেখানে ডানা এখনো ওঠে।
যতিচিহ্নহীন ভালোবাসা
সোহরাব পাশা
দুপুরে রোদ্দুর ঝরে সন্ধ্যেবেলা ছোঁয় মেঘমালা, কাশফুল স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নার ভিতর
রাত্রি ডাকে নৈঃসঙ্গ্যের পোড়া ক্লান্ত বাঁশি- প্রিয় নেই ঘরে
নিদ্রা পোড়ে,স্বপ্ন পোড়ে
পৃথিবী কি আজ খুব বিরক্তিকর!
ওড়াউড়ি শব্দে খালি পায়
কে যেন তাহার ছবি পড়ে নিবিড় নিঃশ্বাসে
আবছায়া কুয়াশায় মৃতপ্রায়
যতিচিহ্নহীন ভালোবাসা দীর্ঘশ্বাসে- ওড়ে পড়শির জানালায়
না তো ডাকে না কেউ তাহারে প্রিয়
নিভৃতির ইশারায়।
নতুন পাতার পঙ্ক্তিরা ঝরে পড়ে
ইতিহাস ভাষা পায় রৌদ্রের অক্ষরে
মানুষ কী কেবল মৃত্যুর গল্প পড়ে
ভালবাসা নিরন্তর নিরুপায় অন্ধকারে?
একাকী কেউ দূর প্রান্তরে
নির্জন কুড়ায় যুগল ছায়ার স্মৃতি
হারানো সময়ের মুখর ঘ্রাণ
পথের ধুলোয়-ঘাসে
বিকেলের বিষণœ হলুদ আয়নায়,
সৌন্দর্যের শনাক্তকরণ নিপুণ পদ্ধতি নেই
দূরে কোথাও আলো পড়ে- স্বপ্ন ওড়ে- তার...
‘মানুষ শুধু একবার পায় তাহারে।’
নিধি
জাফর সাদেক
(মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধে নিহত- নিধি)
নিধি নদীটার ইচ্ছে ছিল সাগরে বিলীন হবে না
সাগর বুকে নিয়ে পরিণত হবে মহাসাগর
সূর্য ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে ছিল নিয়মে-অনিয়মে উচ্ছল ঢেউয়ে
ছোট্ট নিধি-ঝরনা পাহাড়ের উৎস থেকে নেমে
নদীর বিস্ময়ে এগিয়ে যাচ্ছিল মেঘের পায়ে
চলতে চলতে নিধির দুই-পাড় বৃষ্টি নাচাতো ময়ূর
ঝাল-মুড়িওয়াালার রঙিন ছাতায় দাঁড়িয়ে ভাবতো
সাগরের দোলনায় অন্য নদীতে মিলে
কেমন হবে তারাদের রাত
কিছু মেঘ মাঝপথে নিধিকে জড়িয়ে হলো- ঊর্ধ্বনাও
নিয়ে যেতে যেতে বললো- চল সাগর থেকে আকাশ বিশাল
আত্মচিৎকার-
মৃত্যুর আগে আর জন্মের পরে মানুষের মৌলিক অধিকার
নিধি-নদীদের অজ্ঞাত থেকে যায়
আগুন নদী
শাখাওয়াত তানভীর
অন্তঃপুরে আগুন নদী বয়ে চলে
জল নেই তবু বুকে তার ভীষণ ঢেউ
দুই তীরে- কেউ জ্বালায়, কেউ জ্বলে
