alt

সারাদেশ

গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে রাশিয়া-চীনে আস্থা সরকারের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : রোববার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

দেশে চলমান গ্যাস সংকটে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে; ঝুকিতে শিল্পোৎপাদন। এলএনজিসহ অন্য তরল জ্বালানি আমদানিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্চ মূল্য ও ডলার সংকট। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আরব অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার কারণে সামনে জ্বালানি সংকট আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে দ্রুত দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রীয় গ্যাসফিল্ড থেকে গ্যাস পেলে প্রতি ইউনিট ৪ টাকায় পাওয়া যায়, একই পরিমাণ গ্যাস আমদানি করতে খরচ হয় ৬০ টাকা। আমাদের যদি ২৩ শতাংশ গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে না হলে অনেক সাশ্রয় হতো। আমরা ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০ কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছি।’

আগামী দুই বছরে মধ্যে দেশে গ্যাস উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়বে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ জন্য এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন।

গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খননের পরিকল্পনা সরকার আগেই নিয়েছিল। পেট্রোবাংলা ২০২৮ সালের মধ্যে আরও ১০০ কূপ খননের নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে বাপেক্স ৬৮টি, সিলেট গ্যাসফিল্ড ১১টি ও বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড ২১টি কূপ খনন করবে। এর মধ্যে নতুন কূপ হবে ৬৯টি, বাকিগুলো বন্ধ কূপ যা সংস্কার করা হবে (ওয়ার্কওভার)।

এসব কূপ খননের কাজ দ্রুততার সঙ্গে করতে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্সের পাশাপাশি রাশিয়ার গ্যাজপ্রম এবং চীনের সিনোপ্যাককে যুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। আরও যুক্ত হচ্ছে উজবেকিস্তানের কোম্পানি এরিয়েল।

পেট্রোবাংলার একটি সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়ার গ্যাজপ্রমকে ভোলায় পাঁচটি কূপ খননের এবং চীনের সিনোপ্যাককে সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের পাঁচটি কূপ খননের কাজ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) আওতাধীন এলাকায় নতুন করে সাতটি কূপ খননের কাজ দেয়া হবে উজবেকিস্তানের কোম্পানি এরিয়েল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্যাজপ্রম ও সিনোপ্যাক এরই মধ্যে পৃথক প্রস্তাব দাখিল করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে কূপগুলো খননের অনুমোদন দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনে এই কাজ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘দ্রুত গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে হলে বাপেক্স একা সামলাতে পারবে না। গ্যাসপ্রম, সিনোপ্যাক দুটোই এ খাতের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। তারা আগেও বাংলাদেশ কাজ করে সক্ষমতা দেখিয়েছে। এছাড়া, এরিয়েলও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব কাজে সক্ষম। তাদের কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে এসব বিবেচনা প্রাধান্য পেয়েছে।’

বাপেক্সকে দিয়ে কূপ খননের খরচ বিদেশি কোম্পানির তুলনায় কম হয়। বাপেক্সের একাধিক কর্মকর্তার দাবি, ‘বাপেক্সের নিজস্ব লোকবল দিয়ে একটি কূপ খনন করতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে প্রতিটি কূপ খননে বিদেশি কোম্পানিগুলোর খরচ পড়ে ১৪০-১৮০ কোটি টাকা।’ এরপরও বাপেক্সকে বসিয়ে রাখা হয়- এমন অভিযোগ নতুন নয়।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘বাপেক্সের যা সক্ষমতা তা দিয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত কূপ খননের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের লক্ষ্য আরও বড়। তাই বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেয়া হচ্ছে।’

কূপ খননের খরচ প্রসঙ্গে জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘বাপেক্স যে কাজ করে, তাতে কর্মকর্তাদের বেতন, রিগের পেছনে বিনিয়োগ ও অন্যান্য ব্যয় হিসাব করা হয় না। কিন্তু বিদেশি কোম্পানি সবকিছু হিসাব করে বাজেট করে বলে খরচ বেশি দেখা যায়।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গ্যাজপ্রমকে দেয়া হবে ভোলার শাহবাজপুর-৫, শাহবাজপুর-৭, শাহবাজপুর নর্থ-ইস্ট-১ এবং ভোলা নর্থ-৩ ও ভোলা নর্থ-৪ কূপের কাজ। এর মধ্যে শাহবাজপুর নর্থ-ইস্ট অনুসন্ধান কূপ এবং বাকি চারটি উন্নয়ন কূপ। সিনোপ্যাক খনন করবে রশিদপুর-১১, রশিদপুর-১৩, সিলেট-১১, কৈলাসটিলা-৯ এবং ঢুপিটিলা-১ কূপ। এগুলোর ৪টি অনুসন্ধান ও একটি উন্নয়ন কূপ।

গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে সরকারের পরিকল্পনা মোতাবেক ৪৮টি কূপের মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ৬শ’ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার আশা করা হয়েছিল। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১১টি কূপ খনন হয়েছে। এর মধ্যে একটি কূপ শুষ্ক পাওয়া যায়। একটির গ্যাস উত্তোলন বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক নয়। বাকি ৯টি কূপ থেকে থেকে দৈনিক ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতা বেড়েছে। তবে পাইপলাইনে যোগ হয়েছে ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। এখন তিন কূপের ওয়ার্কওভার কাজ চলছে।

কূপ খননে ধীরগতির কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন করতেই এক বছরের বেশি লেগে যায়। এরপর জমি অধিগ্রহণ ও যন্ত্রপাতি কিনতে লাগে কয়েক মাস। খনন শুরুর পর একটি অনুসন্ধান বা উন্নয়ন কূপ শেষ করতে লাগে অন্তত সাড়ে তিন মাস। আর সংস্কার কূপ খননে লাগে দুই মাস।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানান, ডিপিপি অনুমোদনে সময় কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘এতদিন তেল-গ্যাস উত্তোলন-অনুসন্ধানে জোর না দিয়ে সরকারের মনোযোগ ছিল আমদানির দিকে। এতে বিপুল খরচের ভার সামলাতে না পেরে এখন স্থলভাগের দিকে নজর দিয়েছে। তবে সরকার যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা শুধু বাপেক্সকে দিয়ে সম্ভব নয়। বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দিয়ে যদি দ্রুত গ্যাস পাওয়া যায়, তাও দেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে।’

প্রেট্রোবাংলার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের (এসজিএফএল) মজুদ সবচেয়ে বেশি। কোম্পানিটির আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রে মজুত প্রায় সাড়ে চার টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস। এদিকে ভোলাকে দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় গ্যাস মজুতের এলাকা হিসেবে ধরা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভোলায় গ্যাস মজুত দুই টিসিএফ, যা আরও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

ভোলায় এরই মধ্যে পাঁচটি কূপ খনন করেছে গ্যাজপ্রম। ২০১০ সাল থেকে দেশে ২০টি কূপ খনন করে কোম্পানিটি। সিনোপ্যাকও একাধিক খূপ খননের কাজ করেছে। বর্তমানে সিলেট এলাকায় কাজ করছে কোম্পানিটি।

ছবি

সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নান গ্রেপ্তার

ছবি

ভবদহে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে জলাবদ্ধ এলাকায় দাঁড়িয়ে সংবাদ সম্মেলন

ছবি

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ, দোকান ও বাড়িঘরে আগুন

ছবি

খরচ বেশি, গ্যাজপ্রমের কূপ খনন প্রকল্পের তদন্ত করবে সরকার

ছবি

ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে পাচারকালে তেলসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার

ছবি

কুষ্টিয়ায় পদ্মার তীব্র ভাঙ্গন,মহাসড়ক ঝুঁকিতে ভেঙে গেল বিদ্যুতের টাওয়ার

ছবি

শাহ আমানত বিমানবন্দরে আড়াই কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রাসহ যাত্রী আটক

ছবি

কর্ণফুলী পেপার মিলস এক মাস পর আবার উৎপাদনে ফিরেছে

ছবি

ময়মনসিংহ রেঞ্জের ৩২ থানার ওসির একযোগে বদলি

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত বিপ্লব হাসান ও নূরে আলমের মরদেহ তুলতে স্বজনদের বাধা

ছবি

সভাপতি ফিরোজ, সম্পাদক রিয়াদ লালমোহন ফাউন্ডেশন ঢাকা’র নতুন কমিটি

একই পরিবারে ৪ জনের টাকার অভাবে মেলেনি প্রতিবন্ধী-বয়স্ক ও বিধবা ভাতার কার্ড

ছবি

রামুতে পুকুরে গোসল করতে নেমে এক শিশুর মৃত্যু

ছবি

সীমান্তের ওপার থেকে গুলি পড়ছে টেকনাফ স্থলবন্দরে, কার্যক্রম বন্ধ

গাজীপুরে আজও বন্ধ সাত কারখানা

ছবি

ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, ঘাতক র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

ছবি

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে প্রাণ গেল একজনের

ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহাসড়কে দূর্ভোগ, নিরাপত্তাহীনতায় আতংক, চলে গেছে ভারতীয় ঠিকাদার, থমকে আছে কাজ

ছবি

গাজীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত আহত ৬

ছবি

কক্সবাজারে চিকিৎসকের উপর হামলা, ২ আসামীর রিমান্ড

ছবি

সীমান্ত থেকে সাড়ে ১১ কোটি টাকার স্বর্ণসহ দুই মায়ানমার নাগরিক গ্রেফতার

ছবি

আশুলিয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে নারী পোশাক শ্রমিক নিহত

ছবি

অবরোধ : তিন ঘন্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক

ছবি

গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ

ছবি

নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ দুপুরে

ছবি

উত্তরায় ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণকারী দেলোয়ার গ্রেপ্তার

ছবি

যাত্রাবাড়ীর সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফে গ্রেপ্তার

গাজীপুরে খোলা আছে ৮৫ ভাগ কারখানা

ছবি

ঝিনাইদহে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু

ছবি

মাদারীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা শাহাবুদ্দিন কুমিল্লা সীমান্তে আটক

ছবি

রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে ভারি বৃষ্টির সতর্কতা

ছবি

চট্টগ্রামে জশনে জুলুসে লাখো মানুষের ঢল

ছবি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ২

ছবি

বন্ধ করা হলো কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট

ছবি

আদালতে শরিফা সেজে শারমিন, দুই নারী কারাগারে

মহেশখালীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই যুবকের মৃত্যু

tab

সারাদেশ

গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে রাশিয়া-চীনে আস্থা সরকারের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রোববার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

দেশে চলমান গ্যাস সংকটে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে; ঝুকিতে শিল্পোৎপাদন। এলএনজিসহ অন্য তরল জ্বালানি আমদানিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্চ মূল্য ও ডলার সংকট। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আরব অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার কারণে সামনে জ্বালানি সংকট আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে দ্রুত দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রীয় গ্যাসফিল্ড থেকে গ্যাস পেলে প্রতি ইউনিট ৪ টাকায় পাওয়া যায়, একই পরিমাণ গ্যাস আমদানি করতে খরচ হয় ৬০ টাকা। আমাদের যদি ২৩ শতাংশ গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে না হলে অনেক সাশ্রয় হতো। আমরা ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০ কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছি।’

আগামী দুই বছরে মধ্যে দেশে গ্যাস উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়বে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ জন্য এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন।

গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খননের পরিকল্পনা সরকার আগেই নিয়েছিল। পেট্রোবাংলা ২০২৮ সালের মধ্যে আরও ১০০ কূপ খননের নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে বাপেক্স ৬৮টি, সিলেট গ্যাসফিল্ড ১১টি ও বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড ২১টি কূপ খনন করবে। এর মধ্যে নতুন কূপ হবে ৬৯টি, বাকিগুলো বন্ধ কূপ যা সংস্কার করা হবে (ওয়ার্কওভার)।

এসব কূপ খননের কাজ দ্রুততার সঙ্গে করতে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্সের পাশাপাশি রাশিয়ার গ্যাজপ্রম এবং চীনের সিনোপ্যাককে যুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। আরও যুক্ত হচ্ছে উজবেকিস্তানের কোম্পানি এরিয়েল।

পেট্রোবাংলার একটি সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়ার গ্যাজপ্রমকে ভোলায় পাঁচটি কূপ খননের এবং চীনের সিনোপ্যাককে সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের পাঁচটি কূপ খননের কাজ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) আওতাধীন এলাকায় নতুন করে সাতটি কূপ খননের কাজ দেয়া হবে উজবেকিস্তানের কোম্পানি এরিয়েল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্যাজপ্রম ও সিনোপ্যাক এরই মধ্যে পৃথক প্রস্তাব দাখিল করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে কূপগুলো খননের অনুমোদন দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনে এই কাজ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘দ্রুত গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে হলে বাপেক্স একা সামলাতে পারবে না। গ্যাসপ্রম, সিনোপ্যাক দুটোই এ খাতের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। তারা আগেও বাংলাদেশ কাজ করে সক্ষমতা দেখিয়েছে। এছাড়া, এরিয়েলও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব কাজে সক্ষম। তাদের কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে এসব বিবেচনা প্রাধান্য পেয়েছে।’

