alt

সারাদেশ

ধর্ষণে সহযোগিতা করায় কারাভোগ ২৩ বছর পর জেল থেকে বেরিয়ে দেখেন পরিবারের কেউ বেঁচে নেই

প্রতিনিধি, লালমনিরহাট : বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

শিশু ধর্ষণের এক মামলায় রেখা খাতুন (৪৪) গ্রেপ্তার হন ২০০০ সালের ৫ নভেম্বর। ধর্ষণে জড়িত দুই আসামিকে সহযোগিতা করার অপরাধে তাকে মামলার ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছিল।

২০০৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রেখা খাতুনসহ তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ২৩ বছর সাজা ভোগের পর রেখার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর শেষ হয়। এরপরও জরিমানার এক লাখ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাকে আরও তিন বছর কারাগারে আটক থাকতে হতো। সেই হিসাবে তাকে ২০২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলা কারাগারে থাকতে হতো।

বিষয়টি জানতে পেরে রেখা খাতুনের মুক্তির জন্য সাহায্যের হাত নিয়ে এগিয়ে আসেন লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ ও লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম স্বপন। তারা সম্মিলিতভাবে জরিমানার টাকা গত ৮ এপ্রিল ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করে দেন। এর ফলে ঈদের দুই দিন আগে ৯ এপ্রিল সকালে রেখা খাতুনকে লালমনিরহাট জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়।

বের হয়ে জানতে পারেন বাবা, মা, দুই বোন, এক ভাইয়ের কেউই আর বেঁচে নেই। শুধু তাই নয়, স্বামী কোরবান আলী দ্বিতীয় বিয়ে করে নিরুদ্দেশ, বাবার ভিটেমাটিও বিলীন হয়েছে ধরলা নদীর গর্ভে।

রেখা খাতুনের বাবার বাড়ি ছিল লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের কলাখাওয়া ঘাট গ্রামে।

লালমনিরহাট জেলা কারাগারের জেল সুপার ওমর ফারুক জানান, রেখা খাতুন একজন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তিনি ২৩ বছর ৪ মাস ৫ দিন লালমনিরহাট জেলে কাটিয়েছেন। একটি ধর্ষণের ঘটনায় সহযোগিতা করার অপরাধে তিনি ২৩ বছর আগে গ্রেপ্তার হয়ে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে যান। এরপর ওই মামলায় রেখা খাতুনসহ তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়।

তবে রেখা খাতুন জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় তার আরও তিন বছর কারাভোগ করতে হতো। তিনি মুক্তিপাওয়ার আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বাইরে অতিরিক্ত আরও চার মাস ছয় দিন কারাভোগ করেছেন। কারাগারে রেখা খাতুনকে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তিনি হস্তশিল্পের কাজ করে উপার্জন করতে পারবেন।

রেখার কারামুক্তির সময় উপস্থিত ছিলেন মেয়র রেজাউল করিম, লালমনিরহাট জেলা কারাগারের বেসরকারি পরিদর্শক দলের অন্যতম সদস্য ও নারী অধিকার সংগঠক ফেরদৌসী বেগম, কারাবন্দী নারী কয়েদিদের হাতে-কলমে কাজের প্রশিক্ষক ও স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা বকুল ফুলের নির্বাহী পরিচালক রশিদা বেগম প্রমুখ।

নিজের জীবন সম্পর্কে বলতে গিয়ে রেখা জানান, দারিদ্র্যের কারণে ১৩-১৪ বছর বয়সে রেখা খাতুনের বিয়ে হয়। তার স্বামী কোরবান আলী তখন ৩৪ বছরের যুবক। পেশায় দিনমজুর ছিলেন কোরবান। বিয়ের পরও দুই-তিন বছর বাবার বাড়িতে থেকে ১৯৯৮ সাল থেকে স্বামীর বাড়িতে থাকতে শুরু করেন।

রেখা ও তার স্বামী কোরবান আলী লালমনিরহাট শহরের খোচাবাড়ি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি আরও জানান, ১৫ বছর আগে রেখার বাবা ফজলু রহমান মারা যান। আর মা নূরনাহার বেগম মারা যান ১২ বছর আগে। তাদের কবরও গ্রামের বাড়িতে হয়নি। পাশের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের কবির মামুদ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ওই গ্রামে রেখার ছোট বোন টুম্পা বেগমের বিয়ে হয়েছে। কারামুক্তির পর টুম্পার শ্বশুরবাড়িতেই রেখা আপাতত আশ্রয় নিয়েছেন।

