alt

সারাদেশ

ডেঙ্গু: একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ১০

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪

ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। ডেঙ্গুজ্বরে এক দিনে সর্বোচ্চ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত আরও ৯৬৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৭৭৫ জন ও প্রাইভেটে ১৯১ জন।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলর্থ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড কন্ট্রোলের দায়িত্ব প্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলাম গত ২৪ ঘণ্টায় এই মৃত্যু ও আক্রান্তের খবর জানিয়েছেন।

আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা শহরে ২৭২ জন, বরিশাল বিভাগে ১২৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭১ জন, ঢাকা বিভাগে ১৬৯ জন, খুলনা বিভাগে ৮১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০ জন, রাজশাহী বিভাগে ২১ জন, রংপুর বিভাগে ২ জন, সিলেট বিভাগে ৫ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

নিহত ১০ জনের মধ্যে বরিশালে ৩ জন, ঢাকা বিভাগে ১ জন, রাজধানীতে ৪ জন, খুলনা বিভাগে ১ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন।

সরকারি হিসেবে এই তথ্য জানা গেছে, বেসরকারি হিসাবে বা যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। তাদের হিসাব জানা গেলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ নিয়ে চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে শনিবার (২ নভেম্বর) পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬৩ হাজার ১৬৫ জন। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৩১০ জন। এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছে ৪ হাজার ১২৬ জন।

হাসপাতালের তথ্য মতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনও ভর্তি আছে ১০৪ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি আছে ১৬৩ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছে ৫৩ জন, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬১ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯০ জন, মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ২২৬ জন। এভাবে ঢাকার ১৮টি সরকার হাসপাতালে ১২৬০ জন এখনও ভর্তি আছে।

বরিশাল থেকে আমাদের নিজস্ব বার্তা পরিবেশক জানান, বরিশাল অঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বছর জুড়ে ২ হাজার ৮৩১ ডেঙ্গু রোগী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেও শুধু অক্টোবর মাসেই এই সংখ্যাটা ছিল আড়াই হাজারের ওপরে। মৃত্যুর মিছিলও ক্রমেই দীর্ঘতর হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর পরে অক্টেবরেই মারা গেছেন আরও ১৭ জন। এরমধ্যে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই মারা গেছেন মোট ২৯ জন।

এমনকি নভেম্বরের দ্বিতীয় দিন শনিবারও হাসপাতালটিতে ৩ জন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। অথচ বিগত বছরগুলোতে সেপ্টেম্বরের শেষভাগেই এ অঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রন্তের সংখ্যা কমতে দেখা গেলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।

অবশ্য গত বছরের তুলনায় এবার বরিশাল অঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত বছর বরিশাল বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত প্রায় ৪০ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছিল দুই শতাধিক।

চলতি বছর পরিস্থিতি কিছুটা ইতিবাচক হলেও বর্ষার পরে শরৎ পেরিয়ে হেমন্তের মধ্যবর্তী সময়েও ডেঙ্গু দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এর পেছনে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ এই অঞ্চলের পৌরসভাগুলোর উদাসীনতা ও ব্যর্থতাকে দুসছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।

তবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির আকালের পরে শরতের মধ্যভাগ থেকে হেমন্ত জুড়েই বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় মশার বংশ বিস্তার ঘটছে।

এমনকি বার বার মশার ওষুধ ছিটেও সুফল মিলছে না বৃষ্টির কারণে। সকালে ওষুধ ছেটান হলেও দুপুরে বৃষ্টির পানিতে সব ধুয়ে সাফ হয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের একটি ভবনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আগুন দেয়ায় অনেকগুলো ফগার মেশিন পুড়ে গেছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে চলতি বছরের ১ নভেম্বর পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত ৫ হাজার ৩৬০ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৩৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে।

যার মধ্যে শুধু অক্টোবরেই ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৩১। এমাসে মারা গেছেন ১৭ জন। সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে শুধু শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই প্রায় হাজারখানেক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। নভেম্বরের প্রথম দিনেও বরিশাল অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে ৩ শতাধিক ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। শনিবার চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩২৬।

তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীর বাইরেও কয়েকগুণ রোগী রয়েছে। যাদের কোনো পরিসংখ্যান সরকারি দপ্তরে নেই। কারণ তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেননি। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশা নির্মূলে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ ম-ল ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশা নির্মূলের বিকল্প নেই বলে জানিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমান আবহাওয়া ও থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজণন ও বংশ বিস্তার ঘটছে। আর নির্মণাধীন ভবনের ছাদে জমে থাকা পানিতে, পাকা বাড়ির ছাদে জমে থাকা পানিতে, রাস্তার পাশ্বে জমে থাকা পানিতে, ওয়ার মিটারের গর্তে জমে থাকা পানিতে মশার প্রজণন ও বংশ বিস্তার হচ্ছে। এডিস মশা মারার জন্য নিয়মিত ওষুধ দেয়া ও মশার প্রজণন স্থল ধ্বংস করলে পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রাথমিক অবস্থায় কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে ওয়ার্ড ভিত্তিক ডেঙ্গু টেস্ট করে তা নিশ্চিত হলে ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা নেয়া দরকার। ডেঙ্গু শনাক্ত হলে এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগ থাকলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দরকার। তা না হলে আক্রান্ত রোগীর ঝুঁকি থাকতে পারে।

মৃত্যুর হার কমাতে দ্রুত চিকিৎসা করা জরুরি। আর শহরের হাসপাতালে যাতে রোগীর চাপ না বাড়ে আর রোগীরা যাতে গ্রামগঞ্জের হাসপাতালে গাইডলাইন নিয়ে চিকিৎসা করলে ডেঙ্গুজ্বর সেরে যাবে।

ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসা ও সেবা দেয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ফলে ডেঙ্গুজ্বরের উন্নত চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ডাক্তারও আছে। রোগীরা সচেতন হয়ে চিকিৎসা নিলে ভাল হবে। আর ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার উপদ্রব ঠেকাতে বাড়ির আঙ্গিনা ও আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ওপর জোর দিতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন।

শনিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে একজন কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু আরও বাড়তে থাকবে। এডিস মশার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর মশা মারা হচ্ছে শম্বুক গতিতে। এই অবস্থা অন্তত আরও ১৫ দিন চলতে থাকবে। শীত না পড়লে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভবনা কম।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বের অনেক দেশে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশাসহ মশা বাহিত রোগ দমনে আলাদা বিভাগ রয়েছে। ওই বিভাগ থেকে বছর জুড়ে মশা দমনে কাজ করা হয়। বাংলাদেশে আলাদা বিভাগ চালু করলে এবং ওই বিভাগে কীটতত্ত্ব¡ বিশেষজ্ঞরা মশা দমনে বছর জুড়ে কাজ করলে পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হত।

ছবি

টেকনাফে বাবাকে না পেয়ে গ্রেপ্তার সেই কিশোরের জামিন

ছবি

পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ কি না, জানা যাবে ১৭ ডিসেম্বর

ছবি

আইনজীবী সাইফুল হত্যার প্রধান আসামি চন্দন গ্রেপ্তার

ছবি

কোনাবাড়িতে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের বিক্ষোভ

ছবি

সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে বিজিবি

ছবি

আগরতলায় হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ

ছবি

সুনামগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ২০

ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ, ভারতীয় নাগরিক আটক

ছবি

সাজেকে পর্যটন সাময়িকভাবে স্থগিত, নিরাপত্তার বিবেচনায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ

ভারতীয়দের বাধায় সিলেট সীমান্তের ওপারে আটকা শতকোটি টাকার পণ্য

ছবি

কলেজ ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেইল,চাঁদাবাজি অতপর গ্রেফতার,স্বীকারোক্তি : মোবাইল তল্লাশি করে আপত্তিকর ভিডিও জব্দ

ছবি

শিশুদের অপুষ্টি দূর করতে এনাফ প্রোগ্রাম নিয়ে মতবিনিময়

ছবি

নাটোরে খাটে বেঁধে রাখা গৃহবধূর লাশ উদ্ধার, স্বামী পলাতক

ছবি

কক্সবাজারে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ ২জন আটক

ছবি

মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হলো পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা, ৪ মুসল্লীর মৃত্যু

ছবি

আগরতলায় হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ

নারায়ণগঞ্জে ডিপিডিসি কার্যালয়ে ডাকাতি, ট্রান্সফর্মার লুট

ছবি

বিলোনিয়া সীমান্তে বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ, বিজিবির প্রতিবাদ

ছবি

নতুন মামলায় গ্রেফতার ইনু-মেনন-দীপু

ছবি

কলকাতায় চিকিৎসা নিতে যাওয়া বহু বাংলাদেশি বিপাকে

উন্নয়ন প্রকল্পের ভিডিওতে শেখ হাসিনার ছবি, প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

