alt

সারাদেশ

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৯ মাসে হাজার ছাড়ালো

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ০১ অক্টোবর ২০২৩

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড। শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও আক্রান্ত হচ্ছে, বাড়ছে ঝুঁকি -সংবাদ

সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে চলতি বছরের ৯ মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ১ হাজার ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৬ জনের। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৮৮২ জন। রোববার (১ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে এত মৃত্যুর পরেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে গতানুগতিক পদ্ধতিতে কাজ করছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ ও আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঠেকাতে সমন্বিত কোনো ব্যবস্থায় গড়ে তোলেনি এই দুই মন্ত্রণালয়। পুরো বিষয়টি তারা পরিস্থিতির ওপর ছেড়ে দিয়েছে। এতে কোনোকিছুই আর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকেনি। এমন উদাসীন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৮৮২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬২৯ জন ও ঢাকার বাইরের ২ হাজার ২৫৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৭ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৯ জন ও ঢাকার বাইরের ৮ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে রোববার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬ হাজার ২৮৮ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৩ হাজার ৮৫১ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৪৩৭ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯২৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮০ হাজার ৮৩ জন এবং ঢাকার বাইরের ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৪২ জন।

বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯ হাজার ৩৫৭ জন ডেঙ্গুরোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় তিন হাজার ১২০ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬ হাজার ২৩৭ জন। এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারীকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

এই বছর যে ডেঙ্গু বাড়তে পারে, তা চলতি বছরের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা লার্ভা বা শূককীট জরিপেই আশঙ্কা করা হয়েছিল। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে পরিচালিত সেই জরিপে লার্ভার ব্যাপক উপস্থিতি পাওয়া যায়। পরে জুন মাসে পরিচালিত জরিপেও আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে লার্ভার বেশি উপস্থিতি পাওয়া যায় ঢাকার বাড়ি-ঘরে। এ অবস্থায় মশক নিয়ন্ত্রণে কেবল ক্র্যাশ প্রোগ্রাম কিংবা চিরুনি অভিযানের নামে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যে যৎসামান্য তৎপরতা চালানো হয়েছে, তা যথেষ্ঠ ছিল না বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। মশা নিয়ন্ত্রণের অনেক পদ্ধতি আছে। এর কোনোকিছুই আমরা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে পারিনি। এখনও পারছি না। তারা (মেয়ররা) কাজ করতে পারেন না। আতিক (ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম) সাহেব হয়তো কোথাও কিছু একটা দেখলেন আর এখানে তা প্রয়োগ করতে শুরু করলেন। কিন্তু আমাদের এখানে, আমাদের পরিবেশে সেটা কতখানি কার্যকর হবে তার কোনো ধারণাই হয়তো তাদের নেই। তিনি আরও বলেন, এগুলো তো মুখে বললে হবে না। মানুষকে ভালোবাসতে হবে। দেশকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতে হবে। রাজনীতি খালি মুখের কথায় হয় না।

সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর উপচে পড়া ভিড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে মানুষ সিট পাচ্ছে না। ডিএনসিসি হাসপাতালে কিছু সিট পাওয়া যায়। কিন্তু মানুষ সেখানে যায় না। মানুষ যায় ঢাকা মেডিকেলে, সোহরাওয়ার্দীতে, মুগদায়, সলিমুল্লায়। ঘোরাঘুরি করে। দেরি হয়ে যায়। পরে বলা হয়, খুব বেশি দেরি করে ফেলায় অবস্থার অবনতির কারণে মৃত্যু ঠেকানো গেল না।

এই বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেনের ভাষ্য, এখন স্বাস্থ্যবিভাগ বোধহয় একটা আত্মতুষ্টিতে ভুগছে। তারা মনে করছে আমরা তো হাসপাতালে সেবা দিচ্ছি। কিন্তু সঙ্কটাপন্ন রোগী আসাটা তো ঠেকাতে হবে। ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঠেকাতে গতানুগতিক কর্মপদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, স্তরভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে না পারলে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব না। এখন গ্রাম-শহর সব জায়গায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র খুলতে হবে। শহরে অস্থায়ীভাবে খুলতে পারে। গ্রামে তো কেন্দ্র আছেই। কিন্তু সেখানে যন্ত্রপাতি নেই। জনবল নেই। সেই জনবল দিতে হবে।

