alt

সারাদেশ

সুনামগঞ্জে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত , ত্রানের জন্য হাহাকার

প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ : বুধবার, ১৯ জুন ২০২৪

সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা অব্যাহত পাহাড়ি ঢল, অবিরাম ভারী বর্ষণে সুনামগঞ্জ জেলার অন্তত ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্চেন। অনেকের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেলে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ উঁচু জায়গাতে আশ্রয় নিলেও খাবার জুটেনি। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদিও শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে দেয়া হয়েছে কিন্ত তা খুবই অপ্রতুল ।

অন্য দিকে যারা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারেন নি তাদের ভাগ্যে কিছুই জুঠেনি। বসত ঘরে পানি উঠায় চুলা ডুবে গেছে, নয়তো চাল ডাল ভিজে গেছে তাই খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বানভাসী মানুষেরা ত্রানের জন্য হাহাকার করছে। মানুষ জন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনতে গিয়ে ও অতিরিক্ত দামে কিনছে,অবশ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজারে মোবাইল কোর্ট কাজ করছে।

গত ১৭ জুন সোমবার ভোর থেকেই সীমান্তের ওপার থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে সুনামগঞ্জ সদর. দোয়ারাবাজার ছাতক উপজেলা ও সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার ঘরবাড়ি,দোকানপাট ও সড়ক প্লাবিত করে। সেই সাথে অবিরাম ভারী বর্ষণ ও বজ্রপাতের কারণে মানুষ ঈদের নামাজ ঈদগাহের পরিবর্তে মসজিদে আদায় করেন। অনেকের বাড়ির আঙ্গিনায় পানি থাকায় বারান্দা কিংবা উচু জায়গাতেই কোরবানীর পশু জবাই করেন। কেউ কেউ পরদিন করেন। ১৮ জুন মঙ্গলবার পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের বসত ঘরে পানি প্রবেশ করে। প্রায় সব গুলো সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার ফলে নৌকার উপরেই নির্ভর করতে হয়। মঙ্গলবার বিকাল থেকে পানি কিছুটা কমলেও ১৯ জুন বুধবার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রথম দুই দিন পাহাড়ি ঢল সীমান্তের অভ্যন্তরীণ নদ নদীর উপর প্রবাহিত হয়ে সুরমা কুশিয়ারায় গিয়ে পড়ে। তৃতীয় দিন নদীর পানি গিয়ে বিভিন্ন হাওরে প্রবেশ করে নতুন নতুন এলাকার মানুষের ঘরবাড়ী ডুবিয়ে দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৩ ,সেন্টিমিটার উপর প্রবাহিত হচ্চে। গত ২৪ ঘন্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সুনামগঞ্জে ও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী, ৪৮ ,ঘন্টা চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হওয়ার আশংকা রয়েছে। যদি টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তাহলে আবার ও ঢল নামতে পারে। এমনিতেই হাওর, নদী পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে আছে।

