পায়রা বন্দরের চ্যানেলের গভীরতা (ড্রাফট) হঠাৎ কমে যাওয়ায় বিদেশ থেকে পণ্য নিয়ে আসা বড় জাহাজগুলো (মাদার ভ্যাসেল) জেটিতে ভিড়তে পারছে না। উপায় না পেয়ে কিছু পণ্য খালাস করতে হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়ে। এরপর জাহাজের ওজন হালকা হলে সেগুলো পায়রা বন্দরের চ্যানেল দিয়ে জেটিতে আসতে পারছে।
সম্প্রতি এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে পটুয়াখালির পায়ারা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি নিয়ে আসা তিনটি বড় জাহাজ। এই কেন্দ্রটি দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ ভাগ উৎপাদন করছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ এবং পরিচালনা করছে। যথাসময়ে কয়লা আমদানিতে জটিলতা হলে কেন্দ্রটি থেকে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয় জানতে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় সংবাদের। হাবিবুর রহমান বিসিপিসিএলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও আছেন। কথা হয় বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলমের সঙ্গেও।
জানা যায়, এপ্রিলের ২০ থেকে মে মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ তিন দফা ড্রাফট পরিবর্তনের নোটিশ দিয়েছে। প্রথমবার বলেছে চ্যানেলের ড্রাফট ৯ দশমিক ৫ মিটার, পরে দ্বিতীয় দফায় বলেছে ৮ দশমিক ৬ মিটার, তৃতীয় দফায় বলেছে ৭ দশমিক দুই মিটার।
৯ দশমিক ৫ মিটার হলে কম বেশি ৩৮ থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আমদানি করা যায়, ৮ দশমিক ৬ হলে সেটা হয়ে যায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন আর যদি ৭ দশমিক ২ হয় তবে হয় তবে মাত্র ২৪ হাজার টন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটি পর্যন্ত পৌছাতে পারে।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘আমরা বিদেশী জাহাজগুলোকে এক মাস আগে থেকে কয়লার অর্ডার দিয়ে থাকি। অধিকাংশ সময় ৪০ হাজার টনের জাহাজ বা কিছুটা কম বেশি কয়লার অর্ডার দিতে হয়। এসব জাহাজাগুলো সমুদ্র চ্যানেলের ড্রাফট রিপোর্ট অনুযায়ী কয়লা লোড করে নিয়ে আসে। কিন্তু হঠাৎ করে যদি চ্যানেলের ড্রাফট পরিবর্তন হয়ে যায় তখন এই কয়লার জাহাজ নিয়ে বিরাট সংকটে পড়তে হয়। চট্রগ্রাম বন্দরে নিয়ে কয়লা খালাস করে কমিয়ে পরে কম কয়লা নিয়ে জাহাজ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে আসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে ড্রাফট সংকটে অন্তত তিনটি জাহাজের কয়লা খালাসে অনেক ঝামেলা তৈরী হয়েছে। যার ফলে কয়লার খরচ বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী কয়লা আমদানিতে বাধা তৈরী হওয়ায় কয়লার রিজার্ভ কমে যা্েচ্ছ। যদি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ড্রাফট সংকট নিরসন না হয় তবে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদন অব্যাহত রাখা কঠিন হবে।’
এর আগে ডলার সংকটে বিল দিতে না পারায় জ্বালানি (কয়লা) সংকটে পড়ে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। সে সময় বড় ধরণের লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে দেশ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে ইফিসিয়েস্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রা। দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ একাই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে সরবরাহ করা হয়। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অব্যাহতভাবে বিদেশ থেকে কয়লাবাহী জাহাজ আসতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ড্রাফট সংকটে আন্তত তিনটি জাহাজের কয়লা খালাসে অনেক ঝামেলা তৈরী হয়েছে। যার ফলে কয়লার খরচ বেড়ে গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী কয়লা আমদানিতে বাধা তৈরী হওয়ায় কয়লার রিজার্ভ কমে যা্েচ্ছ। এ কর্মকর্তা বলেন, যদি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ড্রাফট সংকট নিরসন না হয় তবে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদন অব্যাহত রাখা কঠিন হবে।’
