বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন ভুক্ত উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনিকল ‘সেতাবগঞ্জ চিনিকল’ বন্ধ করে দেয়ায় অনেক শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারিয়ে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও যানবাহন। অন্যদিকে ৯০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই চিনিকলকে ঘিরে সেতাবগঞ্জের যে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হয়েছিল তা আজ স্থবির হয়ে পড়েছে।
প্রকাশ, এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তিগত উদ্যোক্তা সুগরমল আগরওয়াল ও নাগরমল আগরওয়াল দুই ভাই ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। দিনাজপুরের একমাত্র ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান সেতাবগঞ্জ চিনিকলের অধীনে আখ চাষের জন্য আবাদি জমি ও শ্রমিক-কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের আবাসনসহ মোট ৩ হাজার ৮৬০ একর জমি রয়েছে। ১৯৩৩ সাল থেকে সেতাবগঞ্জ চিনি কলটি তারা পরিচালনা করলেও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চিনিকলটির মেশিনপত্র ধ্বংস করে ফেলে। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার এই প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭৪ সালে একমাত্র ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সেতাবগঞ্জ চিনিকলটি লে-অব ঘোষণা করে।
১৯৮২ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মিলটিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করে পুনরায় উৎপাদন শুরু করা হয়। চিনিকলটি চালু হওয়ায় আবারও প্রাণ ফিরে পান আখচাষি ও চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। অন্যদিকে এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সম্প্রসারিত হতে থাকে। শ্রমিক-কর্মচারী-আখচাষিদের পদচারণা ও কারখানার শব্দে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠে সেতাবগঞ্জ শহর। আখ বোঝাই ট্রাক্টরের চিরচেনা শব্দে সেতাবগঞ্জবাসী ফিরে পান ছন্দময় জীবন। চিনিকলের নিজস্ব জমি ও সাধারণ কৃষকের রোপণকৃত আখ দিয়ে সে সময় বছরে ৩ মাস থেকে ৪ মাস আখ মাড়াই করতো চিনিকলটি। এরপর চিনিকলটি বয়সের ভারে যন্ত্রপাতি অনেকটাই অকেজো হয়ে পরে এবং আখ মাড়াইয়ের সক্ষমতা কমে আসে। অন্যদিকে অসাধু কর্মকর্তাদের আকাশচুম্বী দুর্নীতি ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে চিনিকলটি লোকসান গুনতে থাকে। সর্বশেষ লোকসানের পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ৪ শত কোটি টাকা। অথচ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই সরকার ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বরে দেশের ৬টি চিনিকলের সঙ্গে সেতাবগঞ্জ চিনিকলটিও বন্ধ করে দেয়।
চিনিকলের প্রায় ৭৫০ জন শ্রমিকের মধ্যে বর্তমানে শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা নিয়োজিত আছে একশত জনের মতো। বাকি শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দেশের বিভিন্ন চিনিকলে বদলি হয়ে কাজ করছেন।
চিনিকলের শ্রমিক মহসীন আলী বলেন, সেতাবগঞ্জ চিনিকলের আখ মাড়াই বন্ধ হওয়াতে চিনিকলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ ও আখ আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর এবং ট্রাক্টরের ট্রলি খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে। ট্রাক্টর এবং ট্রাক্টরের ট্রলিতে জন্ম নিয়েছে হাজারও আগাছা, পরিণত হয়েছে জঙ্গলে। সেই জঙ্গলে বাস করছে বিষাক্ত অনেক প্রাণী। এই বিশাল জঙ্গলের ভিতরেই অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে চিনিকলটির কোটি কোটি টাকার সম্পদ। একই অবস্থা চিনিকলের ক্যান ক্যারিয়ারটির। অযত্নে আর অবহেলায় যেন সব কিছুই আজ নিঃশেষ হতে বসেছে।
এদিকে বোচাগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতাবগঞ্জ চিনিকলটির আখ মাড়াই চালু করার জোর দাবি জানিয়েছেন। কেননা, চিনিকলের শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মাসিক বেতন প্রাই দেড় কোটি টাকা বোচাগঞ্জ উপজেলা শহরে ব্যবহার হতো। চিনিকলের আখ মাড়াই বন্ধ হওয়াতে এলাকার ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে মন্দাভাব।
এ ব্যাপারে সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হুমায়ন কবীর বলেন, এসব ট্রাক্টর অন্য মিলের চাহিদাপত্র আসলে আমরা তা পাঠিয়ে দিবো। এসব ট্রাক্টর ও ট্রলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উন্নত কোন ব্যবস্থা নেই।
বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন ভুক্ত উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনিকল ‘সেতাবগঞ্জ চিনিকল’ বন্ধ করে দেয়ায় অনেক শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারিয়ে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও যানবাহন। অন্যদিকে ৯০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই চিনিকলকে ঘিরে সেতাবগঞ্জের যে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হয়েছিল তা আজ স্থবির হয়ে পড়েছে।
প্রকাশ, এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তিগত উদ্যোক্তা সুগরমল আগরওয়াল ও নাগরমল আগরওয়াল দুই ভাই ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। দিনাজপুরের একমাত্র ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান সেতাবগঞ্জ চিনিকলের অধীনে আখ চাষের জন্য আবাদি জমি ও শ্রমিক-কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের আবাসনসহ মোট ৩ হাজার ৮৬০ একর জমি রয়েছে। ১৯৩৩ সাল থেকে সেতাবগঞ্জ চিনি কলটি তারা পরিচালনা করলেও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চিনিকলটির মেশিনপত্র ধ্বংস করে ফেলে। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার এই প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭৪ সালে একমাত্র ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সেতাবগঞ্জ চিনিকলটি লে-অব ঘোষণা করে।
১৯৮২ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মিলটিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করে পুনরায় উৎপাদন শুরু করা হয়। চিনিকলটি চালু হওয়ায় আবারও প্রাণ ফিরে পান আখচাষি ও চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। অন্যদিকে এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সম্প্রসারিত হতে থাকে। শ্রমিক-কর্মচারী-আখচাষিদের পদচারণা ও কারখানার শব্দে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠে সেতাবগঞ্জ শহর। আখ বোঝাই ট্রাক্টরের চিরচেনা শব্দে সেতাবগঞ্জবাসী ফিরে পান ছন্দময় জীবন। চিনিকলের নিজস্ব জমি ও সাধারণ কৃষকের রোপণকৃত আখ দিয়ে সে সময় বছরে ৩ মাস থেকে ৪ মাস আখ মাড়াই করতো চিনিকলটি। এরপর চিনিকলটি বয়সের ভারে যন্ত্রপাতি অনেকটাই অকেজো হয়ে পরে এবং আখ মাড়াইয়ের সক্ষমতা কমে আসে। অন্যদিকে অসাধু কর্মকর্তাদের আকাশচুম্বী দুর্নীতি ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে চিনিকলটি লোকসান গুনতে থাকে। সর্বশেষ লোকসানের পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ৪ শত কোটি টাকা। অথচ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই সরকার ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বরে দেশের ৬টি চিনিকলের সঙ্গে সেতাবগঞ্জ চিনিকলটিও বন্ধ করে দেয়।
চিনিকলের প্রায় ৭৫০ জন শ্রমিকের মধ্যে বর্তমানে শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা নিয়োজিত আছে একশত জনের মতো। বাকি শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দেশের বিভিন্ন চিনিকলে বদলি হয়ে কাজ করছেন।
চিনিকলের শ্রমিক মহসীন আলী বলেন, সেতাবগঞ্জ চিনিকলের আখ মাড়াই বন্ধ হওয়াতে চিনিকলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ ও আখ আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর এবং ট্রাক্টরের ট্রলি খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে। ট্রাক্টর এবং ট্রাক্টরের ট্রলিতে জন্ম নিয়েছে হাজারও আগাছা, পরিণত হয়েছে জঙ্গলে। সেই জঙ্গলে বাস করছে বিষাক্ত অনেক প্রাণী। এই বিশাল জঙ্গলের ভিতরেই অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে চিনিকলটির কোটি কোটি টাকার সম্পদ। একই অবস্থা চিনিকলের ক্যান ক্যারিয়ারটির। অযত্নে আর অবহেলায় যেন সব কিছুই আজ নিঃশেষ হতে বসেছে।
এদিকে বোচাগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতাবগঞ্জ চিনিকলটির আখ মাড়াই চালু করার জোর দাবি জানিয়েছেন। কেননা, চিনিকলের শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মাসিক বেতন প্রাই দেড় কোটি টাকা বোচাগঞ্জ উপজেলা শহরে ব্যবহার হতো। চিনিকলের আখ মাড়াই বন্ধ হওয়াতে এলাকার ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে মন্দাভাব।
এ ব্যাপারে সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হুমায়ন কবীর বলেন, এসব ট্রাক্টর অন্য মিলের চাহিদাপত্র আসলে আমরা তা পাঠিয়ে দিবো। এসব ট্রাক্টর ও ট্রলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উন্নত কোন ব্যবস্থা নেই।