মানিকগঞ্জ : নদীতে আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ফসল -সংবাদ
মানিকগঞ্জের ঘিওরে প্রমত্তা পদ্মা-যমুনা, কালীগঙ্গা-ধলেশ্বরী, ইছামতী নদীসহ ১৪টি নদী এখন মৃতপ্রায়। নদীরগুলো এখন শুধু ধু ধু বালু চর। ন্যাব্যতা হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে মানিকগঞ্জের নদীগুলো। নদীর বুকে কোথাও কোথাও আবাদ করা হচ্ছে ধান। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের প্রায় পুরো সময়টাই থাকে পানিশূন্য। কোথাও গরু চরানো কিংবা দূরন্ত কিশোর কিশোরীদের ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার দৃশ্য চোখে পড়ে। মানুষজন হেঁটে পার হয় ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গা ইছামতী। ৪ যুগ আগেও এই নদীতে চলত বড় বড় ফেরি লঞ্চ ও জাহাজ। অনেক নদীতে হাঁটুর নিচে পানি দেখা যাচ্ছে। এখানে গরু মহিষ গোসল করানো হচ্ছে। এ অঞ্চলের মানুষজন নদীগুলো শাসন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে জেলাতে কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, ইছামতীসহ মোট ১৪টি নদী রয়েছে। মোট আয়তন ১ হাজার ৩৭৯ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ২৪১ কিলোমিটার নদী এলাকা। কালীগঙ্গার দৈর্ঘ্য ৭৮ কিলোমিটার প্রস্থ ২৪২ মিটার। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দৌলতপুরে চরকাটারি এলাকায় যমুনা থেকে উৎপন্ন হয়ে কালীগঙ্গা ঘিওর উপজেলার আশাপুরের পাশ দিয়ে জাবরা, দুর্গাপুর ও তরা এলাকায় ধলেশ্বরীর সাথে মিশেছে। এখান থেকে গালিন্দা, নবগ্রাম, চরঘোসতা, আলীগর চর, শিমুলিয়ায় এসে পদ্মার সাথে মিশেছে। বর্তমানে এখান থেকে আরও খানিকটা এগিয়ে হাতিপাড়া, বালুখন্দ, পাতিলঝাপ, শলা হয়ে আলী নগরে এসে ধলেশ্বরীতে মিশেছে।
৮০ দশকের শুরুর দিকেও কালীগঙ্গা দিয়ে বড় বড় ফেরি-লঞ্চ চলতে দেখা গেছে। বর্তমানে কালিগঙ্গার বুকে পানির অস্তিত্ব নেই বলইে চলে। বৃহৎ এ নদীটির দূরাবস্থার কারণে শুধু নৌযান চলাচলই বন্ধ হয়নি, নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হাজার হাজার জেলে পরিবারেও চলছে দুর্দিন। নদীতে দেশীয় মাছ বিলুপ্তপ্রায়। অনেকেই মাছ ধরার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। যারা পেশা বদল করতে পারেননি তাদের জীবন কাটছে মানবেতরভাবে। নদী মরে যাওয়ার ফলে কৃষিনির্ভর এ এলাকার সেচ কাজও দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আরিচা পদ্মা নদীর অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। মাঝে মধ্যে আরিচা-দৌলতদিয়া, কাজরহাট নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে একটি বিশেষ মহলের ইঙ্গিতে পদ্মা নদী বিভিন্ন স্পটে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে হাজার হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
মানিকগঞ্জ সদরের বেউথা, বান্দুটিয়া, পৌলী এবং তরা, উত্তর তরা কালিগঙ্গায় বিশাল বিশাল চর পড়েছে। চরে আবাদ হচ্ছে ফসলের। অনেক জায়গায় চলছে নদী দখলের নানা কর্মযজ্ঞ। জয়নাল উদ্দিন, হাবিবব মিয়া আবুল হোসেনসহ বয়স্ক অনেকেই জানান, ঘিওর উপজেলার উত্তর তরা নদীর পাড়ে তাদের বাড়ি। ১৫-২০ বছর আগেও এত খারাপ অবস্থা ছিল না। নদীর পাশে তাদের বাড়ি ঘর ছিল। তারা এক সাথে মাছ ধরতেন, গোসল করতেন। এ ছাড়া ঘরের কাজ এবং কৃষিকাজ নদীর পানি দিয়েই করতেন। এখন নদীর বেশিরভাগ জায়গা ভরাট হয়ে ও দখল হয়ে গেছে। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেচ কাজে পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তরা কালীগঙ্গা নদী পাড়ের মির্জাপুর গ্রামের তাপশ রাজবংশী বলেন, আমার বাপ দাদার আমল থেকে এই নদী থেকে মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার চালাতাম। বর্তমানে বর্ষাকাল ছাড়া নদীতে পানি থাকে না। নদীতে পানিতে মাছ নেই। বিগত ৭-৮ বছর যাবৎ তাই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ পানিই একমাত্র ভরসা। মাছ, জলজ প্রাণী, পাখিসহ অনেক প্রাণী নদীর ওপর নির্ভরশীল। নদী শুকিয়ে গেছে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সকল প্রকার মাছ। নদীগুলো খনন করা জরুরি দরকার ।
মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইউসুফ আলী জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হল নদী আর এর জন্যই এদেশের জমি যথেষ্ট উর্বল। প্রতিবছর নদী ভাঙনের ফলে মাটি ও পলিতে নদীটি ভরে যাচ্ছে। সেই সাথে অবৈধভাবে দখল, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নদী শাসনের ফলে নদীর এই দৈণ্যদশা।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে নদী খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ এর আওতায় কালীগঙ্গা খনন কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও ঘিওরের পুরাতন ধলেশ্বরী দৌলতপুরের বাঘুটিয়া, হরিরামপুরের কাঞ্চনপুরে নদী ভাঙন রোধে ও স্বাভাবিক স্রোতধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ চলমান রয়েছে। মানিকগঞ্জে ১৪টি নদীতে স্থায়ভাবে কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে।
মানিকগঞ্জ : নদীতে আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ফসল -সংবাদ
রোববার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
মানিকগঞ্জের ঘিওরে প্রমত্তা পদ্মা-যমুনা, কালীগঙ্গা-ধলেশ্বরী, ইছামতী নদীসহ ১৪টি নদী এখন মৃতপ্রায়। নদীরগুলো এখন শুধু ধু ধু বালু চর। ন্যাব্যতা হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে মানিকগঞ্জের নদীগুলো। নদীর বুকে কোথাও কোথাও আবাদ করা হচ্ছে ধান। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের প্রায় পুরো সময়টাই থাকে পানিশূন্য। কোথাও গরু চরানো কিংবা দূরন্ত কিশোর কিশোরীদের ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার দৃশ্য চোখে পড়ে। মানুষজন হেঁটে পার হয় ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গা ইছামতী। ৪ যুগ আগেও এই নদীতে চলত বড় বড় ফেরি লঞ্চ ও জাহাজ। অনেক নদীতে হাঁটুর নিচে পানি দেখা যাচ্ছে। এখানে গরু মহিষ গোসল করানো হচ্ছে। এ অঞ্চলের মানুষজন নদীগুলো শাসন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে জেলাতে কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, ইছামতীসহ মোট ১৪টি নদী রয়েছে। মোট আয়তন ১ হাজার ৩৭৯ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ২৪১ কিলোমিটার নদী এলাকা। কালীগঙ্গার দৈর্ঘ্য ৭৮ কিলোমিটার প্রস্থ ২৪২ মিটার। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দৌলতপুরে চরকাটারি এলাকায় যমুনা থেকে উৎপন্ন হয়ে কালীগঙ্গা ঘিওর উপজেলার আশাপুরের পাশ দিয়ে জাবরা, দুর্গাপুর ও তরা এলাকায় ধলেশ্বরীর সাথে মিশেছে। এখান থেকে গালিন্দা, নবগ্রাম, চরঘোসতা, আলীগর চর, শিমুলিয়ায় এসে পদ্মার সাথে মিশেছে। বর্তমানে এখান থেকে আরও খানিকটা এগিয়ে হাতিপাড়া, বালুখন্দ, পাতিলঝাপ, শলা হয়ে আলী নগরে এসে ধলেশ্বরীতে মিশেছে।
