alt

সারাদেশ

ভৌতিক বিলের খপ্পর চট্টগ্রামে মিটার-সংযোগবিহীন গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল প্রায় ৭ লাখ টাকা

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

কর্ণফুলী পিডিবি অফিস থেকে এক গ্রাহকের নামে পাঠানো ৪টি বিলের যোগফল ৬ লাখ ৬৯ হাজার ১৭৩ টাকা। যে গ্রাহকের নামে বিল পাঠানো হয়েছে ওই গ্রাহকের কোনো মিটার নেই, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। এমন ভৌতিক বিলের খপ্পরে পড়া ভুতুড়ে কাণ্ডটি ঘটেছে কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ইঞ্জিনিয়ার খাইর আহমেদ সড়কের প্রকৌশলী আলহাজ্ব মো. সোলায়মানের সঙ্গে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে গ্রাহক মো. সোলায়মানের পুত্র ভুক্তভোগী মো. জোবায়ের বাহাদুর বলেন, পিডিবি যে মিটারের বিল দিচ্ছে তার বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, মিটার নেই, নেই ব্যবহার তবুও বিদ্যুৎ বিল আসছে লাখ লাখ টাকা। অথচ আমরা কিছু জানি না। কারণ বাড়ি বিক্রি করে আমরা চলে এসেছি। এ ঘটনায় প্রতিবেদক বিদ্যুৎ বিল পর্যালোচনা করে দেখেন কর্ণফুলীর এই গ্রাহক কে গত তিন বছরে (২০২২-২০২৪) বিল পাঠানো হয়েছে চারটি। পৃথক পৃথক পাঠানো চারটি বিলের যোগফল প্রায় ৭ লাখের মতো।

অনুসন্ধানে আরও তথ্য মিলে, গত ২৮ মার্চ সর্বশেষ ইস্যু হওয়া বিলে গ্রাহক প্রকৌশলী মো. সোলায়মানের বিল আসে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩২৩ টাকা। যার বিল নম্বর-২৭২১৮০০৫। বুক নম্বর-৯২১। একাউন্ট নম্বর-এ-৮৯০০। মিটার নম্বর-১৪৩১২৯।

বিলের বিস্তারিত পেমেন্ট বকেয়াতে আরও লিখা রয়েছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর ও ২০২৪ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির বকেয়া ১ লাখ ৭১ হাজার ৮০৪ টাকা। এতে বর্তমান রিডিং দেখানো হয়েছে ৩৬ হাজার ৭৬৯ ইউনিট। পূর্বের ইউনিট দেখানো হয়েছে একই রিডিং। কনজুম ইউনিট দেখানো হয় ৫০০। এ বিলে ভ্যাট ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৬১৭ টাকা। ইলেকট্রিসিটি চার্জ, ডিমান্ট চার্জ ও ৫ শতাংশ ভ্যাটসহ আরও ইউনিট আরও ৪ হাজার ৩৭২ টাকা।

অনুসন্ধানে তথ্য মিলে, এরপূর্বে ২৭ ফেব্রুয়ারি ইস্যু হওয়া বিলে একই গ্রাহকের বিল ১ লাখ ৮৪ হাজার ৭৪২ টাকা। যার বিল নম্বরটি ছিল-২৭১৫১১৫৯। এতে বর্তমান রিডিং ও পূর্বের রিডিং দেখানো হয়েছে অপরিবর্তিত। কনজুম ইউনিট দেখানো হয় ৫০০ ই। এ বিলে ভ্যাট ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪০৯ টাকা।

এমনকি বিলের বিস্তারিত পেমেন্ট বকেয়াতে লিখা রয়েছে, ২০২৩ সালের জুন হতে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতি মাসে ৪ হাজার ১৮৮ টাকা করে বিল এসেছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৬৪ টাকা। অথচ ইউনিটের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবুও ইলেকট্রিসিটি চার্জ, ডিমান্ট চার্জ ও ৫ শতাংশ ভ্যাটসহ আরও ইউনিট বিল ৪ হাজার ৩৭২ টাকা।