সুনামগঞ্জ শহরের ৮০ ভাগ সড়ক ও বসত ঘরে পানি রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করে মালামাল ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পৌর এলাকার তেঘরিয়া,বড়পাড়া, পশ্চিম হাজী পাড়া,নবীনগর, ষোলঘর, সুলতান পুর, উকিল পাড়া,কাজীর পয়েন্ট, মধ্য বাজার, পূর্ব বাজার ও পশ্চিম বাজার সহ অন্যান্য এলাকা এখনও প্লাবিত। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ৯ ইউনিয়নের সব কটি, ছাতক উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন ও দোয়ারাবাজার উপজেলার ইউনিয়নে বেশী প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সাথে ইতিমধ্যেই বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক তাহিরপুর দোয়ারাবাজার, জামালগঞ্জ ,ধর্মপাশা ,মধ্যনগর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ আর ও বেড়ে গেছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মানুষ গত তিন দিন যাবত পানি বন্দি কিন্ত কেউ সাহায্য দুরে থাক কোন খোঁজ খবর নেননি। ঐ গ্রামের আম্বিয়া খাতুন জানান তিন দিন ধরে ঘরে পানি চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউ খবর নেয়নি। চুলা ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত তাই রান্নার কাজ হয়নি। দোকান থেকে শুকনো খাবার কিনতে গিয়ে ও অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্চে। একই গ্রামের আলামিন,তপন বাবু ও হাফিজ আলী ও একই কথা বলেছেন। দোয়ারাবাজার উপজেলার সংবাদ কর্মী আব্দুল মোতালিব ভূইয়া জানান, দোয়ারাবাজার উপজেলার সাথে সকল ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ কারণ ঢলের পানিতে বেশ কয়েকটি সড়ক ভেঙ্গে গেছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সংবাদ কর্মী হাসান বশির জানান এখনও অনেক ঘরে ও সড়কে পানি রঘেছে। অনেক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ নিজ নিজ ঘরে মাচাং বেধে আছেন। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়েছেন তারা শুকনা খাবার ও রান্না করা খাবার কিছু পান কিন্ত যারা বাড়িতে আছেন তাদের ভাগ্যে কিছুই জুঠেনি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ইউএনও মফিজুল ইসলাম ও বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি শ্যামল বণিক আশ্রয় শিবিরের বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রান বিতরণ করছেন প্রতিদিন। শান্তিগঞ্জ উপজেলার গণমাধ্যম কর্মী ইয়াকুব শাহরিয়ার জানান গত ভোররাত থেকে শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জায়গাতেই পানি প্রবেশ করেছে। আমার নিজের বসত ঘরে ও পানি প্রবেশ করে। এক পর্যায়ে আমি ও ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। অবস্হা খুব ভয়াবহ। কোন ত্রান কার্যক্রম শুরু হয়নি। সুনামগঞ্জ শহরের নতুন পাড়ার বাসিন্দা সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব প্রদীপ পাল নিতাই জানান ভোররাত থেকেই ঘরে হুহু করে পানি ঢুকে এখন হাটুঁর উপরে। ঘরের কিছু মালামাল উপরে তোলার চেষ্টা করি শেষ পর্যন্ত সব ফেলে ঘর ছাড়তে বাধ্য হই। পৌর এলাকার মরাটিলা,শান্তি বাগ,নতুন পাড়া, হাজীপাড়া,কালীপুর, গণিপুর, হাসন বসত, ওয়েজখালী, পিরিজপুর, জলিল পুর, হাছননগর, আপ্তাব নগর সহ বিভিন্ন জায়গাতে নতুন করে ঘর বাড়ি সড়ক প্লাবিত হঘেছে। তরুণ সমাজ কর্মী আম্মার হোসাইন জানান হাওর পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের ঘর বাড়িতে কোমর থেকে গলা পানি। খুব দূর্ভোগ পোহাচ্চেন। সুনামগঞ্জ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ খালেদুল ইসলাম জানান, জেলার আনুমানিক ১২ হাজার নলকূপ আংশিক এবং তিন হাজার নলকূপ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষের বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দেয়ায় তিনি এ পর্যন্ত ইউএনও ও পিআইও দের সমন্বয়ে আনুমানিক তিন লাখ পানি বিশুদ্ধ করন বড়ি বিতরণ করেছেন। তার কাছে ১৫ লাগ বড়ি মজুদ রয়েছে। এছাড়াও তার দুটি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট যা ঘন্টায় ছয়শ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ক্ষমতা রাখে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মোতাবেক মাঠে কাজ করছে।

ছবি

বাজিতপুরে বাবাকে হত্যা: টাকা না পাওয়ার জেরে ছেলে ও বন্ধুদের গ্রেপ্তার

ছবি

বি‌জি‌বির অ‌ভিযা‌নে আড়াই কোটি টাকার জব্দ মোবাইল ডিসপ্লে জব্দ

ছবি

পার্বত্য উপদেষ্টার পদত্যাগ সহ ৩ দফা দাবীতে বাইশারীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

ছবি

শিশুদের জীবন মান উন্নয়নে হিউম্যান রিলিফ ফাউন্ডেশনের Walk for Hope

ছবি

ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব কেটে গেলেও কৃষকের মনে বিষাদ

যৌথ বাহিনীর অভিযান : গাজীপুরে রাম দা-চাপাতিসহ ৮ জন গ্রেপ্তার

ছবি

আরাকান আর্মির থেকে ২ কিশোরকে বিজিবির উদ্ধার

ছবি

সৈকতে গোসলে নেমে কিশোরের মৃত্যু

ছবি

নরসিংদীতে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজির ৬ যাত্রী নিহত

ছবি

চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ, ৮ দাবিতে লংমার্চের ঘোষণা

ছবি

টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে মহেশখালীর উপকূলের মানুষ

ছবি

সুবিধাবাদীদের চিহ্নিত করে আলাদা করার আহ্বান সারজিস আলমের

ছবি

সাবেক হুইপ কমলের বডিগার্ড খোকন যৌথ অভিযানে গ্রেফতার

ছবি

রামুর রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্টিত

ছবি

ভারতে পালানোর সময় এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তা আটক

ছবি

ইসরায়েলী গণহত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে আলেমদের বিক্ষোভ

