ইচ্ছে পুরনের স্বপ্নগুলো কেবলই সত্যি হতে শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎ উলট-পালট সবকিছু। সৌদি আরবে সোফা তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে হারিয়ে গেল তিনটি স্বপ্ন। একসময় যাদের প্রতিক্ষায় পরিবার-প্রিয়জনরা থাকলেও এখন তাদের মৃত্যুর খবরে স্তব্ধ পরিবারগুলো। স্বজন হারানো কান্না আর আহাজারিতে শোকের ছায়া এলাকাজুড়ে। শোকে দিশেহারা এই সমটাতে পরিবারের দাবি দ্রুত মরদেহ ফিরিয়ে আনার।
নিজ উপার্জনের টাকায় নির্মাণ করছিলেন ইটের বাড়ি। বাড়ীর কাজ শেষ হলে আগামী বছর দেশে এসে বিয়ে করার কথা ছিলো নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শিকারপুর গ্রামের এনামুলের। কিন্তু সেই ইচ্ছেটা আর পুরন হলো এনামুলের। সৌদি আরবের রিয়াদের মুসাসানাইয়া এলাকায় সোফা তৈরির কারখানার আগুন কেড়ে নিলো তার প্রাণ। এখন তার বাড়িতে শুধুই স্বজন হারানো কান্না আর আহাজারি।
গত বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা নাগাদ সৌদি আরবের রিয়াদের একটি সোফা তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে যে চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন তার মধ্যে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার তিনজন।
ওই আগুনে পুড়ে ছাই একই উপজেলার তেজনন্দি গ্রামের ফারুক হোসেন ও দিঘা স্কুলপাড়া গ্রামের শুকবর রহমানের পরিবারের স্বপ্নও। তাদের পরিবারের স্বজনরা জানান- ধারদেনা করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে কয়েক বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলে তারা। কিন্তু পরিবারের স্বচ্ছলতার আশা জাগিয়ে পরপারে পাড়ি জমালেন তারা। পরিবারের একমাত্র উপার্জণক্ষম ব্যাক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারগুলো। তাদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি অসহায় পরিবারগুলোকে সরকারি সহযোগিতার দাবি স্বজন ও এলাকাবাসি।
শুক্রবার তেজনন্দি গ্রামের ফারুক হোসেনের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়,গ্রামের লোকজন,পাড়া প্রতিবেশি এবং আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাংখিরা ভীর করে আছেন। গ্রাম জুড়েই যেন কান্না আর শোকের রোল পরে গেছে। ফারুকের স্ত্রী-দুই সন্তানকে যেন কেউ থামাতেই পারছেননা। বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পরছেন।
ফারুকের ভাতিজা পিন্টু আলী জানান,চাচা ফারুক হোসেন গার্মেন্টসে কাজ করতেন। গত প্রায় ৬বছর আগে ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। কিন্তু যাবার পর থেকেই সেখানে নানা সমস্যার মধ্যে পরে যায়। গত প্রায় ৮মাস হচ্ছে স্থায়ীভাবে সোফা তৈরির কারখানায় কাজে যোগদান করেছেন। এরই মধ্যে বুধবার রাত ১০টা নাগাদ মোবাইল ফোনে জানতে পারেন কারখানায় আগুনে ফারুক নিহত হয়েছেন।
উপজেলার দিঘা গ্রামের নিহত শুকবর আলীর জামাই বিদ্যুত হোসেন বলেন,তার শ্বশুড় কৃষি শ্রমিক ছিলেন। গত আড়াই বছর আগে একমাত্র সম্বল ১১শতক জায়গা বিক্রি করে তার সাথে ধার-দেনার টাকায় সৌদি আরবে যান। এখন পর্যন্ত ধার-দেনার টাকা শোধ করতে পারেননি।
শুকবরের দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে বড় ছেলে শামিম হোসেন প্রতিবন্ধি। তার মাথা গোঁজার একমাত্র বাড়ীর তিন শতক জায়গা ছাড়া আর কোন জমি নেই। কিভাবে শ্বাশুড়ী,শ্যালোকদের নিয়ে চলবেন তা নিয়ে ঘোর বিপাকে পরেছেন। শশুর শুকবর আলীই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জণক্ষম ব্যক্তি।
শিকারপুর গ্রামের নিহত যুবক এনামুলের চাচা জাহিদুল ইসলাম জানান,এনামুল গার্মেন্ট শ্রমিক ছিলেন। অনেকটা সুখের আসায় ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে কেবলমাত্র রোজগারের টাকায় ধার-দেনা শোধ করে ইটের বাড়ী নির্মান করছেন। বাড়ীর কাজ শেষ হলে আগামী বছর নাগাদ দেশে এসে বিয়ে করার কথা ছিলো। কিন্তু সেটা তার ভাগ্যে সইলনা। বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ১০টা নাগাদ আগুনে পুরে মারা যাবার খবর আসে। তখন থেকেই একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে বাবা-মা পাথর হয়ে পরেছেন। কিছুতেই যেন তাদেরকে বুঝ দিয়ে থামানো যাচ্ছেনা। নিহতদের তিন পরিবার থেকেই দ্রুত মরদেহ দেশে আনতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আত্রাই উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, নিহতদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা থাকলে তা সহায়তা করতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪
ইচ্ছে পুরনের স্বপ্নগুলো কেবলই সত্যি হতে শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎ উলট-পালট সবকিছু। সৌদি আরবে সোফা তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে হারিয়ে গেল তিনটি স্বপ্ন। একসময় যাদের প্রতিক্ষায় পরিবার-প্রিয়জনরা থাকলেও এখন তাদের মৃত্যুর খবরে স্তব্ধ পরিবারগুলো। স্বজন হারানো কান্না আর আহাজারিতে শোকের ছায়া এলাকাজুড়ে। শোকে দিশেহারা এই সমটাতে পরিবারের দাবি দ্রুত মরদেহ ফিরিয়ে আনার।
নিজ উপার্জনের টাকায় নির্মাণ করছিলেন ইটের বাড়ি। বাড়ীর কাজ শেষ হলে আগামী বছর দেশে এসে বিয়ে করার কথা ছিলো নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শিকারপুর গ্রামের এনামুলের। কিন্তু সেই ইচ্ছেটা আর পুরন হলো এনামুলের। সৌদি আরবের রিয়াদের মুসাসানাইয়া এলাকায় সোফা তৈরির কারখানার আগুন কেড়ে নিলো তার প্রাণ। এখন তার বাড়িতে শুধুই স্বজন হারানো কান্না আর আহাজারি।
গত বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা নাগাদ সৌদি আরবের রিয়াদের একটি সোফা তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে যে চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন তার মধ্যে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার তিনজন।
ওই আগুনে পুড়ে ছাই একই উপজেলার তেজনন্দি গ্রামের ফারুক হোসেন ও দিঘা স্কুলপাড়া গ্রামের শুকবর রহমানের পরিবারের স্বপ্নও। তাদের পরিবারের স্বজনরা জানান- ধারদেনা করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে কয়েক বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলে তারা। কিন্তু পরিবারের স্বচ্ছলতার আশা জাগিয়ে পরপারে পাড়ি জমালেন তারা। পরিবারের একমাত্র উপার্জণক্ষম ব্যাক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারগুলো। তাদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি অসহায় পরিবারগুলোকে সরকারি সহযোগিতার দাবি স্বজন ও এলাকাবাসি।
শুক্রবার তেজনন্দি গ্রামের ফারুক হোসেনের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়,গ্রামের লোকজন,পাড়া প্রতিবেশি এবং আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাংখিরা ভীর করে আছেন। গ্রাম জুড়েই যেন কান্না আর শোকের রোল পরে গেছে। ফারুকের স্ত্রী-দুই সন্তানকে যেন কেউ থামাতেই পারছেননা। বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পরছেন।
ফারুকের ভাতিজা পিন্টু আলী জানান,চাচা ফারুক হোসেন গার্মেন্টসে কাজ করতেন। গত প্রায় ৬বছর আগে ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। কিন্তু যাবার পর থেকেই সেখানে নানা সমস্যার মধ্যে পরে যায়। গত প্রায় ৮মাস হচ্ছে স্থায়ীভাবে সোফা তৈরির কারখানায় কাজে যোগদান করেছেন। এরই মধ্যে বুধবার রাত ১০টা নাগাদ মোবাইল ফোনে জানতে পারেন কারখানায় আগুনে ফারুক নিহত হয়েছেন।
উপজেলার দিঘা গ্রামের নিহত শুকবর আলীর জামাই বিদ্যুত হোসেন বলেন,তার শ্বশুড় কৃষি শ্রমিক ছিলেন। গত আড়াই বছর আগে একমাত্র সম্বল ১১শতক জায়গা বিক্রি করে তার সাথে ধার-দেনার টাকায় সৌদি আরবে যান। এখন পর্যন্ত ধার-দেনার টাকা শোধ করতে পারেননি।
শুকবরের দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে বড় ছেলে শামিম হোসেন প্রতিবন্ধি। তার মাথা গোঁজার একমাত্র বাড়ীর তিন শতক জায়গা ছাড়া আর কোন জমি নেই। কিভাবে শ্বাশুড়ী,শ্যালোকদের নিয়ে চলবেন তা নিয়ে ঘোর বিপাকে পরেছেন। শশুর শুকবর আলীই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জণক্ষম ব্যক্তি।
শিকারপুর গ্রামের নিহত যুবক এনামুলের চাচা জাহিদুল ইসলাম জানান,এনামুল গার্মেন্ট শ্রমিক ছিলেন। অনেকটা সুখের আসায় ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে কেবলমাত্র রোজগারের টাকায় ধার-দেনা শোধ করে ইটের বাড়ী নির্মান করছেন। বাড়ীর কাজ শেষ হলে আগামী বছর নাগাদ দেশে এসে বিয়ে করার কথা ছিলো। কিন্তু সেটা তার ভাগ্যে সইলনা। বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ১০টা নাগাদ আগুনে পুরে মারা যাবার খবর আসে। তখন থেকেই একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে বাবা-মা পাথর হয়ে পরেছেন। কিছুতেই যেন তাদেরকে বুঝ দিয়ে থামানো যাচ্ছেনা। নিহতদের তিন পরিবার থেকেই দ্রুত মরদেহ দেশে আনতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আত্রাই উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, নিহতদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা থাকলে তা সহায়তা করতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।