মশা ,মাছি ও ডাশের কামড়ে এই ভাইরাস রোগ ছড়ায়
মশা মাছির কামড়ে গরু লাম্পি স্কিন রোগে (এলএসডি) আক্রান্ত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন এই রোগে বহু গরু আক্রান্ত হচ্ছে। এই রোগে গতকাল পর্যন্ত শুধু নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলায় কমপক্ষে ৩০টির বেশী গরু মারা গেছে। দেশের অন্যান্য জেলায় এই গরুর আক্রান্ত হলেও চিকিৎসা প্রাণি সম্পদ বিভাগের চিকিৎসা গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। অনেকে জেলায় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ডাক্তারদের খবর পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। যার কারনে গরুর খামারীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ভাইরাস জনিত এই রোগের প্রার্দুভাব ঠেকাতে অনেকেই গরুকে মশারির নিচে রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
ভ্যাটেনারী চিৎিসকরা জানান, গরুর লাম্পি স্কিন ভাইরাস জনিত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে প্রথমে জ্বর দেখা দেয়। এরপর গরুর খাবার খেতে চায় না। জ্বর বেশী হলে নাক মুখ লালা বের হয়। পা ও গলা ফুলে যায়। আক্রান্ত গরুর বুকের নিচে, দুই পায়ের মাঝে পানি জমে যায়। গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়ায় গুটি গুটি ক্ষত হয় ও পচন ধরে। সেই সঙ্গে চামড়া থেকে লোম উঠে যায়। বড় গরুর লাম্পি স্কিন রোগে তুলনা মূলক ভাবে কম ঝুকিতে থাকলেও ছোট গরু বা গরুর বাচ্চা আক্রান্ত হলে দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়ে। মৃত্যুর ঝুঝিও বেশী থাকে।
প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা জানান, জুলাই মাস থেকে এই রোগ বিস্তার বেশী ঘটছে। নওগাঁর রানীনগর, মান্দা, বদলগাছি, পোরশা,পত্বীতলা আত্রাই,নিয়ামতপুর ও মহাদেবপুর উপজেলায় ৩০টির বেশী গরু লাম্পি স্কিন রোগে মারা গেছে। পুরো জেলায় ৫শর বেশী গরু পশু হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশী হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে.অনেকেই গ্রামগঞ্জের পশু হাসপাতালে গরু না নিয়ে স্থানীয় পশু চিকিৎসক কিংবা ভেটেনারী ওষুধের দোকানদারদের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে গরুর চিকিৎসা করেন।
নওগাঁর বদলাগাছি উপজেলার বিলাশবাড়ি গ্রামের খামারি জাহাঙ্গীর আলম জানান,তার একটি গাভী ও তিন মাস বয়সী একটি বাচুরের গায়ে গুটি গুটি দাগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে কয়েক দিন ধরে খায়াচ্ছি। কিন্তু গরুর অসুখ ভাল হচ্ছে না।
বদলাগাছি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে প্যারাসিটামল ও সর্দি থাকলে হিস্টাসিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো হয়। এছাড়াও স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। বসন্তের (পক্্র) ভাইরাসের মাধ্যমে রোগটি ছড়াচ্ছে। এটার দেশে কার্যকর ভ্যাকসিন আবিস্কৃত হয়নি বলে এই চিকিৎসক জানিয়েছেন। তবে গরুর এই রোগ প্রতিরোধে গোট পক্্র (ছাগলের বসন্ত) টিকা আপাতত দেয়া হচ্ছে।
কিছুৃ ক্ষেত্রে এই টিকা ভাল কাজ করে। একই এলাকায় গত এক মাসে ৬০ থেকে ৭০টি গরু আক্রান্ত হয়েছে। এলাকার আশপাশ এলাকায় আরও অনেক খামারীর গরু আক্রান্ত হয়েছে।
জেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন জানিয়েছেন, মশা, মাছি ও ডাশ জাতীয় পতঙ্গ রক্ত খায়,এমন পতঙ্গের মাধ্যমে এক গরু থেকে আরেক গরুতে এই রোগ ছড়ায়। রোগটা যাতে ছড়াতে না পারে তার জন্য খামারিরা যাতে গরু পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখে। আর মশা মাছি ও ডাশের কামড় থেকে রেহাই পেতে মশারি ব্যবহারেরও পরামর্শা দেয়া হয়েছে। আর সঠিক সময় চিকিৎসা করলে ও গরুকে পশু হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করলে সেরে উঠার সম্ভবনা থাকেত।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামেও লাম্পি স্কিনের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে ব্যাপক আকারে। খামারীরা বলেন,কারো একটি আবার কারো একাধিক গরু এই রোগে আক্রান্ত। গরুর খামার করে যারা এটাকে জিবিকা হিসেবে বেচে নিয়েছেন তারা এখন দুশ্চিন্তা ও আতংকে দিন কাটাছেন। আবার অনেক দরিদ্র পরিবারের গরু মারা যাওয়ায় তারা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন।
কীটতত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, লাম্পি ভাইরাস গরু আক্রান্ত হয়। তবে বাচুর গরু ঝুবিপূর্ণ। মূলত মশা ও মাশির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় যেমন ডেঙ্গু ভাইরাস বাড়ছে। এখন মশা ও মাছির কারনে লাম্পি ভাইরাস বাড়ছে। এতে গবাদি পশু আক্রান্ত হচ্ছে। এই সম্পর্কে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের ডিজির সঙ্গে তার মুঠোফোনে বার বার যোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় গরুর লাম্পি স্কিন রোগ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি খোজ খবর নিয়ে আক্রান্ত গরুকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হচ্ছে। অনেক এলাকায় জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ থেকে টিকা (ভ্যাকসিন) দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও গরুর অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হলে প্রাণি সম্পদ বিভাগের ভ্যাটেনারী চিকিৎসকের পরামর্শ দেয়ার পরামর্শ দেন। আর মশা মাছি থেকে গরুকে নিরাপদে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
মশা ,মাছি ও ডাশের কামড়ে এই ভাইরাস রোগ ছড়ায়
বুধবার, ০৯ আগস্ট ২০২৩
মশা মাছির কামড়ে গরু লাম্পি স্কিন রোগে (এলএসডি) আক্রান্ত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন এই রোগে বহু গরু আক্রান্ত হচ্ছে। এই রোগে গতকাল পর্যন্ত শুধু নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলায় কমপক্ষে ৩০টির বেশী গরু মারা গেছে। দেশের অন্যান্য জেলায় এই গরুর আক্রান্ত হলেও চিকিৎসা প্রাণি সম্পদ বিভাগের চিকিৎসা গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। অনেকে জেলায় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ডাক্তারদের খবর পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। যার কারনে গরুর খামারীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ভাইরাস জনিত এই রোগের প্রার্দুভাব ঠেকাতে অনেকেই গরুকে মশারির নিচে রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
ভ্যাটেনারী চিৎিসকরা জানান, গরুর লাম্পি স্কিন ভাইরাস জনিত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে প্রথমে জ্বর দেখা দেয়। এরপর গরুর খাবার খেতে চায় না। জ্বর বেশী হলে নাক মুখ লালা বের হয়। পা ও গলা ফুলে যায়। আক্রান্ত গরুর বুকের নিচে, দুই পায়ের মাঝে পানি জমে যায়। গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়ায় গুটি গুটি ক্ষত হয় ও পচন ধরে। সেই সঙ্গে চামড়া থেকে লোম উঠে যায়। বড় গরুর লাম্পি স্কিন রোগে তুলনা মূলক ভাবে কম ঝুকিতে থাকলেও ছোট গরু বা গরুর বাচ্চা আক্রান্ত হলে দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়ে। মৃত্যুর ঝুঝিও বেশী থাকে।
