alt

সারাদেশ

ডেঙ্গু : বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা, পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা

সাদ্দাম খান : বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সারাদেশে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। বিশেষ করে রাজধানীর হাসপাতালগুলো রোগীর চাপ বাড়ছে। বেগ পেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। দেশে সর্বশেষ এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের নিয়ে চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৯ জনের মৃত্যু হলো। এ ছাড়া এডিস মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে ৫৩৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সেপ্টেম্বরের শেষে এবং সামনের মাসগুলোতে দেশে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি আরও খারাপের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার কারণে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা প্রজননের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশনের মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা না থাকায় মশা নিধন কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। নিয়মিতভাবে কাজ করছে না মশক নিধন কর্মীরা। অভিযান পরিচালনা কার্যক্রম থেমে গেছে।

এছাড়াও, লার্ভিসাইড স্প্রে এবং ফগিংসহ সিটি করপোরেশনের নিয়মিত মশাবিরোধী ব্যবস্থাগুলোও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে ডেঙ্গুর মৌসুম হওয়ায় রাজধানীসহ সারাদেশে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বিগত কয়েক বছরের পর্যালোচনায় দেখা গেছে- বর্ষার মূল মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করে। আর ডেঙ্গু শুধু এখন ঢাকা কেন্দ্রিক নয়, বরং সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সুতরাং ডেঙ্গু প্রতিরোধে কারিগরিভাবে সঠিক ও বাস্তবায়নযোগ্য একটি কর্মকৌশল দ্রুত প্রণয়ন করা জরুরি।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (৯ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল আটটা থেকে মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের হাসপাতালে। আর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং খুলনা বিভাগের হাসপাতালে একজন করে মোট তিনজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে সর্বোচ্চ ১২১ জন ভর্তি হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৩ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে (সিটি করপোরেশনের বাইরে)। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯০ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোয় ৭৮ জন, খুলনা বিভাগের হাসপাতালগুলোয় ৫৯, বরিশাল বিভাগের হাসপাতালগুলোয় ৩৭, রাজশাহী বিভাগের হাসপাতালগুলোয় ১৮, ময়মনসিংহ বিভাগের হাসপাতালগুলোয় ১৭ ও রংপুর বিভাগের হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ১ জন ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬ হাজার ৮১৯ জন। এ সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে ৫২ শতাংশ নারী ও পুরুষ ৪৮ শতাংশ।

জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে ৬১ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ ও নারী ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময় হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫ হাজার ৫৩ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫০৭ জন।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ঢাকার বাইরে থেকে আসা অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগীই জটিল শারীরিক সমস্যা নিয়ে আসছেন। অনেক রোগী এমন জটিল পর্যায়ে হাসপাতালে আসছেন, যখন আর চিকিৎসকদের কিছুই করার থাকে না। অনেকের অবস্থা জটিল হওয়ায় ভর্তি হচ্ছেন এবং ভর্তি হওয়া রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন না থাকায় তাদের ব্লাড প্রেসার রেকর্ড করা যায় না।

এ ব্যাপারে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাসিবুল ইসলাম বলেন, এ মাসের শুরু থেকে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। সামনে আরও বাড়তে পারে। তাই সবাইকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন থাকতে হবে।

চলতি মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ কেন বাড়ছে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাধারণত বর্ষা-পরবর্তী সময়, অর্থাৎ আগস্ট থেকে অক্টোবর ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ হয়ে থাকে। আমরা পরিষ্কার পরিছন্নতায় অবহেলা করছি। বিশেষ কোটা আন্দোলেনের পর থেকে সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন জায়গায় ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করছে না এবং ঠিকভাবে কাজ করছে না। ফলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুও সংখ্যা বাড়ছে।

ডা. হাসিবুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে প্রথমে অনেকেই বুঝতে পারে না। এটাই মূল সমস্যা। সেটি কম জ্বর কিংবা বেশি জ্বর হতে পারে। কিন্তু জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। কারণ দেরি করে হাসপাতালে আসলে চিকিৎসকদের জন্য সেবা দিতে কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় কিছুই করার থাকে না। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর প্রচ- জ্বর বা হাড়ভাঙা জ্বরসহ পেটে তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, প্রচ- দুর্বলতা, বমি অথবা মাড়ি ও নাক থেকে রক্ত আসতে দেখলে তাৎক্ষণিক নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু এমন এক রোগ যে মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ পর্যন্ত যে কোনো জায়গায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে ডেঙ্গু হলে কোনো ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