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘বড় জাহাজ পায়রার জেটিতে আসতে না পারায় চট্টগ্রামে কিছু মাল খালাসের কারণে কয়লার দাম টন প্রতি কমবেশি প্রায় ১৬ ডলার পরিবর্তন হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে জাহাজ কোম্পানিকে ডেমারেজ দিতে হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার রিজার্ভ কমতে থাকে। ফলে এক সময় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কয়লার অভাবে বন্ধও হয়ে যেতে পারে।’
পায়রা বন্দর কর্তপক্ষের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে বিসিপিসিএলের পক্ষ থেকে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কম সময়ের মধ্যে তিন দফা ড্রাফট পরিবর্তনের কারনে গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করে বিষয়টি সমাধানের অনুরোধও করা হয়েছে। জানা যায়, বিদ্যুৎ বিভাগেও এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে বিসিপিসিএল।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনার স্বার্থে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিক টন হারে মাসিক প্রায় তিন লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হয়। এসব কয়লা ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হচ্ছে। আমদানি নির্ভর এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনার স্বার্থেই মূলত পায়রা বন্দর গড়ে উঠেছে। সূত্রে চানা যায়, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের আয়ের সিংহভাগ এ কেন্দ্রে আসা জাহাজ ও মালামাল থেকেই হয়ে থাকে। তবে পায়রা বন্দরের ড্রাফটের তারতম্যের কারণে আমদানীয় কয়লার সাপ্লাই চেইন ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়ছে।
পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ঘোষিত ড্রাফট অনুযায়ী গত এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দশমিক ৫ মি. ড্রাফটে হিসাবে নিয়মিতভাবে কয়লা আমদানি চলমান ছিল। কিন্তু মে মাসের ৩য় দফায় প্রকাশিত ড্রাফট চার্টে আকস্মিকভাবে পায়রা বন্দরের ড্রাফট ৭.২ মিটার হ্রাস পাওয়ায় নিয়মিতভাবে কয়লা আমদানি অর্ডার নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।’
এতে অনেক জটিলতা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মে ও জুন মাসের বিপরীতে কয়লা সরবরাহকারী ও পরিবহন ঠিকাদারদের দেওয়া অর্ডার বা শিপমেন্ট পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবহন ঠিকাদার কর্তৃক মনোনীত (নমিনেটেড) জাহাজ বাতিল করতে হবে ও অন্যান্য জাহাজে কয়লার লোড পরিবর্তন করতে হবে। শিপমেন্ট পরিকল্পনায় এরূপ আকস্মিক বড় ধরণের পরিবর্তন করার কারণে বিসিপিসিএলকে কয়লা সরবরাহকারী ও পরিবহন ঠিকাদার এর অনুকূলে বড় অংকের আর্থিক দন্ড প্রদান করতে হতে পারে।’
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এতোদিন পায়রা বন্দরের চ্যানেল ড্রেজিংয় করে গভীরতা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলো বেলজিয়ামের একটি কোম্পানি। চুক্তির মেয়াদ শেষ গত এক দেড় মাস যাবৎ ড্রেজিং না হওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত এ কাজে নিয়োজিত ছিল বেলজিয়াম ভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি জান ডি নুল। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা যায়নি।
ভৌগলিকভাবে পায়রা বন্দরের অবস্থান এমন এক জায়গায় যেখানে নদীর পানি সমুদ্রে পড়ার আগে প্রচুর পলি ফেলে যায়। এছাড়া নিয়মিত জোয়ার-ভাঁটা ও ঝড়ের কারণে পলি পড়ে।
পায়রা বন্দরের পলি নিয়ে ২০১৯ সালে সমীক্ষা চালায় জার্মানি, বেলজিয়াম ও বাংলাদেশের পাঁচজন গবেষকের একটি দল। তারা জানান, হিমালয় থেকে বছরে ১১০ কোটি কিউবিক মিটার পলি বাংলাদেশের নদীগুলো দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ে। এর মধ্যে পায়রা নদীর ওই চ্যানেলের আশপাশের এলাকায় বছরে ৪০ কোটি কিউবিক মিটার পলি জমা হয়। ফলে নিয়মিত ড্রেজিং করে চ্যানেলের গভীরতা ঠিক রাখতে হয়।
