মাদারীপুরের সড়কে জেলা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ না দিলে বিভিন্ন ধরনের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। অবশ্য ট্রাফিক পুলিশ বলছে, তাদেরকে হেয় করার জন্য এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। গাড়ির কাগজপত্র সঠিক না থাকলে, ট্রাফিক আইন না মানলেই পুলিশ মামলা দিচ্ছে। ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তবে, জেলার মটরসাইকেল চালকদের শুধু হয়রানি করে পুলিশ কিন্তু জেলার অধিকাংশ বাস, মিনিবাস ও ট্রাকের মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল করলেও পুলিশ এসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পরিবহনগুলোকে কখনোই জরিমানা করে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন মাদারীপুর শহরে দেখা গেছে, রোববার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে ডাসার-পাথুরিয়ারপাড় সড়কের আলীয়া মাদ্রাসার কাছে ইটেরপুল পুলিশ ফাঁড়ির একদল সদস্য সড়কের দুইপাশে দাঁড়িয়ে মটরসাইকেল আসতে দেখলেই বাঁশের লাঠি দিয়ে গাড়ির থামায়। গাড়ির কাগজপত্রে সামান্য ত্রুটি পেলেই গাড়ি আটকে রাখে। কিছু বকশিস পেলে ছেড়ে দেয়। একই অবস্থা দেখা গেছে, ওই দিনই সকালে ইটেরপুলে তিন রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের একদল সদস্যরা চেক পোষ্ট বসিয়ে শুধু মাত্র মটরসাইকেল চালকদের গতিরোধ করে সামান্য ভুলত্রুটি পেলেই মামলা দিচেছ। কিংবা গাড়ি আটকে রেখে বকশিসের বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কে অবৈধ পার্কিং, যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা, লোকজন উল্টো পথে চলা, রুট পারমিটবিহীন ও ফিটনেসবিহীন বাস গাড়ি চলাচল করলেও এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে ট্রাফিক পুলিশের কোন আগ্রহ নেই। তাদের আগ্রহ মটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানি করা। অথচ গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলার কারণে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। ট্রাফিক ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলার কারণে যানজট বৃদ্ধি পেলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রাফিক পুলিশের আগ্রহ যেন মামলাতেই বেশি দেখা যাচ্ছে।
জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত আট মাসে মাদারীপুরে মটর সাইকেলের বিরুদ্ধে ২ হাজার চার শত ৭১টি মামলা হয়েছে। অবৈধ যানবাহন নসিমন, করিমন, টলী, থ্রি হুইলার মাত্র ৬৪টি আটক রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে মোটরসাইকেল আটক রয়েছে ২ হাজার ০৪২টি, মোটরসাইকেলের মামলার জরিমানা করা হয়েছে ৭৯ লাখ ৬২ হাজার ৮ শত টাকা। অন্য যানবাহনের মামলার জরিমানা হয়েছে ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ মাদারীপুরে অর্ধশাধিক ফিটনেসবিহীন বাস, মিনিবাস, ট্রাক, মিনিট্রাক গাড়ি চলাচল করলেও একটিও আটক কিংবা জরিমানা করা হয়নি।
ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, মাদারীপুরে গাড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, যা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনভিজ্ঞ ও মেয়াদবিহীন লাইসেন্সের চালক সবাই যেন নেমে পড়ে সড়কে। এ সব কারণে মামলার সংখ্যা বাড়ছে। যার কারণে চালকরা বলছে, এ সব হলো অতিরিক্ত মামলা।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা এলাকার মোটরসাইকেল চালক মোহম্মদ রায়হান বলেন, আমার গাড়ির কাগজপত্র সব ঠিক আছে। তারপরও পুলিশ আমাকে শুধু শুধু মামলার ভয় দেখিয়ে এক হাজার টাকা নিয়েছে।
সাকিব হাসান নামের আরেক এক মটরসাইকেল চালক বলেন, আমরা গ্রামের রাস্তায় মটর সাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। সেই গ্রামে এসে আমাদের মটর সাইকেল বিভিন্ন অজুহাতে আটক করে টাকা আদায় করে। সারাদিন শেষে আমরা ৫০০-৭০০ টাকা পাই। অথচ একবার পুলিশে ধরলেই আমাদের দুই তিন হাজার টাকা নিয়ে যায়। এমন করলে কিভাবে আমরা সংসার চালাবো।
