alt

আশ্রয়ণের জমি নিয়ে মামলা, মানবেতর জীবনে ৭০ পরিবার

প্রতিনিধি, লালমনিরহাট : সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫

লালমনিরহাট : আশ্রয়ণ প্রকল্পের অসহায় বাসিন্দারা -সংবাদ

লালমনিরহাট আবাসনের জরাজীর্ণ পুরাতন ঘর ভেঙে নতুন করে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ রয়েছে নির্মাণকাজ। মামলা জটিলতায় মানবেতর জীবন কাটছে লালমনিরহাটের গৃহহারা ৭০টি ভূমিহীন পরিবারের।

দীর্ঘ আট মাস ধরে বৃষ্টি-শীত উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন এসব পরিবার।

ভুক্তভোগীরা জানান, লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ২০০৩-২০০৪ অর্থবছরে আবাসন নির্মাণ করেন।

তৎকালীন সেনাবাহিনী ৬ সিগন্যাল ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ওই গ্রামের সরকারি খাস জমিতে ৭০টি পরিবারের জন্য টিনশেডের এ আবাসন তৈরি করেন। পরে তা সুফলভোগীদের কাছে বুঝে দেয় সরকার। সেই থেকে আবাসনে বসবাস করে আসছেন ৭০টি ভূমিহীন পরিবার।

কালের পরিক্রমায় এ আবাসনটির ছাউনির টিনসহ সবকিছু নষ্ট হলে বসবাসের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়ে।

সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিলেও তার বরাদ্দ না থাকায় সংস্কার করেনি সরকার বা সুফলভোগীরা। এক পর্যায়ে সুফলভোগীদের দুর্ভোগ বিবেচনা করে আবাসন সংস্কার না করে আবাসনের জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর করে দেয়ার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। গত অর্থবছরে বরাদ্দ পেলে ৭০ পরিবারকে পুনর্বাসন করতে নতুন করে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। নতুন করে ঘর নির্মাণ করতে পুরাতন ঘর সরাতে বলা হলে সুফলভোগীরা যে যার যার মতো তাদের জিনিসপত্রসহ ঘর ভেঙে ফেলে জায়গা ফাঁকা করেন।

সুফলভোগী ৭০ পরিবার আবাসনের পাশে, অন্যের বাসা বাড়ির উঠানে, রাস্তার ধারে, বাঁশ ঝাড়, পুকুর পাড়ে তাবু বা পলিথিন টানিয়ে অস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বলা হয়েছিল দুই-তিন মাসের মধ্যে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণ শেষ হলে তারা পুনরায় ফিরবেন সেই নতুন ঘরে। এরপর নতুন করে আশ্রয়ণ করতে গত জুলাই মাসে কাজ শুরু করে উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে জমিটা ফাঁকা হলে সুযোগ বুঝে তা নিজেদের দাবি করে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা গ্রামের মৃত শিশির কুমারের স্ত্রী আরতি রানী চন্দ্র বাদী হয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, জেলা প্রশাসকসহ পাঁচজনকে বিবাদী করা হয়। সেই মামলায় গত অক্টোবর মাসে ৮ তারিখ নির্মাণ কাজের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন উচ্চ আদালত। যার কারণে আশ্রয়ণের নির্মাণকাজের শুরুতেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আবাসন থেকে সরে যাওয়া ৭০ পরিবার পড়েছেন চরম বিপাকে।

সুফলভোগী ৭০ পরিবার অন্যের জমিতে বাসা বাড়িতে কেউ বাঁশঝাড়ে অস্থায়ীভাবে তাঁবু ও পলিথিন টানিয়ে বসবাস করছিলেন। এরই মধ্যে বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজে ঘুমহীন রাত কেটেছে তাদের। চলছে শীতকাল। ঘনকুয়াশা আর কনকনে ঠা-ায় তাবু বা পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরে থাকা নিদারুণ কষ্টের।

