টানা ভারি বর্ষণে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের রাস্তাঘাট, অলিগলিসহ বহু বাসাবাড়ি ও অফিস আদালতে পানি উঠেছে। বিভিন্ন সড়ক ও মহল্লায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গত দুদিন ধরে অব্যাহত ভারি বৃষ্টিতে কক্সবাজারে জনজীবনে ব্যাপক দুর্ভোগ নেমে আসে। টানা এ বৃষ্টিপাতে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) পৃথক সময়ে পাহাড় ধসে কক্সবাজার সদরে ৩ জন নিহত হয়েছেন।
তারা হলেন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জমিলা বেগম (৩০), মো. হাসান (১০) ও কক্সবাজার সদরের মুহুরি পাড়ার লায়লা বেগম (৪৫)। এ ঘটনায় তাঁর শিশু সন্তানও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস বলছে, গতকাল বিকাল ৩টা থেকে আজ বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় মোট ২৪৯ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ ও কাল আরও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
সকালে শহরের বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যেতে দেখা যায়। বেলা গড়াতে বৃষ্টি বাড়ার পাশাপাশি সড়কে বাড়ে পানি। ভোগান্তিতে পড়েন সব শ্রেণির মানুষ। কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতে শহরের কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা এলাকা, বাজারঘাটা, বার্মিজ মার্কেট, পেশকারপাড়া, হাশিমিয়া মাদ্রাসা, পাহাড়তলী, নুরপাড়া, সিটি কলেজ, বৌদ্ধ মন্দির সড়কসহ ঝিলংজার বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে ভোগান্তির সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। এ বৃষ্টিতে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি পর্যন্ত জমে যায়। বৃষ্টির পানি জমে শুধু ভোগান্তি নয়, মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের মতো শহরের নিচু এলাকাগুলো এখন পানিতে থই থই করছে। কোনো কোনো এলাকায় হাঁটু সমান, আবার কোথাও কোমর সমান পানি। ওইসব এলাকায় হাঁটু সমান জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি কমে না আসাতে এখনও কিছু কিছু এলাকার রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে আছে। রাস্তাঘাট-দোকানপাট ও ঘরে পানি ওঠায় মানুষের দিন শুরু হয়েছে দুর্ভোগে। জলাবদ্ধতা নিরসনে কক্সবাজার পৌরসভা কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি সারাদিন।
পাহাড়তলীর ফয়সাল আহমেদ বলেন, বুধবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে তার বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় পানিতে টইটুম্বর। বৃষ্টির পানি তাদের ঘরে ঢুকে পড়ায় আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই অবস্থা তার বাড়ির আশপাশের অনেকের।
জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন, পানিবন্দি মানুষকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলরদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।
শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। তবে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। প্রতি বছর জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে সংস্থাটি। কিন্তু তার তেমন কোনো সুফল মিলছে না। বৃষ্টি হলেই শহরের প্রধান সড়ক থেকে অলি-গলি পর্যন্ত তলিয়ে যাচ্ছে পানিতে। এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেলো কয়েক বছরে নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হয়েছে কক্সবাজার পৌরসভায়। সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ এবং সংস্কারসহ এসব কাজে ব্যয় হয়েছে ১৪৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। কিন্তু এবারের বর্ষার শুরু থেকেই শত শত কোটি টাকার এসব উন্নয়ন কাজে আসছে না স্থানীয়দের। বৃষ্টিতে সড়কের ওপর জমে হাঁটু পরিমাণ পানি। চলে না কোনো যানবাহন। আর ড্রেনের পানি ঢুকে পড়ে পর্যটন শহরের দোকান ও হোটেলের ভেতর।
পৌরসভার টার্মিনাল থেকে বাজার ঘাঁটা পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার সড়কের নিচু অংশ পানিতে ডুবে যায়। এছাড়া নতুন ও সংস্কার করা ২১ দশমিক ৯ কিলোমিটার ড্রেনের পানিও জমে যায় সড়কে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ড্রেনে ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাটের কারণে এমন দুরবস্থা। এছাড়া সময়মতো ড্রেন পরিস্কার না করাকেও দুষছেন তারা।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলমান বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে জলাবদ্ধতায় আরও নাকাল হবে পৌরবাসী। তবে পৌরসভা সংশ্লিষ্টরা জানান, শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনে আরও মাসখানেক আগ থেকেই কাজ শুরু করেছেন। এখন সম্ভাব্য জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকাগুলোর ড্রেন, নালা, খাল পরিষ্কারে কাজ চলছে। আর যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা বেশি হয়, তা সমাধানে আলাদা প্রকল্প নিচ্ছে সংস্থাটি।
আগামী শনিবার বিকাল পর্যন্ত এভাবে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, গেল ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজারে ২৪৯ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ ও কাল দুদিনই ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪
টানা ভারি বর্ষণে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের রাস্তাঘাট, অলিগলিসহ বহু বাসাবাড়ি ও অফিস আদালতে পানি উঠেছে। বিভিন্ন সড়ক ও মহল্লায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গত দুদিন ধরে অব্যাহত ভারি বৃষ্টিতে কক্সবাজারে জনজীবনে ব্যাপক দুর্ভোগ নেমে আসে। টানা এ বৃষ্টিপাতে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) পৃথক সময়ে পাহাড় ধসে কক্সবাজার সদরে ৩ জন নিহত হয়েছেন।
তারা হলেন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জমিলা বেগম (৩০), মো. হাসান (১০) ও কক্সবাজার সদরের মুহুরি পাড়ার লায়লা বেগম (৪৫)। এ ঘটনায় তাঁর শিশু সন্তানও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস বলছে, গতকাল বিকাল ৩টা থেকে আজ বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় মোট ২৪৯ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ ও কাল আরও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
সকালে শহরের বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যেতে দেখা যায়। বেলা গড়াতে বৃষ্টি বাড়ার পাশাপাশি সড়কে বাড়ে পানি। ভোগান্তিতে পড়েন সব শ্রেণির মানুষ। কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতে শহরের কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা এলাকা, বাজারঘাটা, বার্মিজ মার্কেট, পেশকারপাড়া, হাশিমিয়া মাদ্রাসা, পাহাড়তলী, নুরপাড়া, সিটি কলেজ, বৌদ্ধ মন্দির সড়কসহ ঝিলংজার বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে ভোগান্তির সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। এ বৃষ্টিতে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি পর্যন্ত জমে যায়। বৃষ্টির পানি জমে শুধু ভোগান্তি নয়, মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের মতো শহরের নিচু এলাকাগুলো এখন পানিতে থই থই করছে। কোনো কোনো এলাকায় হাঁটু সমান, আবার কোথাও কোমর সমান পানি। ওইসব এলাকায় হাঁটু সমান জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি কমে না আসাতে এখনও কিছু কিছু এলাকার রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে আছে। রাস্তাঘাট-দোকানপাট ও ঘরে পানি ওঠায় মানুষের দিন শুরু হয়েছে দুর্ভোগে। জলাবদ্ধতা নিরসনে কক্সবাজার পৌরসভা কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি সারাদিন।
পাহাড়তলীর ফয়সাল আহমেদ বলেন, বুধবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে তার বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় পানিতে টইটুম্বর। বৃষ্টির পানি তাদের ঘরে ঢুকে পড়ায় আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই অবস্থা তার বাড়ির আশপাশের অনেকের।
জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন, পানিবন্দি মানুষকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলরদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।
শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। তবে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। প্রতি বছর জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে সংস্থাটি। কিন্তু তার তেমন কোনো সুফল মিলছে না। বৃষ্টি হলেই শহরের প্রধান সড়ক থেকে অলি-গলি পর্যন্ত তলিয়ে যাচ্ছে পানিতে। এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেলো কয়েক বছরে নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হয়েছে কক্সবাজার পৌরসভায়। সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ এবং সংস্কারসহ এসব কাজে ব্যয় হয়েছে ১৪৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। কিন্তু এবারের বর্ষার শুরু থেকেই শত শত কোটি টাকার এসব উন্নয়ন কাজে আসছে না স্থানীয়দের। বৃষ্টিতে সড়কের ওপর জমে হাঁটু পরিমাণ পানি। চলে না কোনো যানবাহন। আর ড্রেনের পানি ঢুকে পড়ে পর্যটন শহরের দোকান ও হোটেলের ভেতর।
পৌরসভার টার্মিনাল থেকে বাজার ঘাঁটা পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার সড়কের নিচু অংশ পানিতে ডুবে যায়। এছাড়া নতুন ও সংস্কার করা ২১ দশমিক ৯ কিলোমিটার ড্রেনের পানিও জমে যায় সড়কে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ড্রেনে ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাটের কারণে এমন দুরবস্থা। এছাড়া সময়মতো ড্রেন পরিস্কার না করাকেও দুষছেন তারা।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলমান বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে জলাবদ্ধতায় আরও নাকাল হবে পৌরবাসী। তবে পৌরসভা সংশ্লিষ্টরা জানান, শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনে আরও মাসখানেক আগ থেকেই কাজ শুরু করেছেন। এখন সম্ভাব্য জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকাগুলোর ড্রেন, নালা, খাল পরিষ্কারে কাজ চলছে। আর যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা বেশি হয়, তা সমাধানে আলাদা প্রকল্প নিচ্ছে সংস্থাটি।
আগামী শনিবার বিকাল পর্যন্ত এভাবে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, গেল ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজারে ২৪৯ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ ও কাল দুদিনই ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।