alt

সারাদেশ

বন্যায় ভাসছে সিলেট

আকাশ চৌধুরী, সিলেট : বুধবার, ১৯ জুন ২০২৪

# সব উপজেলা প্লাবিত

# নগরে হাঁটু থেকে কােমর পানি, আতঙ্কিত মানুষের নির্ঘূম রাত

# ১২৬টি মেডিকেল টিম গঠন

# পর্যবেক্ষণে প্রধানমন্ত্রী

বন্যায় ভাসছে গােটা সিলেট। ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিটি করপােরেশন এলাকাসহ প্লাবিত হয়েছে সব কটি উপজেলা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। বন্যায় এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাত লাখ মানুষ। জেলার সব পয়েন্টে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সুরমা নদীর পানি উপচেপড়ে প্রবেশ করেছে নগরীতে। ফলে দুই তৃতীয়ংশ এলাকায় হাঁটু থেকে কােমর পানি হওয়ায় তীব্র জনদুর্ভােগ দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় রিকশা এবং সাধারণ গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেকের বাসাবাড়ি ও দােকানপাটে পানি ঢুকে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে রাত কাটাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন, সিটি করপােরেশন একসঙ্গে কাজ করছে। এমনকি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এরইমধ্যে জেলার তিনটি হাসপাতালে বন্যায় পানি ঢুকে পড়ায় সেখানকার রােগিদের সেবা দিতে ১২৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। দিন দিন বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী সিলেট সফরে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী গোটা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্র বুধবার সকাল ৯টায় জানায়, এ সময় সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বইছে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।

কুশিয়ারা নদী আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদী ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯২ ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।

এছাড়া সারি-গোয়াইন নদী সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ।

২০ দিনের ব্যবধানে সিলেটে এনিয়ে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। এর আগে ২৭ মে সিলেট বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন থেকে ফের বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে সিলেট।

এর মধ্যে ঈদের দিন (১৭ জুন) ভোর থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় নগরের অনেক এলাকা। জেলার বিভিন্ন স্থানেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। মাটি হয়ে যায় সিলেটের ঈদ আনন্দ।

২০২২ সালে সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। এবারের বন্যা দুই বছর আগের সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে সিলেটবাসীকে।

নগরের তালতলা এলাকার বাসিন্দা নিলয় দাশ বলেন, যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে এবার মনে হয় ২০২২ সালের বন্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে। গতকালই আমার বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে। পরিবারের লোকদের আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে আমি একটি হোটেলে আশ্রয় নিয়েছি।

ইতোমধ্যে নগরের শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া, মেজরটিলা ও দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই, বরইকান্দি, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেকের বাসাবাড়িতে হাঁটু থেকে কােমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। নিচু এলাকাগুলোর কলোনি বা বাসা-বাড়ি প্রায় পুরোটাই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এতে চরম বিপাকে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। অনেকে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার অনেকে নিজের বাসা-বাড়ি ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন না।

অপরদিকে সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষি জমির ফসল তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব জানান, সিলেটে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার ৬টা পর্যন্ত ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৫৫ মিলিমিটার। আগামী কয়েক দিন সিলেটে টানা বৃষ্টি হতে পারে।

জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ডেডিকেটেড অফিসার নিয়োগের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিক্যাল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আগামী তিনদিন সিলেট অঞ্চলে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

এদিকে, বন্যায় সিলেটের ১৩ উপজেলার ৮৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন এবং কানাইঘাট উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলাগুলোর ৮৪৯টি গ্রাম বন্যাক্রান্ত হয়ে তিন লাখ ৬১ হাজার ৫০৭ জন মানুষ বন্যাকবলিত। এসব উপজেলায় ৬১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত তিন হাজার ৯২৪ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।

বন্যাকবলিত গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নই প্লাবিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। বন্যাকবলিতদের সাহায্যে উপজেলা প্রশাসন হেল্প লাইন চালু করেছে। মঙ্গলবার ভোররাত থেকে সকালের মধ্যে উপজেলার বেশির ভাগ অংশ তলিয়ে যায়। উপজেলার ৩১৩টি গ্রামের মধ্যে ২০৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা প্লাবিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিলেটের সঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলার এবং গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সঙ্গে ইউনিয়নগুলোর সড়ক যোগাযোগ ভেঙে পড়েছে। উপজেলার সড়ক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন বলা চলে। গোয়াইনঘাট-সারিঘাট সড়ক, গোয়াইনঘাট-জাফলং রাধানগর সড়ক, গোয়াইনঘাট-ফতেহপুর হয়ে আসার সড়ক, সালুটির সড়কেও পানি উঠে গেছে। বন্যায় এ পর্যন্ত ৯৮ হাজার মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ১৯ হাজার ৭৫০। বন্যার্তদের আশ্রয়ের জন্য উপজেলা প্রশাসন ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে। ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য ৪৭টি নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়নের আটগ্রামের বাসিন্দা ও মানিকগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আল-আমিন বলেন, ‘সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে হঠাৎ করে ১৫ থেকে ৭৫ মিনিটের মধ্যে পানি বেড়ে গিয়ে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবতি হয়েছে। সড়ক ডুবে গেছে। সকালে বেশি পানি বাড়েনি। চার আঙুলের মতো বেড়েছে। আর যদি এক হাত পানি পাড়ে তাহলে বাইশের (২০২২ সালের বন্যা) বন্যার মতো অবস্থায় পড়ে যাবো আমরা।’

গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গোয়াইনঘাটের ১৩টি উপজেলার সবকটি প্লাবিত হয়েছে। আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে উপজেলার ৪৮৩ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ৩১৫ বর্গকিলোমিটার প্লাবিত হয়ে গেছে। ৩১৩ গ্রামের মধ্যে ২০৬টি গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত।’

সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উপজেলার সড়ক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন বলা চলে। গোয়াইনঘাট-সারিঘাট সড়ক, গোয়াইনঘাট-জাফলং রাধানগর সড়ক, গোয়াইনঘাট-ফতেহপুর হয়ে আসার সড়ক, সালুটির সড়কেও পানি উঠে গেছে।’

পানির স্রোত তীব্র হওয়ায় সড়ক, কালভার্ট, সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক জায়গায় ফাটল দেখা দিচ্ছে বলেও তিনি জানান।

ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। কানাইঘাট সুরমা ও লোভা নদীর পানি হু হু করে বেড়ে যাওয়ার কারণে সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা নদীর ডাইকের একাধিক ভাঙন দিয়ে প্রবল স্রোতসহ পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। টানা ভারি বর্ষণ ও বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

কানাইঘাট চতুল-দরবস্ত সড়ক, গাজী বোরহান উদ্দিন সড়ক, কানাইঘাট শাহবাগ সড়ক, সুরইঘাট-কানাইঘাট সড়কের নিচু এলাকা দিয়ে বন্যার পানি তীব্র বেগে প্রবাহিত হওয়ায় সিলেটের সাথে কানাইঘাট সদরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। কানাইঘাট-শাহবাগ সড়কের রামপুরে সম্প্রতি প্রথম দফার বন্যায় ভেঙে যাওয়া সড়কের স্থান পানির তীব্র স্রোতে বিশাল আকারে ভেঙে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামীণ রাস্তাঘাট, সুরমা, লোভা ও কুশিয়ারা নদীর পানি অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে। শত শত বাড়িঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন বলেন, টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি লোকজন যাতে নিরাপদ স্থানে যেতে পারে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে পারে এ জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে নৌকা রাখা হয়েছে।

বিদ্যুতের সাবস্টেশন ঝুঁকিতে

২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর এবারও সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বরইকান্দিতে বিদ্যুতের সাবস্টেশন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তবে স্টেশনটিতে যাতে নদীর পানি ঢুকতে না পারে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যায় সে জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের পাশাপাশি প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী ও সিলেট সিটি করপোরেশন।

মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর এক টিম নিয়ে সাবস্টেশনটি পরিদর্শন করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেছেন, ‘এই সাবস্টেশনে কোনো সমস্যা হলেও তা চালু রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে। এ ছাড়া যাতে পানি না ওঠে সে জন্যও কাজ চলছে।’

দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি উপকেন্দ্রটি সিলেটে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-৩-এর অধীন। এই উপকেন্দ্রের মাধ্যমে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন, বরইকান্দি, কামালবাজার, মাসুকগঞ্জ, বিসিক, লালাবাজার, শিববাড়ী ও কদমতলীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-৩ নির্বাহী প্রকৌশলী শ্যামল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘উপকেন্দ্রটি ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখনো ওঠেনি। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সাহায্য করবে।’

বুধবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, এসব এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে সেনাসদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অনুরোধে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের নির্দেশনায় ইন এইড টু দি সিভিল পাওয়ারের আওতায় সেনারা সেখানে কাজ করছেন। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় ইন এইড টু দি সিভিল পাওয়ারের আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান করে থাকে।

সিসিকের সব ছুটি বাতিল

সিলেটের নদ-নদীর পানি বেড়ে নগর এলাকার পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটিসহ সব ধরনের ছুটি বাতিল করে সিলেট সিটি করপোরেশন। বন্যাদুর্গতদের জন্য সিসিকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন মেয়র মাে. আনােয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

১২৬টি মেডিকেল টিম গঠন

বন্যার কারণে তিনটি উপজেলায় হাসপাতাল চত্বরে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী, চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত। জানান, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি ছিল। এখন হাসপাতালের ভেতর থেকে পানি নেমে গেলেও চত্বরে রয়ে গেছে। অন্যদিকে ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরেও গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি উঠেছে। বন্যাকবলিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সিলেট জেলায় ১২৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এসব দলে চিকিৎসক ছাড়াও নার্সসহ স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট অনেকেই আছেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর মধ্যে বিয়ানীবাজারে ১৬টি, কানাইঘাটে ১২, গোলাপগঞ্জে ১২, জকিগঞ্জে ১০, গোয়াইনঘাটে ১০, কোম্পানীগঞ্জে ১০, বিশ্বনাথে ৯, সিলেট সদরে ৯, দক্ষিণ সুরমায় ৯, ওসমানীনগরে ৯, বালাগঞ্জে ৬, ফেঞ্চুগঞ্জে ৬ ও জৈন্তাপুরে ৬টি মেডিকেল টিম গঠিত হয়েছে। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে আরও দুটি মেডিকেল টিম করা হয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় আরও জানায়, হাসপাতালের ভেতরে পানি উঠে পড়ায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ভ্যাকসিনগুলো সরিয়ে জেলায় নিয়ে আসা হয়েছে।

ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, প্লাবিত এলাকার সবখানেই স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে মেডিকেল টিমগুলো কাজ করছে। মেডিকেল টিমগুলো বন্যার্তদের মধ্যে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণের পাশাপাশি প্রসূতিদের সেবা নিশ্চিত করা, পানিবাহিত রোগসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে।

সরকারি বরাদ্দ

সিলেট জেলার বন্যার্তদের মাঝে ৬৩১ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ১৪৯৫ বস্তা শুকনো খাবার, শিশুখাদ্যের জন্য নগদ ১০ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

তবে চাহিদা আরও বেশি বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

অপরদিকে, সিলেট মহানগরে ৬৫ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ টাকা নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখানেও চাহিদা বেশি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলায় বন্যা পরিস্থিতিতে বর্তমানে ৮১৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য নগদ ৩৪ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য নগদ ৪০ লাখ টাকার চাহিদা রয়েছে। তবে শুকনো খাবার চাহিদার চাইতে অনেক বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

আর মহানগরে ১ কোটি ২০ লাখ নগদ অর্থের চাহিদা রয়েছে। তবে চাল চাহিদার চেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

পরিদর্শনে ত্রান প্রতিমন্ত্রী

বুধবার মহানগরের বিভিন্ন বন্যা কবলিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান এমপি। এরপর মিরাবাজার কিশোরী মোহন বালক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করেন তিনি।

এসময় নগদ ১০ লক্ষ টাকা, ১ শ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মহিববুর রহমান এমপি।

প্রতিমন্ত্রী এসময় বলেন, বাংলাদেশ একটি দুর্যোগ প্রবণ এলাকা। এরমধ্যে সিলেট অঞ্চল অন্যতম। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং প্রতিনিয়ত তিনি এর খোঁজ-খবর রাখছেন।

তিনি আরও বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো: আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আমাদের সাথে সব সময় যোগাযোগ রাখছেন। ঈদের দিন আমকে ফোন করে বন্যার খবর জানান। পানিবন্দী ত্রাণ সাহায্যের তিনি অনুরোধ জানান দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ১০ লক্ষ টাকা, ১ শ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করি।

দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়ার পর থেকে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যার খবর রাখছেন। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবারের পাশাপাশি রান্না করা খাবার বিতরণ করছে সিটি কর্পোরেশন। পানি না কমা পর্যন্ত আমাদের ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

এসময় সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ও সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদ, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল ইসলাম, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী (এনডিসি) সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ও বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। এরপর প্রতিমন্ত্রী কােম্পানীগঞ্জ এলাকায় গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।

ছবি

বাজিতপুরে বাবাকে হত্যা: টাকা না পাওয়ার জেরে ছেলে ও বন্ধুদের গ্রেপ্তার

ছবি

বি‌জি‌বির অ‌ভিযা‌নে আড়াই কোটি টাকার জব্দ মোবাইল ডিসপ্লে জব্দ

ছবি

পার্বত্য উপদেষ্টার পদত্যাগ সহ ৩ দফা দাবীতে বাইশারীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

ছবি

শিশুদের জীবন মান উন্নয়নে হিউম্যান রিলিফ ফাউন্ডেশনের Walk for Hope

ছবি

ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব কেটে গেলেও কৃষকের মনে বিষাদ

যৌথ বাহিনীর অভিযান : গাজীপুরে রাম দা-চাপাতিসহ ৮ জন গ্রেপ্তার

ছবি

আরাকান আর্মির থেকে ২ কিশোরকে বিজিবির উদ্ধার

ছবি

সৈকতে গোসলে নেমে কিশোরের মৃত্যু

ছবি

নরসিংদীতে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজির ৬ যাত্রী নিহত

ছবি

চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ, ৮ দাবিতে লংমার্চের ঘোষণা

ছবি

টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে মহেশখালীর উপকূলের মানুষ

ছবি

সুবিধাবাদীদের চিহ্নিত করে আলাদা করার আহ্বান সারজিস আলমের

ছবি

সাবেক হুইপ কমলের বডিগার্ড খোকন যৌথ অভিযানে গ্রেফতার

ছবি

রামুর রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্টিত

ছবি

ভারতে পালানোর সময় এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তা আটক

ছবি

ইসরায়েলী গণহত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে আলেমদের বিক্ষোভ

ছবি

আত্মগোপনে থাকা ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল গ্রেপ্তার

ছবি

শারদায় এবার ৫৯ জন এসআইকে শোকজ

ছবি

কক্সবাজারে মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

ছবি

গাজীপুরে রাস্তাগুলোর বেহাল দশা, ‘অতিরিক্ত ভারী যানবাহনই দায়ী’

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে উত্তাল সমুদ্র

ছবি

ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন প্রশ্নে উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিককে তলব

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে নৌ মহড়ার জেটি দ্বিখণ্ডিত

ছবি

রাজধানীতে গাঁজাসহ মাদককারবারি গ্রেপ্তার

ছবি

শেরপুরে ছাত্র হত্যা মামলায় সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

‘দানা’ : প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা, ৪ বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

ময়মনসিংহে ধর্ষণের শিকার শিশুটি

ছবি

কৃষকের অজান্তেই ঈশ্বরদী ছেড়ে গেছে কৃষি স্পেশাল ট্রেন!

ছবি

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে রিয়্যাক্টর এসেম্বলির কাজ সম্পন্ন

ছবি

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই পদ্মায় ইলিশ নিধন, চরাঞ্চলের পাড়জুড়ে হাট বসিয়ে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রির ধুম

হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন আরঙ্গজেব নান্নু

ছবি

৭ম আন্তর্জাতিক Flight Safety Seminar 2024 এর সমাপনী অনুষ্ঠান

ছবি

স্বস্তি নিয়েই দিন পার বাংলাদেশের

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় তেলবাহী ট্রেনের ট্যাঙ্কার লাইনচ্যুত, যোগাযোগ বন্ধ

ছবি

গাজীপুরে দুই যুগে কমেছে দুই তৃতীয়াংশ বন ও জলাশয়

ছবি

‘নাশতা নিয়ে হইচই করায়’ ২৫২ জন প্রশিক্ষণরত এসআইকে অব্যাহতি

tab

সারাদেশ

বন্যায় ভাসছে সিলেট

আকাশ চৌধুরী, সিলেট

বুধবার, ১৯ জুন ২০২৪

# সব উপজেলা প্লাবিত

# নগরে হাঁটু থেকে কােমর পানি, আতঙ্কিত মানুষের নির্ঘূম রাত

# ১২৬টি মেডিকেল টিম গঠন

# পর্যবেক্ষণে প্রধানমন্ত্রী

বন্যায় ভাসছে গােটা সিলেট। ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিটি করপােরেশন এলাকাসহ প্লাবিত হয়েছে সব কটি উপজেলা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। বন্যায় এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাত লাখ মানুষ। জেলার সব পয়েন্টে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সুরমা নদীর পানি উপচেপড়ে প্রবেশ করেছে নগরীতে। ফলে দুই তৃতীয়ংশ এলাকায় হাঁটু থেকে কােমর পানি হওয়ায় তীব্র জনদুর্ভােগ দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় রিকশা এবং সাধারণ গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেকের বাসাবাড়ি ও দােকানপাটে পানি ঢুকে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে রাত কাটাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন, সিটি করপােরেশন একসঙ্গে কাজ করছে। এমনকি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এরইমধ্যে জেলার তিনটি হাসপাতালে বন্যায় পানি ঢুকে পড়ায় সেখানকার রােগিদের সেবা দিতে ১২৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। দিন দিন বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী সিলেট সফরে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী গোটা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্র বুধবার সকাল ৯টায় জানায়, এ সময় সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বইছে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।

কুশিয়ারা নদী আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদী ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯২ ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।

এছাড়া সারি-গোয়াইন নদী সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ।

২০ দিনের ব্যবধানে সিলেটে এনিয়ে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। এর আগে ২৭ মে সিলেট বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন থেকে ফের বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে সিলেট।

এর মধ্যে ঈদের দিন (১৭ জুন) ভোর থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় নগরের অনেক এলাকা। জেলার বিভিন্ন স্থানেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। মাটি হয়ে যায় সিলেটের ঈদ আনন্দ।

২০২২ সালে সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। এবারের বন্যা দুই বছর আগের সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে সিলেটবাসীকে।

নগরের তালতলা এলাকার বাসিন্দা নিলয় দাশ বলেন, যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে এবার মনে হয় ২০২২ সালের বন্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে। গতকালই আমার বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে। পরিবারের লোকদের আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে আমি একটি হোটেলে আশ্রয় নিয়েছি।

ইতোমধ্যে নগরের শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া, মেজরটিলা ও দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই, বরইকান্দি, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেকের বাসাবাড়িতে হাঁটু থেকে কােমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। নিচু এলাকাগুলোর কলোনি বা বাসা-বাড়ি প্রায় পুরোটাই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এতে চরম বিপাকে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। অনেকে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার অনেকে নিজের বাসা-বাড়ি ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন না।

অপরদিকে সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষি জমির ফসল তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব জানান, সিলেটে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার ৬টা পর্যন্ত ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৫৫ মিলিমিটার। আগামী কয়েক দিন সিলেটে টানা বৃষ্টি হতে পারে।

জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ডেডিকেটেড অফিসার নিয়োগের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিক্যাল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আগামী তিনদিন সিলেট অঞ্চলে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

এদিকে, বন্যায় সিলেটের ১৩ উপজেলার ৮৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন এবং কানাইঘাট উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলাগুলোর ৮৪৯টি গ্রাম বন্যাক্রান্ত হয়ে তিন লাখ ৬১ হাজার ৫০৭ জন মানুষ বন্যাকবলিত। এসব উপজেলায় ৬১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত তিন হাজার ৯২৪ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।

বন্যাকবলিত গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নই প্লাবিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। বন্যাকবলিতদের সাহায্যে উপজেলা প্রশাসন হেল্প লাইন চালু করেছে। মঙ্গলবার ভোররাত থেকে সকালের মধ্যে উপজেলার বেশির ভাগ অংশ তলিয়ে যায়। উপজেলার ৩১৩টি গ্রামের মধ্যে ২০৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা প্লাবিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিলেটের সঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলার এবং গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সঙ্গে ইউনিয়নগুলোর সড়ক যোগাযোগ ভেঙে পড়েছে। উপজেলার সড়ক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন বলা চলে। গোয়াইনঘাট-সারিঘাট সড়ক, গোয়াইনঘাট-জাফলং রাধানগর সড়ক, গোয়াইনঘাট-ফতেহপুর হয়ে আসার সড়ক, সালুটির সড়কেও পানি উঠে গেছে। বন্যায় এ পর্যন্ত ৯৮ হাজার মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ১৯ হাজার ৭৫০। বন্যার্তদের আশ্রয়ের জন্য উপজেলা প্রশাসন ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে। ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য ৪৭টি নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়নের আটগ্রামের বাসিন্দা ও মানিকগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আল-আমিন বলেন, ‘সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে হঠাৎ করে ১৫ থেকে ৭৫ মিনিটের মধ্যে পানি বেড়ে গিয়ে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবতি হয়েছে। সড়ক ডুবে গেছে। সকালে বেশি পানি বাড়েনি। চার আঙুলের মতো বেড়েছে। আর যদি এক হাত পানি পাড়ে তাহলে বাইশের (২০২২ সালের বন্যা) বন্যার মতো অবস্থায় পড়ে যাবো আমরা।’

গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গোয়াইনঘাটের ১৩টি উপজেলার সবকটি প্লাবিত হয়েছে। আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে উপজেলার ৪৮৩ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ৩১৫ বর্গকিলোমিটার প্লাবিত হয়ে গেছে। ৩১৩ গ্রামের মধ্যে ২০৬টি গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত।’

সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উপজেলার সড়ক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন বলা চলে। গোয়াইনঘাট-সারিঘাট সড়ক, গোয়াইনঘাট-জাফলং রাধানগর সড়ক, গোয়াইনঘাট-ফতেহপুর হয়ে আসার সড়ক, সালুটির সড়কেও পানি উঠে গেছে।’

পানির স্রোত তীব্র হওয়ায় সড়ক, কালভার্ট, সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক জায়গায় ফাটল দেখা দিচ্ছে বলেও তিনি জানান।

ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। কানাইঘাট সুরমা ও লোভা নদীর পানি হু হু করে বেড়ে যাওয়ার কারণে সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা নদীর ডাইকের একাধিক ভাঙন দিয়ে প্রবল স্রোতসহ পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। টানা ভারি বর্ষণ ও বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

কানাইঘাট চতুল-দরবস্ত সড়ক, গাজী বোরহান উদ্দিন সড়ক, কানাইঘাট শাহবাগ সড়ক, সুরইঘাট-কানাইঘাট সড়কের নিচু এলাকা দিয়ে বন্যার পানি তীব্র বেগে প্রবাহিত হওয়ায় সিলেটের সাথে কানাইঘাট সদরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। কানাইঘাট-শাহবাগ সড়কের রামপুরে সম্প্রতি প্রথম দফার বন্যায় ভেঙে যাওয়া সড়কের স্থান পানির তীব্র স্রোতে বিশাল আকারে ভেঙে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামীণ রাস্তাঘাট, সুরমা, লোভা ও কুশিয়ারা নদীর পানি অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে। শত শত বাড়িঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন বলেন, টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি লোকজন যাতে নিরাপদ স্থানে যেতে পারে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে পারে এ জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে নৌকা রাখা হয়েছে।

বিদ্যুতের সাবস্টেশন ঝুঁকিতে

২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর এবারও সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বরইকান্দিতে বিদ্যুতের সাবস্টেশন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তবে স্টেশনটিতে যাতে নদীর পানি ঢুকতে না পারে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যায় সে জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের পাশাপাশি প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী ও সিলেট সিটি করপোরেশন।

মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর এক টিম নিয়ে সাবস্টেশনটি পরিদর্শন করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেছেন, ‘এই সাবস্টেশনে কোনো সমস্যা হলেও তা চালু রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে। এ ছাড়া যাতে পানি না ওঠে সে জন্যও কাজ চলছে।’

দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি উপকেন্দ্রটি সিলেটে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-৩-এর অধীন। এই উপকেন্দ্রের মাধ্যমে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন, বরইকান্দি, কামালবাজার, মাসুকগঞ্জ, বিসিক, লালাবাজার, শিববাড়ী ও কদমতলীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-৩ নির্বাহী প্রকৌশলী শ্যামল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘উপকেন্দ্রটি ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখনো ওঠেনি। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সাহায্য করবে।’

বুধবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, এসব এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে সেনাসদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অনুরোধে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের নির্দেশনায় ইন এইড টু দি সিভিল পাওয়ারের আওতায় সেনারা সেখানে কাজ করছেন। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় ইন এইড টু দি সিভিল পাওয়ারের আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান করে থাকে।

সিসিকের সব ছুটি বাতিল

সিলেটের নদ-নদীর পানি বেড়ে নগর এলাকার পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটিসহ সব ধরনের ছুটি বাতিল করে সিলেট সিটি করপোরেশন। বন্যাদুর্গতদের জন্য সিসিকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন মেয়র মাে. আনােয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

১২৬টি মেডিকেল টিম গঠন

বন্যার কারণে তিনটি উপজেলায় হাসপাতাল চত্বরে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী, চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত। জানান, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি ছিল। এখন হাসপাতালের ভেতর থেকে পানি নেমে গেলেও চত্বরে রয়ে গেছে। অন্যদিকে ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরেও গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি উঠেছে। বন্যাকবলিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সিলেট জেলায় ১২৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এসব দলে চিকিৎসক ছাড়াও নার্সসহ স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট অনেকেই আছেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর মধ্যে বিয়ানীবাজারে ১৬টি, কানাইঘাটে ১২, গোলাপগঞ্জে ১২, জকিগঞ্জে ১০, গোয়াইনঘাটে ১০, কোম্পানীগঞ্জে ১০, বিশ্বনাথে ৯, সিলেট সদরে ৯, দক্ষিণ সুরমায় ৯, ওসমানীনগরে ৯, বালাগঞ্জে ৬, ফেঞ্চুগঞ্জে ৬ ও জৈন্তাপুরে ৬টি মেডিকেল টিম গঠিত হয়েছে। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে আরও দুটি মেডিকেল টিম করা হয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় আরও জানায়, হাসপাতালের ভেতরে পানি উঠে পড়ায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ভ্যাকসিনগুলো সরিয়ে জেলায় নিয়ে আসা হয়েছে।

ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, প্লাবিত এলাকার সবখানেই স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে মেডিকেল টিমগুলো কাজ করছে। মেডিকেল টিমগুলো বন্যার্তদের মধ্যে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণের পাশাপাশি প্রসূতিদের সেবা নিশ্চিত করা, পানিবাহিত রোগসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে।

সরকারি বরাদ্দ

সিলেট জেলার বন্যার্তদের মাঝে ৬৩১ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ১৪৯৫ বস্তা শুকনো খাবার, শিশুখাদ্যের জন্য নগদ ১০ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

তবে চাহিদা আরও বেশি বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

অপরদিকে, সিলেট মহানগরে ৬৫ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লাখ টাকা নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখানেও চাহিদা বেশি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলায় বন্যা পরিস্থিতিতে বর্তমানে ৮১৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য নগদ ৩৪ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য নগদ ৪০ লাখ টাকার চাহিদা রয়েছে। তবে শুকনো খাবার চাহিদার চাইতে অনেক বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

আর মহানগরে ১ কোটি ২০ লাখ নগদ অর্থের চাহিদা রয়েছে। তবে চাল চাহিদার চেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

পরিদর্শনে ত্রান প্রতিমন্ত্রী

বুধবার মহানগরের বিভিন্ন বন্যা কবলিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান এমপি। এরপর মিরাবাজার কিশোরী মোহন বালক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করেন তিনি।

এসময় নগদ ১০ লক্ষ টাকা, ১ শ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মহিববুর রহমান এমপি।

প্রতিমন্ত্রী এসময় বলেন, বাংলাদেশ একটি দুর্যোগ প্রবণ এলাকা। এরমধ্যে সিলেট অঞ্চল অন্যতম। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং প্রতিনিয়ত তিনি এর খোঁজ-খবর রাখছেন।

তিনি আরও বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো: আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আমাদের সাথে সব সময় যোগাযোগ রাখছেন। ঈদের দিন আমকে ফোন করে বন্যার খবর জানান। পানিবন্দী ত্রাণ সাহায্যের তিনি অনুরোধ জানান দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ১০ লক্ষ টাকা, ১ শ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করি।

দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়ার পর থেকে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যার খবর রাখছেন। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবারের পাশাপাশি রান্না করা খাবার বিতরণ করছে সিটি কর্পোরেশন। পানি না কমা পর্যন্ত আমাদের ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

এসময় সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ও সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদ, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল ইসলাম, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী (এনডিসি) সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ও বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। এরপর প্রতিমন্ত্রী কােম্পানীগঞ্জ এলাকায় গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।

back to top