আনোয়ার চট্টগ্রাম : জুঁইদন্ডি ও রায়পুর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী সাপমারা খালের উপর যাতায়াতের একমাত্র বাঁশের সাঁকো
ভালো করে ছবি তুলে সরকারকে দেখান আমরা কত কষ্টে দিন কাটাচ্ছি, ছেলেমেয়েরা কত কষ্ট করে পড়াশোনা করতেছে সেটা ভালো করে ছবি তুলে সবাইকে দেখান, আমাদের দেখার মতো কেউ নাই, দেশের এত উন্নতি হচ্ছে কিন্তু আমাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আঞ্চলিক ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন খুশি আক্তার। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ৩নং রায়পুর ইউনিয়নের অবহেলিত ৫নং দক্ষিণ সরেঙ্গা ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। নিজের মেয়েকে নিয়ে খুব ভয়ে ভয়ে, দেখেশুনে পা ফেলে উপজেলার ৩নং রায়পুর ইউনিয়ন এবং ১১নং জুঁইদন্ডি ইউনিয়নবাসীর গলার কাটা সাপমরা খালের উপর বাঁশের সাঁকোটি পার হচ্ছিলেন। এমন সময় ছবি তুলতে দেখে নিজেদের দুঃখ দুর্দশার এইভাবেই চিৎকার করে ব্যক্ত করছেন খুশি আক্তার নামের ২৮ বছর বয়সী এই মহিলা। শুধু খুশি নন। সাপমরা খালের এই বাঁশের সাঁকোটি নিয়ে কষ্টের গল্প শুনিয়েছেন স্কুল ছাত্র আরিফ, আদিফুল এবং যুবক আবু সৈয়দসহ দু’পারের অনেকেই।
আদিফুল ইসলাম নামের টি এম সি হাই স্কুলের ১০ম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী জানান, ছোটো থেকেই এই সাঁকোটা দেখে দেখে বড় হয়েছি। এই সাঁকোটার কারণে বাড়ির পাশের জে কে হাই স্কুলে পড়তে পারিনা। অনেক দূরের টি এম সি হাই স্কুলে পড়তে হচ্ছে।
মোহাম্মদ আরিফ নামের ১০ শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী বলেন, দূর থেকে দেখলে এই সাঁকোটা ঠিকঠাক চলাচলের উপযোগী মনে হলেও সাঁকোটাতে উঠলেই বুঝা যায় এটা কত ভয়ানক। মাঝখানে গেলে বাঁশের মঠমঠ শব্দে শরীর কেঁপে ওঠে। আমরা এখন যেমনতেমন ভাবে পার হতে পারলেও অনেক সময় দেখা যায় ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা সাঁকোর মাঝখানে গিয়ে কান্না শুরু করে দেয়। জানিনা কখন আমরা একটা সেতুর উপর দিয়ে এই খালটা নিশ্চিন্তে পার হতে পারবো!
আবু সৈয়দ নামের আরেক যুবক বলেন, জনপ্রতিনিধিরা সব সময় আমাদের আশ্বস্ত করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমরা আমাদের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে বিষয়টি নিয়ে অনেকবার বলেছি। ওনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে এটা ওনার মাথায় আছে। তাহলে কেন জানিনা এই সাঁকোটার কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। জানিনা এই দুর্ভোগের শেষ কোথায়! আমাদের পূর্ব পুরুষ ধরে এই কষ্ট ভয়ে বেড়াচ্ছি আমরা। জানিনা আর কত যুগ ধরে এই ভোগান্তি বয়ে বেড়াতে হবে!