উন্নয়ন প্রকল্পের ভিডিওতে শেখ হাসিনার ছবি, প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

ছবি

রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন: এনজিওর ট্রেনিং সেন্টারসহ পাঁচ স্থাপনা পুড়ল

ছবি

গাজীপুরে ছাটাইকৃত শ্রমিকদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

ছবি

মহেশখালীতে জি-থ্রি রাইফেলসহ ৪ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, অস্ত্র কারবারি গ্রেপ্তার

ছবি

৯ মাস পর কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল শুরু

ছবি

‘ন্যায় বিচার’ হয়েছে, আগের সাজা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশে’: কায়সার কামাল

ছবি

অবৈধভাবে দেশে ফেরায় ৫ জনকে আটক করেছে বিজিবি

ছবি

শীতের হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে হিমালয়কন্যা

ছবি

৬২০ পর্যটক নিয়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছাড়ল জাহাজ

ছবি

পুলিশ লাইনের পিছনে জমি দখলের চেষ্টা, ৯৯৯-এ কল দিয়ে রক্ষা

ছবি

যমুনা নদীতে বিএনপি নেতার লাশ উদ্ধার, হত্যার অভিযোগ

ছবি

রাজশাহীতে সাবেক অধ্যাপক পিএম সফিকুল ইসলামকে মারধর, পুলিশের হেফাজতে

নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যুর খবরে গাজীপুরে চারটি বাসের আগুন দিয়েছে শ্রমিকরা

ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শ্যামলী পরিবহনের বাসে হামলা নয়, দুর্ঘটনা

ছবি

ফেইসবুকে ‘হাহা’ রিয়েক্ট নিয়ে ফেনীতে সংঘর্ষ: ছুরিকাঘাতে আহত ৪ কিশোর

tab

সারাদেশ

ডেঙ্গু: একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ১০

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪

ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। ডেঙ্গুজ্বরে এক দিনে সর্বোচ্চ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত আরও ৯৬৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৭৭৫ জন ও প্রাইভেটে ১৯১ জন।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলর্থ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড কন্ট্রোলের দায়িত্ব প্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলাম গত ২৪ ঘণ্টায় এই মৃত্যু ও আক্রান্তের খবর জানিয়েছেন।

আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা শহরে ২৭২ জন, বরিশাল বিভাগে ১২৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭১ জন, ঢাকা বিভাগে ১৬৯ জন, খুলনা বিভাগে ৮১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০ জন, রাজশাহী বিভাগে ২১ জন, রংপুর বিভাগে ২ জন, সিলেট বিভাগে ৫ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

নিহত ১০ জনের মধ্যে বরিশালে ৩ জন, ঢাকা বিভাগে ১ জন, রাজধানীতে ৪ জন, খুলনা বিভাগে ১ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন।

সরকারি হিসেবে এই তথ্য জানা গেছে, বেসরকারি হিসাবে বা যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। তাদের হিসাব জানা গেলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ নিয়ে চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে শনিবার (২ নভেম্বর) পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬৩ হাজার ১৬৫ জন। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৩১০ জন। এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছে ৪ হাজার ১২৬ জন।

হাসপাতালের তথ্য মতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনও ভর্তি আছে ১০৪ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি আছে ১৬৩ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছে ৫৩ জন, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬১ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯০ জন, মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ২২৬ জন। এভাবে ঢাকার ১৮টি সরকার হাসপাতালে ১২৬০ জন এখনও ভর্তি আছে।

বরিশাল থেকে আমাদের নিজস্ব বার্তা পরিবেশক জানান, বরিশাল অঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বছর জুড়ে ২ হাজার ৮৩১ ডেঙ্গু রোগী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেও শুধু অক্টোবর মাসেই এই সংখ্যাটা ছিল আড়াই হাজারের ওপরে। মৃত্যুর মিছিলও ক্রমেই দীর্ঘতর হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর পরে অক্টেবরেই মারা গেছেন আরও ১৭ জন। এরমধ্যে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই মারা গেছেন মোট ২৯ জন।

এমনকি নভেম্বরের দ্বিতীয় দিন শনিবারও হাসপাতালটিতে ৩ জন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। অথচ বিগত বছরগুলোতে সেপ্টেম্বরের শেষভাগেই এ অঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রন্তের সংখ্যা কমতে দেখা গেলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।

