ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান সেতুর টোলপ্লাজায় টাকা দেয়ার অপেক্ষায় ছিল ইজিবাইক, মাইক্রোবাসসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি। এ সময় ঝালকাঠি শহরমুখী একটি সিমেন্টবাহী ট্রাক সামনে থাকা গাড়িগুলোকে ধাক্কা দিয়ে ইজিবাইক ও মাইক্রোবাসসহ রাস্তার পাশের খাদে গিয়ে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১৪ জন নিহত এবং অন্তত আরও ১২ জন আহত হয়েছে। তাদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল জানান, দুপুর ২টার দিকে গাবখান টোলপ্লাজায় টোল দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল একটি প্রাইভেট কার ও তিনটি অটোরিকশা। এ চারটি যানবাহন ঝালকাঠি শহরের মধ্যে যাচ্ছিল। এ সময় দ্রুতগতিতে আসা একটি সিমেন্টবোঝাই ট্রাক প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাগুলোকে চাপা দেয়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাগুলো। ঘটনাস্থলেই মারা যায় অটোরিকশার ৬ যাত্রী। পরে প্রাইভেটকার থেকে আরো ৮ যাত্রীকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে ৮ জনের মৃত্যু হয়। নিহত ১৪ জনের মধ্যে শিশু রয়েছে ৪ জন, নারী ৩ জন ও পুরুষ ৭ জন। নিহতদের বাড়ি রাজাপুর, ভান্ডারিয়া ও কাঠালিয়া উপজেলায়। সড়ক দুর্ঘটনায় এমন মৃত্যু দেখে স্থানীয়রা হতবাক। নিহতদের লাশ হাসপাতালের করিডোরে রাখা হয় এবং নিহতদের শনাক্ত করার পর পরিচয় জানা যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তিদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লাখ টাকা, পঙ্গুত্ববরণকারীদের তিন লাখ টাকা ও আহতদের এক লাখ টাকা করে দেয়া হবে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম।
বৌভাতে যাচ্ছিলেন তারা
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলে নিহতদের মধ্যে ইজিবাইকের ৪ যাত্রী ছিলেন। ইজিবাইকের যাত্রীরা একটি বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ঝালকাঠির ছাগলকান্দার শশীর হাটে যাচ্ছিলেন। নিহতেরা ছিলেন কনেপক্ষের। চারটি ইজিবাইক নিয়ে বরের বাড়িতে যাচ্ছিলেন তারা। এর মধ্যে দুটি ইজিবাইক আগেই টোলপ্লাজা পার হয়। এর একটিতে ছিলেন দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া রুবেল হোসেন (৩০)। পরে খবর পেয়ে তিনি আহত স্বজনদের নিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন।
রুবেল হোসেন বলেন, “গাবখান ইউনিয়নের ওস্তকার মাঝি বাড়ি থেকে কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ছাগলকান্দা শশীর হাটে যাইতেছিলাম বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে। গাবখান ব্রিজ পার হইয়া চারডা অটো (ইজিবাইক) নিয়া যাইতেছিলাম। দুইটা অটো পাশ কইরা গেছে। দুইটা টোল দিতেছিল। পেছন থেকে ট্রাক আইসা আমরার ওই দুইটা অটো প্লাস আরও দুইটা অটোরে মাইরা দিছে। ব্রেক ফেইল কইরা মাইরা দিয়া ও নিজে গর্তে পইড়া গেছে’
রুবেল বলেন, নিজেদের পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে; আহত আছে আরও সাতজন। দুর্ঘটনায় সব মিলিয়ে কতজন মারা গেছে এটা জানেন না রুবেল। তবে তার ধারণা গাড়ির নিচে লোক আছে।
আহতদের মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন দুজন। বাকিরা ঝালকাঠিতেই মারা গেছেন।
বরিশালে মারা যাওয়া দুজন হলেন- পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার মেসন্ডা এলাকার সুবিদ আলী হাওলাদারের ছেলে মো. রুহুল আমিন (৭০) এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার রামনগর এলাকার বাদশা মিয়ার প্রতিবন্ধী ছেলে মো. শহীদুল ইসলাম (৩৫)।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত রুহুল আমিনের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তার মেয়েজামাই গাবখানের বাসিন্দা হেমায়েত উদ্দিন। তিনি বলছিলেন, ‘ছাগলকান্দা আমরা ভাইঝি বিয়া দিছি। সেইখানে আমরা মেলা করছি (রওনা দিয়েছি)। আমরা সামনের গাড়িতে, তারা পিছের গাড়িতে, অটোতে। চারডা অটোতে মেলা করছি; দুইডা অটো সামনে গেছে। দুইডা পিছে টোল দেয়; আর ট্রাক আইয়া মাইরা দিছে। আমাগো লোক মারা গেছে পাঁচ-ছয়জন’
ঝালকাঠির রামনগরের বাদশা মিয়ার ছেলে সাইদুল বলেন, তার প্রতিবন্ধী ভাই শহীদুল (৪৫) গাবখানে ভিক্ষা করেন। তিনি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
ট্রাকের চালক, সহকারী গ্রেপ্তার
ট্রাকের চালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে ঘটনার পর পরেই চালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল।
গ্রেপ্তার চালকের নাম আল আমিন হাওলাদার। তার বাড়ি ঝালকাঠি সদরের নবগ্রামে। আর সহকারী নাজমুল শেখ খুলনা সদরের বাসিন্দা।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘আল আমিন নিয়মিত চালক ছিলেন না; তিনি বদলি চালক হিসেবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তিনি খুলনা থেকে সিমেন্টের বস্তা নিয়ে নিজ বাড়ি যাচ্ছিলেন।’