কারাগারের আগের ও পরের জীবন সম্পর্কে বলতে গিয়ে রেখা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি জেলে থাকার সময় আমার মা, বাবা, দুই বোন আর এক ভাইসহ আমার ২৫ আত্মীয় মারা গেছেন। আমি জেলে যাওয়ার পর আমার স্বামী কোরবান আলী দ্বিতীয় বিয়ে করে এখন কোথায় আছে, কেউ বলতে পারে না। রেখা আরও বলেন, ‘আমার বাবার বাড়িটা ধরলা নদীতে গেছে। স্বামীর অবর্তমানে বাবার বাড়িতে জীবনের বাকি দিনগুলোতে আশ্রয় নেয়ার স্বপ্নটাও ভেঙে গেছে।’

২০০০ সালের ৫ নভেম্বর শিশু ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হন রেখা। ধর্ষণে জড়িত দুই আসামিকে সহযোগিতা করার অপরাধে তাকে মামলার ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছিল। ২০০৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রেখা খাতুনসহ তিন আসামি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দণ্ডিত হন। তবে রেখা খাতুন দাবি করেন ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। এ মামলার অন্য দুই আসামিকে আমি চিনি না। পরে জানতে পারি, তারা আমার স্বামীকে চেনেন।’

দণ্ডপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি লালমনিরহাট শহরের নর্থ বেঙ্গল মোড় এলাকার দুলাল হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন ও লালমনিরহাট শহরের কুড়াটারি গ্রামের ভোলা মিয়ার ছেলে ফরিদ হোসেন। রায় ঘোষণার সময় ফরিদ হোসেন পলাতক ছিলেন। পরে গ্রেপ্তার হন।

ওই দুই আসামি চার-পাঁচ বছর জেল খেটে উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। এর মধ্যে আলমগীর হোসেন দাম্পত্য কলহের জের ধরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ফরিদ হোসেন লালমনিরহাট শহরের একটি হোটেলে বাবুর্চির কাজ করেন।

নারী অধিকার সংগঠক ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘আমি রেখা খাতুনের পুরো জীবনের গল্প শুনেছি। কারাগারে থাকাকালে তার আচরণ ভালো ছিল। বিষয়টি পর্যালোচনা করে তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করেছি।’

ফেরদৌসী বেগম জানান, রেখার জরিমানার টাকার অঙ্ক ১ লাখ টাকা হলেও তিনি অতিরিক্ত চার মাস ছয় দিন কারাগারে সাজা ভোগ করায় জরিমানা থেকে ১০ হাজার টাকা মওকুফ হয়ে যায়। এর বাইরে রেখা কারাগারে অবস্থানকালের শ্রমের বিপরীতে উপার্জন করেন ১৫ হাজার টাকা। ওই টাকা সমন্বয় হয়ে পরিশোধ করতে হতো ৭৫ হাজার টাকা। সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পৌরসভার মেয়র সম্মিলিতভাবে ওই টাকা দিয়েছেন। ৯ এপ্রিল সকালে রেখা খাতুনকে লালমনিরহাট জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।

লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান বলেন, রেখা খাতুনের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন।

ছবি

হবিগঞ্জে ব্যবসায়ী হত্যা: সাতজনের মৃত্যুদণ্ড

ছবি

কবর খুঁড়ে মরদেহ ও কঙ্কাল চুরি বন্ধে উচ্চ আদালতের রুল

ছবি

গোপালগঞ্জে হত্যা মামলায় ৩ জনের ফাঁসির আদেশ

ছবি

কালুরঘাট সেতুতে ধাক্কা, আটকে গেছে জাহাজ

র‍্যাবের সঙ্গে ডাকাত দলের গোলাগুলি, স্থানীয় কৃষক নিহত

ছবি

লন্ডনে তলোয়ার হামলায় আহত ৫, গ্রেপ্তার ১

কক্সবাজারে হিটস্ট্রোকে এক যুবকের মৃত্যু

ছবি

অতিরিক্ত তাপমাত্রায় গাজীপুরে বেঁকে গেছে রেললাইন

হবিগঞ্জে মাছ বোঝাই পিকআপ ও সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ২

ছবি

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উন্নতিতে বড় সুবিধাভোগী উত্তর-পূর্ব ভারত

ছবি

সাভারে এসি বিস্ফোরণে আহত নাহিদের মৃত্যু

ছবি

অটিস্টিক শিশুদের জন্য দেশে হচ্ছে ১৪ প্রতিষ্ঠান

ছবি

১৫৩ রোহিঙ্গার ভুয়া জন্ম নিবন্ধন, ইউপি চেয়ারম্যান সাময়িক বরখাস্ত

ছবি

কক্সবাজারে বাস-মাইক্রো সংঘর্ষে ৪ জন নিহত

ছবি

প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রেকর্ড ভাঙছে তাপপ্রবাহ

ছবি

সংবাদে সংবাদ প্রকাশের পর তাজউদ্দীন মেডিকেলে অভিযানে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পেয়েছে দুদক

ছবি

চারুকলা ইনস্টিটিউট ও শেখ রাসেল পার্ক নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহলের অশালীন ও আগ্রাসী বক্তব্যের প্রতিবাদ

