alt

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫

কল্পনা
হাইকেল হাশমী
রাতের শেষ প্রহরে,

তোমারই কথপোকথন ভেসে আসে-

ঠিক যেমন গহন আঁধারে

ঝিকিমিকি জোনাকি উড়ে বেড়ায়।

কল্পনার আকাশ থেকে

আমি সংগ্রহ করতে চাই তোমার চিন্তার নক্ষত্র,

মুছে দিতে চাই তোমার দর্শনের তীব্র আকুলতা,

জ্বেলে দিতে চাই আশার দীপশিখা।

যখন মেঘভাঙা বৃষ্টি

ঝমঝমিয়ে নামে আমার ছাদের উপর,

সেই অঝোর বৃষ্টি থেকে

চুরি করে নিয়ে আসি কিছু জলের বিন্দু

যা আমাকে মনে করিয়ে দেয়-

তোমার ভেজা ঠোঁটের ছোঁয়া।

যে কমলটি ফুটেছে

নির্জন পুকুরের শান্ত জলে-

তোমার চুলে গুঁজে দিতে চাই সেই ফুল, প্রিয়তমা,

নিয়ে আসবো ডুব দিই গভীর জল থেকে

কোনো এক রোদে পুড়তে থাকা দুপুরে।

লুসাই পাহাড়ের চূড়ায় নৃত্যরত কিরণ

তোমার সিঁথি রাঙাতে নিয়ে আসবো একদিন,

আরও নিয়ে আসবো ঊষার লাল রঙ

কোনো এক জাদুময় প্রভাতে হে প্রিয়তমা।

চোখবাঁধা লোক ও শকটের গল্প
শফিক ইমতিয়াজ
লোকটির চোখ বাঁধা

তথাপি শহরে ব্যস্ত সরণিতে নিরুদ্বিগ্ন চলাফেরা

প্রথম প্রথম ওকে সড়কপ্রহরী আটকে দেয়, সে থামেনি।

হয়তো সে বাজিকর, এরকম ভেবে পথচারী তালি দেয়

তীব্র কৌতূহলে পিছে হাঁটে কেউ।

পত্রিকা ক’বার ওকে হেডলাইন করে সংবাদ ছেপেছে

রহস্য ম্যাগাজিনেও হয়েছে কভারস্টোরি

যেহেতু চোখবাঁধা, সে এসবের কিছুই পড়ে দেখেনি।

নগরবাসীর সাথে ওর মেলামেশা কম

মাঝেমধ্যে পুরানা বন্ধুবান্ধব নিয়ে রেস্তোরাঁয় ঢোকে

কোনো নিভৃত বাড়ির ছাদে

উপভোগ করে ধ্রুপদী ও গজলের ঘরোয়া বৈঠক।

একদিন শীতের সন্ধ্যায়

সড়কদ্বীপে দাঁড়িয়ে লোকটি চিৎকার করে বলে-

নগরবাসী, তাকিয়ে দ্যাখো

লোমশ ও আদিগন্ত এক রেলগাড়ি ওই শহর পেরোয়!

সবাই হোহ্ হো হাসে- কোথা সে অদ্ভুত রেল?

গাঢ় রাত, অচেনা হিমগভীর আঁতকাঁপা শব্দ!

ব্রডগেজ লাইনের পার্শ্ববর্তী বসতীরা ভীতস্বরে বলে-

তারা ছুটন্ত এক অদ্ভুত শকট দেখেছে

জানা গেলো, শহরের সব কম্পুটার হ্যাঙ!

লোকটির মুখে এক চ--হাত সজোরে চেপে বসার আগে

নগরবাসীকে সে সতর্ক করে বলছিল-

তোমাদের মিলিত মিছিল যদি ওর চে দীর্ঘ না হয়

তবে ওই লোমশ শকট...

ইটের ভাটি
চয়ন শায়েরী
আগুনে পুড়তে হয়- ¯্রষ্টার প্রেমের আগুনের আঁচে বেহুঁশ হয়েছিল মুছা নবী;

আগুনের ভয় পেলে স্বর্ণ আকার পাবে না- স্যাকরার হাতে;

তুমি কি হাপর দেখো নি কখনো?- লোহা লাল হয়েছে যখন, তখন পিটাতে হয়- বেধড়ক মার;

পতঙ্গ উড়বে- আগুনের কাছে যাবে- যাবেই- প্রেম এক আগুনের উপাখ্যান;

গল্পের ভেতরে গল্প লুকানো থাকে

- থাকে থরেবিথরে সাজানো,

শুকনো মাটির গল্প শোনো- ইটের ভাটিতে

না পুড়লে মাটি এত শক্ত হতো কি কখনো?

