মধ্য ডিসেম্বরে সারাদেশে শীতের তীব্রতার সঙ্গে বাড়ছে কুয়াশার দাপট। এরই মধ্যে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে কাঁপন ধরিয়েছে শীত। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই দেশে দেখা দিতে পারে প্রথম শৈত্যপ্রবাহ, যা চলতি মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ। এর ফলে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে গণমাধ্যমে জানান, আগামী ১৬ তারিখ থেকে কুয়াশা আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, ‘ঘন কুয়াশা থাকবে অন্তত আরও এক সপ্তাহ। দু-একদিনের মধ্যেই বয়ে যেতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। এ কয়েকদিন সূর্যের দেখা পেতে দুপুর হবে এবং আজ(বৃহস্পতিবার) থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে।’
শাহনাজ সুলতানা আরও জানান, এখনও দেশে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও দু–এক দিনেই হবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সূর্য না উঠলে শীতের অনুভব বেশি হবে। বঙ্গোপসাগরের সুস্পষ্ট লঘুচপের প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস এ মাসে একাধিক তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে উত্তরবঙ্গে। এদিকে ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিরাজমান সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগরের শ্রীলঙ্কা উপকূলে অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় বিহার এবং তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় সারাদেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্র সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
এছাড়া মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-উত্তর পূর্বাংশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় সারাদেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়া শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-উত্তরপূর্বাংশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
গোপালগঞ্জে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস, তীব্র শীতে বিপর্যন্ত জনজীবন
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোপালগঞ্জের জনজীবন। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। এদিন সূর্যের দেখা না মেলায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে দ্বিগুণ।
তীব্র শীতে গরম কাপড়ের অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ। কাজে বের হতে পারছেন না তারা। তবে অনেকেই টুপি, মাফলার ও চাঁদর মুড়ি দিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন। ভোরে মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। অনেকেই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভীড় করছেন হাসপাতালগুলোতে। এরমধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি। গরম কাপড় কিনতে পুরানো কাপড়ের দোকানে ছুটছেন নিম্ম আয়ের মানুষ।
দিনমজুর রাজু (২৫) বলেন, ‘আমি রাস্তার নির্মাণ কাজ করছি। শীতে কাজ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। শীতের সঙ্গে বাতাসে আরও কাহিল হয়ে পড়ছি। ভোরে কাজে আসার সময় কুয়াশা ও বাতাস ছিল। কাজে আসার সময় প্রচ- ঠা-া লেগেছে। এমন আবহাওয়া থাকলে কাজে বের হওয়া খুবই কষ্টের। জেলা আবহওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা আবু সুফিয়ান জানান, গোপালগঞ্জের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।’
ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানিয়েছেন, জেলাটি হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ায় প্রতি বছর শীতের তীব্রতা বেশি হয়। সেখাসে ডিসেম্বরের শুরুতে হালকা কুয়াশা ও হিমেল বাতাস অব্যাহত থাকলেও হঠাৎ করে গত সোমবার রাত ৯টায় চারদিক থেকে নেমে আসে ঘন কুয়াশা। নিমিষে আচ্ছাদিত হয়ে পরে রাস্তাঘাট ও দোকানপাটসহ সর্বত্র। দ্রুতগামীর যানবাহনের গতি থেমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। সন্ধ্যার পরপরই বাজারগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ছে।
বৃহস্পতিবার জেলার বেশিরভাগ এলাকায় সূর্যের দেখা মিলেনি, তবে দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য সূর্যের আলো দেখা গেলেও তাপমাত্রার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এ অবস্থায় উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে ঠাণ্ডা ও কুয়াশা ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সামনে ১০ ফুট দূরেও রাস্তা দেখা যায় না। হাইভোল্টেজের হেড লাইট জ্বালিয়েও রাস্তায় চলাচল করতে পারছে না যানবাহন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে কেউ কেউ। হঠাৎ কুয়াশার কারণে আগাম আলু চাষিরা পড়েছে বিপাকে।
রাস্তায় চলাচলকারী হানিফ কোচের চালক ফজলুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন গাড়ি চালিয়ে আসছি। হঠাৎ করে চারদিক ঘিরে কুয়াশায় আচ্ছাদিত হতে কোনোদিন দেখিনি। জীবনে প্রথমে সোমবার রাতে দেখেছি এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। এদিকে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির ন্যায় কুয়াশা ঝড়ে। এ সময় হাড় কাঁপুনি শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলায় কয়েকদিনে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ধীরে ধীরে বেড়ে চলা কুয়াশার কারণে এলাকার মানুষজনের মধ্যে ঠা-ার প্রকোপও বেড়েছে। বিশেষ করে ভোর এবং সন্ধ্যায় ঠা-া বাতাসের সঙ্গে কুয়াশার ঘনত্ব মানুষকে শীতবস্ত্র ব্যবহারে বাধ্য করছে।
পলাশবাড়ীর অটো চালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ওস(কুয়াশার) এত বেশি পড়চে (ঘনত্ব এতই বেশি) যে আটোত (যানবাহনের) লাইট জালেও ঘাটা(রাস্তা) দেখা যাওচেনা(যায়না)। লাইটের আলো ১০ গজ দূরের জায়গা দেখা যায়না। ওসের জন্য(কারণে) ঘাটাত গাড়ি চালানো দায় (অসম্ভব) হয়্যা গেছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লাইজু আকতার বলেন, ‘প্রচ- শীতের কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনদিন কমছে। বার্ষিক পরীক্ষা তাই কোনো মতে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা হয়েছে।’
সদর উপজেলার কুজিশহর গ্রামের স্কুল শিক্ষক মামুন হক বলেন, ঠা-ার কারণে সন্তান নিয়ে সদর হাসপাতালে এসেছি। হাসপাতালে এতো শিশু রোগী যে তিল ধারণের ঠাঁই নাই। তারপরও সন্তানের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে অবস্থান করি
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ‘হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে আসন সখ্যার চাইতে ৩/৪ জন বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে তারা হিমসিম খাচ্ছে।
তারা আরও জানান, নবজাতক শিশুদের ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। তাদের পরনের কাপড় ঘন ঘন পাল্টে দিতে হবে যাতে প্রসাব করে কাপড় ভিজিয়ে রেখে ঠা-া না পায়। শিশুদের পুষ্টিকর তাজা খাবার খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট থেকে যেন নিউমোনিয়া না হয় সেজন্য আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. খোরশেদ আলম জানান, হঠাৎ কুয়াশার তীব্রতার কারণে আগাম আলু চাষিদের উৎপাদন খরচ এ বছর বাড়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে। তাই কৃষকদের শীত সহনশীল পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কৃষকরা শীত সহনশীল পদ্ধতি অবলম্বন করলে ফসলের ক্ষতি হওয়ার তেমন সুযোগ নেই।
রায়পুরে তীব্র শীতে কাঁপছে চরাঞ্চলের মানুষ
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর প্রতিনিধি জানায়, ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে কাবু হয়ে পড়েছে এলাকার শ্রমজীবী মানুষ। তীব্র শীতে মানুষের পাশাপাশি কাঁপছে পশুপাখিও, রোগবালাই বড়েছে। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে উপচেপড়া ভিড় নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দিজ্বরসহ নানা রোগীর। চিকিৎসা সেবা দিতে অনেকটাই হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এদিকে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চিকিৎসা ব্যয় ও শীতের কাপড় কেনা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে এখনও কোনো শীতবস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করা হয়নি রায়পুরে।