পারাপারে- পুড়ে যায় অন্য কেউ
বন্ধুর গতি
ফারজানা ফেরদৌস
পায়ে পায়ে হেঁটে চলা নির্বাক ছায়াটি জানে
কতটা পরিবর্তিত হই আমি।
মানবিক প্রশ্নটি মগজের ভিতর এঁটেসেঁটে বসে
আছে বলে, স্বপ্ন তার শরীরের ক্ষত ছুঁয়ে দেখে।
গলির ভেতর জমে থাকে জল, চেপে ধরে প্যান্ট,
জুতো হৃদয়ে হুল ফোটায় মেঘের স্বপ্ন।
আর ডাস্টবিনে থাকা মাছের কাঁটায় দেহের
বিপাকে মত্ত মৃতভোজী।
বেঁচে থাকার কারণ তদন্তে মাঠে নেমেছে একটি
গভীর কালো রাত।
একনিষ্ঠ শ্বাস-প্রশ্বাসগুলো বিশেষ আইনের
আওতায় ছিটকে পড়বে ফুসফুস থেকে।
বৃষ্টি নিয়ে এসো
হাফিজা খানম মুন্নি
যদি আসতে চাও, বসন্তের বৃষ্টি নিয়ে এসো
বুনোফুলের গন্ধ গায়ে মেখে,
তোমার ছায়ায় বসবো ধানসিড়ির তীরে
মাথার ওপর উড়ে যাবে ধবল বক
কলমি ফুলের গন্ধে উদাস হবো
তোমার ভেতর;
চোখে চোখে বলো না হয় না-বলা কথা
নীরবতার প্রেমে পড়বো নতুন করে আবার,
যদি আসতে চাও, বসন্তের বৃষ্টি নিয়ে এসো
প্রতিশ্রুতি চাইবো না আর কোনোদিন
এবার শীতেই ঘরছাড়া হবো।
অবিরাম ঘনঘোরে
এলিজা খাতুন
তুমুল ধারায় ভেসে যায়
খড়কুটো, ফুল পাতা, নিত্য ধুলো ও ধোঁকা
ক্ষ্যাপা ঢেউ মোহনায় আছড়ে পড়া খবর আসতে না আসতেই;
ভিজে যায়- ভাঙা কার্নিশের ওপর কাকের আর্ত চিৎকারে
ঘাতকের উদ্দেশে বিশদ বিষোদগার
অন্ধকারে নষ্ট পথগামী আলুর শেষ আশ্রয়-
ফাঙ্গাসের জিভ- এমন প্রসঙ্গ যেভাবে অনায়াসে উঠে আসে
খবরের কাগজে, ঠিক সেভাবে বয়ে যায় সময়ের ফলমূল
দুঃখের আনাজপাতি আর অন্তর্গত পোড়া যাপন
বৃষ্টির মাস এলে মাটির কোলে আসে
অনির্বাদ আবাদের দিন আর এক স্তর পলি
তবু শস্যের মতো ফুলেদের ধস নামে চিরকাল
অতল অগ্নি, বাণ ও জোঁকের প্রবলতায়
অথচ মাঠভরা ঘাসের পরে প্রভুরা নেমে এসে বলে-
বিলম্ব-বৃষ্টিবিলাসে নিশ্চয়ই বর্ষার কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল
এই দৃশ্য আমি আঁকতে চাইনি
চরু হক
বুকের নিচে
পাঁজরের কারাগারে বন্দী
আমার ক্রন্দসী হৃৎপি-।
অশ্রু? নাকি রক্ত?
