রাজশাহী নগরীর এক ছাত্রীনিবাসে নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রীকে মারধর এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনার জেরে রোববার গভীর রাতে ‘ঝলক-পলক মেস’ নামের ওই ছাত্রীনিবাস থেকে ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে থানায় যান। মিছিল থেকে তারা ছাত্রীনিবাসের মালিক ও তার ছেলের বিচার চেয়ে স্লোগান দেন।
পরে রাতেই ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বাদী হয়ে ছাত্রীনিবাসের মালিকসহ চারজনের নামে বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বলে ওই থানার ওসি মেহেদী মাসুদ জানান।
মামলার পর ছাত্রীনিবাসের মালিক ও তার দুই ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- মেসমালিক আবদুল মতিন (৬০), ছেলে রাব্বুল হাসান (২৪) ও ওয়াসিক হাসান (২২)।
কাদিরগঞ্জ এলাকার ‘ঝলক-পলক’ ছাত্রীনিবাসে প্রায় ৩০০ ছাত্রী থাকেন। রোববার বেলা ১১টার দিকে নিম্নমানের খাবার দেওয়ার প্রতিবাদ করার জের ধরে ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে দিনভর ছাত্রীনিবাসের গেইটে তালা মেরে রেখে ছাত্রীদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য।
খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে পুলিশ গিয়ে দুজনকে আটক করে এবং ছাত্রীদের মুক্ত করে। দেড় ঘণ্টা পর ছাত্রীরা মামলা করার জন্য বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বোয়ালিয়া থানায় যান।
তখন ছাত্রীরা বলেন, ছাত্রীনিবাসে যারা থাকেন, তাদের বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির প্রস্তুতির জন্য আছেন। এই ছাত্রীনিবাসে টাকা ‘বেশি’ নেওয়া হলেও খাবারের মান খুবই ‘খারাপ’।
থানায় ছাত্রীদের সঙ্গে সংবাদিকদের কথা হয়। ঘটনার বর্ণনায় তারা বলেন, রোববার সকালে ‘নিম্নমানের’ খিচুড়ি পরিবেশনের প্রতিবাদ করেন এক ছাত্রী। এ ঘটনার পর তিনি এই ছাত্রীনিবাসে থাকবেন না বলে মালিককে জানিয়ে দেন।
এ সময় মালিক ওই ছাত্রীকে বলেন, ছাত্রীনিবাসে ওঠার সময় তিনি যে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, সেখানে বলা আছে, ৭ মাসের আগে ছাত্রীনিবাস ছাড়া যাবে না। ওই ছাত্রী চুক্তিপত্র দেখতে চাইলে মালিক বলেন, আইনজীবী ছাড়া এটা দেখা যাবে না।
ছাত্রীরা বলছেন, নিজের স্বাক্ষর করা চুক্তিপত্র দেখতে আইনজীবী লাগবে কেন, এমন প্রশ্ন তুললে ছাত্রীনিবাসের মালিক আব্দুল মতিন ওই ছাত্রীর ওপর ‘ক্ষুব্ধ’ হন। এ সময় মালিকের দুই ছেলে ঝলক ও পলক এসে ওই ছাত্রীকে ‘শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত’ করেন। এতে অন্য ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে ঝলক ও পলক তার বন্ধুদের নিয়ে গিয়ে ছাত্রীদের ‘রাজশাহীতে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি’ দেন।
সকালের ওই ঘটনার পর মালিকপক্ষ দিনভর মেয়েদের ছাত্রীনিবাসে অবরুদ্ধ করে রাখে। তাদের বলা হয়, রাতে ফটকের তালা খুলে দেওয়া হবে। তখন সবাইকে একযোগে ছাত্রীনিবাস ছাড়তে হবে। তখন ছাত্রীরা ফোন করে তাদের বন্ধুদের সহযোগিতা চান। এরপর রাত ১১টার দিকে কিছু ছাত্র গিয়ে ছাত্রীনিবাসের তালা ভেঙে সবাইকে বের করে।
খবর পেয়ে সেখানে যান নগরের বোয়ালিয়া থানার ওসি মেহেদী মাসুদ। তিনি ছাত্রীনিবাস থেকে দুজনকে আটক করে নিয়ে যান। এ সময় তিনি মামলা করার জন্য ভুক্তভোগী ছাত্রীদের থানায় যেতে বলেন। পরে রাত ১২টার দিকে ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে থানায় যান। ভুক্তভোগী ছাত্রী মামলা করার পর রাত ২টার দিকে তারা থানা থেকে বের হন।
ওসি মেহেদী মাসুদ বলেন, “আমি খবর পেয়েই ছাত্রীনিবাস থেকে দুজনকে আটক করি। পরে অভিযান চালিয়ে আরও একজনকে আটক করা হয়। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রী চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করলে আটক তিনজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।”
মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) হাফিজুর রহমান বলেন, “ছাত্রীনিবাসের মালিক ও মালিকের ছেলেরা এক ছাত্রীকে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন, শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছেন। রাজশাহীতে অনেক মেস। এটা আমাদের মাথাতেই আসেনি যে, স্টুডেন্টরাও এ রকম থ্রেটের মুখে থাকে।
“এটা এখন আমাদের নলেজের মধ্যে এল; আমরা সজাগ থাকব। কেউ এ রকম ঘটনার মুখোমুখি হলে ৯৯৯ বা থানায় ফোন করলে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব।”
