মিল মালিক সিন্ডিকেটের কারসাজিতে মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম কমে যাওয়ায় হতাশ চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তারা এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ এ আহবান জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের একমাত্র কক্সবাজার জেলাতে লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ লবণই কক্সবাজারে উৎপাদিত হয়। কক্সবাজার জেলার রামু ছাড়া বাকী ৮ উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় নিম্নভূমিতে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে লবণের চাষ হয়ে থাকে।
সাধারণত, ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত সময়কে লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হলেও আবহাওয়ার কারণে সময়ের পরিধি বাড়ে কমে। তবে গত ২/৩ মৌসুম ধরে মাঠ পর্যায়ে লবণের মোটামুটি ভালো থাকায় এ মৌসুমেও লবণ চাষীরা বিশেষ আগ্রহ নিয়ে আগাম লবণ চাষে মাঠে নামে।
ফলে গত মৌসুমের এ সময়ের তুলনায় চলতি মৌসুমে প্রায় দেড়গুণ বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছে। এতে চলতি মৌসুমেও লবণ উৎপাদন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
গেল ,২০২২-২৩ মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের ৬২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন, অথচ আগের মৌসুমে অর্থাৎ ২০২১-২২ মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয়েছিল। ১৮ লাখ ৩২ হাজার মে.টন। আর গত মৌসুমে বা ২০২৩-২৪ মৌসুমে ৬৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে ২৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে, যা আগের মৌসুমের চেয়ে ২ লাখ মে.টনের বেশি। গত ২/৩ মৌসুম ধরে চাষীরা লবণের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় দেশে লবণ উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ হয়েছে।
তবে লবণ চাষী ও ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে জানান, চলতি মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের অতীতে রেকর্ড ভাঙ্গতে চাইলেও লবণ মিল মালিকদের একটি সিন্ডিকেট দেশে লবণ উৎপাদন কমানোর জন্য চাষীদের উপর মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু করেছে। যাতে চাষীরা মৌসুমের শুরুতে লবণ চাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং লবণ উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হয়।
এরই অংশ হিসাবে লবণ মৌসুমের শুরুতে লবণ মিল মালিকরা বস্তা প্রতি (প্রতিবস্তা ৮০ কেজি) ১৪শ টাকা থেকে দফায় দফায় কমাতে কমাতে এখন ৬৮০ টাকা থেকে ৭শ টাকায় এসে ঠেকেছে। আবার প্রতিবন্তা ৮০ কেজির পরিবর্তে ৯০ থেকে ৯৫ কেজি লবণ নেওয়া হয় চাষীদের কাছ থেকে। নিকট অতীতে মাঠ পর্যায়ে লবণের এমন দরপতন হয়নি। তবে মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম কম হলেও বাজারে প্যাকেটজাত লবণের মূল্য কমেনি। বাজারে প্রতি কেজি ভোজ্য লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের দৃ্ষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনে পলিথিন, জ্বালানী তেল ও শ্রমসহ প্রায় ১৫ টাকা খরচ হলেও মাঠ পর্যায়ে লবণ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮ টাকারও কম দরে। এরফলে লবণ চাষী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম হতাশা তৈরি হয়েছে। অথচ এ স্বয়ংসম্পূর্ণ খাত থেকে সরকার প্রায় ৫শ কোটি টাকার বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় করে। আর লবণ মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দেশীয় এই লবণ শিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে। এরই অংশ হিসাবে তারা লবণ চাষীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে।
তারা এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুছের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তাদের মতে অন্যথায় দেশীয় লবণ শিল্পটি আবারও পরনির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক মছুদ মিয়া ও সদস্য সচিব মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া। সংবাদ সম্মেলনে বিবিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি নুরুল বশর চৌধুরী।
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
মিল মালিক সিন্ডিকেটের কারসাজিতে মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম কমে যাওয়ায় হতাশ চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তারা এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ এ আহবান জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের একমাত্র কক্সবাজার জেলাতে লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ লবণই কক্সবাজারে উৎপাদিত হয়। কক্সবাজার জেলার রামু ছাড়া বাকী ৮ উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় নিম্নভূমিতে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে লবণের চাষ হয়ে থাকে।
সাধারণত, ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত সময়কে লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হলেও আবহাওয়ার কারণে সময়ের পরিধি বাড়ে কমে। তবে গত ২/৩ মৌসুম ধরে মাঠ পর্যায়ে লবণের মোটামুটি ভালো থাকায় এ মৌসুমেও লবণ চাষীরা বিশেষ আগ্রহ নিয়ে আগাম লবণ চাষে মাঠে নামে।
ফলে গত মৌসুমের এ সময়ের তুলনায় চলতি মৌসুমে প্রায় দেড়গুণ বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছে। এতে চলতি মৌসুমেও লবণ উৎপাদন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
গেল ,২০২২-২৩ মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের ৬২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন, অথচ আগের মৌসুমে অর্থাৎ ২০২১-২২ মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয়েছিল। ১৮ লাখ ৩২ হাজার মে.টন। আর গত মৌসুমে বা ২০২৩-২৪ মৌসুমে ৬৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে ২৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে, যা আগের মৌসুমের চেয়ে ২ লাখ মে.টনের বেশি। গত ২/৩ মৌসুম ধরে চাষীরা লবণের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় দেশে লবণ উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ হয়েছে।
তবে লবণ চাষী ও ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে জানান, চলতি মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের অতীতে রেকর্ড ভাঙ্গতে চাইলেও লবণ মিল মালিকদের একটি সিন্ডিকেট দেশে লবণ উৎপাদন কমানোর জন্য চাষীদের উপর মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু করেছে। যাতে চাষীরা মৌসুমের শুরুতে লবণ চাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং লবণ উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হয়।
এরই অংশ হিসাবে লবণ মৌসুমের শুরুতে লবণ মিল মালিকরা বস্তা প্রতি (প্রতিবস্তা ৮০ কেজি) ১৪শ টাকা থেকে দফায় দফায় কমাতে কমাতে এখন ৬৮০ টাকা থেকে ৭শ টাকায় এসে ঠেকেছে। আবার প্রতিবন্তা ৮০ কেজির পরিবর্তে ৯০ থেকে ৯৫ কেজি লবণ নেওয়া হয় চাষীদের কাছ থেকে। নিকট অতীতে মাঠ পর্যায়ে লবণের এমন দরপতন হয়নি। তবে মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম কম হলেও বাজারে প্যাকেটজাত লবণের মূল্য কমেনি। বাজারে প্রতি কেজি ভোজ্য লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের দৃ্ষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনে পলিথিন, জ্বালানী তেল ও শ্রমসহ প্রায় ১৫ টাকা খরচ হলেও মাঠ পর্যায়ে লবণ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮ টাকারও কম দরে। এরফলে লবণ চাষী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম হতাশা তৈরি হয়েছে। অথচ এ স্বয়ংসম্পূর্ণ খাত থেকে সরকার প্রায় ৫শ কোটি টাকার বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় করে। আর লবণ মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দেশীয় এই লবণ শিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে। এরই অংশ হিসাবে তারা লবণ চাষীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে।
তারা এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুছের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তাদের মতে অন্যথায় দেশীয় লবণ শিল্পটি আবারও পরনির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক মছুদ মিয়া ও সদস্য সচিব মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া। সংবাদ সম্মেলনে বিবিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি নুরুল বশর চৌধুরী।