তাই

নিজেকে পোড়াই;

প্রেমের আগুনে ঝাঁপ দিতে হয়- আগুনের আঁচে পুড়েছে পতঙ্গ- বেহুঁশ হয়েছে মুছা আগুন দেখেই;

আমাকে পুড়তে নিষেধ করো না- ভাটির আগুনে মাটি পোড়ে নাই- ইটের কাহিনি শুরু হয়েছিল শুধু।

ঘুরেফিরে আমরা তারাই
শ্যামল নাথ
ঘুরেফিরে আমরা তারাই,

আমাকে যা খুশি শুনিয়ে যায় বুলেট কিবা পাথর,

বেয়নেট কিবা অহংকারী স্লোগান;

জানো, আমরা তারাই।।

ঘুরেফিরে আমরা তারাই,

ভাঙনের শব্দ, পা-ুলিপির সমস্ত শব্দমালা

আনন্দহীন আত্মকথন, আমরা তারাই।।

ঘুরেফিরে আমরা তারাই,

স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা, স্বপ্ন রাতি-দিন,

প্রতিহিংসা, যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, অদৃশ্য আত্মসমর্পণ।।

জানো, আমরা তারাই

আবছা ছায়ার নীচ, দূরের গ্রামে সূর্য ডোবা শেষ,

সকল রক্ত একই রকম, অপর পিঠে পায়রা ডেকে বল;

কিন্তু আমরা মানুষ দ্বিমত হয়ে হারিয়ে ফেলি চোখের কোণের জল।।

ঘুরেফিরে আমরা তারাই,

মানুষ হওয়ার শপথ নিয়ে

রক্তজবায় হলুদ মেখে মৃত্যু নিয়ে আসি।।

ঘুরেফিরে আমরা তারাই,

মৃত্যু মৃত্যু খেলা,

প্রাণের দাবি, চোখের শপথ বারুদ ভরা বেলা।

স্ফুরণ
পারভেজ আহসান
মাটি ফুঁড়ে উঁকি দেয় ওলকচুর কা--

বাঁশের কেরুল-

শ^াসমূল

মাটি ও পাথরশিলা ভেদ করে বেরিয়ে আসে

সর্পিল আগুন

জিগার গাছের ডালে কান্না হাসে

মানুষের চোখ-মুখ ও আঙুলে ফোটে

গোপন অক্ষর

শরণার্থী
সঞ্জয় দেওয়ান
ঝরাপাতার বেদনা বৃক্ষ কি পুষে রাখে

স্মৃতির শিকড়ে?

উদ্বাস্তু হাওয়া জানে, ছিন্ন পাতার বেদন;

শরণার্থী পল্লবের আর্তনাদ।

যারা দেশত্যাগে বাধ্য হয় কিংবা দেশান্তরি হয়;

দেশ কি মনে রাখে ছিন্নমূল মানুষের কথা?

ভিনদেশের মাটিতে যে দয়ার্দ্র বৃষ্টি পড়ে,

সে বৃষ্টিতে লেগে থাকে স্বদেশের সোঁদা ঘ্রাণ;

বিরহী বৃক্ষের ক্রন্দন!

ইচ্ছা
চঞ্চল শাহরিয়ার
এই রাত দীর্ঘ হোক। ভালোবাসা অভিমান ভুলে পাশে এসে বসুক খানিক। আদরে ভরিয়ে রাখুক আমার ইচ্ছার ভুবন। ভালোবাসা ভালো নয়। আমি তবু ভালোবেসে নিঃস্ব হই। শ্যামল বরণ মেয়ে এইসব বোঝে না, বোঝে না।

এই রাত দীর্ঘ হোক। গল্প, কবিতায় ফিরতে থাকুক চকোলেট চকোলেট ঘ্রাণ।

ছায়া
অদ্বৈত মারুত
ঘুম ভাঙার পর চোখের জানালা খুলে দেখি

রঙহীন রোদ পাখির ছায়া হয়ে শুয়ে আছে।

ভাবি, এ বুঝি অসুখ অথবা স্বপ্নের ভগ্নাংশ

জীবনের অলিগলি ঘুরে ফিরে আসে একা!

