alt

সারাদেশ

দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ সহজ করেছে আনোয়ারার চার সেতু 

কাঞ্চন সুশীল, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) : বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

দক্ষিণ চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা আনোয়ারা। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বেশ কিছু উপজেলাসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের মূল সড়ক গেছে দ্রুত উন্নয়নশীল এই উপজেলার ওপর দিয়ে। মূলত শাহ্ আমানত সেতুর পরই কর্ণফুলী উপজেলা হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশ পথ এই আনোয়ারা। 

মূল সড়কগুলোর সংযুক্তিতে রয়েছে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সেতু। তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাঁশখালী পিএবি সড়কের তৈলারদ্বীপ সেতু, আনোয়ারা-পটিয়া আরকান সড়কের মুরালী সেতু, পটিয়া-আনোয়ারা কালীগঞ্জ সেতু এবং আরাকান সড়ক সংযুক্ত চন্দনাইশের পিএবি সড়কে অবস্থিত বরকল সেতু। একমাত্র তৈলারদ্বীপ সেতু ছাড়া বিগত পাঁচ বছর আগেও ছিল না বাকি এই  তিন সেতু। জোড়াতালি দেয়া কালীগঞ্জ, বরকল বেইলি ব্রিজ থাকলেও মুরালী খালে যাতায়াতে ভরসা ছিল শুধুই সাম্পান। সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হতো দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জনসাধারণকে। 

এদিকে দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ চালু হয়েছে গত ২৮ অক্টোবর। টানেলকে ঘিরে আনোয়ারা হয়ে উঠছে অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল। মেগা প্রকল্পকে ঘিরে ইতিমধ্যে আনোয়ারার চার সংযোগ সড়কের তিন খালে নির্মাণ হয়েছে সংযোগ সেতু। এতে আনোয়ারার অর্থনীতি তো ফুলেফেঁপে উঠছেই, দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থাও সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে বলে মনে করেছেন স্থানীয়রা। সেতুগুলোর কল্যাণে কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ আরও সহজাত  হয়েছে বলে মনে করছেন সেতু সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামেরই আর্থ-সামাজিক অবস্থায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

তৈলারদ্বীপ সেতু : পাঁচ বছর আগেও আনোয়ারার সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সংযোগে একমাত্র সেতু ছিল শঙ্খ নদীর ওপর অবস্থিত তৈলারদ্বীপ সেতু। ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিকল্প সড়ক হিসেবে পরিচিত আনোয়ারা-বাঁশখালী সীমান্তে শঙ্খ নদীতে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৫ সালের শেষদিকে এসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেতুটির উদ্বোধন করেন। এই সেতুর মাধ্যমেই স্থাপিত হয়েছিল আনোয়ারার পিএবি সড়ক হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার জেলার নতুন সংযোগ। বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে ৫টি সার্ভিসের গাড়ি চলাচল করছে।

কালীগঞ্জ সেতু : দীর্ঘ দুই যুগ পর ২০২১ সালে এসে পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে আনোয়ারা-পটিয়া সংযোগ সড়কের কালীগঞ্জ সেতু। দুই উপজেলার সংযোগ স্থাপনকারী মুরালী শিকলবাহা খালের ওপর ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি নির্মাণের ফলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে আনোয়ারা ও পটিয়া উপজেলায়। পাশাপাশি সহজ হয়েছে আনোয়ারা ও পশ্চিম চন্দনাইশের সঙ্গে পটিয়ার বিরাট একটি অংশের জনগণের যাতায়াত। ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি নির্মাণ করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ-সওজ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার আগে ১৯৭০ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। মাঝখানে যুদ্ধাবস্থায় এক বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৭২ সালে ব্রিজটি নির্মাণ হয়। আশির দশকে আনোয়ারা উপজেলায় উন্নীত হলে এ সেতু দিয়ে শুরু হয় বাস চলাচল। ওই সময় থেকে পূর্ব আনোয়ারার লোকজন এই সেতু দিয়েই যাতায়াত করতেন চট্টগ্রাম শহরে। 