একই গ্রাহক কে আবার ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বরে পাঠানো বিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯২ টাকা। রিডিং আবারও অপরিবর্তিত। এমনকি ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৪ হাজার ১৮৮ টাকা করে গড় বিল দেখানো হয় ১ লাখ ৪২ হাজার ৪৮৯ টাকা। এই বিলেও ইলেকট্রিসিটি চার্জ, ডিমান্ট চার্জ ও ৫ শতাংশ ভ্যাটসহ বিলে যোগ হয়েছে আরও ৩ হাজার ৯৯৭ টাকার বিল সংযুক্ত। একই গ্রাহককে ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবরে পাঠানো বিল ১ লাখ ১৯ হাজার ১১৬ টাকা। ওখানেও বরাবরের মতো বর্তমান ও পূর্বের রিডিং অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

বিলে বিস্তারিত তথ্যে বলা আছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি হতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৩ হাজার ৬১৫ টাকা করে বিল ৯০ হাজার ১৯১ টাকা। ইলেকট্রিসিটি চার্জ, ডিমান্ট চার্জ ও ৫ শতাংশ ভ্যাটসহ আরও ৩ হাজার ৪৫১ টাকা ২৫ পয়সা।

এই বিল লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই বিলের কপিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কতৃক নীল সিল করে গ্রাহক কে জানানো হয়েছে ‘আপনার বকেয়া বিদ্যুৎ পরিশোধ না করায় মামলার জন্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই বিলটি পরিশোধ করুন।’ কিন্তু মামলার খবর না পেলেও বিলের খবরে বিস্মিত পরিবারটি।

এদিকে, ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করতে গিয়ে সোলায়মানের বড়পুত্র মোহাম্মদ জোবায়ের বাহাদুর আরও বলেন, আমার বাবা মারা গেছেন আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগে। উনি মারা যাবার পর আমরা আমাদের বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছি। মাহবুব আলম নামে এক ব্যক্তির কাছে। বাড়িটি ছিল এক তলা সেমিপাকা ভবন। এখন তিন তলা বাড়ি। এমনকি বাড়িতে থাকা আগের বিদ্যুৎ মিটার সারেন্ডার করে দিয়েছি। কিন্তু প্রতিবেদকের কাছে স্বপক্ষে কাগজ দেখাতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর মইজ্জ্যারটেক উপ-কেন্দ্রের বিল প্রস্তুতকারী রনির মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।তবে পটিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রণয় আচার্য্য বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে হবে। যদিও তখন আমি ছিলাম না। এছাড়া আদৌও গ্রাহক সোলায়মানের পরিবার মিটারটি সারেন্ডার করেছিল কিনা তাও জানার বিষয়। তবে বাড়ির নতুন মালিক মাহবুব আলম আমার কাছে এই বিষয়িটি নিয়ে কয়েকবার এসেছিলেন। আমি সমাধান করে দেবো জানিয়ে ঈদের পরে আসতে বলেছিলাম তিনি আসেননি।

একই বিষয়ে চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ইঞ্জিনিয়ার খাইর আহমেদ সড়কের প্রতিবেশী মো. আজাদ বলেন, তাহলে পিডিবির মিটারটি গেল কোথায়? কে গায়েব করেছে তা খুঁজে বের করা পিডিবির দায়িত্ব ছিল। তা না করে পিডিবি কিভাবে একই বাড়িতে নতুন দুটি মিটার দিলেন। বুঝা যাচ্ছে সর্ষে-ভূত। আবার ৪ বছর আগে মাহবুব আলম লিখিত অভিযোগ দিলেও পিডিবি তদন্ত করেনি কার স্বার্থে? নিশ্চয় সবকিছু পিডিবির লোকজন জানতেন। তারাই মোটা অঙ্কের সুবিধা নিয়ে এসব করেছে। যা উচ্চ তদন্ত দরকার।

পটিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী প্রকৌশলী আ. স. ম. রেজাউন নবী বলেন, ‘বিষয়টি আপনি বলার পরে জেনেছি। আমি খোঁজ নিচ্ছি। অবশ্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে দক্ষিণ জোনের পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল বিউবো’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) উজ্জ্বল কুমার মোহন্ত ভালো বলতে পারবেন। পরে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহন্ত’র মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও হোয়াটসঅ্যাপে অভিযোগের সমস্ত ডকুমেন্টস পাঠিয়েও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগী পরিবারের দ্বিতীয় ছেলে মোহাম্মদ নওশের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে মিটার আমরা ব্যবহার করিনি, যে মিটার আমরা ৪ বছর আগে ছেড়ে দিছি। বাড়ি বিক্রি করে রাস্তাঘাটে ঘুরছি। এমনকি মিটারের গ্রাহক মারা গেছেন ২০১৬ সালে। জমি বিক্রি করেছি ২০২০ সালে। এরপরেও মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কেন বিল দিচ্ছে কর্ণফুলী পিডিবি অফিস জানে। এসব আমরা জানি না।

এ প্রসঙ্গে বাড়িটির বর্তমান মালিক মাহবুব আলম বলেন, আমি গত ২০২০ সালে মৃত মো. সোলায়মানের ওয়ারিশ থেকে বাড়িসহ ১০ শতক জমি ক্রয় করি। তখন আমাকে জানানো হয় বাড়িতে থাকা সোলায়মানের মিটারটি পিডিবি’র কাছে সারেন্ডার করা হয়েছে। আমিও কোনো মিটার দেখিনি। পরে নিজের নামে মিটারের জন্য আবেদন করি। পিডিবি অফিস সরেজমিনে তদন্ত করে আমার নামে দুটি মিটার স্থাপন করে দেন। যেহেতু বাড়িতে কোনো অন্য মিটার ছিল না। এরপর আমার নামীয় মিটারের নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছি। আমার কোনো সমস্যা নেই। অথচ পূর্বের মালিকের নামে এখনও লাখ লাখ টাকার বিল আসছে।

পিডিবিকে বিষয়টি জানিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ভুক্তভোগী মাহবুব আলম আরও জানান, তাৎক্ষণিকভাবে সে সময় আমি বিষয়টি হেড অফিসের বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের পরিচালক মো. আবু ছাইদ সাহেব কে জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু সাড়ে তিন বছরেও তারা তা তদন্ত করেনি। সমাধান করেনি। অথচ এরমধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী বদলি হয়েছে কয়েকজন।

ছবি

সুন্দরবনের ১০ একর জায়গাজুড়ে আগুন

ছবি

বরিশালে শ্রমিকদের সংঘর্ষের পর মামলা,বাস চলাচল শুরু

ছবি

সংবাদের তারাগজ্ঞ প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলামের বাড়িতে পুলিশের তান্ডব

সাঁতার না জানার কারনে গোসল করতে নেমে আর ফিরেনি আলিফ

ছবি

সুন্দরবনে আগুন লাগার ২৪ ঘন্টা পর নিয়ন্ত্রনে এসেছে বলে দাবি বনবিভাগের

ভোলার চরফ্যাশনে অন্যের জমি দখল নিয়েছে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান

নওগাঁয় ওষুধ ব্যবসায়ীদের সকাল-সন্ধ্যা ধর্মঘট

বোয়ালমারীতে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রতিবন্ধীর মৃত্যু

ছবি

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে ৩ বাংলাদেশী আহত

ছবি

জয়পুরহাটে হত্যা মামলায় পাঁচ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এল আরও ৮৮ বিজিপি সদস্য

ছবি

সারা দেশে গাছ কাটা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

ছবি

চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর

ছবি

উখিয়ায় রোহিঙ্গা যুবককে জবাই করে হত্যা

ছবি

সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে বিমানবাহিনী

ছবি

খাগড়াছড়িতে বজ্রপাতে বসতঘরে আগুন লেগে মা-ছেলের মৃত্যু

ছবি

টঙ্গীতে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

ছবি

থানায় ঢুকে প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় শোকজ

আখাউড়ায় সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ,পুলিশের বাধা

ছবি

যথাস্থানে সেতু নির্মাণ না করায় প্রকৌশলী ও ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিয়োগ

