‘মোক খুব হিয়্যাল নাগোচে (আমার খুব শীত লাগছে) মোক একখ্যান হিয়্যালের কাপড় দেও বাবা। এই হিয়্যালের মধ্যে থাকা খুব কষ্ট! গরম কাপড় দিলে এ্যানা (একটু) আরাম মতো নিদ আসপ্যার পারনু হয় বাবা।’ তীব্র শীতে কাঁপতে কাঁপতে কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড় ভগবারন পুর গ্রামের জামিনী বালা (৮৫)।
জামিনী বালা’র জন্ম থেকেই অভাব-অনটনের মধ্য মানুষ। সন্তান থাকলেও তারাও অভাবী। তার পুরোকালই গেছে মানুষের বাড়ীতে কাজ করে।
ওই গ্রামেরই রুপচান(৬০) মানুষের বাড়িতে কাজ করেই সংসার খুব কষ্টে সংসার চলে। বিয়ের পর স্বামীর সংসার থেকে চলে এসে বাবার বাড়িতে বহু কষ্টে মানুষ। তিনি বলেন, ‘কয়দিন হলো খুব হিয়্যাল(শীত) পড়চে ভাই। পেটের জন্য এখনও বাড়ি থেকে বের হচো। হিয়্যয়ালের কাপড় কেংকারে কিনিম। মোক(আমাকে) কোনো চেয়ারম্যান-মেম্বার কোনোদিন কোনো সাহায্য করেনাই।’
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের শরিফুল ইসলাম, শীতে জবুথবু অবস্থা। ফোন দিতেই অন্যপ্রান্ত থেকে ভাঙা-ভাঙা গলায় বলেন, ‘মোর জন্মেও এতো তাড়াতাড়ি এমন জাড়(শীত) দেখোনাই। আজও আগন মাস চলেচে, তাতি এতো জাড় আরও দিনগুলাতো আচিই।’
শুধু এই অবস্থা শুধু রংপুরের জামিনী বালা, রুপচান বা দিনাজপুরের শরিফুল ইসলাম নয়, দেশের ‘অধিকাংশ’ এলাকায় অগ্রাহণের শেষেই তাপমাত্রা নিম্নœমুখী হওয়ার কারণে বেশিরভাগ মানুষেরই অবস্থা এমন। এসব এলাকায় তীব্র শীতে জনজীবন ‘বিপর্যস্ত’ হয়ে পড়ছে। কনকনে বাতাস আর ঘন কুয়াশায়সহ হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান রহিমুদ্দিন হায়দার রিপন জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়ন ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন। হতদরিদ্রের সংখ্যাও বেশি। এছাড়াও কুড়িগ্রামের ১৬টি নদ-নদীর তীরবর্তী ৪ শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের মানুষ শীতে কষ্ট পাচ্ছে।
দেশের উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রংপুর এবং রাজশাহীসহ অন্যান্য জেলাগুলোতে শীতের দাপট দেখা দিয়েছে বেশ আগে থেকেই। দক্ষিণের জেলাগুলোও শীতে কাঁপছে। বৃহস্পতিবার তার তীব্রতা আরো বেড়েছে।
সারাদেশের বিভন্ন অঞ্চলে প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, শীতের তীব্রতা বেড়েই চলছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে গেছে। নিম্নœ আয়ের মানুষরা পড়েছে মহা বিপাকে। কাজে যেতে না পারায় শ্রমজীবী মানুষরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
শীতের কারণে বিভিন্ন জেলায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগ। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন লোকজন। বিশেষ করে নিম্নœ আয়ের মানুষজন অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
তাপমাত্রা আরও কমে বাড়বে কুয়াশা
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-উত্তর পূর্বাংশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘনকুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
এছাড়া আজকেও সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্র সামান্য কমতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের শ্রীলংকা উপকূলে অবস্থান করছে। এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় বিহার ও আশেপাশের এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
কোন কোন জেলায় শৈত্যপ্রবাহ, চলবে কত দিন
