এবছর চলন বিলে বন্যার পানি কম থাকায় মৎস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিলের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়াসহ চলনবিল অধ্যসিত আশেপাশের এলাকায় শুটকির চাতাল মালিকেরা বিপাকে পরেছে। প্রতিবছরই সাধারনত বর্ষার শেষে আশ্বিন কার্তিক মাসে চলনবিলে প্রচুর মাছ ধরা পরে। এই সব মাছ চাতাল গুলিতে মাছ শুকিয়ে শুটকি তৈরী করা হয়। কিন্তু এ বছর চাহিদা অনুযায়ী মাছ না পাওয়ায় অধিকাংশ চাতাল প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে।
চলনবিলে ২২টি জলাশয় ও ১৬টি নদীর জলাভূমিতে মাছ আহরণ করে শুটকি তৈরি হচ্ছে। গত বছর এই বিলের বিভিন্ন পল্লী থেকে প্রায় ৩ শত ২ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছিলো। কিন্তু চলনবিলে মাছের সংকটে হারিয়ে যাচ্ছে চলনবিলের স্বাধু পানির মাছ। এতে গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে মৎস্য বিভাগ আশা করছে গত বছরের সমপরিমাণ শুটকি এবারও উৎপাদিত হবে।
শুটকি ব্যবসায়ীরা জানান, উপজেলার হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের কোলঘেষা উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম মহিষলুটি মৎস্য আড়ৎ। আর এ মৎস্য আড়ৎকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কয়েক শত শুটকির চাতাল। এ বছর মাছ সংকটে শুটকি চাতালে কর্মরতরা বেকার হয়ে পরেছে । প্রতি বছরই এ সব চাতালে টেংরা, পুটি, খলসে, বাতাসী, চেলা, মলা, টাকিসহ বিভিন্ন ধরনের মাছের শুটকি করা হয় । চলনবিলের শুটকির কদর রয়েছে সারা দেশে । এই শুটকি ঢাকা, নারায়নগঞ্জ সৈয়দপুর, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকাতে যায় । এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় দশক আগেও চলনবিলে প্রচুর পরিমাণ ছোট মাছ পাওয়া যেত। আর এ মাছ আশ্বিন থেকে কার্ত্তিক মাস পর্যন্ত আরও বেশি পাওয়া যেত। এ অঞ্চলে কাচা মাছের চাহিদা পূরণের পর উদ্বৃত্ত মাছ স্বল্প মূল্যে কিনে শুটকি তৈরি করে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে অনেক শুটকি চাতালের মালিকরা লাখ লাখ টাকা উপার্জন করতেন।
উপজেলার মহিষলুটি শুটকি চাতাল মালিক আমজাদ হোসেন জানান, প্রতি বছর আশ্বিন-কার্তিক মাসে পানি নামার নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এ সময় দামও কম থাকে। তখন এই সব মাছ দিয়ে চলে শুটকি তৈরির ধুম পড়ে। অথচ এ বছর বিলে মাছ নেই বললেই চলে। বেশ কিছুদিন যাবৎ শুটকি তৈরির জন্য পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে চাতাল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লাপাড়ার উপজেলার বড় পাঙ্গাসী এলাকার শুটকি ব্যাবসায়ী রহমান ও তাড়াশের আজিজ জানান, মাছ সংকটের কারণে ইতিমধ্যেই এলাকার অনেক চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। বেকার হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে চলনবিলের প্রায় ৩ শতাধিক শুটকি চাতালের প্রায় ৫ সহস্রাধিক নারী ও পুরুষ শ্রমিক। মহিষলুটি মৎস্য আড়ৎদার মাসুদ রানা জানান, মাছ সংকটের কারণে ইতিমধ্যেই এলাকার অনেক চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। বেকার হওয়ার আশঙ্কায় ভূগছে চলনবিলের প্রায় ৩ শতাধিক শুটকি চাতালের প্রায় ৫ শতাধিক নারী ও পুরুষ শ্রমিক।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ বলেন, চলনবিলের মাছের শুটকির গুণগত মান, সুনাম ও চাহিদা দেশ ও বিদেশেরও রয়েছে। তবে বর্ষা মৌসুমে মা মাছ নিধন, কীটনাশক প্রয়োগে মাছ ধরা প্রাকৃতিক মাছের প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ করতে না পারলে চলনবিলে মাছ সংকট দেখা দিবে। এবছর চলনবিলে কয়েক দফায় পানি আসা ও দ্রুত শুকিয়ে যাবার করণে বিলে মাছের সংঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত বছর এ উপজেলা থেকে ১৪৩ মেট্রিকটন শুটকি উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর ৩০ থেকে ৪০ মেট্র্রিক টন শুটকি উৎপাদন কম হবে। এখন পর্যন্ত সঠিক হিসাব করা সম্ভব না হলেও ধারণা করা যাচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদন হবে।
তিনি আরও জানান, আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি। আশা করি এই অঞ্চলের শুটকি ব্যবসা আরও বহুদুর এগিয়ে যাবে । শুটকি স্বস্থ্যসম্মত ভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান জানান, গত বছর চলনবিলে ৩শ ২ মেট্রিকটন শুটকি উৎপাদন হয়েছিলো । এবছরও একই পরিমাণ শুটকি উৎপাদনের আশা করছে।
বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
এবছর চলন বিলে বন্যার পানি কম থাকায় মৎস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিলের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়াসহ চলনবিল অধ্যসিত আশেপাশের এলাকায় শুটকির চাতাল মালিকেরা বিপাকে পরেছে। প্রতিবছরই সাধারনত বর্ষার শেষে আশ্বিন কার্তিক মাসে চলনবিলে প্রচুর মাছ ধরা পরে। এই সব মাছ চাতাল গুলিতে মাছ শুকিয়ে শুটকি তৈরী করা হয়। কিন্তু এ বছর চাহিদা অনুযায়ী মাছ না পাওয়ায় অধিকাংশ চাতাল প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে।
চলনবিলে ২২টি জলাশয় ও ১৬টি নদীর জলাভূমিতে মাছ আহরণ করে শুটকি তৈরি হচ্ছে। গত বছর এই বিলের বিভিন্ন পল্লী থেকে প্রায় ৩ শত ২ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছিলো। কিন্তু চলনবিলে মাছের সংকটে হারিয়ে যাচ্ছে চলনবিলের স্বাধু পানির মাছ। এতে গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে মৎস্য বিভাগ আশা করছে গত বছরের সমপরিমাণ শুটকি এবারও উৎপাদিত হবে।
শুটকি ব্যবসায়ীরা জানান, উপজেলার হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের কোলঘেষা উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম মহিষলুটি মৎস্য আড়ৎ। আর এ মৎস্য আড়ৎকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কয়েক শত শুটকির চাতাল। এ বছর মাছ সংকটে শুটকি চাতালে কর্মরতরা বেকার হয়ে পরেছে । প্রতি বছরই এ সব চাতালে টেংরা, পুটি, খলসে, বাতাসী, চেলা, মলা, টাকিসহ বিভিন্ন ধরনের মাছের শুটকি করা হয় । চলনবিলের শুটকির কদর রয়েছে সারা দেশে । এই শুটকি ঢাকা, নারায়নগঞ্জ সৈয়দপুর, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকাতে যায় । এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় দশক আগেও চলনবিলে প্রচুর পরিমাণ ছোট মাছ পাওয়া যেত। আর এ মাছ আশ্বিন থেকে কার্ত্তিক মাস পর্যন্ত আরও বেশি পাওয়া যেত। এ অঞ্চলে কাচা মাছের চাহিদা পূরণের পর উদ্বৃত্ত মাছ স্বল্প মূল্যে কিনে শুটকি তৈরি করে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে অনেক শুটকি চাতালের মালিকরা লাখ লাখ টাকা উপার্জন করতেন।
উপজেলার মহিষলুটি শুটকি চাতাল মালিক আমজাদ হোসেন জানান, প্রতি বছর আশ্বিন-কার্তিক মাসে পানি নামার নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এ সময় দামও কম থাকে। তখন এই সব মাছ দিয়ে চলে শুটকি তৈরির ধুম পড়ে। অথচ এ বছর বিলে মাছ নেই বললেই চলে। বেশ কিছুদিন যাবৎ শুটকি তৈরির জন্য পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে চাতাল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লাপাড়ার উপজেলার বড় পাঙ্গাসী এলাকার শুটকি ব্যাবসায়ী রহমান ও তাড়াশের আজিজ জানান, মাছ সংকটের কারণে ইতিমধ্যেই এলাকার অনেক চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। বেকার হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে চলনবিলের প্রায় ৩ শতাধিক শুটকি চাতালের প্রায় ৫ সহস্রাধিক নারী ও পুরুষ শ্রমিক। মহিষলুটি মৎস্য আড়ৎদার মাসুদ রানা জানান, মাছ সংকটের কারণে ইতিমধ্যেই এলাকার অনেক চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। বেকার হওয়ার আশঙ্কায় ভূগছে চলনবিলের প্রায় ৩ শতাধিক শুটকি চাতালের প্রায় ৫ শতাধিক নারী ও পুরুষ শ্রমিক।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ বলেন, চলনবিলের মাছের শুটকির গুণগত মান, সুনাম ও চাহিদা দেশ ও বিদেশেরও রয়েছে। তবে বর্ষা মৌসুমে মা মাছ নিধন, কীটনাশক প্রয়োগে মাছ ধরা প্রাকৃতিক মাছের প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ করতে না পারলে চলনবিলে মাছ সংকট দেখা দিবে। এবছর চলনবিলে কয়েক দফায় পানি আসা ও দ্রুত শুকিয়ে যাবার করণে বিলে মাছের সংঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত বছর এ উপজেলা থেকে ১৪৩ মেট্রিকটন শুটকি উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর ৩০ থেকে ৪০ মেট্র্রিক টন শুটকি উৎপাদন কম হবে। এখন পর্যন্ত সঠিক হিসাব করা সম্ভব না হলেও ধারণা করা যাচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদন হবে।
তিনি আরও জানান, আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি। আশা করি এই অঞ্চলের শুটকি ব্যবসা আরও বহুদুর এগিয়ে যাবে । শুটকি স্বস্থ্যসম্মত ভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান জানান, গত বছর চলনবিলে ৩শ ২ মেট্রিকটন শুটকি উৎপাদন হয়েছিলো । এবছরও একই পরিমাণ শুটকি উৎপাদনের আশা করছে।