প্রায় ২০ ফুট লম্বা এক চালা একটি ঘর। যার অর্ধেক ইটের ঘাতুনি বাকীটুকু টিনের ঘেরা। খোলা জানালা। ঘরটির বাইরে একটি টয়লেট। এটির নাম মাতৃছায়া বৃদ্ধাশ্রম। লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন একটি জায়গা। মানবেতর জীবন যাপন করছে আশ্রমে থাকা গুটি কয়েক বৃদ্ধ। মাঝে মাঝে এখানে গাড়ি দিয়ে কিছু লোক আসেন সঙ্গে নিয়ে আসেন কিছু প্যাকেটজাত দ্রব্য।গাড়ি দিয়ে আসা লোকগুলো বৃদ্ধাশ্রমে থাকা লোকগুলোর ছবি তোলেন আর এই ব্রদ্ধাশ্রমের মালিকের সাথে কথা বলে চলে যান। জানালেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল ঘরটির সামনে টয়লেটের পাশেই নোংড়া এক খন্ড চাদর দিয়ে শরীরের কিছু অংশ ঢাকা। বয়স ৬৫ কি ৭০ হবে। কথা বলতে পারেন না। শুধু চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরে। প্রায় অসাড় দেহ নিয়ে আধা ভাঙা চৌকিতে বসে আছেন। মাথার ওপর প্লাস্টিকের বস্তার ছাউনি। এতে রোদ-বৃষ্টি কিানটিই ফেরে বলে মনে হয় না। এখানে খেয়ে না খেয়ে গত প্রায় এক বছর ধরে এই কথিত বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করছেন বাক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ হযরত আলী। বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় বৃদ্ধের কোথায় বাড়ি বা কোথা থেকে এসেছেন কেউ বলতে পারলেন না স্থানীয়রা। ‘মাতৃছায়া’ নামে এ বৃদ্ধাশ্রমটি গড়ে উঠেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরখামাটখালী এলাকায়।
সেখানে গিয়ে মাতৃস্নেহ বা মাতৃছায়া কোনোটিরই দেখা মিলেনি এই ‘মাতৃছায়া’ বৃদ্ধাশ্রমে। লোকালয় থেকে প্রায় অনেকটা বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে অবস্থিত বৃদ্ধাশ্রমটি গড়ে তুলেছেন একই ইউনিয়নের বীরকামটখালী গ্রামের মরছব আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাস্টারোলে এক সময় গেটম্যানের চাকুরী করতেন। বাড়িতে সহায়সম্পদ না থাকলেও চরে ৮ শতক জমি কিনে প্রায় ৪ শতক জমির ওপর গড়ে তুলেছেন এই বৃদ্ধাশ্রমটি। সরেজমিনে গিয়ে সে সময়ে বৃদ্ধাশ্রমটির দেখভাল করার কাউকে পাওয়া গেল না। সেই হজরত আলী ভরদুপুরে বৃদ্ধাশ্রমটির বাইরে বসা আর ঘরটিতে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ । ঘরটির কাছে যেতেই পায়ের শব্দ শুনে ভেতর থেকেই এক বৃদ্ধার কণ্ঠ, কে আইছেন, এই যে চাবি আমার কাছে। পরে একটা ফাঁকা জায়গা দিয়ে এ প্রতিনিধিকে চাবি দেওয়া হয়। তালা খোলে ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচজন বাসিন্দা গাদাগাদি করে বসবাস করছেন। তার মধ্যে আছেন দুই মানসিক প্রতিবন্ধী নারী । এই নারী দুজন এ প্রতিনিধিকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের স্বামীর কাছে তাকে ফেরত পাঠাতে অনুরোধ করেন। এখানে কে এনেছে তা তিনি বলতে পারছেন না। তবে তিনি যেতে চাইলেও এখন আর যেতে দেয়া হচ্ছে না।
নাজিরপুর উপজেলার চরমাটিভাঙা গ্রামের মো. কামরুজ্জামান (৫১) থাকেন এ বৃদ্ধাশ্রমে। তিনি জানান, গ্রামের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের হুইসেল শুনে অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। পরে তাঁর দেহের বাঁ দিকের অংশ অবশ হয়ে পড়ে।
এক নারীর সহায়তায় তিনি এই বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই পেয়েছেন। কামরুজ্জামান বলেন, তাঁর বাড়ির লোকজন যদি খোঁজ পায় তাহলে তাঁকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। কিন্তু বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ আমাকে ছাড়তে চাইছেন না বলে অভিযোগ করেন। তিনি আরো বলেন, মাঝেমধ্যে এখানে গাড়ি নিয়ে লোকজন এসে ছবি তুলে নিয়ে যায়। সঙ্গে নিয়ে আসেন অনেক প্যাকেটজাতীয় জিনিসপত্র। কিন্তু তাদের কিছুই দেওয়া হয় না। স্থানীয়রা জানান, এটির ভেতরে কী হয় তারা কেউ কিছু জানেন না। এলাকার কাউকে কিছু বলেও না কারো কোনো পরামর্শও নেয় না।
বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক রফিকুল ইসলামের খোঁজ নিলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি এ কাজটি হাতে নিয়েছেন। তবে সেই চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, রফিক বৃদ্ধাশ্রম করার একটি উদ্যোগ নিয়েছে বলে আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা তাকে মাঝে মধ্যে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু এই সহযোগিতা বৃদ্ধাশ্রমে কতটুকু কাজে লাগে সেটি তো আমরা সব সময় খোঁজ নিতে পারি না। বর্তমানে এলাকার কিছু প্রবাসীও তাকে সহযোগিতা করেন বলে জানালেও বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বৃদ্ধারা ভাল খাবার বা সহযোগিতা পাচ্ছে না। এখানে নেই কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা।
যারা এই বৃদ্ধাশ্রমে আছেন, তাদের কিভাবে আনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন হাসপাতাল ও রাস্তাঘাট থেকে আনা হয়েছে। মোট বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা কয়জন জানতে চাইলে তিনি সাতজনের কথা বললেও তাঁর বৃদ্ধাশ্রমে আছে পাঁচজন। বাকি দুজন তাঁর বাড়িতে আছেন বলে জানালেও সেখানে খোঁজ নিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ইউনিয়ন পরিসদেও চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিনকে এই বৃদ্ধশ্র্যমের সভাপতি করা হয়েছে বললেও তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানলেন। তবে একার ইউএনও সাহেবের মাধ্যমে কিছু অর্থ সহযোগিতা করা হযেছে।
এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা ইনসান আলী বলেন, বৃদ্ধাশ্রমটির খবর আমি পেয়েছি কিন্তু এটি নিবন্ধন করা না থাকায় তাকে নিবন্ধন করতে বলা হয়েছে। নিবন্ধন না থাকলেও সামজিকভাবে এটি করা হলে এর কোন তদারকি আমরা করতে পারি না। জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাও এর খবর জানেন না বলেও জানান।
বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০
প্রায় ২০ ফুট লম্বা এক চালা একটি ঘর। যার অর্ধেক ইটের ঘাতুনি বাকীটুকু টিনের ঘেরা। খোলা জানালা। ঘরটির বাইরে একটি টয়লেট। এটির নাম মাতৃছায়া বৃদ্ধাশ্রম। লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন একটি জায়গা। মানবেতর জীবন যাপন করছে আশ্রমে থাকা গুটি কয়েক বৃদ্ধ। মাঝে মাঝে এখানে গাড়ি দিয়ে কিছু লোক আসেন সঙ্গে নিয়ে আসেন কিছু প্যাকেটজাত দ্রব্য।গাড়ি দিয়ে আসা লোকগুলো বৃদ্ধাশ্রমে থাকা লোকগুলোর ছবি তোলেন আর এই ব্রদ্ধাশ্রমের মালিকের সাথে কথা বলে চলে যান। জানালেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল ঘরটির সামনে টয়লেটের পাশেই নোংড়া এক খন্ড চাদর দিয়ে শরীরের কিছু অংশ ঢাকা। বয়স ৬৫ কি ৭০ হবে। কথা বলতে পারেন না। শুধু চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরে। প্রায় অসাড় দেহ নিয়ে আধা ভাঙা চৌকিতে বসে আছেন। মাথার ওপর প্লাস্টিকের বস্তার ছাউনি। এতে রোদ-বৃষ্টি কিানটিই ফেরে বলে মনে হয় না। এখানে খেয়ে না খেয়ে গত প্রায় এক বছর ধরে এই কথিত বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করছেন বাক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ হযরত আলী। বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় বৃদ্ধের কোথায় বাড়ি বা কোথা থেকে এসেছেন কেউ বলতে পারলেন না স্থানীয়রা। ‘মাতৃছায়া’ নামে এ বৃদ্ধাশ্রমটি গড়ে উঠেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরখামাটখালী এলাকায়।
