alt

সারাদেশ

‘আনন্দে’ শুরুর পর সড়কের ঈদযাত্রা কেন ‘বিষাদে’

মোস্তাফিজুর রহমান : বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

এবার রোজার ঈদে অন্যবারের তুলনায় ঘরমুখো মানুষের যাত্রা অনেকটাই আনন্দদায়ক দেখা যাচ্ছিল। ঈদের দিন পর্যন্ত তেমন কোনো বড় দুর্ঘটনার খবরও ছিল না। মূলত দীর্ঘ ছুটি হওয়ায় সুবিধা মতো সময় স্বাচ্ছন্দে শহর ত্যাগ করায় ঈদে মানুষের ফেরাও সন্তুষ্টজনক হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু ঈদের পর বড় কিছু দুর্ঘটনা এবারের ঈদযাত্রাকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এবারও বিষাদে রূপ নিয়েছে ঈদের আনন্দ।

১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার ফরিদপুরে ও বুধবার ঝালকাঠিতে দুই দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন অনেকে। এখন প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যা দুর্ঘটনা ঘটছে। গণমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে বেসরকারি একটি সংস্থা বলছে, ঈদের আগে পরে ১২ দিনে প্রায় তিনশ’ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে আড়াই শতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত দুই হাজার।

বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ঈদ পর্যবেক্ষণ, ঈদে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা ঘটেছে। মোট দুর্ঘটনার অর্ধেকই মোটরসাইকেলে। মৃত্যু সংখ্যাও শতাধিক। বিশেষ করে মোটরসাইকেলে একসঙ্গে তিন জনের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সংবাদকে বলেন, তাদের হিসেবে অন্যবারের তুলনায় এবার দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর হার ‘কিছুটা কমেছে’। তবে ঈদযাত্রার পরিস্থিতির ‘উন্নতি ঘটেনি’।

‘যেগুলো গণমাধ্যমে আসে সেগুলোই আমরা হিসেব করি। এটি প্রকৃত সংখ্যা নয়। প্রতিদিন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলো গণমাধ্যমে আসে না। সেগুলো হিসেবে আসলে দুর্ঘটনার হার একই আছে। পরিস্থিতি বদলায়নি এখনও,’ বলেন সাইদুর।

সড়কে দুর্ঘটনার ভয়াবহ চিত্র সরকারি খাতায় মিলছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বলছে,বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দুর্ঘটনা এবং মৃত্যু দুটোই বেড়েছে।

বিআরটিএ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৬৩০টি। এতে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৪৭৭ জনের। এ হিসেবে প্রতিদিন সড়কে ১৮ দুঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে ঝরছে ১৬ জনের বেশি। তবে ঈদযাত্রা নিয়ে দুর্ঘটনার পৃথক কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি সরকারি কোন সংস্থার কাছে।

বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসেব বলছে, এবারের ঈদে প্রতিদিন সড়কে ২৫ দুঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে ঝরছে ২০ জনের বেশি। এ হিসেবে আগের সময়ের তুলনায় ঈদে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু বেশি। বেসরকারি সংস্থাগুলো বলছে, প্রতি ঈদেই উল্লেখ্যযোগ্য হারে সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু ঘটছে।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসেবে, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত ৮ বছরে ঈদযাত্রায় (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা) ঢাকাসহ সারাদেশে ৩ হাজার ৮৬২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ৪ হাজার ৪৭৫ জন নিহত ও ১১ হাজার ৬৯৫ জন আহত হয়েছেন।

কেন এতো দুর্ঘটনা?

মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের তেঁতুলতলা অ্যাবলুম হাইওয়ে রেস্টুরেঁন্টের সামনে বাস ও পিকআপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় ১৫ জন মারা যান। প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উভয় যানের ‘অতিরিক্ত গতিকে’ দায়ী করা হয়েছে।

তাছাড়া পিকআপটি উল্টো লেনে চলছিল বলেও জানা যায়। আবার সড়কে বেশ কয়েকটি গর্তও ছিল। যেগুলো সংস্কার না করায় সেখানে সাম্প্রতি ছোট ছোট বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেও তথ্য।

ওই ঘটনার রেশ না কাটতে বুধবার দুপুরে খুলনা-ঝালকাঠি মহাসড়কে গাবখান ব্রিজের টোলপ্লাজায় ঝালকাঠি শহরমুখী একটি সিমেন্টবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা তিনটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও একটি প্রাইভেট কারকে ধাক্কা দেয়। বাহনগুলিসহ ট্রাকটি পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে প্রাইভেটকারের একই পরিবারের ৬ আরোহী ও চালকসহ ১৪ জন মৃত্যুবরণ করেন। ফরিদপুরের দুর্ঘটনার মতো ঝালকাঠির ঘটনাকেও ‘অতিরিক্ত গতিকে’ প্রাথমিক দায়ী করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেপরোয়া গতির পাশাপাশি ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।

ঝালকাঠির দুর্ঘটনার কথা তুলে ধরে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ইদানিং মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা যানের পেছনে বেপরোয়া যানবাহনের ধাক্কায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। এই গতি রোধ করতে হবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে যানবাহনের গতি নজরদারি করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মোটরসাইকেল চালকদের বিরাট অংশ কিশোর-যুবক। এরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে। মোটরসাইকেল বেপরোয়া চালানোর সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সম্পর্ক রয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে।’

‘মূল ঘাটতি’ ব্যবস্থাপনার>
সরকারের সড়ক বিভাগ বলছে, বিগত দেড় দশকে আঞ্চলিক ও মহাসড়ক প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মহাসড়কের দুই লেন চার লেনে উন্নিত করা হয়েছে। পদ্মাসেতুসহ ৫ হাজার ৬৫৯টি সেতু ও ৬ হাজার ১২২টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও সড়কে দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। ঈদকে ঘিরে দুর্ঘটনা নতুন মাত্রা পেয়েছে।

নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, ঈদের আগে সড়কে দুর্ঘটনা কম ঘটে। ঈদের পর দুর্ঘটনার হার বেশি। এবারও ঈদযাত্রার চিত্র একই। যারমূল কারণ সরকারি ব্যবস্থাপনার। ঈদের আগে সড়ক ব্যবস্থা নিয়ে ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা নানা উদ্যোগ নিয়ে মাঠে থাকলেও ঈদের পর তাদের তৎপরতা একেবারেই থাকে না। ফলে ঈদের পর দুর্ঘটনার হার বেশি হচ্ছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সাইদুর রহমান বলেন, ‘ঈদের পর দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা না থাকার কারণে। ঈদের আগে কিছু উদ্যোগ দেখা যায়। তবে ঈদের পর তাদের কোন কার্যক্রমই থাকে না। আর এই সময়টাতে যানবাহনের প্রতিযোগিতা ও মানুষের অস্থিরতাও বেশি থাকে। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।’

যাত্রীকল্যাণ সমিতি এই রোজার ঈদকে ঘিরে ঢাকা ও এর আশপাশ থেকে সর্বমোট ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ নিজ এলাকায় যাওয়ার ধারণা দেয়। সেই তুলনায় গণপরিবহনের ঘাটতি ছিল বলেও জানায় তারা। এজন্য ছুটি বাড়ানোসহ কিছু সুপারিশও করেছিল সংস্থাটি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সড়ক ব্যবস্থাপনায় সরকারের পরিকল্পনায় গলদ রয়েছে। তাই সড়কের মৃত্যু থামানো যাচ্ছে না।’

ছবি

ভাঙছে সীমান্ত নদী ইছামতীর বেড়িবাঁধ : এলাকায় আতঙ্ক

শিথিল কারফিউতে খুলেছে দোকানপাট, চলছে গাড়ি, আতঙ্ক কাটছে না জনমনে

ঢাকাসহ ৪ জেলায় ৯ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল

ছবি

ক্রেতা উপস্থিতি কম, বেচা-বিক্রি ‘ঠাণ্ডা’

বেরোবির উপাচার্যের বাসভবনে আক্রমণ-আগুন, যেভাবে উদ্ধার হলেন অবরুদ্ধ ২০ জন

ছবি

গুলিবিদ্ধ অনেকেই হারিয়েছেন পা

ঘটনার দশদিনেও গ্রেপ্তার হয়নি কেউ, উদ্ধার হয়নি লুট হওয়া ৭০ ভরি স্বর্ণের এক আনাও

সিলেটে সীমান্তকেন্দ্রিক চোরাচালান, ঘুরেফিরে তিনিই বিভিন্ন থানার ওসি

ছবি

অনেক পত্রিকায় খবর এলো, কিন্তু রুদ্র তো আর আসবে না

সহিংসতা-নাশকতার অভিযোগে ২০১ মামলা, গ্রেপ্তার ২২০৯

ছবি

কারফিউ শিথিলের সময় আরও ভিড়, যানজট

ছবি

রায়গঞ্জে অব্যবস্থাপনায় বন্ধের মুখে প্রাণিসম্পদ উপকেন্দ্রগুলো

এবার সারাদেশে পরীক্ষামূলক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু

ছবি

নরসিংদী কারাগার থেকে পালানো ৩৩১ বন্দীর আত্মসমর্পণ

ছবি

ফুটেজ দেখে সেতু ভবনে আগুন-লুটপাটে জড়িতদের ধরা হচ্ছে : ডিবি

সোনারগাঁয়ে জ্বালাও পোড়াও ভাংচুর না হলেও নাশকতার মামলায় আসামি ৮ শতাধিক, গ্রেফতার অর্ধশত