বৃষ্টি শীত উপেক্ষা করে দীর্ঘ ৮ মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে ৭০টি পরিবার। এদিকে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত কবে হবে। আদৌ আশ্রয়ণ হবে কিনা? তা নিয়েই চিন্তায় পড়েছেন এসব পরিবার।

ভুক্তভোগী সহিজন বেওয়া (৯০) বলেন, আগে আবাসনের ঘরে টিনে ফুটো থাকলেও পলিথিনে মুড়িয়ে থাকতাম। নতুন ঘর করে দেয়ার কথা বলে সব ভেঙে দিল ইউএনও স্যার। তখন অন্যের জমিতে দুই মাসের জন্য টিনের ছায়লা পেতে ছিলাম। এখন আট মাস হলো জমির মালিক থাকতে দিচ্ছে না।

এখন কোথায় যাই। আগের জমি ফাঁকা পড়ে আছে। বলেছি সেখানে ছায়লা বানিয়ে থাকি। সেটারও অনুমতি নেই। গরিব মানুষ হামরা কোনটে যাই বাপু।

ভুক্তভোগী আর্জিনা বেগম বলেন, জুন মাসে আবাসন ভেঙে দিয়েছে। দুই মাসের মধ্যে নতুন করে ঘর করে দেয়ার কথা। আট মাস হচ্ছে এখন পর্যন্ত নতুন ঘর নির্মাণ শুরুই করেনি। দুই মাসের জন্যে অন্যের বাড়ির বারান্দায় পলিথিনের ঘর বানিয়ে কোনো রকম করে আছি। তারাও আর থাকতে দিচ্ছে না। সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাই বলেন তো?

অপর ভুক্তভোগী মোফাজ্জল মিস্ত্রী বলেন, দুই মাসের জন্য পাশের এক জমি মাসে ৫ হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে টিনের ছায়লা করেছি। দুই মাসের জায়গায় আট মাস হলো। ৪০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হলো। নতুন ঘরও হচ্ছে না।

মাসে ৫ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে কি চলা যায়?। মামলার দ্রুত সমাধান করতে সরকারের প্রতি আকূল আবেদন জানান তিনি। পলাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউল ইসলাম ফাতেমী পাভেল বলেন, আবাসনের ৭০ পরিবারের দুর্ভোগ লাগবে দ্রুত সমাধান করতে প্রতিটি সভায় বিষয়টি তুলে ধরেছি। এ এলাকায় এমন কোনো পরিত্যাক্ত বা খাস জমি নেই যেখানে এসব পরিবারকে অস্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা যায়। জমি না থাকায় লোকজন বিভিন্নভাবে অন্যের জমি বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। উপজেলা প্রশাসন উচ্চ আদালতের এ মামলটি ফেস করেছে এবং চলতি মাসে এর সমাধান আসবে বলে শুনেছি। ভূমিহীন পরিবারগুলোর দুর্দশা লাগবে দ্রুত সমাধান করতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

উপজেলা আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরই আলম সিদ্দিকী বলেন, দীর্ঘদিনের পুরাতন আবাসনটি কালের পরিক্রমায় জরাজীর্ণ হয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল।

তাই সেটি ভেঙ্গে আশ্রয়ণের ঘর করে ওই ৭০ পরিবারকে পুনর্বাসন করতে আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। জুলাই মাসে কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশে আবার কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে খুব তাড়তাড়ি এর সমাধান হবে। সমাধান হলেই নির্মাণকাজ শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, ভিপি ল্যান্ডে (খাস খতিয়ান না হওয়া ভূমি) ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে আবাসন করে তৎকালিন সরকার। কিন্তু ভিপিকৃত জমি পুনরায় নিজেদের দাবি করে আরতী রানী চন্দ্র নামে এক নারী উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। জমির কাগজ অনুপাতে সরকার সঠিক পথেই রয়েছে। আগামী ধার্য দিনে এ মামলার সমাধান আসবে বলে আমরা আশাবাদী।