মা-মুখ বেমালুম ভুলে বসে আছি কয়েক কাল

আয়নায় নিজেকে মনে হয় নিজেরই ঘাতক।

দরজার ওপারে যে বাড়ি, গ্রাম অথবা শহর

আমাকে আমার থেকে নিয়ে যাচ্ছে দূরে।

কদম সুন্দর
রহমান মুজিব
যে পথে ভোর হেঁটে যায় সন্ধ্যার পথে

রাত পান করে ছায়ার সরাব, সে পথে উড়ছে-

তোমার চোখের মেঘপাখি

কালীদেবীর তৃষিত জিহবায় যে খরাকাল

তাকে সিক্ত কর বৃষ্টির ধারাভাষ্য; চিরকাল-

বৃষ্টিরা নারীর মতো সুন্দর আর অশ্রুর মতো পবিত্র

হোক না চোখের পাতা যুক্ত কিংবা বিযুক্ত

তবু আজ মেঘের পিঠে সওয়ার হয়েছে বৃষ্টির ঘুম

ঝরছে রেইনট্রি পাতার ম্যারাথন বিষাদ

আষাঢ় ক্যালেন্ডারে এবার চেরাপুঞ্জির ফিনিক্স

তার বর্ষা মঙ্গল অশ্রুতে পবিত্র হোক সচিত্র স্বদেশ

দেহ-মনের কদর্য কার্বন ধুয়ে ফুটুক কদম সুন্দর

কবিতা ও ক্যান্সার
বুলু রানী ঘোষ
লেখালেখির খুব খায়েশ ছিল,

ইচ্ছে ছিল কবিতা লিখবার!

কবিতা নয়

হিসেব ছিল প্রিমিয়াম,ইনস্টলমেন্ট,

দলিল দস্তাবেজ আর সংসার।

কবিরা নাকি ভুলোমনা হয়,

পাগলাটে আর যাযাবর!

তো,

আমার সে অর্থে লেখালেখিটা

তেমন হয়ে উঠল না আর।

ঘুমের ঢেউয়ে আনাড়ি কত

লেখা ভেসে গেছে বহুবার।

এখন

ট্রাংকুলাইজার বড়শিতে গেঁথে

অপেক্ষা একমুঠো ঘুম আসবার।

ইদানীং বেশ ভুলে যাই সব

দায়দায়িত্ব তারিখ ক্যালেন্ডার,

এমনকি

প্রিয় জন্মদিন, শেষ দেখা হলো কবে

সোম নাকি বিষ্যুদবার!

সেই তো ভুলোমন হলো

ঘরছাড়া পাগলাটে যাযাবর,

শুধু

কবিতা অধরা,লড়াইটা অসম

প্রতিপক্ষ এখন দুরন্ত, ‘ক্যান্সার’!!

ছবি

ভাঙা ছাদ

ছবি

চন্দ্রাবতী : মধ্যযুগের প্রথম মহিলা কবি

ছবি

আধুনিক-উত্তর সময়ের নির্মিতি

ছবি

বংশধারা

ছবি

আবুবকর সিদ্দিকের ছোট গল্পে রাজনীতি

ছবি

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর উপন্যাসের তুলনামূলক বিচার

ছবি

সমকালীন কাব্যভাষায় কবি শহীদ কাদরী

ছবি

চরফুলের কন্যা

ছবি

নজরুলের গল্প ও উপন্যাস

সাময়িকী কবিতা

ছবি

প্রলোভন এবং ধৈর্যের গল্প

ছবি

প্রসঙ্গ মনোবৈজ্ঞানিক উপন্যাস

ছবি

প্রেম, অস্তিত্ববাদ ও বেদনার দোলাচল

ছবি

‘কবিতার যুবরাজ’ কবি আবুল হাসান

ছবি

মানুষ, প্রকৃতি ও সুলতানের স্বকীয় অভিযাত্রা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

শালুক-এর শঙ্খ ঘোষ সংখ্যা বাংলাদেশের সশ্রদ্ধ মূল্যায়ন

ছবি

‘প্রিজন ডিলাক্স ট্যুর’: কুহক ও বিভ্রমের গল্প

ছবি

কল্পগল্প

ছবি

আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘জ্যোৎস্না-রৌদ্রের চিকিৎসা’