ছবি

আত্মগোপনে থাকা ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল গ্রেপ্তার

ছবি

শারদায় এবার ৫৯ জন এসআইকে শোকজ

ছবি

কক্সবাজারে মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

ছবি

গাজীপুরে রাস্তাগুলোর বেহাল দশা, ‘অতিরিক্ত ভারী যানবাহনই দায়ী’

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে উত্তাল সমুদ্র

ছবি

ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন প্রশ্নে উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিককে তলব

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে নৌ মহড়ার জেটি দ্বিখণ্ডিত

ছবি

রাজধানীতে গাঁজাসহ মাদককারবারি গ্রেপ্তার

ছবি

শেরপুরে ছাত্র হত্যা মামলায় সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

‘দানা’ : প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা, ৪ বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

ময়মনসিংহে ধর্ষণের শিকার শিশুটি

ছবি

কৃষকের অজান্তেই ঈশ্বরদী ছেড়ে গেছে কৃষি স্পেশাল ট্রেন!

ছবি

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে রিয়্যাক্টর এসেম্বলির কাজ সম্পন্ন

ছবি

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই পদ্মায় ইলিশ নিধন, চরাঞ্চলের পাড়জুড়ে হাট বসিয়ে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রির ধুম

হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন আরঙ্গজেব নান্নু

ছবি

৭ম আন্তর্জাতিক Flight Safety Seminar 2024 এর সমাপনী অনুষ্ঠান

ছবি

স্বস্তি নিয়েই দিন পার বাংলাদেশের

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় তেলবাহী ট্রেনের ট্যাঙ্কার লাইনচ্যুত, যোগাযোগ বন্ধ

ছবি

গাজীপুরে দুই যুগে কমেছে দুই তৃতীয়াংশ বন ও জলাশয়

ছবি

‘নাশতা নিয়ে হইচই করায়’ ২৫২ জন প্রশিক্ষণরত এসআইকে অব্যাহতি

tab

সারাদেশ

সুনামগঞ্জে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত , ত্রানের জন্য হাহাকার

প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ

বুধবার, ১৯ জুন ২০২৪

সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা অব্যাহত পাহাড়ি ঢল, অবিরাম ভারী বর্ষণে সুনামগঞ্জ জেলার অন্তত ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্চেন। অনেকের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেলে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ উঁচু জায়গাতে আশ্রয় নিলেও খাবার জুটেনি। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদিও শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে দেয়া হয়েছে কিন্ত তা খুবই অপ্রতুল ।

অন্য দিকে যারা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারেন নি তাদের ভাগ্যে কিছুই জুঠেনি। বসত ঘরে পানি উঠায় চুলা ডুবে গেছে, নয়তো চাল ডাল ভিজে গেছে তাই খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বানভাসী মানুষেরা ত্রানের জন্য হাহাকার করছে। মানুষ জন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনতে গিয়ে ও অতিরিক্ত দামে কিনছে,অবশ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজারে মোবাইল কোর্ট কাজ করছে।

গত ১৭ জুন সোমবার ভোর থেকেই সীমান্তের ওপার থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে সুনামগঞ্জ সদর. দোয়ারাবাজার ছাতক উপজেলা ও সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার ঘরবাড়ি,দোকানপাট ও সড়ক প্লাবিত করে। সেই সাথে অবিরাম ভারী বর্ষণ ও বজ্রপাতের কারণে মানুষ ঈদের নামাজ ঈদগাহের পরিবর্তে মসজিদে আদায় করেন। অনেকের বাড়ির আঙ্গিনায় পানি থাকায় বারান্দা কিংবা উচু জায়গাতেই কোরবানীর পশু জবাই করেন। কেউ কেউ পরদিন করেন। ১৮ জুন মঙ্গলবার পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের বসত ঘরে পানি প্রবেশ করে। প্রায় সব গুলো সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার ফলে নৌকার উপরেই নির্ভর করতে হয়। মঙ্গলবার বিকাল থেকে পানি কিছুটা কমলেও ১৯ জুন বুধবার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রথম দুই দিন পাহাড়ি ঢল সীমান্তের অভ্যন্তরীণ নদ নদীর উপর প্রবাহিত হয়ে সুরমা কুশিয়ারায় গিয়ে পড়ে। তৃতীয় দিন নদীর পানি গিয়ে বিভিন্ন হাওরে প্রবেশ করে নতুন নতুন এলাকার মানুষের ঘরবাড়ী ডুবিয়ে দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৩ ,সেন্টিমিটার উপর প্রবাহিত হচ্চে। গত ২৪ ঘন্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সুনামগঞ্জে ও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী, ৪৮ ,ঘন্টা চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হওয়ার আশংকা রয়েছে। যদি টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তাহলে আবার ও ঢল নামতে পারে। এমনিতেই হাওর, নদী পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে আছে।