চাটখিল স্কয়ার হাসপাতালের এমডিকে প্রাণনাশের হুমকি মিথ্যে অভিযোগে সম্মানহানি আদালতে মামলা

ছবি

৩২ ঘন্টা পর উদ্ধার কাজ সম্পন্ন, দুর্ঘটনা কবলিত বগি-ওয়াগন উদ্ধার

ছবি

মাদারীপুরে ফিরল তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে নিহত ৮ যুবকের মরদেহ, দাফন সম্পন্ন

ছবি

বকেয়া বেতন আদায় ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ছবি

সুন্দরবনে আগুন, নেভাতে বনবিভাগ ও গ্রামবাসীর চেষ্টা

ধোবাউড়ায় এসডিএফ সদস্যদের সঙ্গে প্রতারণা, বিধবা ভিক্ষুকের নামে টাকা তুলে আত্মসা

ছবি

ভারি বৃষ্টির আশঙ্কায় ধান কাটার ধুম

ছবি

বোরো ধান ঘরে তুলতে কৃষকদের ফরিয়াদ : এই মুহূর্তে যেন বৃষ্টি না হয়

ছবি

বাগমারায় আগুনে পুড়লো ১০০ বিঘার পানের বরজ

ছবি

গজারিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত, আহত ২

ছবি

তীব্র তাপদাহে সন্তোষপুর বনাঞ্চলে তৃষ্ণার্ত বানর

ছবি

দেবিদ্বারে কালবৈশাখী ঝড়ে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, ব্যাহত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা

ছবি

তাপপ্রবাহে পশু-পাখির সেবায় মাঠে প্রাণিসম্পদ দপ্তর

ছবি

বেলাবতে গাঁজাসহ দুই মাদককারবারি গ্রেপ্তার

ছবি

হাজীগঞ্জে হাসপাতাল ও ফার্মেসিকে জরিমানা

tab

সারাদেশ

ভৌতিক বিলের খপ্পর চট্টগ্রামে মিটার-সংযোগবিহীন গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল প্রায় ৭ লাখ টাকা

চট্টগ্রাম ব্যুরো

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

কর্ণফুলী পিডিবি অফিস থেকে এক গ্রাহকের নামে পাঠানো ৪টি বিলের যোগফল ৬ লাখ ৬৯ হাজার ১৭৩ টাকা। যে গ্রাহকের নামে বিল পাঠানো হয়েছে ওই গ্রাহকের কোনো মিটার নেই, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। এমন ভৌতিক বিলের খপ্পরে পড়া ভুতুড়ে কাণ্ডটি ঘটেছে কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ইঞ্জিনিয়ার খাইর আহমেদ সড়কের প্রকৌশলী আলহাজ্ব মো. সোলায়মানের সঙ্গে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে গ্রাহক মো. সোলায়মানের পুত্র ভুক্তভোগী মো. জোবায়ের বাহাদুর বলেন, পিডিবি যে মিটারের বিল দিচ্ছে তার বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, মিটার নেই, নেই ব্যবহার তবুও বিদ্যুৎ বিল আসছে লাখ লাখ টাকা। অথচ আমরা কিছু জানি না। কারণ বাড়ি বিক্রি করে আমরা চলে এসেছি। এ ঘটনায় প্রতিবেদক বিদ্যুৎ বিল পর্যালোচনা করে দেখেন কর্ণফুলীর এই গ্রাহক কে গত তিন বছরে (২০২২-২০২৪) বিল পাঠানো হয়েছে চারটি। পৃথক পৃথক পাঠানো চারটি বিলের যোগফল প্রায় ৭ লাখের মতো।

অনুসন্ধানে আরও তথ্য মিলে, গত ২৮ মার্চ সর্বশেষ ইস্যু হওয়া বিলে গ্রাহক প্রকৌশলী মো. সোলায়মানের বিল আসে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩২৩ টাকা। যার বিল নম্বর-২৭২১৮০০৫। বুক নম্বর-৯২১। একাউন্ট নম্বর-এ-৮৯০০। মিটার নম্বর-১৪৩১২৯।