উপজেলার চরকাছিয়া গ্রামের গৃহবধূ কুলছুম বেগম বলেন, ‘হামরা তো অতে আগুন পোহে গাও গরম করুছি। কিন্তু অবলা গরু-ছাগলগুলাক কী করমো? দুইটার করি চটের বস্তা গরুর গাওত দিয়া ঠা-া যাওছে না। ঠনঠন করি কাঁপছে। ছাগলগুলোরও রোগবালাই ধরছে। চাহিদামতো শীতের কাপড় কেনা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সরকারিভাবে যদি আমাদেরকে কম্বল দিয়ে সহায়তা করা হয় তাহলে ভালো হতো।’
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী, চরমোহনা, চরকাছিয়া, চরজালিয়া, খাসেরহাট হায়দগঞ্জসহ চারটি চরাঞ্চল ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। শীতের কারণে অনেকেই কাজে যেতে পারেননি। একটু উষ্ণতা পেতে ১০-১২ জনের দল বেঁধে খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
৬৫ বছর বয়সী খাসেরহাট গ্রামের অচিন দাস বলেন, ‘রাইত পোহাইলে শীত বাড়োছে। শরীলোত আর ঠা-া সহ্য হওছে না। এ্যালা কামাইও নাই, গরম কাপড়ও নাই। তার ওপর নদীর ঠা-া বাতাস হু-হু করি বেড়ার ফাঁক দিয়া ঘরোত ঢোকে, তখন ছেঁড়া খ্যাতা গাওত দিয়া কোঁকড়া নাগি থাকো।’
মেঘনা উপকূলনীয় এলাকার মোল্লার হাট বাজারের পাশে বাগামে জড়ো হয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা যায় ৪ থেকে ৫ জনের একদল বৃদ্ধাদের। তারা বলেন, ‘বাবা, ঠা-াতে জান বাইর হয়া যাওছে। গরম কাপড় নাই, শীত এলে মোগ খুব কষ্ট হয়। ঠাণ্ডাতে হাত-পাও পষাণ বরফ হয়ে যাচ্ছে। এ বছর এত তীব্র শীত হইলোও এহনও কেউ কোনো কম্বল বা শীতের কাপড় দেয়নি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইরমার খান বলেন, সরকারিভাবে এখনও কম্বল কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তবে আগামী সাপ্তাহে জেলা থেকে চিঠি আসতে পারে। আসলেই প্রতিটি ইউনিয়নের হতদরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
মধ্য ডিসেম্বরে সারাদেশে শীতের তীব্রতার সঙ্গে বাড়ছে কুয়াশার দাপট। এরই মধ্যে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে কাঁপন ধরিয়েছে শীত। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই দেশে দেখা দিতে পারে প্রথম শৈত্যপ্রবাহ, যা চলতি মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ। এর ফলে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে গণমাধ্যমে জানান, আগামী ১৬ তারিখ থেকে কুয়াশা আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, ‘ঘন কুয়াশা থাকবে অন্তত আরও এক সপ্তাহ। দু-একদিনের মধ্যেই বয়ে যেতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। এ কয়েকদিন সূর্যের দেখা পেতে দুপুর হবে এবং আজ(বৃহস্পতিবার) থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে।’
শাহনাজ সুলতানা আরও জানান, এখনও দেশে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও দু–এক দিনেই হবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সূর্য না উঠলে শীতের অনুভব বেশি হবে। বঙ্গোপসাগরের সুস্পষ্ট লঘুচপের প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস এ মাসে একাধিক তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে উত্তরবঙ্গে। এদিকে ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিরাজমান সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগরের শ্রীলঙ্কা উপকূলে অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় বিহার এবং তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় সারাদেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্র সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
এছাড়া মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-উত্তর পূর্বাংশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় সারাদেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়া শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-উত্তরপূর্বাংশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