বোবাকান্না নাকি বিকট চিৎকারে কেঁপে ওঠা
পৃথিবীর প্রতিটি সমুদ্রতট আর বিশাল বিশাল অগ্নিউৎসারিত অট্টালিকা আমাকে জাঁপটে ধরে
অক্টোপাসের মতো।
আমি চিৎকার করতে পারিনা,
আমি আর কাঁদতে পারিনা
স্তব্ধ পড়ে থাকি সময়ের কার্নিশে
আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে থাকে
তোমাদের সাথে।
হৃৎপি- ফুটো হয়ে যায় অগ্নিশলাকার আঘাতে।
এই পৃথিবী এই স্বপ্নগাঁথা, এই ফুল ফোটা আর ঝরে যাওয়ার
মায়াবী খেলা যার উৎসারণ চলছে দিবারাত্রি বিনেপয়সায়
সব কিছুর ওপর ছুড়েছো যে বিষাক্ত অট্টহাসি
যে আগুন আগুন খেলায় পুড়েছো শহর,পুড়ছো বুক,
পুড়ছো শিশুর বেণী দোলানো হাসি
এই দৃশ্য ব্রহ্মা-ের ক্যানভাসে এঁকে আমি একা বসে থাকি
হাত বাড়িয়ে তোমার দিকে।
দৃষ্টি চিরে ফেলে দূর দিগন্ত
বিধ্বংসী রকেট পার হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে উড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে, বুঝি
শান্তির পায়রারা।
শ্রাবণ সন্ধ্যায় রক্তবৃষ্টি নামে পৃথিবী নামের এক গ্রহে।
শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫
আলেক মানুষ আলেকে রয়
কামালউদ্দিন নীলু
(ভাস্কর বন্ধু হামিদুজ্জামান খান স্মরণে)
আগুন ছাড়া ছায়ায়, যেখানে মুখগুলো ভেসে বেড়ায়, কিন্তু নাম থাকে না, আত্মা বিলীন হয়ে যায়- দীর্ঘায়িত, ফ্যাকাশে- নীরবতায় শোক ও কাদামাটিতে সেলাই করা।
তিনি পাথর খোদাই করেননি, বরং নীরবতা, যেখানে জোড়া লাগানো নিঃশ^াস থেকে ডানা উঠেছিল- ব্রোঞ্জের তৈরি একটি ঘুঘু, মধ্য-গতি, মাধ্যাকর্ষণ।
ইস্পাত হয়ে ওঠে তার ভাষা, স্বাধীনতা- স্মৃতিতে বসে থাকা একটি পাখি,একটি জাতির প্রতিধ্বনি।
তিনি নিস্তব্ধতায় বাতাসকে খোদাই করেছিলেন, কাঁপতে থাকা পাথর থেকে উড়ে যাওয়া- ছিন্নভিন্ন হাত দিয়ে, ব্রোঞ্জকে গান গাইতে শেখাতেন।
এমন বন্য আকাশের কথা যা আমরা কখনও জানি না।
তিনি স্লোগানে কথা বলেননি, যেখানে পালক ধাতুতে খোদাই করা হয়েছে ইতিহাসের নীরব চিৎকার।
তিনি সংগ্রামের আত্মাকে রূপ দিয়েছেন প্রতিটি উড়ন্ত উড়ানে।
আজ, সরঞ্জামগুলি শান্ত, চুল্লিটি শোকে ঠা-া- কিন্তু তার বনকপোতেরা
এখনো সন্ধ্যায় জেগে ওঠে, পাতার মতো আশা বহন করে।
আকাশ হামিদুজ্জামানকে স্মরণ করুক, বাতাস তার নাম উচ্চারণ করুক-
তার প্রতিটি বনকপোত এখনো স্বাধীনতার গান গায়।
এখন নীরবতা তার শিল্পের পাশে দাঁড়িয়ে আছে, কোনো হাতুড়ি আঘাত করে না, কোনো মাটি আকার নেয় না, তবে আশা যেখানে থাকে সেখানে ডানা এখনো ওঠে।
যতিচিহ্নহীন ভালোবাসা
সোহরাব পাশা
দুপুরে রোদ্দুর ঝরে সন্ধ্যেবেলা ছোঁয় মেঘমালা, কাশফুল স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নার ভিতর
রাত্রি ডাকে নৈঃসঙ্গ্যের পোড়া ক্লান্ত বাঁশি- প্রিয় নেই ঘরে
নিদ্রা পোড়ে,স্বপ্ন পোড়ে
পৃথিবী কি আজ খুব বিরক্তিকর!
