কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশী টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার মিলেছে। ৪ মাস ১০দিনের ব্যবধানের মসজিদের ৯টি দানবাক্সে মিলেছে ৭ কোটি ৭৭ লাখ ১২ হাজার ৫৫৭ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে। টাকা গণনা শেষে শনিবার রাত পৌনে দুইটার দিকে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ পারভেজ এ প্রতিনিধিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর খোলা হয়েছিল পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স। সেখানে মিলেছিল ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এদিকে পাগলা মসজিদকে নিয়ে মানুষের রয়েছে অন্য রখম অনুভূতি। এ মসজিদে খাস নিয়তে মানত করলে মনোবাসনাপূর্ণ হয়, এমন বিশ্বাস থেকেই দিন দিন পাগলা মসজিদে দানের পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে। সকল ধর্ম ও বর্ণের লোকজন এ মসজিদে দান করে থাকেন বলে জানা গেছে।
গত শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পাগলা মসজিদ পরিচালনার কমিটির কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। দানবাক্সের টাকাগুলো ২৭টি বস্তার ভরে মসজিদের দুতলার মেঝেতে নিয়ে গণনার কাজ শুরু হয়। রূপালি ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলামসহ ব্যাংকের ৭০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী, পাগলা মসজিদের স্টাফ, মসজিদ সংশ্লিষ্ট এতিমখানার ১০২ শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ দুই শতাধিক মানুষ টাকা গণনার কাজে অংশ নেন। সকাল আটটা থেকে রাত পৌনে দুইটা পর্যন্ত চলে টাকা গণনার কাজ। ২৭ বস্তা টাকা গণনা করতে প্রায় ১৮ ঘন্টা লেগে যায়। গণনা শেষে কঠোর নিরাপত্তায় টাকাগুলো রূপালি ব্যাংকের ভল্টে জমা করা হয়েছে। সকাল থেকেই মসজিদ ও আশপাশ এলাকায় ডিজিটাল ডিভাইস সক্রিয় করা হয়।
কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম প্রান্তে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে ৩ একর ৮৮ শতক জায়গা নিয়ে দৃষ্ঠিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্সের অবস্থান। সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজ বিশিষ্ট তিনতলা পাগলা মসজিদটি কিশোরগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা। এ মসজিদকে ঘিরে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই।
এ মসজিদে দান করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়- এ বিশ্বাস থেকেই পাগলা মসজিদে দেশ বিদেশের নানা ধর্ম ও বর্ণের মানুষ টাকা পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা দান করে থাকেন। অনেকে রাতে গোপনে এসে এ মসজিদে দান করেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। এতে দিন দিন মসজিদের দান বাক্সে টাকার পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে। সরাইল থেকে আসা দানকারী আব্দুল আহাদ জানান, তিনি বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পেতে পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে পাগলা মসজিদে এসেছেন। মসজিদে কিছু মানত আদায় করেছেন বলে তিনি জানান।
বেশ কয়েকজন দানকারী জানান, তারা পাগলা মসজিদে অনেক আগেই মানত করেছিলেন। তাই পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে মানত আদায় করতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। চল্লিশোর্ধ এক নারী জানান, আমার ছেলের একটু সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে তিনি পাগলা মসজিদে দান করতে এসেছেন বলে জানান। স্থানীয় বাসিন্দা ফুল মামুদ জানান, দিন রাতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষের ঢল নামে। শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে ১০টি বাসে করে লোকজন এসে পাগলা মসজিদে মানত আদায় করে গেছেন। কিছু না কিছু তো আছেই, নইলে এ মসজিদে দান করতে মানুষের ঢল নামবে কেন বলে প্রশ্ন রাখেন ফুল মামুদ।
এদিকে টাকা গণনাকে ঘিরে মসজিদ কমিটি, এতিমখানার শিক্ষাথী, শিক্ষক ও স্থানীয়দের মাঝে একটা উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। শিক্ষার্থীরা জানান, টাকা গণনার দিনটি তাদের কাছে আনন্দের দিন। বিদেশী মুদ্রাসহ টাকা গণনার কাজ করায় শিক্ষার্থীরা দারুণ খুশী বলে জানিয়েছেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম(বার), জানান, পাগলা মসজিদের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ তৎপর রয়েছে। মসজিদ ও আশপাশ এলাকার নিরাপত্তায় ডিজিটাল ডিভাইসগুলো সক্রিয় রয়েছে। টাকা গণনা থেকে শুরু করে সে টাকাগুলো ব্যাংকে নেয়ার কাজটি কঠোর নিরাপত্তায় করা হয়ে থাকে বলে তিনি জানান।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, পাগলা মসজিদকে ঘিরে দেশ বিদেশের মানুষের অনুভূতি কাজ করে। তাই সকল ধর্মের মানুষ এখানে দান করে থাকেন। দানের এ টাকা দিয়ে শতকোটি টাকার একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্স নিমার্ণ করা হবে। অন্তত ৩০ হাজার মানুষ যাতে একসাথে নামাজ পড়তে পারে এমন একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নিমার্ণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া জেলার মসজিদ, মাদ্রাসা ও হতদরিদ্রদের জঠিল ও কঠিন চিকিৎসা খাতে অনুদান দেয়া হয়ে থাকে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশা খানের বংশধর দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিলকদর পাগলা নরসুন্দা নদীর তীরে বসে নামাজ আদায় করতেন। তিনি মারা গেলে পরবর্তীতে তাঁর ভক্তরা সেখানে মসজিদটি নিমার্ণ করেন। জিলকদর পাগলার নামানুসারেই মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি পায় বলে স্থানীয়রা জানান।