প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা জানান, জুলাই মাস থেকে এই রোগ বিস্তার বেশী ঘটছে। নওগাঁর রানীনগর, মান্দা, বদলগাছি, পোরশা,পত্বীতলা আত্রাই,নিয়ামতপুর ও মহাদেবপুর উপজেলায় ৩০টির বেশী গরু লাম্পি স্কিন রোগে মারা গেছে। পুরো জেলায় ৫শর বেশী গরু পশু হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশী হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে.অনেকেই গ্রামগঞ্জের পশু হাসপাতালে গরু না নিয়ে স্থানীয় পশু চিকিৎসক কিংবা ভেটেনারী ওষুধের দোকানদারদের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে গরুর চিকিৎসা করেন।
নওগাঁর বদলাগাছি উপজেলার বিলাশবাড়ি গ্রামের খামারি জাহাঙ্গীর আলম জানান,তার একটি গাভী ও তিন মাস বয়সী একটি বাচুরের গায়ে গুটি গুটি দাগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে কয়েক দিন ধরে খায়াচ্ছি। কিন্তু গরুর অসুখ ভাল হচ্ছে না।
বদলাগাছি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে প্যারাসিটামল ও সর্দি থাকলে হিস্টাসিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো হয়। এছাড়াও স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। বসন্তের (পক্্র) ভাইরাসের মাধ্যমে রোগটি ছড়াচ্ছে। এটার দেশে কার্যকর ভ্যাকসিন আবিস্কৃত হয়নি বলে এই চিকিৎসক জানিয়েছেন। তবে গরুর এই রোগ প্রতিরোধে গোট পক্্র (ছাগলের বসন্ত) টিকা আপাতত দেয়া হচ্ছে।
কিছুৃ ক্ষেত্রে এই টিকা ভাল কাজ করে। একই এলাকায় গত এক মাসে ৬০ থেকে ৭০টি গরু আক্রান্ত হয়েছে। এলাকার আশপাশ এলাকায় আরও অনেক খামারীর গরু আক্রান্ত হয়েছে।
জেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন জানিয়েছেন, মশা, মাছি ও ডাশ জাতীয় পতঙ্গ রক্ত খায়,এমন পতঙ্গের মাধ্যমে এক গরু থেকে আরেক গরুতে এই রোগ ছড়ায়। রোগটা যাতে ছড়াতে না পারে তার জন্য খামারিরা যাতে গরু পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখে। আর মশা মাছি ও ডাশের কামড় থেকে রেহাই পেতে মশারি ব্যবহারেরও পরামর্শা দেয়া হয়েছে। আর সঠিক সময় চিকিৎসা করলে ও গরুকে পশু হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করলে সেরে উঠার সম্ভবনা থাকেত।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামেও লাম্পি স্কিনের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে ব্যাপক আকারে। খামারীরা বলেন,কারো একটি আবার কারো একাধিক গরু এই রোগে আক্রান্ত। গরুর খামার করে যারা এটাকে জিবিকা হিসেবে বেচে নিয়েছেন তারা এখন দুশ্চিন্তা ও আতংকে দিন কাটাছেন। আবার অনেক দরিদ্র পরিবারের গরু মারা যাওয়ায় তারা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন।
কীটতত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, লাম্পি ভাইরাস গরু আক্রান্ত হয়। তবে বাচুর গরু ঝুবিপূর্ণ। মূলত মশা ও মাশির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় যেমন ডেঙ্গু ভাইরাস বাড়ছে। এখন মশা ও মাছির কারনে লাম্পি ভাইরাস বাড়ছে। এতে গবাদি পশু আক্রান্ত হচ্ছে। এই সম্পর্কে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের ডিজির সঙ্গে তার মুঠোফোনে বার বার যোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় গরুর লাম্পি স্কিন রোগ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি খোজ খবর নিয়ে আক্রান্ত গরুকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হচ্ছে। অনেক এলাকায় জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ থেকে টিকা (ভ্যাকসিন) দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও গরুর অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হলে প্রাণি সম্পদ বিভাগের ভ্যাটেনারী চিকিৎসকের পরামর্শ দেয়ার পরামর্শ দেন। আর মশা মাছি থেকে গরুকে নিরাপদে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।