ওড়াউড়ি শব্দে খালি পায়
কে যেন তাহার ছবি পড়ে নিবিড় নিঃশ্বাসে
আবছায়া কুয়াশায় মৃতপ্রায়
যতিচিহ্নহীন ভালোবাসা দীর্ঘশ্বাসে- ওড়ে পড়শির জানালায়
না তো ডাকে না কেউ তাহারে প্রিয়
নিভৃতির ইশারায়।
নতুন পাতার পঙ্ক্তিরা ঝরে পড়ে
ইতিহাস ভাষা পায় রৌদ্রের অক্ষরে
মানুষ কী কেবল মৃত্যুর গল্প পড়ে
ভালবাসা নিরন্তর নিরুপায় অন্ধকারে?
একাকী কেউ দূর প্রান্তরে
নির্জন কুড়ায় যুগল ছায়ার স্মৃতি
হারানো সময়ের মুখর ঘ্রাণ
পথের ধুলোয়-ঘাসে
বিকেলের বিষণœ হলুদ আয়নায়,
সৌন্দর্যের শনাক্তকরণ নিপুণ পদ্ধতি নেই
দূরে কোথাও আলো পড়ে- স্বপ্ন ওড়ে- তার...
‘মানুষ শুধু একবার পায় তাহারে।’
নিধি
জাফর সাদেক
(মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধে নিহত- নিধি)
নিধি নদীটার ইচ্ছে ছিল সাগরে বিলীন হবে না
সাগর বুকে নিয়ে পরিণত হবে মহাসাগর
সূর্য ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে ছিল নিয়মে-অনিয়মে উচ্ছল ঢেউয়ে
ছোট্ট নিধি-ঝরনা পাহাড়ের উৎস থেকে নেমে
নদীর বিস্ময়ে এগিয়ে যাচ্ছিল মেঘের পায়ে
চলতে চলতে নিধির দুই-পাড় বৃষ্টি নাচাতো ময়ূর
ঝাল-মুড়িওয়াালার রঙিন ছাতায় দাঁড়িয়ে ভাবতো
সাগরের দোলনায় অন্য নদীতে মিলে
কেমন হবে তারাদের রাত
কিছু মেঘ মাঝপথে নিধিকে জড়িয়ে হলো- ঊর্ধ্বনাও
নিয়ে যেতে যেতে বললো- চল সাগর থেকে আকাশ বিশাল
আত্মচিৎকার-
মৃত্যুর আগে আর জন্মের পরে মানুষের মৌলিক অধিকার
নিধি-নদীদের অজ্ঞাত থেকে যায়
আগুন নদী
শাখাওয়াত তানভীর
অন্তঃপুরে আগুন নদী বয়ে চলে
জল নেই তবু বুকে তার ভীষণ ঢেউ
দুই তীরে- কেউ জ্বালায়, কেউ জ্বলে
পারাপারে- পুড়ে যায় অন্য কেউ
বন্ধুর গতি
ফারজানা ফেরদৌস
পায়ে পায়ে হেঁটে চলা নির্বাক ছায়াটি জানে
কতটা পরিবর্তিত হই আমি।
মানবিক প্রশ্নটি মগজের ভিতর এঁটেসেঁটে বসে
আছে বলে, স্বপ্ন তার শরীরের ক্ষত ছুঁয়ে দেখে।
গলির ভেতর জমে থাকে জল, চেপে ধরে প্যান্ট,
জুতো হৃদয়ে হুল ফোটায় মেঘের স্বপ্ন।
আর ডাস্টবিনে থাকা মাছের কাঁটায় দেহের
বিপাকে মত্ত মৃতভোজী।
বেঁচে থাকার কারণ তদন্তে মাঠে নেমেছে একটি
গভীর কালো রাত।
একনিষ্ঠ শ্বাস-প্রশ্বাসগুলো বিশেষ আইনের
আওতায় ছিটকে পড়বে ফুসফুস থেকে।
বৃষ্টি নিয়ে এসো
হাফিজা খানম মুন্নি
যদি আসতে চাও, বসন্তের বৃষ্টি নিয়ে এসো
বুনোফুলের গন্ধ গায়ে মেখে,