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে পানিতে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

নাসিরনগরে হিট স্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু

ছবি

রাজবাড়ীতে সেতু ভেঙে কাঁচা রাস্তা, ঝুঁকি নিয়ে চলছে ৩ উপজেলার মানুষ

খানাখন্দে ভরা দোয়ারাবাজারের পাইকপাড়া-ছনোগাও সড়ক

ছবি

মেহেরপুরে গরমে ঝরছে আম-লিচুর গুটি

ছবি

হবিগঞ্জে শিলাবৃষ্টি, ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ছবি

রং ছড়াচ্ছে আগুনঝরা রক্তিম কৃষ্ণচূড়া

ছবি

মহেশপুর সীমান্তে ৩ কোটি টাকার স্বর্ণের বারসহ দুই ভাই আটক

মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে প্রান গেল বিপণন কর্মীর

ছবি

মুন্সীগঞ্জে নির্বাচনে অনিয়মের ভিডিও করায় সাংবাদিকের উপর হামলা।

গোবিন্দগঞ্জে তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন

ঘিওরে ৫শতাধিক শ্রমিকদের মাঝে খাবার স্যালাইন ও পানি বিতরণ

ক্ষোভ বাড়ছে গ্রাহকদের মাঝে ফটিকছড়িতে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন

ছবি

কুড়িগ্রামে জি-৩ রুই রেনুপোনা চাষে লাখপতি ফারুক মন্ডল

ছবি

সাবেক মেম্বারের বিরুদ্ধে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ

ছবি

পাথরঘাটার তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাইবার মামলা

ছবি

নদীগর্ভে ৫ শতাধিক মানুষের বাস, অরক্ষিত বাঁধে যত ভয়

ছবি

এক বিলেই ২০০ পুকুর, মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

মুন্সীগঞ্জে গরমে শ্রেণীকক্ষেই জ্ঞান হারাল শিক্ষার্থী

tab

সারাদেশ

ধর্ষণে সহযোগিতা করায় কারাভোগ ২৩ বছর পর জেল থেকে বেরিয়ে দেখেন পরিবারের কেউ বেঁচে নেই

প্রতিনিধি, লালমনিরহাট

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

শিশু ধর্ষণের এক মামলায় রেখা খাতুন (৪৪) গ্রেপ্তার হন ২০০০ সালের ৫ নভেম্বর। ধর্ষণে জড়িত দুই আসামিকে সহযোগিতা করার অপরাধে তাকে মামলার ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছিল।

২০০৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রেখা খাতুনসহ তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ২৩ বছর সাজা ভোগের পর রেখার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর শেষ হয়। এরপরও জরিমানার এক লাখ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাকে আরও তিন বছর কারাগারে আটক থাকতে হতো। সেই হিসাবে তাকে ২০২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলা কারাগারে থাকতে হতো।

বিষয়টি জানতে পেরে রেখা খাতুনের মুক্তির জন্য সাহায্যের হাত নিয়ে এগিয়ে আসেন লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ ও লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম স্বপন। তারা সম্মিলিতভাবে জরিমানার টাকা গত ৮ এপ্রিল ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করে দেন। এর ফলে ঈদের দুই দিন আগে ৯ এপ্রিল সকালে রেখা খাতুনকে লালমনিরহাট জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়।

বের হয়ে জানতে পারেন বাবা, মা, দুই বোন, এক ভাইয়ের কেউই আর বেঁচে নেই। শুধু তাই নয়, স্বামী কোরবান আলী দ্বিতীয় বিয়ে করে নিরুদ্দেশ, বাবার ভিটেমাটিও বিলীন হয়েছে ধরলা নদীর গর্ভে।

রেখা খাতুনের বাবার বাড়ি ছিল লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের কলাখাওয়া ঘাট গ্রামে।

লালমনিরহাট জেলা কারাগারের জেল সুপার ওমর ফারুক জানান, রেখা খাতুন একজন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তিনি ২৩ বছর ৪ মাস ৫ দিন লালমনিরহাট জেলে কাটিয়েছেন। একটি ধর্ষণের ঘটনায় সহযোগিতা করার অপরাধে তিনি ২৩ বছর আগে গ্রেপ্তার হয়ে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে যান। এরপর ওই মামলায় রেখা খাতুনসহ তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়।

তবে রেখা খাতুন জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় তার আরও তিন বছর কারাভোগ করতে হতো। তিনি মুক্তিপাওয়ার আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বাইরে অতিরিক্ত আরও চার মাস ছয় দিন কারাভোগ করেছেন। কারাগারে রেখা খাতুনকে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তিনি হস্তশিল্পের কাজ করে উপার্জন করতে পারবেন।