মুরালী সেতু : পটিয়া ও আনোয়ারাবাসীর বহুল প্রত্যাশিত আরেক সেতু হচ্ছে মুরালী সেতু। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই শুরু হয় এই সেতুর কাজ। সেতু নির্মাণের আগে মুরালী খালে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল সাম্পান। অত্যাধুনিক পিসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ৩০.৬৩ কোটি ধরা হলেও এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৬ কোটি টাকা। ৭৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় সেতুটির। সেতুর দৈর্ঘ্য ১০৬.৮৯ মিটার, প্রস্থ ১০.২৫ মিটার। ২৫০ মিটার করে মোট ৫০০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে সেতুর দুই প্রান্তে। এই সেতু নির্মাণের ফলে দুই উপজেলার জনসাধারণই কেবল সুফল ভোগ করছে না; আরকান সড়ক হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিকল্প সড়ক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই সেতু। 

বরকল সেতু : দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে বরকল সেতু। এই সেতু নির্মাণের ফলে ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে আরাকান রোড সংযুক্ত পিএবি সড়কের যাতায়াত। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ সেতু নির্মাণের জন্য সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে চাঁনখালী খালের ওপর ১৯৯৪ সালে এক কোটি টাকা ব্যয়ে বেইলি সেতু নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় পার হলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নির্মাণ হয়নি পূর্ণাঙ্গ সেতু। সেই থেকে স্থানীয়রা ঝুঁকিপূর্ণ সেই বেইলি সেতুটির স্থলে স্থায়ীভাবে সেতু নির্মাণের দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশ করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। পরে ২০১৫ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চাঁনখালী খালের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুটি পরিদর্শন করে দ্রুত একটি পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশের আলোকেই বরকল সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। ২৮ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত অত্যাধুনিক পিসি গার্ডারবিশিষ্ট সেতুটির দৈর্ঘ্য ১১৮ মিটার আর প্রস্থ ১০.২৫ মিট

আনোয়ারার এই চার সেতু নির্মাণের ফলে কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে কথা হয়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু টানেল। আনোয়ারাকে তাই অর্থনৈতিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে আনোয়ারা সংযোগ সড়ক ও সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। টানেলের বদৌলতে আনোয়ারায় যে আঞ্চলিক বাজার হবে তা ঝুঁকিমুক্ত হবে। 

এই চার সেতু উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে আনোয়ারা একটি অর্থনৈতিক জোন। এটি একটি পর্যায়ে দেশের অর্থনৈতিক আঞ্চলিক বাজারে পরিণত হবে। উন্নয়নে মূল ভূমিকা থাকে যোগাযোগ ব্যবস্থার। পাশাপাশি এসব সেতুর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হতে পারবে পটিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া উপজেলাসহ পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রাম। সব মিলিয়ে পাল্টে যাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থা।

ছবি

৭টি ইউনিটই বন্ধ, উৎপাদনে ফিরতে গ্যাস চায় ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র

ছবি

আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরায় পৌঁছাল ৬০ কার্টন হাঁড়িভাঙ্গা আম

ছবি

টানা বৃষ্টিতে বেগমগঞ্জে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ

দৌলতপুরে একই ক্লিনিকে এক মাসে দুই প্রসূতির মৃত্যু : ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা

বিএনপি সমর্থিত ড্যাবের নির্বাচন নিয়ে পঙ্গু হাসপাতালে মতবিনিময়

ফকিরহাটে হ্যামকো কোম্পানির কারখানায় ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৯ লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার

জুলাই শহীদদের স্মরণে সিরাজগঞ্জে স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন

চান্দিনা পৌরসভার বাজেট ঘোষণা

বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক

চট্টগ্রামে খাবারে তেলাপোকা, জরিমানা গুনল ৩ হোটেল

ছবি

বোয়ালখালীতে আমনের বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত কৃষক

ডুমুরিয়ার বাজারে বেড়েছে সবজি ও মাছের দাম

দোহারে ডাকাতি মামলায় আটক ৪

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪ খুনের মামলায় আরসা প্রধান আতাউল্লাহ রিমান্ডে

ছবি

খাগড়াছড়িতে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ, দীঘিনালা-লংগদু সড়কে যান চলাচল বন্ধ