৮০ দশকের শুরুর দিকেও কালীগঙ্গা দিয়ে বড় বড় ফেরি-লঞ্চ চলতে দেখা গেছে। বর্তমানে কালিগঙ্গার বুকে পানির অস্তিত্ব নেই বলইে চলে। বৃহৎ এ নদীটির দূরাবস্থার কারণে শুধু নৌযান চলাচলই বন্ধ হয়নি, নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হাজার হাজার জেলে পরিবারেও চলছে দুর্দিন। নদীতে দেশীয় মাছ বিলুপ্তপ্রায়। অনেকেই মাছ ধরার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। যারা পেশা বদল করতে পারেননি তাদের জীবন কাটছে মানবেতরভাবে। নদী মরে যাওয়ার ফলে কৃষিনির্ভর এ এলাকার সেচ কাজও দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আরিচা পদ্মা নদীর অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। মাঝে মধ্যে আরিচা-দৌলতদিয়া, কাজরহাট নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে একটি বিশেষ মহলের ইঙ্গিতে পদ্মা নদী বিভিন্ন স্পটে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে হাজার হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
মানিকগঞ্জ সদরের বেউথা, বান্দুটিয়া, পৌলী এবং তরা, উত্তর তরা কালিগঙ্গায় বিশাল বিশাল চর পড়েছে। চরে আবাদ হচ্ছে ফসলের। অনেক জায়গায় চলছে নদী দখলের নানা কর্মযজ্ঞ। জয়নাল উদ্দিন, হাবিবব মিয়া আবুল হোসেনসহ বয়স্ক অনেকেই জানান, ঘিওর উপজেলার উত্তর তরা নদীর পাড়ে তাদের বাড়ি। ১৫-২০ বছর আগেও এত খারাপ অবস্থা ছিল না। নদীর পাশে তাদের বাড়ি ঘর ছিল। তারা এক সাথে মাছ ধরতেন, গোসল করতেন। এ ছাড়া ঘরের কাজ এবং কৃষিকাজ নদীর পানি দিয়েই করতেন। এখন নদীর বেশিরভাগ জায়গা ভরাট হয়ে ও দখল হয়ে গেছে। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেচ কাজে পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তরা কালীগঙ্গা নদী পাড়ের মির্জাপুর গ্রামের তাপশ রাজবংশী বলেন, আমার বাপ দাদার আমল থেকে এই নদী থেকে মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার চালাতাম। বর্তমানে বর্ষাকাল ছাড়া নদীতে পানি থাকে না। নদীতে পানিতে মাছ নেই। বিগত ৭-৮ বছর যাবৎ তাই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ পানিই একমাত্র ভরসা। মাছ, জলজ প্রাণী, পাখিসহ অনেক প্রাণী নদীর ওপর নির্ভরশীল। নদী শুকিয়ে গেছে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সকল প্রকার মাছ। নদীগুলো খনন করা জরুরি দরকার ।
মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইউসুফ আলী জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হল নদী আর এর জন্যই এদেশের জমি যথেষ্ট উর্বল। প্রতিবছর নদী ভাঙনের ফলে মাটি ও পলিতে নদীটি ভরে যাচ্ছে। সেই সাথে অবৈধভাবে দখল, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নদী শাসনের ফলে নদীর এই দৈণ্যদশা।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে নদী খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ এর আওতায় কালীগঙ্গা খনন কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও ঘিওরের পুরাতন ধলেশ্বরী দৌলতপুরের বাঘুটিয়া, হরিরামপুরের কাঞ্চনপুরে নদী ভাঙন রোধে ও স্বাভাবিক স্রোতধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ চলমান রয়েছে। মানিকগঞ্জে ১৪টি নদীতে স্থায়ভাবে কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে।