অষ্টম থেকে দশম; বিগত তিনটি সংসদের তুলনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলতি একাদশ সংসদে উন্নতি থাকলেও এটি প্রত্যাশিত মাত্রায় কার্যকর নয় বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও কার্যকর বিরোধী দলের অভাবের কারণে মূলত সংসদ প্রত্যাশিত মাত্রায় ভূমিকা রাখতে পারেনি। সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলো কাজ করছে না।
রোববার (১ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।
টিআইবির গবেষক রাবেয়া আক্তার ও মোহাম্মদ আবদুল হান্নান সাখিদার গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সংসদের কার্যকর ভূমিকার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা। সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এজন্য অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়েছে। কারণ, এখন বাস্তব বিরোধী দলবিহীন সংসদ। বিরোধী দল পরিচয়ধারী যে দলটি এখন আছে, তারা আগের তুলনায় কিছুটা সক্রিয় ভূমিকা পালনের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা সার্বিকভাবে আত্মপরিচয়ের সংকটে ছিল। ফলে বিরোধী দলের প্রত্যাশিত ভূমিকা দেখা যায়নি।
২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত একাদশ সংসদের প্রথম থেকে ২২তম অধিবেশন নিয়ে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করে। এই সময়কালে সংসদের কার্যক্রমের মোট ৭৪৪ ঘণ্টা ১৩ মিনিট সময় ব্যয় হয়। ১২টি বাজেট সংক্রান্ত বিল ছাড়া, মোট উত্থাপিত বিলের সংখ্যা ছিল ১০৮টি এবং এর মধ্যে ৬৮টি নতুন বিল, ২৬টি সংশোধনী বিল এবং ২টি বাতিল বিল সংসদে পাস হয়েছে। প্রতিবেদনে সংসদীয় কমিটির কার্যক্রম বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদের মোট সদস্য ৩৫০। ন্যূনতম ৬০ সদস্যের উপস্থিতিতে সংসদের কোরাম পূর্ণ হয়। কোরাম পূর্ণ না হলে সংসদের বৈঠক চালানো যায় না।
টিআইবির ওই গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম থেকে ২২তম অধিবেশনে কোরাম সংকটে যে সময় ব্যয় হয়েছে, তার প্রাক্কলিত অর্থমূল্য ৮৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। টিআইবির হিসেবে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় প্রায় ২০ শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রশংসায়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম ২২টি অধিবেশনে কোরাম সংকটে কেটেছে ৫৪ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট, যা সংসদের কাজে মোট ব্যয় হওয়া সময়ের সাড়ে ৬ শতাংশ। অধিবেশন শুরুর তুলনায় বিরতি-পরবর্তী সময়ে কোরাম সংকট বেশি দেখা গেছে। কোরাম সংকটের কারণে ৮৪ শতাংশ কার্যদিবসে অধিবেশন দেরিতে শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গড়ে প্রায় পাঁচ মিনিট দেরি হয়েছে। আর বিরতির পর অধিবেশন শুরু হতে শতভাগ কার্যদিবসেই দেরি হয়েছে। কোরাম সংকটে ব্যয় হওয়া সময়ে মিনিটপ্রতি ব্যয় প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৪ টাকা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে কোরাম সংকট ছিল ১৮ মিনিট। অবশ্য অষ্টম, নবম ও দশম জাতীয় সংসদের তুলনায় চলতি সংসদে কোরাম সংকট কমেছে। দশম সংসদে গড়ে ২৮ মিনিট কোরাম সংকট ছিল। নবম সংসদে যা ছিল গড়ে ৩২ মিনিট।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, একাদশ সংসদে অধিবেশন চলাকালে অধিকাংশ সাংসদ অতিরিক্ত মাত্রায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। অধিবেশনে মনোযোগ না দিয়ে ফোন ব্যবহার, খোশগল্পে মাতেন অথবা ঘুমান।
গবেষণায় উঠে আসে, বর্তমান একাদশ সংসদে ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ ব্যবসায়ী। আগের তিন মেয়াদ অষ্টম সংসদে ৫৮ শতাংশ, নবম ৫৭ শতাংশ এবং দশম সংসদে ৫৯ শতাংশ ব্যবসায়ী ছিলেন। চার মেয়াদে সংসদে ব্যবসায়ীদের হার বেড়েছে ৪ শতাংশ। বর্তমান একাদশ সংসদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পেশার সংসদ সদস্য হলেন আইনজীবী। আইনজীবী রয়েছেন ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ, কৃষিজীবী ১১ দশমিক ৪ শতাংশ, রাজনীতিবিদ ১১ শতাংশ।
আপত্তিকর ও আক্রমণাত্মক শব্দ ব্যবহার
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি আক্রমণাত্মক শব্দ ব্যবহার করা হয়। নারী সদস্যের বিরুদ্ধে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করা হয়। বিরোধী দলের চেয়ে সরকারি দলের ক্ষেত্রে এসব ব্যত্যয় বেশি হয় বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। আক্রমণাত্মক শব্দের মধ্যে রয়েছে- খুনি, ঘাতক, পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, পাকিস্তানি এজেন্ট, পাকিস্তানি দোসর, কুখ্যাত, ছদ্মবেশী, রাষ্ট্রদ্রোহী, খলনায়ক, কুলাঙ্গার, মূর্খ, অগ্নিসন্ত্রাসের রানী, দুর্নীতির বরপুত্রের জননী, মিথ্যাচারিনী, চোর, জঙ্গিনেতা, বিশ্ববেয়াদব, জগত কুখ্যাত লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, লস্কর, মানি ল-ারিংয়ে মাস্টার্স ইত্যাদি।
টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি সংসদে আইন প্রণয়নের কাজে ব্যয় হয়েছে ১৭ শতাংশ সময়। একটি বিল পাসে গড়ে সময় লেগেছে ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট। এ দুটি ক্ষেত্রেও গত তিনটি সংসদের তুলনায় উন্নতি হয়েছে। গত দশম সংসদে আইন প্রণয়নে ব্যয় হয়েছিল ১২ শতাংশ সময়। আর প্রতিটি বিল পাসে গড়ে সময় লেগেছিল ৩১ মিনিট।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনপ্রতিনিধিত্ব ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ সময়। রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও এর ওপর আলোচনায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ সময়। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বড় সময় ব্যয় করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রশংসা এবং সরকারের অর্জন নিয়ে কথা বলে। ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন সরকারের অর্জন নিয়ে কথা বলে।
টিআইবির হিসাবে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় প্রায় ২০ শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রশংসায়। ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন সরকারের অর্জন নিয়ে কথা বলে। আর প্রায় ১৮ শতাংশ ব্যয় করেছেন অন্য দলের সমালোচনায়। সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছেন শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ সময়।
প্রতিবেদনে বলা আরও হয়েছে, জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী সংসদীয় কমিটিগুলোর প্রতি মাসে অন্তত একটি করে বৈঠক করার কথা। কিন্তু কোনো কমিটিই এ নিয়ম মানেনি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলো কাজ করছে না। ৫০ কমিটি রয়েছে। প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি করে বৈঠক করার কথা থাকলেও প্রতি মাসে কোন কমিটিই বৈঠক করেনি। বর্তমান সংসদের মেয়াদ কালে একটিও সভা করেনি অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি। করোনাকালের ১৮ মাসে ১৩ মাসই বৈঠক করেনি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কমিটি।
সংসদীয় কমিটির নিয়মিত বৈঠক এবং প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রকাশ নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেন তিনি।
রোববার, ০১ অক্টোবর ২০২৩
অষ্টম থেকে দশম; বিগত তিনটি সংসদের তুলনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলতি একাদশ সংসদে উন্নতি থাকলেও এটি প্রত্যাশিত মাত্রায় কার্যকর নয় বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও কার্যকর বিরোধী দলের অভাবের কারণে মূলত সংসদ প্রত্যাশিত মাত্রায় ভূমিকা রাখতে পারেনি। সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলো কাজ করছে না।
রোববার (১ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।
টিআইবির গবেষক রাবেয়া আক্তার ও মোহাম্মদ আবদুল হান্নান সাখিদার গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সংসদের কার্যকর ভূমিকার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা। সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এজন্য অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়েছে। কারণ, এখন বাস্তব বিরোধী দলবিহীন সংসদ। বিরোধী দল পরিচয়ধারী যে দলটি এখন আছে, তারা আগের তুলনায় কিছুটা সক্রিয় ভূমিকা পালনের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা সার্বিকভাবে আত্মপরিচয়ের সংকটে ছিল। ফলে বিরোধী দলের প্রত্যাশিত ভূমিকা দেখা যায়নি।
২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত একাদশ সংসদের প্রথম থেকে ২২তম অধিবেশন নিয়ে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করে। এই সময়কালে সংসদের কার্যক্রমের মোট ৭৪৪ ঘণ্টা ১৩ মিনিট সময় ব্যয় হয়। ১২টি বাজেট সংক্রান্ত বিল ছাড়া, মোট উত্থাপিত বিলের সংখ্যা ছিল ১০৮টি এবং এর মধ্যে ৬৮টি নতুন বিল, ২৬টি সংশোধনী বিল এবং ২টি বাতিল বিল সংসদে পাস হয়েছে। প্রতিবেদনে সংসদীয় কমিটির কার্যক্রম বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদের মোট সদস্য ৩৫০। ন্যূনতম ৬০ সদস্যের উপস্থিতিতে সংসদের কোরাম পূর্ণ হয়। কোরাম পূর্ণ না হলে সংসদের বৈঠক চালানো যায় না।