ছবি

নদের পাড় কেটে নৌকার উপর শত শত জিও ব্যাগ ভর্তি

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহতের বাড়িতে এনসিপি নেতারা

ছবি

পূর্বধলায় গাছের চারা বিতরণ

মুন্সীগঞ্জে পরিত্যক্ত কক্ষে যুবকের মরদেহ

ছবি

বোয়ালখালীতে ব্যক্তি উদ্যোগে রাস্তা সংস্কার

ঝর্ণা দেখতে গিয়ে আটকে পড়া ৮ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করল পুলিশ

সীমান্ত দিয়ে নারীসহ সাতজনকে পুশইন

মাদারগঞ্জ সড়কে আহত ৩, পা বিছিন্ন ১

মাওয়ায় স্পিডবোট ট্রলার সংঘর্ষের ৬ দিন পর নিখোঁজ যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

আষাঢ় ঘনালেই জেগে ওঠে পদ্মা তীরের জেলেপাড়া

পীরগাছায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ আহত ৫০

ছবি

পরিবেশের ক্ষতিকর গাছের চারা ধ্বংস কার্যক্রমের উদ্বোধন

কেশবপুরে খালের জলকপাট ভেঙে লোকালয়ে পানি

পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা, আসামি ৫ হাজার

চাঁদপুরে অস্ত্রসহ ৬ কিশোর গ্রেপ্তার

ছবি

দুমকিতে অতি বৃষ্টিতে জনজীবনে ভোগান্তি

মোরেলগঞ্জে এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সচিবকে অব্যাহতি

চাঁদপুরে ৭ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

বাগেরহাটে এক পরিবারের ৮টি গরু চুরি

জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দোকান ভাঙচুর-লুটপাট

যমজ শিশুকে হত্যা করেছে মা নিজেই, আদালতে জবানবন্দি

tab

সারাদেশ

দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ সহজ করেছে আনোয়ারার চার সেতু 

কাঞ্চন সুশীল, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম)

বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

দক্ষিণ চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা আনোয়ারা। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বেশ কিছু উপজেলাসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের মূল সড়ক গেছে দ্রুত উন্নয়নশীল এই উপজেলার ওপর দিয়ে। মূলত শাহ্ আমানত সেতুর পরই কর্ণফুলী উপজেলা হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশ পথ এই আনোয়ারা। 

মূল সড়কগুলোর সংযুক্তিতে রয়েছে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সেতু। তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাঁশখালী পিএবি সড়কের তৈলারদ্বীপ সেতু, আনোয়ারা-পটিয়া আরকান সড়কের মুরালী সেতু, পটিয়া-আনোয়ারা কালীগঞ্জ সেতু এবং আরাকান সড়ক সংযুক্ত চন্দনাইশের পিএবি সড়কে অবস্থিত বরকল সেতু। একমাত্র তৈলারদ্বীপ সেতু ছাড়া বিগত পাঁচ বছর আগেও ছিল না বাকি এই  তিন সেতু। জোড়াতালি দেয়া কালীগঞ্জ, বরকল বেইলি ব্রিজ থাকলেও মুরালী খালে যাতায়াতে ভরসা ছিল শুধুই সাম্পান। সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হতো দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জনসাধারণকে। 

এদিকে দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ চালু হয়েছে গত ২৮ অক্টোবর। টানেলকে ঘিরে আনোয়ারা হয়ে উঠছে অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল। মেগা প্রকল্পকে ঘিরে ইতিমধ্যে আনোয়ারার চার সংযোগ সড়কের তিন খালে নির্মাণ হয়েছে সংযোগ সেতু। এতে আনোয়ারার অর্থনীতি তো ফুলেফেঁপে উঠছেই, দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থাও সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে বলে মনে করেছেন স্থানীয়রা। সেতুগুলোর কল্যাণে কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ আরও সহজাত  হয়েছে বলে মনে করছেন সেতু সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামেরই আর্থ-সামাজিক অবস্থায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

তৈলারদ্বীপ সেতু : পাঁচ বছর আগেও আনোয়ারার সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সংযোগে একমাত্র সেতু ছিল শঙ্খ নদীর ওপর অবস্থিত তৈলারদ্বীপ সেতু। ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিকল্প সড়ক হিসেবে পরিচিত আনোয়ারা-বাঁশখালী সীমান্তে শঙ্খ নদীতে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৫ সালের শেষদিকে এসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেতুটির উদ্বোধন করেন। এই সেতুর মাধ্যমেই স্থাপিত হয়েছিল আনোয়ারার পিএবি সড়ক হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার জেলার নতুন সংযোগ। বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে ৫টি সার্ভিসের গাড়ি চলাচল করছে।

