alt

সারাদেশ

রাতভর টহলে পেরেশান তিতাস গ্যাস, আবাসিকে সংযোগ চালু করার সুপারিশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

টানা অভিযান পরিচালনা করে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াকে অবৈধ গ্যাস সংযোগমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছিল তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল বা তিতাস)। গত রোজার ঈদের সরকারি ছুটি চলাকালিন রাতের আঁধারে ওই এলাকায় পুনরায় অবৈধ সংযোগ নেয়া হচ্ছে এমন খবর পায় তিতাসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে শুরু হয় টহল অভিযান।

স্থানীয় তিন-চার জন কর্মচারী-কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠন করা হয় টহল টিম। সাইরেন সমৃদ্ধ প্রোটকল গাড়ি নিয়ে রাত দশটা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জামালদি এলাকা থেকে বাউশিয়া ঘাট পর্যন্ত শুরু হয় টহল পরিচালনা। স্থানীয়দের একটি চক্র যেসব পয়েন্টে অবৈধ সংযোগ নেয়ার চেষ্টা করছিল, গাড়ির সাইরেন শুনতে পেলেই তারা ওই স্থান ত্যাগ করে। এভাবেই চলছে রাতভর পাহাড়া।

তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্র গজারিয়া অভিযানে উপস্থিত থাকার কথা স্মরণ করে গজারিয়ার আবদুল্লাহপুরের এক বাসিন্দা সংবাদকে বলেন, ‘তিতাসের এমডি সাব (সাহেব) নিজে আইছে। সব অবৈধ লাইন কাটছে। কিছুদিন পরই আবার লাইন দেয়ার জন্য বাড়ি-বাড়ি থেকে এক হাজার ট্যাকা (টাকা) কাইরা (করে) উডাইছে (উঠিয়েছে) নেতারা।’

বাউশিয়া, ভবেরচর, আবদুল্লাহপুর, লক্ষ্মীপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নেতারা আছে। সবাইরে কইয়া দিছে (বলে দিয়েছে)। হেগো পোলাপানে (তাদের কর্মীরা) ট্যাকা উডাইছে। কিন্তু তিতাসের লোকজন রাইতে পাহাড়া দেওনে (দেয়ায়) সব জায়গায় লাইন দিতে পারে নাই।’

পেট্রোবাংলার অধীনস্থ সরকারি ছয়টি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বড় তিতাস গ্যাস কোম্পানি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নরসিংদী, নেত্রকোনা, ও কিশোরগঞ্জ জেলায় গ্যাস বিতরণ করে। তিতাসের আওতাধীন আরও কিছু এলাকায় একই পরিস্থিতি। অভিযানে লাইন কাটা হচ্ছে। কদিন পরই আবার সংযোগ নেয়া হচ্ছে। পাহাড়া দিয়েও অবৈধ সংযোগ নেয়া বন্ধ রাখা যাচ্ছে না।

তিতাসের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘এভাবে কী অবৈধ সংযোগ বন্ধ রাখা সম্ভব? প্রক্রিতপক্ষে সবাই আমাদের (তিতাস) বিরুদ্ধে। স্থানীয় চেয়ারম্যান বলেন, আর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী সবাই চায় এলাকাবাসী যাতে সংযোগ পায়। এতে অবশ্য তাদের মোটা অঙ্কের ইনকাম হয়।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘যারা অবৈধ লাইন নেয় তারা স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই লাইন নেয়। অর্থাৎ সবাই তাদের পক্ষে। তাহলে আমাদের পক্ষে কে বলুন? তাদের বাধা দিতে গেলেও বিপদের আশঙ্কা আছে। আমাদের কর্মীরা সাইরেন বাজায়, তারা চলে যায়। তিতাসের গাড়ি চলে গেলে তারা আবার আসে। অনেকটা ইদুর-বিড়াল খেলার মতো।’

প্রায় চৌদ্দ বছর আগে সরকার যখন আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয় তখন থেকেই ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নেয়া শুরু হয়। তিতাসের মতো অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর আওতাধীন এলাকায়ও শুরু হয় অবৈধ সংযোগ নেয়ার প্রতিযোগিতা। মাঝখানে অল্প কিছু সময় নতুন সংযোগ দেয়া হলেও আবার তা বন্ধ হয়ে যায়।

