ওরা আমার বুকের মানিককে কেড়ে নিল রে? আমি কী করে বাঁচুম রে? আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল রে? তোরা আমার মানিক রে ফিরাইয়া দে, আমার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে রে। এভাবে বিলাপ করেন কোটা আন্দোলনের সময় ঢাকায় গুলিতে নিহত দোকান কর্মচারী মো. ইউনূছ আলী শাওনের মা কুলসুম বেগম।
পরিবারের দাবি, ইউনূছ আলী শাওন কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে ঢাকার শনিরআখড়ায় একটি প্রসাধনী দোকানের কর্মচারী ছিল। ২০ জুলাই দুপুরে সে দোকান থেকে বাসায় ভাত খেতে আসছিল। এ সময় কোটা আন্দোলন নিয়ে চলা সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় শাওন। শাওন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাগুরী গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে। নিহত শাওনের গ্রামের বাড়ির পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের সঙ্গে কথা হয়।
শাওনের প্রতিবেশী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা হারুনুর রশিদ পাটওয়ারী ও সমাজকর্মী আনোয়ার হোসেন পাটওয়ারীসহ অনেকে তার স্মৃতিচারণ করেন। তারা বলেন, শাওন ভদ্র ছেলে। ঈদে বা বিভিন্ন উৎসবে বাড়িতে বেড়াতে এলেও দোকানে আড্ডা দিত না সে। দোকানে চা খেতে এলে মুরব্বিদের সালাম দিয়ে উঠে জায়গা করে দিত। আর সেই ছেলে গুলিতে প্রাণ যাবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আবুল বাশারের দ্বিতীয় স্ত্রী কুলসুম বেগমের একমাত্র সন্তান শাওন।
প্রথম পক্ষের স্ত্রী দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা গেলে আবুল বাশার কুলসুমকে বিয়ে করেন। প্রথম পক্ষের স্ত্রীর বড় ছেলে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। পরিবার নিয়ে তিনি ঢাকায় থাকেন। যে বেতন পান তা দিয়ে স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণ আর বাসা ভাড়া দিয়ে চলেন তিনি।
প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আরেক ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। শাওনের বাবা গ্রামের রাস্তায় সবজি লাগিয়ে ও অন্যের জমি বর্গা চাষ করে যা পান তা দিয়ে চলে পরিবার। পরিবারে অভাবের কারণে শাওনের পড়ালেখা করা সম্ভব হয়নি। গ্রামের মাদ্রাসা থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ফুপাতো বোনের জামাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় চলে যায় সে। শনিরআখড়া এলাকায় সেই বোন জামাইয়ের প্রসাধনীর দোকানে বিক্রয় কর্মী হিসেবে ছিল শাওন। আট বছর ধরে সে এই দোকানে কাজ করত।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০ জুলাই দুপুরে প্রতিদিনের মতো শাওন দোকান বন্ধ করে খাবার খেতে বাসায় ফিরছিল। দোকানের বাইরে আসার পরপরই দুটি গুলি এসে লাগে শাওনের বুকে ও পেটে। বুকের গুলিটি শরীর ভেদ করে বেরিয়ে যায়। শাওন লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। গুলিবর্ষণ বন্ধ হলে উপস্থিত লোকজন শাওনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের সদস্যরা আরও জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগে শাওন নিজের পকেটে থাকা মোবাইল ফোন দেখিয়ে দিয়ে উদ্ধারকারী একজনকে বলে, আব্বু নামে আমার বাবার মোবাইল নম্বর সেভ করা আছে, আমার খবরটি বাবাকে জানিয়ে দিন। শাওনের কথামতো ওই ব্যক্তি আবুল বাশারকে তার ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর জানান। পরে জানতে পারেন শাওন আর বেঁচে নেই। ঘটনার দুদিন পর বাড়ির সামনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে শাওনকে।
শাওনের মা কুলসুম বেগম বলেন, ওরা আমার বুকের মানিক শাওনকে কেড়ে নিল রে? আমি কী করে বাঁচুম রে? আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল রে? তোরা আমার মানিক রে ফিরিয়ে দে, আমার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে রে। আবুল বাশার জানান, ঘটনার দিন শাওনের মোবাইল ফোন থেকে কল পেয়ে তার মনে আনন্দ দেখা দিলেও মৃত্যুর খবর শুনে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তিনি আরও জানান, শাওন কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে পরিবারে টাকা পাঠিয়ে সহযোগিতা করত।
মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪
ওরা আমার বুকের মানিককে কেড়ে নিল রে? আমি কী করে বাঁচুম রে? আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল রে? তোরা আমার মানিক রে ফিরাইয়া দে, আমার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে রে। এভাবে বিলাপ করেন কোটা আন্দোলনের সময় ঢাকায় গুলিতে নিহত দোকান কর্মচারী মো. ইউনূছ আলী শাওনের মা কুলসুম বেগম।
পরিবারের দাবি, ইউনূছ আলী শাওন কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে ঢাকার শনিরআখড়ায় একটি প্রসাধনী দোকানের কর্মচারী ছিল। ২০ জুলাই দুপুরে সে দোকান থেকে বাসায় ভাত খেতে আসছিল। এ সময় কোটা আন্দোলন নিয়ে চলা সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় শাওন। শাওন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাগুরী গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে। নিহত শাওনের গ্রামের বাড়ির পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের সঙ্গে কথা হয়।
শাওনের প্রতিবেশী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা হারুনুর রশিদ পাটওয়ারী ও সমাজকর্মী আনোয়ার হোসেন পাটওয়ারীসহ অনেকে তার স্মৃতিচারণ করেন। তারা বলেন, শাওন ভদ্র ছেলে। ঈদে বা বিভিন্ন উৎসবে বাড়িতে বেড়াতে এলেও দোকানে আড্ডা দিত না সে। দোকানে চা খেতে এলে মুরব্বিদের সালাম দিয়ে উঠে জায়গা করে দিত। আর সেই ছেলে গুলিতে প্রাণ যাবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আবুল বাশারের দ্বিতীয় স্ত্রী কুলসুম বেগমের একমাত্র সন্তান শাওন।
প্রথম পক্ষের স্ত্রী দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা গেলে আবুল বাশার কুলসুমকে বিয়ে করেন। প্রথম পক্ষের স্ত্রীর বড় ছেলে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। পরিবার নিয়ে তিনি ঢাকায় থাকেন। যে বেতন পান তা দিয়ে স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণ আর বাসা ভাড়া দিয়ে চলেন তিনি।
প্রথম পক্ষের স্ত্রীর আরেক ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। শাওনের বাবা গ্রামের রাস্তায় সবজি লাগিয়ে ও অন্যের জমি বর্গা চাষ করে যা পান তা দিয়ে চলে পরিবার। পরিবারে অভাবের কারণে শাওনের পড়ালেখা করা সম্ভব হয়নি। গ্রামের মাদ্রাসা থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ফুপাতো বোনের জামাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় চলে যায় সে। শনিরআখড়া এলাকায় সেই বোন জামাইয়ের প্রসাধনীর দোকানে বিক্রয় কর্মী হিসেবে ছিল শাওন। আট বছর ধরে সে এই দোকানে কাজ করত।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০ জুলাই দুপুরে প্রতিদিনের মতো শাওন দোকান বন্ধ করে খাবার খেতে বাসায় ফিরছিল। দোকানের বাইরে আসার পরপরই দুটি গুলি এসে লাগে শাওনের বুকে ও পেটে। বুকের গুলিটি শরীর ভেদ করে বেরিয়ে যায়। শাওন লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। গুলিবর্ষণ বন্ধ হলে উপস্থিত লোকজন শাওনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের সদস্যরা আরও জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগে শাওন নিজের পকেটে থাকা মোবাইল ফোন দেখিয়ে দিয়ে উদ্ধারকারী একজনকে বলে, আব্বু নামে আমার বাবার মোবাইল নম্বর সেভ করা আছে, আমার খবরটি বাবাকে জানিয়ে দিন। শাওনের কথামতো ওই ব্যক্তি আবুল বাশারকে তার ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর জানান। পরে জানতে পারেন শাওন আর বেঁচে নেই। ঘটনার দুদিন পর বাড়ির সামনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে শাওনকে।
শাওনের মা কুলসুম বেগম বলেন, ওরা আমার বুকের মানিক শাওনকে কেড়ে নিল রে? আমি কী করে বাঁচুম রে? আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল রে? তোরা আমার মানিক রে ফিরিয়ে দে, আমার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে রে। আবুল বাশার জানান, ঘটনার দিন শাওনের মোবাইল ফোন থেকে কল পেয়ে তার মনে আনন্দ দেখা দিলেও মৃত্যুর খবর শুনে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তিনি আরও জানান, শাওন কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে পরিবারে টাকা পাঠিয়ে সহযোগিতা করত।