ছবি

প্রসঙ্গ মনোবৈজ্ঞানিক উপন্যাস

ছবি

আনন্দদায়ক ও অপ্রত্যাশিত নোবেল পুরস্কার

ছবি

জীবনবোধ ও শিল্পকর্ম

ছবি

নজরুলের গল্প ও উপন্যাস

ছবি

কৃষ্ণাঙ্গ দাস থেকে হয়ে উঠেছিলেন খ্যাতিমান কবি

শ্রাবণ বর্ষণে

ছবি

শতবর্ষ পরে ‘মিসেস ডালোওয়ে’

ছবি

স্কাল্পচারের জগতটা আস্তে আস্তে ব্যাপকতা পাচ্ছে

ছবি

চব্বিশের অভ্যুত্থান নিয়ে গ্রন্থ

ছবি

ভিন্নচোখ: নুতন কবিতা সংখ্যা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লোরকা: মৃত্যুর রূপক এবং আন্দালুসিয়ার লোকজ বিশ্বাস

ছবি

কবিতার শিল্পনিষ্ঠ রূপকার ফারুক মাহমুদ

ছবি

কাফকাকে পড়া কাফকাকে পড়ানো

ছবি

কবি নওশাদ নূরী

ছবি

আঁধার পেরিয়ে আলোর উদ্ভাষণ

tab

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫

কল্পনা
হাইকেল হাশমী
রাতের শেষ প্রহরে,

তোমারই কথপোকথন ভেসে আসে-

ঠিক যেমন গহন আঁধারে

ঝিকিমিকি জোনাকি উড়ে বেড়ায়।

কল্পনার আকাশ থেকে

আমি সংগ্রহ করতে চাই তোমার চিন্তার নক্ষত্র,

মুছে দিতে চাই তোমার দর্শনের তীব্র আকুলতা,

জ্বেলে দিতে চাই আশার দীপশিখা।

যখন মেঘভাঙা বৃষ্টি

ঝমঝমিয়ে নামে আমার ছাদের উপর,

সেই অঝোর বৃষ্টি থেকে

চুরি করে নিয়ে আসি কিছু জলের বিন্দু

যা আমাকে মনে করিয়ে দেয়-

তোমার ভেজা ঠোঁটের ছোঁয়া।

যে কমলটি ফুটেছে

নির্জন পুকুরের শান্ত জলে-

তোমার চুলে গুঁজে দিতে চাই সেই ফুল, প্রিয়তমা,

নিয়ে আসবো ডুব দিই গভীর জল থেকে

কোনো এক রোদে পুড়তে থাকা দুপুরে।

লুসাই পাহাড়ের চূড়ায় নৃত্যরত কিরণ

তোমার সিঁথি রাঙাতে নিয়ে আসবো একদিন,

আরও নিয়ে আসবো ঊষার লাল রঙ

কোনো এক জাদুময় প্রভাতে হে প্রিয়তমা।

চোখবাঁধা লোক ও শকটের গল্প
শফিক ইমতিয়াজ
লোকটির চোখ বাঁধা

তথাপি শহরে ব্যস্ত সরণিতে নিরুদ্বিগ্ন চলাফেরা

প্রথম প্রথম ওকে সড়কপ্রহরী আটকে দেয়, সে থামেনি।

হয়তো সে বাজিকর, এরকম ভেবে পথচারী তালি দেয়

তীব্র কৌতূহলে পিছে হাঁটে কেউ।

পত্রিকা ক’বার ওকে হেডলাইন করে সংবাদ ছেপেছে

রহস্য ম্যাগাজিনেও হয়েছে কভারস্টোরি

যেহেতু চোখবাঁধা, সে এসবের কিছুই পড়ে দেখেনি।

নগরবাসীর সাথে ওর মেলামেশা কম

মাঝেমধ্যে পুরানা বন্ধুবান্ধব নিয়ে রেস্তোরাঁয় ঢোকে

কোনো নিভৃত বাড়ির ছাদে

উপভোগ করে ধ্রুপদী ও গজলের ঘরোয়া বৈঠক।

একদিন শীতের সন্ধ্যায়

সড়কদ্বীপে দাঁড়িয়ে লোকটি চিৎকার করে বলে-

নগরবাসী, তাকিয়ে দ্যাখো

লোমশ ও আদিগন্ত এক রেলগাড়ি ওই শহর পেরোয়!