শহরের ইটেরপুল এলাকায় নিয়ম মেনে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন মোটরসাইকেল চালক ও শিক্ষার্থী হাবিব আকন। পুলিশ তাকে থামিয়ে কাগজপত্র হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে আগের কোনো মামলা আছে কি না ? জবাব দেওয়ার আগেই এক হাজার টাকার মামলা দেওয়ার কথা বলে দুই হাজার টাকার মামলা দেয়। এর পর হাবিব আকন ওই ট্রাফিকের কাছে তার অপরাধ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তায় চললে মাঝে মাঝে এমন মামলা হয়।
মাদারীপুর উন্নায়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, যারা মটর সাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা বেশি দেয়া হয়। এমন অভিযোগ আমরা প্রায়ই শুনি। পুলিশের আরও মানবিক হওয়া উচিত। সাধারণ মানুষ পুলিশের প্রতি ক্ষুব্ধ। যানজট নিরসনের চেয়ে পুলিশ বেশি ব্যস্ত থাকেন মামলা দিয়ে হয়রানি করাতে। অথচ সকাল বিকাল শহরের মধ্যে যানজট লেগেই থাকে। বিষয়টি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খতিয়ে দেখা উচিত।
মাদারীপুরে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট জুলফিকার বলেন, চালকরা অন্যায় বা অনিয়ম করলে আমরা মামলা দিয়ে থাকি। আরেক ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট যাকারিয়া বলেন, রাস্তায় অনিয়ম করলে মামলা দেওয়া হয়। কোনো গাড়িকে টার্গেট করে মামলা দেওয়া হয় না। তিনি আরো বলেন পুলিশকে হেয় করার জন্য এই প্রচারণটা চলেই আসছে। পুলিশ ইচ্ছা করে মামলা দেয় না। চালকরা অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আর ট্রাফিক পুলিশের বাইরে থানা বা ফাঁড়ির পুলিশ রাস্তা ঘাটে যদি কোন অনিয়ম করে থাকে সে বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
তবে এসব অভিযোগের ব্যপারে মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সড়কে ঘুষ বাণিজ্য হওয়ার কথা নয়। যদি এমনটা ঘটে তাহলে তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
মাদারীপুরের সড়কে জেলা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ না দিলে বিভিন্ন ধরনের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। অবশ্য ট্রাফিক পুলিশ বলছে, তাদেরকে হেয় করার জন্য এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। গাড়ির কাগজপত্র সঠিক না থাকলে, ট্রাফিক আইন না মানলেই পুলিশ মামলা দিচ্ছে। ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তবে, জেলার মটরসাইকেল চালকদের শুধু হয়রানি করে পুলিশ কিন্তু জেলার অধিকাংশ বাস, মিনিবাস ও ট্রাকের মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল করলেও পুলিশ এসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পরিবহনগুলোকে কখনোই জরিমানা করে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন মাদারীপুর শহরে দেখা গেছে, রোববার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে ডাসার-পাথুরিয়ারপাড় সড়কের আলীয়া মাদ্রাসার কাছে ইটেরপুল পুলিশ ফাঁড়ির একদল সদস্য সড়কের দুইপাশে দাঁড়িয়ে মটরসাইকেল আসতে দেখলেই বাঁশের লাঠি দিয়ে গাড়ির থামায়। গাড়ির কাগজপত্রে সামান্য ত্রুটি পেলেই গাড়ি আটকে রাখে। কিছু বকশিস পেলে ছেড়ে দেয়। একই অবস্থা দেখা গেছে, ওই দিনই সকালে ইটেরপুলে তিন রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের একদল সদস্যরা চেক পোষ্ট বসিয়ে শুধু মাত্র মটরসাইকেল চালকদের গতিরোধ করে সামান্য ভুলত্রুটি পেলেই মামলা দিচেছ। কিংবা গাড়ি আটকে রেখে বকশিসের বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কে অবৈধ পার্কিং, যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা, লোকজন উল্টো পথে চলা, রুট পারমিটবিহীন ও ফিটনেসবিহীন বাস গাড়ি চলাচল করলেও এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে ট্রাফিক পুলিশের কোন আগ্রহ নেই। তাদের আগ্রহ মটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানি করা। অথচ গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলার কারণে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। ট্রাফিক ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলার কারণে যানজট বৃদ্ধি পেলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রাফিক পুলিশের আগ্রহ যেন মামলাতেই বেশি দেখা যাচ্ছে।
জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত আট মাসে মাদারীপুরে মটর সাইকেলের বিরুদ্ধে ২ হাজার চার শত ৭১টি মামলা হয়েছে। অবৈধ যানবাহন নসিমন, করিমন, টলী, থ্রি হুইলার মাত্র ৬৪টি আটক রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে মোটরসাইকেল আটক রয়েছে ২ হাজার ০৪২টি, মোটরসাইকেলের মামলার জরিমানা করা হয়েছে ৭৯ লাখ ৬২ হাজার ৮ শত টাকা। অন্য যানবাহনের মামলার জরিমানা হয়েছে ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ মাদারীপুরে অর্ধশাধিক ফিটনেসবিহীন বাস, মিনিবাস, ট্রাক, মিনিট্রাক গাড়ি চলাচল করলেও একটিও আটক কিংবা জরিমানা করা হয়নি।
ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, মাদারীপুরে গাড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, যা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনভিজ্ঞ ও মেয়াদবিহীন লাইসেন্সের চালক সবাই যেন নেমে পড়ে সড়কে। এ সব কারণে মামলার সংখ্যা বাড়ছে। যার কারণে চালকরা বলছে, এ সব হলো অতিরিক্ত মামলা।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা এলাকার মোটরসাইকেল চালক মোহম্মদ রায়হান বলেন, আমার গাড়ির কাগজপত্র সব ঠিক আছে। তারপরও পুলিশ আমাকে শুধু শুধু মামলার ভয় দেখিয়ে এক হাজার টাকা নিয়েছে।
সাকিব হাসান নামের আরেক এক মটরসাইকেল চালক বলেন, আমরা গ্রামের রাস্তায় মটর সাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। সেই গ্রামে এসে আমাদের মটর সাইকেল বিভিন্ন অজুহাতে আটক করে টাকা আদায় করে। সারাদিন শেষে আমরা ৫০০-৭০০ টাকা পাই। অথচ একবার পুলিশে ধরলেই আমাদের দুই তিন হাজার টাকা নিয়ে যায়। এমন করলে কিভাবে আমরা সংসার চালাবো।
শহরের ইটেরপুল এলাকায় নিয়ম মেনে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন মোটরসাইকেল চালক ও শিক্ষার্থী হাবিব আকন। পুলিশ তাকে থামিয়ে কাগজপত্র হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে আগের কোনো মামলা আছে কি না ? জবাব দেওয়ার আগেই এক হাজার টাকার মামলা দেওয়ার কথা বলে দুই হাজার টাকার মামলা দেয়। এর পর হাবিব আকন ওই ট্রাফিকের কাছে তার অপরাধ জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তায় চললে মাঝে মাঝে এমন মামলা হয়।
মাদারীপুর উন্নায়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, যারা মটর সাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা বেশি দেয়া হয়। এমন অভিযোগ আমরা প্রায়ই শুনি। পুলিশের আরও মানবিক হওয়া উচিত। সাধারণ মানুষ পুলিশের প্রতি ক্ষুব্ধ। যানজট নিরসনের চেয়ে পুলিশ বেশি ব্যস্ত থাকেন মামলা দিয়ে হয়রানি করাতে। অথচ সকাল বিকাল শহরের মধ্যে যানজট লেগেই থাকে। বিষয়টি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খতিয়ে দেখা উচিত।
মাদারীপুরে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট জুলফিকার বলেন, চালকরা অন্যায় বা অনিয়ম করলে আমরা মামলা দিয়ে থাকি। আরেক ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট যাকারিয়া বলেন, রাস্তায় অনিয়ম করলে মামলা দেওয়া হয়। কোনো গাড়িকে টার্গেট করে মামলা দেওয়া হয় না। তিনি আরো বলেন পুলিশকে হেয় করার জন্য এই প্রচারণটা চলেই আসছে। পুলিশ ইচ্ছা করে মামলা দেয় না। চালকরা অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আর ট্রাফিক পুলিশের বাইরে থানা বা ফাঁড়ির পুলিশ রাস্তা ঘাটে যদি কোন অনিয়ম করে থাকে সে বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
তবে এসব অভিযোগের ব্যপারে মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সড়কে ঘুষ বাণিজ্য হওয়ার কথা নয়। যদি এমনটা ঘটে তাহলে তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।