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
পায়রা বন্দরের চ্যানেলের গভীরতা (ড্রাফট) হঠাৎ কমে যাওয়ায় বিদেশ থেকে পণ্য নিয়ে আসা বড় জাহাজগুলো (মাদার ভ্যাসেল) জেটিতে ভিড়তে পারছে না। উপায় না পেয়ে কিছু পণ্য খালাস করতে হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়ে। এরপর জাহাজের ওজন হালকা হলে সেগুলো পায়রা বন্দরের চ্যানেল দিয়ে জেটিতে আসতে পারছে।
সম্প্রতি এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে পটুয়াখালির পায়ারা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি নিয়ে আসা তিনটি বড় জাহাজ। এই কেন্দ্রটি দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ ভাগ উৎপাদন করছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ এবং পরিচালনা করছে। যথাসময়ে কয়লা আমদানিতে জটিলতা হলে কেন্দ্রটি থেকে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয় জানতে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় সংবাদের। হাবিবুর রহমান বিসিপিসিএলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও আছেন। কথা হয় বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলমের সঙ্গেও।
জানা যায়, এপ্রিলের ২০ থেকে মে মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ তিন দফা ড্রাফট পরিবর্তনের নোটিশ দিয়েছে। প্রথমবার বলেছে চ্যানেলের ড্রাফট ৯ দশমিক ৫ মিটার, পরে দ্বিতীয় দফায় বলেছে ৮ দশমিক ৬ মিটার, তৃতীয় দফায় বলেছে ৭ দশমিক দুই মিটার।
৯ দশমিক ৫ মিটার হলে কম বেশি ৩৮ থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আমদানি করা যায়, ৮ দশমিক ৬ হলে সেটা হয়ে যায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন আর যদি ৭ দশমিক ২ হয় তবে হয় তবে মাত্র ২৪ হাজার টন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটি পর্যন্ত পৌছাতে পারে।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘আমরা বিদেশী জাহাজগুলোকে এক মাস আগে থেকে কয়লার অর্ডার দিয়ে থাকি। অধিকাংশ সময় ৪০ হাজার টনের জাহাজ বা কিছুটা কম বেশি কয়লার অর্ডার দিতে হয়। এসব জাহাজাগুলো সমুদ্র চ্যানেলের ড্রাফট রিপোর্ট অনুযায়ী কয়লা লোড করে নিয়ে আসে। কিন্তু হঠাৎ করে যদি চ্যানেলের ড্রাফট পরিবর্তন হয়ে যায় তখন এই কয়লার জাহাজ নিয়ে বিরাট সংকটে পড়তে হয়। চট্রগ্রাম বন্দরে নিয়ে কয়লা খালাস করে কমিয়ে পরে কম কয়লা নিয়ে জাহাজ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে আসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে ড্রাফট সংকটে অন্তত তিনটি জাহাজের কয়লা খালাসে অনেক ঝামেলা তৈরী হয়েছে। যার ফলে কয়লার খরচ বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী কয়লা আমদানিতে বাধা তৈরী হওয়ায় কয়লার রিজার্ভ কমে যা্েচ্ছ। যদি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ড্রাফট সংকট নিরসন না হয় তবে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদন অব্যাহত রাখা কঠিন হবে।’
এর আগে ডলার সংকটে বিল দিতে না পারায় জ্বালানি (কয়লা) সংকটে পড়ে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। সে সময় বড় ধরণের লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে দেশ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে ইফিসিয়েস্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রা। দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ একাই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে সরবরাহ করা হয়। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অব্যাহতভাবে বিদেশ থেকে কয়লাবাহী জাহাজ আসতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ড্রাফট সংকটে আন্তত তিনটি জাহাজের কয়লা খালাসে অনেক ঝামেলা তৈরী হয়েছে। যার ফলে কয়লার খরচ বেড়ে গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী কয়লা আমদানিতে বাধা তৈরী হওয়ায় কয়লার রিজার্ভ কমে যা্েচ্ছ। এ কর্মকর্তা বলেন, যদি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ড্রাফট সংকট নিরসন না হয় তবে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদন অব্যাহত রাখা কঠিন হবে।’