সরেজমিনে উপজেলার ৩নং রায়পুর ইউনিয়নের ৫নং দক্ষিণ সরেঙ্গা ওয়ার্ড এবং ১১নং জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের ৭নং খুরুস্কুল ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী সাপমরা খালের উপর বাঁশের সাঁকোটির দু’পাশ ঘুরে দেখা যায়, বাঁশের জোড়াতালি দিয়ে বানানো হয়েছে সাঁকোটি। সাঁকোটি পার হতে যেকারো শরীর কেঁপে উঠবে ভয়ে। সামান্য বেখেয়ালে একটু পা পিছলালেই পড়তে হবে সোজা গভীর খালে। খালের পারকী এলাকায় বাঁধ কারণে পানি সঞ্চালন বন্ধ থাকায় এখন পানি কম রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভরপুর থাকে খালটি। খালটির পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে সরেঙ্গা বাজার। তাই প্রয়োজনীয় বাজার সদয় করতে প্রতিনিয়ত খুরুস্কুল বাসীর সাঁকোটি পার হয়ে আসতে হয় বাজারে। আর অপরদিকে পূর্ব প্রান্তে প্রাইমারী স্কুল হওয়ার কারণে সরেঙ্গা বাসীদের যেতে হয় খুরুস্কুল প্রান্তে। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের সাঁকোটি পার হয়ে যেতে হচ্ছে এপার-ওপার। একপাশ দিয়ে একজন আসলে অপর পাশ দিয়ে আরেকজন আসার কুদরত নাই। পুরো আনোয়ারা উপজেলা ঘুরে এমন ঝুকিপূর্ণ দ্বিতীয় আরেকটা সাঁকোর দেখা মিলবেনা।
তাই রায়পুর-জুঁইদন্ডি ইউনিয়ন দু’টির প্রায় ৪০ হাজার মানুষের একটাই চাওয়া এই সাঁকোটির স্থলে একটা সেতু হওয়া।
উপজেলার ৩নং রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দুই ইউনিয়নের যাতায়তের মাধ্যম সাপমারা খালের বাঁশের সাঁকো ভেঙে গেছিলো যা ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির নির্দেশে দ্রুত মেরামত করে দেয়া হয়েছে। আমার জানা মতে এটার একটা ব্যবস্থা হচ্ছে।
উপজেলার ১১নং জুঁইদন্ডি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ ইদ্রীস বলেন, ভূমিমন্ত্রী মহোদয় এটা নিয়ে সেতুমন্ত্রণালয়ে ডেমি অফিসিয়াল লেটার পাঠিয়েছেন। আশা করি শীঘ্রই এটা বাস্তবায়িত হবে।
এবিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা প্রকৌশলী তাসলিমা জাহান জানান, আমাদের কাছে ঢাকা থেকে এটার ইনফরমেশন দেয়ার বিষয়ে চিঠি আসছিলো আমরা সব ইনফরমেশন পাঠিয়েছিলাম? এবং ব্রিজটির জন্য ভূমিমন্ত্রীর সুপারিশপত্রও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, উপজেলার সাপমারা খালে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন এলে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
আনোয়ার চট্টগ্রাম : জুঁইদন্ডি ও রায়পুর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী সাপমারা খালের উপর যাতায়াতের একমাত্র বাঁশের সাঁকো
বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ভালো করে ছবি তুলে সরকারকে দেখান আমরা কত কষ্টে দিন কাটাচ্ছি, ছেলেমেয়েরা কত কষ্ট করে পড়াশোনা করতেছে সেটা ভালো করে ছবি তুলে সবাইকে দেখান, আমাদের দেখার মতো কেউ নাই, দেশের এত উন্নতি হচ্ছে কিন্তু আমাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আঞ্চলিক ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন খুশি আক্তার। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ৩নং রায়পুর ইউনিয়নের অবহেলিত ৫নং দক্ষিণ সরেঙ্গা ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। নিজের মেয়েকে নিয়ে খুব ভয়ে ভয়ে, দেখেশুনে পা ফেলে উপজেলার ৩নং রায়পুর ইউনিয়ন এবং ১১নং জুঁইদন্ডি ইউনিয়নবাসীর গলার কাটা সাপমরা খালের উপর বাঁশের সাঁকোটি পার হচ্ছিলেন। এমন সময় ছবি তুলতে দেখে নিজেদের দুঃখ দুর্দশার এইভাবেই চিৎকার করে ব্যক্ত করছেন খুশি আক্তার নামের ২৮ বছর বয়সী এই মহিলা। শুধু খুশি নন। সাপমরা খালের এই বাঁশের সাঁকোটি নিয়ে কষ্টের গল্প শুনিয়েছেন স্কুল ছাত্র আরিফ, আদিফুল এবং যুবক আবু সৈয়দসহ দু’পারের অনেকেই।
আদিফুল ইসলাম নামের টি এম সি হাই স্কুলের ১০ম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী জানান, ছোটো থেকেই এই সাঁকোটা দেখে দেখে বড় হয়েছি। এই সাঁকোটার কারণে বাড়ির পাশের জে কে হাই স্কুলে পড়তে পারিনা। অনেক দূরের টি এম সি হাই স্কুলে পড়তে হচ্ছে।
মোহাম্মদ আরিফ নামের ১০ শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী বলেন, দূর থেকে দেখলে এই সাঁকোটা ঠিকঠাক চলাচলের উপযোগী মনে হলেও সাঁকোটাতে উঠলেই বুঝা যায় এটা কত ভয়ানক। মাঝখানে গেলে বাঁশের মঠমঠ শব্দে শরীর কেঁপে ওঠে। আমরা এখন যেমনতেমন ভাবে পার হতে পারলেও অনেক সময় দেখা যায় ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা সাঁকোর মাঝখানে গিয়ে কান্না শুরু করে দেয়। জানিনা কখন আমরা একটা সেতুর উপর দিয়ে এই খালটা নিশ্চিন্তে পার হতে পারবো!