সবাই হোহ্ হো হাসে- কোথা সে অদ্ভুত রেল?

গাঢ় রাত, অচেনা হিমগভীর আঁতকাঁপা শব্দ!

ব্রডগেজ লাইনের পার্শ্ববর্তী বসতীরা ভীতস্বরে বলে-

তারা ছুটন্ত এক অদ্ভুত শকট দেখেছে

জানা গেলো, শহরের সব কম্পুটার হ্যাঙ!

লোকটির মুখে এক চ--হাত সজোরে চেপে বসার আগে

নগরবাসীকে সে সতর্ক করে বলছিল-

তোমাদের মিলিত মিছিল যদি ওর চে দীর্ঘ না হয়

তবে ওই লোমশ শকট...

ইটের ভাটি
চয়ন শায়েরী
আগুনে পুড়তে হয়- ¯্রষ্টার প্রেমের আগুনের আঁচে বেহুঁশ হয়েছিল মুছা নবী;

আগুনের ভয় পেলে স্বর্ণ আকার পাবে না- স্যাকরার হাতে;

তুমি কি হাপর দেখো নি কখনো?- লোহা লাল হয়েছে যখন, তখন পিটাতে হয়- বেধড়ক মার;

পতঙ্গ উড়বে- আগুনের কাছে যাবে- যাবেই- প্রেম এক আগুনের উপাখ্যান;

গল্পের ভেতরে গল্প লুকানো থাকে

- থাকে থরেবিথরে সাজানো,

শুকনো মাটির গল্প শোনো- ইটের ভাটিতে

না পুড়লে মাটি এত শক্ত হতো কি কখনো?

তাই

নিজেকে পোড়াই;

প্রেমের আগুনে ঝাঁপ দিতে হয়- আগুনের আঁচে পুড়েছে পতঙ্গ- বেহুঁশ হয়েছে মুছা আগুন দেখেই;

আমাকে পুড়তে নিষেধ করো না- ভাটির আগুনে মাটি পোড়ে নাই- ইটের কাহিনি শুরু হয়েছিল শুধু।

ঘুরেফিরে আমরা তারাই
শ্যামল নাথ
ঘুরেফিরে আমরা তারাই,

আমাকে যা খুশি শুনিয়ে যায় বুলেট কিবা পাথর,

বেয়নেট কিবা অহংকারী স্লোগান;

জানো, আমরা তারাই।।

ঘুরেফিরে আমরা তারাই,

ভাঙনের শব্দ, পা-ুলিপির সমস্ত শব্দমালা

আনন্দহীন আত্মকথন, আমরা তারাই।।

ঘুরেফিরে আমরা তারাই,

স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা, স্বপ্ন রাতি-দিন,

প্রতিহিংসা, যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, অদৃশ্য আত্মসমর্পণ।।

জানো, আমরা তারাই

আবছা ছায়ার নীচ, দূরের গ্রামে সূর্য ডোবা শেষ,

সকল রক্ত একই রকম, অপর পিঠে পায়রা ডেকে বল;

কিন্তু আমরা মানুষ দ্বিমত হয়ে হারিয়ে ফেলি চোখের কোণের জল।।

ঘুরেফিরে আমরা তারাই,

মানুষ হওয়ার শপথ নিয়ে

রক্তজবায় হলুদ মেখে মৃত্যু নিয়ে আসি।।

ঘুরেফিরে আমরা তারাই,

মৃত্যু মৃত্যু খেলা,

প্রাণের দাবি, চোখের শপথ বারুদ ভরা বেলা।

স্ফুরণ
পারভেজ আহসান
মাটি ফুঁড়ে উঁকি দেয় ওলকচুর কা--

বাঁশের কেরুল-

শ^াসমূল

মাটি ও পাথরশিলা ভেদ করে বেরিয়ে আসে

সর্পিল আগুন

জিগার গাছের ডালে কান্না হাসে

মানুষের চোখ-মুখ ও আঙুলে ফোটে

গোপন অক্ষর

শরণার্থী
সঞ্জয় দেওয়ান
ঝরাপাতার বেদনা বৃক্ষ কি পুষে রাখে

স্মৃতির শিকড়ে?

