টানা বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীর উজানের পানি কমলেও ভাটিতে সদর ও নকলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
রোববার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় বন্যার্তদের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে।
এখনও পাঁচ উপজেলার কমপক্ষে শতাধিক গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে রয়েছে। অসংখ্য বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মাছের খামার থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ায় খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এদিকে পানিতে ভেসে নিখোঁজ দুইজনের লাশ মেলায় এই বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে পাঁচ হয়েছে।
শুক্রবার রাতে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বের হয়ে নিখোঁজ হওয়া নালিতাবাড়ী উপজেলার অভয়নগর গ্রামের বাছির উদ্দিনের ছেলে দুই ছেলে আবু হাতেম (৩০) ও আলমগীর (১৭) এর লাশ শনিবার ওই এলাকার একটি ধান ক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বাতকুচি গ্রামের আব্দুল হাকিমের স্ত্রী জহুরা খাতুন (৪৫)। এছাড়া ঝিনাইগাতীর সন্ধ্যাকুড়া এলাকায় বন্যার পানিতে ভেসে এসেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির অজ্ঞাত এক নারীর গলিত লাশ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর পানি কমে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং চেল্লাখালী নদীর পানি কমে বিপদসীমার ১৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যায় জেলায় ৭ হাজার ৬৯৬ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান সম্পূর্ণ এবং ৯ হাজার ৬৯৩ হেক্টর জমির রোপা আমন আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে।
এছাড়া ২০৮ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণ এবং ৪১৩ হেক্টর আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যায় ৬৫ হাজার ৪০০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে শেরপুর থেকে তিনআনী হয়ে নালিতাবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের রানীগাঁও সেতুর কাছে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় শনিবার দুপুর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
শেরপুর থেকে গাজীর খামার হয়ে নালিতাবাড়ীগামী রাস্তার কলসপাড় ইউনিয়নের চারটি স্থানের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ওই সড়কে যানবাহন ও মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
এছাড়া নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়কসহ জেলার অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১০টি সড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
টানা বৃষ্টির সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের এই বন্যা দেখা দেয়। অনেক স্থানে পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবল তোড়ে ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি, গাছপালা। পানি উঠায় অনেকের বাড়িতে চুলা জ্বলছে না। পরিবারগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
অনেকে নিরাপদ স্থানে ও আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বন্যার্ত এলাকার অনেকের অভিযোগ তারা কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা পাননি।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান রোববার সকালে বলেন, শনিবার রাতে ভারী বৃষ্টি হয়নি। তবে রোববার সকাল থেকে আবার বৃষ্টি হচ্ছে।
পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য এবং উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কাজ করছেন। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা পুরোদমে চলছে।
বন্যার্তদের সহায়তার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বানভাসি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য ১৭টি মেডিকেল টিম এলাকায় কাজ করছে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে বন্যার্তদের চিকিৎসা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
রোববার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪
টানা বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীর উজানের পানি কমলেও ভাটিতে সদর ও নকলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
রোববার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় বন্যার্তদের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে।
এখনও পাঁচ উপজেলার কমপক্ষে শতাধিক গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে রয়েছে। অসংখ্য বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মাছের খামার থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ায় খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এদিকে পানিতে ভেসে নিখোঁজ দুইজনের লাশ মেলায় এই বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে পাঁচ হয়েছে।
শুক্রবার রাতে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বের হয়ে নিখোঁজ হওয়া নালিতাবাড়ী উপজেলার অভয়নগর গ্রামের বাছির উদ্দিনের ছেলে দুই ছেলে আবু হাতেম (৩০) ও আলমগীর (১৭) এর লাশ শনিবার ওই এলাকার একটি ধান ক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বাতকুচি গ্রামের আব্দুল হাকিমের স্ত্রী জহুরা খাতুন (৪৫)। এছাড়া ঝিনাইগাতীর সন্ধ্যাকুড়া এলাকায় বন্যার পানিতে ভেসে এসেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির অজ্ঞাত এক নারীর গলিত লাশ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর পানি কমে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং চেল্লাখালী নদীর পানি কমে বিপদসীমার ১৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যায় জেলায় ৭ হাজার ৬৯৬ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান সম্পূর্ণ এবং ৯ হাজার ৬৯৩ হেক্টর জমির রোপা আমন আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে।
এছাড়া ২০৮ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণ এবং ৪১৩ হেক্টর আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যায় ৬৫ হাজার ৪০০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে শেরপুর থেকে তিনআনী হয়ে নালিতাবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের রানীগাঁও সেতুর কাছে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় শনিবার দুপুর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
শেরপুর থেকে গাজীর খামার হয়ে নালিতাবাড়ীগামী রাস্তার কলসপাড় ইউনিয়নের চারটি স্থানের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ওই সড়কে যানবাহন ও মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
এছাড়া নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়কসহ জেলার অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১০টি সড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
টানা বৃষ্টির সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের এই বন্যা দেখা দেয়। অনেক স্থানে পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবল তোড়ে ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি, গাছপালা। পানি উঠায় অনেকের বাড়িতে চুলা জ্বলছে না। পরিবারগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
অনেকে নিরাপদ স্থানে ও আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বন্যার্ত এলাকার অনেকের অভিযোগ তারা কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা পাননি।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান রোববার সকালে বলেন, শনিবার রাতে ভারী বৃষ্টি হয়নি। তবে রোববার সকাল থেকে আবার বৃষ্টি হচ্ছে।
পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য এবং উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কাজ করছেন। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা পুরোদমে চলছে।
বন্যার্তদের সহায়তার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বানভাসি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য ১৭টি মেডিকেল টিম এলাকায় কাজ করছে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে বন্যার্তদের চিকিৎসা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।