গোপালগঞ্জে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস, তীব্র শীতে বিপর্যন্ত জনজীবন
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোপালগঞ্জের জনজীবন। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। এদিন সূর্যের দেখা না মেলায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে দ্বিগুণ।
তীব্র শীতে গরম কাপড়ের অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ। কাজে বের হতে পারছেন না তারা। তবে অনেকেই টুপি, মাফলার ও চাঁদর মুড়ি দিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন। ভোরে মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। অনেকেই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভীড় করছেন হাসপাতালগুলোতে। এরমধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি। গরম কাপড় কিনতে পুরানো কাপড়ের দোকানে ছুটছেন নিম্ম আয়ের মানুষ।
দিনমজুর রাজু (২৫) বলেন, ‘আমি রাস্তার নির্মাণ কাজ করছি। শীতে কাজ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। শীতের সঙ্গে বাতাসে আরও কাহিল হয়ে পড়ছি। ভোরে কাজে আসার সময় কুয়াশা ও বাতাস ছিল। কাজে আসার সময় প্রচ- ঠা-া লেগেছে। এমন আবহাওয়া থাকলে কাজে বের হওয়া খুবই কষ্টের। জেলা আবহওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা আবু সুফিয়ান জানান, গোপালগঞ্জের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।’
ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানিয়েছেন, জেলাটি হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ায় প্রতি বছর শীতের তীব্রতা বেশি হয়। সেখাসে ডিসেম্বরের শুরুতে হালকা কুয়াশা ও হিমেল বাতাস অব্যাহত থাকলেও হঠাৎ করে গত সোমবার রাত ৯টায় চারদিক থেকে নেমে আসে ঘন কুয়াশা। নিমিষে আচ্ছাদিত হয়ে পরে রাস্তাঘাট ও দোকানপাটসহ সর্বত্র। দ্রুতগামীর যানবাহনের গতি থেমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। সন্ধ্যার পরপরই বাজারগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ছে।
বৃহস্পতিবার জেলার বেশিরভাগ এলাকায় সূর্যের দেখা মিলেনি, তবে দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য সূর্যের আলো দেখা গেলেও তাপমাত্রার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এ অবস্থায় উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে ঠাণ্ডা ও কুয়াশা ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সামনে ১০ ফুট দূরেও রাস্তা দেখা যায় না। হাইভোল্টেজের হেড লাইট জ্বালিয়েও রাস্তায় চলাচল করতে পারছে না যানবাহন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে কেউ কেউ। হঠাৎ কুয়াশার কারণে আগাম আলু চাষিরা পড়েছে বিপাকে।
রাস্তায় চলাচলকারী হানিফ কোচের চালক ফজলুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন গাড়ি চালিয়ে আসছি। হঠাৎ করে চারদিক ঘিরে কুয়াশায় আচ্ছাদিত হতে কোনোদিন দেখিনি। জীবনে প্রথমে সোমবার রাতে দেখেছি এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। এদিকে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির ন্যায় কুয়াশা ঝড়ে। এ সময় হাড় কাঁপুনি শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলায় কয়েকদিনে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ধীরে ধীরে বেড়ে চলা কুয়াশার কারণে এলাকার মানুষজনের মধ্যে ঠা-ার প্রকোপও বেড়েছে। বিশেষ করে ভোর এবং সন্ধ্যায় ঠা-া বাতাসের সঙ্গে কুয়াশার ঘনত্ব মানুষকে শীতবস্ত্র ব্যবহারে বাধ্য করছে।
পলাশবাড়ীর অটো চালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ওস(কুয়াশার) এত বেশি পড়চে (ঘনত্ব এতই বেশি) যে আটোত (যানবাহনের) লাইট জালেও ঘাটা(রাস্তা) দেখা যাওচেনা(যায়না)। লাইটের আলো ১০ গজ দূরের জায়গা দেখা যায়না। ওসের জন্য(কারণে) ঘাটাত গাড়ি চালানো দায় (অসম্ভব) হয়্যা গেছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লাইজু আকতার বলেন, ‘প্রচ- শীতের কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনদিন কমছে। বার্ষিক পরীক্ষা তাই কোনো মতে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা হয়েছে।’
