অবিশ্বাস্য গতিতে ছুটছে সব ধরনের সবজির দাম। রাজধানী ও উৎপাদন অঞ্চলের দামে খুব একটা পার্থক্য নেই। কাঁচা মরিচ, টমেটো, পেঁপে রাজধানী এবং যেখানে উৎপাদন হয় দুই জায়গায়ই একই দামে বিক্রি হচ্ছে। শশা ও করোলার দামে কয়েক টাকার ব্যাবধান। বাকি সবজির দামের ব্যাবধান বেশি।
উৎপাদন এলাকা রংপুর ও গাইবান্দায় সব ধরনের সবজির দামই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দাম বেশি হওয়ায় কারণে মফস্বলের ক্রেতা ও বিক্রেতা দুইপক্ষই ‘অস্বস্তিতে’। তবে স্থানীয় ক্রেতারা সরকারের বাজার ‘তদারকি না থাকাকে’ দুষছেন।
কৃষকরা বলছেন, টানা বর্ষা ও বন্যার কারণে খেতে সবজি নষ্ট হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে উৎপাদন কমে গিয়েছে। ক্ষেতে ফুল এলেও বৃষ্টির কারণে মরে ঝরে পড়েছে। আবার টিকে যাওয়া ফলও কয়েক দিন পর পচে যাচ্ছে। কোনো কীটনাশকেও কাজে আসছে না। এতে সবজির উৎপাদনে ‘বিপর্যয়’ ঘটেছে। স্থানীয় হাটগুলোতে সবজির সরবরাহ কমে গেছে।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা হাট বাজারে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৪০০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, করোল্লা ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ১২০ টাকা, লাল শাক ৩ আটি ২০ টাকা, আলু কার্ডিনাল ৫৫ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, পেয়াঁজ ১১০ টাকা, ওল ৮০ টাকা ও লাউ এক পিছ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল রাজধানী শ্যামলী কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সেখানে বেগুন এক কেজি ১৬০-২২০ টাকা, পটল ১০০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, শশা ৮০ টাকা, করোল্লা ১০০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, মুলা ১০০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০০ টাকা, ঝিঙ্গা ১০০ টাকা, সিম ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষকরা বলছেন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ঝড় ও অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষেত আবার ফসল উৎপাদনের উপযোগী করতে সময় লেগে যায়। অতি বৃষ্টির কারণে ফলনের উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হয়েও উৎপাদন কম হয়েছে।
আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে কৃষকরা বার বার প্রাকৃতির দুর্যোগের মধ্যে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা।
রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার জামালপুর গ্রামের বেগুন চাষি এমামুল হক বলেন, ‘এই বছর কাঁচামালের দাম পেয়ে ভালো নাগচে (লাগছে)। একমন বাগুন (বেগুন) ২৫শ’ থেকে ২৭শ’ ট্যাকায় বিক্রি করেছি। তবে, আগের বছর গুলার (অন্যান্য বছরের) তুলনায় এবছর বাগুনের (বেগুনের) আবাদ কম হচে (হয়েছে)।’
কারণ হিসেবে তিনি জানালেন, বাগুন (বেগুন) গাছত (গাছে) ফল আসার আগেই পাতা হলদ্যা (হলুদ) হয়া (হয়ে) কুকুড়ে যায়, এছাড়া গাছের মাথাত (মাথায়) জট নাগে (লেগে যায়)। যার (যে) কারণে এই এলাকাত (এলাকায়) এবার বাগুনের (বেগুনের) আবাদ কম হচ্ছে (হয়েছে)।
সেখানকারই আরেক কৃষক আলতাব হোসেন বলেন, ‘প্রচণ্ড তাপমাত্রায় একসময় সবজি গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। আবার তাপমাত্রা যখন কমেছে তখন অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষেতের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। গাছে পচন ধরেছে, ফলনও কম হয়েছে।’
মোকছেদ আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘শীতকালিন সবজি শীমের আবাদও ভালো হচ্ছে না। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ক্ষেতেই শীম গাছের পাতায় হলুদ রং দেখা দিয়েছ। তাই এখন মনে হচ্ছে শিম চাষিরাও ভালো দামে বিক্রি করতে পারলেও ফলন ভালো পাওয়া যাবে না।’
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপের হাটের কৃষক মো. সোলেমান আলী বলেন, ‘বৃষ্টিতে হামার ভিউ (ক্ষেতের) ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে হাটে সবজি আসা (সরবরাহ) কমে গেছে। এ কারণেই সব প্রকার সবজির দাম বেড়ে গেছে। এখানকার ধাপেরহাট হাটে আগে ট্রাকে ট্রাকে সবজির ট্রাক অনলোড হতো। এখন সেটা চোখে পড়ে না।’
এই এলাকার বেশির ভাগ সবজি ক্ষেত ‘নষ্ট’ হয়ে গেছে বলে জানান গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পাটোয়া গ্রামের কৃষক মো. শাহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মাসখানেক ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিই ফসল নষ্টের মুল কারণ। ক্ষেতের জমিতে পানি জমে মরিচ, বেগুনসহ সব ধরনের সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। ভালো উৎপাদন না হওয়ায় এখানকার বাজারেও সরবরাহ নেই।’
স্থানীয় চতরা হাটের সবজি খুচরা বিক্রেতা লাবলু মিয়া, সিরাজুল ইসলাম, মাসুদ মিয়া জানান, কম দামের কাচামাল (সবজি বা অনান্য নিত্যপণ্য) কিনতে পারলে কমদামেই বিক্রি করা যায়। কিন্ত পাইকারি হাটে চাষিরা এক বস্তা কাঁচামাল নিয়ে আসলে খুচরা বিক্রেতারা তার চারপাশে ঘিরে ধরে। প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়, কে কত দাম দিয়ে আগে কিনতে পারে।
তবে, বাজারে স্থানীয় চাহিদা পুরণের জন্য যে পরিমাণ পণ্যের প্রয়োজন সেই পরিমাণ পণ্য হাটে উঠে না, তাই স্থানীয় বাজারেও দাম বাড়ার কথা জানান স্থানীয় খুচরা বিক্রেতারা।
শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
অবিশ্বাস্য গতিতে ছুটছে সব ধরনের সবজির দাম। রাজধানী ও উৎপাদন অঞ্চলের দামে খুব একটা পার্থক্য নেই। কাঁচা মরিচ, টমেটো, পেঁপে রাজধানী এবং যেখানে উৎপাদন হয় দুই জায়গায়ই একই দামে বিক্রি হচ্ছে। শশা ও করোলার দামে কয়েক টাকার ব্যাবধান। বাকি সবজির দামের ব্যাবধান বেশি।
উৎপাদন এলাকা রংপুর ও গাইবান্দায় সব ধরনের সবজির দামই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দাম বেশি হওয়ায় কারণে মফস্বলের ক্রেতা ও বিক্রেতা দুইপক্ষই ‘অস্বস্তিতে’। তবে স্থানীয় ক্রেতারা সরকারের বাজার ‘তদারকি না থাকাকে’ দুষছেন।
কৃষকরা বলছেন, টানা বর্ষা ও বন্যার কারণে খেতে সবজি নষ্ট হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে উৎপাদন কমে গিয়েছে। ক্ষেতে ফুল এলেও বৃষ্টির কারণে মরে ঝরে পড়েছে। আবার টিকে যাওয়া ফলও কয়েক দিন পর পচে যাচ্ছে। কোনো কীটনাশকেও কাজে আসছে না। এতে সবজির উৎপাদনে ‘বিপর্যয়’ ঘটেছে। স্থানীয় হাটগুলোতে সবজির সরবরাহ কমে গেছে।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা হাট বাজারে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৪০০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, করোল্লা ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ১২০ টাকা, লাল শাক ৩ আটি ২০ টাকা, আলু কার্ডিনাল ৫৫ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, পেয়াঁজ ১১০ টাকা, ওল ৮০ টাকা ও লাউ এক পিছ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল রাজধানী শ্যামলী কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সেখানে বেগুন এক কেজি ১৬০-২২০ টাকা, পটল ১০০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, শশা ৮০ টাকা, করোল্লা ১০০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, মুলা ১০০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০০ টাকা, ঝিঙ্গা ১০০ টাকা, সিম ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষকরা বলছেন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ঝড় ও অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষেত আবার ফসল উৎপাদনের উপযোগী করতে সময় লেগে যায়। অতি বৃষ্টির কারণে ফলনের উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হয়েও উৎপাদন কম হয়েছে।
আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে কৃষকরা বার বার প্রাকৃতির দুর্যোগের মধ্যে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা।
রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার জামালপুর গ্রামের বেগুন চাষি এমামুল হক বলেন, ‘এই বছর কাঁচামালের দাম পেয়ে ভালো নাগচে (লাগছে)। একমন বাগুন (বেগুন) ২৫শ’ থেকে ২৭শ’ ট্যাকায় বিক্রি করেছি। তবে, আগের বছর গুলার (অন্যান্য বছরের) তুলনায় এবছর বাগুনের (বেগুনের) আবাদ কম হচে (হয়েছে)।’
কারণ হিসেবে তিনি জানালেন, বাগুন (বেগুন) গাছত (গাছে) ফল আসার আগেই পাতা হলদ্যা (হলুদ) হয়া (হয়ে) কুকুড়ে যায়, এছাড়া গাছের মাথাত (মাথায়) জট নাগে (লেগে যায়)। যার (যে) কারণে এই এলাকাত (এলাকায়) এবার বাগুনের (বেগুনের) আবাদ কম হচ্ছে (হয়েছে)।
সেখানকারই আরেক কৃষক আলতাব হোসেন বলেন, ‘প্রচণ্ড তাপমাত্রায় একসময় সবজি গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। আবার তাপমাত্রা যখন কমেছে তখন অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষেতের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। গাছে পচন ধরেছে, ফলনও কম হয়েছে।’
মোকছেদ আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘শীতকালিন সবজি শীমের আবাদও ভালো হচ্ছে না। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ক্ষেতেই শীম গাছের পাতায় হলুদ রং দেখা দিয়েছ। তাই এখন মনে হচ্ছে শিম চাষিরাও ভালো দামে বিক্রি করতে পারলেও ফলন ভালো পাওয়া যাবে না।’
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপের হাটের কৃষক মো. সোলেমান আলী বলেন, ‘বৃষ্টিতে হামার ভিউ (ক্ষেতের) ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে হাটে সবজি আসা (সরবরাহ) কমে গেছে। এ কারণেই সব প্রকার সবজির দাম বেড়ে গেছে। এখানকার ধাপেরহাট হাটে আগে ট্রাকে ট্রাকে সবজির ট্রাক অনলোড হতো। এখন সেটা চোখে পড়ে না।’
এই এলাকার বেশির ভাগ সবজি ক্ষেত ‘নষ্ট’ হয়ে গেছে বলে জানান গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পাটোয়া গ্রামের কৃষক মো. শাহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মাসখানেক ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিই ফসল নষ্টের মুল কারণ। ক্ষেতের জমিতে পানি জমে মরিচ, বেগুনসহ সব ধরনের সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। ভালো উৎপাদন না হওয়ায় এখানকার বাজারেও সরবরাহ নেই।’
স্থানীয় চতরা হাটের সবজি খুচরা বিক্রেতা লাবলু মিয়া, সিরাজুল ইসলাম, মাসুদ মিয়া জানান, কম দামের কাচামাল (সবজি বা অনান্য নিত্যপণ্য) কিনতে পারলে কমদামেই বিক্রি করা যায়। কিন্ত পাইকারি হাটে চাষিরা এক বস্তা কাঁচামাল নিয়ে আসলে খুচরা বিক্রেতারা তার চারপাশে ঘিরে ধরে। প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়, কে কত দাম দিয়ে আগে কিনতে পারে।
তবে, বাজারে স্থানীয় চাহিদা পুরণের জন্য যে পরিমাণ পণ্যের প্রয়োজন সেই পরিমাণ পণ্য হাটে উঠে না, তাই স্থানীয় বাজারেও দাম বাড়ার কথা জানান স্থানীয় খুচরা বিক্রেতারা।