এ প্রসঙ্গে কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, আমাদের দেশে একসময় ধারণা করা হতো, বর্ষাকাল মানেই ডেঙ্গুর মৌসুম। কিন্তু এখন সেই ধারণা বদলে যাওয়ার সময় এসেছে। কারণ এখন শুধু বর্ষা নয়, শীত-গ্রীষ্মেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। এর কারণ হচ্ছে আমাদের অপরিকল্পিত নগরায়ণ, লোকবলের ঘাটতি ও জনসচেতনতার অভাবে উল্টো শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়েছে। ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে এডিস মশার ঘনত্ব আমরা লক্ষ করছি। কয়েকটি জেলায় কাজ করে আমরা এডিস ঘনত্ব গতবারের তুলনায় বেশি পেয়েছি। তাই আমাদের ফোরকাস্টিং মডেল (পূর্বাভাস) বলছে, সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ থাকবে। এমনকি ‘পিক সিজনও’ হতে পারে। বিশেষ করে ঢাকার আশ-পাশের জেলাসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল ও বরগুনাতে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে শুরু হয় ২০০০ সালে। ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৪৬ জন এ রোগে আক্রান্ত হন। এ সময় মারা যান ৮৫৩ জন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয় গত বছর। এ সময় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আর মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের।

ছবি

পূজায় অঞ্জলি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণ গেল ফুফু-ভাতিজার

ছবি

নারায়ণগঞ্জে চাঁদাবাজি ও দখল : ওসমানদের শুন্যস্থানে বিএনপির লোক

ছবি

পূজামণ্ডপে ইসলামী ভাবধারার সংগীত পরিবেশন, দুজন গ্রেপ্তার

ছবি

কুয়াকাটা ঘুরে ফেরার পথে দুর্ঘটনা : দুই পরিবারের শিশুসহ ৮ জনের মৃত্যু

ছবি

চারজনকে হত্যায় ১১ বছর পর আসামি হলেন সাবেক এমপি মমতাজ

সিলেটেভারতীয় চোরাই চিনিসহ আটক ৩

রাজশাহীতে হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরি, নানা-নানী আটক

বাগেরহাটের রামপালে পুলিশের অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিসহ ৪ সন্ত্রাসী আটক

ছবি

গবেষণা খাতকে আরো সমৃদ্ধ করার প্রত্যয় বাউবি উপাচার্যের

জামালপুরে ট্রাক চাপায় অটোচালকের মৃত্যু

ছবি

ফরিদপুরের ৩২ কিলোমিটার মহাসড়ক ভাঙ্গাচোরা, যাত্রীদের ভোগান্তি

সগির হোসেন লিয়নের বিচারপতি হওয়ায় জম্ম স্থান পাথরঘাটায় মিষ্টি বিতরণ

ছবি

হালুয়াঘাটে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব

ছবি

মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা : শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

মায়ানমার থেকে বাংলাদেশি মাছ ধরার ট্রলারে গুলি, নিহত ১

ছবি

বেরোবিতে চাকরি পেলেন আবু সাঈদের বোন

ছবি

পিরোজপুরে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে, চার শিশুসহ ৮ জন নিহত

ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নার্সদের কর্মবিরতি: প্রশাসনিক পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন

ছবি

ঝিকরগাছায় মন্দিরে আগুন দেয়ার চেষ্টা!

ছবি

রাতের আঁধারে নৌঘাট দিয়ে অনুপ্রবেশ করল ৩৭ রোহিঙ্গা

ছবি

সুনামগঞ্জে জামিন পেলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান

ছবি

তিন জেলায় বন্যায় প্রাণহানি বেড়ে ৮, পরিস্থিতির আরও অবনতি

ফেইসবুকে পোস্টের জেরে তাপসী তাবাসসুম উর্মির বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ

গাজীপুরে শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা মামলায় গ্রেফতার ১

ছবি

গাছের সঙ্গে ধাক্কায় কাভার্ডভ্যান চালক নিহত

ছবি

পৌর কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের দাবি

ছবি

উখিয়ায় ২ এনজিও কর্মীর মরদেহে উদ্ধার

ছবি

বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

ছবি

নেত্রকোনায় লক্ষাধিক মানুষের মানবেতর জীবন

সখীপুরে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর তালা

গাজীপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত ৪

ছবি

অস্ট্রেলিয়ায় গাড়িচাপায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ইসমাইল নিহত

ছবি

ভাসানচর থেকে পালানোর চেষ্টা: সন্দ্বীপে আটক তিন রোহিঙ্গা যুবক

ছবি

বরগুনায় যুবলীগ নেতাকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন

ছবি

খাগড়াছড়িতে শিক্ষককে হত্যার পর সহিংসতার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫

ছবি

সপ্তাহজুড়ে রাজশাহী বাদে সব বিভাগেই বৃষ্টির আভাস

tab

সারাদেশ

ডেঙ্গু : বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা, পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা

সাদ্দাম খান

বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সারাদেশে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। বিশেষ করে রাজধানীর হাসপাতালগুলো রোগীর চাপ বাড়ছে। বেগ পেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। দেশে সর্বশেষ এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের নিয়ে চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৯ জনের মৃত্যু হলো। এ ছাড়া এডিস মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে ৫৩৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সেপ্টেম্বরের শেষে এবং সামনের মাসগুলোতে দেশে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি আরও খারাপের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার কারণে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা প্রজননের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশনের মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা না থাকায় মশা নিধন কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। নিয়মিতভাবে কাজ করছে না মশক নিধন কর্মীরা। অভিযান পরিচালনা কার্যক্রম থেমে গেছে।