সদর উপজেলার কুজিশহর গ্রামের স্কুল শিক্ষক মামুন হক বলেন, ঠা-ার কারণে সন্তান নিয়ে সদর হাসপাতালে এসেছি। হাসপাতালে এতো শিশু রোগী যে তিল ধারণের ঠাঁই নাই। তারপরও সন্তানের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে অবস্থান করি
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ‘হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে আসন সখ্যার চাইতে ৩/৪ জন বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে তারা হিমসিম খাচ্ছে।
তারা আরও জানান, নবজাতক শিশুদের ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। তাদের পরনের কাপড় ঘন ঘন পাল্টে দিতে হবে যাতে প্রসাব করে কাপড় ভিজিয়ে রেখে ঠা-া না পায়। শিশুদের পুষ্টিকর তাজা খাবার খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট থেকে যেন নিউমোনিয়া না হয় সেজন্য আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. খোরশেদ আলম জানান, হঠাৎ কুয়াশার তীব্রতার কারণে আগাম আলু চাষিদের উৎপাদন খরচ এ বছর বাড়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে। তাই কৃষকদের শীত সহনশীল পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কৃষকরা শীত সহনশীল পদ্ধতি অবলম্বন করলে ফসলের ক্ষতি হওয়ার তেমন সুযোগ নেই।
রায়পুরে তীব্র শীতে কাঁপছে চরাঞ্চলের মানুষ
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর প্রতিনিধি জানায়, ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে কাবু হয়ে পড়েছে এলাকার শ্রমজীবী মানুষ। তীব্র শীতে মানুষের পাশাপাশি কাঁপছে পশুপাখিও, রোগবালাই বড়েছে। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে উপচেপড়া ভিড় নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দিজ্বরসহ নানা রোগীর। চিকিৎসা সেবা দিতে অনেকটাই হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এদিকে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চিকিৎসা ব্যয় ও শীতের কাপড় কেনা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে এখনও কোনো শীতবস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করা হয়নি রায়পুরে।
উপজেলার চরকাছিয়া গ্রামের গৃহবধূ কুলছুম বেগম বলেন, ‘হামরা তো অতে আগুন পোহে গাও গরম করুছি। কিন্তু অবলা গরু-ছাগলগুলাক কী করমো? দুইটার করি চটের বস্তা গরুর গাওত দিয়া ঠা-া যাওছে না। ঠনঠন করি কাঁপছে। ছাগলগুলোরও রোগবালাই ধরছে। চাহিদামতো শীতের কাপড় কেনা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সরকারিভাবে যদি আমাদেরকে কম্বল দিয়ে সহায়তা করা হয় তাহলে ভালো হতো।’
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী, চরমোহনা, চরকাছিয়া, চরজালিয়া, খাসেরহাট হায়দগঞ্জসহ চারটি চরাঞ্চল ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। শীতের কারণে অনেকেই কাজে যেতে পারেননি। একটু উষ্ণতা পেতে ১০-১২ জনের দল বেঁধে খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
৬৫ বছর বয়সী খাসেরহাট গ্রামের অচিন দাস বলেন, ‘রাইত পোহাইলে শীত বাড়োছে। শরীলোত আর ঠা-া সহ্য হওছে না। এ্যালা কামাইও নাই, গরম কাপড়ও নাই। তার ওপর নদীর ঠা-া বাতাস হু-হু করি বেড়ার ফাঁক দিয়া ঘরোত ঢোকে, তখন ছেঁড়া খ্যাতা গাওত দিয়া কোঁকড়া নাগি থাকো।’
মেঘনা উপকূলনীয় এলাকার মোল্লার হাট বাজারের পাশে বাগামে জড়ো হয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা যায় ৪ থেকে ৫ জনের একদল বৃদ্ধাদের। তারা বলেন, ‘বাবা, ঠা-াতে জান বাইর হয়া যাওছে। গরম কাপড় নাই, শীত এলে মোগ খুব কষ্ট হয়। ঠাণ্ডাতে হাত-পাও পষাণ বরফ হয়ে যাচ্ছে। এ বছর এত তীব্র শীত হইলোও এহনও কেউ কোনো কম্বল বা শীতের কাপড় দেয়নি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইরমার খান বলেন, সরকারিভাবে এখনও কম্বল কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তবে আগামী সাপ্তাহে জেলা থেকে চিঠি আসতে পারে। আসলেই প্রতিটি ইউনিয়নের হতদরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।