তোমার ছায়ায় বসবো ধানসিড়ির তীরে
মাথার ওপর উড়ে যাবে ধবল বক
কলমি ফুলের গন্ধে উদাস হবো
তোমার ভেতর;
চোখে চোখে বলো না হয় না-বলা কথা
নীরবতার প্রেমে পড়বো নতুন করে আবার,
যদি আসতে চাও, বসন্তের বৃষ্টি নিয়ে এসো
প্রতিশ্রুতি চাইবো না আর কোনোদিন
এবার শীতেই ঘরছাড়া হবো।
অবিরাম ঘনঘোরে
এলিজা খাতুন
তুমুল ধারায় ভেসে যায়
খড়কুটো, ফুল পাতা, নিত্য ধুলো ও ধোঁকা
ক্ষ্যাপা ঢেউ মোহনায় আছড়ে পড়া খবর আসতে না আসতেই;
ভিজে যায়- ভাঙা কার্নিশের ওপর কাকের আর্ত চিৎকারে
ঘাতকের উদ্দেশে বিশদ বিষোদগার
অন্ধকারে নষ্ট পথগামী আলুর শেষ আশ্রয়-
ফাঙ্গাসের জিভ- এমন প্রসঙ্গ যেভাবে অনায়াসে উঠে আসে
খবরের কাগজে, ঠিক সেভাবে বয়ে যায় সময়ের ফলমূল
দুঃখের আনাজপাতি আর অন্তর্গত পোড়া যাপন
বৃষ্টির মাস এলে মাটির কোলে আসে
অনির্বাদ আবাদের দিন আর এক স্তর পলি
তবু শস্যের মতো ফুলেদের ধস নামে চিরকাল
অতল অগ্নি, বাণ ও জোঁকের প্রবলতায়
অথচ মাঠভরা ঘাসের পরে প্রভুরা নেমে এসে বলে-
বিলম্ব-বৃষ্টিবিলাসে নিশ্চয়ই বর্ষার কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল
এই দৃশ্য আমি আঁকতে চাইনি
চরু হক
বুকের নিচে
পাঁজরের কারাগারে বন্দী
আমার ক্রন্দসী হৃৎপি-।
অশ্রু? নাকি রক্ত?
বোবাকান্না নাকি বিকট চিৎকারে কেঁপে ওঠা
পৃথিবীর প্রতিটি সমুদ্রতট আর বিশাল বিশাল অগ্নিউৎসারিত অট্টালিকা আমাকে জাঁপটে ধরে
অক্টোপাসের মতো।
আমি চিৎকার করতে পারিনা,
আমি আর কাঁদতে পারিনা
স্তব্ধ পড়ে থাকি সময়ের কার্নিশে
আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে থাকে
তোমাদের সাথে।
হৃৎপি- ফুটো হয়ে যায় অগ্নিশলাকার আঘাতে।
এই পৃথিবী এই স্বপ্নগাঁথা, এই ফুল ফোটা আর ঝরে যাওয়ার
মায়াবী খেলা যার উৎসারণ চলছে দিবারাত্রি বিনেপয়সায়
সব কিছুর ওপর ছুড়েছো যে বিষাক্ত অট্টহাসি
যে আগুন আগুন খেলায় পুড়েছো শহর,পুড়ছো বুক,
পুড়ছো শিশুর বেণী দোলানো হাসি
এই দৃশ্য ব্রহ্মা-ের ক্যানভাসে এঁকে আমি একা বসে থাকি
হাত বাড়িয়ে তোমার দিকে।
দৃষ্টি চিরে ফেলে দূর দিগন্ত
বিধ্বংসী রকেট পার হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে উড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে, বুঝি
শান্তির পায়রারা।
শ্রাবণ সন্ধ্যায় রক্তবৃষ্টি নামে পৃথিবী নামের এক গ্রহে।