বিলের বিস্তারিত পেমেন্ট বকেয়াতে আরও লিখা রয়েছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর ও ২০২৪ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির বকেয়া ১ লাখ ৭১ হাজার ৮০৪ টাকা। এতে বর্তমান রিডিং দেখানো হয়েছে ৩৬ হাজার ৭৬৯ ইউনিট। পূর্বের ইউনিট দেখানো হয়েছে একই রিডিং। কনজুম ইউনিট দেখানো হয় ৫০০। এ বিলে ভ্যাট ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৬১৭ টাকা। ইলেকট্রিসিটি চার্জ, ডিমান্ট চার্জ ও ৫ শতাংশ ভ্যাটসহ আরও ইউনিট আরও ৪ হাজার ৩৭২ টাকা।

অনুসন্ধানে তথ্য মিলে, এরপূর্বে ২৭ ফেব্রুয়ারি ইস্যু হওয়া বিলে একই গ্রাহকের বিল ১ লাখ ৮৪ হাজার ৭৪২ টাকা। যার বিল নম্বরটি ছিল-২৭১৫১১৫৯। এতে বর্তমান রিডিং ও পূর্বের রিডিং দেখানো হয়েছে অপরিবর্তিত। কনজুম ইউনিট দেখানো হয় ৫০০ ই। এ বিলে ভ্যাট ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪০৯ টাকা।

এমনকি বিলের বিস্তারিত পেমেন্ট বকেয়াতে লিখা রয়েছে, ২০২৩ সালের জুন হতে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতি মাসে ৪ হাজার ১৮৮ টাকা করে বিল এসেছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৬৪ টাকা। অথচ ইউনিটের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবুও ইলেকট্রিসিটি চার্জ, ডিমান্ট চার্জ ও ৫ শতাংশ ভ্যাটসহ আরও ইউনিট বিল ৪ হাজার ৩৭২ টাকা।

একই গ্রাহক কে আবার ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বরে পাঠানো বিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯২ টাকা। রিডিং আবারও অপরিবর্তিত। এমনকি ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৪ হাজার ১৮৮ টাকা করে গড় বিল দেখানো হয় ১ লাখ ৪২ হাজার ৪৮৯ টাকা। এই বিলেও ইলেকট্রিসিটি চার্জ, ডিমান্ট চার্জ ও ৫ শতাংশ ভ্যাটসহ বিলে যোগ হয়েছে আরও ৩ হাজার ৯৯৭ টাকার বিল সংযুক্ত। একই গ্রাহককে ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবরে পাঠানো বিল ১ লাখ ১৯ হাজার ১১৬ টাকা। ওখানেও বরাবরের মতো বর্তমান ও পূর্বের রিডিং অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

বিলে বিস্তারিত তথ্যে বলা আছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি হতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৩ হাজার ৬১৫ টাকা করে বিল ৯০ হাজার ১৯১ টাকা। ইলেকট্রিসিটি চার্জ, ডিমান্ট চার্জ ও ৫ শতাংশ ভ্যাটসহ আরও ৩ হাজার ৪৫১ টাকা ২৫ পয়সা।

এই বিল লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই বিলের কপিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কতৃক নীল সিল করে গ্রাহক কে জানানো হয়েছে ‘আপনার বকেয়া বিদ্যুৎ পরিশোধ না করায় মামলার জন্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই বিলটি পরিশোধ করুন।’ কিন্তু মামলার খবর না পেলেও বিলের খবরে বিস্মিত পরিবারটি।

এদিকে, ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করতে গিয়ে সোলায়মানের বড়পুত্র মোহাম্মদ জোবায়ের বাহাদুর আরও বলেন, আমার বাবা মারা গেছেন আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগে। উনি মারা যাবার পর আমরা আমাদের বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছি। মাহবুব আলম নামে এক ব্যক্তির কাছে। বাড়িটি ছিল এক তলা সেমিপাকা ভবন। এখন তিন তলা বাড়ি। এমনকি বাড়িতে থাকা আগের বিদ্যুৎ মিটার সারেন্ডার করে দিয়েছি। কিন্তু প্রতিবেদকের কাছে স্বপক্ষে কাগজ দেখাতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর মইজ্জ্যারটেক উপ-কেন্দ্রের বিল প্রস্তুতকারী রনির মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।তবে পটিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রণয় আচার্য্য বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে হবে। যদিও তখন আমি ছিলাম না। এছাড়া আদৌও গ্রাহক সোলায়মানের পরিবার মিটারটি সারেন্ডার করেছিল কিনা তাও জানার বিষয়। তবে বাড়ির নতুন মালিক মাহবুব আলম আমার কাছে এই বিষয়িটি নিয়ে কয়েকবার এসেছিলেন। আমি সমাধান করে দেবো জানিয়ে ঈদের পরে আসতে বলেছিলাম তিনি আসেননি।

