ভাঙ্গন গর্তে পরে জানমালের ক্ষতির শংকা, রাতে ছিনতাইয়ের আতংক। এ বাস্তবতায় চলছে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন প্রকল্পের সড়কে যানচালাচল।
বিকল্প সড়ক হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আভ্যন্তরিণ সড়ক, এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানযট। প্রকল্পের কাজ কবে শুরু হবে তা ও অনিশ্চিত। জন দূর্ভোগ দিন দিন বাড়ছেই।
এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ অন্যান্য জেলার শত শত যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী পরিবহন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত এই চার লেন প্রকল্পের কাজ চলছিল। সরকার পরিবর্তনের পর গত ১০ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বর্তমানে কাজ বন্ধ আছে। সাময়িক চলাচল উপযোগী করার মতো পদক্ষেপও নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তা বলছেন, এতে তাদের করণীয় কিছু নেই। প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ বলেছেন, ‘এটি নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে তা আমরা এখনো জানি না।’ বর্তমানে এই সড়কটি যেন অভিভাবকহীন।
উষ্ণ দিনে ধূলিকনায় যেন মরুভুমি, টানা বৃষ্টির পানিতে সড়কের বড় বড় গর্ত গুলো ডোবার আকার ধারণ করেছে। এর ওপর দিয়েই চলছে গাড়ি। সড়কের কোথাও উল্টে পড়ছে ট্রাক-বাস বা অন্য কোনো যান। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। একটি গাড়ি বেকায়দায় পড়লে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। শেষ নেই দুর্ভোগের ।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার এই সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। যা ফোরলেন প্রকল্প নামে পরিচিত। ভারতীয় ঋণ সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের ৩০শে জুন।
শুরু থেকে নানা কারণে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গত ১০ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা কবে ফিরবেন, কবে আবার কাজ শুরু হবে সবই অনিশ্চিত।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ৩টি প্যাকেজে এই কাজ চলছে। এরমধ্যে আশুগঞ্জ থেকে সরাইল মোড় পর্যন্ত ১ নম্বর প্যাকেজের কাজ হয়েছে ৬২ ভাগ। দ্বিতীয় প্যাকেজ সরাইল মোড় থেকে আখাউড়া তন্তর পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫২ ভাগ। আর তৃতীয় প্যাকেজে থাকা তন্তর থেকে আখাউড়া পর্যন্ত কাজ শুরুই হয়নি। গড়ে সড়কের কাজ ৫০ ভাগ হয়েছে। বর্তমানে আশুগঞ্জ গোল চত্বর থেকে তন্তন পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে প্রায় ৪ কিলোমিটার অংশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
মাইক্রোচালক পাভেল ভূইয়া জানান, ‘পুরো সড়ক গর্তে ভরা। কখন গাড়ি গর্তে আটকে যাই, সেই আতংকে থাকি। গাড়ি চালাতে হয় খুবই আস্তে-ধীরে। আস্তে চালাতে আবার ভয় করে ছিনতাইকারী এসে না ধরে। রাতে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘঠেছে এই সড়কে।’
সিএনজি চালক মনির মিয়া বলেন, ‘মালিককে প্রতিদিন পাচঁশত টাকা জমা দিতে হয়। আবার জামে পড়লে আদা-বেলা এখানেই শেষ। জামের কারণে সারাদিনে মালিকের জমার টাকাই রুজি করতে পারি না। নিজের পরিবারে জন্য কি রুজি করুম, খুব কষ্টে আছি।’
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ বলেন, ‘এটি নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে তা আমরা এখনো জানি না। এটি ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছিল। তারা সবাই সেফটি ইস্যুতে নিজের দেশে চলে গেছেন। তবে মাল-মেটার, মেশিনপত্র সবই রয়েছে। কবে আসবেন সেটা বলছেন না। যেহেতু রাস্তাটা প্রজেক্টের আন্ডারে ঠিকাদারের কাছে ছিল। এর যাবতীয় মেইনটেন্যান্স বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ তাদের হাতেই ছিল। তারা যেহেতু চলে গেছে রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ করার উপায় এই মুহূর্তে কারও হাতেই নেই। এর বাইরেও আমরা বিষয়টি চিফ স্যার এবং সচিব স্যারকে বলার চেষ্টা করছি। রাস্তার যে অংশটা বাকি আছে সেটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক বিভাগের মাধ্যমে করানোর জন্যে এর ইষ্টিমিটসহ চিফ স্যারের কাছে চিঠিপত্র পাঠিয়েছি। রাইট নাউ ফান্ড বা কোনোকিছুই যেহেতু নেই আমরা হয়তো ২-৪টা লেবার দিচ্ছি, মেশিন ভাড়া করে মালমেটার দিচ্ছি যা অপ্রতুল। এভাবে কিছু করে রাস্তার কিছু করাও সম্ভব নয়।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, এতে তাদের করণীয় কিছু নেই। কাজ করলে প্রকল্পের মাধ্যমে করতে হবে। এই ৪ কিলোমিটার অংশ স্বল্প মেয়াদি মেরামতে ১৫ কোটি টাকা প্রয়োজন।
বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ভাঙ্গন গর্তে পরে জানমালের ক্ষতির শংকা, রাতে ছিনতাইয়ের আতংক। এ বাস্তবতায় চলছে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন প্রকল্পের সড়কে যানচালাচল।
বিকল্প সড়ক হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আভ্যন্তরিণ সড়ক, এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানযট। প্রকল্পের কাজ কবে শুরু হবে তা ও অনিশ্চিত। জন দূর্ভোগ দিন দিন বাড়ছেই।
এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ অন্যান্য জেলার শত শত যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী পরিবহন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত এই চার লেন প্রকল্পের কাজ চলছিল। সরকার পরিবর্তনের পর গত ১০ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বর্তমানে কাজ বন্ধ আছে। সাময়িক চলাচল উপযোগী করার মতো পদক্ষেপও নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তা বলছেন, এতে তাদের করণীয় কিছু নেই। প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ বলেছেন, ‘এটি নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে তা আমরা এখনো জানি না।’ বর্তমানে এই সড়কটি যেন অভিভাবকহীন।
উষ্ণ দিনে ধূলিকনায় যেন মরুভুমি, টানা বৃষ্টির পানিতে সড়কের বড় বড় গর্ত গুলো ডোবার আকার ধারণ করেছে। এর ওপর দিয়েই চলছে গাড়ি। সড়কের কোথাও উল্টে পড়ছে ট্রাক-বাস বা অন্য কোনো যান। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। একটি গাড়ি বেকায়দায় পড়লে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। শেষ নেই দুর্ভোগের ।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার এই সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। যা ফোরলেন প্রকল্প নামে পরিচিত। ভারতীয় ঋণ সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের ৩০শে জুন।
শুরু থেকে নানা কারণে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গত ১০ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা কবে ফিরবেন, কবে আবার কাজ শুরু হবে সবই অনিশ্চিত।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ৩টি প্যাকেজে এই কাজ চলছে। এরমধ্যে আশুগঞ্জ থেকে সরাইল মোড় পর্যন্ত ১ নম্বর প্যাকেজের কাজ হয়েছে ৬২ ভাগ। দ্বিতীয় প্যাকেজ সরাইল মোড় থেকে আখাউড়া তন্তর পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫২ ভাগ। আর তৃতীয় প্যাকেজে থাকা তন্তর থেকে আখাউড়া পর্যন্ত কাজ শুরুই হয়নি। গড়ে সড়কের কাজ ৫০ ভাগ হয়েছে। বর্তমানে আশুগঞ্জ গোল চত্বর থেকে তন্তন পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে প্রায় ৪ কিলোমিটার অংশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
মাইক্রোচালক পাভেল ভূইয়া জানান, ‘পুরো সড়ক গর্তে ভরা। কখন গাড়ি গর্তে আটকে যাই, সেই আতংকে থাকি। গাড়ি চালাতে হয় খুবই আস্তে-ধীরে। আস্তে চালাতে আবার ভয় করে ছিনতাইকারী এসে না ধরে। রাতে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘঠেছে এই সড়কে।’
সিএনজি চালক মনির মিয়া বলেন, ‘মালিককে প্রতিদিন পাচঁশত টাকা জমা দিতে হয়। আবার জামে পড়লে আদা-বেলা এখানেই শেষ। জামের কারণে সারাদিনে মালিকের জমার টাকাই রুজি করতে পারি না। নিজের পরিবারে জন্য কি রুজি করুম, খুব কষ্টে আছি।’
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ বলেন, ‘এটি নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে তা আমরা এখনো জানি না। এটি ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছিল। তারা সবাই সেফটি ইস্যুতে নিজের দেশে চলে গেছেন। তবে মাল-মেটার, মেশিনপত্র সবই রয়েছে। কবে আসবেন সেটা বলছেন না। যেহেতু রাস্তাটা প্রজেক্টের আন্ডারে ঠিকাদারের কাছে ছিল। এর যাবতীয় মেইনটেন্যান্স বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ তাদের হাতেই ছিল। তারা যেহেতু চলে গেছে রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ করার উপায় এই মুহূর্তে কারও হাতেই নেই। এর বাইরেও আমরা বিষয়টি চিফ স্যার এবং সচিব স্যারকে বলার চেষ্টা করছি। রাস্তার যে অংশটা বাকি আছে সেটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক বিভাগের মাধ্যমে করানোর জন্যে এর ইষ্টিমিটসহ চিফ স্যারের কাছে চিঠিপত্র পাঠিয়েছি। রাইট নাউ ফান্ড বা কোনোকিছুই যেহেতু নেই আমরা হয়তো ২-৪টা লেবার দিচ্ছি, মেশিন ভাড়া করে মালমেটার দিচ্ছি যা অপ্রতুল। এভাবে কিছু করে রাস্তার কিছু করাও সম্ভব নয়।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, এতে তাদের করণীয় কিছু নেই। কাজ করলে প্রকল্পের মাধ্যমে করতে হবে। এই ৪ কিলোমিটার অংশ স্বল্প মেয়াদি মেরামতে ১৫ কোটি টাকা প্রয়োজন।