দীর্ঘ সময়ে তিতাস এলাকায় দশ লাখের বেশি অবৈধ সংযোগ নেয়ার এবং অভিযানে কয়েক লাখ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। তিতাস শুরু থেকেই অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত তিতাসের এক কর্মকর্তার দাবি কোম্পানির অভিযানে অন্তত সাড়ে ৮ লাখ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরে তিতাস ৩৩৬টি শিল্প, ৪৭৫টি বাণিজ্যিক, ৯৭টি ক্যাপটিভ পাওয়ার, ১৩টি সিএনজি স্টেশন এবং ৯৮৯ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন লাইন অপসারণ করেছে। মোট ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭০টি গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘একদিকে অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, লাইন কাটা হয়েছে; আরেক দিকে অসাধু চক্র পুনঃসংযোগ দিয়ে দিচ্ছে। ফলে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান সফল হচ্ছে না।’

তার মতে, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বিশেষ করে আবাসিক খাতে অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা না করে তাদের নিয়মের মধ্যে নিয়ে এলে, বিদ্যমান গ্যাস ব্যবহার থেকে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়া যাবে। তিনি জানান, তিতাস গ্যাসসহ অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারাও চাইছেন আবাসিকে পুনরায় গ্যাস সংযোগ চালু করে দিতে।

এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, গত মাসে (এপ্রিল) কাওরান বাজারে কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বৈঠকে তিতাসের পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়। কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ঢাকা ও আশপাশের বহুতল ভবন ও বাড়িগুলোতে যাদের আগের গ্যাস সংযোগ আছে, তাদের প্রায় সবারই কম-বেশি অনুমোদনহীন চুলা (বার্নার) রয়েছে। নতুন ঘর বা নতুন ফ্ল্যাট বানানোর পরপরই এসব সংযোগ নিয়ে নেয়া হচ্ছে।

ফলে অন্তত ‘ভার্টিক্যালি’ চুলা বৃদ্ধির অনুমোদন দেয়া হলে, অর্থাৎ যাদের পূর্বে সংযোগ আছে তাদের নতুন কিছু চুলার অনুমোদন দিলে বিদ্যমান গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমেই গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রতি মাসে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারবে। তিতাসের কর্মকর্তাদের ‘যুক্তিসঙ্গত’ প্রস্তাব প্রতিমন্ত্রী ‘গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে’ প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সব শ্রেণীর মানুষের চাহিদা এবং বাস্তবিক চিত্র তুলে ধরে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া চালু করতে মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছে বিতরণ কোম্পানি। এখন, জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরার হলে সরকারপ্রধানের অনুমোদনসাপেক্ষে আবাসিক খাতে সীমিত আকারে মিলতে পারে নতুন গ্যাস সংযোগ।

তিতাস গ্যাসের জেষ্ঠ্য এক কর্মকর্তা সংবাদ বলেন, ‘যেসব এলাকায় নকশা বহির্ভুত বিতরণ লাইন টেনে সংযোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদ করা তুলনামুলক সহজ এবং সেগুলো উচ্ছেদও করা হচ্ছে। তবে শহরে এমন অনেক বাড়ি আছে চার তলা ছিল ছয়তলা হয়েছে, চারটি ফ্ল্যাটও বেড়েছে। এলাকায় প্রভাবশালী। এ ধরণের বাসায় ঢুকে তল্লাশি করা, লাইন কাটা জটিল ও কঠিন কাজ।’

এই কর্মকর্তার মতে, সরকার নতুন করে আবাসিক সংযোগ অনুমোদন না দিলেও অন্তত আগে থেকেই সংযোগ আছে, এমন গ্রাহকদের চুলা বা বার্নার বৃদ্ধির অনুমোদন দিলে অবৈধ সংযোগের বড় একটা অংশ কমে যাবে।

তিতাস গ্যাস কোম্পানির মোট গ্রাহক বর্তামনে ২৮ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি। এরমধ্যে, আবাসিক সংযোগ ২৮ লাখ ৫৩ হাজারের মতো।