কালীগঞ্জ সেতু : দীর্ঘ দুই যুগ পর ২০২১ সালে এসে পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে আনোয়ারা-পটিয়া সংযোগ সড়কের কালীগঞ্জ সেতু। দুই উপজেলার সংযোগ স্থাপনকারী মুরালী শিকলবাহা খালের ওপর ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি নির্মাণের ফলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে আনোয়ারা ও পটিয়া উপজেলায়। পাশাপাশি সহজ হয়েছে আনোয়ারা ও পশ্চিম চন্দনাইশের সঙ্গে পটিয়ার বিরাট একটি অংশের জনগণের যাতায়াত। ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি নির্মাণ করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ-সওজ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার আগে ১৯৭০ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। মাঝখানে যুদ্ধাবস্থায় এক বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৭২ সালে ব্রিজটি নির্মাণ হয়। আশির দশকে আনোয়ারা উপজেলায় উন্নীত হলে এ সেতু দিয়ে শুরু হয় বাস চলাচল। ওই সময় থেকে পূর্ব আনোয়ারার লোকজন এই সেতু দিয়েই যাতায়াত করতেন চট্টগ্রাম শহরে। 

মুরালী সেতু : পটিয়া ও আনোয়ারাবাসীর বহুল প্রত্যাশিত আরেক সেতু হচ্ছে মুরালী সেতু। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই শুরু হয় এই সেতুর কাজ। সেতু নির্মাণের আগে মুরালী খালে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল সাম্পান। অত্যাধুনিক পিসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ৩০.৬৩ কোটি ধরা হলেও এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৬ কোটি টাকা। ৭৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় সেতুটির। সেতুর দৈর্ঘ্য ১০৬.৮৯ মিটার, প্রস্থ ১০.২৫ মিটার। ২৫০ মিটার করে মোট ৫০০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে সেতুর দুই প্রান্তে। এই সেতু নির্মাণের ফলে দুই উপজেলার জনসাধারণই কেবল সুফল ভোগ করছে না; আরকান সড়ক হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিকল্প সড়ক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই সেতু। 

বরকল সেতু : দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে বরকল সেতু। এই সেতু নির্মাণের ফলে ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে আরাকান রোড সংযুক্ত পিএবি সড়কের যাতায়াত। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ সেতু নির্মাণের জন্য সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে চাঁনখালী খালের ওপর ১৯৯৪ সালে এক কোটি টাকা ব্যয়ে বেইলি সেতু নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় পার হলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নির্মাণ হয়নি পূর্ণাঙ্গ সেতু। সেই থেকে স্থানীয়রা ঝুঁকিপূর্ণ সেই বেইলি সেতুটির স্থলে স্থায়ীভাবে সেতু নির্মাণের দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশ করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। পরে ২০১৫ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চাঁনখালী খালের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুটি পরিদর্শন করে দ্রুত একটি পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশের আলোকেই বরকল সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। ২৮ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত অত্যাধুনিক পিসি গার্ডারবিশিষ্ট সেতুটির দৈর্ঘ্য ১১৮ মিটার আর প্রস্থ ১০.২৫ মিট

আনোয়ারার এই চার সেতু নির্মাণের ফলে কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে কথা হয়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু টানেল। আনোয়ারাকে তাই অর্থনৈতিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে আনোয়ারা সংযোগ সড়ক ও সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। টানেলের বদৌলতে আনোয়ারায় যে আঞ্চলিক বাজার হবে তা ঝুঁকিমুক্ত হবে। 

এই চার সেতু উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে আনোয়ারা একটি অর্থনৈতিক জোন। এটি একটি পর্যায়ে দেশের অর্থনৈতিক আঞ্চলিক বাজারে পরিণত হবে। উন্নয়নে মূল ভূমিকা থাকে যোগাযোগ ব্যবস্থার। পাশাপাশি এসব সেতুর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হতে পারবে পটিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া উপজেলাসহ পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রাম। সব মিলিয়ে পাল্টে যাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থা।

back to top