উদ্বাস্তু হাওয়া জানে, ছিন্ন পাতার বেদন;

শরণার্থী পল্লবের আর্তনাদ।

যারা দেশত্যাগে বাধ্য হয় কিংবা দেশান্তরি হয়;

দেশ কি মনে রাখে ছিন্নমূল মানুষের কথা?

ভিনদেশের মাটিতে যে দয়ার্দ্র বৃষ্টি পড়ে,

সে বৃষ্টিতে লেগে থাকে স্বদেশের সোঁদা ঘ্রাণ;

বিরহী বৃক্ষের ক্রন্দন!

ইচ্ছা
চঞ্চল শাহরিয়ার
এই রাত দীর্ঘ হোক। ভালোবাসা অভিমান ভুলে পাশে এসে বসুক খানিক। আদরে ভরিয়ে রাখুক আমার ইচ্ছার ভুবন। ভালোবাসা ভালো নয়। আমি তবু ভালোবেসে নিঃস্ব হই। শ্যামল বরণ মেয়ে এইসব বোঝে না, বোঝে না।

এই রাত দীর্ঘ হোক। গল্প, কবিতায় ফিরতে থাকুক চকোলেট চকোলেট ঘ্রাণ।

ছায়া
অদ্বৈত মারুত
ঘুম ভাঙার পর চোখের জানালা খুলে দেখি

রঙহীন রোদ পাখির ছায়া হয়ে শুয়ে আছে।

ভাবি, এ বুঝি অসুখ অথবা স্বপ্নের ভগ্নাংশ

জীবনের অলিগলি ঘুরে ফিরে আসে একা!

মা-মুখ বেমালুম ভুলে বসে আছি কয়েক কাল

আয়নায় নিজেকে মনে হয় নিজেরই ঘাতক।

দরজার ওপারে যে বাড়ি, গ্রাম অথবা শহর

আমাকে আমার থেকে নিয়ে যাচ্ছে দূরে।

কদম সুন্দর
রহমান মুজিব
যে পথে ভোর হেঁটে যায় সন্ধ্যার পথে

রাত পান করে ছায়ার সরাব, সে পথে উড়ছে-

তোমার চোখের মেঘপাখি

কালীদেবীর তৃষিত জিহবায় যে খরাকাল

তাকে সিক্ত কর বৃষ্টির ধারাভাষ্য; চিরকাল-

বৃষ্টিরা নারীর মতো সুন্দর আর অশ্রুর মতো পবিত্র

হোক না চোখের পাতা যুক্ত কিংবা বিযুক্ত

তবু আজ মেঘের পিঠে সওয়ার হয়েছে বৃষ্টির ঘুম

ঝরছে রেইনট্রি পাতার ম্যারাথন বিষাদ

আষাঢ় ক্যালেন্ডারে এবার চেরাপুঞ্জির ফিনিক্স

তার বর্ষা মঙ্গল অশ্রুতে পবিত্র হোক সচিত্র স্বদেশ

দেহ-মনের কদর্য কার্বন ধুয়ে ফুটুক কদম সুন্দর

কবিতা ও ক্যান্সার
বুলু রানী ঘোষ
লেখালেখির খুব খায়েশ ছিল,

ইচ্ছে ছিল কবিতা লিখবার!

কবিতা নয়

হিসেব ছিল প্রিমিয়াম,ইনস্টলমেন্ট,

দলিল দস্তাবেজ আর সংসার।

কবিরা নাকি ভুলোমনা হয়,

পাগলাটে আর যাযাবর!

তো,

আমার সে অর্থে লেখালেখিটা

তেমন হয়ে উঠল না আর।

ঘুমের ঢেউয়ে আনাড়ি কত

লেখা ভেসে গেছে বহুবার।

এখন

ট্রাংকুলাইজার বড়শিতে গেঁথে

অপেক্ষা একমুঠো ঘুম আসবার।

ইদানীং বেশ ভুলে যাই সব

দায়দায়িত্ব তারিখ ক্যালেন্ডার,

এমনকি

প্রিয় জন্মদিন, শেষ দেখা হলো কবে

সোম নাকি বিষ্যুদবার!

সেই তো ভুলোমন হলো

ঘরছাড়া পাগলাটে যাযাবর,

শুধু

কবিতা অধরা,লড়াইটা অসম

প্রতিপক্ষ এখন দুরন্ত, ‘ক্যান্সার’!!

back to top