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান সেতুর টোলপ্লাজায় টাকা দেয়ার অপেক্ষায় ছিল ইজিবাইক, মাইক্রোবাসসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি। এ সময় ঝালকাঠি শহরমুখী একটি সিমেন্টবাহী ট্রাক সামনে থাকা গাড়িগুলোকে ধাক্কা দিয়ে ইজিবাইক ও মাইক্রোবাসসহ রাস্তার পাশের খাদে গিয়ে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১৪ জন নিহত এবং অন্তত আরও ১২ জন আহত হয়েছে। তাদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল জানান, দুপুর ২টার দিকে গাবখান টোলপ্লাজায় টোল দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল একটি প্রাইভেট কার ও তিনটি অটোরিকশা। এ চারটি যানবাহন ঝালকাঠি শহরের মধ্যে যাচ্ছিল। এ সময় দ্রুতগতিতে আসা একটি সিমেন্টবোঝাই ট্রাক প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাগুলোকে চাপা দেয়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাগুলো। ঘটনাস্থলেই মারা যায় অটোরিকশার ৬ যাত্রী। পরে প্রাইভেটকার থেকে আরো ৮ যাত্রীকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে ৮ জনের মৃত্যু হয়। নিহত ১৪ জনের মধ্যে শিশু রয়েছে ৪ জন, নারী ৩ জন ও পুরুষ ৭ জন। নিহতদের বাড়ি রাজাপুর, ভান্ডারিয়া ও কাঠালিয়া উপজেলায়। সড়ক দুর্ঘটনায় এমন মৃত্যু দেখে স্থানীয়রা হতবাক। নিহতদের লাশ হাসপাতালের করিডোরে রাখা হয় এবং নিহতদের শনাক্ত করার পর পরিচয় জানা যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তিদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লাখ টাকা, পঙ্গুত্ববরণকারীদের তিন লাখ টাকা ও আহতদের এক লাখ টাকা করে দেয়া হবে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম।
বৌভাতে যাচ্ছিলেন তারা
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলে নিহতদের মধ্যে ইজিবাইকের ৪ যাত্রী ছিলেন। ইজিবাইকের যাত্রীরা একটি বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ঝালকাঠির ছাগলকান্দার শশীর হাটে যাচ্ছিলেন। নিহতেরা ছিলেন কনেপক্ষের। চারটি ইজিবাইক নিয়ে বরের বাড়িতে যাচ্ছিলেন তারা। এর মধ্যে দুটি ইজিবাইক আগেই টোলপ্লাজা পার হয়। এর একটিতে ছিলেন দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া রুবেল হোসেন (৩০)। পরে খবর পেয়ে তিনি আহত স্বজনদের নিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন।
রুবেল হোসেন বলেন, “গাবখান ইউনিয়নের ওস্তকার মাঝি বাড়ি থেকে কীর্তিপাশা ইউনিয়নের ছাগলকান্দা শশীর হাটে যাইতেছিলাম বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে। গাবখান ব্রিজ পার হইয়া চারডা অটো (ইজিবাইক) নিয়া যাইতেছিলাম। দুইটা অটো পাশ কইরা গেছে। দুইটা টোল দিতেছিল। পেছন থেকে ট্রাক আইসা আমরার ওই দুইটা অটো প্লাস আরও দুইটা অটোরে মাইরা দিছে। ব্রেক ফেইল কইরা মাইরা দিয়া ও নিজে গর্তে পইড়া গেছে’
রুবেল বলেন, নিজেদের পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে; আহত আছে আরও সাতজন। দুর্ঘটনায় সব মিলিয়ে কতজন মারা গেছে এটা জানেন না রুবেল। তবে তার ধারণা গাড়ির নিচে লোক আছে।
আহতদের মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন দুজন। বাকিরা ঝালকাঠিতেই মারা গেছেন।
বরিশালে মারা যাওয়া দুজন হলেন- পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার মেসন্ডা এলাকার সুবিদ আলী হাওলাদারের ছেলে মো. রুহুল আমিন (৭০) এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার রামনগর এলাকার বাদশা মিয়ার প্রতিবন্ধী ছেলে মো. শহীদুল ইসলাম (৩৫)।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত রুহুল আমিনের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তার মেয়েজামাই গাবখানের বাসিন্দা হেমায়েত উদ্দিন। তিনি বলছিলেন, ‘ছাগলকান্দা আমরা ভাইঝি বিয়া দিছি। সেইখানে আমরা মেলা করছি (রওনা দিয়েছি)। আমরা সামনের গাড়িতে, তারা পিছের গাড়িতে, অটোতে। চারডা অটোতে মেলা করছি; দুইডা অটো সামনে গেছে। দুইডা পিছে টোল দেয়; আর ট্রাক আইয়া মাইরা দিছে। আমাগো লোক মারা গেছে পাঁচ-ছয়জন’
ঝালকাঠির রামনগরের বাদশা মিয়ার ছেলে সাইদুল বলেন, তার প্রতিবন্ধী ভাই শহীদুল (৪৫) গাবখানে ভিক্ষা করেন। তিনি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
ট্রাকের চালক, সহকারী গ্রেপ্তার
ট্রাকের চালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে ঘটনার পর পরেই চালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল।
গ্রেপ্তার চালকের নাম আল আমিন হাওলাদার। তার বাড়ি ঝালকাঠি সদরের নবগ্রামে। আর সহকারী নাজমুল শেখ খুলনা সদরের বাসিন্দা।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘আল আমিন নিয়মিত চালক ছিলেন না; তিনি বদলি চালক হিসেবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তিনি খুলনা থেকে সিমেন্টের বস্তা নিয়ে নিজ বাড়ি যাচ্ছিলেন।’