সেখানে গিয়ে মাতৃস্নেহ বা মাতৃছায়া কোনোটিরই দেখা মিলেনি এই ‘মাতৃছায়া’ বৃদ্ধাশ্রমে। লোকালয় থেকে প্রায় অনেকটা বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে অবস্থিত বৃদ্ধাশ্রমটি গড়ে তুলেছেন একই ইউনিয়নের বীরকামটখালী গ্রামের মরছব আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাস্টারোলে এক সময় গেটম্যানের চাকুরী করতেন। বাড়িতে সহায়সম্পদ না থাকলেও চরে ৮ শতক জমি কিনে প্রায় ৪ শতক জমির ওপর গড়ে তুলেছেন এই বৃদ্ধাশ্রমটি। সরেজমিনে গিয়ে সে সময়ে বৃদ্ধাশ্রমটির দেখভাল করার কাউকে পাওয়া গেল না। সেই হজরত আলী ভরদুপুরে বৃদ্ধাশ্রমটির বাইরে বসা আর ঘরটিতে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ । ঘরটির কাছে যেতেই পায়ের শব্দ শুনে ভেতর থেকেই এক বৃদ্ধার কণ্ঠ, কে আইছেন, এই যে চাবি আমার কাছে। পরে একটা ফাঁকা জায়গা দিয়ে এ প্রতিনিধিকে চাবি দেওয়া হয়। তালা খোলে ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচজন বাসিন্দা গাদাগাদি করে বসবাস করছেন। তার মধ্যে আছেন দুই মানসিক প্রতিবন্ধী নারী । এই নারী দুজন এ প্রতিনিধিকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের স্বামীর কাছে তাকে ফেরত পাঠাতে অনুরোধ করেন। এখানে কে এনেছে তা তিনি বলতে পারছেন না। তবে তিনি যেতে চাইলেও এখন আর যেতে দেয়া হচ্ছে না।
নাজিরপুর উপজেলার চরমাটিভাঙা গ্রামের মো. কামরুজ্জামান (৫১) থাকেন এ বৃদ্ধাশ্রমে। তিনি জানান, গ্রামের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের হুইসেল শুনে অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। পরে তাঁর দেহের বাঁ দিকের অংশ অবশ হয়ে পড়ে।
এক নারীর সহায়তায় তিনি এই বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই পেয়েছেন। কামরুজ্জামান বলেন, তাঁর বাড়ির লোকজন যদি খোঁজ পায় তাহলে তাঁকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। কিন্তু বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ আমাকে ছাড়তে চাইছেন না বলে অভিযোগ করেন। তিনি আরো বলেন, মাঝেমধ্যে এখানে গাড়ি নিয়ে লোকজন এসে ছবি তুলে নিয়ে যায়। সঙ্গে নিয়ে আসেন অনেক প্যাকেটজাতীয় জিনিসপত্র। কিন্তু তাদের কিছুই দেওয়া হয় না। স্থানীয়রা জানান, এটির ভেতরে কী হয় তারা কেউ কিছু জানেন না। এলাকার কাউকে কিছু বলেও না কারো কোনো পরামর্শও নেয় না।
বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক রফিকুল ইসলামের খোঁজ নিলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি এ কাজটি হাতে নিয়েছেন। তবে সেই চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, রফিক বৃদ্ধাশ্রম করার একটি উদ্যোগ নিয়েছে বলে আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা তাকে মাঝে মধ্যে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু এই সহযোগিতা বৃদ্ধাশ্রমে কতটুকু কাজে লাগে সেটি তো আমরা সব সময় খোঁজ নিতে পারি না। বর্তমানে এলাকার কিছু প্রবাসীও তাকে সহযোগিতা করেন বলে জানালেও বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বৃদ্ধারা ভাল খাবার বা সহযোগিতা পাচ্ছে না। এখানে নেই কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা।
যারা এই বৃদ্ধাশ্রমে আছেন, তাদের কিভাবে আনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন হাসপাতাল ও রাস্তাঘাট থেকে আনা হয়েছে। মোট বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা কয়জন জানতে চাইলে তিনি সাতজনের কথা বললেও তাঁর বৃদ্ধাশ্রমে আছে পাঁচজন। বাকি দুজন তাঁর বাড়িতে আছেন বলে জানালেও সেখানে খোঁজ নিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ইউনিয়ন পরিসদেও চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিনকে এই বৃদ্ধশ্র্যমের সভাপতি করা হয়েছে বললেও তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানলেন। তবে একার ইউএনও সাহেবের মাধ্যমে কিছু অর্থ সহযোগিতা করা হযেছে।
এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা ইনসান আলী বলেন, বৃদ্ধাশ্রমটির খবর আমি পেয়েছি কিন্তু এটি নিবন্ধন করা না থাকায় তাকে নিবন্ধন করতে বলা হয়েছে। নিবন্ধন না থাকলেও সামজিকভাবে এটি করা হলে এর কোন তদারকি আমরা করতে পারি না। জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাও এর খবর জানেন না বলেও জানান।