ছবি

রূপালী ব্যাংকের সাবেক এমডি ওবায়েদ উল্লাহর ৩৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

পাসপোর্ট নিতে এসে গ্রেপ্তার ফারইস্টের নজরুল, ৫ দিনের রিমান্ড

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৮০৩ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৪ জন

ফরিদপুরে প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের দায়ে একজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

ছবি

শ্রীমঙ্গলে বনগাঁওয়ের জমিদারবাড়ি: ইতিহাস, স্থাপত্য ও হারানো ঐতিহ্য

ছবি

ঘোড়াশালে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল

ছবি

বেনাপোলে ধরা পড়লো মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা কোটি টাকার মালামাল

ছবি

সাপে কাটা রোগীদের জন্য রামেকে দেশের প্রথম বিশেষ ওয়ার্ড

ছবি

নরসিংদীতে ঘুমন্ত মা ও সন্তানদের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন, দগ্ধ ৫

ছবি

ট্রাকের চাপায় সহপাঠীর মৃত্যু: ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের

ছবি

মানিকগঞ্জে স্বর্ণ কারিগরদের মানবেতর জীবন যাপন

ছবি

সাদুল্লাপুরে আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ

ছবি

আয়নাবাজি সিনেমার মতো মামার বদলে কারাগারে ভাগনে!

ছবি

সিরাজগঞ্জে বাড়ছে এইডস রোগী ২৬ জনের মৃত্যু

ছবি

রামপালে এক নারীকে পিটিয়েছে সন্ত্রাসীরা

ছবি

সাঘাটায় ব্র্যাকের এডুকেশন মডেল বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে সভা

ছবি

কুমিল্লার বরুড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুইজনের মৃত্যু

ছবি

মাদারীপুরে কৃষকরা পেল সার-বীজ

ছবি

আদমদীঘির সাবেক এমপি কছিম উদ্দিন আহম্মেদের ইন্তেকাল

ছবি

শাহজাদপুরে কবরস্থান থেকে এক রাতে ১৬ টি কঙ্কাল চুরি

ছবি

সাদুল্লাপুরে বৃদ্ধাকে ধর্ষণের পর পুত্রবধূকে শ্লীলতাহানি, এলাকায় উত্তেজনা

ছবি

রাজশাহীর পদ্মায় জীববৈচিত্রের জাগরণ কুমির ও পাখির মিলনে প্রাণবন্ত প্রকৃতি

ছবি

মাদারগঞ্জ কৃষি অফিসের পতিত জমি এখন সবজি বাগান

ছবি

কোম্পানীগঞ্জে নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত

ছবি

মোংলার পশুর নদী থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

ছবি

কাঁচপুর সেন্টারের সুপারভাইজার লোকমান হোসেন এর ইন্তেকাল

ছবি

বিরামপুরে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে জেগে উঠল পরাজয়ের ইতিহাস

ছবি

ধনবাড়ীতে ঘরে আগুন দিলো দুর্বৃত্তরা, থানায় অভিযোগ

ছবি

কাঠালিয়ায় ভেলা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

ছবি

মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে চকরিয়ার ২ কিশোর মিয়ানমারে জিম্মি

কক্সবাজারে পর্যটকের মৃত্যু, নারীসহ আটক ৪

ছবি

বেতাগীর কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ

ছবি

বিএনপি থেকে সরে এসে আওয়ামী লীগে ফয়জুল করিম

ছবি

সাঘাটায় যুবদল নেতা সাইফুল গ্রেপ্তার

ছবি

বেগমগঞ্জে পিস্তলসহ মাদক কারবারী গ্রেপ্তার

ছবি

চিফ প্রসিকিউটরের অভিযোগ: শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সংস্থায় উসকানিমূলক কার্যকলাপ চালান

tab

আশ্রয়ণের জমি নিয়ে মামলা, মানবেতর জীবনে ৭০ পরিবার

প্রতিনিধি, লালমনিরহাট

লালমনিরহাট : আশ্রয়ণ প্রকল্পের অসহায় বাসিন্দারা -সংবাদ

সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫

লালমনিরহাট আবাসনের জরাজীর্ণ পুরাতন ঘর ভেঙে নতুন করে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ রয়েছে নির্মাণকাজ। মামলা জটিলতায় মানবেতর জীবন কাটছে লালমনিরহাটের গৃহহারা ৭০টি ভূমিহীন পরিবারের।