আবু সৈয়দ নামের আরেক যুবক বলেন, জনপ্রতিনিধিরা সব সময় আমাদের আশ্বস্ত করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমরা আমাদের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে বিষয়টি নিয়ে অনেকবার বলেছি। ওনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে এটা ওনার মাথায় আছে। তাহলে কেন জানিনা এই সাঁকোটার কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। জানিনা এই দুর্ভোগের শেষ কোথায়! আমাদের পূর্ব পুরুষ ধরে এই কষ্ট ভয়ে বেড়াচ্ছি আমরা। জানিনা আর কত যুগ ধরে এই ভোগান্তি বয়ে বেড়াতে হবে!
সরেজমিনে উপজেলার ৩নং রায়পুর ইউনিয়নের ৫নং দক্ষিণ সরেঙ্গা ওয়ার্ড এবং ১১নং জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের ৭নং খুরুস্কুল ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী সাপমরা খালের উপর বাঁশের সাঁকোটির দু’পাশ ঘুরে দেখা যায়, বাঁশের জোড়াতালি দিয়ে বানানো হয়েছে সাঁকোটি। সাঁকোটি পার হতে যেকারো শরীর কেঁপে উঠবে ভয়ে। সামান্য বেখেয়ালে একটু পা পিছলালেই পড়তে হবে সোজা গভীর খালে। খালের পারকী এলাকায় বাঁধ কারণে পানি সঞ্চালন বন্ধ থাকায় এখন পানি কম রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভরপুর থাকে খালটি। খালটির পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে সরেঙ্গা বাজার। তাই প্রয়োজনীয় বাজার সদয় করতে প্রতিনিয়ত খুরুস্কুল বাসীর সাঁকোটি পার হয়ে আসতে হয় বাজারে। আর অপরদিকে পূর্ব প্রান্তে প্রাইমারী স্কুল হওয়ার কারণে সরেঙ্গা বাসীদের যেতে হয় খুরুস্কুল প্রান্তে। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের সাঁকোটি পার হয়ে যেতে হচ্ছে এপার-ওপার। একপাশ দিয়ে একজন আসলে অপর পাশ দিয়ে আরেকজন আসার কুদরত নাই। পুরো আনোয়ারা উপজেলা ঘুরে এমন ঝুকিপূর্ণ দ্বিতীয় আরেকটা সাঁকোর দেখা মিলবেনা।
তাই রায়পুর-জুঁইদন্ডি ইউনিয়ন দু’টির প্রায় ৪০ হাজার মানুষের একটাই চাওয়া এই সাঁকোটির স্থলে একটা সেতু হওয়া।
উপজেলার ৩নং রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দুই ইউনিয়নের যাতায়তের মাধ্যম সাপমারা খালের বাঁশের সাঁকো ভেঙে গেছিলো যা ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির নির্দেশে দ্রুত মেরামত করে দেয়া হয়েছে। আমার জানা মতে এটার একটা ব্যবস্থা হচ্ছে।
উপজেলার ১১নং জুঁইদন্ডি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ ইদ্রীস বলেন, ভূমিমন্ত্রী মহোদয় এটা নিয়ে সেতুমন্ত্রণালয়ে ডেমি অফিসিয়াল লেটার পাঠিয়েছেন। আশা করি শীঘ্রই এটা বাস্তবায়িত হবে।
এবিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা প্রকৌশলী তাসলিমা জাহান জানান, আমাদের কাছে ঢাকা থেকে এটার ইনফরমেশন দেয়ার বিষয়ে চিঠি আসছিলো আমরা সব ইনফরমেশন পাঠিয়েছিলাম? এবং ব্রিজটির জন্য ভূমিমন্ত্রীর সুপারিশপত্রও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, উপজেলার সাপমারা খালে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন এলে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।