ছবি

ভাঙছে সীমান্ত নদী ইছামতীর বেড়িবাঁধ : এলাকায় আতঙ্ক

শিথিল কারফিউতে খুলেছে দোকানপাট, চলছে গাড়ি, আতঙ্ক কাটছে না জনমনে

ঢাকাসহ ৪ জেলায় ৯ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল

ছবি

ক্রেতা উপস্থিতি কম, বেচা-বিক্রি ‘ঠাণ্ডা’

বেরোবির উপাচার্যের বাসভবনে আক্রমণ-আগুন, যেভাবে উদ্ধার হলেন অবরুদ্ধ ২০ জন

ছবি

গুলিবিদ্ধ অনেকেই হারিয়েছেন পা

ঘটনার দশদিনেও গ্রেপ্তার হয়নি কেউ, উদ্ধার হয়নি লুট হওয়া ৭০ ভরি স্বর্ণের এক আনাও

সিলেটে সীমান্তকেন্দ্রিক চোরাচালান, ঘুরেফিরে তিনিই বিভিন্ন থানার ওসি

ছবি

অনেক পত্রিকায় খবর এলো, কিন্তু রুদ্র তো আর আসবে না

সহিংসতা-নাশকতার অভিযোগে ২০১ মামলা, গ্রেপ্তার ২২০৯

ছবি

কারফিউ শিথিলের সময় আরও ভিড়, যানজট

ছবি

রায়গঞ্জে অব্যবস্থাপনায় বন্ধের মুখে প্রাণিসম্পদ উপকেন্দ্রগুলো

এবার সারাদেশে পরীক্ষামূলক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু

ছবি

নরসিংদী কারাগার থেকে পালানো ৩৩১ বন্দীর আত্মসমর্পণ

ছবি

ফুটেজ দেখে সেতু ভবনে আগুন-লুটপাটে জড়িতদের ধরা হচ্ছে : ডিবি

সোনারগাঁয়ে জ্বালাও পোড়াও ভাংচুর না হলেও নাশকতার মামলায় আসামি ৮ শতাধিক, গ্রেফতার অর্ধশত

সেন্টমার্টিনে ট্রলার ডুবিতে ছাত্রলীগ নেতা নিখোঁজ, কোস্টগার্ডের চৌকিতে হামলা

কক্সবাজারে ছাত্রলীগ নেতা মারধরের ঘটনায় আরও ১১ জন গ্রেফতার

ঢাকাসহ চার জেলায় আজ ও কাল ৭ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল

ছবি

টাঙ্গাইলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, আহত ২০

ছবি

আবারও বেপরোয়া সার্ভেয়ার বাকের ও হাসান সিন্ডিকেট ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না কক্সবাজার এলএ শাখায়

ছবি

রামু থেকে অস্ত্র ও গুলি নিয়ে সন্ত্রাসী আটক

ছবি

কক্সবাজারে ক্ষমতাসীনদের হামলায় ৫ সংবাদকর্মী আহত

ছবি

নিখোঁজের দুই দিন পর পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

টেকনাফ সমুদ্র উপকূলে পালিয়ে এলো ৫ রোহিঙ্গা

ছবি

টেকনাফগামী ট্রলারে মায়ানমারের গুলি

ছবি

কোটা আন্দোলন: রংপুরে সংঘর্ষ ও মৃত্যুর তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন

ছবি

শেখ হাসিনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্বে কুরুচিপূর্ন বক্তব্য দেওয়ায় গজারিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ সভা

ছবি

নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের না’গঞ্জে মানববন্ধন

ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ওয়াসিমের দাফন সম্পন্ন

ছবি

রামুতে মাদকসেবী ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

সারাদেশে স্কুল, কলেজ অনিদিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা

ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলন : কক্সবাজারে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

ছবি

চীন বা ভারত নয়, নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবী

ছবি

মায়ানমারে চলছে বোমা হামলা সীমান্তে এতো কড়াকড়িতেও রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ

tab

সারাদেশ

রাতভর টহলে পেরেশান তিতাস গ্যাস, আবাসিকে সংযোগ চালু করার সুপারিশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

