দেশে বছরের পেঁয়াজের মোট চাহিদার পাঁচ-ছয় লাখ টন বেশি উৎপাদন হচ্ছে দেশে কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে ২৫-৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। বাড়তি চাহিদা পূরণে পণ্যটি আমদানি করতে হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের উপায় হিসাবে সারাদেশে ‘মডেল ঘর’ নির্মাণ করছে সরকার।
কৃষি বিপনন অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, মডেল ঘর তৈরির ফলে দেশে পেয়াজের আমদানি কমে গেছে। চলতি মৌসুমে দেশের ৬ জেলায় প্রায় ২৩০টি সংরক্ষণ ঘরের প্রতিটিতে গড়ে ২০০-৪৫০ মন পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষিত আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌসুমের শুরুর দিকে পেঁয়াজের দাম থাকে কিছুটা কম। তখন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারলে কৃষক পরে বিক্রি করে ভালো দাম পেতে পারেন। কিন্তু জায়গা বা সুবিধার অভাবে অনেক কৃষকই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন না। নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাদের কম দামে হলেও পাইকারকে পেঁয়াজ দিয়ে দিতে হয়।
রাজবাড়ীর বারিয়াকান্দির বহরপুরের পেয়াজ চাষি জাহাঙ্গীর হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘আমার পেয়াজ রাখার জন্য মডেল ঘর করে দিয়েছে সরকার। আমি সাড়ে তিনশ মন পেঁয়াজ রেখেছি। এখনও সব পেঁয়াজ ঠিকঠাক আছে, নষ্ট হয়নি।’
অন্য এক কৃষক বলেন, ‘স্বাভাবিক নিয়মে এক মণ পেঁয়াজ ঘরে রাখলে ১৫ কেজি কমে। পচন ধরলে আরও বেশি কমে।
ফরিদপুরের সালথার আমজাদ মাতুব্বর সংবাদকে বলেন, ‘সরকার থেকে আমাকে পেঁয়াজ রাখার জন্য মডেল ঘর করে (তৈরি করে) দিছে (দিয়েছে)। আমি এবার তিনশ’ শোয়া তিনশ’ মণ পেঁয়াজ পায়ছিলাম, ঘরে রাখছি হলো ২১০ মণ। আর আগে বিক্রি করছেলাম। আর আশপাশের দুইজন কৃষক রাখছে ৫০ মণ ৫০ মণ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি গতবছরও রাখছেলাম। গতবছর তো অল্পদিন রাখছেলাম, তিন মাস রাখছেলাম রেজাল্ট ভালো হয়ছে।’
প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট গবেষণা করে পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের জন্য মডেল ঘরের নকশা বানায়। কৃষকদের বাড়ির উঠানে ১ শতাংশ জমিতে টিন-বাঁশ, লোহা, কংক্রিটের সমন্বয়ে বানানো এই ঘরে তিন স্তরের মাচা রয়েছে। ঘরের নিচে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পেছনে দেয়া হয়েছে ছয়টি তাপনিয়ন্ত্রণ ফ্যান। ঝড়-বৃষ্টি থেকে পেঁয়াজ রক্ষা করতে চারপাশে রাখা হয়েছে ত্রিপল।
তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পরিমাপের জন্য প্রতিটি ঘরে হাইগ্রোমিটার রয়েছে। প্রতিটি ঘরের আয়তন প্রায় ৩৭৫ বর্গফুট। প্রতিটি ঘরে ২৫০ থেকে ৩০০ মণ (১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন) পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। তিনটি স্তরের এই সংরক্ষণ ঘরের স্থায়িত্ব কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ বছর।
প্রতিটি মডেল ঘরে ৩০০ মন করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। এসব ঘরে ৬ থেকে ৯ মাস পেঁয়াজ ভালো থাকবে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। প্রতিটি ঘরে পাঁচজন কৃষক তাদের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ‘কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক হেলাল উদ্দিন বলেন, "প্রতি বছর দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ার পরও আমদানি করতে হয়। কারণ, যথাযথভাবে সংরক্ষণের অভাবে পেঁয়াজ উৎপাদনের একটি বড় অংশ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এই ‘মডেল ঘরে’ পেঁয়াজ রাখলে নষ্ট হওয়ার হার ১০ শতাংশ বা তারও নিচে নেমে আসবে বলে আশা করি।"
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ এই ঘরগুলো দেখে চাষিরা নিজেরা এমন মডেল ঘর তৈরি করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করবে।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৯-২০ সালে হঠাৎই পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা হয়ে যায়। দেশব্যাপী মানুষের মুখে মুখে সমালোচনার জন্ম দেয় পেঁয়াজ ইস্যু। কর্মকর্তারা সিরিজ মিটিং করেন। সমাধানের পথ খোঁজেন। তখন সামনে আসে পেঁয়াজ সংরক্ষণের এই মডেল ঘর।
মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪
দেশে বছরের পেঁয়াজের মোট চাহিদার পাঁচ-ছয় লাখ টন বেশি উৎপাদন হচ্ছে দেশে কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে ২৫-৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। বাড়তি চাহিদা পূরণে পণ্যটি আমদানি করতে হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের উপায় হিসাবে সারাদেশে ‘মডেল ঘর’ নির্মাণ করছে সরকার।
কৃষি বিপনন অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, মডেল ঘর তৈরির ফলে দেশে পেয়াজের আমদানি কমে গেছে। চলতি মৌসুমে দেশের ৬ জেলায় প্রায় ২৩০টি সংরক্ষণ ঘরের প্রতিটিতে গড়ে ২০০-৪৫০ মন পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষিত আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌসুমের শুরুর দিকে পেঁয়াজের দাম থাকে কিছুটা কম। তখন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারলে কৃষক পরে বিক্রি করে ভালো দাম পেতে পারেন। কিন্তু জায়গা বা সুবিধার অভাবে অনেক কৃষকই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন না। নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাদের কম দামে হলেও পাইকারকে পেঁয়াজ দিয়ে দিতে হয়।
রাজবাড়ীর বারিয়াকান্দির বহরপুরের পেয়াজ চাষি জাহাঙ্গীর হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘আমার পেয়াজ রাখার জন্য মডেল ঘর করে দিয়েছে সরকার। আমি সাড়ে তিনশ মন পেঁয়াজ রেখেছি। এখনও সব পেঁয়াজ ঠিকঠাক আছে, নষ্ট হয়নি।’
অন্য এক কৃষক বলেন, ‘স্বাভাবিক নিয়মে এক মণ পেঁয়াজ ঘরে রাখলে ১৫ কেজি কমে। পচন ধরলে আরও বেশি কমে।
ফরিদপুরের সালথার আমজাদ মাতুব্বর সংবাদকে বলেন, ‘সরকার থেকে আমাকে পেঁয়াজ রাখার জন্য মডেল ঘর করে (তৈরি করে) দিছে (দিয়েছে)। আমি এবার তিনশ’ শোয়া তিনশ’ মণ পেঁয়াজ পায়ছিলাম, ঘরে রাখছি হলো ২১০ মণ। আর আগে বিক্রি করছেলাম। আর আশপাশের দুইজন কৃষক রাখছে ৫০ মণ ৫০ মণ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি গতবছরও রাখছেলাম। গতবছর তো অল্পদিন রাখছেলাম, তিন মাস রাখছেলাম রেজাল্ট ভালো হয়ছে।’
প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট গবেষণা করে পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের জন্য মডেল ঘরের নকশা বানায়। কৃষকদের বাড়ির উঠানে ১ শতাংশ জমিতে টিন-বাঁশ, লোহা, কংক্রিটের সমন্বয়ে বানানো এই ঘরে তিন স্তরের মাচা রয়েছে। ঘরের নিচে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পেছনে দেয়া হয়েছে ছয়টি তাপনিয়ন্ত্রণ ফ্যান। ঝড়-বৃষ্টি থেকে পেঁয়াজ রক্ষা করতে চারপাশে রাখা হয়েছে ত্রিপল।
তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পরিমাপের জন্য প্রতিটি ঘরে হাইগ্রোমিটার রয়েছে। প্রতিটি ঘরের আয়তন প্রায় ৩৭৫ বর্গফুট। প্রতিটি ঘরে ২৫০ থেকে ৩০০ মণ (১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন) পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। তিনটি স্তরের এই সংরক্ষণ ঘরের স্থায়িত্ব কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ বছর।
প্রতিটি মডেল ঘরে ৩০০ মন করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। এসব ঘরে ৬ থেকে ৯ মাস পেঁয়াজ ভালো থাকবে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। প্রতিটি ঘরে পাঁচজন কৃষক তাদের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ‘কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক হেলাল উদ্দিন বলেন, "প্রতি বছর দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ার পরও আমদানি করতে হয়। কারণ, যথাযথভাবে সংরক্ষণের অভাবে পেঁয়াজ উৎপাদনের একটি বড় অংশ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এই ‘মডেল ঘরে’ পেঁয়াজ রাখলে নষ্ট হওয়ার হার ১০ শতাংশ বা তারও নিচে নেমে আসবে বলে আশা করি।"
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ এই ঘরগুলো দেখে চাষিরা নিজেরা এমন মডেল ঘর তৈরি করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করবে।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৯-২০ সালে হঠাৎই পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা হয়ে যায়। দেশব্যাপী মানুষের মুখে মুখে সমালোচনার জন্ম দেয় পেঁয়াজ ইস্যু। কর্মকর্তারা সিরিজ মিটিং করেন। সমাধানের পথ খোঁজেন। তখন সামনে আসে পেঁয়াজ সংরক্ষণের এই মডেল ঘর।