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘বড় জাহাজ পায়রার জেটিতে আসতে না পারায় চট্টগ্রামে কিছু মাল খালাসের কারণে কয়লার দাম টন প্রতি কমবেশি প্রায় ১৬ ডলার পরিবর্তন হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে জাহাজ কোম্পানিকে ডেমারেজ দিতে হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার রিজার্ভ কমতে থাকে। ফলে এক সময় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কয়লার অভাবে বন্ধও হয়ে যেতে পারে।’
পায়রা বন্দর কর্তপক্ষের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে বিসিপিসিএলের পক্ষ থেকে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কম সময়ের মধ্যে তিন দফা ড্রাফট পরিবর্তনের কারনে গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করে বিষয়টি সমাধানের অনুরোধও করা হয়েছে। জানা যায়, বিদ্যুৎ বিভাগেও এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে বিসিপিসিএল।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনার স্বার্থে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিক টন হারে মাসিক প্রায় তিন লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হয়। এসব কয়লা ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হচ্ছে। আমদানি নির্ভর এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনার স্বার্থেই মূলত পায়রা বন্দর গড়ে উঠেছে। সূত্রে চানা যায়, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের আয়ের সিংহভাগ এ কেন্দ্রে আসা জাহাজ ও মালামাল থেকেই হয়ে থাকে। তবে পায়রা বন্দরের ড্রাফটের তারতম্যের কারণে আমদানীয় কয়লার সাপ্লাই চেইন ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়ছে।
পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ঘোষিত ড্রাফট অনুযায়ী গত এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দশমিক ৫ মি. ড্রাফটে হিসাবে নিয়মিতভাবে কয়লা আমদানি চলমান ছিল। কিন্তু মে মাসের ৩য় দফায় প্রকাশিত ড্রাফট চার্টে আকস্মিকভাবে পায়রা বন্দরের ড্রাফট ৭.২ মিটার হ্রাস পাওয়ায় নিয়মিতভাবে কয়লা আমদানি অর্ডার নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।’
এতে অনেক জটিলতা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মে ও জুন মাসের বিপরীতে কয়লা সরবরাহকারী ও পরিবহন ঠিকাদারদের দেওয়া অর্ডার বা শিপমেন্ট পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবহন ঠিকাদার কর্তৃক মনোনীত (নমিনেটেড) জাহাজ বাতিল করতে হবে ও অন্যান্য জাহাজে কয়লার লোড পরিবর্তন করতে হবে। শিপমেন্ট পরিকল্পনায় এরূপ আকস্মিক বড় ধরণের পরিবর্তন করার কারণে বিসিপিসিএলকে কয়লা সরবরাহকারী ও পরিবহন ঠিকাদার এর অনুকূলে বড় অংকের আর্থিক দন্ড প্রদান করতে হতে পারে।’
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এতোদিন পায়রা বন্দরের চ্যানেল ড্রেজিংয় করে গভীরতা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলো বেলজিয়ামের একটি কোম্পানি। চুক্তির মেয়াদ শেষ গত এক দেড় মাস যাবৎ ড্রেজিং না হওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত এ কাজে নিয়োজিত ছিল বেলজিয়াম ভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি জান ডি নুল। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা যায়নি।
ভৌগলিকভাবে পায়রা বন্দরের অবস্থান এমন এক জায়গায় যেখানে নদীর পানি সমুদ্রে পড়ার আগে প্রচুর পলি ফেলে যায়। এছাড়া নিয়মিত জোয়ার-ভাঁটা ও ঝড়ের কারণে পলি পড়ে।
পায়রা বন্দরের পলি নিয়ে ২০১৯ সালে সমীক্ষা চালায় জার্মানি, বেলজিয়াম ও বাংলাদেশের পাঁচজন গবেষকের একটি দল। তারা জানান, হিমালয় থেকে বছরে ১১০ কোটি কিউবিক মিটার পলি বাংলাদেশের নদীগুলো দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ে। এর মধ্যে পায়রা নদীর ওই চ্যানেলের আশপাশের এলাকায় বছরে ৪০ কোটি কিউবিক মিটার পলি জমা হয়। ফলে নিয়মিত ড্রেজিং করে চ্যানেলের গভীরতা ঠিক রাখতে হয়।