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, শুক্রবার দেশের তিনটি জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। আজ এটি আরও দু-এক জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। তারপর ধীরে ধীরে দেশের তাপমাত্রা কমতে থাকবে। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত, অর্থাৎ আগামী দুইদিন এই তাপমাত্রা কমতে থাকবে। এরপর ১৮ তারিখে আবার বাড়তে পারে তাপমাত্রা। পরে তাপমাত্রা স্বাভাবিক নিয়মে কমার দিকে যেতে থাকবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ডিসেম্বর মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু বা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দেশের কোথাও বৃষ্টি হয়নি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল কক্সবাজারের টেকনাফে।
ত্রাণের কম্বলের খবর নেই
গত নয় নভেম্বর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ত্রাণের কম্বল কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে। একমাসেও দরপত্রের সেই কম্বল আসেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, নিম্নমানের কম্বলের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকার দরপত্রে অনেক শর্ত দিয়েছে। কম্বলের গুণগত মান নির্ধারণ করে স্পেসিফিকেশন ঠিক করে দেয়া হয়েছে। কম্বলের দৈর্ঘ্য আট ফুট এবং প্রস্থ ছয় ফুট। ডাবল পার্ট, বোথসাইড ব্রাশ, অ্যান্টি পাইলিং, ওজন ২৫০০ গ্রাম এবং সর্বোপরি স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। এই শর্ত মেনে যারা কম্বল সরবরাহ করবে, শুধু তারাই যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ফলে শর্তের মারপ্যাঁচে পড়ে কেনাকাটা জটিল হয়ে পড়ে। এতে প্রতি বছর কম্বল কিনতে দেরি হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজানুর রহমান সংবাদকে বলেন, দরপত্রের পর অনেক প্রক্রিয়া শেষে আমরা সব জায়গায় কম্বল পাঠিয়েছি। আবারও পাঠানো হচ্ছে তিন লাখ পিস। অল্প কিছুদিনের মধ্যে আরো কম্বল পাওয়া যাবে। এরই মধ্যে শীত বেড়ে যাওয়ায় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অনুকূলে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
দিনাজপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘ এ যাবত তিন হাজার পিস কম্বল এসছে আমরা তা জেলার সব উপজেলায় বণ্টন করেছি। গত পরশুদিন কম্বল কেনার জন্য বরাদ্দর টাকা এসেছে। আমরা প্রতি উপজেলায় তিন লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছি। যেটা কোটেশনের মধ্যেমে কম্বল কেনা হবে যা এখনও প্রকৃয়াধীন আছে।
উত্তরের জেলা গাইবান্ধা সদরের ইউএনও হাসান আল মাহমুদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আজ ও আগামীকাল বন্ধ থাকার কারণে আমরা পরে কম্বল কিনে শীতাত মানুষের মাঝে বিতরণ করবো।’
যেসব কারণে শীতকালে দেশে ঠান্ডার তীব্রতা বাড়ছে
সম্প্রতি নেচার কমিউনেকশন্স আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্কটিক অঞ্চলের অস্বাভাবিক উষ্ণ তাপমাত্রার কারণে উত্তর গোলার্ধের অন্তর্গত দেশগুলোতে তীব্র শীত পড়তে পারে। আর বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধেরই দেশ।
আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসসহ বৈশ্বিক জলবায়ু বিষয়ক বিভিন্ন পূর্বাভাস ও প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, দেশে প্রতি বছর শীতকালে সাধারণত যে ধরনের ঠাণ্ডা পড়ে, সে তুলনায় গত বছরের শীতকালটা ছিল বেশি ঠাণ্ডা। গত শীতে দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহে নাকাল হতে হয় দেশের মানুষকে। ২০২৪-এর জানুয়ারির শেষে এমনকি ফেব্রুয়ারি মাসেও দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় শৈত্যপ্রবাহ। ২০২৪-এর জানুয়ারিতে পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, অপরদিকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে উত্তরের এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এবারের শীত ছাড়িয়ে যেতে পারে আগের বছরকেও।
শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
‘মোক খুব হিয়্যাল নাগোচে (আমার খুব শীত লাগছে) মোক একখ্যান হিয়্যালের কাপড় দেও বাবা। এই হিয়্যালের মধ্যে থাকা খুব কষ্ট! গরম কাপড় দিলে এ্যানা (একটু) আরাম মতো নিদ আসপ্যার পারনু হয় বাবা।’ তীব্র শীতে কাঁপতে কাঁপতে কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড় ভগবারন পুর গ্রামের জামিনী বালা (৮৫)।
জামিনী বালা’র জন্ম থেকেই অভাব-অনটনের মধ্য মানুষ। সন্তান থাকলেও তারাও অভাবী। তার পুরোকালই গেছে মানুষের বাড়ীতে কাজ করে।
ওই গ্রামেরই রুপচান(৬০) মানুষের বাড়িতে কাজ করেই সংসার খুব কষ্টে সংসার চলে। বিয়ের পর স্বামীর সংসার থেকে চলে এসে বাবার বাড়িতে বহু কষ্টে মানুষ। তিনি বলেন, ‘কয়দিন হলো খুব হিয়্যাল(শীত) পড়চে ভাই। পেটের জন্য এখনও বাড়ি থেকে বের হচো। হিয়্যয়ালের কাপড় কেংকারে কিনিম। মোক(আমাকে) কোনো চেয়ারম্যান-মেম্বার কোনোদিন কোনো সাহায্য করেনাই।’
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের শরিফুল ইসলাম, শীতে জবুথবু অবস্থা। ফোন দিতেই অন্যপ্রান্ত থেকে ভাঙা-ভাঙা গলায় বলেন, ‘মোর জন্মেও এতো তাড়াতাড়ি এমন জাড়(শীত) দেখোনাই। আজও আগন মাস চলেচে, তাতি এতো জাড় আরও দিনগুলাতো আচিই।’
শুধু এই অবস্থা শুধু রংপুরের জামিনী বালা, রুপচান বা দিনাজপুরের শরিফুল ইসলাম নয়, দেশের ‘অধিকাংশ’ এলাকায় অগ্রাহণের শেষেই তাপমাত্রা নিম্নœমুখী হওয়ার কারণে বেশিরভাগ মানুষেরই অবস্থা এমন। এসব এলাকায় তীব্র শীতে জনজীবন ‘বিপর্যস্ত’ হয়ে পড়ছে। কনকনে বাতাস আর ঘন কুয়াশায়সহ হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান রহিমুদ্দিন হায়দার রিপন জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়ন ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন। হতদরিদ্রের সংখ্যাও বেশি। এছাড়াও কুড়িগ্রামের ১৬টি নদ-নদীর তীরবর্তী ৪ শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের মানুষ শীতে কষ্ট পাচ্ছে।
দেশের উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রংপুর এবং রাজশাহীসহ অন্যান্য জেলাগুলোতে শীতের দাপট দেখা দিয়েছে বেশ আগে থেকেই। দক্ষিণের জেলাগুলোও শীতে কাঁপছে। বৃহস্পতিবার তার তীব্রতা আরো বেড়েছে।
সারাদেশের বিভন্ন অঞ্চলে প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, শীতের তীব্রতা বেড়েই চলছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে গেছে। নিম্নœ আয়ের মানুষরা পড়েছে মহা বিপাকে। কাজে যেতে না পারায় শ্রমজীবী মানুষরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
শীতের কারণে বিভিন্ন জেলায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগ। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন লোকজন। বিশেষ করে নিম্নœ আয়ের মানুষজন অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
তাপমাত্রা আরও কমে বাড়বে কুয়াশা
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর-উত্তর পূর্বাংশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘনকুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
এছাড়া আজকেও সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্র সামান্য কমতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের শ্রীলংকা উপকূলে অবস্থান করছে। এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় বিহার ও আশেপাশের এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
কোন কোন জেলায় শৈত্যপ্রবাহ, চলবে কত দিন