টিআইবির ওই গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম থেকে ২২তম অধিবেশনে কোরাম সংকটে যে সময় ব্যয় হয়েছে, তার প্রাক্কলিত অর্থমূল্য ৮৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। টিআইবির হিসেবে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় প্রায় ২০ শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রশংসায়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম ২২টি অধিবেশনে কোরাম সংকটে কেটেছে ৫৪ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট, যা সংসদের কাজে মোট ব্যয় হওয়া সময়ের সাড়ে ৬ শতাংশ। অধিবেশন শুরুর তুলনায় বিরতি-পরবর্তী সময়ে কোরাম সংকট বেশি দেখা গেছে। কোরাম সংকটের কারণে ৮৪ শতাংশ কার্যদিবসে অধিবেশন দেরিতে শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গড়ে প্রায় পাঁচ মিনিট দেরি হয়েছে। আর বিরতির পর অধিবেশন শুরু হতে শতভাগ কার্যদিবসেই দেরি হয়েছে। কোরাম সংকটে ব্যয় হওয়া সময়ে মিনিটপ্রতি ব্যয় প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৪ টাকা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে কোরাম সংকট ছিল ১৮ মিনিট। অবশ্য অষ্টম, নবম ও দশম জাতীয় সংসদের তুলনায় চলতি সংসদে কোরাম সংকট কমেছে। দশম সংসদে গড়ে ২৮ মিনিট কোরাম সংকট ছিল। নবম সংসদে যা ছিল গড়ে ৩২ মিনিট।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, একাদশ সংসদে অধিবেশন চলাকালে অধিকাংশ সাংসদ অতিরিক্ত মাত্রায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। অধিবেশনে মনোযোগ না দিয়ে ফোন ব্যবহার, খোশগল্পে মাতেন অথবা ঘুমান।
গবেষণায় উঠে আসে, বর্তমান একাদশ সংসদে ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ ব্যবসায়ী। আগের তিন মেয়াদ অষ্টম সংসদে ৫৮ শতাংশ, নবম ৫৭ শতাংশ এবং দশম সংসদে ৫৯ শতাংশ ব্যবসায়ী ছিলেন। চার মেয়াদে সংসদে ব্যবসায়ীদের হার বেড়েছে ৪ শতাংশ। বর্তমান একাদশ সংসদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পেশার সংসদ সদস্য হলেন আইনজীবী। আইনজীবী রয়েছেন ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ, কৃষিজীবী ১১ দশমিক ৪ শতাংশ, রাজনীতিবিদ ১১ শতাংশ।
আপত্তিকর ও আক্রমণাত্মক শব্দ ব্যবহার
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি আক্রমণাত্মক শব্দ ব্যবহার করা হয়। নারী সদস্যের বিরুদ্ধে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করা হয়। বিরোধী দলের চেয়ে সরকারি দলের ক্ষেত্রে এসব ব্যত্যয় বেশি হয় বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। আক্রমণাত্মক শব্দের মধ্যে রয়েছে- খুনি, ঘাতক, পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, পাকিস্তানি এজেন্ট, পাকিস্তানি দোসর, কুখ্যাত, ছদ্মবেশী, রাষ্ট্রদ্রোহী, খলনায়ক, কুলাঙ্গার, মূর্খ, অগ্নিসন্ত্রাসের রানী, দুর্নীতির বরপুত্রের জননী, মিথ্যাচারিনী, চোর, জঙ্গিনেতা, বিশ্ববেয়াদব, জগত কুখ্যাত লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, লস্কর, মানি ল-ারিংয়ে মাস্টার্স ইত্যাদি।
টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি সংসদে আইন প্রণয়নের কাজে ব্যয় হয়েছে ১৭ শতাংশ সময়। একটি বিল পাসে গড়ে সময় লেগেছে ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট। এ দুটি ক্ষেত্রেও গত তিনটি সংসদের তুলনায় উন্নতি হয়েছে। গত দশম সংসদে আইন প্রণয়নে ব্যয় হয়েছিল ১২ শতাংশ সময়। আর প্রতিটি বিল পাসে গড়ে সময় লেগেছিল ৩১ মিনিট।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনপ্রতিনিধিত্ব ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ সময়। রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও এর ওপর আলোচনায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ সময়। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বড় সময় ব্যয় করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রশংসা এবং সরকারের অর্জন নিয়ে কথা বলে। ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন সরকারের অর্জন নিয়ে কথা বলে।
টিআইবির হিসাবে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় প্রায় ২০ শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রশংসায়। ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন সরকারের অর্জন নিয়ে কথা বলে। আর প্রায় ১৮ শতাংশ ব্যয় করেছেন অন্য দলের সমালোচনায়। সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছেন শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ সময়।
প্রতিবেদনে বলা আরও হয়েছে, জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী সংসদীয় কমিটিগুলোর প্রতি মাসে অন্তত একটি করে বৈঠক করার কথা। কিন্তু কোনো কমিটিই এ নিয়ম মানেনি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলো কাজ করছে না। ৫০ কমিটি রয়েছে। প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি করে বৈঠক করার কথা থাকলেও প্রতি মাসে কোন কমিটিই বৈঠক করেনি। বর্তমান সংসদের মেয়াদ কালে একটিও সভা করেনি অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি। করোনাকালের ১৮ মাসে ১৩ মাসই বৈঠক করেনি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কমিটি।
সংসদীয় কমিটির নিয়মিত বৈঠক এবং প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রকাশ নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেন তিনি।