অবশ্য গত বছরের তুলনায় এবার বরিশাল অঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত বছর বরিশাল বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত প্রায় ৪০ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছিল দুই শতাধিক।

চলতি বছর পরিস্থিতি কিছুটা ইতিবাচক হলেও বর্ষার পরে শরৎ পেরিয়ে হেমন্তের মধ্যবর্তী সময়েও ডেঙ্গু দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এর পেছনে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ এই অঞ্চলের পৌরসভাগুলোর উদাসীনতা ও ব্যর্থতাকে দুসছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।

তবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির আকালের পরে শরতের মধ্যভাগ থেকে হেমন্ত জুড়েই বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় মশার বংশ বিস্তার ঘটছে।

এমনকি বার বার মশার ওষুধ ছিটেও সুফল মিলছে না বৃষ্টির কারণে। সকালে ওষুধ ছেটান হলেও দুপুরে বৃষ্টির পানিতে সব ধুয়ে সাফ হয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের একটি ভবনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আগুন দেয়ায় অনেকগুলো ফগার মেশিন পুড়ে গেছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে চলতি বছরের ১ নভেম্বর পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত ৫ হাজার ৩৬০ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৩৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে।

যার মধ্যে শুধু অক্টোবরেই ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৩১। এমাসে মারা গেছেন ১৭ জন। সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে শুধু শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই প্রায় হাজারখানেক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। নভেম্বরের প্রথম দিনেও বরিশাল অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে ৩ শতাধিক ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। শনিবার চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩২৬।

তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীর বাইরেও কয়েকগুণ রোগী রয়েছে। যাদের কোনো পরিসংখ্যান সরকারি দপ্তরে নেই। কারণ তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেননি। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশা নির্মূলে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ ম-ল ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশা নির্মূলের বিকল্প নেই বলে জানিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমান আবহাওয়া ও থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজণন ও বংশ বিস্তার ঘটছে। আর নির্মণাধীন ভবনের ছাদে জমে থাকা পানিতে, পাকা বাড়ির ছাদে জমে থাকা পানিতে, রাস্তার পাশ্বে জমে থাকা পানিতে, ওয়ার মিটারের গর্তে জমে থাকা পানিতে মশার প্রজণন ও বংশ বিস্তার হচ্ছে। এডিস মশা মারার জন্য নিয়মিত ওষুধ দেয়া ও মশার প্রজণন স্থল ধ্বংস করলে পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রাথমিক অবস্থায় কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে ওয়ার্ড ভিত্তিক ডেঙ্গু টেস্ট করে তা নিশ্চিত হলে ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা নেয়া দরকার। ডেঙ্গু শনাক্ত হলে এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগ থাকলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দরকার। তা না হলে আক্রান্ত রোগীর ঝুঁকি থাকতে পারে।

মৃত্যুর হার কমাতে দ্রুত চিকিৎসা করা জরুরি। আর শহরের হাসপাতালে যাতে রোগীর চাপ না বাড়ে আর রোগীরা যাতে গ্রামগঞ্জের হাসপাতালে গাইডলাইন নিয়ে চিকিৎসা করলে ডেঙ্গুজ্বর সেরে যাবে।

ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসা ও সেবা দেয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ফলে ডেঙ্গুজ্বরের উন্নত চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ডাক্তারও আছে। রোগীরা সচেতন হয়ে চিকিৎসা নিলে ভাল হবে। আর ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার উপদ্রব ঠেকাতে বাড়ির আঙ্গিনা ও আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ওপর জোর দিতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন।

শনিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে একজন কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু আরও বাড়তে থাকবে। এডিস মশার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর মশা মারা হচ্ছে শম্বুক গতিতে। এই অবস্থা অন্তত আরও ১৫ দিন চলতে থাকবে। শীত না পড়লে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভবনা কম।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বের অনেক দেশে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশাসহ মশা বাহিত রোগ দমনে আলাদা বিভাগ রয়েছে। ওই বিভাগ থেকে বছর জুড়ে মশা দমনে কাজ করা হয়। বাংলাদেশে আলাদা বিভাগ চালু করলে এবং ওই বিভাগে কীটতত্ত্ব¡ বিশেষজ্ঞরা মশা দমনে বছর জুড়ে কাজ করলে পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হত।

back to top