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
রাজশাহী নগরীর এক ছাত্রীনিবাসে নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রীকে মারধর এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনার জেরে রোববার গভীর রাতে ‘ঝলক-পলক মেস’ নামের ওই ছাত্রীনিবাস থেকে ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে থানায় যান। মিছিল থেকে তারা ছাত্রীনিবাসের মালিক ও তার ছেলের বিচার চেয়ে স্লোগান দেন।
পরে রাতেই ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বাদী হয়ে ছাত্রীনিবাসের মালিকসহ চারজনের নামে বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বলে ওই থানার ওসি মেহেদী মাসুদ জানান।
মামলার পর ছাত্রীনিবাসের মালিক ও তার দুই ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- মেসমালিক আবদুল মতিন (৬০), ছেলে রাব্বুল হাসান (২৪) ও ওয়াসিক হাসান (২২)।
কাদিরগঞ্জ এলাকার ‘ঝলক-পলক’ ছাত্রীনিবাসে প্রায় ৩০০ ছাত্রী থাকেন। রোববার বেলা ১১টার দিকে নিম্নমানের খাবার দেওয়ার প্রতিবাদ করার জের ধরে ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে দিনভর ছাত্রীনিবাসের গেইটে তালা মেরে রেখে ছাত্রীদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য।
খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে পুলিশ গিয়ে দুজনকে আটক করে এবং ছাত্রীদের মুক্ত করে। দেড় ঘণ্টা পর ছাত্রীরা মামলা করার জন্য বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বোয়ালিয়া থানায় যান।
তখন ছাত্রীরা বলেন, ছাত্রীনিবাসে যারা থাকেন, তাদের বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির প্রস্তুতির জন্য আছেন। এই ছাত্রীনিবাসে টাকা ‘বেশি’ নেওয়া হলেও খাবারের মান খুবই ‘খারাপ’।
থানায় ছাত্রীদের সঙ্গে সংবাদিকদের কথা হয়। ঘটনার বর্ণনায় তারা বলেন, রোববার সকালে ‘নিম্নমানের’ খিচুড়ি পরিবেশনের প্রতিবাদ করেন এক ছাত্রী। এ ঘটনার পর তিনি এই ছাত্রীনিবাসে থাকবেন না বলে মালিককে জানিয়ে দেন।
এ সময় মালিক ওই ছাত্রীকে বলেন, ছাত্রীনিবাসে ওঠার সময় তিনি যে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, সেখানে বলা আছে, ৭ মাসের আগে ছাত্রীনিবাস ছাড়া যাবে না। ওই ছাত্রী চুক্তিপত্র দেখতে চাইলে মালিক বলেন, আইনজীবী ছাড়া এটা দেখা যাবে না।
ছাত্রীরা বলছেন, নিজের স্বাক্ষর করা চুক্তিপত্র দেখতে আইনজীবী লাগবে কেন, এমন প্রশ্ন তুললে ছাত্রীনিবাসের মালিক আব্দুল মতিন ওই ছাত্রীর ওপর ‘ক্ষুব্ধ’ হন। এ সময় মালিকের দুই ছেলে ঝলক ও পলক এসে ওই ছাত্রীকে ‘শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত’ করেন। এতে অন্য ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে ঝলক ও পলক তার বন্ধুদের নিয়ে গিয়ে ছাত্রীদের ‘রাজশাহীতে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি’ দেন।
সকালের ওই ঘটনার পর মালিকপক্ষ দিনভর মেয়েদের ছাত্রীনিবাসে অবরুদ্ধ করে রাখে। তাদের বলা হয়, রাতে ফটকের তালা খুলে দেওয়া হবে। তখন সবাইকে একযোগে ছাত্রীনিবাস ছাড়তে হবে। তখন ছাত্রীরা ফোন করে তাদের বন্ধুদের সহযোগিতা চান। এরপর রাত ১১টার দিকে কিছু ছাত্র গিয়ে ছাত্রীনিবাসের তালা ভেঙে সবাইকে বের করে।
খবর পেয়ে সেখানে যান নগরের বোয়ালিয়া থানার ওসি মেহেদী মাসুদ। তিনি ছাত্রীনিবাস থেকে দুজনকে আটক করে নিয়ে যান। এ সময় তিনি মামলা করার জন্য ভুক্তভোগী ছাত্রীদের থানায় যেতে বলেন। পরে রাত ১২টার দিকে ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে থানায় যান। ভুক্তভোগী ছাত্রী মামলা করার পর রাত ২টার দিকে তারা থানা থেকে বের হন।
ওসি মেহেদী মাসুদ বলেন, “আমি খবর পেয়েই ছাত্রীনিবাস থেকে দুজনকে আটক করি। পরে অভিযান চালিয়ে আরও একজনকে আটক করা হয়। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রী চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করলে আটক তিনজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।”
মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) হাফিজুর রহমান বলেন, “ছাত্রীনিবাসের মালিক ও মালিকের ছেলেরা এক ছাত্রীকে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন, শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছেন। রাজশাহীতে অনেক মেস। এটা আমাদের মাথাতেই আসেনি যে, স্টুডেন্টরাও এ রকম থ্রেটের মুখে থাকে।
“এটা এখন আমাদের নলেজের মধ্যে এল; আমরা সজাগ থাকব। কেউ এ রকম ঘটনার মুখোমুখি হলে ৯৯৯ বা থানায় ফোন করলে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব।”