সরকারি খরচে ডেঙ্গু পরীক্ষার সুযোগ কেবল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতেই আছে মন্তব্য করে এই জনস্বাস্থ্যবিদ আরও বলেন, এখন মানুষ টেস্ট করতে যাচ্ছে না। কারণ সরকারি রেটে টেস্ট করার সুবিধা কেবল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই আছে। বিশাল ভিড় ঠেলে পয়সা খরচ করে যাবে। রেজাল্ট নিতে আবার একই ঝক্কি। তাই মানুষ টেস্ট করতে যাচ্ছে না। অসুস্থ হয়ে পড়ছে কয়েকদিন পরেই। তখন সে সোজা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যাচ্ছে।

এদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, কিছু মানুষ ছাদে পানি জমিয়ে রাখে, সেখানে এডিস মশার লার্ভা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তারা নিজেরা পরিষ্কার করে না এবং বললে তারা রিঅ্যাক্ট করে। তিনি বলেন, কিছু-কিছু বাড়িতে তারা বলে যে আপনারা লার্ভা এনে রেখে দিয়েছেন। এরপর আমাদের জরিমানা করছেন, এরকম কিছু বিষয়ে আছে। তবে এদের সংখ্যা খুবই কম, এগুলো আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে আসে। রোববার বিকেলে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধবিষয়ক জাতীয় কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, তবে বেশিরভাগ লোক কো-অপারেশন করে। কারণ মানুষ নিজেই তো আক্রান্ত হবে, সে নিজেই তো মারা যাবে। তো আমি মনে করি এই ব্যাপারে আমাদের আর যেসব অপশন আছে অংশগ্রহণ করার জন্য, সেগুলোর সবগুলোই আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আর আমরা আজ এখানে বসে কিছু আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষ অনেক সচেতন হয়েছ। আমরা যদি সচেতন করতে না পারতাম, মানুষ যদি অংশগ্রহণ না করতো তাহলে কিন্তু এখানে অবস্থাটা আরও ভয়াবহ হতো। মানুষ অংশগ্রহণ করছে এবং আমাদের পক্ষ থেকেও প্রচেষ্টা আছে। এখন পর্যন্ত আমরা যে ৭০টি সভা করেছি সেখানে আমাদের কোথায় কোনোরকম ঘাটতি আছে, এটা খুব বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে যেটা যেটা হচ্ছে সেটাকে আমরা কাজে লাগাচ্ছি। ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় নির্ধারিতভাবে বলতে পারবো আসলে মশা মারার যে ওষুধ সেটা কাউন্সিলররা কখনো ছিটিয়েছে কি না, সেটা আসলে ইতিহাস। সেই এলাকার মানুষ কখনো মশা মারার কোনো ধরনের মেশিন দেখেছে বলেও আমার মনে হয় না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্ধারিত নামগুলো আমাদের দেন। অবশ্যই আমরা আমলে নেব।’

মোরেলগঞ্জে শাফায়েত হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে গ্রামবাসী

শেরপুরে কষ্টি পাথরের মূর্তি উদ্ধার তিনজন গ্রেপ্তার

মহালছড়িতে নারী সমাবেশ

ছবি

তাহলে সততার কীসের মূল্যায়ন: গ্রেপ্তারের আগে আইভী

মানিকছড়ি হাসপাতালে জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

যাদুকাটা নদী খুলে দেয়ার দাবিতে মানববন্ধন

খোকসা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালসহ দুজনকে জরিমানা

পাবনার হাট-বাজারে অপরিপক্ব টক লিচু বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে

ছবি

ডিমলার নদ-নদীগুলো অবৈধ দখলে মরা খাল, আবাদি জমি

ঝালকাঠিতে ডাকাতি মামলায় ৯ জনের সশ্রম কারাদণ্ড

ছবি

মোরেলগঞ্জে সন্তানহারা মায়ের কান্না, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া

রাজশাহীতে মাদক ব্যবসায়ী আটক

মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নারী নিহত

চাঁদপুরে পুকুর ভরাটের দায়ে জরিমানা

গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার

ছবি

সিরাজগঞ্জে যমুনার ভাঙন আতঙ্কে তীরবর্তী মানুষ

করিমগঞ্জে বজ্রপাতে ৩ গরুর মৃত্যু

ফরিদগঞ্জে পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু

বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

৬ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯

ধর্মপাশায় গাছ থেকে পড়ে কিশোরের মৃত্যু

সেনবাগে বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা

দুই জেলায় বৃদ্ধ ও কিশোরীর আত্মহত্যা

রামুর বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে চুরি-ডাকাতি : জনমনে আতঙ্ক

কালিহাতীতে ভেটেরিনারি দোকানে জরিমানা

ছবি

যশোরে আইন উপেক্ষা করে চলছে পুকুর ভরাট

ভুয়া পশু চিকিৎসকের কারাদণ্ড

ছবি

রাস্তা খুঁড়ে লাপাত্তা ঠিকাদার দ্রুত পাকাকরণের দাবি

ছবি

রাস্তা নির্মাণে অনিয়ম, ইউএনওর কাছে অভিযোগ

রায়গঞ্জে একই দিনে দুজনের আত্মহত্যা

প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি, ২০ লাখ টাকা লুট

ডিবি থেকে সরানো মল্লিক ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি

সীমান্তবর্তী ৩৩ জেলায় পুলিশের বাড়তি সতর্কতা

ফরিদপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন

ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে রামগড় ও লক্ষীছড়িতে বিক্ষোভ

ছবি

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচি

tab

সারাদেশ

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৯ মাসে হাজার ছাড়ালো

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড। শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও আক্রান্ত হচ্ছে, বাড়ছে ঝুঁকি -সংবাদ

রোববার, ০১ অক্টোবর ২০২৩

সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে চলতি বছরের ৯ মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ১ হাজার ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৬ জনের। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৮৮২ জন। রোববার (১ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে এত মৃত্যুর পরেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে গতানুগতিক পদ্ধতিতে কাজ করছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ ও আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঠেকাতে সমন্বিত কোনো ব্যবস্থায় গড়ে তোলেনি এই দুই মন্ত্রণালয়। পুরো বিষয়টি তারা পরিস্থিতির ওপর ছেড়ে দিয়েছে। এতে কোনোকিছুই আর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকেনি। এমন উদাসীন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৮৮২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬২৯ জন ও ঢাকার বাইরের ২ হাজার ২৫৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৭ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৯ জন ও ঢাকার বাইরের ৮ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে রোববার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬ হাজার ২৮৮ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৩ হাজার ৮৫১ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৪৩৭ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯২৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮০ হাজার ৮৩ জন এবং ঢাকার বাইরের ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৪২ জন।

বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯ হাজার ৩৫৭ জন ডেঙ্গুরোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় তিন হাজার ১২০ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬ হাজার ২৩৭ জন। এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারীকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

এই বছর যে ডেঙ্গু বাড়তে পারে, তা চলতি বছরের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা লার্ভা বা শূককীট জরিপেই আশঙ্কা করা হয়েছিল। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে পরিচালিত সেই জরিপে লার্ভার ব্যাপক উপস্থিতি পাওয়া যায়। পরে জুন মাসে পরিচালিত জরিপেও আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে লার্ভার বেশি উপস্থিতি পাওয়া যায় ঢাকার বাড়ি-ঘরে। এ অবস্থায় মশক নিয়ন্ত্রণে কেবল ক্র্যাশ প্রোগ্রাম কিংবা চিরুনি অভিযানের নামে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যে যৎসামান্য তৎপরতা চালানো হয়েছে, তা যথেষ্ঠ ছিল না বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। মশা নিয়ন্ত্রণের অনেক পদ্ধতি আছে। এর কোনোকিছুই আমরা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে পারিনি। এখনও পারছি না। তারা (মেয়ররা) কাজ করতে পারেন না। আতিক (ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম) সাহেব হয়তো কোথাও কিছু একটা দেখলেন আর এখানে তা প্রয়োগ করতে শুরু করলেন। কিন্তু আমাদের এখানে, আমাদের পরিবেশে সেটা কতখানি কার্যকর হবে তার কোনো ধারণাই হয়তো তাদের নেই। তিনি আরও বলেন, এগুলো তো মুখে বললে হবে না। মানুষকে ভালোবাসতে হবে। দেশকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতে হবে। রাজনীতি খালি মুখের কথায় হয় না।

সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর উপচে পড়া ভিড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে মানুষ সিট পাচ্ছে না। ডিএনসিসি হাসপাতালে কিছু সিট পাওয়া যায়। কিন্তু মানুষ সেখানে যায় না। মানুষ যায় ঢাকা মেডিকেলে, সোহরাওয়ার্দীতে, মুগদায়, সলিমুল্লায়। ঘোরাঘুরি করে। দেরি হয়ে যায়। পরে বলা হয়, খুব বেশি দেরি করে ফেলায় অবস্থার অবনতির কারণে মৃত্যু ঠেকানো গেল না।

এই বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেনের ভাষ্য, এখন স্বাস্থ্যবিভাগ বোধহয় একটা আত্মতুষ্টিতে ভুগছে। তারা মনে করছে আমরা তো হাসপাতালে সেবা দিচ্ছি। কিন্তু সঙ্কটাপন্ন রোগী আসাটা তো ঠেকাতে হবে। ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঠেকাতে গতানুগতিক কর্মপদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, স্তরভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে না পারলে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব না। এখন গ্রাম-শহর সব জায়গায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র খুলতে হবে। শহরে অস্থায়ীভাবে খুলতে পারে। গ্রামে তো কেন্দ্র আছেই। কিন্তু সেখানে যন্ত্রপাতি নেই। জনবল নেই। সেই জনবল দিতে হবে।

সরকারি খরচে ডেঙ্গু পরীক্ষার সুযোগ কেবল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতেই আছে মন্তব্য করে এই জনস্বাস্থ্যবিদ আরও বলেন, এখন মানুষ টেস্ট করতে যাচ্ছে না। কারণ সরকারি রেটে টেস্ট করার সুবিধা কেবল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই আছে। বিশাল ভিড় ঠেলে পয়সা খরচ করে যাবে। রেজাল্ট নিতে আবার একই ঝক্কি। তাই মানুষ টেস্ট করতে যাচ্ছে না। অসুস্থ হয়ে পড়ছে কয়েকদিন পরেই। তখন সে সোজা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যাচ্ছে।

এদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, কিছু মানুষ ছাদে পানি জমিয়ে রাখে, সেখানে এডিস মশার লার্ভা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তারা নিজেরা পরিষ্কার করে না এবং বললে তারা রিঅ্যাক্ট করে। তিনি বলেন, কিছু-কিছু বাড়িতে তারা বলে যে আপনারা লার্ভা এনে রেখে দিয়েছেন। এরপর আমাদের জরিমানা করছেন, এরকম কিছু বিষয়ে আছে। তবে এদের সংখ্যা খুবই কম, এগুলো আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে আসে। রোববার বিকেলে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধবিষয়ক জাতীয় কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, তবে বেশিরভাগ লোক কো-অপারেশন করে। কারণ মানুষ নিজেই তো আক্রান্ত হবে, সে নিজেই তো মারা যাবে। তো আমি মনে করি এই ব্যাপারে আমাদের আর যেসব অপশন আছে অংশগ্রহণ করার জন্য, সেগুলোর সবগুলোই আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আর আমরা আজ এখানে বসে কিছু আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষ অনেক সচেতন হয়েছ। আমরা যদি সচেতন করতে না পারতাম, মানুষ যদি অংশগ্রহণ না করতো তাহলে কিন্তু এখানে অবস্থাটা আরও ভয়াবহ হতো। মানুষ অংশগ্রহণ করছে এবং আমাদের পক্ষ থেকেও প্রচেষ্টা আছে। এখন পর্যন্ত আমরা যে ৭০টি সভা করেছি সেখানে আমাদের কোথায় কোনোরকম ঘাটতি আছে, এটা খুব বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে যেটা যেটা হচ্ছে সেটাকে আমরা কাজে লাগাচ্ছি। ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় নির্ধারিতভাবে বলতে পারবো আসলে মশা মারার যে ওষুধ সেটা কাউন্সিলররা কখনো ছিটিয়েছে কি না, সেটা আসলে ইতিহাস। সেই এলাকার মানুষ কখনো মশা মারার কোনো ধরনের মেশিন দেখেছে বলেও আমার মনে হয় না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্ধারিত নামগুলো আমাদের দেন। অবশ্যই আমরা আমলে নেব।’

back to top