এছাড়াও, লার্ভিসাইড স্প্রে এবং ফগিংসহ সিটি করপোরেশনের নিয়মিত মশাবিরোধী ব্যবস্থাগুলোও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে ডেঙ্গুর মৌসুম হওয়ায় রাজধানীসহ সারাদেশে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বিগত কয়েক বছরের পর্যালোচনায় দেখা গেছে- বর্ষার মূল মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করে। আর ডেঙ্গু শুধু এখন ঢাকা কেন্দ্রিক নয়, বরং সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সুতরাং ডেঙ্গু প্রতিরোধে কারিগরিভাবে সঠিক ও বাস্তবায়নযোগ্য একটি কর্মকৌশল দ্রুত প্রণয়ন করা জরুরি।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (৯ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল আটটা থেকে মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের হাসপাতালে। আর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং খুলনা বিভাগের হাসপাতালে একজন করে মোট তিনজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে সর্বোচ্চ ১২১ জন ভর্তি হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৩ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে (সিটি করপোরেশনের বাইরে)। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯০ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোয় ৭৮ জন, খুলনা বিভাগের হাসপাতালগুলোয় ৫৯, বরিশাল বিভাগের হাসপাতালগুলোয় ৩৭, রাজশাহী বিভাগের হাসপাতালগুলোয় ১৮, ময়মনসিংহ বিভাগের হাসপাতালগুলোয় ১৭ ও রংপুর বিভাগের হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ১ জন ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬ হাজার ৮১৯ জন। এ সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে ৫২ শতাংশ নারী ও পুরুষ ৪৮ শতাংশ।

জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে ৬১ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ ও নারী ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময় হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫ হাজার ৫৩ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫০৭ জন।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ঢাকার বাইরে থেকে আসা অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগীই জটিল শারীরিক সমস্যা নিয়ে আসছেন। অনেক রোগী এমন জটিল পর্যায়ে হাসপাতালে আসছেন, যখন আর চিকিৎসকদের কিছুই করার থাকে না। অনেকের অবস্থা জটিল হওয়ায় ভর্তি হচ্ছেন এবং ভর্তি হওয়া রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন না থাকায় তাদের ব্লাড প্রেসার রেকর্ড করা যায় না।

এ ব্যাপারে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাসিবুল ইসলাম বলেন, এ মাসের শুরু থেকে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। সামনে আরও বাড়তে পারে। তাই সবাইকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন থাকতে হবে।

চলতি মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ কেন বাড়ছে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাধারণত বর্ষা-পরবর্তী সময়, অর্থাৎ আগস্ট থেকে অক্টোবর ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ হয়ে থাকে। আমরা পরিষ্কার পরিছন্নতায় অবহেলা করছি। বিশেষ কোটা আন্দোলেনের পর থেকে সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন জায়গায় ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করছে না এবং ঠিকভাবে কাজ করছে না। ফলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুও সংখ্যা বাড়ছে।

ডা. হাসিবুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে প্রথমে অনেকেই বুঝতে পারে না। এটাই মূল সমস্যা। সেটি কম জ্বর কিংবা বেশি জ্বর হতে পারে। কিন্তু জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। কারণ দেরি করে হাসপাতালে আসলে চিকিৎসকদের জন্য সেবা দিতে কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় কিছুই করার থাকে না। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর প্রচ- জ্বর বা হাড়ভাঙা জ্বরসহ পেটে তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, প্রচ- দুর্বলতা, বমি অথবা মাড়ি ও নাক থেকে রক্ত আসতে দেখলে তাৎক্ষণিক নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু এমন এক রোগ যে মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ পর্যন্ত যে কোনো জায়গায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে ডেঙ্গু হলে কোনো ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

এ প্রসঙ্গে কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, আমাদের দেশে একসময় ধারণা করা হতো, বর্ষাকাল মানেই ডেঙ্গুর মৌসুম। কিন্তু এখন সেই ধারণা বদলে যাওয়ার সময় এসেছে। কারণ এখন শুধু বর্ষা নয়, শীত-গ্রীষ্মেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। এর কারণ হচ্ছে আমাদের অপরিকল্পিত নগরায়ণ, লোকবলের ঘাটতি ও জনসচেতনতার অভাবে উল্টো শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়েছে। ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে এডিস মশার ঘনত্ব আমরা লক্ষ করছি। কয়েকটি জেলায় কাজ করে আমরা এডিস ঘনত্ব গতবারের তুলনায় বেশি পেয়েছি। তাই আমাদের ফোরকাস্টিং মডেল (পূর্বাভাস) বলছে, সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ থাকবে। এমনকি ‘পিক সিজনও’ হতে পারে। বিশেষ করে ঢাকার আশ-পাশের জেলাসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল ও বরগুনাতে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে শুরু হয় ২০০০ সালে। ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৪৬ জন এ রোগে আক্রান্ত হন। এ সময় মারা যান ৮৫৩ জন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয় গত বছর। এ সময় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আর মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের।

back to top