একই বিষয়ে চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ইঞ্জিনিয়ার খাইর আহমেদ সড়কের প্রতিবেশী মো. আজাদ বলেন, তাহলে পিডিবির মিটারটি গেল কোথায়? কে গায়েব করেছে তা খুঁজে বের করা পিডিবির দায়িত্ব ছিল। তা না করে পিডিবি কিভাবে একই বাড়িতে নতুন দুটি মিটার দিলেন। বুঝা যাচ্ছে সর্ষে-ভূত। আবার ৪ বছর আগে মাহবুব আলম লিখিত অভিযোগ দিলেও পিডিবি তদন্ত করেনি কার স্বার্থে? নিশ্চয় সবকিছু পিডিবির লোকজন জানতেন। তারাই মোটা অঙ্কের সুবিধা নিয়ে এসব করেছে। যা উচ্চ তদন্ত দরকার।

পটিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী প্রকৌশলী আ. স. ম. রেজাউন নবী বলেন, ‘বিষয়টি আপনি বলার পরে জেনেছি। আমি খোঁজ নিচ্ছি। অবশ্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে দক্ষিণ জোনের পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল বিউবো’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) উজ্জ্বল কুমার মোহন্ত ভালো বলতে পারবেন। পরে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহন্ত’র মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও হোয়াটসঅ্যাপে অভিযোগের সমস্ত ডকুমেন্টস পাঠিয়েও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগী পরিবারের দ্বিতীয় ছেলে মোহাম্মদ নওশের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে মিটার আমরা ব্যবহার করিনি, যে মিটার আমরা ৪ বছর আগে ছেড়ে দিছি। বাড়ি বিক্রি করে রাস্তাঘাটে ঘুরছি। এমনকি মিটারের গ্রাহক মারা গেছেন ২০১৬ সালে। জমি বিক্রি করেছি ২০২০ সালে। এরপরেও মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কেন বিল দিচ্ছে কর্ণফুলী পিডিবি অফিস জানে। এসব আমরা জানি না।

এ প্রসঙ্গে বাড়িটির বর্তমান মালিক মাহবুব আলম বলেন, আমি গত ২০২০ সালে মৃত মো. সোলায়মানের ওয়ারিশ থেকে বাড়িসহ ১০ শতক জমি ক্রয় করি। তখন আমাকে জানানো হয় বাড়িতে থাকা সোলায়মানের মিটারটি পিডিবি’র কাছে সারেন্ডার করা হয়েছে। আমিও কোনো মিটার দেখিনি। পরে নিজের নামে মিটারের জন্য আবেদন করি। পিডিবি অফিস সরেজমিনে তদন্ত করে আমার নামে দুটি মিটার স্থাপন করে দেন। যেহেতু বাড়িতে কোনো অন্য মিটার ছিল না। এরপর আমার নামীয় মিটারের নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছি। আমার কোনো সমস্যা নেই। অথচ পূর্বের মালিকের নামে এখনও লাখ লাখ টাকার বিল আসছে।

পিডিবিকে বিষয়টি জানিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ভুক্তভোগী মাহবুব আলম আরও জানান, তাৎক্ষণিকভাবে সে সময় আমি বিষয়টি হেড অফিসের বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের পরিচালক মো. আবু ছাইদ সাহেব কে জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু সাড়ে তিন বছরেও তারা তা তদন্ত করেনি। সমাধান করেনি। অথচ এরমধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী বদলি হয়েছে কয়েকজন।

back to top