রোববার, ২১ এপ্রিল ২০২৪
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশী টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার মিলেছে। ৪ মাস ১০দিনের ব্যবধানের মসজিদের ৯টি দানবাক্সে মিলেছে ৭ কোটি ৭৭ লাখ ১২ হাজার ৫৫৭ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে। টাকা গণনা শেষে শনিবার রাত পৌনে দুইটার দিকে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ পারভেজ এ প্রতিনিধিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর খোলা হয়েছিল পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স। সেখানে মিলেছিল ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এদিকে পাগলা মসজিদকে নিয়ে মানুষের রয়েছে অন্য রখম অনুভূতি। এ মসজিদে খাস নিয়তে মানত করলে মনোবাসনাপূর্ণ হয়, এমন বিশ্বাস থেকেই দিন দিন পাগলা মসজিদে দানের পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে। সকল ধর্ম ও বর্ণের লোকজন এ মসজিদে দান করে থাকেন বলে জানা গেছে।
গত শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পাগলা মসজিদ পরিচালনার কমিটির কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। দানবাক্সের টাকাগুলো ২৭টি বস্তার ভরে মসজিদের দুতলার মেঝেতে নিয়ে গণনার কাজ শুরু হয়। রূপালি ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলামসহ ব্যাংকের ৭০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী, পাগলা মসজিদের স্টাফ, মসজিদ সংশ্লিষ্ট এতিমখানার ১০২ শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ দুই শতাধিক মানুষ টাকা গণনার কাজে অংশ নেন। সকাল আটটা থেকে রাত পৌনে দুইটা পর্যন্ত চলে টাকা গণনার কাজ। ২৭ বস্তা টাকা গণনা করতে প্রায় ১৮ ঘন্টা লেগে যায়। গণনা শেষে কঠোর নিরাপত্তায় টাকাগুলো রূপালি ব্যাংকের ভল্টে জমা করা হয়েছে। সকাল থেকেই মসজিদ ও আশপাশ এলাকায় ডিজিটাল ডিভাইস সক্রিয় করা হয়।
কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম প্রান্তে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে ৩ একর ৮৮ শতক জায়গা নিয়ে দৃষ্ঠিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্সের অবস্থান। সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজ বিশিষ্ট তিনতলা পাগলা মসজিদটি কিশোরগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা। এ মসজিদকে ঘিরে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই।
এ মসজিদে দান করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়- এ বিশ্বাস থেকেই পাগলা মসজিদে দেশ বিদেশের নানা ধর্ম ও বর্ণের মানুষ টাকা পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা দান করে থাকেন। অনেকে রাতে গোপনে এসে এ মসজিদে দান করেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। এতে দিন দিন মসজিদের দান বাক্সে টাকার পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে। সরাইল থেকে আসা দানকারী আব্দুল আহাদ জানান, তিনি বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পেতে পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে পাগলা মসজিদে এসেছেন। মসজিদে কিছু মানত আদায় করেছেন বলে তিনি জানান।
বেশ কয়েকজন দানকারী জানান, তারা পাগলা মসজিদে অনেক আগেই মানত করেছিলেন। তাই পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে মানত আদায় করতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। চল্লিশোর্ধ এক নারী জানান, আমার ছেলের একটু সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে তিনি পাগলা মসজিদে দান করতে এসেছেন বলে জানান। স্থানীয় বাসিন্দা ফুল মামুদ জানান, দিন রাতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষের ঢল নামে। শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে ১০টি বাসে করে লোকজন এসে পাগলা মসজিদে মানত আদায় করে গেছেন। কিছু না কিছু তো আছেই, নইলে এ মসজিদে দান করতে মানুষের ঢল নামবে কেন বলে প্রশ্ন রাখেন ফুল মামুদ।
এদিকে টাকা গণনাকে ঘিরে মসজিদ কমিটি, এতিমখানার শিক্ষাথী, শিক্ষক ও স্থানীয়দের মাঝে একটা উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। শিক্ষার্থীরা জানান, টাকা গণনার দিনটি তাদের কাছে আনন্দের দিন। বিদেশী মুদ্রাসহ টাকা গণনার কাজ করায় শিক্ষার্থীরা দারুণ খুশী বলে জানিয়েছেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম(বার), জানান, পাগলা মসজিদের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ তৎপর রয়েছে। মসজিদ ও আশপাশ এলাকার নিরাপত্তায় ডিজিটাল ডিভাইসগুলো সক্রিয় রয়েছে। টাকা গণনা থেকে শুরু করে সে টাকাগুলো ব্যাংকে নেয়ার কাজটি কঠোর নিরাপত্তায় করা হয়ে থাকে বলে তিনি জানান।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, পাগলা মসজিদকে ঘিরে দেশ বিদেশের মানুষের অনুভূতি কাজ করে। তাই সকল ধর্মের মানুষ এখানে দান করে থাকেন। দানের এ টাকা দিয়ে শতকোটি টাকার একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্স নিমার্ণ করা হবে। অন্তত ৩০ হাজার মানুষ যাতে একসাথে নামাজ পড়তে পারে এমন একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নিমার্ণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া জেলার মসজিদ, মাদ্রাসা ও হতদরিদ্রদের জঠিল ও কঠিন চিকিৎসা খাতে অনুদান দেয়া হয়ে থাকে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশা খানের বংশধর দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিলকদর পাগলা নরসুন্দা নদীর তীরে বসে নামাজ আদায় করতেন। তিনি মারা গেলে পরবর্তীতে তাঁর ভক্তরা সেখানে মসজিদটি নিমার্ণ করেন। জিলকদর পাগলার নামানুসারেই মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি পায় বলে স্থানীয়রা জানান।