টানা অভিযান পরিচালনা করে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াকে অবৈধ গ্যাস সংযোগমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছিল তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল বা তিতাস)। গত রোজার ঈদের সরকারি ছুটি চলাকালিন রাতের আঁধারে ওই এলাকায় পুনরায় অবৈধ সংযোগ নেয়া হচ্ছে এমন খবর পায় তিতাসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে শুরু হয় টহল অভিযান।

স্থানীয় তিন-চার জন কর্মচারী-কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠন করা হয় টহল টিম। সাইরেন সমৃদ্ধ প্রোটকল গাড়ি নিয়ে রাত দশটা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জামালদি এলাকা থেকে বাউশিয়া ঘাট পর্যন্ত শুরু হয় টহল পরিচালনা। স্থানীয়দের একটি চক্র যেসব পয়েন্টে অবৈধ সংযোগ নেয়ার চেষ্টা করছিল, গাড়ির সাইরেন শুনতে পেলেই তারা ওই স্থান ত্যাগ করে। এভাবেই চলছে রাতভর পাহাড়া।

তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্র গজারিয়া অভিযানে উপস্থিত থাকার কথা স্মরণ করে গজারিয়ার আবদুল্লাহপুরের এক বাসিন্দা সংবাদকে বলেন, ‘তিতাসের এমডি সাব (সাহেব) নিজে আইছে। সব অবৈধ লাইন কাটছে। কিছুদিন পরই আবার লাইন দেয়ার জন্য বাড়ি-বাড়ি থেকে এক হাজার ট্যাকা (টাকা) কাইরা (করে) উডাইছে (উঠিয়েছে) নেতারা।’

বাউশিয়া, ভবেরচর, আবদুল্লাহপুর, লক্ষ্মীপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নেতারা আছে। সবাইরে কইয়া দিছে (বলে দিয়েছে)। হেগো পোলাপানে (তাদের কর্মীরা) ট্যাকা উডাইছে। কিন্তু তিতাসের লোকজন রাইতে পাহাড়া দেওনে (দেয়ায়) সব জায়গায় লাইন দিতে পারে নাই।’

পেট্রোবাংলার অধীনস্থ সরকারি ছয়টি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বড় তিতাস গ্যাস কোম্পানি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নরসিংদী, নেত্রকোনা, ও কিশোরগঞ্জ জেলায় গ্যাস বিতরণ করে। তিতাসের আওতাধীন আরও কিছু এলাকায় একই পরিস্থিতি। অভিযানে লাইন কাটা হচ্ছে। কদিন পরই আবার সংযোগ নেয়া হচ্ছে। পাহাড়া দিয়েও অবৈধ সংযোগ নেয়া বন্ধ রাখা যাচ্ছে না।

তিতাসের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘এভাবে কী অবৈধ সংযোগ বন্ধ রাখা সম্ভব? প্রক্রিতপক্ষে সবাই আমাদের (তিতাস) বিরুদ্ধে। স্থানীয় চেয়ারম্যান বলেন, আর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী সবাই চায় এলাকাবাসী যাতে সংযোগ পায়। এতে অবশ্য তাদের মোটা অঙ্কের ইনকাম হয়।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘যারা অবৈধ লাইন নেয় তারা স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই লাইন নেয়। অর্থাৎ সবাই তাদের পক্ষে। তাহলে আমাদের পক্ষে কে বলুন? তাদের বাধা দিতে গেলেও বিপদের আশঙ্কা আছে। আমাদের কর্মীরা সাইরেন বাজায়, তারা চলে যায়। তিতাসের গাড়ি চলে গেলে তারা আবার আসে। অনেকটা ইদুর-বিড়াল খেলার মতো।’

প্রায় চৌদ্দ বছর আগে সরকার যখন আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয় তখন থেকেই ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নেয়া শুরু হয়। তিতাসের মতো অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর আওতাধীন এলাকায়ও শুরু হয় অবৈধ সংযোগ নেয়ার প্রতিযোগিতা। মাঝখানে অল্প কিছু সময় নতুন সংযোগ দেয়া হলেও আবার তা বন্ধ হয়ে যায়।