দীর্ঘ আট মাস ধরে বৃষ্টি-শীত উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন এসব পরিবার।

ভুক্তভোগীরা জানান, লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ২০০৩-২০০৪ অর্থবছরে আবাসন নির্মাণ করেন।

তৎকালীন সেনাবাহিনী ৬ সিগন্যাল ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ওই গ্রামের সরকারি খাস জমিতে ৭০টি পরিবারের জন্য টিনশেডের এ আবাসন তৈরি করেন। পরে তা সুফলভোগীদের কাছে বুঝে দেয় সরকার। সেই থেকে আবাসনে বসবাস করে আসছেন ৭০টি ভূমিহীন পরিবার।

কালের পরিক্রমায় এ আবাসনটির ছাউনির টিনসহ সবকিছু নষ্ট হলে বসবাসের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়ে।

সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিলেও তার বরাদ্দ না থাকায় সংস্কার করেনি সরকার বা সুফলভোগীরা। এক পর্যায়ে সুফলভোগীদের দুর্ভোগ বিবেচনা করে আবাসন সংস্কার না করে আবাসনের জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর করে দেয়ার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। গত অর্থবছরে বরাদ্দ পেলে ৭০ পরিবারকে পুনর্বাসন করতে নতুন করে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। নতুন করে ঘর নির্মাণ করতে পুরাতন ঘর সরাতে বলা হলে সুফলভোগীরা যে যার যার মতো তাদের জিনিসপত্রসহ ঘর ভেঙে ফেলে জায়গা ফাঁকা করেন।

সুফলভোগী ৭০ পরিবার আবাসনের পাশে, অন্যের বাসা বাড়ির উঠানে, রাস্তার ধারে, বাঁশ ঝাড়, পুকুর পাড়ে তাবু বা পলিথিন টানিয়ে অস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বলা হয়েছিল দুই-তিন মাসের মধ্যে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণ শেষ হলে তারা পুনরায় ফিরবেন সেই নতুন ঘরে। এরপর নতুন করে আশ্রয়ণ করতে গত জুলাই মাসে কাজ শুরু করে উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে জমিটা ফাঁকা হলে সুযোগ বুঝে তা নিজেদের দাবি করে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা গ্রামের মৃত শিশির কুমারের স্ত্রী আরতি রানী চন্দ্র বাদী হয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, জেলা প্রশাসকসহ পাঁচজনকে বিবাদী করা হয়। সেই মামলায় গত অক্টোবর মাসে ৮ তারিখ নির্মাণ কাজের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন উচ্চ আদালত। যার কারণে আশ্রয়ণের নির্মাণকাজের শুরুতেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আবাসন থেকে সরে যাওয়া ৭০ পরিবার পড়েছেন চরম বিপাকে।

সুফলভোগী ৭০ পরিবার অন্যের জমিতে বাসা বাড়িতে কেউ বাঁশঝাড়ে অস্থায়ীভাবে তাঁবু ও পলিথিন টানিয়ে বসবাস করছিলেন। এরই মধ্যে বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজে ঘুমহীন রাত কেটেছে তাদের। চলছে শীতকাল। ঘনকুয়াশা আর কনকনে ঠা-ায় তাবু বা পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরে থাকা নিদারুণ কষ্টের।