বাপেক্সকে দিয়ে কূপ খননের খরচ বিদেশি কোম্পানির তুলনায় কম হয়। বাপেক্সের একাধিক কর্মকর্তার দাবি, ‘বাপেক্সের নিজস্ব লোকবল দিয়ে একটি কূপ খনন করতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে প্রতিটি কূপ খননে বিদেশি কোম্পানিগুলোর খরচ পড়ে ১৪০-১৮০ কোটি টাকা।’ এরপরও বাপেক্সকে বসিয়ে রাখা হয়- এমন অভিযোগ নতুন নয়।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘বাপেক্সের যা সক্ষমতা তা দিয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত কূপ খননের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের লক্ষ্য আরও বড়। তাই বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেয়া হচ্ছে।’

কূপ খননের খরচ প্রসঙ্গে জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘বাপেক্স যে কাজ করে, তাতে কর্মকর্তাদের বেতন, রিগের পেছনে বিনিয়োগ ও অন্যান্য ব্যয় হিসাব করা হয় না। কিন্তু বিদেশি কোম্পানি সবকিছু হিসাব করে বাজেট করে বলে খরচ বেশি দেখা যায়।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গ্যাজপ্রমকে দেয়া হবে ভোলার শাহবাজপুর-৫, শাহবাজপুর-৭, শাহবাজপুর নর্থ-ইস্ট-১ এবং ভোলা নর্থ-৩ ও ভোলা নর্থ-৪ কূপের কাজ। এর মধ্যে শাহবাজপুর নর্থ-ইস্ট অনুসন্ধান কূপ এবং বাকি চারটি উন্নয়ন কূপ। সিনোপ্যাক খনন করবে রশিদপুর-১১, রশিদপুর-১৩, সিলেট-১১, কৈলাসটিলা-৯ এবং ঢুপিটিলা-১ কূপ। এগুলোর ৪টি অনুসন্ধান ও একটি উন্নয়ন কূপ।

গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে সরকারের পরিকল্পনা মোতাবেক ৪৮টি কূপের মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ৬শ’ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার আশা করা হয়েছিল। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১১টি কূপ খনন হয়েছে। এর মধ্যে একটি কূপ শুষ্ক পাওয়া যায়। একটির গ্যাস উত্তোলন বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক নয়। বাকি ৯টি কূপ থেকে থেকে দৈনিক ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতা বেড়েছে। তবে পাইপলাইনে যোগ হয়েছে ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। এখন তিন কূপের ওয়ার্কওভার কাজ চলছে।

কূপ খননে ধীরগতির কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন করতেই এক বছরের বেশি লেগে যায়। এরপর জমি অধিগ্রহণ ও যন্ত্রপাতি কিনতে লাগে কয়েক মাস। খনন শুরুর পর একটি অনুসন্ধান বা উন্নয়ন কূপ শেষ করতে লাগে অন্তত সাড়ে তিন মাস। আর সংস্কার কূপ খননে লাগে দুই মাস।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানান, ডিপিপি অনুমোদনে সময় কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘এতদিন তেল-গ্যাস উত্তোলন-অনুসন্ধানে জোর না দিয়ে সরকারের মনোযোগ ছিল আমদানির দিকে। এতে বিপুল খরচের ভার সামলাতে না পেরে এখন স্থলভাগের দিকে নজর দিয়েছে। তবে সরকার যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা শুধু বাপেক্সকে দিয়ে সম্ভব নয়। বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দিয়ে যদি দ্রুত গ্যাস পাওয়া যায়, তাও দেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে।’

প্রেট্রোবাংলার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের (এসজিএফএল) মজুদ সবচেয়ে বেশি। কোম্পানিটির আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রে মজুত প্রায় সাড়ে চার টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস। এদিকে ভোলাকে দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় গ্যাস মজুতের এলাকা হিসেবে ধরা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভোলায় গ্যাস মজুত দুই টিসিএফ, যা আরও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

ভোলায় এরই মধ্যে পাঁচটি কূপ খনন করেছে গ্যাজপ্রম। ২০১০ সাল থেকে দেশে ২০টি কূপ খনন করে কোম্পানিটি। সিনোপ্যাকও একাধিক খূপ খননের কাজ করেছে। বর্তমানে সিলেট এলাকায় কাজ করছে কোম্পানিটি।

back to top