দীর্ঘ সময়ে তিতাস এলাকায় দশ লাখের বেশি অবৈধ সংযোগ নেয়ার এবং অভিযানে কয়েক লাখ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। তিতাস শুরু থেকেই অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত তিতাসের এক কর্মকর্তার দাবি কোম্পানির অভিযানে অন্তত সাড়ে ৮ লাখ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরে তিতাস ৩৩৬টি শিল্প, ৪৭৫টি বাণিজ্যিক, ৯৭টি ক্যাপটিভ পাওয়ার, ১৩টি সিএনজি স্টেশন এবং ৯৮৯ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন লাইন অপসারণ করেছে। মোট ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭০টি গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘একদিকে অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, লাইন কাটা হয়েছে; আরেক দিকে অসাধু চক্র পুনঃসংযোগ দিয়ে দিচ্ছে। ফলে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান সফল হচ্ছে না।’

তার মতে, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বিশেষ করে আবাসিক খাতে অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা না করে তাদের নিয়মের মধ্যে নিয়ে এলে, বিদ্যমান গ্যাস ব্যবহার থেকে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়া যাবে। তিনি জানান, তিতাস গ্যাসসহ অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারাও চাইছেন আবাসিকে পুনরায় গ্যাস সংযোগ চালু করে দিতে।

এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, গত মাসে (এপ্রিল) কাওরান বাজারে কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বৈঠকে তিতাসের পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়। কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ঢাকা ও আশপাশের বহুতল ভবন ও বাড়িগুলোতে যাদের আগের গ্যাস সংযোগ আছে, তাদের প্রায় সবারই কম-বেশি অনুমোদনহীন চুলা (বার্নার) রয়েছে। নতুন ঘর বা নতুন ফ্ল্যাট বানানোর পরপরই এসব সংযোগ নিয়ে নেয়া হচ্ছে।

ফলে অন্তত ‘ভার্টিক্যালি’ চুলা বৃদ্ধির অনুমোদন দেয়া হলে, অর্থাৎ যাদের পূর্বে সংযোগ আছে তাদের নতুন কিছু চুলার অনুমোদন দিলে বিদ্যমান গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমেই গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রতি মাসে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারবে। তিতাসের কর্মকর্তাদের ‘যুক্তিসঙ্গত’ প্রস্তাব প্রতিমন্ত্রী ‘গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে’ প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সব শ্রেণীর মানুষের চাহিদা এবং বাস্তবিক চিত্র তুলে ধরে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া চালু করতে মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছে বিতরণ কোম্পানি। এখন, জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরার হলে সরকারপ্রধানের অনুমোদনসাপেক্ষে আবাসিক খাতে সীমিত আকারে মিলতে পারে নতুন গ্যাস সংযোগ।

তিতাস গ্যাসের জেষ্ঠ্য এক কর্মকর্তা সংবাদ বলেন, ‘যেসব এলাকায় নকশা বহির্ভুত বিতরণ লাইন টেনে সংযোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদ করা তুলনামুলক সহজ এবং সেগুলো উচ্ছেদও করা হচ্ছে। তবে শহরে এমন অনেক বাড়ি আছে চার তলা ছিল ছয়তলা হয়েছে, চারটি ফ্ল্যাটও বেড়েছে। এলাকায় প্রভাবশালী। এ ধরণের বাসায় ঢুকে তল্লাশি করা, লাইন কাটা জটিল ও কঠিন কাজ।’

এই কর্মকর্তার মতে, সরকার নতুন করে আবাসিক সংযোগ অনুমোদন না দিলেও অন্তত আগে থেকেই সংযোগ আছে, এমন গ্রাহকদের চুলা বা বার্নার বৃদ্ধির অনুমোদন দিলে অবৈধ সংযোগের বড় একটা অংশ কমে যাবে।

তিতাস গ্যাস কোম্পানির মোট গ্রাহক বর্তামনে ২৮ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি। এরমধ্যে, আবাসিক সংযোগ ২৮ লাখ ৫৩ হাজারের মতো।

back to top