বৃষ্টি শীত উপেক্ষা করে দীর্ঘ ৮ মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে ৭০টি পরিবার। এদিকে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত কবে হবে। আদৌ আশ্রয়ণ হবে কিনা? তা নিয়েই চিন্তায় পড়েছেন এসব পরিবার।

ভুক্তভোগী সহিজন বেওয়া (৯০) বলেন, আগে আবাসনের ঘরে টিনে ফুটো থাকলেও পলিথিনে মুড়িয়ে থাকতাম। নতুন ঘর করে দেয়ার কথা বলে সব ভেঙে দিল ইউএনও স্যার। তখন অন্যের জমিতে দুই মাসের জন্য টিনের ছায়লা পেতে ছিলাম। এখন আট মাস হলো জমির মালিক থাকতে দিচ্ছে না।

এখন কোথায় যাই। আগের জমি ফাঁকা পড়ে আছে। বলেছি সেখানে ছায়লা বানিয়ে থাকি। সেটারও অনুমতি নেই। গরিব মানুষ হামরা কোনটে যাই বাপু।

ভুক্তভোগী আর্জিনা বেগম বলেন, জুন মাসে আবাসন ভেঙে দিয়েছে। দুই মাসের মধ্যে নতুন করে ঘর করে দেয়ার কথা। আট মাস হচ্ছে এখন পর্যন্ত নতুন ঘর নির্মাণ শুরুই করেনি। দুই মাসের জন্যে অন্যের বাড়ির বারান্দায় পলিথিনের ঘর বানিয়ে কোনো রকম করে আছি। তারাও আর থাকতে দিচ্ছে না। সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাই বলেন তো?

অপর ভুক্তভোগী মোফাজ্জল মিস্ত্রী বলেন, দুই মাসের জন্য পাশের এক জমি মাসে ৫ হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে টিনের ছায়লা করেছি। দুই মাসের জায়গায় আট মাস হলো। ৪০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হলো। নতুন ঘরও হচ্ছে না।

মাসে ৫ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে কি চলা যায়?। মামলার দ্রুত সমাধান করতে সরকারের প্রতি আকূল আবেদন জানান তিনি। পলাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউল ইসলাম ফাতেমী পাভেল বলেন, আবাসনের ৭০ পরিবারের দুর্ভোগ লাগবে দ্রুত সমাধান করতে প্রতিটি সভায় বিষয়টি তুলে ধরেছি। এ এলাকায় এমন কোনো পরিত্যাক্ত বা খাস জমি নেই যেখানে এসব পরিবারকে অস্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা যায়। জমি না থাকায় লোকজন বিভিন্নভাবে অন্যের জমি বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। উপজেলা প্রশাসন উচ্চ আদালতের এ মামলটি ফেস করেছে এবং চলতি মাসে এর সমাধান আসবে বলে শুনেছি। ভূমিহীন পরিবারগুলোর দুর্দশা লাগবে দ্রুত সমাধান করতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

উপজেলা আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরই আলম সিদ্দিকী বলেন, দীর্ঘদিনের পুরাতন আবাসনটি কালের পরিক্রমায় জরাজীর্ণ হয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল।

তাই সেটি ভেঙ্গে আশ্রয়ণের ঘর করে ওই ৭০ পরিবারকে পুনর্বাসন করতে আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। জুলাই মাসে কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশে আবার কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে খুব তাড়তাড়ি এর সমাধান হবে। সমাধান হলেই নির্মাণকাজ শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, ভিপি ল্যান্ডে (খাস খতিয়ান না হওয়া ভূমি) ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে আবাসন করে তৎকালিন সরকার। কিন্তু ভিপিকৃত জমি পুনরায় নিজেদের দাবি করে আরতী রানী চন্দ্র নামে এক নারী উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। জমির কাগজ অনুপাতে সরকার সঠিক পথেই রয়েছে। আগামী ধার্য দিনে এ মামলার সমাধান আসবে বলে আমরা আশাবাদী।

back to top