alt

সারাদেশ

বাঁশখালীতে ২০০শ’ একর উপকূলীয় বনভূমি দীর্ঘদিন বেদখল

মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ ছানুবী , বাঁশখালী, চট্টগ্রাম : সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

https://sangbad.net.bd/images/2024/October/21Oct24/news/1.jpeg

https://sangbad.net.bd/images/2024/October/21Oct24/news/40.jpg

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পশ্চিম খুদুকখালীর উপকূলীয় বনবিভাগের ২০০শ একর বনভূমি বেদখলে হয়েছে। ভুয়া খতিয়ান সৃজন করে ৯৯ একর ভূমি বিক্রি করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যানের সন্তানরা। বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমানের ছেলে সায়ান এফ রহমানের নামে কেনা হয় ওই ৯৯ একর ভূমি। সরকারিভাবে সৃজিত কোটি টাকার প্যারাবন ধ্বংস করে লবণ মাঠ ও চিংড়ি ঘের তৈরি করা হয় ওই বনভূমিতে। স্থানীয় বনবিভাগ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি পাঠালেও ‘রহস্যজনক’ কারণে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছেনা।

উপকূলীয় বনবিভাগের শুধুমাত্র খুদুকখালী এলাকায় দুই শত একর বনভূমি প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। জাল বিএস খতিয়ান তৈরি করে ও প্রভাব খাটিয়ে এসব জমি জবরদখলে রেখেছেন প্রভাবশালীরা। বনভূমির এসব জায়গায় পুকুর খনন করে মাছ চাষ, চিংড়ি ঘের ও লবণ চাষ করা হচ্ছে।

অর্ধশত বছর আইনী লড়াইয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পাওয়ার পরও ওই জমি উদ্বারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি জেলা প্রশাসন।

জানা যায়, উপকূলীয় বন বিভাগের ছনুয়া রেঞ্জ এর খুদুকখালী মৌজায় সাগরতীরের ভূমিতে ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে বিভিন্ন ধাপে বনবিভাগ কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজন করে। ২০০৯ সালের ১ ডিসেম্বর ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে ৮০/৯০ জন লোক উপকূলীয় বন বিভাগের ১ লক্ষ ৮০ হাজার গাছ কেটে ২০০শ একর ভূমি দখল করে নেয়। আনুমানিক ২ কোটি টাকা মূল্যের বাইন ও কেওড়া গাছ কেটে সাবাড় করে ওই জায়গায় চিংড়ি ঘের ও লবণ চাষের জন্য অবৈধভাবে ঘের স্থাপনও করেন তারা। এ ঘটনায় বাঁশখালী থানায় মামলা (নং-০১/২০০৯) করা হয়।

পরে হাইকোর্ট ওইসব কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে চিংড়ি ঘের ও লবণ চাষের ক্ষেত্র প্রস্তুত, স্ক্যাভেটর দিয়ে পুকুর খনন, লোনা পানি প্রবেশ ও লেবার শেড নির্মাণ করায় ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা বাঁশখালী থানায় মামলা (নং-৮/৩৪ ) করেন।

উপকূলীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খুদুকখালী মৌজার ৬ ও ১০০১ দাগের প্রায় ৯০ একর জমি (সরকারি বিজ্ঞপ্তি নং- ফর-১৩- ১৯/৮৪/৯০৮) বন বিভাগকে হস্তান্তর করা হয়। একই দাগের প্রায় ১৬ একর জমিকে বন আইনের ৬ ধারা জারি করে রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করা হয়। ফ্রেন্ডস ইন্ডাস্ট্রিয়াল করপোরেশনের ইজারা বাতিল এবং বন বিভাগের অনুকূলে হস্তান্তর করার নির্দেশনা দেয়া হয় (ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ৮-৪৬১/৮৬/৫৪ তারিখ ২/২/৮৮)।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর জাল বিএস খতিয়ান তৈরি করে উপকূলীয় বন বিভাগের ছনুয়া রেঞ্জ এর খুদুকখালী মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের ৯৯ একর জমি বিক্রি করে দেন ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ ও সাবেক চেয়ারম্যান বশির আহমদের ছেলেরা। ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমান এস্কর্প হোল্ডিংস লিমিটেড এর পক্ষে ওই জমি কিনে নেন। আইনি লড়াইয়ে উপকূলীয় বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসন উক্ত জমি ফিরে পেলেও এখনও দখলমুক্ত করতে পারেনি।

মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উপকূলীয় বন বিভাগের ছনুয়া রেঞ্জ এর খুদুকখালী মৌজার খাস খতিয়ানভুক্ত ৯০ একর জমি নারকেল বাগান করার শর্তে ২৫ বছরের জন্য ইজারা নেয় ‘ফ্রেন্ডস ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। জেলা প্রশাসন ১৯৬৬ সালে শীষ মোহাম্মদ ও বশির আহমদকে এই ইজারা দেয়। কিন্তু নারকেল বাগান না করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা লবণ মাঠ ও চিংড়ি ঘের এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহার করেন।

ইজারার শর্ত ভাঙার অভিযোগে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ১৯৬৭ সালে ইজারা বাতিল করেন। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে ইজারাগ্রহীতারা ভূমি আপিল বোর্ডে আপিল করেন। বোর্ড ইজারাদারকে লবণ মাঠ না করে নারকেল বাগান করার নির্দেশ দিয়ে ইজারা বহাল রাখেন।

এসব জমির ইজারা দেওয়া ও বাতিল নিয়ে বিভিন্ন সময় ইজারাদার পক্ষ ও জেলা প্রশাসন আইনি লড়াইয়ে যুক্ত হয়। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারি জমির ইজারা বাতিল করে জেলা প্রশাসনের পক্ষে রায় দিয়ে ওই জমি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ফ্রেন্ডস ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন প্রশাসনের কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে জমির স্থায়ী বন্দোবস্তের খতিয়ান তৈরী করে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে জানার পর জেলা প্রশাসকের পক্ষে সরেজমিনে তদন্ত করা হয়।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন ১৯৮৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ভূমি মন্ত্রণালয় ১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠি বিভাগীয় কমিশনার বরাবর পাঠায়। চিঠিতে জমির ইজারা বাতিল এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন বিভাগে অভিযোগ করার কথা বলা হয়।

এর আগে ইজারা বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে ফ্রেন্ডস ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন ১৯৮১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মামলা করে। চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ১৯৯১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইজারাগ্রহীতার পক্ষে রায় দেয়। প্রশাসন নিম্ন আদালতের এই আদেশ খারিজ করার জন্য জেলা জজ আদালতে মামলা করে। শুনানি শেষে জেলা জজ আদালত ১৯৯৪ সালের ২৩ অক্টোবর প্রশাসনের আবেদন বাতিল করে।

আদালতের এই রায় চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৫ সালে প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিভিশন মামলা দায়ের করে। নানা ধাপ শেষে ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট আপিল বিভাগ ইজারা চুক্তি বাতিল ঘোষণা করে।

উপকূলীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আপিল বিভাগের আদেশ কার্যকর করার জন্য ২০১৮ সালের ১১ মার্চ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে ৯৯ একর জমি পুনরুদ্ধারের অনুরোধ জানানো হয়। ২৬ মার্চ জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জমির বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানানোর জন্য একটি চিঠি বাঁশখালীর সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) পাঠানো হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাহমুদ উল্লাহ মারুফ ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। চিঠি পাঠানোর চার বছর পরও চিঠির উত্তর পাওয়া যায়নি।

https://sangbad.net.bd/images/2024/October/21Oct24/news/2.jpeg

এদিকে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর জমিগুলো দখলমুক্ত করতে নড়েচড়ে বসে উপকূলীয় বন বিভাগ। গত ২৬ আগস্ট ওই জমিতে দখলমুক্ত ঘোষণা করে লাল পতাকা উত্তোলন করে বন বিভাগের লোকজন। কিন্তু সেখানে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে উত্তোলন করা পতাকা ছিঁড়ে ফেলেন ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদের অনুগত লোকজন। ছনুয়ার সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরী দখল উচ্ছেদ অভিযানে ২ হাজার লোক দিয়ে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিলেও বন বিভাগের কর্মকর্তারা দখল বুঝে নিতে রাজি হননি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশীদকে ফেন করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে হারুন আত্মগোপনে আছেন।

উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, বন বিভাগের ওই জায়গায় আমাদের পক্ষে হাইকোর্টের রায় আছে। স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান লোক দেওয়ার কথা বললেও ওখানে গিয়ে লোক নিয়ে মারামারি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। ওখানে উচ্ছেদ অভিযান করা আমাদের কাজ নয়। উচ্ছেদ অভিযানের জন্য আমরা জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। চিঠির জবাব আমরা এখনোও পর্যন্ত পাইনি।

বাঁশখালীর নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আক্তার বলেন, ‘বেদখল থাকা বনভূমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসন থেকে এখনোও পর্যন্ত নির্দেশনা পাইনি। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ছবি

আদালতে আইনজীবীদের হট্টগোল, চট্টগ্রামের হাকিম আদালতে বিচার কাজ স্থগিত

ছবি

রাজবাড়ী‌তে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১২

ছবি

বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও চাপে বাংলাদেশ

ছবি

নারায়ণগঞ্জে আসামির ছুরিকাঘাতে পুলিশ সদস্য আহত

ছবি

সারদায় পুলিশের ২৫০ এসআইকে অব্যাহতি

চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা

লাখাইয়ে গৃহকর্মী নির্যাতন, অভিযুক্ত এক দিনের রিমান্ডে

ছবি

রংপুরে প্রেমের দায়ে চোর অপবাদ দিয়ে কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

ছবি

​নাইক্ষ্যংছড়িতে মাসিক ও আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

ছবি

পাথরঘাটায় ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে শহরে ঝাড়ু মিছিল

ছবি

কক্সবাজারে আইনজীবী ও ইউপি চেয়ারম্যানের ওপর হামলার অভিযোগ

ছবি

গার্মেন্টসে চাঁদাবাজির মামলায় বিএনপির দুই নেতা গ্রেপ্তার

মামলার আসামি কানাডা প্রবাসী, জানে না বাদী কারা আসামি

ছবি

সৈকতে জেটস্কি থেকে পড়ে পর্যটকের মৃত্যু

গাজীপুরে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের কর্মবিরতি

ছবি

এখনই আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে : রিজভী

ছবি

রাষ্ট্রদূত হচ্ছেন মুশফিকুল ফজল আনসারী : চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ

ছবি

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলি করে একই পরিবারের ৩ জনকে হত্যা

ছবি

চবি শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা, আহত ৪

ছবি

ফরিদপুরে ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক ও স্ত্রীর নামে ১১ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ

ছবি

মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন বন্ধ না হলে বাস চলাচল বন্ধের হুমকি

ছবি

বেনাপোলের ট্রিপল মার্ডার মামলায় চার ভাইসহ পাঁচজনের যাবজ্জীবন

ছবি

গাজীপুরে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু

ছবি

সৈকতে গোসলে নেমে যুবকের মৃত্যু

ছবি

টেকনাফে ব্যাগভর্তি গোলাবারুদ উদ্ধার করল বিজিবি

পদ্মাসেতু হতে শরীয়তপুর সদর চার লেন সড়কের কাজ দ্রুত সম্পন্নের দাবীতে মানববন্ধন

শরণখোলায় প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে যৌননিপীড়নের অভিযোগ সহকারী শিক্ষিকার

ছবি

চাঁদপুরে কোস্টগার্ডের ইলিশ অভিযানে ১১ জেলেসহ জাল ও মাছ আটক

ছবি

বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ৪ দিন

ছবি

বগুড়ায় হত্যা মামলায় সরকারি কৌঁসুলি কারাগারে

ছবি

সারদায় শিক্ষানবিশ এএসপিদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত

ছবি

গোপালগঞ্জে প্রাইভেট কারের সঙ্গে সংঘর্ষে ভ্যানগাড়ির চালক নিহত

ছবি

পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ক্ষমতা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের হাতে

ছবি

পাঁচবিবি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে বিএসএফকে বাধা বিজিবির

ছবি

ফরিদপুরে সরকারী রাস্তার ইট তুলে বিক্রির অভিযোগ

ছবি

সীতাকুণ্ডে যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

tab

সারাদেশ

বাঁশখালীতে ২০০শ’ একর উপকূলীয় বনভূমি দীর্ঘদিন বেদখল

মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ ছানুবী , বাঁশখালী, চট্টগ্রাম

সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

https://sangbad.net.bd/images/2024/October/21Oct24/news/1.jpeg

https://sangbad.net.bd/images/2024/October/21Oct24/news/40.jpg

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পশ্চিম খুদুকখালীর উপকূলীয় বনবিভাগের ২০০শ একর বনভূমি বেদখলে হয়েছে। ভুয়া খতিয়ান সৃজন করে ৯৯ একর ভূমি বিক্রি করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যানের সন্তানরা। বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমানের ছেলে সায়ান এফ রহমানের নামে কেনা হয় ওই ৯৯ একর ভূমি। সরকারিভাবে সৃজিত কোটি টাকার প্যারাবন ধ্বংস করে লবণ মাঠ ও চিংড়ি ঘের তৈরি করা হয় ওই বনভূমিতে। স্থানীয় বনবিভাগ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি পাঠালেও ‘রহস্যজনক’ কারণে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছেনা।

উপকূলীয় বনবিভাগের শুধুমাত্র খুদুকখালী এলাকায় দুই শত একর বনভূমি প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। জাল বিএস খতিয়ান তৈরি করে ও প্রভাব খাটিয়ে এসব জমি জবরদখলে রেখেছেন প্রভাবশালীরা। বনভূমির এসব জায়গায় পুকুর খনন করে মাছ চাষ, চিংড়ি ঘের ও লবণ চাষ করা হচ্ছে।

অর্ধশত বছর আইনী লড়াইয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পাওয়ার পরও ওই জমি উদ্বারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি জেলা প্রশাসন।

জানা যায়, উপকূলীয় বন বিভাগের ছনুয়া রেঞ্জ এর খুদুকখালী মৌজায় সাগরতীরের ভূমিতে ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে বিভিন্ন ধাপে বনবিভাগ কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজন করে। ২০০৯ সালের ১ ডিসেম্বর ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে ৮০/৯০ জন লোক উপকূলীয় বন বিভাগের ১ লক্ষ ৮০ হাজার গাছ কেটে ২০০শ একর ভূমি দখল করে নেয়। আনুমানিক ২ কোটি টাকা মূল্যের বাইন ও কেওড়া গাছ কেটে সাবাড় করে ওই জায়গায় চিংড়ি ঘের ও লবণ চাষের জন্য অবৈধভাবে ঘের স্থাপনও করেন তারা। এ ঘটনায় বাঁশখালী থানায় মামলা (নং-০১/২০০৯) করা হয়।

পরে হাইকোর্ট ওইসব কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে চিংড়ি ঘের ও লবণ চাষের ক্ষেত্র প্রস্তুত, স্ক্যাভেটর দিয়ে পুকুর খনন, লোনা পানি প্রবেশ ও লেবার শেড নির্মাণ করায় ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা বাঁশখালী থানায় মামলা (নং-৮/৩৪ ) করেন।

উপকূলীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খুদুকখালী মৌজার ৬ ও ১০০১ দাগের প্রায় ৯০ একর জমি (সরকারি বিজ্ঞপ্তি নং- ফর-১৩- ১৯/৮৪/৯০৮) বন বিভাগকে হস্তান্তর করা হয়। একই দাগের প্রায় ১৬ একর জমিকে বন আইনের ৬ ধারা জারি করে রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করা হয়। ফ্রেন্ডস ইন্ডাস্ট্রিয়াল করপোরেশনের ইজারা বাতিল এবং বন বিভাগের অনুকূলে হস্তান্তর করার নির্দেশনা দেয়া হয় (ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ৮-৪৬১/৮৬/৫৪ তারিখ ২/২/৮৮)।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর জাল বিএস খতিয়ান তৈরি করে উপকূলীয় বন বিভাগের ছনুয়া রেঞ্জ এর খুদুকখালী মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের ৯৯ একর জমি বিক্রি করে দেন ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ ও সাবেক চেয়ারম্যান বশির আহমদের ছেলেরা। ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমান এস্কর্প হোল্ডিংস লিমিটেড এর পক্ষে ওই জমি কিনে নেন। আইনি লড়াইয়ে উপকূলীয় বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসন উক্ত জমি ফিরে পেলেও এখনও দখলমুক্ত করতে পারেনি।

মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উপকূলীয় বন বিভাগের ছনুয়া রেঞ্জ এর খুদুকখালী মৌজার খাস খতিয়ানভুক্ত ৯০ একর জমি নারকেল বাগান করার শর্তে ২৫ বছরের জন্য ইজারা নেয় ‘ফ্রেন্ডস ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। জেলা প্রশাসন ১৯৬৬ সালে শীষ মোহাম্মদ ও বশির আহমদকে এই ইজারা দেয়। কিন্তু নারকেল বাগান না করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা লবণ মাঠ ও চিংড়ি ঘের এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহার করেন।

ইজারার শর্ত ভাঙার অভিযোগে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ১৯৬৭ সালে ইজারা বাতিল করেন। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে ইজারাগ্রহীতারা ভূমি আপিল বোর্ডে আপিল করেন। বোর্ড ইজারাদারকে লবণ মাঠ না করে নারকেল বাগান করার নির্দেশ দিয়ে ইজারা বহাল রাখেন।

এসব জমির ইজারা দেওয়া ও বাতিল নিয়ে বিভিন্ন সময় ইজারাদার পক্ষ ও জেলা প্রশাসন আইনি লড়াইয়ে যুক্ত হয়। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারি জমির ইজারা বাতিল করে জেলা প্রশাসনের পক্ষে রায় দিয়ে ওই জমি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ফ্রেন্ডস ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন প্রশাসনের কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে জমির স্থায়ী বন্দোবস্তের খতিয়ান তৈরী করে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে জানার পর জেলা প্রশাসকের পক্ষে সরেজমিনে তদন্ত করা হয়।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন ১৯৮৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ভূমি মন্ত্রণালয় ১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠি বিভাগীয় কমিশনার বরাবর পাঠায়। চিঠিতে জমির ইজারা বাতিল এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন বিভাগে অভিযোগ করার কথা বলা হয়।

এর আগে ইজারা বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে ফ্রেন্ডস ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন ১৯৮১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মামলা করে। চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ১৯৯১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইজারাগ্রহীতার পক্ষে রায় দেয়। প্রশাসন নিম্ন আদালতের এই আদেশ খারিজ করার জন্য জেলা জজ আদালতে মামলা করে। শুনানি শেষে জেলা জজ আদালত ১৯৯৪ সালের ২৩ অক্টোবর প্রশাসনের আবেদন বাতিল করে।

আদালতের এই রায় চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৫ সালে প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিভিশন মামলা দায়ের করে। নানা ধাপ শেষে ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট আপিল বিভাগ ইজারা চুক্তি বাতিল ঘোষণা করে।

উপকূলীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আপিল বিভাগের আদেশ কার্যকর করার জন্য ২০১৮ সালের ১১ মার্চ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে ৯৯ একর জমি পুনরুদ্ধারের অনুরোধ জানানো হয়। ২৬ মার্চ জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জমির বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানানোর জন্য একটি চিঠি বাঁশখালীর সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) পাঠানো হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাহমুদ উল্লাহ মারুফ ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। চিঠি পাঠানোর চার বছর পরও চিঠির উত্তর পাওয়া যায়নি।

https://sangbad.net.bd/images/2024/October/21Oct24/news/2.jpeg

এদিকে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর জমিগুলো দখলমুক্ত করতে নড়েচড়ে বসে উপকূলীয় বন বিভাগ। গত ২৬ আগস্ট ওই জমিতে দখলমুক্ত ঘোষণা করে লাল পতাকা উত্তোলন করে বন বিভাগের লোকজন। কিন্তু সেখানে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে উত্তোলন করা পতাকা ছিঁড়ে ফেলেন ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদের অনুগত লোকজন। ছনুয়ার সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরী দখল উচ্ছেদ অভিযানে ২ হাজার লোক দিয়ে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিলেও বন বিভাগের কর্মকর্তারা দখল বুঝে নিতে রাজি হননি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশীদকে ফেন করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে হারুন আত্মগোপনে আছেন।

উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, বন বিভাগের ওই জায়গায় আমাদের পক্ষে হাইকোর্টের রায় আছে। স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান লোক দেওয়ার কথা বললেও ওখানে গিয়ে লোক নিয়ে মারামারি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। ওখানে উচ্ছেদ অভিযান করা আমাদের কাজ নয়। উচ্ছেদ অভিযানের জন্য আমরা জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। চিঠির জবাব আমরা এখনোও পর্যন্ত পাইনি।

বাঁশখালীর নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আক্তার বলেন, ‘বেদখল থাকা বনভূমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসন থেকে এখনোও পর্যন্ত নির্দেশনা পাইনি। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

back to top