সেন্টমার্টিনে ট্রলার ডুবিতে ছাত্রলীগ নেতা নিখোঁজ, কোস্টগার্ডের চৌকিতে হামলা

কক্সবাজারে ছাত্রলীগ নেতা মারধরের ঘটনায় আরও ১১ জন গ্রেফতার

ঢাকাসহ চার জেলায় আজ ও কাল ৭ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল

ছবি

টাঙ্গাইলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, আহত ২০

ছবি

আবারও বেপরোয়া সার্ভেয়ার বাকের ও হাসান সিন্ডিকেট ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না কক্সবাজার এলএ শাখায়

ছবি

রামু থেকে অস্ত্র ও গুলি নিয়ে সন্ত্রাসী আটক

ছবি

কক্সবাজারে ক্ষমতাসীনদের হামলায় ৫ সংবাদকর্মী আহত

ছবি

নিখোঁজের দুই দিন পর পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

টেকনাফ সমুদ্র উপকূলে পালিয়ে এলো ৫ রোহিঙ্গা

ছবি

টেকনাফগামী ট্রলারে মায়ানমারের গুলি

ছবি

কোটা আন্দোলন: রংপুরে সংঘর্ষ ও মৃত্যুর তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন

ছবি

শেখ হাসিনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্বে কুরুচিপূর্ন বক্তব্য দেওয়ায় গজারিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ সভা

ছবি

নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের না’গঞ্জে মানববন্ধন

ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ওয়াসিমের দাফন সম্পন্ন

ছবি

রামুতে মাদকসেবী ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

সারাদেশে স্কুল, কলেজ অনিদিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা

ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলন : কক্সবাজারে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

ছবি

চীন বা ভারত নয়, নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবী

ছবি

মায়ানমারে চলছে বোমা হামলা সীমান্তে এতো কড়াকড়িতেও রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ

tab

সারাদেশ

‘আনন্দে’ শুরুর পর সড়কের ঈদযাত্রা কেন ‘বিষাদে’

মোস্তাফিজুর রহমান

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

এবার রোজার ঈদে অন্যবারের তুলনায় ঘরমুখো মানুষের যাত্রা অনেকটাই আনন্দদায়ক দেখা যাচ্ছিল। ঈদের দিন পর্যন্ত তেমন কোনো বড় দুর্ঘটনার খবরও ছিল না। মূলত দীর্ঘ ছুটি হওয়ায় সুবিধা মতো সময় স্বাচ্ছন্দে শহর ত্যাগ করায় ঈদে মানুষের ফেরাও সন্তুষ্টজনক হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু ঈদের পর বড় কিছু দুর্ঘটনা এবারের ঈদযাত্রাকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এবারও বিষাদে রূপ নিয়েছে ঈদের আনন্দ।

১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার ফরিদপুরে ও বুধবার ঝালকাঠিতে দুই দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন অনেকে। এখন প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যা দুর্ঘটনা ঘটছে। গণমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে বেসরকারি একটি সংস্থা বলছে, ঈদের আগে পরে ১২ দিনে প্রায় তিনশ’ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে আড়াই শতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত দুই হাজার।

বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ঈদ পর্যবেক্ষণ, ঈদে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা ঘটেছে। মোট দুর্ঘটনার অর্ধেকই মোটরসাইকেলে। মৃত্যু সংখ্যাও শতাধিক। বিশেষ করে মোটরসাইকেলে একসঙ্গে তিন জনের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সংবাদকে বলেন, তাদের হিসেবে অন্যবারের তুলনায় এবার দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর হার ‘কিছুটা কমেছে’। তবে ঈদযাত্রার পরিস্থিতির ‘উন্নতি ঘটেনি’।

‘যেগুলো গণমাধ্যমে আসে সেগুলোই আমরা হিসেব করি। এটি প্রকৃত সংখ্যা নয়। প্রতিদিন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলো গণমাধ্যমে আসে না। সেগুলো হিসেবে আসলে দুর্ঘটনার হার একই আছে। পরিস্থিতি বদলায়নি এখনও,’ বলেন সাইদুর।

সড়কে দুর্ঘটনার ভয়াবহ চিত্র সরকারি খাতায় মিলছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বলছে,বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দুর্ঘটনা এবং মৃত্যু দুটোই বেড়েছে।

বিআরটিএ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৬৩০টি। এতে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৪৭৭ জনের। এ হিসেবে প্রতিদিন সড়কে ১৮ দুঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে ঝরছে ১৬ জনের বেশি। তবে ঈদযাত্রা নিয়ে দুর্ঘটনার পৃথক কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি সরকারি কোন সংস্থার কাছে।

বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসেব বলছে, এবারের ঈদে প্রতিদিন সড়কে ২৫ দুঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে ঝরছে ২০ জনের বেশি। এ হিসেবে আগের সময়ের তুলনায় ঈদে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু বেশি। বেসরকারি সংস্থাগুলো বলছে, প্রতি ঈদেই উল্লেখ্যযোগ্য হারে সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু ঘটছে।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসেবে, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত ৮ বছরে ঈদযাত্রায় (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা) ঢাকাসহ সারাদেশে ৩ হাজার ৮৬২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ৪ হাজার ৪৭৫ জন নিহত ও ১১ হাজার ৬৯৫ জন আহত হয়েছেন।

কেন এতো দুর্ঘটনা?

মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের তেঁতুলতলা অ্যাবলুম হাইওয়ে রেস্টুরেঁন্টের সামনে বাস ও পিকআপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় ১৫ জন মারা যান। প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উভয় যানের ‘অতিরিক্ত গতিকে’ দায়ী করা হয়েছে।

তাছাড়া পিকআপটি উল্টো লেনে চলছিল বলেও জানা যায়। আবার সড়কে বেশ কয়েকটি গর্তও ছিল। যেগুলো সংস্কার না করায় সেখানে সাম্প্রতি ছোট ছোট বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেও তথ্য।

ওই ঘটনার রেশ না কাটতে বুধবার দুপুরে খুলনা-ঝালকাঠি মহাসড়কে গাবখান ব্রিজের টোলপ্লাজায় ঝালকাঠি শহরমুখী একটি সিমেন্টবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা তিনটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও একটি প্রাইভেট কারকে ধাক্কা দেয়। বাহনগুলিসহ ট্রাকটি পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে প্রাইভেটকারের একই পরিবারের ৬ আরোহী ও চালকসহ ১৪ জন মৃত্যুবরণ করেন। ফরিদপুরের দুর্ঘটনার মতো ঝালকাঠির ঘটনাকেও ‘অতিরিক্ত গতিকে’ প্রাথমিক দায়ী করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেপরোয়া গতির পাশাপাশি ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।

ঝালকাঠির দুর্ঘটনার কথা তুলে ধরে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ইদানিং মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা যানের পেছনে বেপরোয়া যানবাহনের ধাক্কায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। এই গতি রোধ করতে হবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে যানবাহনের গতি নজরদারি করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মোটরসাইকেল চালকদের বিরাট অংশ কিশোর-যুবক। এরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে। মোটরসাইকেল বেপরোয়া চালানোর সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সম্পর্ক রয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে।’

‘মূল ঘাটতি’ ব্যবস্থাপনার>
সরকারের সড়ক বিভাগ বলছে, বিগত দেড় দশকে আঞ্চলিক ও মহাসড়ক প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মহাসড়কের দুই লেন চার লেনে উন্নিত করা হয়েছে। পদ্মাসেতুসহ ৫ হাজার ৬৫৯টি সেতু ও ৬ হাজার ১২২টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও সড়কে দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। ঈদকে ঘিরে দুর্ঘটনা নতুন মাত্রা পেয়েছে।

নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, ঈদের আগে সড়কে দুর্ঘটনা কম ঘটে। ঈদের পর দুর্ঘটনার হার বেশি। এবারও ঈদযাত্রার চিত্র একই। যারমূল কারণ সরকারি ব্যবস্থাপনার। ঈদের আগে সড়ক ব্যবস্থা নিয়ে ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা নানা উদ্যোগ নিয়ে মাঠে থাকলেও ঈদের পর তাদের তৎপরতা একেবারেই থাকে না। ফলে ঈদের পর দুর্ঘটনার হার বেশি হচ্ছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সাইদুর রহমান বলেন, ‘ঈদের পর দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা না থাকার কারণে। ঈদের আগে কিছু উদ্যোগ দেখা যায়। তবে ঈদের পর তাদের কোন কার্যক্রমই থাকে না। আর এই সময়টাতে যানবাহনের প্রতিযোগিতা ও মানুষের অস্থিরতাও বেশি থাকে। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।’

যাত্রীকল্যাণ সমিতি এই রোজার ঈদকে ঘিরে ঢাকা ও এর আশপাশ থেকে সর্বমোট ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ নিজ এলাকায় যাওয়ার ধারণা দেয়। সেই তুলনায় গণপরিবহনের ঘাটতি ছিল বলেও জানায় তারা। এজন্য ছুটি বাড়ানোসহ কিছু সুপারিশও করেছিল সংস্থাটি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সড়ক ব্যবস্থাপনায় সরকারের পরিকল্পনায় গলদ রয়েছে। তাই সড়কের মৃত্যু থামানো যাচ্ছে না।’

back to top