রেখার কারামুক্তির সময় উপস্থিত ছিলেন মেয়র রেজাউল করিম, লালমনিরহাট জেলা কারাগারের বেসরকারি পরিদর্শক দলের অন্যতম সদস্য ও নারী অধিকার সংগঠক ফেরদৌসী বেগম, কারাবন্দী নারী কয়েদিদের হাতে-কলমে কাজের প্রশিক্ষক ও স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা বকুল ফুলের নির্বাহী পরিচালক রশিদা বেগম প্রমুখ।

নিজের জীবন সম্পর্কে বলতে গিয়ে রেখা জানান, দারিদ্র্যের কারণে ১৩-১৪ বছর বয়সে রেখা খাতুনের বিয়ে হয়। তার স্বামী কোরবান আলী তখন ৩৪ বছরের যুবক। পেশায় দিনমজুর ছিলেন কোরবান। বিয়ের পরও দুই-তিন বছর বাবার বাড়িতে থেকে ১৯৯৮ সাল থেকে স্বামীর বাড়িতে থাকতে শুরু করেন।

রেখা ও তার স্বামী কোরবান আলী লালমনিরহাট শহরের খোচাবাড়ি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি আরও জানান, ১৫ বছর আগে রেখার বাবা ফজলু রহমান মারা যান। আর মা নূরনাহার বেগম মারা যান ১২ বছর আগে। তাদের কবরও গ্রামের বাড়িতে হয়নি। পাশের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের কবির মামুদ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ওই গ্রামে রেখার ছোট বোন টুম্পা বেগমের বিয়ে হয়েছে। কারামুক্তির পর টুম্পার শ্বশুরবাড়িতেই রেখা আপাতত আশ্রয় নিয়েছেন।

কারাগারের আগের ও পরের জীবন সম্পর্কে বলতে গিয়ে রেখা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি জেলে থাকার সময় আমার মা, বাবা, দুই বোন আর এক ভাইসহ আমার ২৫ আত্মীয় মারা গেছেন। আমি জেলে যাওয়ার পর আমার স্বামী কোরবান আলী দ্বিতীয় বিয়ে করে এখন কোথায় আছে, কেউ বলতে পারে না। রেখা আরও বলেন, ‘আমার বাবার বাড়িটা ধরলা নদীতে গেছে। স্বামীর অবর্তমানে বাবার বাড়িতে জীবনের বাকি দিনগুলোতে আশ্রয় নেয়ার স্বপ্নটাও ভেঙে গেছে।’

২০০০ সালের ৫ নভেম্বর শিশু ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হন রেখা। ধর্ষণে জড়িত দুই আসামিকে সহযোগিতা করার অপরাধে তাকে মামলার ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছিল। ২০০৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রেখা খাতুনসহ তিন আসামি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দণ্ডিত হন। তবে রেখা খাতুন দাবি করেন ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। এ মামলার অন্য দুই আসামিকে আমি চিনি না। পরে জানতে পারি, তারা আমার স্বামীকে চেনেন।’

দণ্ডপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি লালমনিরহাট শহরের নর্থ বেঙ্গল মোড় এলাকার দুলাল হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন ও লালমনিরহাট শহরের কুড়াটারি গ্রামের ভোলা মিয়ার ছেলে ফরিদ হোসেন। রায় ঘোষণার সময় ফরিদ হোসেন পলাতক ছিলেন। পরে গ্রেপ্তার হন।

ওই দুই আসামি চার-পাঁচ বছর জেল খেটে উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। এর মধ্যে আলমগীর হোসেন দাম্পত্য কলহের জের ধরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ফরিদ হোসেন লালমনিরহাট শহরের একটি হোটেলে বাবুর্চির কাজ করেন।

নারী অধিকার সংগঠক ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘আমি রেখা খাতুনের পুরো জীবনের গল্প শুনেছি। কারাগারে থাকাকালে তার আচরণ ভালো ছিল। বিষয়টি পর্যালোচনা করে তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করেছি।’

ফেরদৌসী বেগম জানান, রেখার জরিমানার টাকার অঙ্ক ১ লাখ টাকা হলেও তিনি অতিরিক্ত চার মাস ছয় দিন কারাগারে সাজা ভোগ করায় জরিমানা থেকে ১০ হাজার টাকা মওকুফ হয়ে যায়। এর বাইরে রেখা কারাগারে অবস্থানকালের শ্রমের বিপরীতে উপার্জন করেন ১৫ হাজার টাকা। ওই টাকা সমন্বয় হয়ে পরিশোধ করতে হতো ৭৫ হাজার টাকা। সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পৌরসভার মেয়র সম্মিলিতভাবে ওই টাকা দিয়েছেন। ৯ এপ্রিল সকালে রেখা খাতুনকে লালমনিরহাট জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।

লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান বলেন, রেখা খাতুনের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন।

back to top