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, শুক্রবার দেশের তিনটি জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। আজ এটি আরও দু-এক জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। তারপর ধীরে ধীরে দেশের তাপমাত্রা কমতে থাকবে। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত, অর্থাৎ আগামী দুইদিন এই তাপমাত্রা কমতে থাকবে। এরপর ১৮ তারিখে আবার বাড়তে পারে তাপমাত্রা। পরে তাপমাত্রা স্বাভাবিক নিয়মে কমার দিকে যেতে থাকবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ডিসেম্বর মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু বা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দেশের কোথাও বৃষ্টি হয়নি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল কক্সবাজারের টেকনাফে।
ত্রাণের কম্বলের খবর নেই
গত নয় নভেম্বর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ত্রাণের কম্বল কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে। একমাসেও দরপত্রের সেই কম্বল আসেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, নিম্নমানের কম্বলের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকার দরপত্রে অনেক শর্ত দিয়েছে। কম্বলের গুণগত মান নির্ধারণ করে স্পেসিফিকেশন ঠিক করে দেয়া হয়েছে। কম্বলের দৈর্ঘ্য আট ফুট এবং প্রস্থ ছয় ফুট। ডাবল পার্ট, বোথসাইড ব্রাশ, অ্যান্টি পাইলিং, ওজন ২৫০০ গ্রাম এবং সর্বোপরি স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। এই শর্ত মেনে যারা কম্বল সরবরাহ করবে, শুধু তারাই যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ফলে শর্তের মারপ্যাঁচে পড়ে কেনাকাটা জটিল হয়ে পড়ে। এতে প্রতি বছর কম্বল কিনতে দেরি হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজানুর রহমান সংবাদকে বলেন, দরপত্রের পর অনেক প্রক্রিয়া শেষে আমরা সব জায়গায় কম্বল পাঠিয়েছি। আবারও পাঠানো হচ্ছে তিন লাখ পিস। অল্প কিছুদিনের মধ্যে আরো কম্বল পাওয়া যাবে। এরই মধ্যে শীত বেড়ে যাওয়ায় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অনুকূলে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
দিনাজপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘ এ যাবত তিন হাজার পিস কম্বল এসছে আমরা তা জেলার সব উপজেলায় বণ্টন করেছি। গত পরশুদিন কম্বল কেনার জন্য বরাদ্দর টাকা এসেছে। আমরা প্রতি উপজেলায় তিন লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছি। যেটা কোটেশনের মধ্যেমে কম্বল কেনা হবে যা এখনও প্রকৃয়াধীন আছে।
উত্তরের জেলা গাইবান্ধা সদরের ইউএনও হাসান আল মাহমুদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আজ ও আগামীকাল বন্ধ থাকার কারণে আমরা পরে কম্বল কিনে শীতাত মানুষের মাঝে বিতরণ করবো।’
যেসব কারণে শীতকালে দেশে ঠান্ডার তীব্রতা বাড়ছে
সম্প্রতি নেচার কমিউনেকশন্স আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্কটিক অঞ্চলের অস্বাভাবিক উষ্ণ তাপমাত্রার কারণে উত্তর গোলার্ধের অন্তর্গত দেশগুলোতে তীব্র শীত পড়তে পারে। আর বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধেরই দেশ।
আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসসহ বৈশ্বিক জলবায়ু বিষয়ক বিভিন্ন পূর্বাভাস ও প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, দেশে প্রতি বছর শীতকালে সাধারণত যে ধরনের ঠাণ্ডা পড়ে, সে তুলনায় গত বছরের শীতকালটা ছিল বেশি ঠাণ্ডা। গত শীতে দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহে নাকাল হতে হয় দেশের মানুষকে। ২০২৪-এর জানুয়ারির শেষে এমনকি ফেব্রুয়ারি মাসেও দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় শৈত্যপ্রবাহ। ২০২৪-এর জানুয়ারিতে পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, অপরদিকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে উত্তরের এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এবারের শীত ছাড়িয়ে যেতে পারে আগের বছরকেও।