সুনামগঞ্জ শহরের ৮০ ভাগ সড়ক ও বসত ঘরে পানি রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করে মালামাল ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পৌর এলাকার তেঘরিয়া,বড়পাড়া, পশ্চিম হাজী পাড়া,নবীনগর, ষোলঘর, সুলতান পুর, উকিল পাড়া,কাজীর পয়েন্ট, মধ্য বাজার, পূর্ব বাজার ও পশ্চিম বাজার সহ অন্যান্য এলাকা এখনও প্লাবিত। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ৯ ইউনিয়নের সব কটি, ছাতক উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন ও দোয়ারাবাজার উপজেলার ইউনিয়নে বেশী প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সাথে ইতিমধ্যেই বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক তাহিরপুর দোয়ারাবাজার, জামালগঞ্জ ,ধর্মপাশা ,মধ্যনগর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ আর ও বেড়ে গেছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মানুষ গত তিন দিন যাবত পানি বন্দি কিন্ত কেউ সাহায্য দুরে থাক কোন খোঁজ খবর নেননি। ঐ গ্রামের আম্বিয়া খাতুন জানান তিন দিন ধরে ঘরে পানি চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউ খবর নেয়নি। চুলা ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত তাই রান্নার কাজ হয়নি। দোকান থেকে শুকনো খাবার কিনতে গিয়ে ও অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্চে। একই গ্রামের আলামিন,তপন বাবু ও হাফিজ আলী ও একই কথা বলেছেন। দোয়ারাবাজার উপজেলার সংবাদ কর্মী আব্দুল মোতালিব ভূইয়া জানান, দোয়ারাবাজার উপজেলার সাথে সকল ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ কারণ ঢলের পানিতে বেশ কয়েকটি সড়ক ভেঙ্গে গেছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সংবাদ কর্মী হাসান বশির জানান এখনও অনেক ঘরে ও সড়কে পানি রঘেছে। অনেক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ নিজ নিজ ঘরে মাচাং বেধে আছেন। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়েছেন তারা শুকনা খাবার ও রান্না করা খাবার কিছু পান কিন্ত যারা বাড়িতে আছেন তাদের ভাগ্যে কিছুই জুঠেনি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ইউএনও মফিজুল ইসলাম ও বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি শ্যামল বণিক আশ্রয় শিবিরের বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রান বিতরণ করছেন প্রতিদিন। শান্তিগঞ্জ উপজেলার গণমাধ্যম কর্মী ইয়াকুব শাহরিয়ার জানান গত ভোররাত থেকে শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জায়গাতেই পানি প্রবেশ করেছে। আমার নিজের বসত ঘরে ও পানি প্রবেশ করে। এক পর্যায়ে আমি ও ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। অবস্হা খুব ভয়াবহ। কোন ত্রান কার্যক্রম শুরু হয়নি। সুনামগঞ্জ শহরের নতুন পাড়ার বাসিন্দা সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব প্রদীপ পাল নিতাই জানান ভোররাত থেকেই ঘরে হুহু করে পানি ঢুকে এখন হাটুঁর উপরে। ঘরের কিছু মালামাল উপরে তোলার চেষ্টা করি শেষ পর্যন্ত সব ফেলে ঘর ছাড়তে বাধ্য হই। পৌর এলাকার মরাটিলা,শান্তি বাগ,নতুন পাড়া, হাজীপাড়া,কালীপুর, গণিপুর, হাসন বসত, ওয়েজখালী, পিরিজপুর, জলিল পুর, হাছননগর, আপ্তাব নগর সহ বিভিন্ন জায়গাতে নতুন করে ঘর বাড়ি সড়ক প্লাবিত হঘেছে। তরুণ সমাজ কর্মী আম্মার হোসাইন জানান হাওর পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের ঘর বাড়িতে কোমর থেকে গলা পানি। খুব দূর্ভোগ পোহাচ্চেন। সুনামগঞ্জ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ খালেদুল ইসলাম জানান, জেলার আনুমানিক ১২ হাজার নলকূপ আংশিক এবং তিন হাজার নলকূপ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষের বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দেয়ায় তিনি এ পর্যন্ত ইউএনও ও পিআইও দের সমন্বয়ে আনুমানিক তিন লাখ পানি বিশুদ্ধ করন বড়ি বিতরণ করেছেন। তার কাছে ১৫ লাগ বড়ি মজুদ রয়েছে। এছাড়াও তার দুটি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট যা ঘন্টায় ছয়শ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ক্ষমতা রাখে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মোতাবেক মাঠে কাজ করছে।

back to top